ধর্ম ১২ – নতুন নিয়মে নেতৃত্ব – একজন ব্যক্তি নিয়ে অধ্যয়ন: প্রেরিত যোহন
মথি ৪:২১-২২, মার্ক ১:১৯-২০, লূক ৫:৯-১০ যোহনের আহবান যাকোব, পিতর ও আন্দ্রিয়ের সঙ্গে
‘সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে তিনি যাকোব ও যোহন নামে অন্য দুই ভাইকে দেখতে পেলেন। তাঁরা ছিলেন সিবদিয়ের ছেলে। তাঁদের বাবা সিবদিয়ের সংগে নৌকায় বসে তাঁরা জাল ঠিক করছিলেন। যীশু সেই দুই ভাইকেও ডাকলেন। ২২ তাঁরা তখনই তাঁদের নৌকা ও বাবাকে ছেড়ে যীশুর সংগে গেলেন।’
- যোহন ও যাকোব হলেন আপন ভাই, সিবদিয়ের ছেলেরা, যিনি ছিলেন একজন জেলে ও একটি ছোট মাছ ব্যবসার মালিক। হতে পারে পরিবার বেশি ধনী ছিল না, কিন্তু তারা অসহায়ও ছিল না। শিষ্যদের এই আহবান ঘটে গালীল এলাকার কাফরনাহূম শহরে, গালীল সাগরের পাড়ে (মথি ৪:১২, ১৮)।
- যাকোব ও যোহন, পিতর ও আন্দ্রিয়ের বন্ধু ও মাছ ব্যবসায় সহকর্মী সবাই একসাথে যীশুর কথা অনুসারে সে আশ্চর্য মাছ ধরার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তারা সবাই অবাক হয়ে যান (লূক ৫:৯-১০): তারা হতে পারে সবাই একসাথে পিতরের আহবানের এই বিশেষ প্রতিজ্ঞাও শোনেন: ‘তখন যীশু শিমোনকে বললেন, “ভয় কোরো না; এখন থেকে তুমি ঈশ্বরের জন্য মানুষ ধরবে।” ১১ তারপর তাঁরা নৌকাগুলো পারে আনলেন এবং সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সংগে চললেন’ (মথি ৫:১০-১১)।
- লূকও তার সুসমাচারে বলেন যে যাকোব ও যোহন পিতরের আহবান শোনেন ও যে তারা জানেন, তারাও অন্তরভুক্ত। মথি তার সুসমাচারেও বলেন যে পিতরের আহবানের পাশে যাকোব ও যোহনকেও আহবান দেন।
মথি ২৭:৫৫-৫৬ যাকোব ও যোহনের মা, সিবদিয়ের স্ত্রী, ক্রুশের কাছে উপস্থিত
‘স্ত্রীলোকও সেখানে দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন।…৫৬ তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম এবং সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহনের মা।’
- যাকোব ও যোহনের মা নিজেইও যীশুর অনুস্মরণকারী ও তাঁর পরিচর্য্যার জন্য যোগানদাতা। তাই সম্ভবত আহবান অনুসরণের ক্ষেত্রে যাকোব ও যোহন কম পক্ষে তাদের মায়ের সমর্থন পেয়েছিলেন।
- ক্রুশে কোন কোন মহিলারা উপস্থিত, বিভিন্ন সুসমাচারে এই তালিকা তুলনা করলে কেউ কেউ সারাংশে আসে যে যাকোব ও যোহনের মা হলেন সে উল্লিখিত শালোমী, যীশুর মা মরিয়মের আপন বোন। তা যদি হয় তবে যাকোব ও যোহন যীশুর মাসিতো ভাই। তা কিন্তু নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না কারণ মহিলাদের তালিকাগুলি সম্পূর্ণ নাও হতে পারে।
মার্ক ১:২৯-৩০ কফরনাহম যাকোব, পিতর ও আন্দ্রিয়ের সঙ্গে
‘পরে তাঁরা সমাজ-ঘর থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। যাকোব এবং যোহনও তাঁদের সংগে ছিলেন। ৩০ শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল বলে তিনি শুয়ে ছিলেন।’
- যোহন হলেন প্রথম শিষ্যদের মধ্যে একজন, তিনি শুরু থেকে যীশুর কথা, ব্যবহার ও কার্যগুলি উপলব্দি করেন।
মথি ১০:২-৪, মার্ক ৩:১৭, লূক ৬:১৪, প্রে ১:১৩ বারোজন শিষ্যদের তালিকাগুলি
‘সেই বারোজন প্রেরিতের নাম এই: প্রথম, শিমোন যাঁকে পিতর বলা হয়, তারপর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়; সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও তাঁর ভাই যোহন; ফিলিপ ও বর্থলময়; ৩ থোমা ও কর্-আদায়কারী মথি; আল্ফেয়ের ছেলে যাকোব ও থদ্দেয়; ৪ মৌলবাদী শিমোন এবং যীশুকে যে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ।’
- যীশু দুই, হয়তো এমন কি তিন পরিবার থেকে দইজন ভাইদের ডাকেন: যাকোব ও যোহন, পিতর ও আন্দ্রিয়, হতে পারে মথি ও আল্ফেয়ের ছেলে যাকোব।
- যীশু যাকোব ও যোহনকে আর একটি নাম দেন: ‘বোয়ানের্গিস, অর্থাৎ বজ্রধ্বনির পুত্রেরা’। এটি সিবদিয়ের কোনো বর্ণনা নয়, বরং যাকোব ও যোহনের ব্যক্তিত্বের বর্ণনা: তারা ছিলেন বেশ আবেগীয়, মাথা গরম ও কথা বলার লোক।
- এর একটি উদাহরণ পাওয়া যায় লূক ৯:৫২-৫৫ পদে, যখন তারা একটি শমরিয় গ্রামের উপরে স্বর্গ থেকে আগুন নামাতে চান। অথবা যোহন যখন এমন একজনকে থামাতে চান যিনি যীশুর নামে মন্দ আত্মা তাড়ায় কিন্তু শিষ্যদের মত অনুস্মরণকারী নয় (মার্ক ৯:৩৪-৩৯, লূক ৯:৪৯-৫০)।
মার্ক ৫:৩৭, লূক ৮:৫১ যায়ীরের কন্যা যাকোব ও পিতরের সঙ্গে
‘যীশু কেবল পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহনকে তাঁর সংগে নিলেন।’
- যীশু যখন যায়ীরের মেয়েকে মৃত থেকে জীবিত করে তোলেন, তা ছিল একটি খুব অদ্ভুত ঘটনা। কিন্তু যাকোব, যোহন ও পিতরের জন্য তা আরো অদ্ভুত, কারণ প্রথম বার যীশু তাদেরই মাত্র নিয়ে যান ও এই বিরাট আশ্চর্য কাজ দেখতে দেন।
- এই ঘটনা, এবং পরবর্তী আর অনেক ঘটনাগুলি, যোহনকে সে শক্তিশালী চোখের সাক্ষী বানায়, যিনি সব কিছু শুরু থেকে দেখেছেন এবং যিনি সব চোখের সাক্ষীদের মধ্যে শেষ জীবিত প্রেরিত।
মথি ১৭:১-১৩, মার্ক ৯:২-১৩, লূক ৯:২৮ যীশুর রূপান্তর যাকোব ও পিতরের সঙ্গে
‘এর ছয় দিন পরে যীশু কেবল পিতর, যাকোব এবং যাকোবের ভাই যোহনকে সংগে নিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ে গেলেন। ২ তাঁদের সামনে যীশুর চেহারা বদলে গেল।’
- আবার অদ্ভুত একটি ঘটনা: এক মুহূর্তের জন্য পর্দা খুলে অদৃশ্য জগত দেখা, দেখা যে যীশু সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক কিছু।
- আবারও এই ঘটনা খুব বিশেষ, যীশু কেবলমাত্র তিনজন শিষ্যকে নিয়ে যান, একটি দীর্ঘক্ষণের যাত্রা, যীশুর সাথে আলাদা একটি বিশেষ সময় ও শেষে পাহাড়ের উপরে একটি অদ্বিতীয় দর্শন। যায়ীরের মেয়ের ঘটনা নিয়ে চিন্তা করা যায় যে শিষ্যদের সংখ্যা সীমিত রাখা হল ব্যবহারিক বিষয়, ছোট ঘরে এত লোক আনা যাবে না্ কিন্তু এখানে তা বলা যায় না: যীশু ইচ্ছাকৃত এই তিনজনকে আলাদা একটি অভিজ্ঞতা দেন।
- তাই আশ্চর্য কিছু নয় যে ঠিক পরে শিষ্যদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বড়। আশ্চর্য কিছু নয় যে পরে যাকোব ও যোহন যীশুর রাজ্যে ডান ও বাম পাশে দাঁড়ানোর প্রধান লোক হতে দাবী করেন।
মার্ক ৯:৩৪-৩৯, লূক ৯:৪৬-৫০ মন্দ আত্মা তাড়ানোর লোককে নিয়ে যোহনের প্রশ্ন মাত্র যোহন
‘৩৪ শিষ্যেরা চুপ করে রইলেন, কারণ কে সবচেয়ে বড় তা নিয়ে পথে তাঁরা তর্কাতর্কি করছিলেন। ৩৫ যীশু বসলেন এবং সেই বারোজন শিষ্যকে নিজের কাছে ডেকে বললেন, “কেউ যদি প্রধান হতে চায় তবে তাকে সবার শেষে থাকতে হবে এবং সকলের সেবাকারী হতে হবে।” ৩৬ পরে তিনি একটা শিশুকে নিয়ে শিষ্যদের সামনে দাঁড় করালেন।…৩৮ যোহন যীশুকে বললেন, “গুরু, আমরা একজন লোককে আপনার নামে মন্দ আত্মা ছাড়াতে দেখে তাকে বারণ করলাম, কারণ সে আমাদের দলের লোক নয়।” ৩৯ যীশু বললেন, “তাকে বারণ কোরো না। আমার নামে আশ্চর্য কাজ করবার পরে কেউ ফিরে আমার নিন্দা করতে পারে না’
- এখানে প্রথম বার আমরা যোহনকে একা কথা বলতে শুনি। লেখা আছে‘যোহন যীশুকে বললেন’। ‘বলা’র জন্য গ্রীকে যে শব্দ ব্যবহৃত তার অর্থ হল: ‘উত্তর দেওয়া, সাড়া দেওয়া, সারাংশ করা, উপসংহারে আসা’। তাই বুঝা যায় যে যোহনের কথা হল আগের একটি বিষয়ের কারণে বলা একটি কথা। তিনি মন্দ আত্মা তাড়ানোর লোককে নিয়ে প্রশ্ন করে, কিন্তু তা যীশুর আগের কথার সাথে কি মিল?
- যীশু এইমাত্র নেতৃত্বের সংজ্ঞা এভাবে দিলেন: সবাইকে সেবা করা ও সবাইকে স্বাগতম জানানো। যোহন তাই এমন একটি ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যেখানে তিনি মনে করেন যে এই লোককে বাদ দেওয়া বা বাধা দেওয়া উচিত কারণ সে শিষ্যদের দলের লোক নয় ও ব্যক্তিগতভাবে যীশুকে অনুস্মরণকারী নয়।
- যোহনের চরিত্র সম্বন্ধে এখানে কি দেখা যায়? যোহন ব্যক্তিগতভাবে যীশুর প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগত, তার যীশুর উপরে বিশ্বাস আছে, তিনি যীশুর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু তিনি নিজের পদ নিয়েও ব্যস্ত, ক্ষমতার লড়াইও করেন: তার খারাপ লাগে যখন ‘আরো লোক’ দেখা দেয়, যারা ‘আমাদের একজন নয়’। তিনি মনে করেন ওদের বাদ দেওয়া উচিত, থামানো উচিত। আসলে যোহন আগে দেখেন নি যে যীশু মানুষকে বাদ দিলেন বা থামালেন, কিন্তু এখানে তার বোধ হয় যে ‘যীশুর পক্ষে’ তা করা আবশ্যক এবং তা করার অধিকার তার আছে।
- যীশু আবারও দেখান যে নেতৃত্ব মানে অন্যদের সেবা করা ও স্বাগতম জানানো। অন্য লোককে বাদ দেওয়া বা থামানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তাকে জোর করে দলে আনারও প্রয়োজন নেই। যীশু নিশ্চিত যা সেই লোক ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন, তা তাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিচালনা দেবে।
- যীশু অবশ্যই জানতেন যে তিনজন শিষ্যদের আলাদা করে বিশেষ অভিজ্ঞতা দান করতে তা তাদের মধ্যে অহংকার ও ভুল চিন্তা উষ্কিয়ে দেবে: তারাই বিশেষ, তারাই অন্যদের চেয়ে বেশি কিছু ইত্যাদি। তাহলে যীশু তা তারপরেও করেন?
- হতে পারে যীশু চান যেন নেতৃত্বের বিষয়ে শিষ্যদের ভুল চিন্তা ও উদ্দেশ্যগুলি উঠে আসবে। তিনি তা শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দেওয়ার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করেন। যীশু তাদের নেতা হওয়ার ও প্রভাব ফেলার আকাঙ্ক্ষা নিরুৎসাহিত করেন না, কিন্তু তিনি তা আরো খাঁটি ও উন্নত করতে চান।
- একই বিষয় সিঙ্গাপুরের গায়িকা যেমন বলেছিলেন: ‘আপনি অহংকার এড়িয়ে যেতে পারেন না আপনার তালন্ত ব্যবহার না করা দ্বারা। বরং আপনার তালন্ত ব্যবহার করতে করতে অহংকার অতিক্রম করতে শিখুন’।
- যীশুর অবশ্যই খেয়াল আছে যোহনের মাথায় কি চিন্তা চলছে, যখন বিষয় উঠে তিনি তাকে ধমক দেন না বরং সুযোগ ধরে তাকে স্বাগতম জানান এবং তাকে শেখাতে থাকেন।
- এবং শেখাতে থাকা প্রয়োজন, কারণ যোহন (এবং অন্যান্য শিষ্যরা) এখনও বোঝেন না, নেতৃত্ব মানে কি।
লূক ৯:৫২-৫৫ শমরীয় গ্রামের উপরে আগুন নামানো যাকোবের সঙ্গে
‘তিনি আগেই সেখানে লোকদের পাঠিয়ে দিলেন। তারা যীশুর জন্য সব কিছু ব্যবস্থা করতে শমরীয়দের একটা গ্রামে ঢুকল, ৫৩ কিন্তু যীশু যিরূশালেমে যাচ্ছেন বলে সেই গ্রামের লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করল না। ৫৪ তা দেখে তাঁর শিষ্য যাকোব ও যোহন বললেন, “প্রভু, আপনি কি চান যে, এলিয়ের মত আমরা এদের ধ্বংস করবার জন্য স্বর্গ থেকে আগুন নেমে আসতে বলব?” ৫৫ যীশু তাঁদের দিকে ফিরে তাঁদের ধমক দিলেন।’
- যাকোব ও যোহন শমরীয়দের ব্যবহার দেখে ‘যীশুর পক্ষে’ অপমানিত হচ্ছেন। তারা অনেক বিশ্বাস দ্বারা (কিন্তু এমন একটি মনোভাবে যা যীশুর মনোভাবের বিপরীত) যে শমরীয়েরা যীশুকে অগ্রাহ্য করেছে তাদের উপরে একটি বিচার টেনে আনতে চান।
- তা দেখে আমরা তাদের স্বভাব-চরিত্র সম্বন্ধে কি বুঝতে পারি? তারা ঠিকই ‘বজ্রধ্বনির পুত্রেরা’ ! তারা আবেগীয়, মাথা গরম, সহজেই অপমানিত, যীশুর ভক্ত কিন্তুও তাড়াতাড়ি বিচার করতে রাজি। তারা ‘যীশুর পক্ষে’ অপমানিত, তারা মনে করেন যীশুর মান-সম্মান রক্ষা করার জন্য ও বিরুদ্ধীয় লোকদের ভয় দেখানোর জন্য তাদের কিছু করা দরকার।
- এত বড় কথা বলার পিছনে তাদের মধ্যে হয়তো এই চিন্তা বা উদ্দেশ্যও কাজ করে: তারা যীশুর প্রতি তাদের ভক্তি সবার সামনে ও বিশেষভাবে যীশুর সামনে দেখাচ্ছে যেন তাদের প্রিয়তা ও মর্যাদা বাড়ে। তারা হয়তো নিজে বুঝে না কিন্তু তাদের ব্যবহার ক্ষমতার জন্য লড়াই একটি কৌশলও হয়।
- যীশু তাদের ধমক দেন। নেতৃত্ব মানে কি ও আশ্চর্য কাজ সাধন করার ক্ষমতার ব্যবহার সম্বন্ধে যীশু তাদের ভুল ধারণা চ্যালেঞ্জ করেন। যীশু অপমানিত হতে প্রত্যাখ্যান করেন।
মার্ক ১০:৩৫-৪১, মথি ২০:২০-২৮ পদ চাওয়া যাকোবের সঙ্গে
‘পরে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহন যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাইব আমাদের জন্য আপনি তা-ই করবেন।” ৩৬ যীশু বললেন, “তোমাদের জন্য আমি কি করব? তোমরা কি চাও?” ৩৭ তাঁরা বললেন, “আপনি যখন মহিমার সংগে রাজত্ব করবেন তখন যেন আমাদের একজন আপনার ডানপাশে ও অন্যজন বাঁপাশে বসতে পারে।” ৩৮ যীশু বললেন, “তোমরা কি চাইছ তা জান না। যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খেতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা খেতে পার? কিম্বা যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পার?” ৩৯ তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, পারি।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে, ৪০ কিন্তু আমার ডান বা বাঁপাশে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। ঐ জায়গাগুলো যাদের জন্য ঠিক করা আছে তারাই তা পাবে।’ ৪১ বাকী দশজন শিষ্য এই সব কথা শুনে যাকোব ও যোহনের উপর বিরক্ত হলেন।’

- যাকোব ও যোহন তাদের মায়ের কথার মধ্য দিয়ে যীশুর কাছে ক্ষমতা ও মর্যাদা পাওয়ার অনুরোধ করেন। একটি যত্নশীল মা, যিনি নিজেই অনুসরণকারী ও যিনি দুইজন ছেলে পরিচর্য্যার জন্য দিয়েছেন, কে তাকে ‘না’ বলতে পারে যখন তিনি তার ছেলেদের জন্য অনুরোধ করেন?
- পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যাকোব ও যোহন আগে পরস্পরের সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করেছেন, রাজি হয়েছেন এবং এই কৌশল পরিকল্পিতভাবে ঠিক করেছেন।
- যাকোব ও যোহনের মনের চিন্তা ঠিক সে সময়ের অধিকাংশ যিহূদীদের চিন্তার মত: তারা মনে করেন একজন শক্তিশালী মশীহ এসে একটি বস্তু যিহূদী রাজ্য স্থাপন করবেন এবং পরজাতি অত্যাচারী শত্রুদের উপরে যিহূদীদের জয় দেবেন। তাদের এই অনুরোধ দেখে বুঝা যায় যে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে যীশুই মশীহ এবং তিনি শীঘ্রই তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করে তাঁর রাজ্য স্থাপন করবেন।
- কেন যাকোব ও যোহন মনে করেন যে তারা অন্যদের পাশে রেখে নিজের জন্য এত সুবিধা দাবী করতে পারেন? তারা ছিলেন প্রথম আহবান পাওয়া শিষ্যদের মধ্যে, যীশু তাদের বিশেষ সময় নিযুক্ত করেছেন (যায়ীরের কন্যাকে মৃতদের থেকে ফিরিয়ে আনায় ও রূপান্তরে) এবং তারা তাদের বিশেষ ভক্তি ও বিশ্বস্ততা প্রমাণিত করেছেন (শমরীয় গ্রামের উপরে আগুন চাওয়া)। তারা ‘বিশেষ শিষ্যদের দলে’, এবং যোহন যীশুর কাছাকাছির লোক।
- তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিন্তা করেন ও অন্যদের পাশে রেখে নিজেকে আগাতে চান। কিন্তু আসলে সব শিষ্যদের মনে একই চিন্তা আছে: যাকোব ও যোহনের উপরে তারা খেপে যায়, তাতে তা প্রমাণিত। তারা রাগ করেন কারণ তাদের মাথায় একই চিন্তা ছিল কিন্তু তারা ভাইদের মত আগেই চালাকি করে যীশুর কাছে নিয়ে আসেন নি।
- যাকোব ও যোহন স্বক্রিয়ভাবে ভবিষ্যতের চিন্তা করে, তারা আগে থেকে তাদের পদ ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে চান, তারা ক্ষমতার একটি বড় অংশ পেতে চান এবং তারা উপকার পাওয়া বা ক্ষমতার লড়াই কিভাবে করতে হয়, তা জানেন। হয়তো যোহন, যখন মন্দ আত্মা তাড়ানোর লোককে বাধা দেওয়ার বিষয়ে যীশুর সমর্থন পান না, তিনি নিজের পদের সন্দেহে ভুগেন তা এই কৌশল দিয়ে নিশ্চিত করতে চান।
- যীশু তাদের পদ চাওয়ার অনুরোধ পূর্ণ করেন না, কিন্তু তাদের ধমকও দেন না: নেতৃত্ব চাওয়া খারাপ কিছু না, কিন্তু যীশু তাদের দেখান, নেতৃত্ব মানে: কষ্ট ও ধৈর্য্য ধরা, অন্যদের প্রাধান্য দেওয়া, সেবা ও ত্যাগ-স্বীকার।
- যখন যীশু তাদের জিজ্ঞাসা করেন তারা কি তা করতে রাজি, তারা বলেন ‘হ্যাঁ’। তারপরেও যীশু তাদের অনুরোধ পূর্ণ করেন না। কিন্তু তিনি একটি ভবিষ্যদ্বাণী দেন: এই দুইজন ভাই ঠিকই যীশুর জন্য কষ্টভোগ করবেন।
- খেয়াল করুন যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পূর্ণ হয়: যাকোব শহীদ মৃত্যুবরণ করেন ৪৪ খ্রিষ্টাব্দে যখন যিহূদী রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ১ তাকে শিরশ্ছেদ করে ফেলেন (প্রেরিত ১২:১)। তাই যাকোব ১২ শিষ্যদের মধ্যে প্রথম শহীদ (যদিও স্তিফান এর আগে মারা গেছেন)।
- কিন্তু যোহন হলেন ১২ শিষ্যদের মধ্য শুধুমাত্র শিষ্য যিনি শহীদ মৃত্যুবরণ না করেন বরং বুড়ো হিসাবে ৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইফিষ শহরে সাধারণ মৃত্যু গ্রহণ করেন। যোহনকেও অনেক অত্যাচার করা হয়, তাকে মেরে ফেলার চেষ্টাও করা হয়, কিন্তু তিনি সেভাবে মারা যান না।
- যদিও যাকোব ও যোহনের মৃত্যু অনেক ভিন্ন, যীশু দুইজের বিষয়ে একই কথা বলেন: ‘তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে’। তাতে বুঝা যায় যে ঈশ্বরের চোখে একটি শহীদ মৃত্যু এবং একটি বিশ্বস্ত দীর্ঘদিনের জীবন একই মূল্যবান। এমন না যে বিশ্বস্ততা ও দীর্ঘদিনের ধৈর্য্য, সেবা ও ত্যাগ-স্বীকারের চেয়ে শহীদ মৃত্যু মূল্যবান। কারও শহীদ মৃত্যুকে খোঁজা দরকার নেই, যদিও কারও কারও শহীদ মৃত্যুবরণ করতে হবে।
- আরো বিস্তারিত চিন্তার জন্য ‘যোগাযোগ ০৮ – যীশু এবং পদের প্রতি লোভী শিষ্যরা’ দেখুন।
লূক ২২:৮ উদ্ধার পর্বের জন্য প্রস্তুতি পিতরের সঙ্গে
‘যীশু পিতর ও যোহনকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, ‘তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত কর যেন আমরা তা খেতে পারি।’ ৯ তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কোথায় এই ভোজ আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?” ১০ যীশু বললেন, ‘দেখ, তোমরা যখন শহরে ঢুকবে তখন একজন পুরুষ লোককে এক কলসী জল নিয়ে যেতে দেখবে। তার পিছন পিছন গিয়ে সে যে ঘরে ঢুকবে সেই ঘরের মালিককে বলবে, ‘গুরু জানতে চাইছেন, তিনি শিষ্যদের সংগে যেখানে উদ্ধার-পর্বের ভোজ খেতে পারেন সেই অতিথি-ঘরটা কোথায়?’ ১২ তখন সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে; সেখানেই সব কিছু প্রস্তুত কোরো।” ১৩ যীশু তাঁদের যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সব কিছু সেই রকমই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।’
- যোহন ও পিতর এখানে একটি ব্যবহারিক সেবা কাজের আদেশ পান।
- আদেশের নির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা যখন একটা পর একটা ঠিকই পূর্ণ হয়ে যায়, তা অবশ্যই ছিল শিষ্যদের জন্য উৎসাহের ব্যাপার। ঘটনাটি হল তাদের বিশ্বাস বাড়ানোর একটি বিষয়, হয়তো পরবর্তী দিনগুলিতে কি ঘটবে, তা নিয়ে আশা বাড়ানোরও বিষয়।
মার্ক ১৩:৩ শেষ কাল সম্বন্ধে তথ্য চাওয়া যাকোব, যোহন, পিতর ও আন্দ্রিয়
‘যীশু উপাসনা-ঘর থেকে যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “গুরু, দেখুন, কত বড় বড় পাথর, আর কি সুন্দর সুন্দর দালান!” ২ যীশু তাঁকে বললেন, ‘তুমি তো এই সব বড় বড় দালান দেখছ, কিন্তু এর একটা পাথরও আর একটা পাথরের উপরে থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।’ ৩ পরে যীশু যখন উপাসনা-ঘরের উল্টাদিকে জৈতুন পাহাড়ের উপরে বসে ছিলেন তখন পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয় তাঁকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, ৪ ‘আপনি আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে?’
যিরূশালেম শহর থেকে বের হতে হতে যীশু যিরূশালম ও উপাসনা-ঘরের একটি ভয়ংকর ধ্বংসবাণী দেন: ‘এর একটা পাথরও আর একটা পাথরের উপরে থাকবে না’ (মার্ক ১৩:২)। তিনি বলেন যে উভয় শহর ও মন্দির সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হবে, এমন কিছু যা যিহূদীদের মনে অভাবনীয় ও অবিশ্বাস্য।
যখন তারা উপত্যকার ওপাড়ে জৈতুন পাহাড়ে পৌঁছান (যেখান থেকে যিরূশালেম দেখা যায়), তখন যীশু বসে থাকেন তাদের প্রশ্নকে স্বাগতম জানানোর জন্য।
- চারজন শিষ্য, দুইজন দুইজন ভাই, সে তিনজন যারা রূপান্তর দেখেছেন (পিতর, যাকোব, যোহন) এবং আন্দ্রিয় ‘গোপনে’ যীশুর কাছে প্রশ্ন করতে আসেন। ‘গোপনে’ মানে কি? হতে পারে এই চারজন এমন সময়ে বা এমনভাবে যীশুকে প্রশ্ন করেন যা অন্যদের বাদ দেওয়ার মত হয়ে যায়। তারা এমন একটি সুযোগ খোঁজেন তাদের শেষ কাল সম্বন্ধীয় প্রশ্ন করার জন্য যখন অন্যরা মনোযোগী না বা উপস্থিত নন।
- শেষ কালের বিষয়ে সব যুগে (সে সময়ও, আজকেও) মানুষ ‘গোপন’ হতে চায়, ‘বিশেষ জ্ঞান’ খোঁজে বা ‘কেবলমাত্র আমরা জানি’ বা ‘শুধুমাত্র বিশেষ লোক অন্তরভুক্ত’ মনে করে।
যোহন ১৩:২৩-২৫, ২১:২০ প্রভুর ভোজ বারোজন শিষ্যদের সঙ্গে
‘তাঁদের মধ্যে যাঁকে যীশু ভালবাসতেন তিনি যীশুর বুকের কাছেই ছিলেন। ২৪ শিমোন-পিতর তাঁকে ইশারা করে বললেন, “উনি কার কথা বলছেন জিজ্ঞাসা কর।” ২৫ সেই শিষ্য তখন যীশুর দিকে ঝুঁকে বললেন, ‘প্রভু, সে কে?’
- যোহন আমাদের তার সুসমাচারে জানান যে তিনি যীশুর বুকের কাছেই ছিলেন এবং তিনি নিজের বর্ণনা এমনভাবে করেন ‘যাঁকে যীশু ভালবাসতেন’, ঘনিষ্ট সম্পর্কের একটি ছবি। তার অর্থ এই নয় যে যীশু অন্যদের ভালবাসতেন না, কিন্তু যোহন নিজের পরিচয় এমন ভাবে দেন।
- এই অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কারণে মানুষ অনেক বার মনে করেন যে যোহন ছিল খুব নম্র। প্রভুর ভোজের বিখ্যাত ছবিও তাকে অনেকবার এভাবে দেখায়, তার প্রায় মহিলার মত চেহারা। কিন্তু ভুলে যাবেন না যে যোহনও ‘বজ্রধ্বনির পুত্রে’ যিনি শমরীয়দের উপরে আগুন নামাতে এবং নিজের জন্য পদ-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। হতে পারে যোহন ছিলেন আবেগীয়, আকাঙ্খী, আগ্রহী, সহজে উত্তেজনশীল, সরাসরি, উদ্বোগী, কথা বলা ধরণের লোক।
- উপরের ছবি: ‘প্রভুর ভোজ’, শিল্পী: মিখেলাঞ্জেলো। পাশের ছবি: ‘যীশু ও যোহন’, শিল্পী ভালিন্টিন দে বুলনিয়া।
- কেউ কেউ বলেন যে যীশু যোহনকে অন্যদের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন। হয়তো আসলে যোহন ও যীশুর ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু যোহন যখন নিজেকে এই বর্ণনা দেন ‘যাঁকে যীশু ভালবাসতেন’ এর অর্থ হল যে যীশু অন্য শিষ্যদের কম ভালবাসতেন বা যোহনকে পক্ষপাত দেখাতেন, তা আবশ্যক না।
- তার এই বর্ণনা তুলনা হিসাবে বুঝতে হয়, তা না: তার অর্থ এই না যে যীশু অন্যদের ভালবাসতেন না, বরং যোহন তার নিজের সম্বন্ধে তা-ই সবচেয়ে উল্লেখ করার যোগ্য বিষয় মনে করেন:
- যোহন হয়তো নিজের এই বর্ণনা দেন নম্রতা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার জন্য: ‘যীশু আমাকেও ভালবাসতেন! বিশ্বাস করা যায় না!


মার্ক ১৪:৩২-৩৪ গেৎশিমানী
‘এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘আমি যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।’ ৩৩ এই বলে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিজের সংগে নিলেন এবং মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট পেতে লাগলেন। ৩৪ তিনি তাঁদের বললেন, ‘দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে জেগে থাক।’
- আবারও যীশু এই নির্দিষ্ট তিনজনকে আলাদা করেন। কিন্তু এইবার তা দুঃখের বিষয় হয়ে যায়: তারা বেশি গুরুত্ব দেন না, যীশুর এই বিশেষ কষ্টের ও অনুরোধ করার সময়, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। তাতে তারা পরে অনেক লজ্জা পাবে, এবং পরে তা নম্রতায় পরিণত হবে।
যোহন ১৮:১৬ মহাপুরোহিতের বাড়ীতে প্রবেশ
‘কিন্তু পিতর বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন মহাপুরোহিতের চেনা সেই শিষ্য বাইরে গিয়ে দরজার পাহারাদার মেয়েটিকে বলে পিতরকে ভিতরে আনলেন।’
- সম্ভাবনা বেশি যে ‘সেই শিষ্য’ বলে যোহন নিজেকে বুঝান। কেন তার পরিচয় এভাবে দেন? আসলে যোহন তার সুসমাচারে নিজের কথা সব সময় অসরাসরি উল্লেখ করেন। তিনি মাত্র এই গল্প জানেন ও তিনি মাত্র এই ছোট বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
- গেৎশিমানী বাগানে সবাই ভয়ে পালানোর পরে পিতর, এবং যোহনও, যীশুর পিছনে পিছনে যেতে চেষ্টা করেন। যোহন কোনো রকম মহাপুরোহিতের বাড়ীতে যথেষ্ট পরিচিত যেন তিনি নিজের জন্য এবং পিতরের জন্য প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারেন।
- কি করে সম্ভব একজন সাধারণ গালীলের জেলে হয়ে পিতর প্রবেশ করতে পারেন? আমরা নিশ্চিত জানি না। হয়তো যিরূশালেম আত্মীয় ছিল যাদের কাছে যোহন যেতেন যিহূদীদের তিনটি বাৎসরিক পর্বের জন্য। হয়তো তিনি মহাপুরোহিতকে চিনেন না, কিন্তু তার বাড়ীতে কর্মীকে চিনেন।
যোহন ১৯:২৬-২৭ যীশুর মা মরিয়মের জন্য দায়িত্ব
‘যীশু তাঁর মাকে এবং যে শিষ্যকে ভালবাসতেন তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। প্রথমে তিনি মাকে বললেন, ‘ঐ দেখ, তোমার ছেলে।” ২৭ তার পরে সেই শিষ্যকে বললেন, “ঐ দেখ, তোমার মা।” তখন থেকেই সেই শিষ্য যীশুর মাকে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন।’
- যীশু যেহেতু প্রথম ছেলে, মারা গেলে একটি বুড়ি মাকে রাখা, তার জন্য যত্নের ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব অনুভব করেন।
- কেন যীশু এই দায়িত্ব তাঁর পরে জন্ম নেওয়া সৎ-ভাই যাকোবকে দেন না, যিনি পরে যিরূশালেম মণ্ডলীর সম্মানিত নেতা হয়ে যান? অথবা তার ছোট চারজন সৎ-ভাইদের দায়িত্ব দেন না? হয়তো কারণ তারা এখনও যীশুর অনুসরণকারী হয় নি? যীশু ভবিষ্যৎ জানতেন তাই তিনি জানেন যে তারা পরে বিশ্বাসী হয়ে যাবে? অথবা তারা উপস্থিত ছিল না বলে যীশু তাদের পাচ্ছেন না। অথবা কারণ যোহন ছিলেন যীশুর একজন আত্মীয় (হয়তো)? অথবা কারণ যোহন ছিলেন সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু? আমরা উত্তর জানি না।
- আর একটি প্রশ্ন করা যায়: ১২ শিষ্যদের মধ্যে কেন যোহনকে দায়িত্ব দেন? কারণ উপস্থিত ছিলেন? কারণ যীশু জানেন যে অন্য শিষ্যদের চেয়ে যোহন অনেকদিন বাঁচবে? যখন ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমীয়দের দ্বারা যিরূশালেম সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়, ১২দের মধ্যে মাত্র যোহন এখনও জীবিত (যীশুর সৎ-ভাইদের নিয়ে সঠিক তথ্য নেই)। মণ্ডলীর আদিপিতাদের লেখায় উল্লেখ আছে যে যিরূশালেমের ধ্বংসের পরে যোহন মরিয়মকে ইফিষে নিয়ে যান যেখানে মরিয়ম (এবং অনেক পরে যোহনও) মারা যান। ঐ সময় মরিয়মের বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি।
যোহন ২০:১-৯ পুনরুত্থানের সাক্ষী পিতরের সঙ্গে
‘সপ্তার প্রথম দিনের ভোর বেলায়, অন্ধকার থাকতেই মগ্দলীনী মরিয়ম সেই কবরের কাছে গেলেন। তিনি দেখলেন, কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরানো হয়েছে। ২ সেইজন্য তিনি শিমোন-পিতর আর যে শিষ্যকে যীশু ভালবাসতেন সেই শিষ্যের কাছে দৌড়ে গিয়ে বললেন, “লোকেরা প্রভুকে কবর থেকে নিয়ে গেছে। তাঁকে কোথায় রেখেছে আমরা তা জানি না।’ ৩ পিতর আর সেই অন্য শিষ্যটি তখন বের হয়ে কবরের দিকে যেতে লাগলেন। ৪ দু’জন একসংগে দৌড়াচ্ছিলেন। অন্য শিষ্যটি পিতরের আগে আগে আরও তাড়াতাড়ি দৌড়ে প্রথমে কবরের কাছে আসলেন, কিন্তু তিনি কবরের ভিতরে গেলেন না। ৫ তিনি নীচু হয়ে দেখলেন, যীশুর দেহে যে কাপড়গুলো জড়ানো হয়েছিল সেগুলো পড়ে আছে। ৬ শিমোন-পিতরও তাঁর পিছনে পিছনে এসে কবরের ভিতরে ঢুকলেন এবং কাপড়গুলো পড়ে থাকতে দেখলেন। ৭ তিনি আরও দেখলেন, তাঁর মাথায় যে রুমালখানা জড়ানো ছিল তা অন্য কাপড়ের সংগে নেই, কিন্তু আলাদা করে এক জায়গায় গুটিয়ে রাখা হয়েছে। ৮ যে শিষ্য প্রথমে কবরের কাছে পৌঁছেছিলেন তিনিও তখন ভিতরে ঢুকলেন এবং দেখে বিশ্বাস করলেন। ৯ মৃত্যু থেকে যীশুর জীবিত হয়ে উঠবার যে দরকার আছে, পবিত্র শাস্ত্রের সেই কথা তাঁরা আগে বুঝতে পারেন নি।’
- যোহন ও পিতর খালি কবরের ও পুনরুত্থানের প্রথম সাক্ষীদের মধ্যে।
- খালি কবর দেখে মরিয়মের প্রথম চিন্তা ছিল যে কোনো কারণে কেউ যীশুর শরীর সরিয়ে নিয়েছেন। মাত্র যখন তিনি খবর দেওয়ার পরে কবরে ফিরে যান যীশু তার সাথে দেখা করেন।
- মরিয়মের কথা শুনে যোহন ও পিতর কবরে যান নিশ্চিত জানার জন্য মরিয়মের কথা ঠিক কিনা বা কি ঘটল। তারা কাপড়গুলি পড়া অবস্থা দেখে। যোহন তখন মরিয়মের প্রথম ব্যাখ্যা আর মানে না, বলা হয় যে তিনি ‘দেখে বিশ্বাস করলেন’। ঠিক কি যোহন বিশ্বাস করলেন?
- তা নিশ্চিত বলা যায় না, কারণ পুনরুত্থানের সমস্ত সাক্ষীদের জন্য এই রবিবার ছিল ধাপের পর ধাপ বুঝা ও প্রকাশ পাওয়ার একটি দিন। কেবলমাত্র আস্তে আস্তে তারা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারে তাদের চোখ কি দেখছে: যীশু আসলে পুনরুত্থিত। যীশুর পুনরুত্থানের অর্থ কি, তা বুঝতে আরো সময় লাগবে।
- আরো বিস্তারিত শিক্ষার জন্য দেখুন: ‘মণ্ডলী ১৯ – পুনরুত্থানের চোখের সাক্ষীরা’
যোহন ২১:৭ গালীলে পুনরুত্থিত যীশুর সাথে দেখা ১১জন শিষ্যদের সঙ্গে
‘যীশু যে শিষ্যকে ভালবাসতেন সেই শিষ্য পিতরকে বললেন, “উনি প্রভু।’
- যোহন এখানে নিজেকে উল্লেখ করেন যে তিনি পিতরের আগে যীশুর উপস্থিতি বুঝতে পেরেছেন, কিন্তু পিতর তার চেয়ে স্বক্রিয়।
প্রেরিত ৩:১-৪:২৩ উপাসনা ঘরের সুন্দর দরজায় পঙ্গুকে সুস্থ পিতরের সঙ্গে
‘৩:১ পিতর ও যোহন উপাসনা-ঘরে যাচ্ছিলেন। ২ লোকেরা প্রত্যেক দিন একজন লোককে বয়ে এনে উপাসনা-ঘরের সুন্দর নামে দরজার কাছে রাখত।…৪ পিতর ও যোহন সোজা তার দিকে তাকালেন। তার পরে পিতর বললেন, “আমাদের দিকে তাকাও।” ৫ তখন সেই লোকটি তাঁদের কাছ থেকে কিছু পাবার আশায় তাঁদের দিকে তাকাল। ৬ তখন পিতর বললেন…৭ পরে তিনি লোকটির ডান হাত ধরে তাকে তুললেন আর তখনই তার পা ও গোড়ালি শক্ত হল।…১১ ভিখারীটি কিন্তু পিতর ও যোহনের পিছু ছাড়ল না।… ১২ …পিতর লোকদের বললেন…’
‘৪:১ পিতর ও যোহন যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন সেই সময় পুরোহিতেরা, উপাসনা-ঘরের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দূকীরা তাঁদের কাছে আসলেন। ২ এঁরা খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন…৩ তাঁরা পিতর ও যোহনকে ধরলেন এবং সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বলে পরের দিন পর্যন্ত হাজতে রাখলেন।… ৭ তাঁরা পিতর আর যোহনকে তাঁদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কিসের শক্তিতে বা কার নামে এই কাজ করেছ?” ৮ তখন পিতর পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন…১৩ পিতর আর যোহনের সাহস দেখে এবং তাঁরা যে অশিক্ষিত ও সাধারণ লোক তা জানতে পেরে সেই নেতারা আশ্চর্য হয়ে গেলেন, আর তাঁরা যে যীশুর সংগী ছিলেন তাও বুঝতে পারলেন।…১৮ এর পরে তাঁরা পিতর ও যোহনকে আবার ভিতরে ডেকে আনলেন এবং আদেশ দিলেন যেন তাঁরা যীশুর বিষয়ে আর কোন কথা না বলেন বা শিক্ষা না দেন। ১৯ উত্তরে পিতর ও যোহন বললেন, “আপনাদের আদেশ পালন করব, না ঈশ্বরের আদেশ পালন করব? ঈশ্বরের চোখে কোন্টা ঠিক, আপনারাই তা বিচার করে দেখুন। ২০ আমরা যা দেখেছি আর শুনেছি তা না বলে তো থাকতে পারি না।” ২১ তখন তাঁরা পিতর আর যোহনকে আরও ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিলেন… ২৩ সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে পিতর ও যোহন তাঁদের নিজেদের লোকদের কাছে গেলেন এবং… সমস্তই তাদের জানালেন।’
- এই গল্পে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়: যদিও পিতর অধিকাংশ কথা বলার কাজ করেন, গল্পে যতজন সাড়া দেন, তারা সবাই পিতর এবং যোহনের কাছে সাড়া দেন: পঙ্গু দুইজনকে ছাড়ল না, নেতারা দুইজনকে গ্রেফতার করেন, নেতারা দুইজনের সাহস দেখেন। পিতরই প্রচার করেন (প্রেরিত ৩:১২) কিন্তু দুইজন লোকদের সঙ্গে কথা বলেন (প্রেরিত ৪:১)।
- বুঝা যায় যে তারা যদিও ‘দলীয়ভাবে’ কথা বলেন না, যত কিছু তারা করেন তারা একতায়, একই উদ্দেশ্যে , একই মনোভাবে করেন। দুইজনের অবদান ও অংশ গ্রহণ আছে।
প্রেরিত ৮:১৪-১৭ শমরিয়ায় পাঠানো পিতরের সঙ্গে
‘যিরূশালেমের প্রেরিতেরা যখন শুনলেন যে, শমরিয়ার লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করেছে তখন তাঁরা পিতর ও যোহনকে সেই লোকদের কাছে পাঠালেন। ১৫ পিতর ও যোহন এসে তাদের জন্য প্রার্থনা করলেন… ১৭ তখন পিতর ও যোহন তাদের উপর হাত রাখলেন, আর তারা পবিত্র আত্মা পেল।’
- ঠিক আগের মত, পিতর ও যোহন একতায় ও একই উদ্দেশ্যে কাজ করেন। এইবার যিরূশালেম মণ্ডলী তাদের দুইজনকে পাঠিয়েছেন শমরিয়ায় ঈশ্বর যা করেছেন, তা দেখার জন্য।
- অন্য প্রেরিতেরা তাদেরকে পাঠান ও তাদের বিশ্বাস যোগ্য ও প্রজ্ঞাপূর্ণ মনে করেন যে তারা এই নতুন ঘটনাগুলি বুঝতে, মূল্যায়ন করতে ও উপযুক্তভাবে সামলাতে সক্ষম। পিতর ও যোহন ঈশ্বরের হাত দেখতে পাচ্ছে, তাতে সমর্থন ও উৎসাহ দেন এবং আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করেন। যোহন আগে লোকদের বাদ বা বাধা দিতে চাইতেন, এই মনোভাব বা ব্যবহার আর দেখা যায় না এখানে।
প্রেরিত ১২:১-২ যোহন তার ভাইকে শহীদ মৃত্যুবরণ করতে দেখেন
‘সেই সময় রাজা হেরোদ অত্যাচার করবার জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কয়েকজন লোককে ধরে এনেছিলেন। ২ তিনি যোহনের ভাই যাকোবকে ছোরা দিয়ে খুন করিয়েছিলেন।’
- প্রথম মণ্ডলী স্থাপন হওয়ার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যোহন তার ভাইকে এভাবে হারান। ১২ শিষ্যদের মধ্যে যোহনের ভাই যাকোব প্রথমই শহীদ মৃত্যুবরণ করেন। যোহনের অবশ্যই যীশুর কথা মনে পড়েছিল ‘যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে’ (মার্ক ১০:৩৯)। হয়তো যোহন্ও ভয় পেলেন যে তাকে শীঘ্রই মেরে ফেলা হবে, কিন্তু এভাবে হয় নি।
- রাজা হেরোদ অগ্রিপ্পের জঘন্য মৃত্যু দেখে যোহন হতে পারে নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন যে ঈশ্বর ঠিকই ন্যায় বিচারের ঈশ্বর যার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নয় (প্রেরিত ১২:২৩)।
গালাতীয় ২:২,৯ পিতর, যোহন ও যীশুর ভাই যাকোব যিরূশালেম মণ্ডলীর স্তম্ভ
‘যে সুখবর আমি (পৌল) অযিহূদীদের কাছে প্রচার করে থাকি তা বললাম। মণ্ডলীর গণ্যমান্য লোকদের কাছে সেই সব গোপনেই বললাম, কারণ আমার ভয় হচ্ছিল যে, হয়তো আমি অনর্থক পরিশ্রম করছি বা করেছি।…৯ সেই গণ্যমান্য লোকেরা, অর্থাৎ যাকোব, পিতর ও যোহন এই সব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ দয়া পেয়েছি। তাঁদের ও আমাদের মধ্যে যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ আছে তা দেখাবার জন্য তাঁরা আমার ও বার্ণবার সংগে ডান হাত মিলালেন।’
- এই ঘটনা ৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ঘটে, প্রথম মণ্ডলী স্থাপনের ১৭ বছর পরে। যোহন যিরূশালেম মণ্ডলীর একজন প্রধান ‘গণ্যমান্য লোক’ (কেরী: ‘স্তম্ভরূপে মান্য”) এবং পৌল তার প্রতি বশীভূত হন।
- যোহন এখানে পৌলের জীবনে ঈশ্বরের হাত দেখতে পান ও পৌলের মধ্যে আর একজন ‘বজ্রধ্বনির পুত্র’ দেখতে পান, তার মত যীশুর একজন আবেগীয়, আকাঙ্খী, আগ্রহী, মনে-প্রাণের অনুসরণকরাী। আগের সেই ‘বাধা দেওয়ার’ মনোভাব আর নেই।
মণ্ডলীর ইতিহাস
- মণ্ডলীর আদিপিতা ইরেন্যায়াস (১৩০-২০২ খ্রিঃ, স্মূর্ণায় জন্ম একজন গ্রীক, যিনি পরে ফ্রেন্সের লিয়ন শহরের অধ্যক্ষ হন এবং খ্রিষ্টান বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি তর্কের একজন লেখক) যোহন সম্বন্ধে কিছু তথ্য দেন:
- যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধে ৬৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন যিরূশালেমের ঘেড়াও কিছুক্ষণ ধরে খুলে যায়, যিরূশালেম মণ্ডলীর লোকেরা পালিয়ে যায়। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে অবশেষে যিরূশালেম শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং রোমীয়রা বাকি যিহূদীদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে।
- যোহন, ১২ শিষ্যদের মধ্যে শেষ জীবিত লোক, ইফিষ শহরে বাস করতে শুরু করেন (মোটামুটি ৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে)। ইফিষ শহর কেন্দ্র করে তিনি শিষ্যত্ব, শিক্ষা, নেতৃত্ব, দেখাশুনা ও মণ্ডলীর সেবা যত্মের কাজ করতে থাকেন। তিনিও বিভিন্ন মণ্ডলীর কাছে বেড়াতে থাকেন (২ যোহন ১২, ৩ যোহন ১৪)।
- তিনি হতে পারে ৭০-৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তার সুসমাচার (যোহন), তার তিনটি চিঠি (১, ২, ৩ যোহন) ও প্রকাশিত বাক্য ইফিষ থেকে লিখেন।
- ২ ও ৩ যোহন চিঠিতে তিনি নিজের পরিচয় ‘প্রাচীন’ (কেরী) বা ‘বুড়ো নেতা’ (সাধারণ) হিসাবে দেন, যাতে তার নম্রতা প্রকাশিত। অবশ্যই তার বয়স সে সময় কম পক্ষে ৭০ বছর, এবং তিনি শেষ জীবিত শিষ্য।
- ১ যোহন চিঠিতে তিনি নিজের নাম উল্লেখ করেন না কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় এমন একজন হিসাবে দেন যিনি শুরু থেকে ছিলেন এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখেছেন। তিনিই সত্যের সাক্ষী: ‘সেই প্রথম থেকেই যিনি ছিলেন, যাঁর মুখের কথা আমরা শুনেছি, যাঁকে নিজেদের চোখে দেখেছি, যাঁকে ভাল করে লক্ষ্য করেছি, যাঁকে নিজেদের হাতে ছুঁয়েছি, এখানে সেই জীবন-বাক্যের কথাই লিখছি’ (১ যোহন ১:১)।
- যোহনের সব চিঠিতে এবং তার সুসমাচারে তিনি ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে লিখেন যা মণ্ডলীতে উঠেছিল। যোহন এখানে নোঙ্গরস্বরূফ, সত্যের পক্ষে একজন চোখের সাক্ষী যার অধিকার আছে ভ্রান্ত শিক্ষা ও ভ্রান্ত শিক্ষকদের সংশোধন করা। তিনি সত্যের রক্ষক।
- যোহন ইগ্নাটিয়াস (Ignatius) নামে একজনকে শিষ্যত্ব ও প্রশিক্ষণ দেন, যিনি পরে আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর অধ্যক্ষ হয়ে যান। তিনি পলিকার্প্ নামে একজনকেও শিষ্যত্ব ও প্রশিক্ষণ দেন, যিনি পরে স্মূর্ণা মণ্ডলীর অধ্যক্ষ হয়ে যান। পলিকার্প আবার শিষ্যত্ব দিলেন ইরেন্যায়াসকে, যিনি যোহন সম্বন্ধে এই তথ্য লিখে রেখেছিলেন।
- ইরেন্যায়াস (Irenaeus) যোহন সম্বন্ধে একটি গল্প বলেন: যোহন একটি ইফিষ শহরে একটি স্নান ঘরে গেলেন। ঢোকার সময় তিনি শুনতে পেলেন যে সেরিন্থীয় নামে একজন ভ্রান্ত শিক্ষক ভিতরে উপস্থিত যোহন তাড়াতাড়ি স্নান ঘর থেকে বের হয়ে বললেন: ‘পালাব! হয়তো স্নান ঘর ভেঙ্গে পড়বে যেহেতু সত্যের শত্রু সেরিন্থীয় ভিতরে আছে। ‘বজ্রধ্বনীর পুত্র’ এখনও জীবিত আছে!
- গালাতীয় ৬:১০ পদ সম্বন্ধীয় মণ্ডলীর আদিপিতা জেরোম দিয়ে লিখিত একটি শিক্ষার মধ্যে ইফিষ শহরে বুড়ো বয়সের যোহনের একটি গল্প বলেন: তারা যোহনকে (বয়সের কারণে) বহন করে উপাসনা ঘরে নিয়ে যেতেন। তিনি আর বেশি কিছু বলতে আর সক্ষম না হওয়ায় সব সময় একই কথা বলতেন: ‘ছোট ছেলে-মেয়েরা, পরস্পর্কে ভালবাসো!’ অবশেষে লোকেরা তা শুনে ক্লান্ত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল: ‘কেন আপনি সব সময় সে একই কথা বলেন?’ যোহন উত্তর দিলেন: ‘এইটাই প্রভুর আদেশ, এবং তা মাত্র যদি আমরা করি তবে অনেক কিছু করলাম।
- মণ্ডলীর ইতিহাস বলে যে যোহন ছিলেন ১২ শিষ্যদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী এবং যে তিনি সম্রাট ত্রায়ান রাজত্ব শুরু করা পর্যন্ত জীবিত থাকলেন, যার সাল হল ৯৮ খ্রিঃ।
- বামের ছবি: রাশিয়ার অর্থডোক্স্ মণ্ডলীর যোহনের একটি ছবি (icon), আজকে কিস্হি শহরের মোনাষ্টেরিতে দেখা যায়।
প্রকাশিত বাক্য ১:১,৪,৯, ২১:২, ২২:৮ যোহন প্রকাশিত বাক্যের লেখক
‘এই বইয়ের মধ্যে যা লেখা হয়েছে তা যীশু খ্রীষ্টই প্রকাশ করেছেন। এই সব বিষয় ঈশ্বর খ্রীষ্টের কাছে প্রকাশ করেছিলেন, যেন যে সব ঘটনা কিছুকালের মধ্যেই অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে তা তিনি তাঁর দাসদের জানান। খ্রীষ্ট তাঁর দূত পাঠিয়ে তাঁর দাস যোহনকে এই সব বিষয় জানিয়েছিলেন।…৪ আমি যোহন এশিয়া প্রদেশের সাতটা মণ্ডলীর কাছে লিখছি।..৯ আমি তোমাদের ভাই যোহন; যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে আমি তোমাদের সংগে একই কষ্ট, একই রাজ্য এবং একই ধৈর্যের ভাগী হয়েছি। ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রচার করেছিলাম বলে আমাকে পাট্ম দ্বীপে নিয়ে রাখা হয়েছিল।… ২১:২ পরে আমি (যোহন) সেই পবিত্র শহরকে, অর্থাৎ নতুন যিরূশালেমকে স্বর্গের মধ্য থেকে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসতে দেখলাম…২২:৮ আমি যোহন এই সব শুনেছি ও দেখেছি। সব শুনবার ও দেখবার পরে, যে স্বর্গদূত আমাকে এই সব দেখালেন আমি তাঁকে প্রণাম করবার জন্য তাঁর পায়ের উপর উবুড় হলাম।’
- তার অন্য লেখায় যোহন তার নাম সরাসরি বলেন না কিন্তু প্রকাশিত বাক্যে তিনি তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন, যদিও তিনি নিজের বিষয়ে তার নাম ‘যোহন’ ছাড়া আর বেশি কিছু বলেন না। যেহেতু প্রকাশিত বাক্য অনেক বিশেষ ধরণের একটি লেখা যোহনের নাম (যার অনেক অধিকার ছিল) সরাসরি বলা প্রয়োজন ছিল।
- তিনি দর্শনটি পাটম দ্বীপে দেখলেন (প্রকাশিত ১৯), এমন একটি দ্বীপ যা মনে করা হয় বন্দিদের বা নির্বাসিতদের জন্য ব্যবহার করা হত এবং লোকদের খনির কাজে লাগানো হত।
- মণ্ডলীর আদিপিতা টের্টুল্লিয়ান (Tertullian) তার ‘ভ্রান্তদের শিক্ষা’ নামের বইয়ে (‘The Prescription of Heretics’) বলেন যে হতে পারে সম্রাট ডোমিটিয়ানের সময়ে যোহনকে মেরে ফেলার জন্য ফুটানো তেলের মধ্যে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু তার কোনো ক্ষতি হয় নি বলে তাকে শাস্তি হিসাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
যোহন ২১:২১-২৪ যোহন সুসমাচার লিখেন
‘পিতর তাঁকে দেখে যীশুকে বললেন, “প্রভু, এর কি হবে?” ২২ যীশু পিতরকে বললেন, “আমি যদি চাই এ আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত থাকে, তাতে তোমার কি? তুমি আমার সংগে এস।” ২৩ এইজন্য ভাইদের মধ্যে এই কথা ছড়িয়ে গেল যে, সেই শিষ্য মরবেন না। যীশু কিন্তু পিতরকে বলেন নি সেই শিষ্য মরবেন না। তিনি বরং বলেছিলেন, “আমি যদি চাই সে আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত থাকে, তাতে তোমার কি?” ২৪ সেই শিষ্যই এই সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন আর এই সব লিখেছেন। আমরা জানি তাঁর সাক্ষ্য সত্যি।’
- যীশু এইমাত্র পিতরকে তার আগের আহবানে ‘মেষ চরানোর কাজে’ বা মণ্ডলীর নেতৃত্বে পুনরায় স্থাপন করেছেন। কিন্তু পিতর এখানে অন্যদের বিষয়ে বা অন্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন।
- যীশু পিতরকে ‘অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত’ হতে দেন না, তিনি তাকে অন্যদের না, বরং নিজেকে চালানোর জন্য নির্দেশনা দেন।
- যোহন এখানে একটি গুজব-গল্পকে প্রতিরোধের জন্য কিছু বলতে প্রয়োজন মনে করেন: হয়তো অনেকে যীশুর কথা ভুল বুঝে মনে করতেন যে যোহনের মৃত্যু হবে না। সব শিষ্যরা মারা যাওয়ার পরে যখন অনেক প্রচেষ্টার পরেও যোহন মারা যান না (ডোমিটিয়ানের শাস্তি) এবং যখন তিনি বুড়ো বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন তখন হয়তো এই গুজব-গল্প আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
- যোহন এখানে খুব সাবধান যেন তিনি এই ধরণের মিথ্যা আশায় সমর্থন না দিয়ে বরং সেগুলি সংশোধন করেন। কারণ যখন শেষে তিনি মারা যাবেন লোকদের আশা ভেঙ্গে পড়বে। যোহন চান নি যে এই ধরণের একটি মিথ্যা আশা ভাঙ্গার কারণে লোকেরা তার আসল কথা, সাক্ষ্য, সুসমাচার ও লেখা নিয়ে সন্দেহ করবে এবং এভাবে অনেক এলোমেলো সৃষ্ট হবে। যোহন শিখেছেন কত তাড়াতাড়ি একটি ভ্রান্ত শিক্ষা মণ্ডলীকে অনেক ক্ষতি করতে পারে।
- এখানে আবারও যোহনের নম্রতা প্রকাশিত: তিনি ‘বিশেষ কিছু’ হওয়ার কোনো দাবী করেন না এবং এই ধরণের গুজব-গল্প ধ্বংস করতে চেষ্টা করেন। সে শিষ্য যিনি এক সময় যীশুর রাজ্যের ডান হাতের পদ চেয়েছেন, ঠিক তা পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পান নি। কিন্তু যে নেতৃত্ব তিনি দিতে চেয়েছিলেন ও যে প্রভাব যা তিনি ফেলতে চেয়েছিলেন, তা তিনি আসলে পেরেছেন। যোহনের কি অদ্ভূত ধরণের একটি জীবন, তিনি কত বিশ্বস্ত।