পৌল রোম শহরের মণ্ডলীর কাছে এই চিঠি লেখেন যার কাছে তিনি বেড়াতে আসতে চান এবং যার কাছ থেকে তিনি আরো পশ্চিমে সুখবর প্রচার কাজের জন্য সাহায্য আশা করেন। এই মণ্ডলীতে যিহূদী ও অযিহূদী বিশ্বাসীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে বলে পৌল দ্বন্দ্বটি সমাধান করার জন্য তার সে সবচেয়ে বিখ্যাত চিঠি লেখেন।
পৌল ৫৬ খ্রীষ্টাব্দে, তার তৃতীয় প্রচার যাত্রার শেষের দিকে, করিন্থ শহর থেকে রোমীয়দের কাছে এই চিঠি লেখেন। পৌল এইমাত্র করিন্থ মণ্ডলীর সঙ্গে প্রাণঘাতী একটি দ্বন্দ্ব সমাধান করতে পেরেছেন এবং তার মনে আবার শান্তি আছে বলে, তিনি পশ্চিম দিকে তাকিয়ে নতুন অগ্রণী কাজের চিন্তা করেন। তিনি বলেন “কিন্তু এখন এই সব এলাকায় আমার কাজ করবার আর জায়গা নেই। অনেক বছর ধরেই তোমাদের কাছে আমার যাবার ইচ্ছা, তাই এখন সেপন দেশে যাবার পথে আমি তোমাদের কাছে যেতে চাইছি। আমি আশা করি যে, ঐ পথ দিয়ে যাবার সময়ে তোমাদের কাছে যেতে পারব এবং তোমাদের সংগে কিছু সময় আনন্দে কাটাবার পর তোমরাই আমাকে সেপন দেশে যাবার ব্যবস্থা করে দেবে” (রোমীয় ১৫:২৩-২৪)।
যদিও পৌল একবারও রোম শহরে যান নি তিনি অনেক রোমীয় বিশ্বাসীদের ব্যক্তিগতভাবে চিনেন এবং তাদের মধ্যে ছাব্বিশজনের নাম উল্লেখ করে বক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন (রোমীয় ১৬)। তার এই চিঠিতে পৌল নিজের পরিচয় দেন এবং তার সুখবর উপস্থাপনা করেন যেন মণ্ডলী তাকে গ্রহণ করে যখন তিনি রোমে আসবেন এবং যখন তিনি আরো পশ্চিম দিকে প্রচার কাজে রওনা দেবেন তখন যেন তারা তাকে সমর্থন করে।
কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পৌল খবর পেয়েছেন যে রোমীয় মণ্ডলীর মধ্যে একটি বড় দ্বন্দ্ব চলছে এবং বিচ্ছেদ আরো গভীরে যাচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব সমাধান করার জন্য পৌল সুখবরের সবচেয়ে ভিত্তিক সত্যগুলি পুনরায় শেখান। তিনি যুক্তিভিত্তিক একটি ‘প্রশ্ন ও উত্তর পদ্ধতি’ ব্যবহার করেন এবং শ্রোতাদের সম্ভাব্য আপত্তি বা প্রশ্নগুলি অগ্রিম তুলে ধরেন ও তার উত্তর দেন। তাই রোমীয় চিঠিতে পৌল সুখবরের সবচেয়ে চমৎকার ও বিস্তারিত বর্ণনা করেন এবং শক্তিশালী যুক্তি ও কারণ দেখান যেন মণ্ডলী একতার মধ্যে থাকে। রোমীয় পুস্তক হল পৌলের সবচেয়ে লম্বা ও সবচেয়ে বিখ্যাত চিঠি।
তিনি তার চিঠি শুরু করেন এই কথা বলে যে, সব অযিহূদী – এবং আসলে সব মানুষই – ঈশ্বরের সামনে দোষী। যদিও তারা পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরের সে নির্দিষ্ট প্রকাশ পায় নি তবুও তাদের ছিল সৃষ্টির সে সাধারণ প্রকাশ ও মানবীয় অভিজ্ঞতা। কিন্তু তারা এই সাধারণ প্রকাশে বাধ্য হয় নি বরং পাপ করেছে এবং তাই তারা ঈশ্বরের ক্রোধের পাত্র হয়েছে (রোমীয় ১)। অপর পক্ষে যিহূদীরা , তারা ঈশ্বরের প্রকাশ, জাতীয় আহবান, আইন-কানুন ও ভাববাদী পেয়েছিল। যিহূদীরা অযিহূদীদের পাপের বিচার করে, কিন্তু তারা নিজেও ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয় না (রোমীয় ২)। তাই উভয় অযিহূদী ও যিহূদী ঈশ্বরের সামনে দোষী, কেউ ঈশ্বরের দয়া পাওয়ার জন্য যোগ্য নয় (রোমীয় ৩)। কিন্তু মানুষ অযোগ্য হলেও ঈশ্বর সবার প্রতি তাঁর দয়া দেখিয়েছেন যখন তিনি মানুষের পাপের শাস্তির বদলে যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু গ্রহণ করেছেন। তাই যীশুর উপর বিশ্বাস রাখলে এবং যীশু যা করেছেন তার উপরে ভরসা রাখলে, যিহূদী ও অযিহূদী উভয়ই পরিত্রাণ পায়। তাই অব্রাহাম সত্যিকারেরভাবে অনেক জাতির আদিপিতা হয়েছেন, উভয় সে যিহূদীদের আদিপিতা যারা তার মত বিশ্বাস করেছেন, – এবং সে অযিহূদীরা, যারা তার মত বিশ্বাস করেছেন। ঈশ্বর অযিহূদীদেরকে সুন্নত না করা অবস্থায় গ্রহণযোগ্য বানিয়ে বিশ্বাসের ভিত্তিতে গ্রহণ করেছেন, যেমন অব্রাহামকেও সুন্নত না করা অবস্থায় গ্রহণ করেছিলেন (রোমীয় ৪)। যীশুই ‘দ্বিতীয় আদম’: প্রথম আদমের দ্বারা পৃথিবীতে পাপ, ঈশ্বর থেকে বিছিন্ন হওয়া ও মৃত্যু এসেছিল। দ্বিতীয় আদম (যীশু) দ্বারা গ্রহণযোগ্যতা, পুত্র হওয়ার অধিকার ও অনন্ত জীবন এসেছে (রোমীয় ৫)।
ঈশ্বরের দয়ায় পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অযিহূদীদেরকে (আসলে সব মানুষেকে) পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে মরে যেতে এবং খ্রীষ্টেতে নতুন জীবনে জন্ম নিতে হবে (রোমীয় ৬)। এই নতুন ধার্মিক ও ঈশ্বরীয় জীবন শুধুমাত্র পবিত্র আত্মার পরিচালনায় সম্ভব। অপর পক্ষে ঈশ্বরের দয়ায় পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যিহূদীদেরকে (এবং সব মানুষ যারা নিজের ধার্মিকতার উপর নির্ভর করে) আইনের কাছে এবং ধার্মিক হওয়ার জন্য নিজের প্রচেষ্টার কাছে মরে যেতে হবে। নিজের ধার্মিকতার উপর ভরসা না রেখে বরং ঈশ্বরের ধার্মিকতার উপরে ভরসা রাখতে হবে, কারণ ঈশ্বর তার ধার্মিকতা মানুষদের দিয়ে দেন, তা মানুষের প্রচেষ্টার উপর কোনো রকম নির্ভর করে না (রোমীয় ৭)।
খ্রীষ্টেতে ও পবিত্র আত্মা দ্বারা যে জীবন বিশ্বাসীরা পায়, তা তাদের জন্য পুনরুদ্ধার, পুত্রত্ব, স্বাধীনতা ও মহিমা নিয়ে আসবে। তা মাত্র নয়, অবশেষে সম্পূর্ণ সৃষ্টি, সম্পূর্ণ বস্তু জগতও সে একই পুনরুদ্ধার ও মহিমার অংশীদার হবে (রোমীয় ৮)। পৌল দেখান যে, ঈশ্বরের অসীম করুণা এবং পুনরুদ্ধার করার মহাপরিকল্পনা সব সময় উভয় যিহূদী ও অযিহূদীদের জন্যই ছিল, তাই অহংকার, উঁচু-নিচু ভাব বা অন্যদের বাদ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতার ও একতার কারণ আছে (রোমীয় ৯-১১)।
পৌল রোমীয় বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা ভাইদের প্রতি ভালবাসায়, পরস্পরের প্রতি সম্মান ও পরস্পরকে মেনে নেওয়ার মনোভাবে এই নতুন জীবন কাটায়, যেন পরস্পরকে প্রাধান্য দেয় এবং পরস্পরের স্বাধীনতাকে বিচার না করে। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা নিজের স্বাধীনতা দাবি না করে যদি তাতে এক ভাইয়ের ক্ষতি হয় বরং যেন তারা ভাইকে উৎসাহিত করে তার চেতনার বিরুদ্ধে কোনো কাজ না করতে (রোমীয় ১২-১৫)। পরস্পরকে সম্মানের চোখে দেখার সে মনোভাব পৌল নিজেই এই চিঠিতে রোমীয় বিশ্বাসীদের প্রতি দেখান, যেভাবে তিনি তাদের কথা বলেন, যেভাবে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিদের মমতা দিয়ে শুভেচ্ছা ও সুপারিশ করেন, তার মাধ্যমে।
চিঠির লেখক এবং রোমীয় মণ্ডলী
পৌল তার তৃতীয় প্রচার যাত্রার শেষের দিকে (৫৬ খ্রীঃ) করিন্থ শহর থেকে রোমীয় চিঠি লেখেন (রোমীয় ১৫:২৫-২৭ হল ১ করি ১৬:১-৪ পদের সমান্তরাল)। পৌল এইমাত্র একটি বড় দুশ্চিন্তা ও বিপদ কেটে উঠতে পেরেছেন: করিন্থীয় মণ্ডলীর সাথে তার একটি খুব কষ্টের দ্বন্দ্ব যার বর্ণনা ১ করিন্থীয ও আরো বেশি ২ করিন্থীয় চিঠিতে পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি মাস পৌল বিরাট দুশ্চিন্তায় ও দ্বিদাদ্বন্দ্বের কাটিয়েছিলেন কিন্তু দ্বন্দ্ব সমাধান হওয়ার পরে পৌলের আবার শান্তি লাগে এবং তার চিন্তা পশ্চিমদিকে যায় যেখানে তিনি নতুন মণ্ডলীর স্থাপনের কাজ হাতে নিতে চান। তিনি অনুভব করেন যে “এখন এই সব এলাকার আমার কাজ করবার আর জায়গা নেই। অনেক বছর ধরেই তোমাদের কাছে আমার যাবার ইচ্ছা, তাই এখন স্পেন দেশে যাবার পথে আমি তোমাদের কাছে যেতি চাটিছি” (রোমীয় ১৫:২৩-২৪)।
পৌল কখনও রোম শহরে যান নি, কিন্তু তার দুইজন খুব বিশ্বস্ত সহকর্মী, আকিলা ও প্রিস্কিল্লা (স্বামী-স্ত্রী) ওখানে উপস্থিত (রোমীয় ১৬:৩)। তারা ৪৯ খ্রীঃ রোম শহর ছেড়ে করিন্থ শহরে এসেছিলেন যেখানে তারা পৌলের সঙ্গে পরিচিত হন এবং একসাথে কাজ করেন (প্রেরিত ১৮:১-৩)। পরে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে ইফিষ শহরে কাজ শুরু করেন (রোমীয় ১৮:১৮-২১, ২৫-২৬) এবং পৌল একটু পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন (প্রেরিত ১৯:১)। কিন্তু পৌল রোমীয় চিঠি লেখার সময় তারা আবার রোমে আছেন এবং তাদের বাড়িতে একটি গৃহ মণ্ডলী একত্রিত হয় (রোমীয় ১৬:৩-৪)। আকিলা ও প্রিস্কিল্লার পাশাপাশি পৌল রোমীয় মণ্ডলীর আরো ২৪জনকে চেনেন এবং নাম দিয়ে সুভেচ্ছা এবং সুন্দর সুপারিশ দেন।
ছবিগুলি
পৌল তাই রোমীয় মণ্ডলীর স্থাপনকারী নন। পিতর রোমীয় মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন তার জন্য ও কোন প্রমাণ নেই কারণ সে সময় পিতর এখনও যিহূদিয়ায় এবং পূর্বের এলাকাগুলিতে পরিচর্যা করতেন।
ইতিহাস থেকে শুধুমাত্র জানা যায় যে ইতিমধ্যে ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে রোম শহরে একটি স্বক্রিয় মণ্ডলী উপস্থিত। কে মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন তা অজানা, হয়তো মণ্ডলী শুরু হয়েছিল সে রোমীয় যিহূদীদের মধ্য দিয়ে যারা পঞ্চাশত্তমী দিনে পিতরের প্রচার শুনেছিল, বিশ্বাসী হয়েছিল এবং অবশেষে রোম শহরে ফিরেছিল (প্রেরিত ২:১০)। মণ্ডলী বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অযিহূদী বিশ্বাসীও যোগ দিচ্ছে।
যেমন প্রেরিত পুস্তকে অনেক বার ঘটে, সম্ভবত রোম শহরের মণ্ডলীর বিরুদ্ধেও যিহূদীরা এক ধরণের বা অন্য ধরণের আন্দোলন শুরু করেছিল। বিষয় তা এমন হয়েছিল যে রোমীয় সম্রাট ক্লৌদিয় বিরক্ত হয়ে সব যিহূদীদের রোম ও ইটালী ছেড়ে যেতে বলেন। ক্লৌদিয়ের এই আদেশ রোমীয় ইতিহাসবিদ সুয়েটনিয়াস (Suetonius) তার “কৈসরদের জীবন” নামে তার পুস্তকে (ল্যাটিন ভাষায় ‘De Vitae Caesarum’) উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন: “যিহূদীরা বার বার “খ্রেষ্টস” নামে একজনের কাছে আন্দোলন চালিয়েছিলেন বলে সম্রাট ক্লৌদিয় তাদেরকে রোম থেকে তাড়িয়ে দিলেন”। বর্ণনাটি থেকে বুঝা যায় যে ক্লৌদিয় আন্দোনটি একটি যিহূদী-যিহূদী দ্বন্দ্ব মনে করতেন যাতে রোমীয়দের গর্বের ‘রোমীয় শান্তি’ নষ্ট হত। তিনি বেশি তদন্ত না করে মণ্ডলী একটি যিহূদী দল হিসাবে চিহ্নিত রেখেছিলেন, যা সে সময়ে অবশ্যই এভাবে বোধ হতে পারে। ক্লৌদিয় ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে আদেশটি দেন, যার ফলে সব যিহূদীদের – এবং তাদের মধ্যে যিহূদী বিশ্বাসীদেরও – রোম ছেড়ে চলে যেতে হয়, যেমন আকিলা ও প্রিস্কিল্লা, যারা করিন্থ শহরে যায় এবং সেখানে পৌলের সঙ্গে পরিচর্যা করেন (প্রেরিত ১৮:১-২)।
রোম শহরে থেকে থাকে একটি সম্পূ্র্ণ অযিহূদী মণ্ডলী যা সব যিহূদী বিশ্বাসীরা চলে যাওয়ার পর নিজেকে পরিচালনা করে।
৫৪ খ্রীষ্টাব্দে, যখন সম্রাট ক্লৌদিয় মারা যান, তার সেই আদেশ তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া হয় বলে যিহূদীরা – এবং তাদের মধ্যে যিহূদী বিশ্বাসীরাও – রোম শহরে ফিরতে শুরু করে। হঠাৎ করে অযিহূদী রোমীয় মণ্ডলীতে যিহূদী বিশ্বাসী আবার যোগ দেয়।
সম্ভাবনা বেশি যে যিহূদীরা বাদ যাওয়ার পরে অযিহূদী মণ্ডলী নানা যিহূদী নীতি বাদ দিয়েছিল (যেমন খাবারের নিয়ম, বিশ্রামবার পালন বা পুরাতন নিয়মের অন্যান্য আইনগুলি, যা প্রেরিত ১৫:২৯ অনুসারে পালন করা হত)। যিহূদীরা ফিরে এসে তা সহজে দ্বন্দ্বের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
পৌল রোমীয় চিঠি লেখেন যেখানে তিনি যিহূদী-অযিহূদী দ্বন্দ্বের বিষয় নির্দিষ্টভাবে কথা বলেন এবং বিভেদের পুনর্মিলন চেষ্টা করেন।
ঐসময়ে যিহূদী ও অযিহূদীদের মধ্যে সম্পর্ক
নতুন নিয়মের নানা বার, সুসমাচারগুলোতে বা প্রেরিত পুস্তকে হোক, অযিহূদীদের জন্য আমরা যিহূদীদের অবজ্ঞা বা ঘৃণা দেখা যায় যেমন যোহন ৪:৯, প্রেরিত ১০:২৮ বা ১১:৩ পদে। যিহূদীদের একজন প্রচলিত সকালের প্রার্থনা ছিল “হে সদাপ্রভু, তোমাকে ধন্যবাদ দেই কারণ তুমি আমাকে অযিহূদী, দাস বা মহিলা হিসাবে জন্ম দাও নি” যাতে এই মোভাব পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় – এবং যার বিরুদ্ধে পৌল তার বিখ্যাত গাল ৩:২৮ পদ লিখেছিলেন। যিহূদীরা রাস্তায় হেটে যদি একজন অযিহূদী দেখত, তারা রাস্তায় পার হয়ে অন্য পাশে হাটত। যিহূদীদরা দাবি করতে যে “সদাপ্রভু সমস্ত জাতিগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ইস্রায়েল জাতিকে ভালবাসেন” এবং “সদাপ্রভু যিহূদীদের এক মানদণ্ডে এবং বাকি জাতিগুলো অন্য মানদণ্ডে বিচার করবেন” এবং “যতজন যিহূদী রক্তের ততজনের ঈশ্বরের ভবিষ্যৎ রাজ্যে স্থান আছে”।
কিন্তু ওপর পক্ষে বলতে হয় যে একইভাবে রোমীয়রা যিহূদীদের অবজ্ঞা বা ঘৃণার চোখে দেখত। তারা যিহূদী ধর্ম একটি “বর্বর কূসংস্কার” এবং যিহূদীদের “সবচেয়ে ন্যক্কারজনক জাতি” বা “সচযেয়ে নীচ দাসের দল” বলত। রোমীয় লেখক প্লুটার্খ (Plutarch) মনে করত যে যিহূদীরা শূকরের মাংস খায় না বলে তারা শূকরকে দেবতা হিসাবে মানে। বিশ্রাম বার পালন রোমীয়দের চোখে অলসতা ছাড়া কিছু ছিল না। রোমীয়রা যিহূদীদের ভক্তিহীন মনে করত, নস্টিক এমন কি, কারণ তারা কোন মূর্তি রাখত না বা কোন দেবতার পূজা করত না। রোমীয়রা যিহূদীদের অনুন্নত, ছোট মনের লোক এবং ঘৃণারযোগ্য বিপ্লবী বা আন্দোলনকারী মনে করতে যারা কোন রকম রোমীয়দের উচ্চতর আইন-কানুনের অধীনতা মেনে নিতে রাজি না বরং অনবরত সে দামী “রোমীয় শান্তির” হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।
অবশ্যই মণ্ডলীর ক্ষেত্রে যিহূদী এবং অযিহূদী বিশ্বাসীদের মধ্যে এই ধরণের চিন্তা একটু কম পাওয়া যেত। কিন্তু (যেমন আমরা আধুনিক মণ্ডলীর অভিজ্ঞতা থেকেও জানি) একজন ব্যক্তি বিশ্বাসী হওয়ার সাথে সাথে আগের যে চিন্তা বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিগুলে ছিল সেগুলো সম্পূর্ণ বাদ দেয়, তা নয়।
পৌল যখন খবর পান যে যিহূদীরা রোম শহরে ফেরার পরে (৪৯ খ্রীঃ) রোমীয় মণ্ডলীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তিনি সমস্যা সমাধান করার জন্য রোমীয় চিঠি লেখেন। তিনি গুরুত্বের সঙ্গে এবং খুব নির্দিষ্টভাবে এক সময় যিহূদীদের কাছে (রোমীয় ২:১৭, ৩:১, ৩:৯, ৭:১) এবং পের অযিহূদীদের কাছে (রোমীয় ৯:২৪, ১১:১৩-১৪, ১১:৩০) কথা বলেন। তিনি তাদের দেখান যে তারা খ্রীষ্টেতে এক:
রোমীয় চিঠির পরিদর্শন বা কাঠামো
মতবাদ | যিহূদী এবং অযিহূদী উভয় সমান। | যিহূদী এবং অযিহূদী উভয় পাপী। | 1 2 3 | অযিহূদী | |
যিহূদী | |||||
উভয় | |||||
যিহূদী এবং অযিহূদী উভয় পরিত্রান পায় । একইভাবে পরিত্রান পায়। | 3 4 5 | উভয় | যিহূদীর গর্ব ভাঙ্গা | ||
যিহূদী এবং অযিহূদী কিছুটা ছেড়ে দিতে হবে যেন আত্মায় জিবিত হতে পারে। | 6 | অযিহূদী | |||
7 | যিহূদী | ||||
8 | উভয় | ||||
যিহূদী এবং অযিহূদী উভয় অবাধ্য । উভয় ঈশ্বরের দয়া পায়। | 9 | যিহূদী | অযিহূদীদের গর্ব ভাঙ্গা | ||
10 | অযিহূদী | ||||
11 | উভয় | ||||
প্রয়োগ | যেহেতু সমান, মিলে মিশে বাস কর। ঈশ্বর দয়া দিলেন, তাই পরস্পর্কে দয়া দাও। | খাবার, পান করা, ট্যাক্স, শনিবার পালনের বিষয় নিয়ে তর্ক করবে না। | 12 13 14 15 16 | উভয় |
রোমীয় পুস্তক অধ্যায় পর অধ্যায়
১ অধ্যায় অযিহূদীরা (এবং সাধারণভাবে মানুষেরা) ঈশ্বরের ক্রোধ পাওয়ার যোগ্য
চিঠির শুরুতে পৌল তার প্রেরিত হওয়ার অধিকার দাবি করেন এবং রোমীয় বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। তিনি রোমে আসতে এবং তাদের মধ্যে পরিচর্যা করতে চান।
তিনি সুখবরের একটি শক্তিশালী সংজ্ঞা দেন: ”যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে এই যে সুখবর তাতে আমার কোন লজ্জা নেই, কারণ এই সুখবরই হল ঈশ্বরের শক্তি যার দ্বারা তিনি সব বিশ্বাসীদের পাপ থেকে উদ্ধার করেন – প্রথমে যিহূদীদের, তারপর অদযহূদীদের” (রোমীয় ১:১৬)। এই সুখবরে বিশ্বাস রাখাই উভয় যিহূদী ও অযিহূদীদের জন্য আবশ্যক।
পৌল তার মতবাদ উপস্থাপন বা যুক্তি-তর্ক একটি ভিক্তিক সত্য ঘোষণা করা দ্বারা: অযিহূদীরা – এবং আসলে সব মানুষেরা – ঈশ্বরের ক্রোধ পাওয়ার যোগ্য। যদিও অযিহূদীরা ঈশ্বরের পুরাতন নিয়মের নির্দিষ্ট প্রকাশ পায় নি তবুও তারা সৃষ্টিতে এবং মানব অভিজ্ঞতায় ঈশ্বরের সাধারণ প্রকাশ পেয়েছিল: ”ঈশ্বর সম্বন্ধে যা জানা যেতে পারে তা মানুষের কাছে স্পষ্ট, কারণ ঈশ্বর নিজেই তাদের কাছে তা প্রকাশ করেছেন। ঈশ্বরের যে সব গুণ চোখে দেখতে পাওয়া যায় না ফটে উঠেছে, তাঁর সৃষ্ট থেকেই মানুষ তা বেশ বুঝতে পারে। এর পরে মানুষের আর কোন অজুহাত নেই” (রোমীয় ১:১৯-২০)। যা তারা জানত না, তার জন্য মানুষের বিচার করা হবে না বরং যা তারা জানত, তার জন্যই – এবং সব মানুষ ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছু না কিছুটা জানে।
ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছু না কিছু প্রকাশ পাওয়ার পরেও মানুষ ঈশ্বরকে অস্বীকার করে এবং তাকে ধন্যবাদ বা গৌরব দেয় নি। ফলে তারা নিজেকে একটি নীচদিকে যাওয়া প্রক্রিয়ায় খুঁজে পায়: তাদের অন্তর অন্ধকারে পূর্ণ হয় (রোমীয় ১:২১), তারা প্রতিমা পূজারীতে পরিণত হয় (রোমীয় ১:২৩-২৪) যার কারণে তারা আরো পাপ করে ও ঈশ্বরহীন একটি মন্দ জীনন করে (রোমীয় ১:২৬-৩২)। পৌল এই নীচদিকে যাওয়প্রক্রিয়াকে এভাবে বর্ণনা করেন: “ঈশ্বর মানুষকে তার অন্তরের কামনা-বাসনা অনুসারে জঘন্য কাজ করতে ছেড়ে দিয়েছেন” (রোমীয় ১:২৪, ১:২৬)। “ছেড়ে দেওয়া” মানে যে ঈশ্বর এসব কখনও চান নি কিন্তু মানুষকে যে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন তা রক্ষা করার জন্য তিনি মানুষ যদি বিবেকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে থাকে তবে অবশেষে তিনি তা মেনে নেন।
২ অধ্যায় যিহূদীরা (এবং যারা অন্যদের বিচার করে) একইভাবে ঈশ্বরের ক্রোধের যোগ্য
কিন্তু যিহূদীরা এমন একটি জাতি যা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দিষ্ট প্রকাশ পেয়েছিল: অব্রাহামের আহ্বান, ঈশ্বর নিজেকে উদ্ধারকর্তা হিসাবে প্রকাশিত মিসরে, আইন-কানুন দান, আবাস-তাম্বু, যাজকত্ব ও উৎসর্গ পদ্ধতির মাধ্যমে। মোশি থেকে শুরু করে ঈশ্বর অনেক ভাববাদীদের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলের কাছে তাঁর বাণী পৌঁছিয়েছিলেন। যিহূদীদের তাই বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ছিল যা তাদের জন্য অহংকার ও অন্য জাতিদের নীচু চোখে দেখার প্রলোভন হিসাবেও দাঁড়িয়েছিল। পৌল দাবি করেন যে যিহূদীরা তা সব পেয়েছিল ও জেনেছিল কিন্তু তারা অযিহূদীদের চেয়ে ভাল জীবন-যাপন করে নি: ইস্রায়েলের ইতিহাস প্রতিমাপূজা ও অন্যায় কাজে ভরা। ব্যক্তিগতভাবেও যিহূদীরা অন্যদের বিচার করে এমন কিছুর জন্য যা তারা নিজেও করে। পৌল রোমীয় যিহূদীদের অহংকারকে কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করেন: “তুমি মনে কর তুমি অন্ধদের পথ দেখাচ্ছ। তুমি ভাবে, যারা অন্ধকারে আছে তাদের কাছে তুমি আলোর মত। তোমার ধারণা, যারা বিবেচনাহীন তাদের তুমি সংশোধন করে থাক ও যারা আইন-কানুনের বিয়ষে শিক্ষা পায় নি তাদের তুমি শিক্ষা দিয়ে থাক … কিন্তু তুমি নিজেই কি আইন-কানুন অমান্য করে ঈশ্বরকে অসম্মান কর না?“ (রোমীয় ২:১৯-২৪)। পৌল তাদের স্মরণ করেন যে ঈশ্বরের দয়া তাদের মন ফিরানোর পথে নিয়ে আসার কথা ছিল, তা কখনও অহংকারের বিষয় হওয়ার কথা ছিল না (রোমীয় ২:৪)। তিনি তাদের সাবধান করেন যে সুন্নতের কোন মূল্য নেই যদি তারা আইন-কানুন অমান্য করতে থাকে। এরজন্য যিহূদীরা – আহ্বান, প্রকাশ ও মহান ইতিহাস প্রাপ্ত হলেও – দোষী এবং ঈশ্বরের ক্রোধ পাওয়ার যোগ্য, ঠিক যেমন অযিহূদীরাও ঈশ্বরের ক্রোধ পাওয়ার যোগ্য।
৩ অধ্যায় সবাই পাপ করেছে, সবাই ঈশ্বরের দয়ায় বিশ্বাস রেখে পরিত্রাণ পায়
পৌল আর একবার সারাংশ করে দাবি করেন যে – যিহূদী বা অযিহূদী হোক – এমন কেউ নেই যে ঈশ্বরের সামনে নির্দোষ বা গ্রহণযোগ্য। এমন কেই নেই যে যে সত্যিকারের জ্ঞান নিয়ে চলে বা ঈশ্বরকে অন্বেষণ করে । সবাই থিক পথ থেকে সরিয়ে গেছে, খারাপ কাজে সমর্পিত এবং এমন কি হিংস্র (রোমীয় ৩:৯-১৮)। এমন কেউ নেই যে ঈশ্বরের সামনে কোন অধিকার দাবি করতে পারে বা যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। এমন কেউ নেই যে গর্ব করতে পারে কারণ কেউ আইন-কানুন মেনে চলে নি।
কিন্তু তাঁর করুণায় ঈশ্বর একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছেন: তিনি যীশুকে পাঠিয়েছেন যিনি নিষ্পাপ হলেও ঈশ্বরের উপযুক্ত ক্রোধ সম্পূর্ণ নিজের উপর নিয়ে এবং আইন ও ন্যায় বিচারের দাবি পূর্ণ করে ক্রুশীয় মৃত্যু গ্রহণ করেছেন। তা দ্বারা তিনি মানুষের জন্য ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, যদি একজন মানুষ তাঁর উপরে বিশ্বাস রাখে তবে সে যীশুর ধার্মিকতা বা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এভাবে আমরা মানুষ হিসাবে ক্ষমা ও পরিত্রাণ পাই এবং আমরা হয়ে যা যীশু ইতিমধ্যে হন: ঈশ্বরের সন্তান। ঈশ্বরের চোখে সে ধার্মিকতা বা গ্রহণযোগ্যতা অন্য কোন পথে অর্জন করা সম্ভব না, কোন প্রচেষ্টা, যোগ্যতা প্রমাণ বা দাবি চলবে না। আইন-কানুন পালনের সাথে তার কোনো সম্বন্ধ নেই বরং তা হল খ্রীষ্টেতে ঈশ্বরেরই দান। দানটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করা ছাড়া যিহূদী এবং অযিহূদী উভয়ের আর কোন উপায় নেই (রোমীয় ৩:১৯-৩১)।
৪ অধ্যায় যিহূদী ও অযিহূদী উভয় অব্রাহামের মত বিশ্বাস দ্বারা গ্রহণযোগ্য
পৌল অব্রাহামের উদাহরণ উল্লেখ করেন, যিহূদী জাতির সম্মানিত আদিপিতা এবং সে ব্যক্তি যার কাছে ঈশ্বর প্রথম প্রতিজ্ঞা দেন (আদি ১২:১-৩)। পৌল দেখান যে অব্রাহাম ঠিক ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপরে তার বিশ্বাসের কারণে ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল “অব্রাহাম ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করলেন আর সেইজন্য ঈশ্বর তাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন” (রোমীয় ৪:৩ যা আদি ১৫:৬ পদের উদ্ধৃতি)। যদি কেউ – যিহূদী বা অযিহূদী হোক – যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর দ্বারা উদ্ধারের উপরে বিশ্বাস রাখে তবে সে অব্রাহামের মত বিশ্বাস করেছে বলে অব্রাহামের সন্তান হিসাবে গোনা হবে। অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর সে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি “অনেক জাতির আদিপিতা” হয়ে যাবেন, সে প্রতিজ্ঞা যীশুতে পূর্ণ হচ্ছে: যে যিহূদীরা অব্রাহামের মত বিশ্বাস করে তারা অব্রাহামের সন্তান এবং যে অযিহূদীরা অব্রাহামের মত বিশ্বাস করে তারাও অব্রাহামের সন্তান (রোমীয় ৪:৯-১২)। অব্রাহাম তাই শুধুমাত্র সুন্নত-প্রাপ্ত যিহূদীদের পিতা নয়, কিন্তু সুন্নত না করা অযদিহূদীদেরও পিতা কারণ অব্রাহামকে গ্রহণ করা হয়েছিল যখন তিনি এখনও সুন্নত গ্রহণ করেন নি (রোমীয় ৪:১২)।
৫ অধ্যায় ঈশ্বরের দয়ায় গ্রহণযোগ্য হওয়ার ফলাফল
যতজন এভাবে তাদের বিশ্বাসের কারণে যোগ্য বলে গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের এবং ঈশ্বরের মধ্যে এখন শান্তি হয়েছে, তারা তার দয়া পেয়ে দয়ার পথে চলছে। এমন কি যখন তাদের বিভিন্ন ধরণের কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তারা নিশ্চিত হতে পারে যে তাতে তাদের ক্ষতি হবে না বরং তা দ্বারা তাদের মধ্যে ধৈর্য, খাঁটি স্বভাব ও আশা বৃদ্ধি পাবে (রোমীয় ৫:১-৫)।
পরে পৌল অব্রাহামের চেয়েও সুদূর ইতিহাসে ফিরে গিয়ে সব মানুষের আদিপিতা আদমকে উল্লেখ করেন। তিনি আদম ও খ্রীষ্টকে তুলনা করে বুঝান যে আদম (যার নামের অর্থ হল “মানুষ”) যখন পাপ করেছিলেন তখন এই এক মানুষের দ্বারা সমস্ত মানব জাতির উপর পাপ, ধ্বংস ও মৃত্যু এসেছিল। কিন্তু সে একজন মানুষ যীশুর দ্বারা (যাকে পৌল “দ্বিতীয় আদম” বলেন), যিনি বাধ্য হয়ে ক্রুশে মারা গিয়েছিলেন, তাঁর মধ্য দিয়ে সমস্ত মানব জাতির উপর (যতজন তাঁর উপরে বিশ্বাস রাখে) ক্ষমা, গ্রহণযোগ্যতা, উদ্ধার ও জীবন এসেছিল (রোমীয় ৫:১২-২১)।
৬ অধ্যায় অযিহূদীদের পাপ করতে ত্যাগ করতে হবে
এই চমৎকার দয়ায় পরিত্রাণ পেয়ে সব অযিহূদীদের – এবং আসলে সব মানুষের – পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে মরতে হবে এবং নতুন জন্ম পেয়ে খ্রীষ্টেতে একটি নতুন জীবন করতে হবে। পৌল দেখান যে যীশুর উপর বিশ্বাস রেখে আমরা “খ্রীষ্টেতে”, যার অর্থ হল যে আমরা খ্রীষ্টের সঙ্গে ক্রুশে মারা গিয়েছি এবং এভাবে পাপ এবং সে স্বার্থপর জীবনের দাবি-দাওয়ার কাছেও মারা গিয়েছি। পৌল তাই দাবি করেন যে পরিত্রাণ পেয়ে বিশ্বাসীর সম্পূর্ণ জীবন পরিবর্তিত হতে হবে। পৌল প্রমাণ করেন যে একজন ব্যক্তি যাতে বাধ্য থাকে তা্-ই হল তার মনিব। তাই যদি আমরা পাপ করে তবে এর অর্থ এই যে আমরা নিজেকে পাপের ও শয়তানের দাস বানাছি। কিন্তু যদি আমরা অন্য ধরণের একটি বাধ্য জীবন করি তবে আমরা ঈশ্বরকে আমাদের মনিব হিসাবে মানি। পরিত্রাণ তাই মানে না ‘স্বর্গে যাওয়ার টিকেট’, মানে না ‘পাপ নিয়ে সমস্যা নেই কারণ ক্ষমা পাবে’, পরিত্রাণ বরং মানে পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে মারা যাওয়া, নতুন জন্ম গ্রহণ এবং নতুন একটি জীবন করা, যাতে পাপের অধীনতা আর নেই (রোমীয় ৬:১-১৪)।
দয়ায় পরিত্রাণ পেলাম, খ্রীষ্টেতে আছি এবং পবিত্রা আত্মার সাহায্য পাচ্ছি মানে যে আমরা বাধ্যভাবে জীবন-যাপন করব, আমরা ধার্মিকতার দাস হব, আমরা কৃতজ্ঞ ও ইচ্ছুক সন্তান হিসাবে পিতাকে খুশি করার জন্য জীবন কাটাব (রোমীয় ৬:১৫-২৩)।
৭ অধ্যায় যিহূদীদের নিজের প্রচেষ্টা ও আইন-কানুনের উপর নির্ভরতা ত্যাগ করতে হবে
রোমীয় ৬ অধ্যায়ের ঠিক সমান্তরালভাবে পৌল রোমীয় ৭ অধ্যায়ে যিহূদীদের চ্যালেঞ্জ করেন: এই চমৎকার দয়ায় পরিত্রাণ পেয়ে সবয যিহূদীদের – এবং আসলে সব মানুষদের যারা নিজের প্রচেষ্টায় ধার্মিকতা বা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে চায় – আইন-কানুনের উপর নির্ভরতার কাছে, আত্ম-ধার্মিকতার ও গ্রহণযোগ্যতা নিজের প্রচেষ্টায় অর্জন করার কাছে মরতে হবে। পোল দেখান যে একজন বিশ্বাসী তার বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে “খ্রীষ্টেতে”, যার অর্থ এই যে সে যীশুর সঙ্গে ক্রুশে মারা গেছে এবং তাই আইনের দাবি-দাওয়ার কাছে মরে গেছে। পৌল প্রমাণ করেন যে আইনের দাবি শুধুমাত্র জীবিতদের উপর, একজন মারা গেলে সে আইনের দাবি থেকে বাদ পড়ে কারণ কেউ একটা লাষকে বাদ্ধতায় আনে না বা শাস্তি দেয় না (রোমীয় ৭:১-৬)।
পরিত্রাণ পাওয়া মানে ঈশ্বরের দয়ার উপরে নির্ভর করা। এখানে দাবি করার, অর্জন করার বা যোগ্য হওয়ার কোন বিষয় আসে না বরং দয়া তো ঠিক তা বুঝায়: ‘যোগ্য না হলেও অনুগ্রহ’ (‘unmerited favor’)। এরজন্য সমস্ত আত্মা-ধার্মিকতা, প্রচেষ্টা, মিথ্যা নির্ভরতা বা গর্ব ছেড়ে না দিলে একজন ব্যক্তি এখনও দয়ার উপর নির্ভর করে না। এমন একজন ব্যক্তি যে চেতনা পাচ্ছে, নিজে গ্রহণযোগ্য হতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে অন্তরে অন্তরে দ্বন্দ্বে পড়ে পৌল তার একটি শক্তিশালী বর্ণনা দেন (রোমীয় ৭:১৪-২৪) এবং উপসংহারে বলেন “কি হতভাগা মানুষ আমি!” (রোমীয় ৭:২৪)। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি উত্তর দেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই” (রোমীয় ৭:২৫)।
৮ অধ্যায় পবিত্র আত্মার সাহায্যে একটি নতুন, বাধ্য জীবন
পরবর্তীতে পৌল খ্রীষ্টেতে সে নতুন জীবনের বর্ণনা করেন: তা হল পবিত্র আত্মা দিয়ে চালিত একটি জীবন, যাতে দোষারোপ আর থাকে না, একটি স্বাধীনতার জীবন, একটি স্বেচ্ছায় পবিত্র আত্মার পরিচালনার অধীনে থাকার একটি জীবন, উদ্ধার, ডত্তক নেওয়া সন্তানের ও উত্তরাধিকারীর জীবন, একটি মহিমার জীবন। প্রত্যেক মুহূর্তে বিশ্বাসীর সিদ্ধান্ত নেওয়া স্বাধীনতা আছে সে কার পরিচালনায় আচরণ করবে, পাপ-স্বভাবের পরিচালনায় বা পবিত্র আত্মার পরিচালনায়। বিশ্বাসী চাইলে নিজেকে পাপের দাস বানাতে পারে, অথবা ন্যায্য কাজে দাস বানাতে পারে। সে যে কোনো মুহূর্তে নিজেকে শয়তানের হাতিযার অথবা পবিত্র আত্মার হাতিযার হিসাবে ব্যবহৃত হতে দিতে পারে (রোমীয় ৮:১-১৭)।
এই অতিসুন্দর পদগুলিতে পৌল আরো দেখান যে ঈশ্বরের সন্তানদের সে নতুন, চমৎকার অবস্থা অবশেষে এমন কি সম্পূর্ণ সৃষ্টির উপরে বিন্তার করা হবে এবং সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে পুনরুদ্ধার করা হবে (রোমীয় ৮:১৭-২৫)। তাই দেখা যায় যে ঈশ্বরের পরিত্রাণ হল এমন কিছু যা উদ্ধার করতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু তার উদ্ধারকারী কাজ চলতে থাকেব এবং আর অনেক চমৎকার একটি ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে।
ঈশ্বর তাঁর মানব জাতিকে ভালবেসেছেন বলে তিনি তাদের আপন সন্তান হওয়ার সে সম্মানিত অবস্থায় নিয়ে এসেছেন, তাই সব দোষারোপ, সব বিচার, সব ভয় এখানেই শেষ। উভয় যিহূদী এবং অযিহূদী দুইজনই এই সম্মানিত অবস্থা বা পদ-মর্যাদা পাবে, তাই তাদের মধ্যে সে দোষ ধরার, বিচার করার ও অন্যকে বাদ দেওয়ার মনোভাব অবশ্যই বাদ দিতে হবে (রোমীয় ৮:৩১-৩৯)।
৯ অধ্যায় ঈশ্বর সার্বভৌম ও করুণাময় – যিহূদীদের অহংকার ভেঙ্গে দেওয়া
নিজের জাতির জন্য পৌল এখানে তার হৃদয় প্রকাশ করেন। তিনি অত্যন্ত আপসোস করেন যে অনেক যিহূদীরা যীশুকে অগ্রাহ্য করে (রোমীয় ৯:১-৫)। একটি প্রশ্ন উঠে আসে: তাই যদি হয় তবে কেন ঈশ্বর যিহূদী জাতি মনোনিত করেছিলেন? মোশির আইন-কানুন অনেক আগে থেকে উত্তরে বলেন: যিহূদীদের আহ্বান কোনো যোগ্যতার জন্য হয় নি (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৭)। পৌল দেখান যে ঈশ্বর তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতায় অব্রাহামকে মনোনিত করেছিলেন, এবং পরের প্রজন্মতে এষৌয়ের চেয়ে যাকোব। আমরা জানি না ঈশ্বর কেন সিদ্ধান্তটি কেন এভাবে নিয়েছেন কিন্তু আমারা জানি তা কোনো যোগ্যতা বা দক্ষতার কারণে ছিল না, বরং শুধুমাত্র করুণার কারণে। যিহূদীরা যে ঈশ্বরের আহ্বার পেয়েছে, তা কখনও গর্বের বা অহংকারের বিষয়ে পরিণত হওয়া উচিত ছিল না।
এই অধ্যায়ে পৌল খুব শক্তিশালী ভাষা মুখে নেন, তিনি বড় ছবি একে অতিরিক্ত বলা রূপকও ব্যবহার করেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি মিসরের ফরৌণ সম্বন্ধে বলেন যে ঈশ্বর তাকে উঠিয়েছিলেন তাঁর ক্ষমতা প্রকাশিত করার জন্য। পৌল এমন কি বলেন “ঠিক সেইভাবে ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ ও শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন: তবুও যে লোকদের উপরে তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করবেন, খুব ধৈর্যের সঙ্গে তিনি তাদের সহ্য করলেন” (রোমীয় ৯:২২), এমন একটি উক্তি যা আমরা অন্যায্য হিসাবে ধরি। মনে রাখুন যে যাত্রাপুস্তকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র যখন ফরৌণ স্বেচ্ছায় তনেক শক্তিশালী প্রমাণের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ও পুনরুক্তিভাবে তার নিজের অন্তর কঠিন করে ফেলে ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে থাকে তখন লেখা আছে যে ঈশ্বর তার অন্তর আরো কঠিন করে দিলেন। পৌল বলেন: “এটা তাহলে কারও চেষ্টা বা ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না, ঈশ্বরের দয়ার উপরেই নির্ভর করে” (রোমীয় ৯:১৬) যাতে বুঝা যায় যে ঈশ্বর সম্পূর্ণ সার্বভৌম। এমন কোনো মানুষ নেই, যিহূদী হোক বা অযিহূদী হোক, যে ঈশ্বরের উপর একটি আইন-গত দাবি বিস্তার করতে পারেন। কিন্ত ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তিনি এমন কি যারা “তাঁর লোক” ছিল না (অযিহূদী, রোমীয় ৯:১৯-২৯) গ্রহণ ও উদ্ধার করবেন, এমন একটি সময় যখন যিহূদীরা মসীহকে অগ্রাহ্য করতে করতে নিজেকে পরিত্রাণ থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছেন (রোমীয় ৯:৩০-৩১)। তারা যীশু দ্বারা দেওয়া সে গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বাসে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে এবং পরিবর্তে তারা নিজের প্রচেষ্টায় গ্রহণযোগ্য হতে চেয়েছিল। যিহূদী জাতি মনোনিত বলে তারা নিজেকে আরো ভাল মনে করল এবং এভাবে তাদের অহংকার তাদের ফাঁদে ফেলল (রোমীয় ১০-১-৪)।
১০ অধ্যায় এই সুখবরই প্রচার কর!
পৌল আগের অধ্যায়ে ঈশ্বরের সার্বভৌম ক্ষমতার উপরে এত জোড় দিয়েছেন যে আমরা মনে করতে পারি যে তাহলে মানুষের সিদ্ধান্তের কোনো গুরুত্ব নেই – এবং তাহলে সুখবর প্রচারেও প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু ১০ অধ্যায়ে পৌল ঠিক এর বিপরীত বলেন: মানুষ, যিহূদী এবং অযিহূদী উভয় বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ পায়। বিশ্বাসের সংজ্ঞা তিনি এভাবে দেন: হৃদয়ে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করা। যেন মানুষ তা করতে পারে, তাদের আগে সুখবর শোনা দরকার যেন তারা জানে যে ঈশ্বর যীশুতে সবাইকে দয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যেন তারা সাড়া দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা তা গ্রহণ করবে কিনা। তাই উভয় সত্য ধরে রাখা দরকার, ঈশ্বরের সার্বভৌম ক্ষমতা এবং মানুষের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব (রোমীয় ১০:৫-১৭)। সুখবরটি যিহূদীদের কাছে প্রথম আসছে কিন্তু অনেকে ইতিবাচক সাড়া দেয় নি: “অবাধ্য ও একগুঁয়ে লোকদের দিকে আমি সারা দিন আমার হাত বাড়িয়েই রয়েছি” (রোমীয় ১০:২১ যা হল যিশাইয় ৬৫:১-২ পদের উদ্ধৃতি)। পৌল যিহূদী অহংকার ভাঙ্গতে থাকেন।
১১ অধ্যায় জুড়ে দেওয়া – অযিহূদীদের অহংকার ভেঙ্গে দেওয়া
পরবর্তীতে পৌল অযিহূদীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা মনে না করে যে ঈশ্বর যিহূদীদের একেবারেই অগ্রহ্য করেছেন। যিহূদীদের মধ্যে সব সময় “কিছু লোক” ছিল, সে “বাকি লোকেরা” যারা বিশ্বাস্ত ছিল ও ঈশ্বরের সত্যে সাড়া দিয়েছিল (রোমীয় ১১:১-১২)। হ্যাঁ, এখন অনেক অযিহূদীদের বিশ্বাস করেছে বলে গ্রহণ করা হয়েছে যেন যিহূদীদের “আগ্রহ জাগিয়ে তোলা” হয়। যার অর্থ এই যে আশা আছে যে তারা তারপরেও সাড়া দেবে ও অনুতপ্ত হয়ে তাদের গ্রহণ করা হবে। পৌল এখানে রূপক অর্থ একটি জলপাই গাছ ও তার শাখা উল্লেখ করেন: যে ডালপালা ছাঁটিয়ে দেওয়া হয় এমন যিহূদীদের বুঝায় যারা যীশুতে সাড়া দেয় নি এবং যে বুনো ডালপালা যাদের আসল জলপাই গাছে জুড়ে দেওয়া বিশ্বাসী অযিহূদীদের বুঝায়। কিন্তু পৌল অযিহূদীদের অহংকার চ্যালেঞ্জ করে বলেন যে অযিহূদীরা শুধুমাত্র বিশ্বাসী গ্রহণযোগ্য হয়েছিল ও হতে থাকে এবং যদি কোনো যিহূদী বিশ্বাস করে তবে ঈশ্বর তাকে অবশ্যই আনন্দের সঙ্গে পুনরায় জুড়ে দেবেন (রোমীয় ১১:১৭-২৪)।
সুখবরের সেই চমৎকার সত্যগুলি – উদ্ধার করার ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনা এবং অযিহূদীদের গ্রহণের সে অদ্ভুত গুপ্ত বিষয় – বিবেচনা করে পৌল ঈশ্বরের সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁর অসীম করুণাকে প্রশংসা করেন এবং এভাবে তার মতবাদ উপস্থাপনা সমাপ্ত করেন (রোমীয় ১১:৩৩-৩৬)।
১২ অধ্যায় এজন্য জীবিত উৎসর্গ হিসাবে একতায় জীবন-যাপন
এর পর্যন্ত পৌল যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তার প্রয়োগে পৌল রোমীয় বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা নিজেকে “জীবিত উৎসর্গ” হিসাবে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের কাছে দান করেন – বাধ্যতায় ও আত্মত্যাগে। তিনি তাদের উৎসাহিত করেন যেন তারা “ঈশ্বরকে নিজের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে” দেওয়া দ্বারা আর চারিদিকের সংস্কৃতি অনুসারে চিন্তা না করে (যিহূদী অথবা অযিহূদী সংস্কৃতি হোক) বরং খ্রীষ্টের মত চিন্তা করতে শেখে (রোমীয় ১২:১-২)। তিনি তাদের বেশ কয়েকটি ব্যবহারিক আদেশ দেন, যেন তারা খ্রীষ্টির মত আচরণ-ব্যবহার করতে শেখে এবং পরস্পর্কে ভালবাসা, সম্মান, ক্ষমা ও সেবা দেখাতে পারে। এভাবে পৌল মণ্ডলীর একতা ও ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চান (রোমীয় ১২:৯-২১)।
১৩-১৪ অধ্যায় সরকারের প্রতি বাধ্য হও! পরস্পর্কে ভালবাস!
পৌল তাদের সরকার সম্পর্কে একটি ইতিবাচক দৃষ্টি দেন। তিনি বিশ্বাসীদের সরকারের বশীভূত হতে বলেন এবং সরকারের উপযুক্ত দাবি পালন করতে বলেন। কিছু ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে কথা বলার সময়, যেমন খাবারের নিয়ম বা বিশেষ দিবসের উৎযাপন, তিনি যিহূদী বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা বিশ্বাসী অযিহূদীদের নিয়ম অমান্য করলেও তাদের বিচার না করে। একই সময়ে তিনি অযিহূদী বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা বিশ্বাসী যিহূদীদের তুচ্ছ না করে বরং যেন তারা নিজের স্বাধীনতা ত্যাগ করতে রাজি থাকে যদি তাদের স্বাধীনতা একজন যিহূদী বিশ্বাসীর জন্য বাধাস্বরূপ হয়ে যায়। এই আদেশ দ্বারা পৌল মণ্ডলীর মধ্যে বিভেদ কমিয়ে বরং একতা, পরস্পর ভালবাসা ও সম্মান আরো উৎসাহিত করতে চান।
১৫-১৬ অধ্যায় যাত্রার পরিকল্পনা ও সুভেচ্ছা
চিঠির শেষে পৌল তার নিশ্চয়তা প্রকাশ করেন যে রোমীয় মণ্ডলী এই দ্বন্দ্ব ও বিভেদ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি শীঘ্রই বেড়াতে আসবেন এবং তিনি আরো তাদেরই জন্য এবং পশ্চিম এলাকার অজেয় জাতিদের জন্য তার হৃদয় ও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অবশেষে তিনি রোমীয় মণ্ডলীর অনেক সদস্যদের নাম উল্লেখ করে ব্যক্তিগত সুভেচ্ছা ও সুপারিশ দেন। তালিকার মধ্যে পাওয়া যায় যিহূদী ও অযিহূদী উল্লিখিত (প্রায় ২৭% যিহূদী ও ৭৩% অযিহূদী), পুরুষ ও মহিলা উল্লিখিত (৬৫% পুরুষ ও ৩৫% মহিলা), ল্যাটিন এবং অন্যান্য নাম উল্লিখিত (৪৬% ল্যাটিন নাম ও ৫৪% অন্যান্য নাম) এবং সাধারণ দাসের নাম ও এমনি নাম (১৫% নাম দাসের প্রচলিত নাম ও ৮৫% অন্যান্য নাম)। পৌল তার সুভেচ্ছা ও সুপারিশ দানের মধ্য দিয়ে ঠিক সে মনোভাব দেখান যা তিনি চান যেন রোমীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে থাকে: ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব, আন্তুরিক সুপারিশ, অন্যকে প্রশংসা করা ও প্রত্যেকজনের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।