পৌল ফিলিপীয় মণ্ডলীকে তাদের দানশীলতার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে একটি স্নেহের চিঠি লেখেন। তিনি তাদের যীশুর মত মনোভাবে চলতে বলেন – নম্রতায়, পবিত্রতায়, একতায় – এবং তাদের কঠিন পরিবেশেও আনন্দিত থাকার জন্য উৎসাহিত করেন।
স্নেহের ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে পৌল ও তীমথিয় ফিলিপীয় মণ্ডলীর কাছে এই চিঠি লেখেন। এই ব্যক্তিগত ও আবেগময় চিঠিতে ফিলিপীয় মণ্ডলী ও পৌলের বহুবছরের গভীর বন্ধুত্ব প্রকাশ পায়।
পৌল উল্লেখ করেন যে তিনি জেলে আছেন, যেমন ইফিষীয়, কলসীয় ও ফিলীমন চিঠিতেও উল্লেখ আছে। পৌল “রাজবাড়ীর সৈন্যদল” (ফিলি ১:১৩) এবং “সম্রাট কৈসরের বাড়ীর লোকেরা” (ফিলি ৪:২২) উল্লেখ করেন। তা থেকে বুঝা যায় যে, পৌল রাজধানী রোমে জেলে আছেন। তিনি আশা করেন যে, তাকে শীঘ্রই মুক্ত করা হবে (ফিলি ২:২৪), যা থেকে বুঝা যায় যে পৌল এই চিঠি ৬২ খ্রীষ্টাব্দে লেখেন, তার ‘রোমে হাল্কা বন্ধনের’ শেষদিকে। পৌল হাল্কা বন্ধনে ছিলেন ৬০-৬২ খ্রীঃ, যার বর্ণনা প্রেরিত ২৮:৩০-৩১ পদে পাওয়া যায়।
পৌল, সীল ও তীমথিয় দ্বিতীয় প্রচার যাত্রার সময়ে (৫০ খ্রীঃ) ফিলিপী শহরে এসে প্রচার শুরু করেন। ফিলিপীয় শহরে পৌলের শুধুমাত্র তিন সপ্তার পরিচর্য্যার মধ্যে এবং অনেক ঘটনার মধ্যে মণ্ডলী স্থাপন হয়: মন্দ আত্মা তাড়ানো, আন্দোলন, জেলে এক রাত কাটানো এবং আশ্চর্যভাবে মুক্ত হওয়া।
ফিলিপীয় মণ্ডলী কয়েকবার পৌলের পিছনে পিছনে আর্থিক দান পাঠায় (ফিলি ৪:১৫-১৬)। পৌল হাল্কা বন্ধনে রোমে আছেন শুনে, তারা আবারও ইপাফ্রদীত নামে একজনের দ্বারা দান পাঠিয়েছে। পৌল ফিলিপীয়দের দানশীলতা ও যত্ন নেওয়ার মনোভাবের জন্য আনন্দের সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন এবং ইপাফ্রদীত তাকে সেবা করেছে বলে তার সুপারিশ দেন।
পৌল ফিলিপীয়দের তার বর্তমান অবস্থা জানান। তিনি তাদের বলেন যে তিনি জেলে বসে ও কষ্টভোগের সময়েও ঈশ্বরের হাত ও কাজের ফল দেখতে পান। এই একই মনোভাবে তিনি ফিলিপীয়দেরও থাকতে বলেন: সব অবস্থায় ঈশ্বরের হাত দেখা এবং এমন কি কষ্টভোগে বা কঠিন অবস্থায় কোন কিছুতে ভয় না পাওয়া, এমন কি মৃত্যু নিয়ে ভয় না পাওয়া (ফিলি ১:২১)। বরং তিনি তাদের উৎসাহিত করেন যীশুর মত মনোভাব রাখা দ্বারা যে কোন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের গৌরবের জন্য ব্যবহার করা।
পৌল খুব চমৎকারভাবে যীশুর সর্বোচ্চ আদর্শ তুলে ধরেন, যিনি সব কিছু ছেড়ে ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন যেন মানুষ উদ্ধার পায় (ফিলি ২:৫-১১)। এই একই নম্রতা, আত্ম-ত্যাগ ও সেবার মনোভাব পৌল ফিলিপীয়দের ধরে রাখতে বলেন (ফিলি ২:১-৪)।
যীশুর সে মনোভাব তাদের সাহায্য করবে যেন তারা ভালভাবে দৌড়াতে পারে: “আমি জানব যে, তোমরা মনে-প্রাণে এক হয়ে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছ এবং যে বিশ্বাস সুখবরের মধ্য দিয়ে আসে তার জন্য একসঙ্গে পরিশ্রম করছ” (ফিলি ১:২৭)। যীশুর সে মনোভাব মণ্ডলীর নেতাদেরও সাহায্য করবে যেন তারা মতের অমিল অতিক্রম করে (ফিলি ৪:২)।
যীশুর সে মনোভাব তাদের সাহায্য করবে তাদের কষ্টভোগ নতুন চোখে দেখতে (ফিলি ১:২৯-৩০) এবং যে কোন অবস্থায় আনন্দ করতে (ফিলি ৩:১, ৪:৪)। এই মনোভাব তাদের যীশুকে জানার তুলনাহীন আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য অন্য সব কিছু ক্ষতি মনে করতে সাহায্য করবে (ফিলি ৩:৭-৮) এবং এই উদ্দেশ্যে প্রাণ-পণে সামনের দিকে ঝুঁকে ছুটে চলতে উৎসাহিত করবে (ফিলি ৩:১৪)।
পৌল ফিলিপীয়দের যীশুর মত মনোভাব রাখতে বলেন “যীশুর যে মনোভাব ছিল তা যেন তোমাদের অন্তরেও থাকে” (ফিলি ২:৫), এবং যীশুর মত চিন্তা করতেও বলেন: “যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রসংশাযোগ্য, সেই দিকে তোমরা মন দাও” (ফিলি ৪:৮)।
এই চিঠির মধ্যে একটি চমৎকার মিল পাওয়া যায়: যতটা মনোভাব পৌল ফিলিপীয়দের রাখতে বলেন, ততটা প্রথমে যীশুর সর্বোচ্চ আদর্শের মধ্যে পাওয়া যায় (ফিলি ২:৫-১১) এবং ততটা পৌল নিজেই ফিলিপীয়দের কাছে দেখান: পৌল চান যেন ফিলিপীয়েরা যে কোন পরিস্থিতিতে আনন্দ করে, তাই তিনিও কঠিন পরিস্থিতিতে আনন্দ দেখান (ফিলি ১:১২, ১:২২, ২:১৭ ইত্যাদি)। পৌল চান যেন তারা একতায় জীবন-যাপন করে, তাই তিনি তাদের একতার মনোভাব দেখান (ফিলি ১:১৮, ৪:৩)। পৌল তীমথিয় ও ইপাফ্রদীতের আদর্শ তুলে ধরেন (ফিলি ২:১৯-৩০) এবং ফিলিপীয়দেরও আদর্শ তুলে ধরতে থাকেন। চিঠিতে পৌল ফিলিপীয়দের বিষয়ে তার নিশ্চয়তা প্রকাশ করে তাদের উৎসাহিত করেন “আমার এই বিশ্বাস আছে, তোমাদের অন্তরে যিনি ভাল কাজ করতে আরম্ভ করেছেন তিনি খ্রীষ্ট যীশুর আসবার দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে নিয়ে শেষ করবেন” (ফিলি ১:৬)। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন “আমরা পূর্ণতার দিকে যতদূর এগিয়ে গেছি সেই অনুসারেই আমাদের চলা উচিত” (ফিলি ৩:১৬) এবং তাদের আশীর্বাদ করেন “আমি প্রার্থনা করি তোমাদের ভালবাসা যেন জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধির সঙ্গে মিলিত হয়ে বেড়েই চলে” (ফিলি ১:৯)।
লেখক ও তার পরিস্থিততি
স্নেহের ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে পৌল ও তীমথিয় ফিলিপীয় মণ্ডলীর কাছে এই চিঠি লেখেন। এই ব্যক্তিগত ও আবেগময় চিঠিতে ফিলিপীয় মণ্ডলীর সাথে পৌলের বহুবছরের গভীর বন্ধুত্ব প্রকাশ পায়।
পৌল উল্লেখ করেন যে তিনি জেলে আছেন, যেমন ইফিষীয়, কলসীয় ও ফিলীমন চিঠিতেও উল্লেখ আছে। পৌল “রাজবাড়ীর সৈন্যদল” (ফিলি ১:১৩) এবং “সম্রাট কৈসরের বাড়ীর লোকেরা” (ফিলি ৪:২২) উল্লেখ করেন। তা থেকে বুঝা যায় যে, পৌল রাজধানী রোমে জেলে আছেন। তিনি আশা করেন যে, তাকে শীঘ্রই মুক্ত করা হবে (ফিলি ২:২৪), যা থেকে বুঝা যায় যে পৌল এই চিঠি ৬২ খ্রীষ্টাব্দে লেখেন, তার ‘রোমে হাল্কা বন্ধনের’ শেষদিকে। পৌল হাল্কা বন্ধনে ছিলেন ৬০-৬২ খ্রীঃ, যার বর্ণনা প্রেরিত ২৮:৩০-৩১ পদে পাওয়া যায়।
প্রথম পাঠকেরা
চিঠির শুরুতে (পিলি ১:১) পৌল চিঠির প্রাপক হিসাবে প্রথম “ঈশ্বরের সব লোক” (মানে সাধারণ বিশ্বাসীরা), পরে পরিচালক (কেরী: অধ্যক্ষ) ও পরিচারকদের (কেরী: ডিকন) উল্লেখ করেন। এই ধারাবাহিকতার গুরুত্ব আছে: পৌল দেখান যে নেতাদেরই দায়িত্ব হল সাধারণ বিশ্বাসীদের সেবা করা, এমন না যে বিশ্বাসীদের দায়িত্ব নেতাদেরকে সেবা করা। ফিলিপীয় চিঠি মাত্র চিঠি যেখানে পৌল নেতাদের প্রাপক হিসাবে বিশেষভাবে উল্লখ করেন। হয়তো তা করেন কারণ তিনি ফিলিপীয় চিঠিতে কয়েজন নেতাদের, যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল, সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন (ফিলি ৪:২-৩)।
ফিলিপীয় মণ্ডলীর স্থাপন
পৌল, সীল ও তীমথিয় দ্বিতীয় প্রচার যাত্রার সময়ে (৫০ খ্রীঃ) ফিলিপী শহরে এসে প্রচার শুরু করেন। পৌল যখন এশিয়া মাইনর প্রদেশের ত্রোয়া শহরে আছেন তখন তিনি একজন ম্যাসিডোনিয়ার লোকের দর্শন পান যিনি তাকে ম্যাসিডোনিয়ায় এসে সাহায্য করতে বলেন (প্রেরিত ১৬:৯)। সাড়া দিয়ে পৌল ও তার দল জাহাজে ও “ভীয়া এগ্নাটিয়া” মহাসড়ক দিয়ে পশ্চিম দিকে যান।প্রথম শহর যা তাদের পথে পড়ে হল ফিলিপী, একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রীক শহর ও রোমীয় উপনিবেশ।
তার অভ্যাস অনুসারে পৌল প্রথম একটি শহরে এসে স্থানীয় যিহূদীদের খুঁজে বের করেন, কিন্তু ফিলিপীতে খুব অল্প যিহূদী মাত্র। তিনি যিহূদী মহিলাদের সাথে দেখা করেন। যারা বিশ্বাসী হয়ে যায়, তাদের মধ্য লুদিয়া একজন। এক দিন পৌল ফিলিপী শহরের একটি দাসীর থেকে একটি মন্দ আত্মা তাড়ান যে মন্দ আত্মা দ্বারা সে ভবিষ্যদ্বাণী বলতে পারত। এই লাভজনক ব্যবসা থেকে দাসীর মালিকেরা বঞ্চিত হওয়ার কারণে পৌল ও সীলেকে শহরের নেতাদের সামনে এনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পৌল ও সীলকে জেলে দেওয়া হয়, তাদের বেত দিয়ে মারা হয় এবং তাদের পা মাড়িকাঠে আটকানো হয়। অনেক শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেলেও পৌল ও সীল মাঝরাতে ঈশ্বরের প্রশংসা গাইতে শুরু করেন। ঈশ্বর একটি ভূমিকম্প ঘটান যাতে জেলখানা এবং এমন কি বন্দিদের শিকল ভেঙ্গে যায়। জেল-রক্ষক এইটা দেখে ও নিজেকে বন্দীদের জন্য দায়ী মনে করে, আত্ম-হত্যা করতে চায়। তখন পৌল তাকে চিৎকার করে বলেন যে কেউ পালায় নি। জেল-রক্ষক ও তার পরিবার বিশ্বাসী হয়ে যায় এবং পৌল ও সীলের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। শাসনকর্তারা পৌল ও সীলকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। তারা রায় ছাড়া একজন রোমীয় নাগরিককে শাস্তি দিয়েছেন বলে পৌল দাবি করেন যেন তারা নিজে এসে তাকে মুক্ত করেন এবং ক্ষমা চান। এই ঘটনার কারণে পৌল ও সীলকে অল্প সময়ের মধ্যে ফিলিপী শহর ছেড়ে চলে যেতে হয় (প্রেরিত ১৬:১১-৪০)।
ফিলিপীয় মণ্ডলী কয়েকবার পৌলের জন্য আর্থিক দান পাঠায় যখন তিনি থিষলনীকীয়ায় (ফিলি ৪:১৫-১৬) এবং হতে পারে আর একবার যখন তিনি করিন্থ শহরে আছেন (২ করি ১১:৮)। পৌল হাল্কা বন্ধনে রোমে আছেন শুনে, তারা আবারও ইপাফ্রদীত নামে একজনের দ্বারা দান পাঠায়।
ফিলিপীয় চিঠিতে যেমন গল্প উঠে আসে, রোম ও ফিলিপী শহরের মধ্যে অনেক যাওয়া-আসা হচ্ছে:
- ফিলি ৮:১৪ ফিলিপীয় মণ্ডলী শুনে যে পৌল রোমে বন্দি।
- ফিলি ৮:১৮ তারা একটি দান পৌঁছানোর জন্য ইপাফ্রদীতকে পৌলের কাছে পাঠায়। তিনি রোমে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
- ফিলি ২:২৬ ইপাফ্রদীত যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তার খবর ফিলিপীতে পৌঁছায়। তারা তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তিত।
- ফিলি ২:২৬ ইপাফ্রদীত শোনেন যে ফিলিপীয় মণ্ডলী তার বিষয়ে দুশ্চিন্তিত।
- ফিলি ২:২৫,২৮ ইপাফ্রদীত ফিলিপীতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি পৌলের চিঠি নিয়ে যাবেন।
- ফিলি ২:১৯-২৩ যখন পৌলের মামলা নিয়ে খবর পাওয়া যাবে, তীমথিয়ও তা জানানোর জন্য ফিলিপীতে যাবেন।
- ফিলি ২:১৯ তীমথিয় পৌলের কাছে ফিরে এসে মণ্ডলীর খোঁজ দিয়ে পৌল আনন্দিত হবেন।
- ফিলি ২:২৪ যদি পৌল খালাস পান তিনি নিজেই ফিলিপীতে যাবেন।
রোম ও ফিলিপী শহরের মধ্যে “ভীয়া এগ্রাটিয়া” নামে রোমীয়দের একটি মহাসড়ক যেত, রোম রাজ্যে পশ্চিম-পূর্বের প্রধান পথ। রোম থেকে ফিলিপীতে পৌঁছার জন্য শুধুমাত্র তিন সপ্তাহ লাগত। পৌল সে দুই বছর ধরে রোমে জেলে, এর মধ্যে ফিলিপীয় চিঠিতে উল্লিখিত সাত আটটা যাত্রা করা সম্ভব।
ফিলিপীয়দের দানের জন্য পৌলের কৃতজ্ঞতা
পৌল চিঠিটিতে গুরুত্বের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফিলিপীয়দের দানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ইপাফ্রদীত, যিনি দান তার কাছে পৌঁছিয়েছিলেন, তাকে সম্মান দেখান ও তার সম্বন্ধে চমৎকার সুপারিশ দেন। আসলে ইপাফ্রীত পৌলের সঙ্গে দেখা করার সময়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে যান এবং হয়তো কিছু লোক বলছে যে তিনি পৌলকে সাহায্য করার চেয়ে তার কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছে (ফিলি ২:২৬-২৭)। পৌল তার সুন্দর সুপারিশ দিয়ে নিশ্চিত করেন যে ফিলিপীয়রা জানে যে পৌল ইপাফ্রদীতের পরিচর্যা নিয়ে অনেক খুশি এবং যে তার অসুস্থতা দোষ ধরার নয় বরং তাকে সম্মান দেওয়ার কারণ: তিনি “খ্রীষ্টের কাজের জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন” (ফিলি ২:২৯)।
পৌল মণ্ডলীর বর্তমান দানের জন্য আন্তুরিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন এবং তাদের আগের দানশীলতা ও যত্ন নেওয়ার মনোভাবও স্মরণ করেন (ফিলি ৪:১৫-১৬)। তিনি প্রকাশ করেন তাদের বর্তমান দান কত যে সময় উপযোগী ছিল কিন্তু তিনি এইটাও নিশ্চিত করেন যেন মণ্ডলী আরো দান দেওয়ার জন্য চাপ না পায়: “আমার কোন অভাবের জন্য যে আমি এই কথা বলছি তা নয়, কারণ যে কোন অবস্থায় আমি সন্তুষ্ট থাকতে শিখেছি। অভাবের মধ্যে এবং প্রচুর থাকবার মধ্যে আমি সন্তুষ্ট থাকতে জানি। ভরা পেটে হোক বা খালি পেটে হোক, প্রচুর থাকবার মধ্যে হোক বা অভাবের মধ্যে হোক – সব অবস্থাতেই কিভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায় আমি তা শিখেছি” (ফিলি ৪:১১-১২)।
এখানে পৌল টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে একটি ভালো মনোভাব দেখান যা তিনি চান যেন ফিলিপীয় বিশ্বাসীদের জীবনেও থাকে: আত্ম-সন্তুষ্টি, আনন্দ, বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নেওয়া এবং এর মধ্যে নিজেকে ভাল কাজে লাগানোর মনোভাব।
আনন্দ করার পৌলের আদেশ ও আদর্শ
ফিলিপীয় চিঠিতে পৌল ফিলিপীয়দের বেশ কয়েকবার যে কোন পরিস্থিতিতে আনন্দ করতে উৎসাহিত করেন। চিঠিতে পৌল ১৬ বার আনন্দ উল্লেখ করেন, তার মধ্যে ৬ বার আনন্দ আদেশ হিসাবে উল্লিখিত (“আনন্দ কর!”) এবং ৪ বার কষ্টভোগরের সাথে উল্লিখিত। যেমনভাবে তিনি চিঠিটিতে আনান্য পুনরুক্তি বিষয়ের ক্ষেত্রে করেন তেমনভাবে তিনি আনন্দের বিষয়েও ঠিক তাই করেন: ফিলিপীয়দের মধ্যে যে মনোভাব তিনি দেখতে চান সেই মনোভাব তিনি নিজেই প্রকাশ করেন): ৮ বার পৌল নিজের আনন্দ প্রকাশ করেন (ফিলি ১:৪, ১:১৮, ১:১৯, ১:২৫-২৬, ২:১৭, ৪:১, ৪:১০) এবং ৮ বার তিনি ফিলিপীয়দের আনন্দ করতে বলেন।
আন্দের বিষয়ে পৌলের কথার গভীরতা বুঝতে গেলে খেয়াল করুন যে আনন্দ নিয়ে যত পুনরুক্তি, কষ্টভোগ নিয়েও তেমন পুনরুক্তি: পৌল জেলে আছেন (ফিলি ১:১৩-১৪), কিছু লোক তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দেয় (ফিলি ১:১৭), তিনি মুক্তির আশা করছেন (ফিলি ১:১৯), নিজের মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন (ফিলি ১:২০-২৩) এবং তার মত ফিলিপীয়দের কষ্টভোগ হচ্ছে, তা উল্লেখ করেন (ফিলি ১:২৯-৩০)। তিনি যীশুর কষ্টভোগ উল্লেখ করেন (ফিলি ২:৮), নিজের জীবন দানকে ঢেলে দেওয়া উৎসর্গের সঙ্গে তুলনা করেন (ফিলি ২:১৭) এবং ইপাফ্রদীতের প্রায় মৃত্যু (ও ফলে পৌলের দুশ্চিন্তা) স্মরণ করেন (ফিলি ২:২৬-৩০)। পৌল অভাব ও কষ্টের পরিস্থিতি জানেন (ফিলি ৪:১১-১৪), সব কিছুকে ক্ষতি হিসাবে স্বীকার করেন (ফিলি ৩:৮) এবং যীশুর দুঃখ-কষ্টের ভাগী হতে চান (ফিলি ৩:১০)।
পৌলের জীবন যে সুবিধার ও দুশ্চিন্তামুক্ত একটি জীবন, এমন না যে এই কারণে পৌল আনন্দ করেন, বরং তিনি কষ্টভোগের মধ্যও আনন্দ করতে শিখেছেন। কিন্তু সব কিছুতে কি আনন্দ করা উচিত? যদি খারাপ কিছু ঘটতে, অন্যায় বা মন্দতা, তাতে আনন্দ করা ঠিক? আসল বিশ্বাসী হিসাবে আমরা অন্যায় বা মন্দ কাজ নিয়ে আনন্দ করি না, কিন্ত আমরা আনন্দ করি যে যীশু, যার নাম ‘উদ্ধারকর্তা’, যত দুঃখ বা যত মন্দ হোক তিনি সব কিছু ঘুরিয়ে মঙ্গলের দিকে ব্যবহার করবেন,। আমরা কখনও মন্দ বা অন্যায় নিয়ে আনন্দ করি না বরং আমরা ভাল যা, তা নিয়ে আনন্দ করি: “যা সত্যি, যা উপযুক্তি, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাওয়ার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসাযোগ্য” (ফিলি ৪:৮)।
আনন্দ হল কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, যত মঙ্গল পাই, তা স্বীকার করা (ফিলি ৪:৮) এবং ঈশ্বর কেন্দ্রিক একটি জীবনের প্রকাশ। তা ছাড়া আনন্দ হল বিশ্বাসের একটি প্রকাশ: ঈশ্বরের উপর আশা রাখা যে তিনি যে কোন ঘটনাকে মঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম ও সমর্পিত। পৌল নিজের বন্দী অবস্থা নিয়ে এই মনোভাব দেখান: তিনি বলেন যে “তার ফলে সুখবর প্রচারের কাজ আরো এগিয়ে গেছে” (ফিলি ১:১২)। তিনি তার জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে বলেন: “আমার পক্ষে জীবন হল খ্রীষ্ট এবং মরণ হল লাভ” (ফিলি ১:২১)। তিনি যোগানের ক্ষেত্রে বলেন: “যে কোন অবস্থায় আমি সন্তিষ্ট থাকতে শিখেছে” (ফিলি ৪:১১)। তিনি ফিলিপীয়দের কষ্টভোগে পড়লে অস্থির না হতে বলেন, কারণ তা হল বিশ্বাসীর সাধারণ জীবনের অংশ, এমন কি তার সম্মানের বিষয়: “তোমাদের দয়া করা হয়েছে যেন তোমরা যে কেবল খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করতে পার এমন নয়, তাঁর জন্য কষ্টভোগও করতে পার” (ফিলি ১:২৯)। বিশ্বাসীর আনন্দ হল অন্যদের জন্য শক্তিশালী সাক্ষ্য, বিশেষভাবে যদি বিশ্বাসী কষ্টভোগে আনন্দ ধরে রাখতে পারে (ফিলি ২:১৫)।
মণ্ডলীর জন্য উৎসাহ, অনুমোদন ও বন্ধুত্ব
এই চিঠিতে পৌল খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ও উৎসাহদানকারী ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি ফিলিপীয়দের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেন (ফিলি ১:৩), তিনি তাদের প্রশংসা করেন যে তারা প্রথম দিন থেকে প্রচার কাজে সাহায্য ও সহভাগিতা করেছেন (ফিলি ১:৫, ৪:১৫-১৬), তিনি বলেন “তোমরা আমার প্রিয়” ও “তোমাদের কত ভালবাসি” (ফিলি ১:৭-৮), তিনি তাদের প্রার্থনার উপর নির্ভর করেন (ফিলি ১:১৯), তিনি তাদের জন্য আরো বেঁচে থাকতে রাজি যেন তাদের বিশ্বাস বেড়ে যায় (ফিলি ১:২৪-২৫), পৌল তাদের বিষয়ে তার আনন্দ প্রকাশ করেন (ফিলি ২:১), তাদের “প্রিয় ভাইয়েরা” বলেন (ফিলি ২:১২), তাদের কয়েকজন সম্বন্ধে সুপারিশ দেন যে তারা “সুখবরের জন্য আমার সঙ্গে কষ্ট স্বীকার করেছিলেন” (ফিলি ৪:৩) এবং সবাই তার “কষ্টের ভাগী” হয়েছিলেন (ফিলি ৪:১৪)। পৌলের কথায় তার এবং ফিলিপীয়দের মধ্যে কোন দূরত্ব প্রকাশ পায় না বরং তিনি বন্ধুত্ব, ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা, প্রশংসা এবং তাদের নিয়ে তার গর্ব প্রকাশ করেন। এভাবে তিনি নিজে আদর্শ হয়ে তাদের উৎসাহিত করেন যেন তারা সেই একই কৃতজ্ঞতা ও একতার মনোভাবে থাকে।
পুনরুক্তি বিষয় একতা
পৌল ফিলিপীয় মণ্ডলীর শুধুমাত্র একটি সমস্যা চিঠিতে উল্লেখ করেন: একতার অভাব। চিঠি থেকে বুঝা যায় যে দুইজন নেত্রীদের মধ্যে, যাদের পৌল ব্যক্তিগতভাবে চিনেন এবং যারা হতে পারে একদম মণ্ডলীর স্থাপন থেকেই বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে মতের অমিল চলছে। পৌল তাদের সরাসরি কথা বলেন: “উবদিয়া ও সুন্তখী, আমি তোমাদের বিশেষভাবে এই অনুরোধ করছি – প্রভুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছ বলে তোমাদের মন যেন এক হয়। আর আমার আসল সহকর্মী, আমি তোমাকেও অনুরোধ করছি – তুমি এই স্ত্রীলোকদের সাহায্য কর। তারা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের জন্য আমার সঙ্গে…কষ্ট স্বীকার করেছিলেন” (ফিলি ৪:২-৩)। যদিও আমরা নিশ্চিত জানি না উল্লিখিত “সহর্কমী” কে ছিলেন (হয়তো লূক) তবুও পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে পৌল এই দুইজন মহিলাদের সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের নির্ভরযোগ্য বলে অনুমোদন দেন।
চিঠির বিভিন্ন জায়গায় পৌল একতা নিয়ে কথা বলেন: “সবচেয়ে বড় কথা হল, তোমরা এমনভাবে তোমাদের জীবন কাটাও যা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবেরে উপযুক্ত।তাহলে … আমি জানব যে, তোমরা মনে-প্রাণে এক হয়ে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছ এবং যে বিশ্বাস সুখবরের মধ্য দিয়ে আসেতার জন্য একসঙ্গে পরিশ্রম করছ” (ফিলি ১:২৭)। “তোমরা এইভাবে আমার আনন্দ পূর্ণ কর – তোমাদের সকলের মন এক হোক, তোমরা একে অন্যকে ভাল বাস এবং মনে-প্রাণে এক হও” (ফিলি ২:২)। “আমরা যারা পূর্ণতার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছি আমাদের সেই একই রকম মনোভাব থাকা উচিত আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের অন্য রকম মনোভাব থাকে তবে ঈশ্বর তোমাদের তাও দিখিয় দেবেন” (ফিলি ৩:১৫)।
আবারও পৌল এই চিঠিতে যে মনোভাব দেখান, তিনি চান যেন ফিলিপীয়দেরও সেই একই মনোভাব থাকে: পৌল সহজে অপমান বোধ করেন না, অন্যদের বিচার করতে চান না, নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখেন না এবং বিভেদের প্রতিরোধ চেষ্টা করেন: “কেউ কেউ অবশ্য হিংসা ও দলাদলির মনোভাব নিয়ে খ্রীষ্টের বিষয়ে প্রচার করে, আবার অন্যেরা ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই তা করে … কিন্তু তাতে কি এসে যায়? আসল কথা হল, এতে যেভাবেই হোক খ্রীষ্টের বিষয় প্রচারিত হচ্ছে – তা ছলনার উদ্দেশ্যেই হোক আর সৎ উদ্দেশ্যে হোক; আর তাতেই আমার আনন্দ” (ফিলি ১:১৫,১৮)।
কিন্তু একতা আসলে কিভাবে সম্ভব? একতার ভিত্তি কি? পৌল এই বিষয়ে উত্তর দেন:
চিঠির কেন্দ্র: যীশুর আদর্শ
আদর্শ হওয়া হল ফিলিপীয় চিঠিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনরুক্তি বিষয়: “ভাইয়েরা, তোমরা সবাই আমার মত করে চল… কিভাবে চলতে হয় তা আমরা তোমাদের দিখিয়েছি” (ফিলি ৩:১৭)। “তোমরা আমার কাছে যা শিখেছ ও ভাল বলে গ্রহণ করেছ এবং আমার মধ্যে যা দেখেছও আমার মুখে যা শুনেছ, তা-ই নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখ” (ফিলি ৪:৯)। “তোমরা কোন আপত্তি ও তর্ক না করে সব কিছু কর, যেন তোমরা নির্দেষ ও খাঁটি হতে পার। সেই লোকদের সামনে তোমরা তো জীবনদানকারী বাক্য তুলে ধরে এই জগতে তারার মত উজ্জ্বল হয়ে আছ” (ফিলি ২:১৫)।
এই চিঠিতে সবাই হলেন ভাল আদর্শ: ফিলিপীয়রা নিজেই, পৌল, তীমথিয়, ইপাফ্রদীত এবং সর্বোচ্চভাবে যীশু।
যীশুর আদর্শ হল ফিরিপীয় চিঠির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা ও পৌলের কথার কেন্দ্রবিন্ধু (ফিলি ২:৫-১১)। যীশুর মনোভাবের এই বর্ণনা চিঠিতে সূর্যের মত কাজ করে, যার আলো চিঠির অন্যান্য বিষয়ের উপর আলো ফেলে। এই রচনার পদ্ধতি বলা হয় ‘বিকিরণ’।
ছবি
যীশুর এই বর্ণনা (ফিলি ২:৫-১১) হল চিঠিতে শুধুমাত্র অংশ যা কবিতা ভাষায় লেখা (পদ্য)। তা ছাড়া কথাটি সুন্দরভাবে সাজানো আছে দুইটি সিড়ির মত, যা পরস্পরের আয়নার ছবি। এই ধরণের সাজানো কথা ছিল যিহূদীদের একটি সম্মানিত জিনিস – আবাস-তাম্বুতে সোনালী বাতিদান – অনুসারে, যেখানে মাঝের কথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: “ঈশ্বর সেইজন্যই তাঁকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠালেন”।
যীশুর মনোভাব ও আচরণের এই বর্ণনা হল খুবই চমৎকার এবং তাতে নতুন নিয়মের একটি ভিত্তিক সত্য অনেক পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত: যীশু ঈশ্বরই ছিলেন এবং তিনি আসলে মানুষ হয়েছেন, তাই তিনি ১০০ ভাগ ঈশ্বর এবং ১০০ ভাগ মানুষ।
পৌল খ্রীষ্টকে সর্বোচ্চ আদর্শ হিসাবে দেখান, যিনি সব কিছু ত্যাগ করে মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন যেন তিনি মানুষদের উদ্ধার করতে পারেন। পৌল চান যেন ফিলিপীয়দের মধ্যে যীশুর সেই নম্রতা, স্বার্থহীন ভাবে সেবা করা, ত্যাগ-স্বীকার ও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার মনোভাব থাকে। যীশুর মনোভাবে ও আচরণ এমন যে তা বিশ্বাসীদের মধ্যে থাকলে প্রত্যেক সমস্যার সমাধান হত (যেমন: বিভেদ আর থাকত না): “নিজের লাভের আশায় বা অহংকারের বশে কিছু কোরো না, বরং নম্রভাবে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় স্থান দাও। কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকো না বরং একে অন্যের জন্য চিন্তা কর। খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল তা যেন তোমাদের অন্তরেও থাকে” (ফিলি ২:৩-৫)। যীশুর মনোভাব তাদের সাহায্য করবে যেন তারা “মনে-প্রাণে এক হয়ে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে … যে বিশ্বাস সুখবরের মধ্য দিয়ে আসে তার জন্য একসংগে পরিশ্রম” করতে সক্ষম হয় (ফিলি ১:২৭), যেন তারা তাদের মধ্য থেকে ঝগড়া বন্ধ করতে সক্ষম হয় (ফিলি ৪:২), যেন তারা নিজের কষ্টভোগ নতুন দৃষ্টিতে দেখতে পারে (ফিলি ১:২৯-৩০), যেন তারা যে কোন পরিস্থিতিতে আনন্দ করতে শিখে (ফিলি ৩:১, ৪:৪), যেন তারা সব কিছু ভুলে গিয়ে সামনের দিকে প্রাণপণে ছুটে চলে এবং লক্ষ্যটি ধরে রাখে (ফিলি ৩:১৪)।
বিশ্বাসীর কাজ হল যীশুর মত নিজেকে নম্র করা, ঈশ্বরেরই কাজ হল বিশ্বাসীদের উপরে উঠানো। কিন্তু যদি ঈশ্বর বিশ্বাসীদের নাও উঠাতেন, তারপরেও ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য।
যিহূদীদের আইন-কানুন পালন করার উপর নির্ভরতা নিয়ে পৌলের সাবধানবাণী
যিহূদী ঐতিহ্য অনুসারে একটি যিহূদী সমাজ-গৃহ স্থাপন করার জন্য সর্বনিম্ন দশজন পুরুষ লাগে। পৌল ফিলিপী শহরে পৌঁছিয়ে কোন সমাজ-গৃহ খুঁজে পাচ্ছিলেন না (প্রেরিত ১৬:১৩) তাই এইভাবে বুঝা যায় যে ফিলিপী শহরে আসলে যিহূদীদের লোকসংখ্যা অনেক কম। তাই ফিলিপীয় মণ্ডলীতে বেশি যিহূদী থেকে বিশ্বাসী ছিল না। যে যিহূদীরা প্রচার করত যে সুন্নত আবশ্যক, তারা অনেক বার পৌলের পিছনে পিছনে নতুন স্থাপিত মণ্ডলীতে গিয়ে শিক্ষা দিত যে সুন্নত করা আবশ্যক। যেহেতু ফিলিপীয় মণ্ডলীতে বেশিরভাগ অযিহূদী আছে তাই এই ধরণের সুন্নত প্রচারক সহজে মণ্ডলীটি টার্গেট করতে পারে। পৌল ফিলিপীয়দের এই বিষয়ে সতর্ক করেন: “ঐ কুকরগুলো থেকে, অর্থাৎ যারা মন্দ কাজ করে এবং দেহের কাটা-ছেঁড়া করবার উপরে জোর দেয় তাদের থেকে সাবধান! আমরাই সত্যিকারের সুন্নত-করানো লোক, কারণ আমরা ঈশ্বরের আত্মার সাহায্য তাঁর উপাসনা করি এবং খ্রীষ্ট যীশুকে নিয়ে গর্ব বোধ করে আর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের উপর নির্ভর করি না” (ফিলি ৩:২-৩)। আসলে যিহূদী গুরুরা অযিহূদীদের ‘কুকুর’ বলতেন। এমন কি যীশু (টিটকারী হিসাবে) কুকুর শব্দ রূপক ব্যবহার করেন যখন তিনি একজন কনানীয় মহিলার সাথে কথা বলেন (মথি ১৫:২৬, মার্ক ৭:২৭)। ঠিক তেমনি পৌল এখানে ‘কুকুর’ শব্দটি টিটকারী হিসাবে উল্টাদিকে ব্যবহার করেন: তিনি অযিহূদী বিশ্বাসীদের ‘কুকুর’ বলেন না বরং যিহূদী সুন্নত প্রচারকদের কে বলেন ! বিশ্বাসীদেরকে তিনি “সত্যিকারের সুন্নত করানো লোক” বলেন, এমন লোক যারা নিজের প্রচেষ্টায় নির্ভর না করে বরং যীশুর উপর বিশ্বাস রাখে। পৌল যেমন ‘সুন্নত’ শব্দ এখানে রূপকভাবে ব্যবহার করেন ঠিক তেমনি পুরাতন নিয়মে যিরমিয় সুন্নত প্রাপ্ত যিহূদীদের বলতেন (যির ৪:৪): “সদাপ্রভুর বাধ্য হবার জন্য তোমাদের নিজেদের সুন্নত কর, অর্থাৎ তোমাদের অন্তরের ময়লা দূর কর”।
যখন পৌল যিহূদী চিন্তা অনুসারে তার ধার্মিকতা নিয়ে স্লাগা করেন তিনি বলেন “আট দিনের দিন আমাকে সুন্নত করা হয়েছিল; ইস্রায়েল জাতির মধ্যে বিন্যামীন বংশে আমার জন্ম; আমি একজন খাঁটি ইব্রীয়; মোশির আই-কানুন পালনের ব্যাপারে আমি একজন ফরিশী; ধর্মের ব্যাপারে আমি এমন গোঁড়া ছিলাম যে, খ্রীষ্টের মণ্ডলীর উপর আমি অত্যাচার করতাম; আর ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হবার আশায় মোশির আইন-কানুন পালনের ব্যাপারে কেউ আমার নিন্দা করতে পারত না” (ফিলি ৩:৪-৬)। পৌল এভাবে তার পরিচয় দেন যেন অযিহূদী বিশ্বাসীরা নিশ্চয়তা পায় যে পৌল ভালই জানেন তিনি কি বলেন, তিনিই হলেন যিহূদীদের যিহূদী। তিনি এই ধার্মিক হওয়ার পথ সবার চেয়ে ভালো জানেন এবং যারা সুন্নত প্রচার করছে তাদের চেয়েও ভাল জানেন। তিনি তাদের চেয়ে তার ধার্মিকতা নিয়ে স্লাগা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা আর করেন না। পৌল ভাল জানেন যে তিনি আগে ধার্মিক হতে চেষ্টা করতে গিয়ে ধার্মিক হন নি বরং তিনি হয়েছিলেন আত্ম-ধার্মিক, অহংকারী ও হিংস্র। কেবলমাত্র যীশুর দ্বারাই জীবন পাওয়া যায় এবং পরিবর্তিত হওয়া সম্ভব।
ফিলিপীয় তিন অধ্যায়ের শুরুতে পৌল তাই এই সাবধানবাণী দেন, তিনি মণ্ডলীর বিশ্বাসীদের ভিত্তি আরো মজবুত করে তোলেন যেন সুন্নত প্রচারকদের প্রভাব ও ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।
আরো এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ
বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছে বলে পৌল বিশ্বাসীদের জীবনে ফলাফল হিসাবে পরিবর্তন ও উন্নয়ন দেখতে চান। তিনি তাদের উৎসাহিত করেন যে “ঈশ্বর তোমাদের অন্তরে এমনভাবে কাজ করছেন যার ফলে তিনি যে কাজে সন্তুষ্ট হন সেই রকম কাজ করবার ইচ্ছা ও ক্ষমতা তোমাদের হয়” (ফিলি ২:১২-১৩)। তিনি তার জীবন দ্বারা এবং চিঠিটিতে প্রকাশিত মনোভাব দ্বারা তাদের আদর্শ দেখান: তিনি আত্ন-ধার্মিকতার উপর নয় বরং যীশুর দয়ার উপর নির্ভর করেন, যে দয়া যা কেউ পাওয়ার যোগ্য নয় কিন্তু যা ঈশ্বর বিশ্বাসীদের দান করেন। তিনি বিশ্বাসীদের আরো চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা যীশুর তুলনায় অন্যান্য সব কিছুকে ক্ষতি মনে করে প্রাণপণে যীশুর জ্ঞান ও সর্বোচ্চ লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে, যেন তারা যীশুকে লাভ করতে পারে (ফিলি ৩:৭-১১)।
আমরা অনেক বার মনে করি যে পৌল দামেষ্কের পথে যীশুর সাথে দেখা হয়েছে এবং যীশুর অনেক বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন বলে তিনি যীশুকে সম্পুর্ণভাবে জানতেন। কিন্তু এই পদগুলিতে পৌল স্বীকার করেন যে তিনি সব লাভ করেছেন তা মনে করেন না বরং তিনি যীশুকে আরো গভীরে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন (ফিলি ৩:১২-১৪)। তিনি এখানে খেলা-ধূলার বা এমন কি ওলিম্পিক প্রতিযোগিতার শব্দ ব্যবহার করেন, যা তার গ্রীক পাঠকদের মধ্যে অতি প্রচলিত। যীশুর পিছনে লেগে থাকা মানেই যীশুর জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অংশ গ্রহণ করা “আমি খ্রীষ্টকে আরো জানতে চাই এবং যে শক্তির দ্বারা তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল সেই শক্তিকে জানতে চাই। আমি তাঁর দুঃখ-কষ্টের ভাগী হতে চাই। মোট কথা, যে মনোভাব নিয়ে তিনি মরেছিলেন আমিও সেই রকম মনোভাবে পেতে চাই। সেইজন্য যা-ই হোক না কেন আমি নিশ্চয়ই মৃত্য থেকে জীবিত হয়ে উঠব” (ফিলি ৩:১০-১১)। আবারও পৌল যীশুকে সর্বোচ্চ আদর্শ এবং একই সাথে সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হিসাবে দেখান। তাঁর পুরুত্থান বাস্তব বলে তা বিশ্বাসীদের সান্ত্বনা ও অনুপ্রেরণা দেয় (ফিলি ৩:২১)।
কিভাবে বিশ্বাসীরা সঠিক মনের চিন্তা, মনোভাব ও হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখতে পারে?
কিভাবে বিশ্বাসীরা সঠিক চিন্তা, মনোভাব ও হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখতে পারে? পৌল উত্তর দেন: যীশুর দিকে তাকানো (ফিলি ২:৫-১১)। যীশুর দিকে তাকিয়ে যেন বিশ্বাসীরা “যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসা যোগ্য, সেই দিকে” মন দেয় (ফিলি ৪:৮)। আপনিও সে দিকে মন দিন!
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।