পরিবার ১৪ – পরিবারের মধ্যে আর্থিক দায়বদ্ধতা ও তার সীমানা

 
স্বামী ও স্ত্রী প্রাথমিকভাবে পরস্পরের প্রতি দায়ী

আদি ২:২৪                       স্বামী ও স্ত্রী প্রাথমিকভাবে পরস্পরের জন্য দায়ী

‘এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে।’

  • বিবাহ করলে একটি নতুন দম্পত্তি বা পরিবার তৈরি, যা সে দুইজন বিবাহিতদের জন্য কেন্দ্র, অধিকার ও পরিচয় হয়। তাদের প্রাথমিক আনুগত্ব, বাধ্যতা, দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা এখন এই নতুন পরিবারের প্রতি।
  • একজন বিবাহিত পুরুষের প্রথম অর্থনৈতিক দায়িত্ব হল আপন স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি (এবং একজন বিবাহিতা মহিলার প্রথম অর্থনৈতিক দায়িত্ব হল আপন স্বামী ও সন্তানদের প্রতি)। হয়তো অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্তব্য বা দায়িত্ব আছে, কিন্তু আপন স্ত্রী ও আপন সন্তান সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।

 

যাত্রা ২১:১০-১১                এমন কি একটি দাসী-স্ত্রীর অধিকার আছে
‘সেই মনিব সেই দাসীকে বিয়ে করবার পরেও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও সে তার খোরাক-পোশাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং দেহের দিক থেকে তার যা পাওনা তা-ও তাকে দিতে হবে। ১১ সে যদি এই সব কর্তব্য না করে তবে কোন টাকা না নিয়েই তাকে চলে যেতে দিতে হবে।’ কেরী অনুবাদ: ‘যদি সে অন্য স্ত্রীর সহিত তাহার বিবাহ দেয়, তবে উহার অন্নের ও বস্ত্রের এবং সহবাসের বিষয় ত্রুটি করিতে পারিবে না। ১১ আর যদি সে তাহার প্রতি এই তিনটি কর্তব্য না করে, তবে সেই স্ত্রী অমনি মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইবে; রৌপ্য লাগিবে না। কেহ যদি কোন মনুষ্যকে এমন আঘাত করে যে, তাহার মৃত্যু হয়, তবে অবশ্য প্রাণদণ্ড হইবে।’

  • এই দুটি পদ হল যিহূদীদের বিবাহ সম্বন্ধীয় আইনের ভিত্তি। এখানে একজন দাসীকে যখন বিয়ে করা হয়, স্ত্রী হিসাবে তার অধিকারগুলি বর্ণনা করা হয়েছে। মোশির আইন-কানুনে স্বাধীন স্ত্রীর অধিকারের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট কথা নেই। কিন্তু যাত্রা ২১:১০-১১ পদের ভিত্তিতে যিহূদীরা ব্যাখ্যা করত যে একজন স্বাধীন স্ত্রীর অধিকার একজন দাসী স্ত্রীর চেয়ে কম নয়। তাই: একজন দাসীকে বিয়ে করলে তার যদি এই অধিকারগুলি আছে তবে একজন স্বাধীন মহিলাকে বিয়ে করলে তার অবশ্যই সে একই অধিকারগুলি আছে।
  • যিহুদী আইন অনুসারে বিবাহের আবশ্যক দায়িত্বগুলি হল: আর্থিক যোগান (খাবার ও পোষাক, মাঝে মধ্যে ‘তেল’ও উল্লিখিত) ও ‘দেহের দিকে যা পাওনা’ বা ‘সহবাস’ বা ‘বিবাহিতের অধিকার’। ইংরেজীতে: material and emotional provision। যিহূদীরা আর্থিক যোগানের দায়িত্ব এভাবে বুঝত: পুরুষদের আছে যোগান দেওয়ার দায়িত্ব। মহিলাদের আছে প্রস্তুত করার দায়িত্ব (রান্না করা, সেলাই করা)।
  • যা এই পদে উল্লেখ করা হয় নি (কারণ তাতে সবাই রাজি) হল: যৌন ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা। মহিলার ক্ষেত্রে তার অর্থ ছিল: কেবল মাত্র তার স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্ক। পরুষদের ক্ষেত্রে তার অর্থ ছিল: কেবল মাত্র তার বিবাহিত স্ত্রীদের সাথে যৌন সম্পর্ক (যেহেতু বহুবিবাহের অনুমতি ছিল)। ব্যভিচার (অন্য একজনের সাথে যৌন সম্পর্ক) ঐযুগের প্রত্যেকটি সংস্কৃতি বা দেশে নিষিদ্ধ্ ও মৃত্যদণ্ডের যোগ্য অপরাধ হিসাবে দেখা হত। ‘পরিবার ০২ বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনরায় বিবাহ’ শিক্ষা দেখুন।
সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক দায়িত্ব

২ করি ১২:১৪     ‘আমি এখন এই তৃতীয় বার তোমাদের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আমি তোমাদের বোঝা হব না, কারণ আমি তোমাদের কোন কিছু পেতে চাই না, তোমাদের পেতে চাই। ছেলেমেয়েরা যে তাদের বাপ-মায়ের জন্য টাকা-পয়সা জমাবে তা নয় বরং ছেলেমেয়েদের জন্য টাকা-পয়সা জমানো বাপ- মায়েরই উচিত।’
হিতো ১৩:২২      ‘ভাল লোক তার নাতিপুতিদের জন্য অধিকার রেখে যায়, কিন্তু পাপীর ধন ঈশ্বরভক্তদের জন্যই জমা করা হয়।’

  • যতদিন সন্তানরা বাবা-মায়ের অধীনে থাকে ততদিন পর্যন্ত ‌বাবা-মার সন্তানদের জন্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সন্তান বড় হয়ে যদি উপার্জন করতে পারে, তারপরেও বাবা-মার উচিত (যতদূর সম্ভব) কাজ করতে থাকা যেন তাদের সন্তান থেকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দাবী করতে না হয়। বাবা-মার প্রতিনিয়ত পারিবারিক ধন-সম্পত্তি গঠন করতে থাকা উচিত যেন পরবর্তীতে তা ছেলে-মেয়েদের অথবা নাতী-নাতনীদের উত্তরাধিকার সুত্রে দিতে সক্ষম হন। তা হল ঈশ্বরের ইচ্ছা ও সর্বোচ্চ পথ।
  • হয়তো বিশেষ কারণে পারিবারিক সম্পত্তি গঠন করা সম্ভব নয় (দারিদ্রতা, দুর্যোগ, রোগ, দুর্ঘটনা, জাতীয় অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ ইত্যাদি) কিন্তু তারপরেও তা চেষ্টা করা উচিত। বাবা-মা সুস্থ থাকলেও অবসর গ্রহণ, অলসতা, সন্তানদের উপর দাবী বা অতিরিক্ত বিলাসিতায় জীবন-যাপন, ঈশ্বর তা চান না।
  • যদি একটি পরিবার অতি গরীব, তবে এক প্রজন্মের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু যদি পর পর দুই প্রজন্ম ঈশ্বরের নীতিমালায় চলে, তবে দারিদ্রতা অতিক্রম করা সম্ভব।
  • সামনের প্রজন্মকে ভাল কিছু দেওয়ার ক্ষমতা থাকা, তা হল ঈশ্বরের বাক্যে একটি পুনরুক্তি বিষয়।
  • ভাল কিছু দেওয়া, তার অর্থ শুধুমাত্র এই নয়: ধন-সম্পত্তি দেওয়া। তা ছাড়া বাবা-মা সন্তানদের চরিত্র, বাইবেলীয় মূল্যবোধ, ঈশ্বরের নীতিতে চলা, পরিশ্রমের অভ্যাস, ভালভাবে দেখাশুনা করার মনোভাব, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আগ্রহ ও দক্ষতা দেওয়া উচিত। যদি ধন-সম্পত্তির সাথে এই ধরণের মনোভাব দ্বিতীয় প্রজন্মকে দেওয়া না হয়, তবে যা প্রথম প্রজন্ম গঠন করেছে তা দ্বিতীয় প্রজন্ম নষ্ট করবে।
  • দীর্ঘদিন দেখলে ধন-সম্পত্তি হল বাবা-মা থেকে পাওয়া উত্তরাধিকারের সবচেয়ে ছোট বিষয়।
  • হিতো ২০:২১ ‘বাবার সম্পত্তির অধিকার যদি তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় তবে শেষে তাতে আশীর্বাদ পাওয়া যাবে না।’ ঈশ্বর চান যেন ধন আস্তে-আস্তে বৃদ্ধি পায়, যেন সাথে চরিত্র, প্রজ্ঞা, মনোভাব, স্বনিয়ন্ত্রণ ও দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। এভাবে করলে তবে ধন-সম্পত্তি হবে স্থায়ী ও আশীর্বাদ-প্রাপ্ত।
  • ঈশ্বর চান যেন প্রত্যেক পরিবারে বহুপ্রজন্মের একটি গঠন ও বৃদ্ধি ঘটে, যেন প্রত্যেক পরিবারে প্রজন্ম পর প্রজন্ম ধরে ধন-সম্পত্তি, দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও স্বনিয়ন্ত্রণ বাড়ে।
  • ২ করি ১২:১৪ পৌল এই কথা কোথা থেকে উদ্ধৃতি করেন? কোথা থেকে উদ্ধৃতি করেন? মোশির আইন-কানুনে ঠিক এই ধরণের কোনো আইন নেই। অথবা তা সাধারণ বুদ্ধি থেকে নিয়ে আসছেন? বা তা কি মোশির একটি আইনের সম্প্রসারণ?
  • হিতো ১৩:২২ এই পদ বুঝায় যা সম্ভব। তা ছাড়া পদটি ঈশ্বরের একটি প্রতিজ্ঞা: যারা ভাল, যারা ঈশ্বরকে মানে তাদের অবশ্যই কেবল মাত্র তাদের ছেলে-মেয়েদের নয় বরং তাদের নাতী-নাতনীদেরও ভাল কিছু দান করার ক্ষমতা থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি পরিবারে বৃদ্ধি ও গঠন থাকবে, তা সম্ভব ও প্রতিজ্ঞাত।
  • কি করব যদি আমার বাবা-মা বেশি প্রজ্ঞাবান নন, যদি তারা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত, অলসতা বা অবহেলা দ্বারা অনেক সম্পত্তি নষ্ট করেন? তা অবশ্যই দেখতে খুব খারাপ লাগে, কিন্তু বেশি কিছু করার নেই। হয়তো পরামর্শ বা প্রস্তাব করা যায় কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়ার ক্ষমতা আছে, তারা এই বিষয়ে কথা নাও শুনতে পারে। কিন্তু: তারা পারিবারিক সম্পত্তি নষ্ট করলেও আমি সন্তান হিসাবে আমার প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত ও পরিশ্রম দ্বারা তা পুনরায় গঠন শুরু করতে পারি।
  • পশ্চিমা দেশে (যেখানে বহুবছর ধরে বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গী প্রভাব ফেলেছে) আজ পর্যন্ত বাবা-মায়েরা জমা দিতে থাকে ও সাধারণত তারা বেশ ভাল পরিমানে উত্তরাধিকার দিতে সক্ষম হয়: ‘ভাল লোক তার নাতিপুতিদের জন্য অধিকার রেখে যায়’
  • বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় যে একবার সন্তানরা আয় করা শুরু করলে, বাবা-মা কাজ করা বাদ দেন যদিও তারা এখনও কাজ করতে পারতেন। ফলে একটি পর-নির্ভরশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়: সন্তান মাত্র আয় করা শুরু করেছেন, বিবাহ করেছেন, হয়তো ছোট সন্তান আছে, ঠিক এই মুহূর্তে বাবা-মাকে চালানো তার উপর আলাদা চাপ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ অবসর নেওয়ার বয়স পশ্চিমা দেশের অবসর নেওয়ার বয়স থেকে অনেক কম। ফলে সামনের প্রজন্মের উপর অপ্রয়োজনীয় একটি চাপ পড়ে।
  • ‘পাপীর ধন ঈশ্বরভক্তদের জন্যই জমা করা হয়’। অনেক বার তার বিপরীত ঘটতে থাকে বোধ হয়: মন্দরা ঠিকই ধনী হয়ে যায় এবং যারা ঈশ্বরভক্ত তাদের কষ্ট বেশি।
  • কিন্তু তাও দেখা যায়: অনেক পারিবারিক ধন-সম্পত্তি পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, ঠকানো, প্রজ্ঞার অভাব, অবহেলা, অলসতা, নীতিহীনতা, বিলাসিতা ও নেশার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়।
  • প্রজন্মের পর প্রজন্মের পারিবারিক ধন-সম্পদের বৃদ্ধি এমনি এমনি হবে না। শুধুমাত্র যদি প্রত্যেক প্রজন্ম পরিশ্রমী, স্বক্রিয়, স্বনিয়ন্ত্রিত, হিসাবী, ঈশ্বরের নীতিতে বাধ্য ও ত্যাগ স্বীকারের লোক হয়, তবে তা সম্ভব।
  • বহুবছর দেখলে ঈশ্বরের পথের মঙ্গলময়তা ও প্রজ্ঞা প্রমাণিত হয়, কিন্তু শুরুতে তা দেখা যায় না। কারও শুরু করতে হবে, ঘাম ফেলে ও কষ্ট করে, বাধ্যতায় ও বিশ্বাসে। শেষে সবাই দেখবে কিন্তু শুরুতেই বিশ্বাস অতি প্রয়োজন।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১২-১৫              ‘৬ দিন পরিশ্রম কর!’
২ থিষলনীকীয় ৩:১০                  ‘কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়।’

  • যে মুহূর্তে আমার ছেলের চাকরী হয়েছে, সে মুহূর্তে আমি কাজ বাদ দেব, তা নয়। যতদিন পর্যন্ত আমার কাজ করার জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তি আছে ততদিন পর্যন্ত এই দুইটি আদেশ প্রযোজ্য। বাবা-মার যদি কাজ করা সম্ভব, তবে কাজ করতে থাকা দরকার। বয়স যখন বাড়ে, আস্তে আস্তে অবশ্যই হয়তো কাজের ধরণ পরিবর্তন হয়ে যায় বা কঠোর পরিশ্রম কমানো যায়। কিন্তু সবাই যেন নিজ ক্ষমতা অনুসারে পারিবারিক আয়ের দিকে অবদান রাখতে থাকে।
  • কাজ করতে সম্মান ও তৃপ্তি আছে। স্বর্গ যে ‘অবসর স্থান’ ও ‘অবশেষে অলস জীবন’ এই চিন্তা বাইবেলে আসলে নেই।
বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব

মার্ক ৭:৯-১৩                    বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেও না
‘যীশু তাঁদের আরও বললেন, “ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের চলতি নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভাল উপায়ই আপনাদের জানা আছে। ১০ যেমন ধরুন, মোশি বলেছেন, ‘মা-বাবাকে সম্মান কোরো’ এবং ‘যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।’ ১১ কিন্তু আপনারা বলে থাকেন, যদি কেউ তার মা কিম্বা বাবাকে বলে, ‘আমার যে জিনিসের দ্বারা তোমার সাহায্য হতে পারত তা কর্ব্বান,’ অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছে, ১২ তবে মা-বাবার জন্য তাকে আর কিছু করতে হয় না। ১৩ এইভাবে আপনারা আপনাদের চলতি নিয়ম শিক্ষা দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাতিল করেছেন। এছাড়া আপনারা আরও এই রকম অনেক কাজ করে থাকেন।’

  • যীশু এখানে দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬ বা যাত্রা ২০:১২ থেকে ৫ম আজ্ঞা এবং লেবীয় ২০:৯ (বাবা-মাকে অভিশাপ দেওয়া মৃত্যুযোগ্য অপরাধ) উদ্ধৃতি করেন: বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অবশ্যই অর্থনৈতিক দায়িত্ব আছে। মোশির আইন-কানুনে বাবা-মার জন্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো আদেশ নেই, কিন্তু ‘বাবা-মাকে সম্মান কর’, এই আদেশ আছে। যীশুর ব্যাখ্যা থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা য়ায় যে, ‘সম্মান কর’ এর মানে একইসাথে বাবা-মায়ের জন্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেওয়া। এইটা কি বুড়ো-বুড়ি হওয়ার পরে? অসুস্থ হওয়ার পরে? বিপত্নীক বা বিধবা হওয়ার পরে? বা সব সময়? তা নিয়ে আরো চিন্তা করা দরকার।
  • যীশু ফরীশীদের দোষ ধরেন কারণ তারা তাদের পরে যোগ দেওয়া আইন, ব্যাখ্যা বা ঐতিহ্যগুলি দিয়ে
    মোশির দ্বারা দেওয়া ঈশ্বরের আইন বাতিল করে দেন।
  • ‘কর্ব্বান’ মানে ‘উৎসর্গ’, মানে এমন কোনো সম্পত্তি যা একজন শপথ করে ঈশ্বরের কাছে বা মন্দিরে দান করত।
  • বোধ হয় কিছু লোক বাবা-মায়ের প্রতি অর্থনৈতিক দায়িত্ব অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে তাদের সম্পদ এভাবে মন্দিরের কাছে সমর্পিত করত। হতে পারে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে সেই সম্পদ ফেরত নেওয়ার একটি পদ্ধতিও ছিল।
  • ফেরত নেওয়ার পদ্ধটি যদি ছিল না: যীশু বলেন যে ‘কর্ব্বান’ দিয়ে নিজের ধার্মিকতার উপস্থাপন করা কিন্তু নিজের বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন না করা, হল লজ্জার বিষয়।
  • ফেরত নেওয়ার পদ্ধটি যদি ছিল: একটি পদ্ধটি যাতে একজন ধার্মিকতা দেখিয়ে বাবা-মাকে ঠকাতে ও দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়, এটা লজ্জার বিষয়। তার অর্থ হল আইনকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে ব্যবহার করা: আইনের পিছনে ঈশ্বরের হৃদয় অমান্য করা, চালাকি অজুহাত দেখানো এবং আইন উল্টোদিকে ব্যবহার করা। বোধ হয় ফরীশীরা বা আইন-শিক্ষকরা এই ধরণের পদ্ধটি থেকে লাভ করত, তাই তারা এই পদ্ধিত সমর্থন করত (মার্ক ৭:১২)। যীশু কোনোভাবে এই পদ্ধতিকে সমর্থন করেন না বরং এই বিষয়ে তাদের দোষ ধরেন।
  • যোহন ১৯:২৬-২৭ … যীশু যখন ক্রুশে, তিনি তাঁর শিষ্য যোহনকে তার মায়ের দেখাশুনার দায়িত্ব দেন (এবং মাকে দায়িত্ব দেন যোহনকে দেখাশোনা করতে)। যীশুর চারজন ছোট ভাই থাকলেও (মার্ক ৬:৩) তিনি এভাবে তাঁর মায়ের জন্য ব্যবস্থা করেন।

দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১২-১৫                   ‘৬ দিন পরিশ্রম কর!’
২ থিষলনীকীয় ৩:১০                       ‘কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়।’

  • এই পদগুলিতে একইভাবে কাজ করার আদেশ সন্তানদেরও দেওয়া হয়েছে। একজন প্রাপ্ত বয়সের সন্তানেরও কাজ না করলে খাওয়া নিষেধ। বাবা-মায়ের টাকা পেয়ে অলস সময় কাটানো বা বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে কাজ না করে তা খরচ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
  • প্রবাদ যেমন বলে ‘বাবা ব্যাংক ও মা হোটেল’, এই ধরণের চিন্তা নিয়ে অলস জীবন কাটানো নিষেধ। বাবা-মা হিসাবে একজন অলস প্রাপ্ত বয়সের সন্তানকে খাওয়ানো উচিত নয়।
  • একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান যে রোজগার করে কিন্তু এখনও বাবা-মায়ের সাথে বাস করে, তার অবশ্যই মা-বাবাকে সামর্থ অনুসারে টাকা দেওয়া উচিত (বাসাভাড়া, খাবার এবং আরো যা কিছু প্রয়োজন)। তা ছাড়াও সংসারের কাজে সাহায্য করা উচিত।
  • সক্ষম হলেও কাজ না করা অথবা বয়স্ক বা অসুস্থ বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া দুইটাই নিষেধ।
অর্থনৈতিক দায়িত্বের বিভিন্ন ধাপ বা স্তর

১ তীমথিয় ৫:৩-৮,১৬                        বিধবাদের প্রতি অর্থনৈতিক দায়িত্ব
‘যে সব বিধবাদের কেউ নেই তাদের যত্নের সংগে দেখাশোনা কোরো। কিন্তু কোন বিধবার যদি ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাত্‌নী থাকে তবে সেই ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাত্‌নীরাই যেন প্রথমে নিজের নিজের পরিবারের প্রতি কর্তব্য করে ঈশ্বরভক্তি দেখাতে শেখে। এইভাবে তারা তাদের বাপ-দাদাদের স্নেহের ঋণ শোধ করতে পারবে, আর এতেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। যে বিধবার কেউ নেই সে ঈশ্বরের উপরেই তার আশা রেখে দিনরাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ও অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু যে বিধবা যেভাবে খুশী জীবন কাটায় সে জীবিত অবস্থায়ও মরার মত। এই সব বিষয়ে নির্দেশ দাও যাতে কেউ তাদের দোষ দিতে না পারে। যে নিজের আত্মীয়দের, বিশেষ করে নিজের পরিবারের দেখাশোনা করে না সে তার দ্বারা তার বিশ্বাসকে অস্বীকার করেছে; সে অবিশ্বাসীর চেয়েও খারাপ।…খ্রীষ্টে বিশ্বাসী কোন স্ত্রীলোকের ঘরে কয়েকজন বিধবা থাকলে সেই স্ত্রীলোকই তাদের দেখাশোনা করুক। এই সব বিধবার ভার মণ্ডলীর উপর চাপানো উচিত নয়, যাতে যে সব বিধবার কেউ নেই মণ্ডলী তাদের দেখাশোনা করতে পারে।’

  • একটি অভাবী বিধবার প্রতি মণ্ডলীর দায়িত্ব কতদুর অনুচ্ছেদটি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। প্রেরিত ৬:১-৬ দেখুন।
  • পৌল বলেন শুধু মাত্র যখন বিধবার কোনো আপন পরিবার বা আত্মীয় নেই তখন অর্থনৈতিক যোগানের
    দায়িত্ব মণ্ডলীর উপর পড়বে। পৌল আরো বলেন যে শুধুমাত্র এমন বিধবা যে ভাল কাজ করে, অন্যদের উপকার করে ও নৈতিক জীবন-যাপন করে, তাদেরকে সমর্থন করার দায়িত্ব মণ্ডলীর।
  • দারিদ্রতার বিরুদ্ধে প্রথম সুরক্ষাকারী হল পরিবার। যখন পরিবার নেই বা পরিবার দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তখন এই দায়িত্ব মণ্ডলীর উপর পড়ে।
  • বিধবাদের অর্থনৈতিক সমর্থন শর্তযুক্ত বিষয়: এমন একটি বিধবা যে মানুষের চেয়ে ঈশ্বরের উপর আশা রাখে এবং প্রার্থনা করে। তার অর্থ এই: যে বেশি দাবী করে না এবং সে যা দিতে পারে তা দেয় (প্রার্থনা)। হয়তো ইফিষ শহরে অনেক অভাবী বিধবারা আর্থিক সমর্থন পাওয়ার জন্যই মণ্ডলীতে যোগ দিয়েছিল।
  • নিজ পরিবারের প্রতি ১ তীমথিয় ৫:৩-৮ পদে এবং মণ্ডীর প্রতি ১ তীমথিয় ৫:৯-১৬ পদে একজন সামর্থযোগ্য বিধবার করণীয় কি, তা বর্ণনা করা হয়েছে।
  • যদি একটি বিধবা ‘যেভাবে খুশী জীবন কাটায়’ তবে তাকে অর্থনৈতিক সমর্থন দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাদ পড়ে? মণ্ডলীর ক্ষেত্রে? পরিবারের ক্ষেত্রে? ১ তীমথিয় ৫:১৬ ‘মণ্ডলীর উপর চাপানো উচিত নয়’ দেখায় যে মণ্ডলীর ক্ষেত্রে বাদ পড়ে। বোধ হয় একটি পরিবারের জন্য একই: একটি দায়িত্বহীন বিধবার জন্য কাউকে দায়ী করা হয় না।
  • দায়িত্বের বিভিন্ন স্তর বা মাত্রা আছে: ১ম আপন স্ত্রী বা স্বামী এবং আপন ছেলে-মেয়ে, ২য় বয়স্কো বাবা-মা, ৩য় অবিবাহিত বোন (লেবীয় ২১:১-৩) বা অন্য আত্মীয়, ৪র্থ মণ্ডলী।
  • ১ তীমথিয় ৫:৭ পদে পৌল তীমথিয়কে বিধবাদের আদেশ দিতে বলেন ‘যাতে কেউ তাদের দোষ দিতে না পারে’ ১ তীমথিয় ৫:৮ পদে পরিবারদের আদেশ দিতে বলেন যেন তারা বিধবাদের যত্ন নেয়। তিনি বলেন যে বিশ্বাসী হিসাবে তা না করলে ‘সে অবিশ্বাসীর চেয়েও খারাপ’, শক্তিশালী একটি কথা! আবারও দেখা যায় যে ঈশ্বর দুইপাশে লোকদের দায়িত্বশীল হতে বলেন।
  • কেমন হয় যদি একটি বিশ্বাসীর পরিবারে একটি অবিশ্বাসী বিধবা আছে? কেমন হয় যদি একটি ভাল বিশ্বাসী বিধবার পরিবার অবিশ্বাসী, তাই বিধবার দায়িত্ব নিতে চায় না? ঈশ্বরের নীতি হল: প্রত্যেক দায়িত্বের একটি সীমানা আছে, প্রত্যেক অধিকারের একটি সীমানা আছে।
  • ‘কিন্তু যে বিধবা যেভাবে খুশী জীবন কাটায়’ (১ তীমথিয় ৫:৬) অথবা যদি ‘বাড়ী বাড়ী ঘুরে অলস হতে শেখে। …বাজে কথা বলতে ও পরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শেখে এবং যা তাদের বলা উচিত নয় সেই সব কথা বলে’ (১ তীমথিয় ৫:১৩)। যদি একজন বিধবার নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করার ক্ষমতা বা সামর্থ আছে, যদি সে তার সময় ভাল কাজে বা উপকারী হওয়ার জন্য ব্যবহার না করে, তবে এই ধরণের বিধবাদের জন্য পরিবার ও মণ্ডলী যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব থেকে মুক্ত।
  • যদি একটি বিধবার এখনও শক্তি আছে, তার সংসার চালানোর কাজে অংশ গ্রহণ করা উচিত। যদি আর শক্তি নেই, তবে প্রার্থনায় ও বিশ্বাসে সমর্থনকারী হোক।
  • ১ তীমথিয় ৫:৮ পদে দায়িত্বের দুটি স্তর নিয়ে কথা হচ্ছে: প্রথম আপন পরিবারের প্রতি (নিজের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা), দ্বিতীয় স্তরে আত্মীয়দের প্রতি। আপন পরিবারের মধ্যে: প্রথম প্রাপ্ত বয়স না পৌছানো সন্তান, পরে অভাবী বা বয়স্কো বাবা-মা।
  • ইনস্টন-ব্রূয়ার নামে একজন লেখক তার বইয়ে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনরায় বিবাহ’ (David Instone-Brewer, ‘Divorce & Remarriage in the Bible’) বলেন যে মণ্ডলী সম্বন্ধীয় তথ্য আবিষ্কার করা হয়েছে যে রোম মণ্ডলী ১৫০০ বিধবাদের সমর্থন দিত এবং আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী এমন কি ৩০০০ বিধবা ও অবিবাহিত মেয়েদের সমর্থন করত। এই উচুঁ সংখ্যা দেখে বুঝা যায় যে বিষয়টি অনেক প্রয়োজনীয় ছিল কিন্তুও যে মণ্ডলীর উপর তা একটি বড় চাপ ছিল।

যাকোব ১:২৭                                       বিধবা ও অনাথদের দেখাশোনা করা
‘বিধবা ও অনাথদের দুঃখ-কষ্টের সময়ে তাদের দেখাশোনা করা আর জগতের সব নোংরামি থেকে নিজেকে পরিষ্কার রাখাই হল পিতা ঈশ্বরের চোখে খাঁটি ও সত্য ধর্ম।’

  • এখানে আত্মীয় হিসাবে বিধবা ও অনাথকে দেখাশোনা করতে বলা হয় নি বরং যে কোনো বিধবা বা অনাথকে।
  • বিধবাদের দেখাশোনার স্তর বা মাত্রা তাহলে: আপন পরিবার ও বর্ধিত পরিবারের পরে এখানে যে কোনো বিশ্বাসী বা ইচ্ছুক ব্যক্তি।

লেবীয় ১৯:৯, দ্বি বি ২৪:১৯-২২                  বিধবা ও অনাথদের জন্য সাহায্যকারী ব্যবস্থা (বাকী ফসল তোলার অধিকার)

  • ক্ষেতের কিনারা থেকে ফসল নেওয়ার অধিকার এখানে এমন লোকদের দেওয়া হয়েছে যাদের কোনো পরিবার নেই। তাই একজন অভাবীর পরিবার থাকলে তবে পরিবারেরই তার জন্য দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

যিরমিয় ৪৯:১১                                      ঈশ্বর বিধবা ও অনাথদের রক্ষা করবেন
‘তোমার অনাথ ছেলেমেয়েদের রেখে যাও; আমি তাদের জীবন রক্ষা করব। তোমার বিধবারাও আমার উপর নির্ভর করুক।’

  • বিধবা ও অনাথদের (এমন লোক যাদের পরিবার নেই) ঈশ্বর তাদের দেখাশোনা করবেন। তাই একজন অভাবীর পরিবার থাকলে তবে পরিবারেরই তার জন্য দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

যিশাইয় ৫৮:৬-৭                                    নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না
‘আসলে আমি এই রকম উপবাস চাই: …খিদে পাওয়া লোকদের তোমাদের খাবার ভাগ করে দাও, ঘুরে বেড়ানো গরীব লোককে নিজের ঘরে আশ্রয় দাও, উলংগকে দেখলে তাকে কাপড় পরাও, আর নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। এই সব কাজ করাই হল আসল উপবাস।’

  • ‘আত্মীয়-স্বজন’ মানে এমন লোক যাদের সাথে আমার রক্তের সম্বন্ধ আছে এবং এমন লোক যারা বিবাহের মধ্য দিয়ে এই পরিবারে যোগ দিয়েছেন। তাই আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি একটি মৌলিক দায়িত্ব আছে।

২ থিষলনীকীয় ৩:১০                                অলস আত্মীয়দের খাওয়ানো ঠিক না
‘তোমাদের কাছে থাকবার সময়েই আমরা তোমাদের আদেশ দিয়ে বলেছিলাম যে, কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়।’

  • কিন্তু আবারও: একজন অলস আত্মীয়ের প্রতি দায়িত্ব খুব সীমিত। এমন কি যদি আমি তার সবচেয়ে নিকট আত্মীয় হই, যদি সে অলস ও দায়িত্বহীন হতে থাকে তবে তাকে খাওয়ানো উচিত না। এই ধরণের লোক একটি ‘তলা ছাড়া বালতির’ সাথে তুলনা করা যায়। এই ধরণের তলা ছাড়া বালতিতে পানি ঢালতে ঈশ্বর কাউকে বাধ্য করেন না।

দ্বিতীয় বিবরণ ২১:২০                              বিব্রোহী কিশরের বর্ণনা
‘আমাদের এই ছেলে ভীষণ একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী; সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।’

  • এখানে এমন একজন কিশোরের কথা যার উপরে বাবা-মায়ের অধিকার বা নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে গেছে কিন্তু সে এখনও প্রাপ্ত বয়সের হয় নি। বাবা-মাকে এগিয়ে এসে তাকে অন্য নেতৃত্বের হাতে হস্তান্তর করতে হবে।
  • এর মধ্যে এই নীতিও আছে: একটি সন্তান যদি সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন হয় ও সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে ঈশ্বর কাউকে এই ধরণের সন্তানের জন্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেন না। বরং বাবা-মায়ের উচিত পদক্ষেপ নিয়ে এই ধরণের সন্তানকে প্রাচীনদের কাছে হস্তান্তর করা।

লেবীয় ২১:১-৩                                     একটি অবিবাহিত বোনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
‘তুমি পুরোহিতদের, অর্থাৎ হারোণের ছেলেদের বল যে, তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার দরুন কোন পুরোহিতের নিজেকে অশুচি করা চলবে না। তবে মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই- এই রকম কাছে সম্বন্ধের
লোকদের জন্য তার নিজেকে অশুচি করা চলবে। তা ছাড়া বিয়ে হয় নি বলে যে বোন তার সংসারে আছে তার জন্যও তার নিজেকে অশুচি করা চলবে।’

  • এখানে অর্থনৈতিক যোগানের বিষয় নয় বরং অন্য একটি প্রয়োজনীয় সেবা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল একজন মারা গেলে তার লাশ সম্মানের সঙ্গে দাফন দেওয়া।
  • একজন পুরোহিতের আত্মীয়-স্বজনের লাশ দাফন দেওয়ার কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু শুধুমাত্র যদি পুরোহিতের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে বা ভাই মারা যান, তবে তিনি তা করতে পারেন। কিন্তু যদি তার অন্য একজন আত্মীয় মারা যায়, তবে তিনি দায়িত্ব না নিয়ে আর একজন আত্মীয় তা করুক।
  • কিন্তু অবিবাহিত বোনের লাশ দাফন দেওয়ার জন্য তিনি নিজেকে অশুচি করতে পারেন। কেন এখানে অবিবাহিত বোনের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন আছে? কারণ তার স্বামী বা সন্তান নেই, হতে পারে এখানে বাবা আর জীবিত নন, না হলে দায়িত্ব তার উপর পড়ত (যদি তিনি পুরোহিত ভূমিকা আর পালন করেন না)।
  • নাসরীয় শপথ যদি একজন করে, তবে এমন কি আপন পরিবারের লোকের জন্যও নিজেকে অশুচি করার অনুমোদন নেই, তাই দাফন দেওয়ার দায়িত্ব নিতে সে পারবে না (গণনা ৬:৭)।
  • ঈশ্বরের ভিত্তিক নীতি হল পরিবারের সবচেয়ে আপন আত্মীয় যেন দায়িত্ব নেয়। যদি এই রকম আপন আত্মীয় না থাকে, তবে পরবর্তী আত্মীয় যেন এই দায়িত্ব নেয়। ঈশ্বর চান যেন দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে ধাপ বা স্তর অনুস্মরণ করা হয়।

দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:২-৩                          একজন বিদেশীকে নয় কিন্তু একজন ইস্রায়েলীয়কে ঋণ মকুব কর
‘এই নিয়মে তা মকুব করতে হবে: প্রত্যেক ইস্রায়েলীয় পাওনাদার অন্য ইস্রায়েলীয়কে দেওয়া সব ঋণ মকুব করে দেবে। ঋণ মকুব করে দেবার জন্য সদাপ্রভু যে সময় ঠিক করে দিয়েছেন তা ঘোষণা করা হয়েছে বলে কোন ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের কাছ থেকে ঋণ শোধের দাবি করা চলবে না। ভিন্ন জাতির লোকদের কাছ থেকে ঋণ শোধের দাবি করা চলবে, কিন্তু তোমাদের ভাইদের ঋণ তোমাদের মকুব করে দিতে হবে।’

  • ৭ নম্বর বছরে সব ঋণ মৌকুফ করে দিতে হবে। কিন্তু এখানে পার্থক্য করা হয়: নিজের সমাজের বা নিজের জাতির লোকদের ঋণ মৌকুফ দিতে হবে, কিন্তু একজন বিদেশীর ক্ষেত্রে তা আবশ্যক নয়। হয়তো তার কারণ ছিল নিশ্চিত করার জন্য যেন বিদেশীরা ঋণ পেতে পারে, যেহেতু তাদের ঋণ দেওয়া আরো ঝুঁকির বিষয়।
  • এই আদেশে আবারও দেখা যায় যে দায়িত্বের বিভিন্ন মাত্রা আছে, এখানে ঋণ মৌকুফ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে।
নীতিগুলি একসাথে দেখলে: দায়িত্বের বিভিন্ন ধাপ বা স্তর
  • সব পদ একসাথে দেখে বোধ হয় যে দায়িত্বের বিভিন্ন ধাপ বা স্তর আছে:
    • ১ম: আপন স্ত্রী, আপন স্বামী, আপন সন্তান (প্রাপ্ত বয়স ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত)
    • ২য়: আপন বাবা-মা ও শশুড়-শাশুড়ি যখন তারা নিজের যোগান আর করতে পারে না (বুড়ো, অসুস্থ, বিধবা)
    • ৩য়: অবিবাহিত বোন বা আত্মীয় (বর্ধিত পরিবার) যদি তারা দায়িত্বশীল কিন্তু অভাবী হয়
    • ৪র্থ: সমাজ, মণ্ডলী, পরিবার ছাড়া বিধবা, অনাথ, অসুস্থ বা গরীব
    • ৫ম: বাইরের লোক, বিদেশী
  • ঈশ্বর চান যেন অভাবে থাকা একজন লোক সাহায্য পায়। কিন্তু সে লোক যদি দায়িত্বহীন হ্য়, তবে তাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেওয়ার কোনো বাধ্যবাদকতা নেই। আসলে, এই রকম লোককে অর্থনৈতিকভাবে যোগান দেওয়া ভুল (২ থিষলনীকীয় ৩:১০)।
  • ঈশ্বর চান সবচেয়ে আপন বা প্রথম স্তরের আত্মীয় যেন অভাবীর জন্য দায়িত্ব নেয়। দ্বিতীয় স্তরের আত্মীয় অভাবীর জন্য দায়িত্ব নেবে যদি প্রথম স্তরের কেউ না থাকে (সবাই মারা গেছে বা তাদের সমার্থ নেই)।
    শুধুমাত্র যদি দ্বিতীয় স্তরের আত্মীয় নেই, তবে দায়িত্ব তৃতীয় স্তরের আত্মীয়ের কাছে যাবে।
  • ঈশ্বর এখানে প্রতিরোধ করেন যেন আত্মীয়-স্বজনরা একজন ভাল লোকের উপর ইচ্ছা মত দাবী করতে
    পারে। ঈশ্বর এখানে এমন লোক বা পরিবার রক্ষা করেন যারা হিসাবী, প্রজ্ঞাবান ও স্বনিয়ন্ত্রিত, যেন তাদের উপরে দায়িত্বহীন আত্মীয়রা ‘চিরকাল’ চাপ দিতে না পারে।
  • ঈশ্বর এখানে স্বক্রিয়ভাবে এমন লোক যারা বিশ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে দায়িত্বশীল, হিসাবী, প্রজ্ঞাবান ও মিশুক, তাদের রক্ষা করেন যেন তারা প্রজ্ঞাহীন, দায়িত্বহীন ও বেহিসাবী আত্মীয়দের অনবরত দাবী থেকে মুক্তি পায়। আবারও: ‘তলা ছাড়া বালতিতে’ পানি ঢালতে থাকার কোনো আদেশ নেই। আত্মীয়দের দাবী পূর্ণ করার জন্য একজনের তার আপন পরিবারকে উৎসর্গ করতে হবে, ঈশ্বর এমন কোনো আদেশ দেন না।
  • এর সাথে যুক্ত হয় আর একটি নীতি। তা হল যেখানে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই, সেখানে আমার অর্থ দেওয়ারও কোনো দায়িত্ব নেই।
  •  যদি একজনের বাবা দায়িত্বহীন ও ইচ্চামত টাকা নষ্ট করে (যেমন জুয়া খেলা) সন্তানের তার জন্য অর্থনৈতিক যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাদকতা নেই। তিনি হয়তো বাবা-মাকে তার নিজের সংসারে এনে খাওয়াতে পারেন, কিন্তু তবে সংসারের খরচের বিষয়ে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। উদাহরণ: একজন প্রাপ্ত বয়সের দায়িত্বহীন ছেলে যে ইচ্ছামত চলে, সে তার বাবার থেকে টাকা, এমন কি খাওয়ার অধিকার দাবী করতে পারবে না। এই ধরণের ছেলের উচিত হয় বাবার কথা শুনতে হবে, না হয় চলে গিয়ে নিজেকে চালাতে হবে।
  • দীর্ঘদিন দেখলে এই নীতিগুলি জীবন ও সুঅবস্থা নিয়ে আসবে। সত্য নিজেকে বাস্তবতায় প্রমাণিত করবে, যদিও এই নীতি প্রয়োগ করতে প্রথমদিকে কষ্টের কাজ ও কিছু সম্পর্ক ভেঙ্গেও যেতে পারে। নীতিগুলি পালন করলে এবং কিছু আত্মীয়দের দাবী অস্বীকার করলে লোকেরা একজনকে প্রথমদিকে স্বার্থপর, যত্নহীন ও দায়িত্বহীন বলবে।
  • ঈশ্বর একটি চমৎকার ও অদ্ভূত পদ্ধতি দিয়েছেন: তিনি অধিকার দেন, অধিকারের সীমানাও দেন। তিনি দায়িত্ব দেন, দায়িত্বের সীমানাও দেন। ঈশ্বর অভাবীদের প্রতি সমর্পিত। ঈশ্বর সাহায্যকারীদের প্রতি সমর্পিত।
অতি দয়ালু হওয়ার বিষয়ে একটি সাবধানবাণী

যিশাইয় ২২:২০-২৫                                       একজন ভাল লোকের উপর অতি বেশি চাপ ও নির্ভরতা
‘দিন আমার দাস হিল্কিয়ের ছেলে ইলীয়াকীমকে আমি ডাকব। ২১ তাকে আমি তোমার পোশাক পরাব ও তার কোমরে তোমার কোমর-বাঁধনি বেঁধে দেব এবং তোমার কাজের ভার তার হাতে তুলে দেব। সে যিরূশালেমের বাসিন্দাদের ও যিহূদার বংশের পিতার মত হবে। ২২ তার কাঁধে আমি দায়ূদের বংশের চাবি রাখব; সে যা খুলবে তা কেউ বন্ধ করতে পারবে না, আর যা বন্ধ করবে তা কেউ খুলতে পারবে না। ২৩ একটা শক্ত জায়গায় আমি তাকে গোঁজের মত করে লাগিয়ে দেব, তার বাবার বংশের জন্য সে হবে একটা সম্মানের আসন। ২৪ তার বংশের সব বোঝা তার কাঁধেই ঝুলবে। সব রকম ছোটখাট পাত্র যেমন গোঁজে ঝোলে তেমনি তার ছেলেমেয়ে ও বংশধরেরা তাঁর কাঁধেই ঝুলতে থাকবে। ২৫ যে গোঁজটা শক্ত জায়গায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই দিন সেটা খুলে আসবে; সেটা পড়ে যাবে এবং তার উপরে যে ভার ঝুলছিল সেটা কেটে ফেলা হবে।’ ‘এই হল সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কথা। এই সব ঘটবে, কারণ সদাপ্রভু নিজেই তা বলেছেন।’

  • এই অনুচ্ছেদ বুঝতে কঠিন কিন্তু আকর্ষনীয় একটি গল্পও: একজন স্বার্থপর কর্মচারীর তুলনায় ইলীয়াকীম একজন ঈশ্বর ভক্ত, ন্যায্য ও দয়ালু লোক (যিশাইয় ২২:১৫-১৯)। ঈশ্বর স্বার্থপর কর্মচারী সরিয়ে ইলীয়াকীমকে নেতৃত্ব দেন ও তাকে শক্তিশালী ও সম্মানিত করেন।
  • ‘সব বোঝা তার কাঁধেই ঝুলবে’ অথবা ইংরেজী ‘তারা সব বোঝা তার উপর ঝুলবে’ … এই রূপকের বর্ণনা কি বুঝায়? হতে পারে একজন সরকারি কর্মচারী, সম্মানিত ও প্রভাবশালী লোক হিসাবে ইলীয়াকীমের উপরে তার বর্ধিত পরিবার থেকে অনেক অনুরোধ ও দাবী আসত: সুপারিশ করা, একজনের জন্য চাকরী ব্যবস্থা করা, একজনের পরিচয় করানো ইত্যাদি। সবাই তার উপর নির্ভর করে, তার দিকে তাকায়, তার সাহায্য দাবী করে, এমন কি যে শেষে তিনি আপোষও করেন (অযোগ্য একজন আত্মীয়ের সুপারিশ, একজনের নিয়োগ যেন হয় তার প্রভাব বিস্তার করা, নিজের আত্মীয়কে প্রাধান্য দেওয়া, ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া)। অথবা সব কিছু এমনি বেশি হয়ে যায়: শেষে তিনি পড়ে যান এবং তার সাথে তার সব আত্মীয়রাও পড়ে যায়।
  • দক্ষতাশীল, দায়িত্বশীল, প্রভাবশালী বা ধনী আত্মীয়দের উপরে চাপ দিও না, তাদের উপরে নির্ভর কর না।
  • সবার দাবী পূর্ণ করা ও সবাইকে খুশি করা শেষে সমস্যা হিসাবেও দাঁড়াতে পারে। নীতি রক্ষা করে একজনকে ‘না’ বলা কঠিন কাজ। যদিও আমার জন্য তাকে সাহায্য করা সহজ।
  • এখানে আমরা ভাল, ঈশ্বর ভক্ত, সম্মানিত নেতার প্রলোভন বা ঝুঁকি সম্বন্ধে শুনি যাকে ‘সব সমস্যার উত্তর হতে’ চাপ দেওয়া হয় বা যিনি ‘না’ বলতে কষ্ট মনে করেন কারণ যা দাবী করা হচ্ছে তা তিনি সহজেই করতে পারেন।
পরিবারে অন্যান্য পরিস্থিতিগুলি

দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৫-১৭                   বহুবিবাহ করলেও প্রথম ছেলের অধিকার রক্ষা করতে হবে
‘এমন হতে পারে যে, একজন লোকের দুজন স্ত্রী আছে, আর তাদের একজনকেই সে ভালবাসে অন্যজনকে নয়। তাদের দু’জনেরই যদি ছেলে হয় আর প্রথম ছেলের জন্ম হয় সেই স্ত্রীর গর্ভে যাকে সে ভালবাসে না, ১৬ তবে সম্পত্তি উইল করে দেবার সময়ে যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে বাদ দিয়ে অন্য স্ত্রীর ছেলেটিকে প্রথম ছেলের পাওনা অধিকার দেওয়া চলবে না, কারণ যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেটিই আসলে তার প্রথম ছেলে। ১৭ যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে তার সম্পত্তি থেকে অন্য যে কোন ছেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাগ দিয়ে সেই ছেলেই যে প্রথম ছেলে তা তাকে স্বীকার করতে হবে। সেই ছেলেই তার বাবার পুরুষ-শক্তির প্রথম ফল। প্রথম ছেলের অধিকার তারই পাওনা।’

  • বহুবিবাহের একটি দুঃখের চিত্র: দুইজন স্ত্রীকে একইভাবে ভালবাসা যায় না, তাদের মধ্যে একজনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে ও তা সমস্যা ও কষ্ট তৈরি করবে।
  • ঈশ্বর দাবি করেন যে বহুবিবাহ যদি পক্ষপাতিত হয় তবে কম পক্ষে দু্ইজনের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। এই আইন হল ‘ক্ষতি কমানোর’ একটি আইন। এই আইনের অর্থ এই নয় যে বহুবিবাহ বা পক্ষপাতিত ঈশ্বরের ইচ্ছা।
  • যদি প্রথম সন্তান অবিবাহিতদের যৌন সম্পর্কের বা ব্যভিচারের সন্তান হয় তবে নিয়মটা কি?

 

যাত্রা ২১:১০-১১               বহুবিবাহ করলেও প্রথম স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করতে হবে (দাসী স্ত্রী হলেও)
‘সেই মনিব সেই দাসীকে বিয়ে করবার পরেও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও সে তার খোরাক-পোশাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং দেহের দিক থেকে তার যা পাওনা তা-ও তাকে দিতে হবে। ১১ সে যদি এই সব কর্তব্য না করে তবে কোন টাকা না নিয়েই তাকে চলে যেতে দিতে হবে।’

  • পরিবারের মধ্যেও প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক অধিকার রক্ষা করা দরকার, বহুবিবাহের এবং দাসীকে বিবাহের ক্ষেত্রেও।
  • এখানে স্বামীর দায়িত্ব বর্ণনা করা হয় যেন তিনি তার স্ত্রী, তার কয়েকজন স্ত্রী, তার দাসী স্ত্রীর জন্য অর্থনৈতিক যোগান দেন ও তাকে বিবাহের অধিকারগুলি তাকে সম্পূর্ণভাবে দেন।
  • বিবাহের মধ্যে অধিকার বলতে কিছু আছে! এমন কি দাসী স্ত্রীরও আছে, তবে অবশ্যই স্বাধীন স্ত্রীরও আছে।
  • স্ত্রীর প্রতি যদি স্বামী সে অধিকারগুলি আর পূর্ণ করতে রাজি না হয় (যদি তিনি তার বিবাহের শপথ ভাঙ্গে), তবে তার দাসী স্ত্রীকে মুক্ত করে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। তাকে বিক্রী করা চলবে না। তার থেকে ঋণের টাকা দাবী করা যাবে না।

দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১০-১৪                        যুদ্ধের সময় মহিলা বন্দি
‘শত্রুদের সংগে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেবেন আর তোমরা তাদের বন্দী করবে, ১১ তখন যদি তাদের মধ্যেকার কোন সুন্দরী স্ত্রীলোককে দেখে তোমাদের কারও তাকে ভাল লাগে তবে সে তাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে। ১২ স্ত্রীলোকটিকে সে তার বাড়ীতে নিয়ে যাবে। তারপর স্ত্রীলোকটি তার চুল কামিয়ে ফেলবে ও নখ কেটে ফেলবে, ১৩ আর বন্দী হবার সময়ে তার গায়ে যে সব কাপড়-চোপড় ছিল তা খুলে ফেলবে। এর পর তার বাড়ীতে থেকে সেই স্ত্রীলোকটি পুরো এক মাস তার মা-বাবার জন্য শোক করবে। তারপর সেই লোকটি তাকে বিয়ে করে তার স্বামী হবে এবং স্ত্রীলোকটিও তার স্ত্রী হবে। ১৪ পরে যদি স্ত্রীলোকটির উপর সে অখুশী হয় তবে তাকে যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে দিতে হবে। সে তাকে বিক্রি করতে পারবে না কিম্বা দাসী হিসাবে রাখতে পারবে না, কারণ সে তার অসম্মান করেছে।’

  • ঈশ্বর বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষেধ করেন না, কিন্তু তিনি অনেক নিয়ম দিয়ে তা সীমাবদ্ধ রাখেন:
  • নিয়ম: একটি বন্দি মহিলাকে মাত্র যৌনতার জন্য কিছুক্ষণ নেওয়া যাবে না বরং তাকে আইনগতভাবে বিয়ে করতে হবে, তাকে শোক প্রকাশের জন্য এক মাস সময় দিতে হয়ে, তাকে একটি পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য কমানোর প্রক্রিয়া দিয়ে যেতে হবে। এই ধরণের স্ত্রীকে পরে যদি বিচ্ছেদ করা হয় তবে তাকে দাসী হিসাবে আর বিক্রি করতে পারবে না বরং তাকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতে হবে।
  • এই আইন হল যুদ্ধের ক্ষেত্রে ধর্ষণের প্রতিরোধ বা বন্দি মহিলাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা। অনেক বার যুদ্ধের ক্ষেত্রে এমন কিছু করা হয় যা একজন তার সাধারণ সমাজে করত না। যে কোনো দখল করা মহিলা এই আইনের সুরক্ষায় পড়ে।
  • কেন মহিলার চুল ও নখ কাটতে হয়? তা ছিল শোক প্রকাশের একটি অংশ কিন্তুও রোগ সংক্রমণের প্রতিরোধ। তা ছাড়া চুল কাটা মানে একটি মহিলার সৌন্দর্য কমানো, তাই তা হল একটি ‘মাথা ঠাণ্ডা করার’ পদ্ধতি। এক মাস বাসায় এনে শোক প্রকাশ হল মহিলাকে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কিছু সময় দেওয়া, কিন্তু পুরুষকে এই বিষয়ে পরিবারের আপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। হয়তো মা, বোনেরা বা আগের স্ত্রী এই নতুন স্ত্রীর বিষয়ে কিছু বলার আছে।
  • তাই আইনটি হল একটি সুরক্ষাকারী আইন, একটি মাথা ঠাণ্ডা করার আইন এবং এক পরিমাণে একটি ক্ষতি কমানোর আইন।
  • বন্দি মহিলার জন্য আইনটি মোটামুটি মেনে নেওয়ার মত একটি পথ খুলে দেয়: দাসী হিসাবে বিক্রি হওয়ার চেয়ে সে আইনগতভাবে বিবাহ করে স্ত্রী হয়ে যায় এবং স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার পায়।