দানিয়েল হলেন যিহূদার উঁচু শ্রেণীর পরিবারের ছেলে, যিনি কিশোর বা যুবক হিসাবে তার দেশকে শক্তিশালী বাবিল সাম্রাজ্য দ্বারা দখল ও নির্বাসিত হতে দেখেন। চিন্তা করুন দানিয়েলের অবস্থা কেমন ছিল: সম্ভবত তার পরিবার যুদ্ধে নিহত হয়েছে, তার আগের জীবন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গিয়েছে এবং তার আশাগুলো ভেঙ্গে গিয়েছে। তিনি নিজেকে দেবতাপূজারী বাবিল সাম্রাজ্যে খুঁজে পান। তাকে ও তার তিনজন বন্ধুকে একটি রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বাধ্য করা হয়, যেখানে তারা বাবিলীয় ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি শেখেন, যার মধ্যে জ্যোতিষীবিদ্যা, নক্ষত্রবিদ্যা, দৈবজ্ঞগিরি, ভবিষ্যৎ কথন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা, যাদুবিদ্যা ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত ছিল (দানিয়েল ১:৪)।
যে সুযোগ-সুবিধা বাবিলীয়েরা দানিয়েলকে দেয়, তা অনেক ক্ষেত্রে আকর্ষণের ও প্রলোভনের বিষয়: তাকে দেওয়া হবে উঁচু সরকারি ভূমিকা, পদ-মর্যাদা, দৈনিক বিলাসিতা, জ্ঞান-দক্ষতা এবং এমন বিদ্যা প্রশিক্ষণ যার মধ্য দিয়ে তিনি পরবর্তীতে ক্ষমতাশালীদের প্রভাবিত করতে পারবেন। কিন্তু দানিয়েল এই বিষয়ে আকৃষ্ট নন বরং তিনি এই প্রলোভন ভরা পরিস্থিতিতে ঈশ্বরকে ধরে রাখেন, নম্রতা ও বুদ্ধির সঙ্গে চলেন, আপোষ এড়িয়ে যান এবং বাবিলীয় দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিশ্বাস ধরে রাখেন। তিনি প্রশিক্ষণের শেষ পরীক্ষায় তিনি প্রত্যেক বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন, এমন বিষয়গুলো যা তিনি রাজি হন না, বিশ্বাসও করেন না (দানিয়েল ১:৮-২০)।
যখন তিনি সাহসের সঙ্গে রাজা নবূখদনিৎসরের একটি মূর্তি সম্বন্ধীয় স্বপ্ন বুঝিয়ে দেন তখন তিনি নিজেকে সবার দৃষ্টিতে খুঁজে পান। রাজার স্বপ্ন হল ঈশ্বর থেকে দেওয়া একটি ভবিষ্যদ্বাণী যাতে চারটি সাম্রাজ্য উল্লিখিত। স্বপ্ন এটাও দেখায় যে, ঈশ্বর হলেন ইতিহাসের কর্তা, তিনি মানুষের সাম্রাজ্যের উপর সার্বভৌম, তিনি ভবিষ্যৎ জানেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন। দানিয়েল স্বপ্ন বুঝে বলেন: “ঈশ্বর চিরকাল ধন্য হোন; জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই। তিনিই সময় ও ঋতু তাঁর অধীনে রাখেন; তিনি রাজাদের সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন। তিনি জ্ঞানীদের জ্ঞান দান করেন আর বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি দান করেন” (দানিয়েল ২:২০-২১)।
নবূখদনিৎসর প্রথম দিকে স্বপ্নে ভয় ও চেতনা পান, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি স্বপ্নটি নিয়ে অহংকারী হয়ে যান: তিনি (সম্ভবত নিজের বিষয়ে) একটি বিরাট সোনার মূর্তি বানিয়ে তার পূজা দাবি করেন (দানিয়েল ৩) এবং পরবর্তীতে চমৎকার দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা ও অর্জনের বিষয়েও গর্ব করেন (দানিয়েল ৪)। ঈশ্বর তার অহংকার দু’বার ভেঙ্গে দেন: তিনজন বন্ধুদের আগুনের চুল্লি থেকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে (নবূখদনিৎস পূজা দাবি ও শাস্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন না) এবং একটি মানসিক রোগের মধ্য দিয়ে (নবূখদনিৎসরকে এক মুহূর্তে রাজপদ থেকে নামানো হয়)। শেষে তিনি নম্রভাবে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেন এবং মেনে নেন যে, শুধুমাত্র ঈশ্বরের হাতে মানুষকে উঠানোর ও নামানোর, উদ্ধার করার ও বিচার করার ক্ষমতা আছে। এই সব ঘটনার বর্ণনার মধ্য দিয়ে দানিয়েল তার যিহূদী পাঠকদের দেখান, কিভাবে তারা একটি দেবতাপূজারী ও প্রতিকূল সরকারের অধীনে টিকে থাকতে পারে। তিনি তাদেরকে বিপদের সময়েও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত, হুমকির সম্মুখে পড়লেও সাহসী হতে এবং এই দেবতাপূজারী সাম্রাজ্যকে ঈশ্বরের প্রজ্ঞায় সেবা করতে বলেন।
নবূখদনিৎসরের পরে বেলশৎসর বাবিলের রাজা হন। নবূখদনিৎসরের নিজেকে ঈশ্বরের সামনে নম্র করার বুদ্ধি ছিল, কিন্তু বেলশৎসরের এই বুদ্ধি নেই। নিজের লোকেরা তাকে অবশেষে মেরে ফেলে এবং বাবিল সাম্রাজ্য মাদিয়-পারস্যদের দ্বারা দখল হয় (দানিয়েল ৫)। যদিও বাবিল শহরে অদ্বিতীয় দুর্গ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল তবুও শহরটিকে এক রাতে যুদ্ধ ছাড়া দখল করা হয়। ঈশ্বর অহংকারীদের নত করতে জানেন।
দানিয়েল, যার বয়স এখন আশি বছরের কাছাকাছি, তিনি মাদিয়-পারস্য সরকারকে তার পরিশ্রম ও চমৎকার কাজ দ্বারা সেবা করতে শুরু করেন। যখন হিংসার কারণে কিছু কর্মচারী দানিয়েলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তখন দানিয়েল ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে মারা যাওয়াই পছন্দ করেন। ঈশ্বর তাকে আশ্চর্যভাবে সিংহের গর্ত থেকে রক্ষা করেন (দানিয়েল ৬)।
তার জীবনের শেষ বছরগুলোতে দানিয়েল খেয়াল করেন যে, ভাববাদী যিরমিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বাবিলে ইস্রায়েলের নির্বাসন শুধুমাত্র সত্তর বছর পর্যন্ত থাকবে (যিরমিয় ২৯:১০)। দানিয়েল বুঝতে পারেন যে, সত্তর বছর প্রায় পূর্ণ হয়েছে। তিনি বিনতি করেন যেন যিহূদীরা নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং সেখানে নিরাপত্তায় বাস করতে পারে, কারণ তাদেরই উপর এখন ঈশ্বরের আহ্বান ও মশীহের প্রতিজ্ঞা রয়েছে (দানিয়েল ৯)।
দানিয়েল নিজেও স্বপ্ন ও দর্শন দেখতে শুরু করেন, এমন দর্শন ও স্বপ্নগুলো যা নবূখদনিৎসরের চারটি সাম্রাজ্যের স্বপ্নের সাথে মিল পাওয়া যায়। দানিয়েলও চারটি সাম্রাজ্য সম্বন্ধে অনেক কিছু দেখেন: বাবিল, মাদিয়-পারস্য, গ্রীস ও চতুর্থ একটি সাম্রাজ্য (যা রোমকে বুঝায়, যদিও তার সরাসরি উল্লেখ নেই)। গ্রীসের রাজত্বের সময়ে যিহূদীদের একটি কঠিন সময় আসবে, যখন ‘উত্তরের রাজারা’ (সিরিয়ার সেলুকীয় রাজবংশ) এবং ‘দক্ষিণের রাজারা’ (মিসরের প্টলেমিয় রাজবংশ) পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকবে, এবং তা প্রায়ই যিহূদীদের ভূমিতেই করবে। উত্তরের রাজাদের মধ্যে একজন অতি মন্দ রাজা (সম্ভবত সেলুকীয় রাজবংশের আন্তিয়খিয় এপিফানেস্-৪) যিহূদীদের এমন অত্যাচার করবেন যে, তার কারণে যিহূদীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে (মাকাবীয় বিদ্রোহ, দানিয়েল ১১:২১-৩৯)।
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে যিহূদীদের জন্য, অর্থাৎ নতুন নিয়ম পর্যন্ত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ছিল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বাণীগুলো দ্বারা তারা বর্তমান ইতিহাস এবং তাদের যুগের ঘটনাগুলো বুঝতে পারত। কঠিন সময় হলেও তাতে তারা ঈশ্বরের হাত ও নিয়ন্ত্রণ দেখতে পেত। যদিও সেই শতাব্দীগুলো যিহূদীদের জন্য অনেক কষ্টের সময় ছিল তবুও দানিয়েলের লেখা তাদের আশা ধরে রাখতে সাহায্য করত। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো তাদেরকে দৃষ্টি ও আশা দিত: চতুর্থ সাম্রাজ্যের সময়ে (রোম) ঈশ্বর নিজের হাতেই তাঁর রাজ্য স্থাপন করবেন, একটি ভিন্ন ও অনন্তকালীন রাজ্য (দানিয়েল ২:৪৪) এবং “মনুষ্যপুত্রের মত একজনকে” চিরকালের জন্য রাজত্ব করার অধিকার দেওয়া হবে (দানিয়েল ৭:১৩-১৪)।
পুস্তকের লেখক
দানিয়েল, যিনি বাবিলে সকারি কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন, তাকেই উভয় যিহূদী এবং খ্রিষ্টান ঐতিহ্য বা লেখাগুলো অনুসারে (যেমন যিহূদীদের তালমুদ্) দানিয়েল পুস্তকের লেখক হিসাবে চিহ্নিত রাখা হয়। দানিয়েল পুস্তকে উল্লিখিত শেষ তারিখ (দানিয়েল ১০:১) হল ৫৩৭ খ্রীষ্টপূর্বে, তাই এই সময়ের মধ্যে দানিয়েল তার পুস্তক লিখেছিলেন। দানিয়েল পুস্তকে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অতি নির্দিষ্ট ও দীর্ঘ-মেয়াদী এবং সেগুলো ইতিহাসে অত্যন্ত নির্দিষ্টভাবে পূর্ণ হয়। একারণে কেউ কেউ (যারা বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর সর্বজান্তা এবং ইতিহাসের কর্তা) দাবি করে যে, পুস্তকটি দানিয়েল দ্বারা লিখিত নয় বরং তা অনেক শতাব্দী পরে, অর্থাৎ যখন অধিকাংশ ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে, সেই সময়ে অজানা একজন লেখক দ্বারা লিখিত।
দানিয়েল যে প্রকৃতপক্ষে দানিয়েল পুস্তকটির লেখক, তার জন্য কি কি প্রমাণ পাওয়া যায়? যদিও পুস্তকের প্রথম অংশ দানিয়েলের গল্পগুলো “তিনি” শব্দ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে তবুও দানিয়েলের আচরণ মাত্র না বরং তার কথা, মনের চিন্তা ও প্রার্থনাগুলোও নির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়। দানিয়েল যখন নিজেই কয়েকটি স্বপ্ন দেখেন বা দর্শন পান (দানিয়েল ৭:২, ৮:১) তখন তিনি সেগুলো “আমি” শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করেন, যেমন “আমি দানিয়েল নবী যিরমিয়কে দেওয়া সদাপ্রভুর বাক্য অনুসারে শাস্ত্র থেকে বুঝতে পারলাম” অথবা “সেই সময় আমি দানিয়েল তিন সপ্তা ধরে শোক করছিলাম” (দানিয়েল ৯:২, ১০:২)। তিনি কথাগুলো নিজেই লিখেছেন, তা এভাবে প্রকাশিত। দানিয়েল ১২:৪ পদে দানিয়েলকে পুস্তকের রক্ষক করা হয়: “কিন্তু তুমি, দানিয়েল, শেষ সময় না আসা পর্যন্ত এই ভবিষ্যদ্বাণীর বইটা বন্ধ করে তার কথাগুলো সীলমোহর করে রাখ।” যীশু যখন দানিয়েল ৯:১৭ পদ এবং ১২:১১ পদ উদ্ধৃতি করেন তখন তিনি দানিয়েলকে এই কথাগুলোর লেখক হিসাবে ঘোষিত করেন “নবী দানিয়েলের মধ্য দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসের কথা বলা হয়েছিল”। নতুন নিয়মে যীশু দানিয়েল পুস্তকের ৭ অধ্যায় থেকে আরো বেশ কয়েকটি উদ্ধৃতি করেন এবং তার মধ্য দিয়ে দানিয়েলের লেখা ঈশ্বরের অধিকারগত বাক্য হিসাবে চিহ্নিত করে রাখেন: মথি ১০:২৩ ও ১৬:২৭ পদে “মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের সংগে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসছেন”, মথি ১৯:২৮ পদে “যখন মনুষ্যপুত্র তাঁর সম্মানের সিংহাসনে বসবে”, মথি ২৪:৩০ পদে “এমন সময় আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে”, মথি ২৫:৩১ পদে “মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সংগে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন” এবং মথি ২৬:৬৪ পদে “এর পরে আপনারা মনুষ্যপুত্রকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।”
বাবিল ও মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্য ও তাদের নেতাদের সম্বন্ধে দানিয়েল পুস্তকে যে ঐতিহাসিক তথ্যগুলোর বর্ণনা পাওয়া যায়, তা ঐযুগের অন্যান্য লেখাগুলোর সাথে মিল পাওয়া যায়। কয়েকটি উদাহরণ: বাবিলীয়েরা মৃত্যুর শাস্তি হিসাবে মানুষকে আগুনের চুল্লিতে ফেলত কিন্তু মাদিয়-পারস্যেরা যাদের ধর্ম অনুসারে আগুন পবিত্র, তারা মৃত্যুর শাস্তি হিসাবে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করত (যেমন সিংহের গর্ত)। দানিয়েল পুস্তকে উল্লিখিত সরকারী কর্মচারীদের টাইটেল এবং বর্ণিত সরকারি নিয়ম-নীতি অন্যান্য ঐতিহাসিক লেখাগুলোর সাথে মিলে। বেলশৎসর, যিনি নাবনীদ নামে বাবিল রাজার প্রতিনিধি হিসাবে রাজত্ব করেন, তিনি দানিয়েলকে সর্বোচ্চ ‘তৃতীয় রাজপদ’ দিতে সক্ষম (দানিয়েল ৫:১৬, ৫:২৯)। অন্যান্য ঐতিহাসিক লেখাগুলো এবং বিভিন্ন আবিষ্কৃত দালান থেকে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে নবূখদনিৎসরের অতি আগ্রহ ও অহংকার পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত (দানিয়েল ৪)।
কেউ কেউ বলে যে, দানিয়েল পুস্তক দানিয়েল দ্বারা লিখিত নয় বরং মাকাবীয় যুগে, অর্থাৎ ১৬৭ খ্রীষ্টপূর্বের পরে লেখা হয়েছে। কিন্তু যখন ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে কুমরান গুটানো বইগুলো আবিষ্কৃত হয় তখন সেই সংগ্রহের বিভিন্ন পুরানো লেখাগুলো থেকে প্রমাণ করা যায় যে, দানিয়েল পুস্তকে ব্যবহৃত ইব্রীয় ও অরামীয় ভাষা মাকাবীয়দের যুগের সাথে মিলে না বরং তা মাদিয়-পারস্যদের যুগের সাথে মিল পাওয়া যায়। তাই দানিয়েল পুস্তকে যে ভাষা ব্যবহৃত, তা দানিয়েলের যুগের ভাষার সাথে মিলে। দানিয়েল তার পুস্তকের ৩ অধ্যায়ে কিছু শব্দ ব্যবহার করেন যা মাকাবীয়দের যুগে আর ব্যবহার করা হত না।
এছাড়া দানিয়েল পুস্তক বাইবেলের সংগ্রহে যোগ দেওয়া হয়েছিল এবং এভাবে ঈশ্বরের অধিকারগত বাক্য হিসাবে চিহ্নিত রাখা হয়েছিল যখন ‘প্রথম মাকাবীয়’ নামে একটি পুস্তক সংগ্রহে আনা হয় নি। আরো বলা যায় যে, যদিও আমরা ধরি যে, দানিয়েল পুস্তক শুধামাত্র মাকাবীয় যুগে, অর্থাৎ ১৬৭ খ্রীষ্টপূর্বের পরে লেখা হয়েছে, তবে এভাবে দানিয়েল পুস্তকের কিছুটা ভবিষ্যদ্বাণী বাদ দেওয়া যায়, কিন্তু দানিয়েলের অনেকটি ভবিষ্যদ্বাণী ১৬৭ খ্রীষ্টপূর্বের পরেই পূর্ণ হয়। তাই কেউ যদি বলে যে, ‘ঈশ্বর ভবিষ্যৎ জানেন না, তাই ভবিষ্যদ্বাণী সব উল্লিখিত ঘটনাগুলোর ঘটার পরেই লেখা’ তবে দানিয়েল পুস্তকের লেখার তারিখ যীশুর যুগের পরে দিতে হত, কারণ দানিয়েল যীশু সম্বন্ধীয় বেশ কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী দেন।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা দরকার: দানিয়েল পুস্তকের প্রধান সংবাদ তো ঠিক এই: ঈশ্বর ইতিহাসের কর্তা, তিনি ভবিষ্যৎ জানেন, তিনি মানব সাম্রাজ্যের উপরে সার্বভৌম, তিনি ইতিহাস তাঁরই উদ্দেশ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি কেউ এই পুস্তকের সব ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হওয়ার পরে লিখত, তবে লেখার আর কোন প্রয়োজন ছিল না। দানিয়েল পুস্তক যদি পরে লেখা হত, তবে পুস্তকের মূল সংবাদ, শক্তিশালী আকর্ষণ ও ক্ষমতা কিছুই থাকত না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আমরা নতুন নিয়ম এবং অন্যান্য যিহূদী লেখাগুলো থেকে জানি যে, যীশুর সময়ের যিহূদীদের জন্য দানিয়েল পুস্তক ছিল একটি প্রচলিত, অতি প্রিয় ও প্রভাবশালী পুস্তক। ‘মনুষ্য পুত্র’, অর্থাৎ মশীহ সম্বন্ধীয় তাদের সেই তীব্র আশা তবে তারা কোথা থেকে পেল যদি দানিয়েল একটি ইতিহাস বই মাত্র? না, দানিয়েলের পুস্তক ছিল অতি প্রভাবশালী ঠিক এই কারণে যে, পুস্তকটির ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যিহূদীদের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্থিরতা, আশা ও পরিচালনা দিয়েছিল, তাদের বহন করেছিল এবং তাদের মশীহ সম্বন্ধীয় আশা দিয়েছিল। পুরাতন নিয়মের শেষ থেকে যীশু আসা পর্যন্ত দানিয়েল পুস্তকই ছিল যিহূদীদের জন্য নোঙ্গরস্বরূপ।
দানিয়েলের জীবন
ইব্রীয় ভাষায় দানিয়েল নামের অর্থ হল ‘ঈশ্বর আমার বিচারক’। দানিয়েলের জীবন সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য জানা যায়, তাই একটি সময় তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন ঘটনার সময়ে দানিয়েলের সম্ভাব্য বয়স অনুমান করে বলা যায়:
- দানিয়েল ১:১ রাজা যিহোয়াকীমের ৩য় বছর ৬০৫ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ১২ বছর (অনুমান করে)
- দানিয়েল ২:১ নবূখদনিৎসরের ২য় বছর ৬০৩ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ১৪ বছর
- দানিয়েল ৩ নবূখদনিৎসরের মূর্তি প্রায় ৬০০ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ১৭ বছর
- দানিয়েল ৪:২৮-৩০ নবূখদনিৎসরের অহংকার প্রায় ৫৭০ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৪৭ বছর
- দানিয়েল ৭ বেলশৎসরের ১ম বছরে দর্শন ৫৫০ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৬৭ বছর
- দানিয়েল ৮ বেলশৎসরের ৩য় বছরে দর্শন ৫৪৮ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৬৯ বছর
- দানিয়েল ৫ বেলশৎসরের সাবধানবাণী, মৃত্যু ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৭৬ বছর
- দানিয়েল ৯ দারিয়াবসের ১ম বছর ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৭৬ বছর
- দানিয়েল ৬ সিংহের গর্ত ৫৩৯-৩৮ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৭৬-৭৭ বছর
- দানিয়েল ১০-১২ দারিয়াবসের ৩য় বছর ৫৩৭-৩৬ খ্রীঃপূঃ দানিয়েলের বয়স ৭৮-৭৯ বছর
দানিয়েলের শ্রোতারা ও পাঠকেরা
অন্যান্য ভাববাদীদের থেকে দানিয়েল ভিন্ন এই ক্ষেত্রে যে, তিনি একটি পরজাতি দেশে আহ্বান পান এবং তিনি অনেক বছর ধরে দেবতাপূজারী বাবিল ও মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের উঁচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ করেন। তিনি বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর ও বেলশৎসরের কাছে এবং মাদিয়-পারস্যের রাজা দারিয়াবসের কাছে কথা বলেন। এছাড়া দানিয়েল ও তার তিনজন বন্ধুদের কিছু আচরণ ও কথার কারণে তাদের কথা সারা সাম্রাজ্যে শোনা হয় (দানিয়েল ৩:২৯, ৮, ৬:২৭-২৮)।
কিন্তু দানিয়েল তার পুস্তক কাদের জন্য লেখেন? তিনি তার সমসাময়িক যিহূদীদের জন্য লেখেন, যারা এখনও নির্বাসনে আছে। কিন্তু আশা করা যায় যে, তারা শীঘ্রই নিজের দেশে ফিরে যেতে পারবে, যেমন ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন (যিরমিয় ২৫:১২)। দানিয়েল তাদেরকে আদর্শ হয়ে দেখান, কিভাবে তারা দেবতাপূজারী সরকারের অধীনে বাস করলেও একটি ঈশ্বরীয় এবং এমন কি প্রভাবশালী জীবন কাটাতে পারে। ঈশ্বর ইতিহাসের কর্তা, তিনি শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলো ও মহান শাসনকর্তাদের উপর সার্বভৌম, তা দেখিয় দানিয়েল তার পাঠকদের উৎসাহিত করেন। যিহূদীরা কেন নিজেকে নির্বাসনে খুঁজে পায়, তার কারণগুলো তিনি বুঝিয়ে দেন। তিনি তাদেরকে নিশ্চয়তাও দেন যে, ঈশ্বর তাদেরকে নিয়ে একটি নতুন শুরু করতে যাচ্ছেন।
পুরাতন নিয়ম থেকে নতুন নিয়ম পর্যন্ত শতাব্দগুলোতে দেবতাপূজারী সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা যিহূদীদের জন্য দানিয়েল পুস্তক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দানিয়েল পুস্তকে ৪টি সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতার ঘোষণা যিহূদীদের জন্য নোঙ্গরের মত কাজ করত: তারা বুঝতে পারত তারা বর্তমানে কোন যুগে আছে এবং তারা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোতে ঈশ্বরের হাত দেখে সান্ত্বনা পেত। দানিয়েল পুস্তক তাদের আশা দান করে যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি চতুর্থ সাম্রাজ্যের সময়ে (রোম) তাঁরই অনন্তকালীন রাজ্য স্থাপন করবেন (দানিয়েল ২:৪৪) এবং তিনি “মনুষ্যপুত্রের মত একজন”, অর্থাৎ মশীহের মত একজন ব্যক্তিকে পাঠাবেন, যাকে কর্তৃত্ব, সম্মান এবং চিরস্থায়ী রাজত্ব দেওয়া হবে (দানিয়েল ৭:১৩-১৪)।
দানিয়েল পুস্তকের মাঝখানের অংশ ইব্রীয় ভাষায় নয় বরং অরামীয় ভাষায় লেখা (দানিয়েল ২:৪-৭:২৮)। অরামীয় ছিল সেই যুগের প্রচলিত আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই দানিয়েল শুধুমাত্র যিহূদীদের জন্য লেখেন, তা নয় বরং তিনি পরজাতি পাঠকদের জন্যও লেখেন। পুস্তকের অরামীয় অংশে সাম্রাজ্য, রাজা এবং সরকারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু দানিয়েল ১ অধ্যায় এবং ৮ থেকে ১২ অধ্যায় যিহূদী জাতির বিষয়গুলোর উপর গুরত্ব দেওয়া হয়।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
দানিয়েল তার জীবনে বিশাল রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো দেখেন: তিনি অতি হিংস্র ও ভয়ংকর আসিরিয়া সাম্রাজ্যের ধ্বংস (৬০৫ খ্রীঃপূঃ), বাবিল সাম্রাজ্যের উত্থান, সোনার যুগ ও পতন (৬০৫-৫৩৯ খ্রীঃপূঃ) এবং মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের উত্থান দেখেন। মাদিয়-পারস্যের পতন (৩৩১ খ্রীঃপূঃ), গ্রীস সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পরবর্তীতে আর একটি সাম্রাজ্যের উত্থান (যার নাম তিনি দেন না), এইসব বিষয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণা করেন।
বাবিল সাম্রাজ্য ৬০৫-৫৩৯ খ্রীঃপূঃ
- ৬২৮ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর (Nabopolassar) আসিরিয়া সাম্রাজ্যের বাবিল প্রদেশের প্রধন হয়ে যান।
- ৬১৬ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর একটির পর একটি আসিরিয়ার সুরক্ষিত শহরগুলো আক্রমণ ও পরাজিত করতে থাকেন।
- ৬১২ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর আসিরিয়ার রাজধানী নীনবী দখল ও ধ্বংস করেন।
- ৬০৯ খ্রীঃপূঃ কর্কমিশ শহরের কাছাকাছি বাবিল আসিরিয়া সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করে। মিসর আসিরিয়াকে সমর্থন করে এবং তারা একসাথে বাবিলকে পরাজিত করে।
- ৬০৫ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর মারা যান। তার ছেলে নবূখদনিৎসর (Nebuchadnezzar) বাবিলের রাজা হয়ে যান। তিনি আর একবার কর্কমিশে আসিরিয়া ও মিসরকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং এবার তাদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। তিনি দক্ষিণ দিকে দখল করতে থাকেন এবং মিসরে যাওয়ার পথে যিরূশালেমকেও প্রথম বার দখল করেন। যিহূদীদের প্রথম দলকে (তাদের মধ্যে দানিয়েল) বাবিলে নির্বাসনে নেওয়া হয়। যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম বাবিলের অধীনে রাজত্ব করতে থাকেন।
- ৬০১ খ্রীঃপূঃ যিহূদা রাজা যিহোয়াকীম মিসরের সাথে মৈত্রী চুক্তি করে বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
- ৫৯৬ খ্রীঃপূঃ ফলে বাবিল যিরূশালেম শহরকে পুনরায় ঘেরাও ও দ্বিতীয় বার দখল করে। যিহূদীদের দ্বিতীয় দলকে (তাদের মধ্যে রাজা যিহোয়াখীন ও যিহিষ্কেল) বাবিলে নির্বাসনে নেওয়া হয়। বাবিল সিদিকিয়কে বাবিলের অধীনে যিহূদার রাজা হিসাবে সিংহাসনে বসিয়ে দেন।
- ৫৮৮ খ্রীঃপূঃ রাজা সিদিকিয় বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। ফলে বাবিল তৃতীয় বার যিরূশালেমকে ঘেরাও করে।
- ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ বাবিল যিরূশালেমকে তৃতীয় বার দখল করে এবং শহর ও উপাসনা-ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। যিহূদীদের তৃতীয়দলকে নির্বাসনে নেওয়া হয়।
- ৫৬২-৫৩৯ খ্রীঃপূঃ আরো বিভিন্ন রাজারা বাবিলে রাজত্ব করেন: ইবিল-মরোদক (Evil-Merodach), নের্গল-শরেৎসর (Nergal-Sharezer), নাবনীদ (Nabonidus) এবং বেলশৎসর (Belshazzar), যিনি নাবনীদের ছেলে এবং নবূখদনিৎসরের নাতী (দানিয়েল ৫,৭,৮ অধ্যায়)।
- ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ মাদিয়-পারস্যের রাজা কোরস-২ (Cyrus II) এক রাতেই বাবিল শহরকে দখল করেন এবং রাজা বেলশৎসর মাদিয় রাজা কোরস-২ এর হাতে মারা যান।
রাজা নবূখদনিৎসর ৪৩ বছর ধরে (৬০৫-৫৬২ খ্রীঃপূঃ) শক্তিশালী বাবিল সাম্রাজ্যের উপরে রাজত্ব করেন। যদিও নবূখদনিৎসর অনেক সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধে জয় করেছিলেন তবুও বাবিলীয় ঐতিহাসিক লেখাগুলোতে এর চেয়ে তার বিভিন্ন চমৎকার নির্মাণ কাজগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি বাবিল শহরে চমৎকার রাজবাড়ি, জাঁকজমক মন্দির, অন্যান্য দালান এবং সেই বিখ্যাত ‘ঝুলন্ত উদ্যান’ তৈরি করতেন এবং ইতিহাসে খুবই কম রাজা আছে যারা তার মত এত বেশি নির্মাণ কাজ করেছেন। যখন নবূখদনিৎসর নিজের গৌরবে বলেন “আমার মহাশক্তির দ্বারা এবং আমার জাঁকজমকের গৌরব প্রকাশের জন্য রাজধানী হিসাবে যেটা আমি তৈরী করেছি এ কি সেই মহান বাবিল নয়?” (দানিয়েল ৪:৩০) প্রকৃতপক্ষে কথাটি কারণবিহীন নয়। বাবিল শহর শুধুমাত্র সরকারি এবং বাণিজ্যিক ও ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্র ছিল না, তাতে ধর্মীয় কেন্দ্র হিসাবে ৭৮০টি বিভিন্ন মন্দিরও ছিল।
দখল করা জাতিগুলো যেন বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে, সেজন্য বাবিল সাম্রাজ্যের নিয়ম ছিল যে, তাদেকে নিজের এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় বাস করতে দেওয়া এবং জোরপূর্বক অন্য জাতিদের সাথে মিশিয়ে ফেলা। এছাড়া দখল করা জাতিদের মধ্য থেকে বাবিল উঁচু শ্রেণীর যুবকদেরকে বাছাই করে নিত। তার দু’টি কারণ ছিল: যুবকদের জিম্মি করে রাখার জন্য নেওয়া হত (যদি জাতিটি বিদ্রোহ করে তবে তাদের সেই যুবকদের মেরে ফেলা হত) এবং যুবকদের সুযোগ-সুবিধা ও বাবিলীয় সংস্কৃতিতে ও বিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হত যেন তারা বাবিল সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে নিজের জাতিকে প্রভাবিত করতে পারে (যিহিষ্কেল ১৭:১৩-১৪)। এই ধরণের যুবকদের খুব যত্নের সঙ্গে রাখা হত যেন তারা তাদের জাতিগত পরিচয় ও ধর্ম ত্যাগ করে বাবিলীয় দৃষ্টভঙ্গী গ্রহণ করে। তাদেরকে বিশেষ সুযোগ হিসাবে বিলাসিতার জীবন, পদ-মর্যাদা ও উঁচ্চ সরকারি ভূমিকার প্রলোভন দেওয়া হত। এভাবে তারা নিজের জাতি ও মাতৃভূমি দুর্বল বা অনুন্নত এবং তাদের দেব-দেবতা দুর্বল হিসাবে দেখবে, এই আশায় তা করা হত। আগের পরিচয়ে ফিরে যাওয়ার অর্থ হত সব কিছু হারানো।
- ৫৬২-৫৬০ খ্রীঃপূঃ রাজা ইবিল-মরোদক (Evil-Merodach, ২ রাজা ২৫:২৭-৩০) রাজত্ব করেন। তার দুলা-ভাই নের্গল-শরেৎসর (অন্য নাম নেরিগ্লিসর) তাকে খুন করে তার পদ দখল করেন।
- ৫৬০-৫৫৬ খ্রীঃপূঃ নর্গল-শরেৎসর (Nergal-Sharezer) রাজত্ব করেন।
- ৫৫৬ খ্রীঃপূঃ লাবাশি-মার্দুক (Labashi-Marduk) রাজত্ব করেন। নাবনীদ (Nabonidus) তাকে খুন করে তার পরিবর্তে রাজা হয়ে যান।
- ৫৫৬-৫৩৯ খ্রীঃপূঃ নাবনীদ রাজত্ব করেন। তিনি সরকারি ও সামরিক খরচের জন্য কর বৃদ্ধি করেন। প্রতিবেশি মাদিয়া ও লিদিয়া জাতি বিভিন্নভাবে বাবিলের উপর চাপ প্রয়োগ করে। বাবিলের পুরোহিতেরা নাবনীদের রাজত্ব নিয়ে অখুশি বলে, তারা তার ছেলে বেলশৎসরকে (Belshazzar) সহ-শাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। নাবনীদ ১০ বছর ধরে উত্তর আরব দেশে কাটান যেন অস্থিরতা ঠাণ্ডা হয়।
- ৫৫৬-৫৩৯ খ্রীঃপূঃ এভাবে বেলশৎসর সহ-শাসক হিসাবে বাবিল সাম্রাজ্যে রাজত্ব করেন।
- ৫৫১ খ্রীঃপূঃ মাদিয়া ছিল বাবিলের প্রতিবেশি। মাদিয়ার অধীনস্থ পারস্য জাতি মাদিয়াকে আক্রমণ ও দখল করে। পারস্যদের জয়ী নেতা, করোস (Cyrus, যিনি মিশানো রক্তের), মাদিয় ও পারস্যকে একটি মাত্র সাম্রাজ্যে যুক্ত করেন।
- ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ মাদিয়-পারস্যেরা বাবিল সাম্রাজ্য দখল করে। দানিয়েল ৫ অধ্যায়ে রাজধানী বাবিলের দখলের একটি বর্ণনা দেওয়া হয়।
মাদিয়-পারস্য ৫৩৯-৩৩১ খ্রীঃপূঃ
৫৩৯ খ্রীঃপূঃ মাদিয়-পারস্য রাজা কোরস্-২ (অর্থাৎ কোরস্ মহান) বাবিল সাম্রাজ্যের রাজধানী বাবিলকে এক রাতেই দখল করেন। তিনি ইউফ্রেটিস নদী অন্যদিকে ঘুরিয়ে বাবিলের দেওয়ালের নিচ দিক দিয়ে (যেখানে নদী শহরে প্রবেশ করত) তার সৈন্যদলকে ভোজের রাতে প্রবেশ করিয়ে যুদ্ধ ছাড়া এই অতি বড় ও শক্তিশালী শহর দখল করেন। দানিয়েল ৬ অধ্যায়ে উল্লেখ করা আছে যে, দানিয়েল বাবিলের রাজা দারিয়াবসের অধীনে কাজ করেন। কেউ কেউ মনে করে যে, এই দারিয়াবস হলেন মাদিয়-পারস্য সম্রাট কোরসের আর একটি নাম। আবারও কেউ কেউ বলে যে, এই দারিয়াবস হলেন কোরস্ সম্রাটের অধীনে বাবিল প্রদেশের রাজা বা প্রধান (বাবিলীয়দের ঐতিহাসিক লেখাগুলোতে তাকে ‘গুবারু’ বলে চিহ্নিত রাখা হয়, যিনি বাবিল প্রদেশের এবং ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রদেশের উপরে শাসক হিসাবে ১৫ বছর রাজত্ব করেন)। প্রকৃতপক্ষে তা দানিয়েল ৯:১ পদে উল্লিখিত কথার সাথে মিলে “দারিয়াবসকে বাবিল রাজ্যের রাজা করা হয়েছিল”, কারণ কোরস্ বাবিল এলাকার চেয়ে আরো অনেক প্রদেশের উপরে সম্রাট ছিলেন। এছাড়া তা দানিয়েল ৬:২৮ পদের সাথে মিলে যেখানে দু’জনের সমসাময়িক রাজত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
- ৫৩০-৫২২ খ্রীঃপূঃ কম্বীস-২ (Cambyses II) রাজত্ব করেন। তিনি মিসর এবং আরো অনেক এলাকা দখল করেন। মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের বিস্তার আধুনিক ভারত থেকে মিসরের নীল নদী প্রযন্ত।
- ৫২২-৪৮৬ খ্রীঃপূঃ দারিয়াবস-১ (Darius I) রাজত্ব করেন। অক্মথা শহরে কোরসের অনুমতি পত্র পাওয়ার পরে তিনি যিহূদীদের সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘর পুনরায় নির্মাণ করার অনুমতি দেন (ইষ্রা ৬)।
- ৪৮৬-৪৬৫ খ্রীঃপূঃ অহশ্বেরশ (Xerxes I) রাজত্ব করেন। তিনি ৪৭৮ খ্রীষ্টপূর্বে ইষ্টেরকে বিয়ে করেন (ইষ্টের ২)।
- ৪৬৪-৪৩২ খ্রীঃপূঃ অর্তক্ষস্ত-১ (Artaxerxes I) রাজত্ব করেন। নহিমিয় তার পানপত্র-বাহক হিসাবে কাজ করেন। তিনি যিরূশালেম দেওয়াল পুনরায় নির্মাণ করার জন্য অনুমতি দেন।
- ৪২৩-৩৩৬ খ্রীঃপূঃ কয়েকজন রাজা রাজত্ব করেন।
- ৩৩৬-৩৩১ খ্রীঃপূঃ দারিয়াবস-৩ (Darius III) রাজত্ব করেন। ম্যাসিডোনিয়া ও গ্রীসের সেনাপ্রধান আলেকজান্ডার তাকে পরাজিত করেন।
গ্রীস ৩৩১-১৪৬ খ্রীঃপূঃ
- ৪৮০ খ্রীঃপূঃ রাজা অহশ্বেরশ গ্রীসকে আক্রমণ করেন। গ্রীস তাকে পরাজিত করে এবং তিনি পরবর্তীতে গ্রীসকে তার অধীনে আনতে আর চেষ্টা করেন না ।
- ৪৩৪ খ্রীঃপূঃ গ্রীক শহরগু এথেন্স ও স্পার্টা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে, যা গ্রীসকে দুর্বল করে ফেলে। ম্যাসিডোনিয়ার ফিলিপ ম্যাসিডোনিয়ার উপর রাজত্ব করতে শুরু করেন।
- ৩৫৬ খ্রীঃপূঃ তার ছেলে আলেকজান্ডার জন্ম গ্রহণ করেন। তার মা-বাবা উভয় রাজবংশের লোক ছিলেন। তিনি আরিস্টটেলের অধীনের পড়াশুনা করেন।
- ৩৩৮ খ্রীঃপূঃ ম্যাসিডোনিয়ার আলেকজান্ডার গ্রীসকে দখল করেন এবং গ্রীসের গৃহযুদ্ধ বন্ধ করে একটি সংযুক্ত রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন।
- ৩৩৬ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডার ২০ বছর বয়সে ম্যাসিডোনিয়া ও গ্রীসের উপর রাজত্ব করতে শুরু করেন।
- ৩৩৪-৩৩১ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডার ৪০ হাজার সেনা নিয়ে পূর্বদিকে দখল করতে শুরু করেন। তিনি মাদিয়-পারস্যের রাজা দারিয়াবস-৩কে পরাজিত করেন। তিনি দক্ষিণ দিকে সামরিক অভিযান চালিয়ে সম্পূর্ণ এলাকা দখল করেন, তার মধ্যে ফৈনীকীয়া, যিহূদা এবং মিসরকে পরাজিত করেন। যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্লাভিয়াস বলেন যে আলেকজান্ডার যখন যিরূশালেমে প্রবেশ করেন তখন পুরোহিতেরা আলেকজান্ডারকে দানিয়েল পুস্তকে তার সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী দেখান।
- ৩৩১ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডার আর একবার দারিয়াবস-৩এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করেন। তিনি পূর্বদিকে বাবিল, শূশন ও পের্সেপলিস্ শহর ও এলাকাগুলো দখল করেন।
- ৩৩১-৩২৩ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডার বাবিল, শূশন, পের্সেপলিস্, আধুনিক আফগানিস্থান, কাজাখস্থান ও পাকিস্থান দখল করতে থাকেন। যখন তিনি গঙ্গা নদী পার হতে চান কখন তার সেনারা সঙ্গে যেতে প্রত্যাখ্যান করে।
- ৩২৩ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডার ৩২ বছর বয়সে একটি জ্বরে মারা যান। তার বিশাল সাম্রাজ্য তার চারজন সেনাপ্রধানদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। মিসরে প্টলেমীয় রাজবংশ (‘দক্ষিণের রাজারা’) এবং সিরিয়ায সেলুকীয় (‘উত্তরের রাজারা’) রাজত্ব করেন। এই দু’টি রাজবংশের মধ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ চলতে থাকে। যিহূদা মাঝখানে অবস্থিত বলে তা অনেক বার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায় (দানিয়েল ১১ অধ্যায় দেখুন)।
- ১৭৫ খ্রীঃপূঃ সেলুকীয় রাজা আন্তিয়খিয়-৪ এপিফানেস্ (Antiochius Epiphanes IV) সিরিয়া এলাকার উপরে রাজা হয়ে যান।
- ২৫ ডি ১৬৭ খ্রীঃপূঃ তিনি এমন একটি আইন পাশ করেন যার মধ্য দিয়ে তিনি যিহূদী ধর্ম পালন নিষিদ্ধ করেন। তিনি সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘরে গ্রীক দেবতা জিউসের মূর্তি বসান, উৎসর্গের ব্রোঞ্জ বেদীতে শুকর উৎসর্গ করেন এবং মোশির আইন-কানুন কারো হাতে থাকলে তা মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেন। যিহূদীরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। একটি পুরোহিত পরিবার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়, যাদের মাকাবীয় (Maccabees) বলা হয়।
- ১৬৫ খ্রীঃপূঃ অনেক শক্তিশালী সেলুকীয় সৈন্যদলের বিরুদ্ধে যিহূদীরা অদ্ভূতভাবে জয় করতে থাকে, যার ফলে আন্তিয়খিয় এই ঘৃণিত আইন বাতিল করেন। মাকাবীয়েরা উপাসনা-ঘর শুচি করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় উৎসর্গ করে।
- ১৬৪ খ্রীঃপূঃ আন্তিয়খিয় এপিফানেস্-৪ অজানা কারণে মারা যান।
অধ্যায় অনুসারে দানিয়েল
দানিয়েল ১ অধ্যায় ৪জন যুবক বাবিলে
দানিয়েল হলেন যিহূদার উঁচু শ্রেণীর একটি পরিবার বা এমন কি রাজবংশের একজন ব্যক্তি, যিনি কিশোর বা যুবক বয়সে বাবিল সাম্রাজ্য দ্বারা তার দেশের দখল ও পরাজয় এবং অনেক লোকদের নির্বাসন নিজের চোখে দেখেন (৬০৫ খ্রীঃপূঃ, দানিয়েল ১:১-৩)। সম্ভবত, তার পরিবারকে মেরে ফেলা হয়েছিল এবং তার আগের জীবন হঠাৎ করে পালটে যায়। এভাবে তার আশা ভেঙ্গে গিয়ে তিনি নিজেকে দেবতাপূজারী একটি বিশাল সাম্রাজ্যে খুঁজে পান, যেখানে তাকে রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে বাবিলীয়দের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি শেখানো হয়, যার মধ্যে জ্যোতিষীবিদ্যা, যাদু, ভূতের ওঝা ইত্যাদি ছিল (দানিয়েল ১:৪)।
দানিয়েল ও তার তিনজন বন্ধুকে এই শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং এটা অনেক ক্ষেত্রে বড় প্রলোভন হিসাবে দাঁড়াতে পারে: তাকে একটি উঁচু ও প্রভাবশালী সরকারি ভূমিজার জন্য প্রস্তত করা হয়, তাকে বিলাসিতা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাকে সবচেয়ে আধুনিক জ্ঞানে এবং এমন গোপন জ্ঞানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার মধ্য দিয়ে তিনি পরবর্তীতে শক্তিশালীদের প্রভাবিত করতে পারবেন।
দানিয়েল ও তার তিনজন বন্ধু এই কঠিন পরিস্থিতিতে ও আপোষ করার প্রলোভনে উপযুক্ত ও ঈশ্বরীয় পথ খুঁজে পান এবং কষ্ট হলেও তাতে সমর্পিত থাকেন। তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন, সাহস দেখান, ভাল মনোভাব ও খোলাভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকের অনুগ্রহ ও সম্মান অর্জন করেন (দানিয়েল ১:৮-১৪)।
তারা বাবিলীয়দের প্রশিক্ষণে ও বিভিন্ন জ্ঞান-দক্ষতার পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন যদিও তারা এসব বিষয় বিশ্বাস করেন না, বরং একটি বাইবেলীয় দৃষ্টভঙ্গি ধরে রাখতে থাকেন (দানিয়েল ১:১৬-২০)।
দানিয়েল ২ অধ্যায় ইতিহাসের কর্তা ঈশ্বর ভবিষ্যৎ জানেন
রাজা নবুখদনিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে, অর্থাৎ ৬০৪ খ্রীষ্টপূর্বে, তিনি স্বপ্নে একটি চমৎকার মূর্তি দেখেন যার ৪টি ভাগ আছে। পরে একটি পাথর মূর্তিটি একেবারে ধ্বংস করে ফেলে। তিনি বুঝতে পারেন যে স্বপ্নটি গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ। নিশ্চিত করার জন্য যে, কেউ তাকে মিথ্যা ব্যাখ্যা করতে না পারে, সেজন্য তিনি একটি অদ্ভূত শর্ত রাখেন: স্বপ্নটি প্রকাশ না করে যে যাদুকর, ভূতের ওঝা, গণক বা জ্যোতিষী স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছেন, তাকে আগে স্বপ্নটাও বলতে হবে। রাজবাড়ীতে সব যাদুকর, ভূতের ওঝা, গণক ও জ্যোতিষী এই দাবি অসম্ভব বলে প্রত্যাখ্যান করেন। নবূখদনিৎসর রেগে তাদের সবাইকে মেরে ফেলার আদেশ দেন।
দানিয়েল, যিনি শিক্ষার্থী হিসাবে এই দলের একজন এবং নিজেও মৃত্যুর সম্মুখীন, তিনি একটু সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন। যখন ঈশ্বর রাতে স্বপ্রের মধ্যে তাকে নবূখদনিৎসরের স্বপ্নটি দেখিয়ে দেন তখন তিনি ঈশ্বরকে আরাধনা করে বলেন: “ঈশ্বর চিরকাল ধন্য হোন; জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই। তিনিই সময় ও ঋতু তাঁর অধীনে রাখেন; তিনি রাজাদের সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন। তিনি জ্ঞানীদের জ্ঞান দান করেন আর বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি দান করেন। তিনি গভীর ও লুকানো বিষয় প্রকাশ করেন …” (দানিয়েল ২:২০-২২)। এই ঘটনা থেকে দানিয়েল তার শক্তি ও সংবাদ পান: ঈশ্বর ভবিষ্যৎ জানেন এবং তিনিই ইতিহাসের কর্তা। দানিয়েল সাহসের সঙ্গে নবূখদনিৎসরের সামনে স্বপ্নটি ও তার ব্যাখ্যা ঘোষণা করেন। নবূখদনিৎসর ভক্তিপূর্ণ ভয়ের সঙ্গে এই দানিয়েল ও তার তিনজন বন্ধুদের উঁচ্চ পদ-মর্যাদা দান করেন।
নবূখদনিৎসরের স্বপ্নের মূর্তি ৪টি সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতা বুঝায়, যা দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে পুনরায় ৪টি জন্তু হিসাবে পাওয়া যায় এবং দানিয়েল ৮ অধ্যায়ে একটি ভেড়া ও ছাগলের দর্শনে আবারও পাওয়া যায়:
- মূর্তির মাথা সোনা দিয়ে তৈরি বাবিল সাম্রাজ্য দানি ৭ সিংহ
- মূর্তির বুক ও হাত রূপা দিয়ে তৈরি মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্য দানি ৭ ভাল্লুক দানি ৮:২০ ভেড়া
- মূর্তির পেট ও ঊরু ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি গ্রীক সাম্রাজ্য দানি ৭ চিতাবাঘ দানি ৮:২১ ছাগল
- মূর্তির পা ও পায়ের পাতা লোহা ও মাটি দিয়ে তৈরি রোম সাম্রাজ্য দানি ৭ ভয়ংকর জন্তু
স্বপ্নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, ঈশ্বর থেকে একটি পাথর চতুর্থ সাম্রাজ্যের, অর্থাৎ রোম রাজ্যের সময়ে আগের সব সাম্রাজ্যগুলোকে ধ্বংস করে এবং ঈশ্বর তাঁর সেই শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী রাজ্য স্থাপন করেন। এটা হল মশীহ, অর্থাৎ যীশু সম্বন্ধীয় একটি ভবিষ্যদ্বাণী।
দানিয়েল ৩ অধ্যায় বন্ধুদের সাহস ও বিশ্বস্ততার মধ্য দিয়ে নবূখদনিৎসরের অহংকার নত করা হয়
যদিও রাজা নবূখদনিৎসর শুরুতে স্বপ্নটি নিয়ে ভয় পান তবুও তিনি পরবর্তীতে স্বপ্নের সংবাদ (মানবীয় সাম্রাজ্য সীমিত ও অস্থায়ী মাত্র) অস্বীকার করে বরং অহংকারে সাড়া দেন: নবূখদনিৎসরই হলেন সেই মূর্তির জাঁকজমকপূর্ণ সোনার মাথা। তিনি একটি বিশাল সোনার মূর্তি বানাতে আদেশ দেন (সম্ভবত নিজের মূর্তি) এবং তিনি দাবি করেন যে, সাম্রাজ্যের সব নাগরিক মূর্তিকে পূজা করবে। মূর্তিকে পূজা না করার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
মনে হয় যে, দানিয়েল এই ঘটনার সময়ে অনুপস্থিত, কিন্তু যখন তার তিনজন বন্ধুরা মূর্তির পূজার দাবির সম্মুখীন হন, তারা অগ্রাহ্য করেন। হতে পারে তারা তা সবার সামনে অপমান করার উদ্দেশ্যে করেন নি, কারণ কিছু লোকেরা যদি তাদের প্রত্যাখ্যানের বিষয় রাজাকে না জানাত তবে তার খেয়াল থাকত না।
রাজা নবূখদনিৎসর যখন তিনজন বন্ধুকে এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তখন তারা একটি সরল অথচ শক্তিশালী উত্তর দেন: ঈশ্বর তাদেরকে উদ্ধার করেন বা না করেন – তারা ঈশ্বরকে ছাড়া অন্য কাউকে পূজা করবেন না (দানিয়েল ৩:১৭-১৮)। সেই তিনজন বন্ধু, যারা এপর্যন্ত খুব কঠিন একটি দেবতাপূজারী পরিস্থিতিতে আপোষ না করে প্রজ্ঞার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন এবং এইভাবে যিহূদীদের জন্য আদর্শ হয়েছিলেন, তারা এই মুহূর্তে আবারও আদর্শ হন: তারা কোনো আপোষ না করে যে শাস্তি তাদেরকে দেওয়া হোক না কেন, তারা তা মেনে নিতে রাজি, এমন কি মৃত্যু পর্যন্তও মানতে রাজি।
নবূখদনিৎসরের অধিকারকে যখন এভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয় তখন তিনি রেগে যান এবং তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিতে সমর্পিত করেন: আগুনের চুল্লি। কিন্তু যখন দেখা যায় যে, এই তিনজনের উপরে আগুনের কোনো ক্ষমতা নেই এবং আগুনের মধ্যে চতুর্থ একজন ব্যক্তিকে দেখা যায়, যিনি দেখতে “দেবতার মত” (দানিয়েল ৩:২৫) তখন নবূখদনিৎসর স্বীকার করেন যে, এখানে তার চেয়ে অনেক চমৎকার একটি ক্ষমতা কাজ করছেন। তিনি নিজেকে নত করেন এবং একটি সরকারি আইন ঘোষনা করে সবাইকে এই ঈশ্বরকে সম্মান করার আদেশ দেন (দানিয়েল ৩:২৯)। তিনি এই তিনজন বন্ধুকে আরো উঁচু পদে নিযুক্ত করেন।
দানিয়েল ৪ অধ্যায় নবূখদনিৎসরের অহংকার আর একবার নত করা হয়
একই ধরণের ঘটনা আর একবার ঘটে: ঈশ্বর নবূখদনিৎসরকে স্বপ্নে একটি বিশাল গাছ দেখান, যা কেটে ফেলা হয়। আবারও দানিয়েল ছাড়া কেউ স্বপ্নটি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন না (দানিয়েল ৪:১০-১৮)। দানিয়েল স্বপ্নটি নবূখদনিৎসরের জন্য একটি সাবধানবাণী হিসাবে বুঝিয়ে দেন: যদি তিনি অহংকারী হয়ে অস্বীকার করেন যে, “ঈশ্বরই মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে কর্তৃত্ব করেন এবং সেই সব রাজ্য যাকে ইচ্ছা তাকে দেন” তবে তাকে “লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে” এবং “পশুদের সঙ্গে বাস” করতে দেওয়া হবে (দানিয়েল ৪:১৯-২৬)। দানিয়েল তাকে অনুতপ্ত হতে পরামর্শ দেন যেন তিনি “ন্যায় কাজ করেন এবং গরীবদের প্রতি দয়ালু হয়ে অন্যায় ত্যাগ”, এই আশায় যে, সাবধানবাণীতে প্রকাশিত শাস্তি তার উপর নেমে না আসে (দানিয়েল ৪:২৭)।
এক বছর পরে যখন স্বপ্ন নিয়ে ভয় বা সাবধানতা কমে যায় তখন নবূখদনিৎসর একদিন নিজেকে প্রশংসা করে বলেন “আমার মহাশক্তির দ্বারা এবং আমার জাঁকজমকের গৌরব প্রকাশের জন্য রাজধানী হিসাবে যেটা আমি তৈরী করেছি এ কি সেই মহান বাবিল নয়?” (দানিয়েল ৪:২৮-৩০)। তাৎক্ষণিক ঘোষিত শাস্তি তার উপর নেমে আসে: তিনি মানব জ্ঞান হারিয়ে এক সময় পর্যন্ত পশুর মত হয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি এই সময় সম্বন্ধে প্রকাশ করেন: “সেই সময় শেষ হয়ে গেলে পর আমি নবূখদ্নিৎসর স্বর্গের দিকে চোখ তুললাম এবং আমার মনের সুস্থতা ফিরে আসল। তখন আমি মহান ঈশ্বরের গৌরব করলাম; … আমি বললাম, “ঈশ্বরের রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য; তাঁর রাজত্ব যুগের পর যুগ স্থায়ী। … যারা অহংকারের বশে চলে তাদের তিনি নীচু করতে পারেন” (দানিয়েল ৪:৩৪-৩৭)।
মানসিক রোগ বা ‘পাগল হয়ে যাওয়া’ ঐযুগে দুর্ভাগ্যের বা কুসংস্কারের চিহ্ন হিসাবে ভয়ের বিষয় ছিল এবং মন্দ আত্মার উপস্থিতির প্রমাণ হিসাবে দেখা হত। পরবর্তীতে নবূখদনিৎসর আবার সাধারণ মানসিকতায় ফিরে আসেন এবং তা লজ্জার বিষয় বলে অবাক লাগে না যে, বাবিলীয় ঐতিহাসিক লেখাগুলোতে তার এই রোগ বা বিশেষ অবস্থার বেশি উল্লেখ নেই। তবুও ঐযুগের অল্প কিছু লেখাগু আছে যাতে নবূখদনৎসরের একটি রোগ, মানসিক রোগ বা পশুর মত ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
দানিয়েল ৫ অধ্যায় বেলশৎসর নবূখদনিৎসরের মত প্রজ্ঞাবান ও নম্র নন
পরবর্তীতে বাবিলের রাজা বেলশৎসর তার দেব-দেবতাদের উদ্দেশ্যে একটি বড় মদের ভোজ দেন, যাতে তিনি অহংকার প্রকাশ করে যিরূশালেমের উপাসনা-ঘরের সোনার পাত্রগুলো ব্যবহার করেন (দানিয়েল ৫:১-৪)। যখন অদ্ভূতভাবে একটি হাত দেখা দেয় যা দেওয়ালে কিছু লেখে এবং কেউ লেখাটির অর্থ প্রকাশ করতে পারে না তখন দানিয়েলকে স্মরণ করে তাকে ডাকা হয়। দানিয়েল রাজাকে তার অহংকার ও আত্ম-গুরুত্বের জন্য ধমক দিয়ে তাকে তার দাদু নবূখদনিৎসরের কথা সরণ করিয়ে দেন, যিনি একইভাবে অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু পরে নিজেকে নত করেছিলেন। দানিয়েল বলেন “কিন্তু হে বেল্শৎসর, … আপনি সব কিছু জেনেও নিজেকে নত করেন নি। তার বদলে আপনি নিজেকে স্বর্গের প্রভুর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন” (দানিয়েল ৫:২২-২৩)। পরে তিনি দেওয়ালের লেখাটি ব্যাখ্যা করেন: বেলশৎসরের রাজ্য বা রাজত্বকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, গুনা হয়েছে, ওজন করা হয়েছে এবং “আপনি কম পড়েছেন” যার কারণে তার রাজ্য ভাগ করে মাদিয় ও পারস্যদের দেওয়া হয়েছে। সেই একই রাতে বেলশৎসরকে নিজের লোকদের দ্বারা হত্যা করা হয় (দানিয়েল ৫:৩০)। প্রকৃতপক্ষে মাদিয়-পারস্যেরা সেই রাতে ইউফ্রেটিস নদীর স্রোতের ধারা পরিবর্তন করে মাতাল বাবিল শহরটিতে প্রবেশ করে যুদ্ধ ছাড়াই দখল করে (৫৩৯ খ্রীঃপূঃ), যদিও বাবিল শহরের অদ্বিতীয় দেওয়াল, দুর্গ ও সুরক্ষাকারী ব্যবস্থা ছিল। শক্তিশালী বাবিল সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে, মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্য এখন সম্পূর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
দানিয়েল ৬ অধ্যায় বৃদ্ধ বয়সে ফসলতা ও বিশ্বস্ততা
দানিয়েল, যার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছরের কাছাকাছি তিনি নতুন স্থাপিত মাদিয়-পারস্য সরকারকে বিশ্বস্তভাবে ও চমৎকারভাবে সেবা করতে শুরু করেন (দানিয়েল ৬:১-৪)। যখন হিংসার কারণে কয়েকজন সহ-কর্মচারী দানিয়েলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তিনি ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু পছন্দ করে খোলা চোখে তাদের ফাঁদে পা দেন (দানিয়েল ৬:১০-১৩)।
রাজা দারিয়াবস, যাকে রাজকর্মচারীরা ভুলিয়েছে, তিনি দানিয়েলকে মৃত্যুর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি তা করতে সক্ষম হন না (দানিয়েল ৬:১৪-১৮)। মাদিয়-পারস্যেরা আগুন পবিত্র বলে মান্য করত, তাই তারা বাবিলীয়দের মত মৃত্যুর শাস্তি হিসাবে আসামীদের আগুনের চুল্লিতে ফেলত না বরং অন্যভাবে মৃত্যুর শাস্তি বিস্তার করত, যেমন এখানে সিংহের গর্ত। ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করে দানিয়েলকে সিংহের গর্ত থেকে রক্ষা করেন (দানিয়েল ৬:১৯-২৪)। রাজা দারিয়াবস তখন ষড়যন্ত্রকারীদের সিংহের গর্তে ফেলে দেন এবং একটি আদেশ জারি করেন, যেন “দানিয়েলের ঈশ্বরকে ভয় ও ভক্তি” করা হয়, কারণ “তিনি রক্ষা ও উদ্ধার করেন” (দানিয়েল ৬:২৬-২৭)।
এভাবে দানিয়েল পুস্তকের গল্পগুলো শেষ হয়ে যায় (দানিয়েল ১-৬)। পুস্তকের দ্বিতীয় অর্ধেকে পাওয়া যায় স্বপ্ন, দর্শন, তার ব্যাখ্যা এবং বিনতি প্রার্থনা (দানিয়েল ৭-১২)। যদিও পুস্তকের দু’টি ভাগ বেশ ভিন্ন তবুও দু’টি ভাগ সংযুক্ত। পুস্তকের প্রথম অংশের গল্পগুলো দেখায় যে, একটি দেবতাপূজারী সাম্রাজ্যের মধ্যে বাস করা যিহূদীদের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জগুলোতে ঈশ্বর তাদেরকে কিভাবে উদ্ধার করেছেন। যে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য ঈশ্বর যিহূদীদের এই পর্যন্ত রক্ষা করেছেন এবং এমন কি একটি ভাল প্রভাব ফেলতে দিয়েছেন, সেই ঈশ্বরের উপরে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে নির্ভর করা যায়। ঈশ্বর নিজেকে বিশাল বাবিল ও মাদিয়-পাস্য সাম্রাজ্য এবং তাদের রাজাদের উপর সার্বভৌম কর্তা হিসাবে প্রমাণিত করেছেন, তাই তিনি গ্রীস ও রোম সাম্রাজ্যের সময়েও তা-ই করবেন।
দানিয়েল ৭ অধ্যায় ৪টি জন্তু – অত্যাচার ও উদ্ধার
অন্যদের স্বপ্ন ও দর্শন ব্যাখ্যা করার পরে দানিয়েল রাজা বেলশৎসরের প্রথম বছরে, অর্থাৎ ৫৫৩ খ্রীষ্টপূর্বে নিজেই স্বপ্ন ও দর্শন দেখতে শুরু করেন। হয়তো রাজা বেলশৎসর তাকে আগের মত উঁচু পদ ও সরকারি ভূমিকাতে রাখেন না অথবা দানিয়েলের বয়স প্রায় ৭০এর দিকে বলে তিনি নিজেই অবসরের চিন্তা করছেন, কিন্তু ঈশ্বর তাকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
দানিয়েল একটি দর্শনে ৪টি জন্তু সাগর থেকে উঠে আসতে দেখেন: ঈগল পাখীর ডানাওয়ালা একটি সিংহ, একটি ভাল্লুক, একটি চিতাবাঘ এবং একটি ভয়ংকর, খুব শক্তিশালী চতুর্থ জন্তু। তার লোহার দাঁত আছে, দশটি শিং এবং তার মাথায় তিনটি শিং সরিয়ে একটি নতুন শিং উঠে। তার চোখ ও মুখ আছে, যার মধ্য দিয়ে সে বড়াই করে কথা বলে (দানিয়েল ৭:১-৮)। দর্শনটি দানিয়েল ২ অধ্যায়ে নবূখদনিৎসরের মূর্তির স্বপ্নের মত: সিংহ হল সোনার মাথা, অর্থাৎ বাবিল। ভাল্লুক হল রূপার বুক ও হাত, অর্থাৎ মাদিয়-পারস্য। চিতাবাঘ হল ব্রোঞ্জের ঊরু ও পা, অর্থাৎ গ্রীস এবং ভয়ংকর জন্তু বা লোহার ও মাটির পা ও পায়ের পাতা হল রোম, যদিও রোম শব্দটি দানিয়েল পুস্তকে একবারও উল্লেখ করা হয় না।
পরে দানিয়েল একটি আদালতে সিংহাসনে একজন প্রাচীনকে বসতে দেখেন, যিনি সেই ভয়ংকর জন্তুকে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে “মনুষ্যপুত্রের মত একজনকে” প্রাচীনের সামনে দাঁড় করিয়ে তাকে “কর্তৃত্ব, সম্মান ও রাজত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল যেন সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা তাঁর সেবা করে। তাঁর রাজত্ব চিরস্থায়ী; তা শেষ হবে না আর তাঁর রাজ্য কখনও ধ্বংস হবে না” (দানিয়েল ৭:১৩-১৪)। এই পদগুলো মশীহ সম্বন্ধীয় একটি ভবিষ্যদ্বাণী এবং যীশু এই পদগুলো নিজের সম্বন্ধীয় পদ হিসাবে তার মামলায় উদ্ধৃতি করেন (মার্ক ১৪:৬২, ইত্যাদি)।
এই দর্শন দেখে দানিয়েল ভয়ংকর চতুর্থ জন্তুর বিষয়ে আরো জানতে চান। তার কাছে ব্যাখ্যা করা হয় যে, এমন একটি সময় আসবে যখন জন্তুটি পবিত্র মানুষদের অত্যাচার করবে কিন্তু প্রাচীন তাকে বিচার করে তাঁর রাজ্য এই পবিত্রদেরকে দান করবেন (দানিয়েল ৭:১৫-২৮)। অত্যাচার, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও কষ্টের সময়ের বর্ণনায় একটি নম্বর ব্যবহৃত: ‘সাড়ে তিন’ (দানিয়েল ৭:২৫)। ঈশ্বরের লোকদেরকে অত্যাচার করা হবে কিন্তু সাথে সাথে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হবে, এই চিন্তা নতুন নিয়মেও প্রচলিত, যেমন প্রেরিত পুস্তকে।
দানিয়েল ৮ অধ্যায় মাদিয়-পারস্য ও গ্রীক সাম্রাজ্যের বিষয়ে আরো বাণী
দুই বছর পরে, অর্থাৎ ৫৫১ খ্রীষ্টপূর্বে যখন দানিয়েল শূশন শহরে, তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন্তু বা সাম্রাজ্য নিয়ে আরো দর্শন দেখেন। তিনি দু’টি শিংএর একটি ভেড়া দেখেন (ছোট শিং মাদিয়া বুঝায় এবং বড় শিং পারস্য বুঝায়)। ভোড়াটি এক সময় পর্যন্ত রাজত্ব করে (দানিয়েল ৮:১-৪) কিন্তু পশ্চিম দিক থেকে অতি দ্রুত আসা একটি ছাগল, যার এক শিং আছে, সে ভেড়াটিকে মেরে ফেলে। ছাগলটিকে গ্রীস সাম্রাজ্য বুঝায় এবং সেই শিং তার প্রথম নেতা, আলেকজান্ডারকে বুঝায় (দানিয়েল ৮:৫-৭)। এই শিংটি সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকার সময়ে হঠাৎ করে তাকে ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং এর পরিবর্তে ৪টি শিং বের হয় (দানিয়েল ৮:৮)। আর একটি শিং শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং তা “সুন্দর দেশের” বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শিংটি সুন্দর দেশে ২৩০০ দিন ও রাতের জন্য (অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন বছরের জন্য) উৎসর্গগুলো বন্ধ করে, উপসনা-ঘর বাতিল করে এবং সত্যকে মাটিতে ফেলে দেয় (দানিয়েল ৮:৯-১৪)। স্বর্গদূত গাব্রিয়েল দানিয়েলকে দর্শনটি বুঝতে সাহায্য করেন এবং আরো কিছু তথ্য যোগ দেন (দানিয়েল ৮:২৭)।
দানিয়েল পুস্তকের এই ভবিষ্যদ্বাণী ইতিহাসে এত খুটিনাটি বিষয় পর্যন্ত পূর্ণ হয় যে, কিছু লোক দাবি করেন যে, তা সম্ভব নয়, অর্থাৎ দানিয়েল পুস্তকে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ঘটার পরেই লেখা হয়েছে। নিচে পুরাতন নিয়ম থেকে নতুন নিয়ম পর্যন্ত শতাব্দীগুলো সম্বন্ধীয় কিছু সাহায্যকারী ঐতিহাসিক তথ্য দেওয়া হয়েছে:
ম্যাসিডোনিয়ার শাসনকর্তা হওয়ার পরে আলেকজান্ডার গ্রীসকে দখল করেন। পরে তিনি দেশ দু’টিকে একটি সাম্রাজ্যে সংযুক্ত করেন। তিনি পূর্বের দিকে একটি সামরিক অভিযানে বের হন, যাতে তিনি অদ্ভূত গতিতে মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের একটি পর একটি এলাকা দখল করেন – দক্ষিণ দিকে মিসর পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে পারস্য পর্যন্ত (৩৩৪-৩৩১ খ্রীঃপূঃ)। পরবর্তীতে তিনি আরো পূর্বে অভিযান করে আধুনিক ভারত পর্যন্ত দখল করতে থাকেন। তার ক্ষমতার চরম মুহূর্তে যখন তার বয়স ৩২ বছর, কোন সন্তান বা উধরাধীকারী বা পরিকল্পনা না রেখেই তিনি হঠাৎ করে একটি জ্বরের কারণে মারা যান। তার ৪জন প্রধান সেনাপতি বিশাল সাম্রাজ্যটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করেন:
- ১ গ্রীস, ম্যাসিডোনিয়া সেনাপতি কাসান্ডার (Cassander) পশ্চিম অঞ্চল
- ২ এশিয়া মাইনর সেনাপতি লুসিমাখাস্ (Lysimachus) উত্তর অঞ্চল
- ৩ সিরিয়া ও পূর্ব সেনাপতি সেলুসিয়াস্ (Seleucius) পূর্ব ও সবচেয়ে বড় অঞ্চল
- ৪ মিসর সেনাপতি প্টলেমী (Ptolemy) দক্ষিণ অঞ্চল
“সুন্দর দেশ”এর জন্য, অর্থাৎ ইস্রায়েলের জন্য একটি কঠিন সময় শুরু। উত্তর দিকে সেলুসিয়াস্ ও তার রাজবংশ (‘উত্তরের রাজারা’) রাজত্ব করেন এবং দক্ষিণ দিকে প্টলেমী ও তার রাজবংশ (‘দক্ষিণের রাজারা’) রাজত্ব করেন। ইস্রায়েল এই দু’টি সাম্রাজ্যের মাঝখানে পড়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এক বার সেলুকিয়দের দ্বারা এবং অন্য বার প্টলেমীয়দের দ্বারা দখল হতে থাকে।
একটি বিশেষ কষ্টদায়ক সময় ঘটে যখন সেলুকিয় রাজবংশের আন্তিয়খিয় এপিফানেস্-৪ উত্তরের রাজা হয়ে যান (১৭৫-১৬৪ খ্রীঃপূঃ)। তিনি যিহূদীদের ও যিহূদী ধর্ম একদম ঘৃণা করেন বলে, তিনি তাদের এমনভাবে অত্যাচার করেন যে, যিহূদীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে (‘মাকাবীয় বিদ্রোহ’)। দানিয়েল ১১ অধ্যায়ের আলোচনায় আরো খুঁটিনাটি বিষয় দেওয়া হবে।
দানিয়েল ৯ অধ্যায় মন ফিরানো ও ইস্রায়েল জাতির জন্য বিনতি
রাজা দারিয়াবসের প্রথম বছরে, অর্থাৎ ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে দানিয়েল খেয়াল করেন যে, ভাববাদী যিরমিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বাবিলে যিহূদীদের নির্বাসন শেষ হয়ে যাওয়ার সময় কাছে এসে গেছে (যির ২৫:১২, ২৯:১০)। যদি যিরূশালেমের প্রথম দখল (৬০৫ খ্রীঃপূঃ) হিসাব করা হয় তবে ৭০ বছর ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে পূর্ণ হবে। প্রকৃতপক্ষে মাদিয়-পারস্যেরা বাবিলকে পরাজিত করে তাদের দ্বারা নির্বাসিত জাতিদেরকে নিজেদের দেশে ফেরার অনুমতি দেবে (৫৩৮ খ্রীঃপূঃ) এবং সরুব্বাবিলের নেতৃত্বে প্রথম দল যিহূদীরা বাবিল ত্যাগ করে প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যাবে (৫৩৬ খ্রীঃপূঃ)। কিন্তু এখনও তা ঘটে নি যদিও দানিয়েল শীঘ্রই এই ঘটনাগুলোর সাক্ষী হবেন (দানিয়েল পুস্তকে শেষ উল্লিখিত তারিখ হল ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে, দানিয়েল ১০:১)।
দানিয়েল ভাববাদী যিরমিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী দেখে বুঝতে পারেন যে, সময় প্রায় সমাপ্ত। তিনি যিহূদীদের ফিরে যাওয়ার সুযোগের জন্য এবং সেখানে তাদের সুরক্ষার জন্য বিনতি করতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, যতজন যিহূদী প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে তাদেরই উপর ইস্রায়েল জাতির আহ্বান ও মশীহের প্রতিজ্ঞাগুলো রয়েছে (দানিয়েল ৯:৪-১৪)। দানিয়েলের চমৎকার বিনতি প্রার্থনা হল ঈশ্বরের দৃষ্ট দিয়ে ইস্রায়েল জাতির ইতিহাসের একটি বর্ণনা, যাতে তিনি ইস্রায়েলের পাপ ও অযোগ্যতা এবং তাদেরকে বিচার করে নির্বাসনে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ন্যায্যতা সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করেন। দানিয়েল তার বিনতি শুধু ঈশ্বরের অশেষ দয়ার উপর ভিত্তি করে করেন (দানিয়েল ৯:১৮)।
বিনতির পরেই স্বর্গদূত গাব্রিয়েল তার কাছে এসে একটি সংবাদ এবং ভবিষ্যৎ ঘটনার একটি সময় তালিকা দেন (দানিয়েল ৯:২৪-২৬): ৭০টি সপ্তা পার হবে (৪৯০ বছর) এবং তারপর “মন্দতা বন্ধ করা হবে, অন্যায়ের শেষ হবে, পাপ ঢাকা দেওয়া হবে, চিরস্থায়ী ন্যায্যতা স্থাপন করা হবে”, যা বেশ পরিষ্কারভাবে মশীহ যীশুর প্রথম আগমনের বিষয় বুঝায়। পরে তিনি সেই ৭০ সপ্তাকে ৬২ সপ্তায় ও ৭ সপ্তায় দু’ভাগে ভাগ করেন এবং উপসনা-ঘরের ধ্বংস নিয়ে কথা বলেন, যা সম্ভবত ৭০ খ্রীষ্টাব্দে রোমীয়দের দ্বারা যিরূশালেমের ধ্বং বুঝায়। আসলে বিভিন্ন বাইবেল পণ্ডিত এই পদগুলোর ভিত্তিতে ভিন্ন অংক করে তা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন কিন্তু কোনো ব্যাখ্যার সাথে কথাটি সম্পূর্ণভাবে মিলে না।
দানিয়েল ১০ অধ্যায় মানবীয় সাম্রাজ্য ও স্বর্গীয় কর্তা
প্রায় ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে (দানিয়েল পুস্তকে শেষ উল্লিখিত তারিখ) দানিয়েল উপবাস করেন এবং “মসীনার কাপড় পরা” একজন লোকের মধ্য দিয়ে তিনি একটি ব্যাখ্যা লাভ করেন। দানিয়েলের কাছে আসার পথে তার দারিয়াবসের প্রথম বছর থেকে (অর্থাৎ ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে, দানিয়েল ১১:১) “পারস্যের প্রধান”এর সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে (দানিয়েল ১০:১৩)। দানিয়েলের কাছে সংবাদ দেওয়ার পরে তিনি “পারস্যের প্রধান”এর সাথে আবারও যুদ্ধ করতে যাবেন এবং পরবর্তীতে “গ্রীসের প্রধান”এর সাথে (দানিয়েল ১০:২০) যুদ্ধ করবেন। এই পদগুলো কিভাবে বুঝা যায়? কেউ কেউ এই পদগুলো এলাকা বা জাতি ভিত্তিক স্বর্গদূতদের মধ্যে আত্মিক যুদ্ধের একটি বর্ণনা হিসাবে বুঝেন। আবারও কেউ কেউ তা মানবীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের একটি নাটকীয় ছবি হিসাবে ব্যাখ্যা করেন (দানিয়েল ১১:৩-৫ দেখুন) – অথবা দু’টি ব্যাখ্যাই ঠিক।
দানিয়েল ১১ উত্তরের রাজারা বনাম দক্ষিণের রাজারা
“মসীনা কাপড় পরা” লোক দানিয়েলকে একটি দীর্ঘ ভবিষ্যদ্বাণী দেন. কিভাবে উত্তরের রাজারা (সেলুকিয় রাজবংশ, সিরিয়া) এবং দক্ষিণের রাজারা (প্টলেমীয় রাজবংশ, মিসর) পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে (দানিয়েল ১১:৫-১১:৪৫ পদ পর্যন্ত)। আবারও সেই অতি দমনকারী ও হিংস্র সেলুকীয় রাজা আন্তিয়খিয় এপিফানেস্-৪ (Antiochus IV Epiphanes)এর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যার কারণে যিহূদীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
এই ভবিষ্যদ্বাণী অতি বিস্তারিত এবং তাতে অনেক খুঁটিনাটি অথ্য পরবর্তী শতাব্দীগুলোর ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে মিলে যায়, যা বাইবেলের বাইরের অন্যান্য ঐতিহাসিক লেখাগুলো থেকে পাওয়া যায়। যেহেতু বাণীটি এত নির্দিষ্ট ও বিস্তারিত এবং তা অন্যান্য ঐতিহাসিক লেখাগুলোর সাথে এত মিল পাওয়া যায় যে, কিছু লোক (যারা ঈশ্বরের ভবিষ্যৎ জানার বিষয়ে সন্দেহ করে) দাবি করে যে, দানিয়েল ১১:৫-৩৫ পদগুলো অবশ্যই ঘটনা ঘটার পরেই লেখা। কিন্তু দানিয়েল নিজেই অন্য একটি দৃষ্টি দেখান: “ঈশ্বর চিরকাল ধন্য হোন; জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই। তিনিই সময় ও ঋতু তাঁর অধীনে রাখেন; তিনি রাজাদের সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন। তিনি জ্ঞানীদের জ্ঞান দান করেন” (দানিয়েল ২:২০-২১)।
পরবর্তী পদগুলো (দানিয়েল ১১:৩৬-৪৫) কম পরিষ্কার এবং বিভিন্ন বাইবেল পণ্ডিত সেগুলো বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। সেলুকিয় ও প্টলেমীয় রাজবংশ সম্বন্ধে আরো খুটিনাটি তথ্যের জন্য (রাজাদের নাম, সাল ও প্রধান ঘটনা) এবং কিভাবে তা দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলে দেখতে চাইলে দয়া করে ‘দানিয়েল বিস্তারিত অধ্যয়ন’ (ইংরেজিতে) দেখুন।
দানিয়েল ১২ অধ্যায় ভবিষ্যতে উদ্ধার ও পুনরুত্থান
“মসীনার কাপড় পরা” লোক আরো ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বলেন যে, অত্যাচার ও কষ্টভোগ আসবে, কিন্তু সঙ্গে অনন্তকালীন উদ্ধারও পাওয়া যাবে (দানিয়েল ১২:১)। এপর্যন্ত পুরাতন নিয়মের যত লেখক বলেছেন, তার চেয়ে স্পষ্টভাবে তিনি প্রতিজ্ঞা দেন যে, যুগের শেষে সব মানুষদের পুনরুত্থিত করা হবে, অনন্তকালীন জীবন অথবা অনন্তকালীন লজ্জার জন্য (দানিয়েল ১২:২, যা প্রকাশিত বাক্য ২০ অধ্যায়ের সাথে মিল পাওয়া যায়)। দানিয়েল জিজ্ঞাসা করেন “এই সব আশ্চর্য আশ্চর্য ব্যাপার শেষ হতে কত কাল লাগবে?” (দানিয়েল ১২:৬) যার উত্তরে তিনি আবারও (বিভিন্ন শব্দটিতে) ‘সাড়ে তিন’ শোনেন, যেমন ইতিমধ্য তিন বার বলা হয়েছে (দানিয়েল ৭:২৫, ৮:১৪, ৯:২৫)। ‘সাড়ে তিন’, এই নম্বর সব সময় কষ্টভোগ ও অত্যাচার কিন্তু একই সাথে উদ্ধারের কথার বর্ণনাতে পাওয়া যায়।
সম্ভবত বেশি না বুঝে তিনি জিজ্ঞাসা করেন “এই সবের শেষ ফল কি হবে?” (দানিয়েল ১২:৮)। এই প্রশ্নের উত্তর আর দেওয়া হয় না। তাকে বলা হয় যে, তিনি বিশ্বস্তভাবে তার জীবনের শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেছেন কিন্তু এখন তার বিশ্রামের সময় আসছে এবং বিষয়টি আর তার দায়িত্ব নয় (দানিয়েল ১২:৮-১৩)। তাকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় যে, তিনি অবশ্যই পুনরুত্থানের সময়ে তার উপযুক্ত পুরষ্কার পাবেন।
দানিয়েল পুস্তকে একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করুন: দানিয়ল খোলামেলাভাবে স্বীকার করতে থাকেন যে, তিনি বুঝতে পারেন না (দানিয়েল ৮:২৭, ১২:৮), তিনি বার বার আরো ব্যাখ্যা চাচ্ছেন (দানিয়েল ২:১৪-১৫, ৭:১৬, ৭:১৯, ৯:৩) এবং এভাবে বার বার আরো ব্যাখ্যা ও জ্ঞান লাভ করেন। বাইবেলে যিনি সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, তিনিই বার বার নম্রভাবে নিজের জ্ঞানের অভাব সরলভাবে স্বীকার করেন! এছাড়া দানিয়েল বিশ্বস্ত – এজন্যও তিনি প্রজ্ঞাবান। ঈশ্বর তার বহুবছরের পরিচর্যা এভাবে অনুমোদিত করেন: “যাদের বুঝবার ক্ষমতা আছে, অর্থাৎ যারা অনেককে ন্যায়পথে এনেছে তারা আকাশের আলো ও উজ্জ্বল তারার মত চিরকাল জ্বল্ জ্বল্ করবে” (দানিয়েল ১২:৩)। প্রকৃতভাবে তিনি কত চমৎকারভাবে জীবন-যাপন করেছেন!