ইস্রায়েল দেশ চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হওয়ার আগেই ভাববাদী হোশেয় ইস্রায়েল জাতিকে একটি অত্যন্ত আবেগময় ও জরুরী শেষ ডাক দেন যেন তারা এমন কি এই শেষ প্রান্তে এসেও অনুতপ্ত হয়ে তাদের গভীর দেবতাপূজা থেকে মন ফিরায় (যা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ ব্যভিচারের মত)।
বাইবেলের ঐতিহাসিক লেখাগুলোতে ভাববাদী হোশেয়ের উল্লেখ নেই। তার জীবন সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায়, তা সব হোশেয় পুস্তক থেকেই আসে। ঈশ্বর হোশেয়কে শুধুমাত্র তাঁর বাণী বলতে আহ্বান করেন না, হোশেয়ের জীবনই হয়ে যায় ঈশ্বরের বাণীর একটি প্রকাশ। ঈশ্বর তাকে আদেশ করে বলেন: “তুমি গিয়ে একজন ব্যভিচারিণী স্ত্রীলোককে বিয়ে কর। তার ব্যভিচারের সন্তানদেরও গ্রহণ করবে, কারণ এই দেশ সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে গিয়ে সবচেয়ে জঘন্য ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়েছে” (হোশেয় ১:২-৩)।
কেউ কেউ চিন্তা করে যে, এই আদেশে “ব্যভিচারিণী স্ত্রী” শব্দটি মাত্র রূপক অর্থে ব্যবহৃত, অর্থাৎ যে হোশেয় কোনো আসল ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করে। কিন্তু তার চেয়ে সম্ভাবনা বেশি যে, হোশেয় প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করেন, হয়তো একজন পতিতাকে অথবা একজন মহিলা যার সম্বন্ধে সবাই জানে যে, তার জীবন ভাল নয়।
হোশেয় এবং এই মহিলার বিবাহে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়। প্রত্যেকটি সন্তানের নাম ঈশ্বরের একটি বাণীকে প্রকাশ করে (হোশেয় ১:৪-৯)। পরবর্তীতে হোশেয়ের স্ত্রী হোশেয়কে ত্যাগ করে আর একজন প্রেমিকের কাছে চলে যায়। ঈশ্বর হোশেয়কে আদেশ করেন, তার স্ত্রীকে সেই প্রেমিকের হাত থেকে কিনে ফিরিয়ে আনতে, যা সবার চোখে হাস্যকর ও অপমানজনক বিষয় (হোশেয় ৩:১-৩)।
এভাবে হোশেয়ের জীবন ও বিবাহ হয়ে যায় ইস্রায়েলের প্রতি ঈশ্বরের বাণীর একটি প্রকাশ: সিনাই পাহাড়ে ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে রাজি হয়েছিল (যাত্রা ১৯)। ইস্রায়েলের এই চুক্তিকে হোশেয় ‘বিবাহ’ বলেন, ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েল জাতির বিবাহ। প্রকৃতপক্ষে ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে এত সম্মান ও সমর্পণ পেতে যোগ্য ছিল না – ঠিক যেমন হোশেয়ের স্ত্রীও হোশেয়ের সাথে সেই সম্মানজনক বিবাহের যোগ্য ছিল না। ঈশ্বর তাঁর দয়ায় নিজেকে ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে একটি স্থায়ী চুক্তিতে সমর্পিত করেছিলেন এবং তিনি এই চুক্তি বিশ্বস্তভাবে পালনও করেছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের আইন-কানুনের প্রতি অবাধ্যতা ও দেবতাপূজা দ্বারা স্বেচ্ছাচারীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে চুক্তিটি ভাঙ্গতে থাকে। তাই ঈশ্বর হলেন সেই পরিত্যক্ত স্বামী বা সেই অগ্রাহ্য করা প্রেমিক। ইস্রায়েলের অবহেলা, অহংকার ও নির্মমতা হল ঈশ্বরের মনোভাবের ঠিক বিপরীত। অর্থাৎ ঈশ্বরের অহংকার নেই, তিনি যে ভাবে হোক, তাঁর স্বেচ্ছাচারী জাতিকে সম্মানিতা স্ত্রী হিসাবে পুনরায় গ্রহণ করতে আগ্রহী – যদি তারা কোনো রকম অনুতপ্ত হয়। অবাধ্য ইস্রায়েল জাতিকে ভাল পথে আনার জন্য ঈশ্বর যে উদ্যোগ নিতে থাকেন, এতে ঈশ্বরের নম্রতা ও ভালবাসা প্রকাশিত। এটা দ্বারা লোকদের হৃদয়ের মধ্যে একটি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ইস্রায়েলের অবাধ্যতা ও পাপ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অনেক গভীর থেকে আরো গভীরে চলে গিয়েছে।
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির দোষ ধরেন: “দেশে বিশ্বস্ততা ও অটল ভালবাসা নেই এবং ঈশ্বরকে কেউ সত্যিকারভাবে জানে না। আছে কেবল শপথ ভাংগা, মিথ্যা কথা বলা, খুন করা, চুরি করা ও ব্যভিচার করা। তারা আইন অমান্য করে এবং রক্তপাতের উপরে রক্তপাত করে। এইজন্য দেশ শোক করছে” (হোশেয় ৪:১-৩)। তিনি বিশেষভাবে দেশের নেতাদের দোষ ধরেন, উভয় রাজনৈতিক নেতাদের (রাজা, কর্মচারীরা) এবং আত্মিক নেতাদের (পুরোহিত, ভাববাদী): “হে পুরোহিতেরা, তোমরা এই কথা শোন। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, মনোযোগ দাও। হে রাজবংশ, কান দাও। এই রায় তোমাদেরই বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে, কারণ তোমরা মিসপাতে ফাঁদের মত আর তাবোরে মেলে দেওয়া জালের মত হয়েছিলে” (হোশেয় ৫:১-৩)। কিন্তু ইস্রায়েলের সাধারণ লোকদেরও দোষ আছে, কারণ তারা জেনে বুঝে ঈশ্বরের আইন-কানুন ও ভাববাদীদের বাণী অগ্রাহ্য করেছে: “তোমরা সেই জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেছ বলে আমিও আমার পুরোহিত হিসাবে তোমাদের অগ্রাহ্য করলাম… ইস্রায়েলীয়েরা একগুঁয়ে গাভীর মত… ইফ্রয়িম প্রতিমাদের সংগে যোগ দিয়েছে… যা ভাল ইস্রায়েল তা অগ্রাহ্য করেছে… ইস্রায়েলীয়েরা মন ফিরাতে রাজী হয় নি” (হোশেয় ৪:১৬-১৭, ৮:৩, ১১:৫)। এর জন্য “ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবে আমার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে” (হোশেয় ৪:৬)।
রাজা যারবিয়াম-২ (৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ) ছিলেন একজন শক্তিশালী শাসনকর্তা, যার অধীনে ইস্রায়েল দেশ আরো একবার শক্তি ফিরে পেয়ে হারানো ভূমি পুনরায় দখল করতে এবং বেচাকেনার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় (২ রাজা ১৪:২৩-২৭)। কিন্তু এই শক্তি ও উন্নয়ন ছিল প্রকৃতপক্ষে চোখ ভুলানোর মত এবং এ কারণে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে মিথ্যা নিশ্চয়তা, মিথ্যা নিরাপত্তা ও মিথ্যা ধার্মিকতা তৈরি হয়: ইস্রায়েলীয়েরা খুব ধর্মকর্ম করত (সদাপ্রভু ও বিভিন্ন দেবতা উভয়ের পূজা), এরই সাথে গরীবদের অত্যাচারও করত। দেশের বর্তমান সুঅবস্থা দেখে তারা নিশ্চিত ছিল যে, ঈশ্বর তাদেরকে নিয়ে খুব খুশি আছেন। ইস্রায়েলীয়দের এই মিথ্যা ধার্মিকতা ভাঙ্গার জন্য ঈশ্বর ভাববাদী হোশেয়ের দ্বারা ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বরের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্কে ফিরে আসার জন্য একটি আবেগময় ডাক দেন। একই সময়ে তিনি সমসাময়িক ভাববাদী আমোষের তীব্র ও চেতনাদায়ক বাণী দ্বারা তাদের মিথ্যা নিশ্চয়তা ভাঙ্গতে চেষ্টা করেন। এই দুইজন ভাববাদী হলেন ধ্বংসের আগে ইস্রায়েল জাতির কাছে ঈশ্বরের শেষ সংবাদদাতা।
যারবিয়াম ২-এর পরে দুর্বল ও অল্প-মেয়াদী রাজারা ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দেন, এমন রাজা যারা একে অন্যকে খুন করতে থাকেন। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা দুর্বল এবং অস্থির হয়ে পড়ে। হিংস্র ও শক্তিশালী আসিরিয়া সাম্রাজ্য ৭৩২ খ্রীষ্টপূর্বে উত্তরে ইস্রায়েলের মিত্র সিরিয়াকে এবং শেষে ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে ইস্রায়েল দেশকেও দখল করে। ইস্রায়েল দেশের ধ্বংস হল চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনশীল: ইতিহাসে ইস্রায়েল দেশ হিসাবে আর পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয় না, যে অল্প লোকেরা দখলের পরেও বেঁচে ছিল, তারা আর কখনও নিজের দেশে ফিরে আসে না বরং তাদের পরিচয় হারিয়ে অন্য জাতিদের সাথে মিশে যায়। অনেক বার মন ফিরানোর ডাক দেওয়ার পরে ঈশ্বর অবশেষে তাঁর বিচার বাস্তবায়ন করেছেন।
কিন্তু হোশেয় আশারবাণীও দেন। হতে পারে হোশেয়ের কিছু শ্রোতারা তার ও অন্যান্য ভাববাদীদের সাবধানবাণীতে গুরুত্ব দিয়ে উত্তরের ইস্রায়েল দেশ ত্যাগ করে দক্ষিণের যিহূদা দেশে চলে এসেছে, যারা ঐসময়ে ইস্রায়েলের চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি বেশি বাধ্য ছিল। তাই যদিও ইস্রায়েল দেশ হিসাবে আর প্রতিষ্ঠিত হয় না, সম্ভবত কিছু ইস্রায়েলীয়েরা ঈশ্বরের বাক্যে সাড়া দিয়ে বেঁচে যায়।
হোশেয় বেশিরভাগ সময় উত্তর ইস্রায়েল দেশের লোকদের কাছে প্রচার করেন, কিন্তু সম্ভবত তিনি যিহূদার লোকদের চিন্তা করে তার বাণী লিখিত রাখেন, সেই যিহূদা যা একই আসিরিয়া সাম্রাজ্য দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু তারা এই হুমকিতে বেঁচে যায়। হোশেয় তার পুস্তকের মধ্য দিয়ে যিহূদার লোকদের কাছে সাবধানবাণী দেন, যেন তারা ইস্রায়েলের মত না করে বরং ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে, সেই ঈশ্বর যিনি তাদেরকে এত নিঃশর্তভাবে ও মনেপ্রাণে ভালবাসেন।
পুস্তকের লেখক এবং তার জীবন
পুস্তকের লেখক নিজেকে “বেরির ছেলে হোশেয়” বলে পরিচয় দেন। হোশেয় নামের অর্থ হল ‘পরিত্রাণ’। যিহোশূয়ের নামও ‘হোশেয়’ ছিল (গণনা ১৩:৮), যদিও মোশি পরে তার নাম ‘যিহোশূয়’ রাখেন, যার অর্থ হল ‘যিহোবাই পরিত্রাণ’। যীশুর নামও ‘যিহোশূয়’, যদিও তা অনুবাদে ‘যীশু’ হিসাবে রাখা হয়েছে।
যেহেতু ভাববাদী হোশেয়ের নাম ঐতিহাসিক লেখাগুলোতে উল্লেখ নেই, তাই তার জন্মস্থান, পরিবার বা পেশা সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় না। সব তথ্য হোশেয় পুস্তক থেকেই আসে।
হোশেয় তার দেশ ইস্রায়েলের অবস্থা ভালভাবে জানেন, অর্থাৎ তার সম্পূর্ণভাবে জানা আছে, ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের চুক্তি কত গভীরভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে। তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টি বুঝে বলেন যে, তার দেশ পাপ করছে, তারা তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে আগাচ্ছে এবং শীঘ্রই তাদের আর ফেরার কোন পথ থাকবে না।
ঈশ্বর হোশেয়কে “একজন ব্যভিচারিণী স্ত্রীলোককে” বিয়ে করতে এবং “ব্যভিচারের সন্তানদেরও গ্রহণ” করতে আদেশ দেন “কারণ এই দেশ সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে গিয়ে সবচেয়ে জঘন্য ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়েছে” (হোশেয় ১:২)। সম্ভবত হোশেয় একজন ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করেন (একজন পতিতা বা এমন মহিলা যার সম্বন্ধে সবাই জানে যে, তার জীবন ভাল নয়)।পুস্তকের শুরু থেকেই ঈশ্বর দু’টি বিষয় সংযুক্ত করেন, ব্যভিচার ও দেবতাপূজা।
- ব্যভিচার <=> দেবতাপূজা
- স্বামী-স্ত্রী <=> ঈশ্বর ও তাঁর জাতি
এভাবে ঈশ্বর সিনাই পাহাড়ে তাঁর জাতির সঙ্গে করা চুক্তিকে (যাত্রা ১৯) একটি বিবাহের সঙ্গে তুলনা করেন। হোশেয় যেমন একজন অযোগ্য মহিলাকে সম্মানজনক একটি বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছেন, ঠিক তেমনি ঈশ্বর তাঁর দয়ায় অযোগ্য ইস্রায়েল জাতির কাছে নিজেকে একটি সম্মানজনক ‘বিবাহ চুক্তিতে’ সমর্পিত করেছিলেন। ঈশ্বর এই বিবাহে বিশ্বস্ত ছিলেন, তিনি চুক্তি পালনকারী ঈশ্বর। কিন্তু ইস্রায়েল জাতি স্বেচ্ছাচারীভাবে এই চুক্তি ভাঙ্গতে থাকে, তারা ঈশ্বরের আইন-কানুনের প্রতি অবাধ্য হয়ে বিভিন্ন দেব-দেবতার পূজা করে এবং এইভাবে একজন অবিশ্বস্ত বা ব্যভিচারীণী স্ত্রীর মত প্রেমিকদের পিছনে দৌঁড়ায়। ঈশ্বর হলেন পরিত্যাক্ত স্বামী বা সেই অগ্রাহ্য করা প্রেমিক। ইস্রায়েল চুক্তিতে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বরং অহংকার ও অবহেলার সঙ্গে আচরণ করে। অপর পক্ষে ঈশ্বর কোন অপমান বোধ বা প্রতিশোধের চিন্তা প্রকাশ করেন না। ঈশ্বর নম্রতায় তাঁর অবিশ্বস্ত লোকদের পিছনে দৌঁড়ান এবং যদি তারা মন ফিরায় তবে তিনি তাদেরকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করবেন। ঈশ্বরের সেই নম্র মনোভাব তার জাতির হৃদয় স্পর্শ করার কথা ছিল কিন্তু হোশেয়ের সময় পর্যন্ত ইস্রায়েল জাতি নিজেদের হৃদয়কে অনেক কঠিন বানিয়েছিল।
হোশেয় কি প্রকৃতপক্ষে একটি অনৈতিক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন? কোউ কেউ বলে যে, বিবাহের এই কথা রূপক অর্থে ব্যবহৃত মাত্র, অর্থাৎ বাস্তবে তা ঘটে নি, কারণ ঈশ্বর একজন ভাববাদীর কাছ থেকে এই ধরণের কিছু কখনও দাবি করবেন না। কেউ কেউ বলে যে, হোশেয়ের স্ত্রী গোমের শারীরিক ব্যভিচারীণী না বরং আত্মিক ক্ষেত্রে ব্যভিচারীণী, অর্থাৎ দেবতাপূজারী ছিলেন (যেমন ঐসময়ে ইস্রায়েল জাতির অধিকাংশ লোকেরা)। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর বাক্যে একজন দেবতাপূজারীকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন এবং ঈশ্বর হোশেয়কে কখনও নিজের বাক্যের বিপরীতে আদেশ দেবেন না। প্রকৃতপক্ষে মোশির আইন-কানুনে দেতাপূজারীকে বিবাহ করা নিষেধ ছিল, কিন্তু সাধারণ লোকদের ক্ষেত্রে একজন পতিতাকে বিয়ে করা নিষেধ ছিল না। তা শুধুমাত্র পুরোহিতদের ক্ষেত্রে নিষেধ ছিল (লেবীয় ২১:৭,১৪)। এছাড়া একটি কন্যাকে পতিতা হিসাবে বিক্রি করা (লেবীয় ১৯:২৯) অথবা ব্যভিচারের আয় মন্দিরে আনা বা শপথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা নিষেধ ছিল (দ্বিতীয় বিবিরণ ২৩:১৮), কিন্তু হোশেয়ের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না। ঈশ্বর তাই হোশেয়কে আইনের বিরুদ্ধে অনৈতিক কিছু করতে বলেন নি, যদিও তিনি তাকে অসাধারণ ও দয়ালু কিছু করতে বলেছেন।
হোশেয় ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হন। এমন কি যখন তার স্ত্রী তার প্রতি অবিশ্বস্ত হয় এবং তাকে একের পর এক লজ্জায় ফেলতে থাকে: হোশেয়কে নিজের স্ত্রীকে নতুন প্রেমিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয় (হোশেয় ৩:১-২)। হোশেয় বাধ্য, নম্র, দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি তার স্ত্রী গোমেরকে ঈশ্বরের হৃদয় দেখাতে থাকেন, অর্থাৎ নিঃশর্ত ভালবাসা, ধৈর্য ও অনুগ্রহ দেখাতে থাকেন। ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করার ফলে ঈশ্বরের যে কষ্ট, লজ্জা ও অসম্মান লাগে, হোশেয় তা নিজের স্ত্রীর সাথে সেই আবেগ প্রবণ সম্পর্কের মাধ্যমে নিজেই বহন করেন। তিনি ঈশ্বরের কষ্টের ভাগী হন। সংবাদদাতা যে শুধুমাত্র বাণী দেন, তা নয়, তার জীবনই বাণী হয়ে যায়। সংবাদদাতাই সংবাদ হয়ে যান। যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা মানুষের জন্য ঈশ্বরের নিঃশর্ত, লেগে থাকা অটল ভালবাসা, তা পুরাতন নিয়মে হোশেয় পুস্তকে সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়।
হোশেয়ের বাণীগুলোতে তার সেই ভাঙ্গা হৃদয় প্রকাশ পায়। তার কথাগুলো আবেগ প্রবণ, গভীর অন্তর থেকে ও শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করার মত। হোশেয় পুস্তক ঈশ্বরের চরিত্র শক্তিশালীভাবে প্রকাশিত করে: ঈশ্বর চিন্তার চেয়েও দয়ালু; করুণা করার কারণ না থাকলেও তিনি তা খুঁজে পান। ঈশ্বরই অটল ভালবাসা। তা না হলে তিনি কেন এমন একটি জাতির পিছনে দৌঁড়াবেন, যারা তাকে কোনো গুরুত্ব দেয় না, তাঁকে একদমই তুচ্চও করে।
ঈশ্বর যে (আর একটি বার!) তাঁর অবিশ্বস্ত জাতির কাছে বাণী পৌছাতে চেষ্টা করেন, তা পুস্তকের ২ অধ্যায়ে রূপকভাবে একটি আবেগ প্রবণ গল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়: ঈশ্বর তাঁর অবিশ্বস্ত স্ত্রী ইস্রায়েলকে পুনরায় মরুভূমিতে নিয়ে যান, অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতিকে বিভিন্ন কষ্ট, সংকট বা অভাবে পড়তে দেন (আংশিক বিচার)। তিনি তা করেন এই আশায় যে, এভাবে ইস্রায়েল জাতি তাঁর কাছে ফিরে আসবেন। ঈশ্বর যে কোনো সময় তাদের পুনরায় গ্রহণ করতে প্রস্তুত: “পরে আমি তাকে মিষ্টি কথা বলে মরু-এলাকায় নিয়ে যাব এবং তার সংগে ভালবাসার কথা বলব … সেই দিনে সে আমাকে ‘আমার স্বামী’ বলে ডাকবে … আমি তোমার সংগে বিয়ের সম্বন্ধ চিরকালের জন্য পাকা করব; সততা, ন্যায়বিচার, অটল ভালবাসা ও দয়ায় আমি সেই সম্বন্ধ পাকা করব। আমি বিশ্বস্ততায় সেই সম্বন্ধ পাকা করব আর তখন তুমি সদাপ্রভুকে গভীরভাবে জানতে পারবে” (হোশেয় ২:১৪,১৬,১৯-২০)।
ভাববাদী হোশেয় কখন এবং কাদের কাছে কথা বলেন?
হোশেয় পুস্তকের প্রথম পদে (হোশেয় ১:১) তার ভাববাণীর তারিখ দিয়ে যিহূদার রাজা উষিয় (৭৬৯-৭৩৯ খ্রীঃপূঃ), যোথম (৭৩৯-৭৩১ খ্রীঃপূঃ), আহস (৭৩১-৭১৫ খ্রীঃপূঃ) ও হিষ্কিয় (৭১৫-৬৮৬ খ্রীঃপূঃ) এবং ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়াম-২কে উল্লিখিত করেন (৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ)। এর অর্থ এই যে, তিনি বেশ দীর্ঘদিন ধরে ভাববাণী দিতে থাকেন। হোশেয় উত্তরের ইস্রায়েল দেশের কাছে কথা বলেন (হোশেয় ২:১০, ৪:১, ইত্যাদি), কিন্তু কেন তিনি যিহূদার রাজাদের উল্লেখ করে তারিখ প্রকাশ করেন? হয়তো হোশেয় অন্য ভাববাদীদের মত দায়ূদের পরিবারকে আসল রাজবংশ হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং তাই তাদের উল্লেখ করে তার বাণীর তারিখ দেন। আর একটি কারণ হতে পারে যে হোশেয় ইস্রায়েল দেশের ধ্বংসবাণী দেন এবং ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে নিজের চোখে দেশের ধ্বংসও দেখেন। যেহেতু ইস্রায়েল দেশ আর নেই, তিনি চূড়ান্তভাবে যিহূদার লোকদের জন্যই পুস্তকটি লেখেন। তার ধ্বংসবাণী পূর্ণ হয়েছে বলে, তিনি সত্যিকারের ভাববাদী হিসাবে প্রমাণিত (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২০-২২) এবং যিহূদার ঈশ্বর ভক্ত লোকেরা তার লেখা সম্মানের সঙ্গে দেখবে।
যদিও হোশেয় বেশির্ভাগ সময় ইস্রায়েল জাতির কাছে কথা বলেন (হোশেয় ৪:১) এবং বিশেষভাবে ইস্রায়েলের নেতাদের কাছে কথা বলেন (রাজারা, রাজপুত্রেরা, পুরোহিতেরা, হোশেয় ৫:১,১০, ৪:৪) তবুও তিনি যিহূদার লোকদের মনে রেখে লেখেন। তিনি যিহূদাকেও বার বার উল্লেখ করেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি তাদের সাড়া কি, এতে গুরুত্ব দেন: “যিহূদা ঈশ্বরের, অর্থাৎ সেই বিশ্বস্ত পবিত্রজনের অবাধ্য হয়েছে” (হোশেয় ১১:১২) এবং “হে যিহূদা, তোমার জন্যও ফসল কাটবার সময় স্থির করা হয়েছে” (হোশেয় ৬:১১)।
পুস্তকের লেখার তারিখ ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
হোশেয় উত্তরের ইস্রায়েল দেশের লোকদের কাছে কথা বলেন যখন যারবিয়াম-২, অর্থাৎ শক্তিশালী ও সফল একজন রাজা তাদের উপর রাজত্ব করেন। ঐসময়ের পরিস্থিতি বুঝার জন্য ইস্রায়েলের ইতিহাসে আগের কিছু ঘটনা জানা দরকার:
- ৯৩১ খ্রীঃপূঃ রাজা যারবিয়াম-১ মন্দ
- ইস্রায়েল যিহূদা থেকে আলাদা হয়ে যায়। ইস্রায়েলের নেতারা দায়ূদের রাজপরিবার অগ্রাহ্য করে পরিবর্তে যারবিয়াম-১কে তাদের রাজা হিসাবে নিযুক্ত করেন।
- যদিও যারবিয়াম ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি চমৎকার প্রতিজ্ঞা পান, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে যিরূশালেমে সদাপ্রভুর আরাধনার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বৈথেল ও দান শহরে বাছুরের পূজা স্থাপন করেন।
- তিনি সেখানে রাষ্ট্রীয় পূজা হিসাবে যিরূশালেমে ঈশ্বরের আরাধনার সমান্তরাল বাছুরের মূর্তি, তার পূজা, উৎসর্গ, বেদী, পুরোহিত ও পর্বগুলো স্থাপন করেন।
- তিনি লোকদেরকে যিরূশালেমে যাওয়ার জন্য বাধা তৈরি করেন এবং বৈথেলকে রাষ্ট্রীয় পূজার স্থান ও বাছুর পূজাকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন (১ রাজা ১২)।
- ৮৪১-৮১৪ খ্রীঃপূঃ রাজা যেহূ ভাল-মন্দ মিশানো
- সেনাপতি যেহূ ঈশ্বরের একজন ভাববাদীর কাছ থেকে বাণী পেয়ে ইস্রায়েলের বর্তমান রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, রাজার পরিবারকে নির্মূল করেন এবং তিনি নিজেকে নতুন রাজা হিসাবে ঘোষণা করেন।
- তিনি উদ্যোগ নেন ইস্রায়ল দেশ থেকে বাল দেবতার পূজা নির্মূল করতে।
- একারণে ঈশ্বর তাকে একটি প্রতিজ্ঞা দেন যে, তার রাজপরিবার চার পুরুষ পর্যন্ত স্থির থাকবে (২ রাজা ১০:৩০)।
- ইস্রায়েলে অধিকাংশ রাজপরিবার এক দুই প্রজন্মের পরে আর স্থির হতে পারে নি, কিন্তু যেহূর রাজবংশ ইস্রায়েলে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রাজবংশ।
- ৮১৪-৭৯৮ খ্রীঃপূঃ রাজা যিহোয়াহস মন্দ যেহূ থেকে ১ম প্রজন্ম
- যখন সিরিয়া তাকে আক্রমণ করে, এই মন্দ রাজা ঈশ্বরকে ডাকেন এবং ঈশ্বর তাকে একজন “উদ্ধারকারী” দান করেন (২ রাজা ১৩:১-৬), যা সম্ভবত আসিরিয়ার রাজা আদাদ-নিরারীকে বুঝায়, যিনি ইস্রায়েলের শত্রু সিরিয়াকে পরাজিত করেছিলেন এবং এভাবে ইস্রায়েল কিছুটা রেহাই পেয়েছিল।
- ৭৯৬-৭৮২ খ্রীঃপূঃ রাজা যিহোয়াশ মন্দ যেহূ থেকে ২য় প্রজন্ম
- ৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ রাজা যারবিয়াম-২ মন্দ যেহূ থেকে ৩য় প্রজন্ম
২ রাজাবলি ১৪:২৫-২৭ পদ বলে যে, ইস্রায়েলের সবাই ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছিল এবং এর জন্য ঈশ্বর তাদেরকে একজন শক্তিশালী রাজা, অর্থাৎ যারবিয়াম-২কে দান করেছিলেন। ফলে যদিও যারবিয়াম মন্দ রাজা ছিলেন তবুও তিনি ঈশ্বরের সাহায্যে ইস্রায়েলের অনেক জমি পুনরায় দখল করতে সক্ষম হন, তিনি শান্তি রক্ষা করতে ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় মহাসড়কের উপরে নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে সক্ষম হন। ইস্রায়েল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নত হচ্ছে, কিন্তু শুধুমাত্র অল্প লোকেরা ধনী হয়ে যাচ্ছে। গরীবরা আরো গরীব হয়ে যায় এবং দুর্বলদের অধিকার সুরক্ষিত হয় না। এই ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুঅবস্থা’র কারণে ইস্রায়েলে একটি মিথ্যা আত্ম-নির্ভরশীলতা, নিরাপত্তার ভাব এবং একটি নকল ধার্মিকতা তৈরি হয়। ইস্রায়েলের লোকেরা দেবতাপূজারী (হোশেয় ২:১৬, ৪:১২) অথবা তারা ধর্মকর্ম করে (হোশেয় ৬:৪), কিন্তু একই সময়ে তারা মিথ্যা বলে, মিথ্যা শপথ করে, চুক্তি ভাঙ্গে, চুরি করে, ব্যভিচার ও খুন করে (হোশেয় ৪:১-২)। যারবিয়াম-২-এর রাজত্বের স্থিরতা প্রকৃতপক্ষে হল আগে রাজা যেহূদর বাধ্যতার কারণে ‘থেকে যাওয়া আশীর্বাদ’ মাত্র, এবং তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না
উত্তরে আসিরিয়া সাম্রাজ্য আরো শক্তিশালী হতে থাকে এবং ইস্রায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। আসিরিয়া সাম্রাজ্যে সেই যুগে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী রাজারা রাজত্ব করতে থাকেন: তিগ্লৎ-পিলেষর-৩ (৭৪৫-৭২৭ খ্রীঃপূঃ) যিনি উত্তরে সিরিয়া দেশ দখল করেন, সলমনেষর-১ (৭২৭-৭২২ খ্রীঃপূঃ) যিনি ইস্রায়েল দেশকে দখল করে রাজধাণী শমরিয়াকে ঘেরাও করেন, সোর্গন-২ (৭২২-৭০৫ খ্রীঃপূঃ) যিনি ইস্রায়েল ও শমরিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করে বাকি লোকদের নির্বাসিত করেন এবং সন্নহেরীব (৭০৫-৬৮১ খ্রীঃপূঃ) যিনি যিহূদা ও যিরূশালেমকে ভীষণ হুমকি দেন।
হোশেয় ও গোমরের সন্তানেরা
হোশেয় গোমরকে বিয়ে করেন এবং তাদের ৩জন সন্তান হয়, ২জন ছেলে এবং ১জন মেয়ে। ঈশ্বর নিজেই প্রত্যেকটি সন্তানের নাম দেন এবং তাদের নামের অর্থ হল ইস্রায়েলের কাছে এক একটি বাণী:
ছেলে যিষ্রিয়েল
“তুমি ওর নাম রাখ যিষ্রিয়েল, কারণ যিষ্রিয়েল শহরে অনেক লোককে যেহূ মেরে ফেলেছে বলে আমি তার বংশকে শীঘ্রই শাস্তি দেব এবং ইস্রায়েল রাজ্যকে শেষ করে দেব। সেই দিন আমি যিষ্রিয়েলের উপত্যকায় ইস্রায়েলের ধনুক ভেংগে ফেলব” (হোশেয় ১:৪-৫)।
যিষ্রিয়েল শব্দের অর্থ হল ‘ঈশ্বর বীজ বপন করেন’ বা ‘ঈশ্বর ছিটিয়ে দেন’। ইব্রীয় উচ্চারণে ‘যিষ্রিয়েল’ ও ‘ইস্রায়েল’ শব্দ দু’টি শুনতে প্রায় একই (ইস্রায়েল শব্দের অর্থ হল ‘ঈশ্বর সংগ্রাম করেন’)। যিষ্রিয়েল ছিল শারোণ উপতক্যায় গুল্বোয়ের পাহাড়ের কাছাকাছি ইষাখর গোষ্ঠির একটি শহর। যিষ্রিয়েল শহরে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল: মন্দ ইস্রায়েল রাজা আহাব সেখানে বাস করতেন (১ রাজা ২১:২) এবং দুর্ভিক্ষের শেষদিকে এলিয় ও আহাবের দেখা যিষ্রিয়েলে ঘটে। নাবোত, যার আঙ্গুর ক্ষেত আহাবের স্ত্রী ঈষেবল দখল করেন, হলেন সেই যিষ্রিয়েল শহরের বাসিন্দা এবং সেখানকার প্রাচীনেরা তাকে ইষেবলের চাপে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যিষ্রিয়েল হল সেই শহর যেখানে যেহূ ইস্রায়েলের রাজা অহসিয় এবং যিহূদার রাজা অমৎসিয়কে খুন করেন এবং যেখানে যেহূর আদেশে আহাবের সত্তরজন বংশধরদের শিরোচ্ছেদ করে মাথাগুলো দু’টি গাদা করে ফটকের পাশে রাখা হয় (২ রাজা ১০:১-১১)।
ঈশ্বর হোশেয় ১:৪-৫ পদে দু’টি ভবিষ্যদ্বাণী দেন:
- প্রথমত যে, শীঘ্রই যিষ্রিয়েলে যেহূর রক্তপাতের জন্য তার বংশকে শাস্তি দেওয়া হবে।
- দ্বিতীয়ত যে, ঈশ্বর যিষ্রিয়েলে ইস্রায়েলের ধনুক ভাঙ্গবেন।
প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী আগের একটি ঘটনার সাথে সম্পর্কিত: যেহূ ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে আহাবের রাজবংশ (২ রাজা ৯:৬-৮, ১০:১-১৭) এবং বাল দেবতার পূজা নির্মূল করেন (২ রাজা ১০:২৮)। যদিও যেহূ অন্য ক্ষেত্রে ভাল করেন না (তিনি বৈথেলের বাছুর পূজা বন্ধ করেন না) তবুও তার বাধ্যতার জন্য ঈশ্বর যেহূর কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তার ছেলেরা ৪র্থ পুরুষ পর্যন্ত সিংহাসনে বসবেন (২ রাজা ১০:৩০)। কিন্তু যেহূর বংশধরেরাও সব মন্দ, যেমন বর্তমান রাজা যারবিয়াম (যেহূ থেকে ৩য় পুরুষ)। যারবিয়াম ৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্বে মারা যাওয়ার পরে তার সন্তান সখরিয় রাজত্ব শুরু করেন (যেহূ থেকে ৪র্থ পুরুষ) কিন্তু শাল্লুম নামে একজন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাকে মেরে ফেলে সিংহাসন দখল করেন (২ রাজা ১৫:১১-১২, ৭৫২ খ্রীঃপূঃ)। এভাবে হোশেয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অল্প কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ণ হয়।
কেন ঈশ্বর যেহূর রাজবংশকে শীঘ্রই বিচার করবেন? বিচারের কারণ ঠিক কি, তার সরাসরি উল্লেখ নেই। হয়তো ঈশ্বর যেহূর রাজবংশকে বিচার করবেন কারণ যেহূ আহবের বংশের বিরুদ্ধে বিচার বাস্তবায়ন করার জন্য ঈশ্বরের হাতের যন্ত্র হওয়ার পরেও তিনি নিজেই ঈশ্বরের নিয়ম অমান্য করে বৈথেলের বাছুর পূজায় সমর্পিত ছিলেন – যে মানদণ্ড অন্যদের জন্য রাখেন, তা তিনি নিজেই পালন করেন না। অথবা যেহূ অতিরিক্ত রক্তপাত করেছিলেন বলে (যিহূদা রাজা অমৎসিয়কে মেরে ফেলার আদেশ ঈশ্বর দেন নি)। আবার হয়তো ঈশ্বর ৪জন পুরুষ পর্যন্ত দয়া দেখিয়েছেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেহূর রাজবংশের একজনও ভাল ছিল না।
দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী (যে ঈশ্বর ইস্রায়েলের ধনুক ভাঙ্গবেন) তা আসিরিয়ার রাজা শলমনেষর ও সোর্গন দ্বারা পূর্ণ হয়, যারা ৭২২ খ্রীষ্টপূর্ব ইস্রায়েল ও রাজধানী শমরিয়াকে আক্রমণ ও পরাজিত করেন (২ রাজা ১৭:৫-৬)। ইস্রায়েল দেশকে ধ্বংস করা হয় এবং যে লোকেরা বেঁচে থাকে, তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাসিত করা হয়। ঈশ্বর আসলে দেবতাপূজারী ইস্রায়েলীয়দেরকে ‘ছিটিয়ে দেন’ এবং তারা আর কখনও নিজের দেশে ফিরে আসে না। অনেক আগে মোশির আইন-কানুনে ঘোষণা করা হয়েছে যে, অবাধ্যতা, দেবতাপূজা ও অনুতাপ অগ্রাহ্য করার শেষ ফল হবে মৃত্যু ও প্রতিজ্ঞাত দেশ হারানো (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৬৩-৬৪, লেবী ২৬:৩৩) -এবং ঠিক তা ঘটতে যাচ্ছে। ভাববাদী হোশেয় এবং আমোষ হলেন ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের শেষ ডাক।
মেয়ে লো-রুহামা
“তুমি মেয়েটির নাম রাখ লো-রুহামা (যার মানে ‘দয়ার পাত্র নয়’), কারণ ইস্রায়েলের লোকদের আর আমি দয়া করব না, কোনমতেই তাদের ক্ষমা করব না। কিন্তু যিহূদার লোকদের দয়া করব এবং তাদের উদ্ধার করব। সেই উদ্ধার ধনুক, তলোয়ার কিম্বা যুদ্ধ অথবা ঘোড়া বা ঘোড়সওয়ার দিয়ে হবে না, বরং আমি তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তাদের উদ্ধার করব” (হোশেয় ১:৬-৭)।
ইস্রায়েল দেশের ধ্বংস আর পিছানো হবে না, কিন্তু এমন কি এই সময়েও ঈশ্বর অনুতপ্ত লোকদের রক্ষা করতে চান – তা না হলে তিনি বিচারের ঘোষণা কেন দেবেন?
নিশ্চিতভাবে ইস্রায়েলকে বিচার করা হবে, কিন্তু হোশেয় ঘোষণা করেন যে, যিহূদা রাক্ষা পাবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে হোশেয় ইস্রায়েলীয়দেরকে আহ্বান করেন যেন তারা নিজের দেশ ত্যাগ করে যিহূদা দেশে চলে আসে। ইস্রায়েলের ইতিহাসে আরো দুই বার উত্তর ইস্রায়েল থেকে ঈশ্বর ভক্ত লোকেরা দক্ষিণের যিহূদা দেশে চলে এসেছিল (২ বংশা ১১:১৩-১৭, ১৫:৮)। হোশেয়ের সময়ের পরেও রাজা হিষ্কিয় (২ বংশা ৩০:১১) এবং রাজা যোশিয় (২ রাজা ২৩:১৫-২০) চেষ্টা করেন, ইস্রায়েল এলাকায় যতজন এখনও পড়ে আছে, তাদেরকে যিহূদায় চলে আসার আহ্বান দিতে। বাইবেলে সরাসরি উল্লেখ করা হয় নি যে, হোশেয় ও আমোষের ভাববাণীতে সাড়া দিয়ে ইস্রায়েলীয়েরা যিহূদায় চলে এসেছিল। নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, উভয় ভাববাদী ইস্রায়েলের কাছে বাণী দেওয়ার পরে যিহূদার জন্যও বাণী দেন।
যখন রাজা সন্নহেরীবের নেতৃত্বে আসিরিয়ার সৈন্য ইস্রায়েল দেশকে নির্মূল করে তখন তারা যিহূদাকেও আক্রমণ করে, কিন্তু ঈশ্বর যিহূদাকে অতি শক্তিশালী ও অদ্ভূতভাবে উদ্ধার করেন (৭০১ খ্রীঃপূঃ, ২ রাজা ১৯:৩৫)।
ছেলে লো-অম্মি
“তুমি তার নাম রাখ লো-অম্মি (যার মানে ‘আমার লোক নয়’), কারণ তোমরা আমার লোক নও এবং আমিও তোমাদের ঈশ্বর নই” (হেশেয় ১:৮-৯)। এখানে অবশেষে ঈশ্বর তাঁর পক্ষ থেকে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন। অবশ্যই ইস্রায়েল প্রায় ২০০ বছর ধরেই (৯৩১ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে) ঈশ্বরকে আর তাদের কেন্দ্র হিসাবে মানে নি। তারা ঈশ্বরের আইন অমান্য করে চুক্তি ভেঙ্গে দিয়েছিল এবং তার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। অনেক বছর সুযোগ দেওয়ার ও ধৈর্য্য ধরার পরে ঈশ্বর অবশেষে রাজি হন, তিনি তাদেরকে আর ‘নিজের জাতি’ বলবে না। যে বিবাহ বিচ্ছেদে তারা চেয়েছে ও বাস্তবায়ন করেছে, অবশেষে তাতে ঈশ্বর রাজি হন।
ঈশ্বরের এই যন্ত্রণাপূর্ণ কথা ইস্রায়েলকে এই শেষ প্রান্তে ধাক্কা দিয়ে জাগানো উচিত। বহুবছর ধরে ঈশ্বরের বিশ্বস্ততা ও ধৈর্য্যশীল দয়া পেয়েছে বলে ইস্রায়েল ঈশ্বরকে আর ভয় পায় না, সম্মানও করে না। এখন বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা শুনে ইস্রায়েলের চেতনা হয়তো জাগবে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ইস্রায়েল দেশ হিসাবে চেতনায় সাড়া দেয় নি, কিন্তু হয়তো কিছু ভক্ত লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে সাড়া দিয়েছিল।
যিহূদার জন্য এই কথাটি হল সাবধানবাণী: তারা যদি ইস্রায়েলের মত ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করতে থাকে, তবে তারাও এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যেখানে ঈশ্বর শেষে তাদের বিচ্ছেদের দাবিতে রাজি হবেন – সেখানে না গেলে ভাল!
হোশেয়ের সন্তানদের নাম যে, চিরকাল নেতিবাচক নাম থাকবে, তা না। যখন তার লোকেরা ঈশ্বরের প্রতি সাড়া দেবে তখন তাদের নাম ঠিক বিপরীত হয়ে যাবে: ঈশ্বর লো-রুহামাকে (‘দয়া আর করব না’) রুহামা (‘দয়ার পাত্র’) এবং লো-অম্মিকে (‘আমার লোক নয়’) অম্মি (‘আমার লোক’) বলবেন এবং তারা বলবে “তুমিই আমাদের ঈশ্বর” (হোশেয় ২:২৩)।
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে তার দোষ দেখিয়ে দেন
ভাববাদী হোশেয় ইস্রায়েল জাতির কাছে খুব পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেন তাদের পাপ ঠিক কি, অর্থাৎ কোন আচরণ ঈশ্বর মেনে নিতে পারেন না। নিচে কয়েকটি পাপের কথা বলা হয়েছে:
নৈতিকতা ও নেতৃত্ব ভেঙ্গে যাচ্ছে
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির দোষ ধরেন: “দেশে বিশ্বস্ততা ও অটল ভালবাসা নেই এবং ঈশ্বরকে কেউ সত্যিকারভাবে জানে না; আছে কেবল শপথ ভাংগা, মিথ্যা কথা বলা, খুন করা, চুরি করা ও ব্যভিচার করা। তারা আইন অমান্য করে এবং রক্তপাতের উপরে রক্তপাত করে। এইজন্য দেশ শোক করছে এবং যারা তার মধ্যে বাস করে তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং পশু, পাখী ও মাছ মরে যাচ্ছে” (হোশেয় ৪:১-৩)।
তিনি আত্মিক নেতাদের, অর্থাৎ পুরোহিত ও ভাববাদীদের দোষ ধরেন: “ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবে আমার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তোমরা সেই জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেছ বলে আমিও আমার পুরোহিত হিসাবে তোমাদের অগ্রাহ্য করলাম। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরের আইন-কানুন ভুলে গেছ, তাই আমিও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভুলে যাব। … হে পুরোহিতেরা, তোমরা এই কথা শোন। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, মনোযোগ দাও। হে রাজবংশ, কান দাও। এই রায় তোমাদেরই বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে, কারণ তোমরা মিসপাতে ফাঁদের মত আর তাবোরে মেলে দেওয়া জালের মত হয়েছিলে” (হোশেয় ৪:৪-৬, ৫:১)। ঈশ্বর পুরোহিতদের ভূমিকা দিয়েছিলেন যেন তারা আদর্শ হন এবং লোকদের কাছে ঈশ্বরের আইন-কানুনের বিষয়ে শিক্ষা দেন। কিন্তু তারা উভয় ভূমিকার ক্ষেত্রে একদম ব্যর্থ হয়েছে।
ঈশ্বর একইভাবে রাজনৈতিক নেতাদের, অর্থাৎ রাজা, রাজপুত্রদের ও কর্মচারীদের দোষ ধরেন: “হে রাজবংশ, কান দাও। এই রায় তোমাদেরই বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে, কারণ তোমরা মিসপাতে ফাঁদের মত আর তাবোরে মেলে দেওয়া জালের মত হয়েছিলে। … যারা সীমানার পাথর সরায় যিহূদার নেতারা তাদেরই মত। আমার ক্রোধ আমি বন্যার জলের মতই তাদের উপর ঢেলে দেব। … তাদের দুষ্টতা দিয়ে তারা রাজাকে এবং মিথ্যা কথা দিয়ে রাজকর্মচারীদের আনন্দিত করে। … আমার নির্দেশ ছাড়াই তারা রাজাদের নিযুক্ত করেছে; আমার অনুমতি ছাড়াই তারা নেতাদের বেছে নিয়েছে” (হোশেয় ৫:১, ৪:৪, ৫:১০, ৭:৩, ৮:৪)। ঈশ্বর রাজাকে বা সরকারকে লোকদের জন্য ভাল রাখাল হতে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার ভূমিকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ফলে আইন অমান্য করা সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে: “যখনই আমি আমার লোকদের অবস্থা ফিরাতে চাই, যখনই ইস্রায়েলকে সুস্থ করতে চাই, তখনই ইফ্রয়িমের পাপ দেখা যায় আর শমরিয়ার অন্যায় প্রকাশিত হয়। তারা ছলনা করে, ঘরে চোর ঢোকে আর বাইরে ডাকাতেরা লুটপাট করে … কিন্তু তোমরা তো দুষ্টতা লাগিয়েছ, মন্দের ফসল কেটেছ আর ছলনার ফল খেয়েছ” (হোশেয় ৭:১, ১০:১৩)।
রাজা যারবিয়াম-২-এর পরে ইস্রায়েল আর মাত্র ৩০ বছর টিকে থাকে। সেই ৩০ বছরে ইস্রায়েল দেশ অস্থির অবস্থা থেকে আরো অস্থিরতায় পড়ে, বিদ্রহের উপরে বিদ্রোহ ঘটে, একজনের পর একজন রাজাকে খুন করে সরানো হয় এবং দেশে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকে – এমন সময় পর্যন্ত যখন আসিরিয়া সাম্রাজ্য এসে দেশকে ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে।
দেবতা পূজা ও মিশানো ধর্ম
“সোনা ও রূপা দিয়ে তারা প্রতিমা তৈরী করে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। হে শমরিয়া, আমি তোমার বাছুর-প্রতিমা অগ্রাহ্য করেছি। … সেই বাছুর ইস্রায়েলের লোকেরাই তৈরী করেছে। একজন কারিগর সেটা গড়েছে; ওটা তো ঈশ্বর নয়। শমরিয়ার ঐ বাছুরটাকে ভেংগে টুকরা টুকরা করা হবে … ইস্রায়েলীয়দের গ্রাস করা হয়েছে; বাজে জিনিসের মতই তারা এখন বিভিন্ন জাতির মধ্যে রয়েছে … ইস্রায়েলের লোকেরা নিজেদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে বড় বড় বাড়ী তৈরী করেছে … কিন্তু আমি তাদের শহরগুলোর উপরে আগুন পাঠাব যা তাদের সব দুর্গ পুড়িয়ে ফেলবে” (হোশেয় ৮:৪-৬,৮,১৪)। বাছুর-প্রতিমা প্রকৃতপক্ষে শমরিয়া শহরে ছিল না বরং বৈথেল শহরে ছিল, কিন্তু শমরিয়া যেহেতু ইস্রায়েল দেশের রাজধানী, একারণে এখানে ইস্রায়েল দেশকে রূপকভাবে বুঝানোর জন্য শমরিয়া উল্লিখিত।
“ইস্রায়েল আমার কাছে কেঁদে কেঁদে বলেছে, ‘হে আমার ঈশ্বর, আমরা তোমাকে স্বীকার করছি।’ কিন্তু যা ভাল ইস্রায়েল তা অগ্রাহ্য করেছে, তাই শত্রু তার পিছনে তাড়া করবে … তারা আমার উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করে তার মাংস খায় কিন্তু আমি সদাপ্রভু তাদের উপর সন্তুষ্ট নই … তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আংগুর-রস দিয়ে ঢালন-উৎসর্গ করবে না এবং তাদের পশু-উৎসর্গগুলোও তাঁকে সন্তুষ্ট করবে না। ঐ রকম উৎসর্গ তাদের কাছে শোক প্রকাশকারীদের খাবারের মতই হবে; যারা তা খাবে তারা সবাই অশুচি হবে। সেই খাবার তাদের নিজেদের খিদে মিটাবার জন্যই হবে, তা সদাপ্রভুর ঘরে আসবে না। তাদের পর্বের দিনে ও সদাপ্রভুর উৎসব-দিনে তারা কি করবে?” (হোশেয় ৮:২-৩,১৩, ৯:৪-৫)।
এই পদগুলো থেকে বুঝা যায় যে, ইস্রায়েলীয়েরা দাবি করে যে তারা বৈথেলের বাছুর পূজা ও সেখানে উৎসর্গ ও পর্ব পালনের মধ্য দিয়ে ‘সদাপ্রভুকে স্বীকার’ করছে – ঈশ্বর এই ভুল চিন্তা হোশেয়ের এই বাণীর মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে দেন। ঈশ্বর বৈথেলের পূজা একেবারে নির্মূল করবেন, এই ধ্বংসবাণী পরবর্তীতে যিহূদার রাজা যোশিয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হয় (৬৪০-৬০৯ খ্রীঃপূঃ)।
জেনে বুঝে সত্যকে অগ্রাহ্য
সমস্যা হল যে, ইস্রায়েল জাতি একেবারে অনিচ্ছুক “তোমরা সেই জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেছ বলে আমিও আমার পুরোহিত হিসাবে তোমাদের অগ্রাহ্য করলাম … তারা কাঠের প্রতিমার কাছে পরামর্শ চায় আর কাঠের লাঠি তাদের নির্দেশ দেয় … ইস্রায়েলীয়েরা একগুঁয়ে গাভীর মত … ইফ্রয়িম প্রতিমাদের সংগে যোগ দিয়েছে … লোকেরা আমার দেওয়া ব্যবস্থা অমান্য করেছে এবং আমার আইন-কানুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে … যা ভাল ইস্রায়েল তা অগ্রাহ্য করেছে … ইস্রায়েলীয়েরা মন ফিরাতে রাজী হয় নি” (হোশেয় ৪:৬,১২,১৬-১৭, ৮:১,৩, ১১:৫)। এর জন্য “ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবে আমার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে” (হোশেয় ৪:৬)।
ইস্রায়েল মুখে মুখে অনুতপ্ত হয় “চল, আমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরে যাই। তিনিই আমাদের টুকরা টুকরা করেছেন, তিনি আমাদের সুস্থও করবেন; তিনিই আমাদের আঘাত করেছেন, তিনি আমাদের ঘা বেঁধেও দেবেন … চল, আমরা সদাপ্রভুকে স্বীকার করে নিই; তাঁকে জানবার জন্য তাঁর পিছনে দৌড়াই। সূর্য ওঠার মত তিনি নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবেন; বৃষ্টির মত করে, বসন্তকালের মাটি ভেজানো বৃষ্টির মত করে তিনি আসবেন” (হোশেয় ৬:১,৩)। কিন্তু অনুতাপের কোন গভীরতা নেই: “হে ইফ্রয়িম, আমি তোমাকে নিয়ে কি করব? হে যিহূদা, তোমাকে নিয়েই বা আমি কি করব? তোমার বিশ্বস্ততা সকালের কুয়াশার মত, তা ভোরের শিশিরের মত যা তাড়াতাড়ি অদৃশ্য হয়ে যায়” (হোশেয় ৬:৪)। এই মনোভাব দেখে ঈশ্বর আর কি করবেন? এভাবে আমরা হোশেয় পুস্তকের সবচেয়ে দুঃখের পদ পাই: “ইফ্রয়িম প্রতিমাদের সংগে যোগ দিয়েছে; তাকে তা-ই করতে দাও” (হোশেয় ৪:১৭)।
দেবতা পূজা, অর্থাৎ জেনে বুঝে ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করা মানে জ্ঞান ও চেতনার রবের বিরুদ্ধে যাওয়া। অন্য দেব-দেবতা পূজা করা মানে জঘণ্য কিছুকে (যেমন ব্যভিচারী দেবী বা রক্ত খাওয়া দমনকারী দেব) সত্য ঈশ্বরের উপরে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সেই নিচু দেব-দেবতাদের পূজা করলে তা সমাজেও রাজত্ব করবে। ফলে অনৈতিকতা, পরিবারের ভাঙ্গন, অন্যায়-অবিচার, বিশৃঙ্খলা, নির্যাতন ইত্যাদি দেখা দেবে এবং বিশেষভাবে দুর্বলদের খুব ক্ষতি হবে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মৈত্রী চুক্তি
হোশেয় যখন ‘ইস্রায়েলের ব্যভিচার’ নিয়ে কথা বলেন, তিনি বেশিরভাগ সময়ে ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করা তাঁর পরিবর্তে দেবতা পূজা করাকে বুঝান। কিন্তু তিনি ‘ব্যভিচার’ শব্দটি আর একটি রূপক অর্থে ব্যবহার করেন: ইস্রায়েল যখন রাজনৈতিক সংকটের সময়ে ঈশ্বরের উদ্ধারের উপর নির্ভর না করে বরং নিজের বুদ্ধিতে অন্য জাতিদের সাথে মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করে: “ইফ্রয়িম যখন তার রোগ দেখতে পেল আর যিহূদা দেখতে পেল তার ঘা তখন ইফ্রয়িম আসিরিয়ার দিকে ফিরে সাহায্যের জন্য সেই মহা রাজার কাছে লোক পাঠাল … ইফ্রয়িম যেন একটা অবুঝ কবুতর; সে একেবারে বুদ্ধিহীন। একবার সে মিসরকে ডাকে আর একবার যায় আসিরিয়ার কাছে … একা একা ঘুরে বেড়ানো বুনো গাধার মতই তারা আসিরিয়া পর্যন্ত গেছে। ইফ্রয়িম টাকা দিয়ে প্রেমিকদের এনেছে। যদিও তারা বিভিন্ন জাতির সংগে টাকা দিয়ে বন্ধুত্ব করেছে তবুও এখন আমি তাদের একসংগে জড়ো করে শাস্তি দেব। তারা শাসনকর্তাদের রাজার অত্যাচারের তলায় ক্ষয় হয়ে যাবে” (হোশেয় ৫:১৩, ৭:১১, ৮:৯-১০)। ঈশ্বর তাদের দোষ ধরেন: “তারা সবাই তুন্দুরের মত গরম হয়েছিল এবং তাদের শাসনকর্তাদের তারা আগুনের মত গ্রাস করেছিল। তাদের রাজারা সবাই মারা পড়ে; তারা কেউই আমাকে ডাকে না … ইস্রায়েলের অহংকার তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে, কিন্তু এই সব হলেও সে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরছে না, তাঁর দিকে মনোযোগও দিচ্ছে না … তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আমি তাদের মুক্ত করতে চাই কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে” (হোশেয় ৭:৭,১০,১৩)
এই মনোভাব থেকে যদি তারা অনুতপ্ত হত তবে এই ধরণের কথা বলত: “আসিরিয়া আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না; আমরা যুদ্ধের ঘোড়ার উপর নির্ভর করব না। আমাদের নিজের হাতে তৈরী প্রতিমাগুলোকে আমরা আর কখনও বলব না, ‘আমাদের দেব-দেবতা” (হোশেয় ১৪:৩)। এই পদে ‘ব্যভিচার’ শব্দটির উভয় রূপক অর্থে ব্যবহৃত: দেবতা পূজা এবং রাজনৈতিক মৈত্রী চুক্তি।
এর জন্য: বিচার নিশ্চিত আসবে
এসব কারণে এবং মনেপ্রাণের অনুতাপ না পেয়ে ঈশ্বর ভাববাদী হোশেয়কে (যেমন সমসাময়িক ভাববাদী আমোষকেও) ইস্রায়েলের চূড়ান্ত ধ্বংসের ঘোষণা করতে বলেন: “তারা তো বাতাস বোনে আর শেষে ঘূর্ণিঝড় কাটে … ইস্রায়েলীয়দের গ্রাস করা হয়েছে; বাজে জিনিসের মতই তারা এখন বিভিন্ন জাতির মধ্যে রয়েছে … এখন আমি তাদের দুষ্টতার কথা স্মরণ করে তাদের পাপের শাস্তি দেব; তারা মিসরে ফিরে যাবে … তারা সদাপ্রভুর দেশে থাকবে না; ইফ্রয়িম মিসরে ফিরে যাবে এবং আসিরিয়ার অশুচি খাবার খাবে … ইস্রায়েল যেন জেনে রাখে যে, শাস্তির দিন এসে গেছে, হিসাব-নিকাশের দিন উপস্থিত হয়েছে … তার লোকদের অন্তর অবিশ্বস্ত; সেইজন্য এখন তাদের দোষের বোঝা বইতে হবে। সদাপ্রভু তাদের বেদীগুলো ভেংগে ফেলবেন এবং তাদের পূজার পাথরগুলো নষ্ট করে দেবেন … শমরিয়ায় বাসকারী লোকেরা বৈৎ-আবনের বাছুর-প্রতিমার জন্য ভয় পেয়েছে … সেটা আসিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মহারাজার কর্ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। সেইজন্য ইফ্রয়িম অসম্মানিত হবে, ইস্রায়েল তার নিজের পরিকল্পনার জন্য লজ্জা পাবে” (হোশেয় ৮:৭-১৩, ৯:৩,৭, ১০:২-৬)।
এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয় যখন আসিরিয়া সাম্রাজ্য ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে ইস্রায়েল দেশকে চূড়ান্তভাবে দখল, পরাজিত ও ধ্বংস করে এবং বাকি লোকদেরকে নির্বাসিত করে। “মিসরে ফিরে যাবে” এই কথাটি রূপকভাবে ‘দাসত্বে ও বন্ধনে ফিরে যাওয়া’। “বৈৎ-আবন” (যার অর্থ ‘অসারতার ঘর’) এখানে বৈথেলকে বুঝায়, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় বাছুর পূজার কেন্দ্র।
তারপরেও ঈশ্বর একটি উদ্ধারের প্রতিজ্ঞা দেন
“হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে তোমরা ফিরে এস। তোমাদের পাপের জন্যই তোমাদের পতন হয়েছিল। তোমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরে এসে তাঁকে বল, “আমাদের সব পাপ ক্ষমা কর” (হোশেয় ১৪:১-২)। হোশেয় তার পুস্তকে ২০ বারের চেয়েও বেশি বার ইস্রায়েলকে মন ফিরাতে বলেন অথবা অনুতাপের প্রার্থনা তাদের মুখে দিতে চেষ্টা করেন।
তার পুস্তকের শেষে তিনি একটি অতি সুন্দর আশারবাণী দেন: “আমি তাদের বিপথে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনব এবং কোন শর্ত ছাড়াই তাদের ভালবাসব, কারণ আমার ক্রোধ তাদের উপর থেকে সরে গেছে। আমি ইস্রায়েলের কাছে শিশিরের মত হব; সে লিলি ফুলের মত ফুটবে …” (হোশেয় ১৪:৪-৭)। ইতিমধ্যে হোশেয় ১:১০-১১ পদে একটি আশার বাণী পাওয়া যায়: “তবুও ইস্রায়েলীয়েরা সাগর-পারের বালুকণার মত হবে, যা মাপা যায় না, গোণাও যায় না। যে জায়গায় তাদের বলা হয়েছিল, ‘তোমরা আমার লোক নও,’ সেখানে তাদের বলা হবে, ‘জীবন্ত ঈশ্বরের সন্তান।’ যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকেরা আবার মিলিত হবে এবং তাদের উপরে একজন নেতাকে নিযুক্ত করবে। তার আগে যে দেশে তারা বন্দী ছিল সেখান থেকে তারা চলে আসবে, কারণ যিষ্রিয়েলের সেই দিনটা হবে মহৎ।”
কিন্তু বাণীটি কি বুঝায়? তা কি ইতিহাসে কখনও পূর্ণ হয়? হয়তো কিছু ইস্রায়েলীয়েরা হোশেয়ের বাণী শুনে ইস্রায়েল দেশ ত্যাগ করে যিহূদা দেশে চলে গিয়েছে, কিন্তু দেশ হিসাবে ইস্রায়েল ৭২২ খ্রীষ্টপূ্র্বে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়, তার লোকদেরকে মেরে ফেলা হয় এবং যতজন বেঁচে ছিল ততজনকে জোর করে অন্যান্য দেবতাপূজারী জাতিদের মধ্যে নিরবাসিত করা হয়। তারা তাদের সাথে মিশে যায় এবং ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে যিহূদার লোকদেরকেও নির্বাসিত করা হয়, তারা ফিরে আসার সুযোগও পায়, কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদা ইতিহাসে আর কখনও যুক্ত হয় না। তাহলে এই ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পূর্ণ হয়?
কেউ কেউ বলে যে, হয়তো ইস্রায়েলের কিছু লোক যিহূদা দেশে চলে গিয়েছে এবং তাদের বংশধরেরা যিহূদার নির্বাসনের পরে ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে সরুব্বাবিলের নেতৃত্বে প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে (ইষ্রা ১ দেখুন)। আবারও কেউ কেউ বলে যে, ঈশ্বরের এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয় নি, এর অর্থ এই যে তা ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে ঘটবে।
কিন্তু এই ব্যাখ্যার চেয়ে সম্ভাবনা বেশি যে, ভবিষ্যদ্বাণীটি হল যীশু যা মানব জাতির জন্য অর্জন করেছেন, তার একটি রূপক বর্ণনা: “তবুও ইস্রায়েলীয়েরা সাগর-পারের বালুকণার মত হবে, যা মাপা যায় না, গোণাও যায় না” কথাটি অবশ্যই অব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়ে দেয় (আদি ১৫:১-৬) এবং তার কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দেন যে, তিনি পৃথিবীর সব জাতিদের জন্য আশীর্বাদ হবেন (আদি ১২:১-৩)। তা অব্রাহামের বংশধর যীশুর মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে পূর্ণ হয়েছে (গালা ৩:১৬)। সেই অসংখ্য লোক তাহলে বিশ্বাসীদেরকে বুঝায়, যারা যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ লাভ করেছে ও করছে।
হোশেয় ১:১০-১১ পদগুলোতে আমরা দেখি ঈশ্বর কিভাবে হোশেয়ের সন্তানের নাম ‘যিষ্রিয়েল’ নেতিবাচক অর্থকে ইতিবাচক অর্থে পরিণত করেন: যিষ্রিয়েলের নামের অর্থ হল ‘ঈশ্বর ছিটিয়ে দেন’ (ঈশ্বর ইস্রায়েল দেশকে জাতিদের মধ্যে ছিটিয়ে দেন) কিন্তু এই নামের আর একটি অর্থ হল ‘ঈশ্বর বীজ বপন করন’। এখানে এই ইতিবাচক অর্থ ব্যবহার করে ঈশ্বর বলেন যে, তার বাক্যকে বীজের মত অনেক জায়গায় বপন করা হবে (সুসমাচার জাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে) এবং অসংখ্য ফসল উঠে আসবে। “সেখানে তাদের বলা হবে, ‘জীবন্ত ঈশ্বরের সন্তান।” হ্যাঁ, অনেক মানুষকে খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সন্তান বলে গ্রহণ করা হবে। “যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকেরা আবার মিলিত হবে” এইটা হল খ্রীষ্টেতে সমস্ত পার্থক্য ও বিভেদ বাদ যাওয়ার একটি ছবি (ইফিষীয় ২:১১-১৪)। “তার আগে যে দেশে তারা বন্দী ছিল সেখান থেকে তারা চলে আসবে” বা “তারা দেশের অধিকারী হবে” (ইংরেজি অনুবাদ), এটা হল পরিত্রাণের একটি ছবি, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের সন্তান ও উত্তরাধিকারী হয় (ইব্রীয় ৪)। এছাড়া এটি ঈশ্বরের রাজ্যেরও একটি ছবি: সুসমাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আরো অনেক লোক বিশ্বাসে ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হয় এবং রাজ্যটি বিভিন্ন জাতিদের মধ্যে স্থাপিত হয়। “তাদের উপরে একজন নেতাকে নিযুক্ত করবে” তা যীশুকে বুঝায়, যিনি মণ্ডলীর মাথা এবং হ্যাঁ, “তোমাদের ভাইদের তোমরা বলবে অম্মি (যার মানে ‘আমার লোক’) আর বোনদের বলবে রুহামা (যার মানে ‘দয়ার পাত্র’)” (হোশেয় ২:১)। যীশুর মধ্য দিয়েই আমরা ঈশ্বরের আপন লোক বা ঈশ্বরের মনোনীত জাতি হয়ে যায়, অর্তাৎ তাঁর দয়ার অধীনে থাকা সন্তান।
ঈশ্বরের গভীর প্রেম যখন বুঝতে পারি তখন ভাববাদীদের কথাগুলো বুঝব। ঈশ্বর তার লোকদেরকে ভালবাসেন বলে, তারা কিভাবে জীবন-যাপন করবে, ঈশ্বর তা আগ্রহের সঙ্গে দেখেন। পিতা হিসাবে ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রতি অতি আকাঙ্ক্ষী ও আশাবাদী। এমন কি যখন তারা কঠিন হৃদয়ের লোক হয়ে যায় এবং তাকে অগ্রাহ্য করে খারাপের দিকে যায়, তখনও ঈশ্বর তাদেরকে ছেড়ে দিতে রাজি না। হোশেয় ও আমোষ, এই দু’জন ভাববাদী একসাথে হলেন ইস্রায়েল দেশের কাছে ঈশ্বরের শেষ ডাক। আমোষ ধারালো ও শক্তিশালী বাণী দিয়ে চেতনার কামড় দেন, যাতে ঈশ্বরের দয়া ও ন্যায্যতা প্রকাশিত। হোশেয় হৃদয় স্পর্শ করার বাণী দেন। তিনি ঈশ্বরের নম্র, ক্ষমাশীল ও ইচ্ছুক হৃদয় অতি আবেগ প্রবণভাবে প্রকাশ করেন। হোশেয় যীশুর মত, যিনি যিরূশালেমের জন্য কান্না করেন জেনে যে, তার ধ্বংস কাছে এসে গেছে (লূক ১৯:৪১-৪৪)।
Coming.