হবক্কূক পুস্তক অন্য সব ভাববাদীদের লেখার চেয়ে একটু বিশেষ ধরণের। কারণ হবক্কূক যিহূদার কাছে, ইস্রায়েলের কাছে বা অন্য কোনো জাতির কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো বাণী বলেন না বরং তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তার নিজের একটি সংগ্রাম বর্ণনা করেন। যখন হবক্কূক জগতের মন্দ বাস্তবতার সম্মুখীন হন, তখন তিনি ঈশ্বরের বিচার দাবি করেন। কিন্তু একই সঙ্গে ঈশ্বরের বিচারের কথা শুনে তিনি আবার আপত্তিও উঠান। পুস্তকটিতে তিনি ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাঁকে দোষও দেন এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে উত্তরও পান। তাই হবক্কূক পুস্তক পড়া মানে, একজন খুব সৎ লোকের ব্যক্তিগত প্রার্থনা পড়া, দিনলিপিতে তার সংগ্রামের একটি বর্ণনা পড়া। হবক্কূক তার ব্যক্তিগত সংগ্রামে এমন কিছু প্রশ্ন, অভিযোগ ও আপত্তি উঠান, যা তার সমসাময়িক অধিকাংশ লোকদের অন্তরেও চলছিল। এমন কি, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রত্যেক মানুষের অন্তরে সেই একই প্রশ্ন, অভিযোগ ও আপত্তি চলছে। জগতের মন্দ বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে হবক্কূকের অন্তরে যে সংগ্রাম দেখা দেয়, তা প্রত্যেক যুগের মানুষের অন্তরেও একইভাবে হয়। তাই বিভিন্ন যুগের মানুষেরা হবক্কূক পুস্তক থেকে সান্ত্বনা পায়।
হবক্কূক তার পুস্তকে কোনো রাজার নাম উল্লেখ করেন না, কিন্তু পুস্তকটিতে তার প্রশ্নের ধরণ এবং ঈশ্বরের পরিকল্পনা শুনে তার হতভম্ব হওয়া থেকেই পুস্তকের লেখার তারিখ অনুমান করা যায়। রাজা যোশিয় (৬৪০-৬০৯ খ্রীঃপূঃ) ছিলেন যিহূদা রাজ্যের শেষ ঈশ্বর ভক্ত শাসনকর্তা। তার রাজত্বের সময়ে যিহূদার অবস্থা আরো একবার ভালদিকে যাচ্ছিল। যখন যোশিয় মারা যান, হবক্কূক দেখেন কিভাবে তার দেশের বিপরীতমুখী পরিবর্তন হয় এবং কিভাবে তার জাতি অনেক তাড়াতাড়ি গভীর দেবতাপূজায় ও সামাজিক অন্যায়ে নেমে যায়। হবক্কূক ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন: ‘কেন তুমি কিছু কর না?’ (হব ১:২-৪)। ঈশ্বর উত্তরে বলেন যে, তিনি ঠিকই কিছু করবেন: যিহূদাকে তার মন্দতার জন্য বিচার করে তিনি তাদেরকে বাবিলীয়দের হাতে পড়তে দেবেন (হব ১:৫-১১)। তা শুনে হবক্কূক হতভম্ব হয়ে আবারও ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন, কিন্তু এইবার তিনি উল্টো বলেন: ‘কি করে সম্ভব যে, তুমি এমন একটি জাতি দ্বারা যিহূদাকে বিচার করবে যারা যিহূদার চেয়েও মন্দ?’ (হব ১:১২-২:১)। হবক্কূকের কথা থেকে বুঝা যায় যে, বাবিল ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী ও ভয়ংকর সাম্রাজ্য হিসাবে পরিচিত, কিন্তু তারা এলাকাটি এখনও দখল করতে শুরু করে নি। তাই পুস্তকের তারিখ হল ৬০৯-৬০৫ খ্রীষ্টপূর্ব। বাবিল যে যিহূদাকে দখল করবে, হবক্কূকের এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রথম বার ৬০৫ খ্রীষ্টপূর্বে পূর্ণ হয়। ঈশ্বর হবক্কূকের কান্নার উত্তরে বলেন যে, তিনি বাবিলকেও তার মন্দতার জন্য বিচার করবেন – যতজন মন্দ কাজ করে, ততজনকে তিনি অবশ্যই বিচার করবেন (হব ২:২-২০)।
হবক্কূকের এই সংগ্রাম হল পুরাতন একটি সংকট: যখন আমরা দেখি যে, মন্দরা যা চায় তা-ই করে তখন আমরা মনে করি মন্দ কাজ ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত। ফলে আমরা ঈশ্বরের ন্যায্যতা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করি। কিন্তু যদি ঈশ্বর বিচার করেন, তবে আমরা ঈশ্বরের ন্যায্যতা নিয়ে উল্টাভাবে সন্দেহ করতে শুরু করি এবং বলি যে, মানুষকে শাস্তি দেওয়া তাঁর ঠিক হয় নি। প্রকৃতপক্ষে আমরা ন্যায্য নই যদি আমরা ঈশ্বরের দোষ ধরি যখন তিনি কিছু না করেন এবং একই মুহূর্তে তাঁর দোষ ধরি যখন তিনি কিছু করেন। আমরা ন্যায্য নই যখন আমরা দাবি করি যে, ঈশ্বর আমাদেরকে দয়া করেন এমন মন্দ কাজের জন্য, যদি আমাদের বিরুদ্ধে কেউ তা করত, তবে আমরা বিচার চাইতাম।
ঈশ্বর হবক্কূককে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি বিচারে সম্পূর্ণ ন্যায্য। তিনি বিচার ঠিকই করেন কারণ যদি অন্যায় বেশিদিন ধরে চলতে থাকতে দেওয়া হয় তবে তা দয়া নয়। এছাড়া ঈশ্বর হবক্কূকের কাছে প্রকাশ করেন যে, এর চেয়ে মহান কিছু আসবে: “এই দর্শনের কথা লেখ এবং পাথরের ফলকের উপরে স্পষ্টভাবে খোদাই কর … যাতে তা সহজে পড়া যায় … দেরি হলেও তার জন্য অপেক্ষা কর; তা ঠিক সময়ে নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুমি এই কথা লেখ: “অহংকারী বাবিল সৎ নয়, কিন্তু যাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় সে তার বিশ্বস্ততার দরুন বেঁচে থাকবে” (হব ২:২-৪)। ঈশ্বর একদিন মন্দতার বিষয়টি আরো অনেক ভিত্তিকভাবে হাতে নেবেন এবং তার সমাধান করবেন। তিনি বিশ্বস্ততা (বা বিশ্বাস) দ্বারাই নির্দোষ লোকদেরকে বাঁচতে দেবেন। এই পদ (হব ২:৪) হল হবক্কূক পুস্তক থেকে নতুন নিয়মে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃতি করা পদ (রোম ১:১৭, গাল ৩:১১, ইব্রীয় ১০:৩৯)। পৌল তা উদ্ধৃতি করে বলেন যে, যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর মন্দকে শুধুমাত্র যে, বিচার করবেন (যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু) তা নয় বরং তিনি ইচ্ছুকদের জন্য গ্রহণযোগ্য বা ধার্মিক হওয়ার পথও খুলে দেবেন (যীশুতে পরিত্রাণ)। যীশুতে পরিত্রাণ মানে ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য বা ধার্মিক হওয়া এবং সেই সাথে পরিবর্তিতও হওয়া, যেন ঈশ্বরের জ্ঞান ও তাঁর জন্য ভালবাসা ভরা একটি জীবন সম্ভব হয়: “সমুদ্র যেমন জলে ভরা থাকে তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমার জ্ঞানে পরিপূর্ণ হবে” (হব ২:১৪)। দেবতাপূজা করলে তা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে (হব ২:১৮-২৯) এবং ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় রাজত্ব করবে (হব ২:২০)।
ঈশ্বরের কাছ থেকে এই প্রকাশ পেয়ে হবক্কূকের উপর ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় আসে। তার এই পরিবর্তিত মনোভাব তার প্রার্থনায় স্পষ্টভাবে বুঝা যায় (হব ৩:১-১৯)। তিনি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কাজের কথা শুনে ভয় পেলাম”। কিন্তু এখন তিনি ঈশ্বরের কাজ আরো অনেক ভালভাবে বুঝতে পারেন এবং ফলে তিনি ঈশ্বরের কাজ, শক্তিশালী হাত, তাঁর পথ এবং এমন কি তাঁর বিচার চাইতেও শিখেছেন: “হে সদাপ্রভু, আমাদের কালে সেগুলো তুমি আবার কর; আমাদের সময়ে তুমি সেগুলো দেখাও। ক্রোধের সময় তুমি মমতা করবার কথা ভুলে যেয়ো না” (হব ৩:২)। হবক্কূক নম্র হয়ে ঈশ্বরের ক্ষমতা ও পৃথিবীতে তাঁর আশ্চর্য কাজ বুঝতে পেরেছেন (হব ৩:৩-১৫)। তিনি জানেন যে, তার জাতি শীঘ্রই অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাবে, কিন্তু তিনি এখন কষ্টের মধ্যেও ঈশ্বরের হাত বুঝতে পারেন এবং তার বিশ্বাস আছে যে, ঈশ্বর অবশেষে অত্যাচারীদেরকেও বিচার করবেন “তবুও আমি সেদিনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব যেদিন আমাদের আক্রমণকারীদের উপর বিপদ আসবে” (হব ৩:১৬)। তিনি জানেন যে, অল্পক্ষণের মধ্যে খুব ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে এবং অভাবের একটি সময় আসবে, কিন্তু এখন তিনি তা মানুষের পাপের ফলাফল হিসাবে দেখেন, তিনি তা নিয়ে ঈশ্বরকে আর দোষারোপ করেন না। অপর পক্ষে, তিনি নিশ্চয় জানেন যে, তাও ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু নয় “যদিও ডুমুর গাছে কুঁড়ি ধরবে না… যদিও জলপাই গাছে ফল ধরবে না… তবুও আমি সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ করব, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়ে খুশী হব” (হব ৩:১৭-১৮)। যিহূদা দেশে শীঘ্রই যত ভয়ংকর ঘটনাই ঘটুক না কেন (বাবিলের আক্রমণ), সব কিছুর মাঝখানে ঈশ্বরই তাঁর লোকদেরকে শক্তি দেবেন “প্রভু সদাপ্রভুই আমার শক্তি; তিনি আমার পা হরিণীর পায়ের মত করেন” (হব ৩:১৯)।
হবক্কূক পুস্তকের কাঠামো
এই ছোট পুস্তকটি একটি সাধারণ ভাববাণী নয়, বরং ঈশ্বরের সঙ্গে হবক্কূকের সংগ্রামের একটি বর্ণনা। পুস্তকটির কাঠামো নিচে দেওয়া হয়েছে:
- হব ১:১ প্রারম্ভিকা বাক্য।
- হব ১:২-৪ ঈশ্বরের কাছে হবক্কূকের অভিযোগ।
- হব ১:৫-১১ ঈশ্বর অভিযোগের উত্তর দেন।
- হব ১:১২-২:১ উত্তর শুনে হবক্কূক আরো বেশি অভিযোগ করেন।
- হব ২:২-২০ ঈশ্বর দ্বিতীয় বার উত্তর দেন।
- হব ৩:২-১৯ হবক্কূকের প্রার্থনায় উত্তর দেন।
হবক্কূক – বিশেষ একটি পুস্তক
হবক্কূক পুস্তক অন্য সব ভাববাদীদের লেখার চেয়ে একটু বিশেষ ধরণের। কারণ হবক্কূক যিহূদার কাছে, ইস্রায়েলের কাছে বা অন্য কোনো জাতির কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো বাণী বলেন না। সাধারণত ভাববাদীরা ঈশ্বরের পক্ষ হয়ে লোকদের কাছে কথা বলেন, তা চ্যালেঞ্জের বিষয়, সাবধাণবাণী, সান্ত্বনা বা উৎসাহবাণী হোক।
হবক্কূক পুস্তকে তিনি কারও কাছে কোনো কথা বলেন না। বরং পুস্তকটি ঈশ্বরের সঙ্গে হবক্কূকের একটি সংগ্রাম বর্ণনা করে। যখন হবক্কূক জগতের মন্দ বাস্তবতার সম্মুখীন হন, তখন তিনি ঈশ্বরের বিচার দাবি করেন। কিন্তু একই সঙ্গে ঈশ্বরের বিচারের কথা শুনে তিনি আবার আপত্তি উঠানও। পুস্তকটিতে তিনি ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাঁকে দোষও দেন এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে উত্তরও পান। ধীরে ধীরে তার দৃষ্টি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
তাই হবক্কূক পুস্তক পড়া মানে একজন খুব সৎ লোকের ব্যক্তিগত প্রার্থনা পড়া, দিনলিপিতে তার সংগ্রামের একটি বর্ণনা পড়া। হবক্কূক তার ব্যক্তিগত সংগ্রামে এমন কিছু প্রশ্ন, অভিযোগ বা আপত্তি উঠান, যা তার সমসাময়িক অধিকাংশ লোকদের অন্তরেও চলছিল। এমন কি, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রত্যেক মানুষের অন্তরে সেই একই প্রশ্ন, অভিযোগ ও আপত্তি চলছে। জগতের মন্দ বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে হবক্কূকের অন্তরে যে সংগ্রাম দেখা দেয়, তা প্রত্যেক যুগের মানুষের অন্তরেও একইভাবে হয়। তাই বিভিন্ন যুগের মানুষেরা হবক্কূক পুস্তক থেকে সান্ত্বনা পায়।
হবক্কূক ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলেন না, অর্থাৎ তিনি লোকদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য ও হৃদয় উপস্থাপন করেন না, যেমন অধিকাংশ ভাববাদীরা করে থাকেন (হোশেয়, আমোষ, যিরমিয়)। বরং পুস্তকটিতে তিনি প্রাথমিকভাবে নিজের প্রতিনিধি এবং সঙ্গে অনেকের প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলেন। বলা যায় যে, হবক্কূক এই ক্ষেত্রে একটু ভাববাদী যোনার মত: যোনাও এমন একজন ভাববাদী, যিনি ঈশ্বরের বিষয়ে ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিয়ে খুশি নন। হবক্কূক ও যোনা উভয়ই তাদের পুস্তকে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সংগ্রামের সৎ বর্ণনা দেন, দু’জনই পুস্তকে বর্ণিত ঘটনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে নতুন প্রকাশ পান। যোনার ক্ষেত্রে তা হল, জীবন পরিবর্তনকারী নীনবীতে যাত্রা আর হবক্কূকের ক্ষেত্রে তা হল, ঈশ্বরের সঙ্গে একটি জীবন পরিবর্তনকারী তর্ক। যোনার ক্ষেত্রে তার মন পরিবর্তন পুস্তকে বর্ণিত ঘটনার পরেই ঘটে কিন্তু তার পুস্তকের লেখার ধরণ দ্বারা প্রকাশ পায় যে, তিনি অনুতপ্ত হয়ে এখন ঈশ্বরের সঙ্গে একমত। হবক্কূকের ক্ষেত্রে পুস্তকের ৩ অধ্যায়ে তার প্রার্থনা হল, তার মন পরিবর্তনের এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আসার মুহূর্ত। যোনা ও হবক্কূক দু’জনের মধ্যেই তাদের যুগের ও সমাজের অধিকাংশ লোকদের মত মনোভাব বা দৃষ্টভঙ্গি দেখা যায়। দু’জনেরই ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হয়, ফলে দু’জনেরই পরিবর্তন ঘটে এবং দু’জনই তাদের জাতির প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টি উপস্থাপন করতে শুরু করেন। তাদের এই ভুল মনোভাব ও দৃষ্টভঙ্গির পরিবর্তন হল তাদের পুস্তকের মূল বিষয়। দু’জনই সৎভাবে তাদের লজ্জার মনোভাব ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম প্রকাশ করেন এবং এভাবে তাদের পাঠকদের সেই ভুল মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত করতে সাহায্য করেন।
হবক্কূকের সংগ্রামের বিষয় ঠিক কি?
হবক্কূকের সংগ্রামের বর্ণনা বা পুস্তকের কাঠামো হল:
- হব ১:২-৪ হবক্কূক ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করেন, কারণ তিনি যিহূদা জাতিতে অনেক দ্বন্দ্ব, মন্দতা, অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন ও বিশৃঙ্খলা দেখেন। ফলে তিনি ঈশ্বরের কাছে কান্না করে বলেন ‘কেন তুমি কিছু কর না?’
- হব ১:৫-১১ ঈশ্বর তাকে উত্তরে বলেন যে, তিনি ঠিকই কিছু করবেন: যিহূদাকে তার মন্দতার জন্য বিচার করে তিনি তাদেরকে বাবিলীয়দের হাতে পড়তে দেবেন।
- হব ১:১২-২:১ তা শুনে হবক্কূক হতভম্ব হয়ে আবারও ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন, কিন্তু এইবার তিনি উল্টো বলেন: ‘কি করে সম্ভব যে, তুমি এমন একটি জাতি দ্বারা যিহূদাকে বিচার করবে, যারা যিহূদার চেয়েও মন্দ?’
- হব ২:২-২০ উত্তরে ঈশ্বর হবক্কূককে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি অবশ্যই বাবিলীয়দেরকেও তাদের পাপের জন্য বিচার করবেন – তিনি সব অন্যায়কারীদের অবশেষে বিচার করবেন। ঈশ্বর হবক্কূককে ভবিষ্যতের একটি দর্শন দেন: এক দিন তিনি পাপ বা মন্দতার সমস্যা আরো অনেক ভিত্তিকভাবে হাতে নিয়ে সমাধান করবেন।
- হব ৩:২-১৯ হবক্কূক নম্রতায় ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে সাড়া দেন। তিনি ঈশ্বরের চরিত্র, তাঁর মঙ্গলময়তা, তাঁর বিচার ও বিচারের ন্যায্যতা বুঝতে পারেন। তিনি সন্তুষ্ট হয়ে ঈশ্বরের মধ্যে শান্তি খুঁজে পান।
লেখক হবক্কূক
হবক্কূক নিজেকে ভাববাদী বলেন, কিন্তু এছাড়া তিনি নিজের পরিচয়ের জন্য বাবার নাম বা গ্রামের নাম উল্লেখ করেন না (হব ১)। তার নামের অর্থ সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে বলা যায় না, কিন্তু ‘হবক্কূক’ শব্দটি ‘আলিঙ্গন করা’ শব্দটির সাথে মিল আছে। মজার বিষয় হল যে, ‘আলিঙ্গন করা’ তার সংবাদের একটি ভাল সারাংশ।
পুস্তকটির ৩ অধ্যায়ে গীতসংহিতা পুস্তকের মত কিছু বাদ্যযন্ত্র সম্বন্ধীয় নির্দেশনা পাওয়া যায়, যেমন “ছন্দে বাঁধা প্রার্থনা” (হব ৩:১), “সেলা” (হব ৩:৯) এবং “গান পরিচালকের সংকলনের জন্য। আমার নির্দেশ অনুসারে তারের বাজনাগুলোর সংগে গাইতে হবে” (হব ৩:১৯)। একারণে কেউ কেউ বলে যে, হবক্কূক ছিলেন একজন লেবীয়, হয়তো উপাসনা-ঘরের একজন গায়ক, কিন্তু তা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না। হয়তো এই বাদ্যযন্ত্র সম্বন্ধীয় নির্দেশনাগুলো পরে যোগ দেওয়া হয়েছিল যখন হবক্কূকের প্রার্থনা আরাধনার জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু হয়।
পুরাতন নিয়মের আপোক্রিফাতে (ঐসময়ের যিহূদী কাহিনীগুলো যা বাইবেলের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু যিহূদীরা সেগুলো ঈশ্বরের অধিকারগত বাক্য হিসাবে মানে না) একটি গল্প আছে যাতে হবক্কূক দানিয়েলকে রক্ষা করেন যখন তাকে দ্বিতীয় বার সিংহের গর্তে ফেলা হয়েছিল (‘বেল ও দানবের কাহিণী’)। কাহিনীটি অবশ্যই বাস্তব কোন ঘটনার বর্ণনা নয়, কারণ হবক্কূক ৬০৯-৬০৫ খ্রীষ্টপূর্বে পরিচর্যা করেন এবং দানিয়েলের সিংহের গর্ত মাত্র ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বের পরে ঘটে।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
হবক্কূক পুস্তক বুঝতে চাইলে আগে তার সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ভাল করে দেখতে হবে:
- ৬৪০ খ্রীঃপূঃ যিহূদার শেষ ভাল রাজা যোশিয় রাজত্ব করতে শুরু করেন। তিনি প্রাণপণে যিহূদা থেকে দেবতাপূজা নির্মূল করতে এবং বিভিন্ন পুনসংস্কার বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেন।
- ৬২৭ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া সাম্রাজ্যের শেষ শক্তিশালী রাজা অশূর-বনিপল মারা যান। আসিরিয়া সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
- ৬২৬ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর আসিরিয়া সাম্রাজ্যের বাবিল প্রদেশের রাজা হয়ে যান। তিনি বিদ্রোহ করে বাবিলকে আসিরিয়ার অধীনতা থেকে মুক্ত করেন।
- ৬১২ খ্রীঃপূঃ বাবিল, মাদিয়া ও স্কুটীয় জোট আসিরিয়ার রাজধানী নীনবী দখল ও ধ্বংস করে। তারপরেও আসিরিয়ার কিছু শহরগুলো রেহাই পায়।
- ৬০৯ খ্রীঃপূঃ বাবিল দ্বারা পরিচালিত একটি জোট আসিরিয়া ও মিত্র মিসরের সাথে কর্কমিশ শহরে যুদ্ধ করে। মিসরের ফরৌণ নখো ও তার সৈন্যদল আসিরিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে যখন উত্তর দিকে রওনা দেয়, তখন রাজা যোশিয় তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। যদিও নখো তাকে সরে যেতে বলেন তবুও তিনি তা মেনে নেন না। এই অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে রাজা যোশিয় মারা যান (২ রাজা ২৩:২৯, ৩৫:২০)। ফরৌণ কর্কমিশে পৌঁছে আসিরিয়ার সাথে বাবিলের জোটকে পরাজিত করেন।
রাজা যোশিয়ের মৃত্যুর পরে যিহূদা খুব তাড়াতাড়ি দেবতাপূজায় ফিরে যায় এবং ফলে দেশে সামাজিক অন্যায় দিনে দিনে বাড়তে থাকে। - ৬০৫ খ্রীঃপূঃ নাবোপলাসর মারা যান এবং তার ছেলে নবূখদনিৎসর তার পরিবর্তে বাবিলের রাজা হয়ে যান। তিনি একটি জোট বেঁধে তার বাবার মত আসিরিয়া ও মিসরের জোটকে কর্কমিশ শহরে আক্রমণ করেন কিন্তু এবার বাবিল জয় করে। আসিরিয়া সাম্রাজ্য নবূখদনিৎসরের হাতে পড়ে এবং বাবিল দমনকারী সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে।
নবূখদনিৎসর দক্ষিণ দিকে সামরিক অভিযান চালিয়ে মিসর পর্যন্ত সব জাতিদের এক অভিযানে দখল করেন। তিনি যিহূদা ও যিরূশালেমকেও দখল করেন এবং লোকদের একটি বড় অংশ নির্বাসিত করেন।
হবক্কূক পুস্তক এই ঐতিহাসিক ঘটনার ঠিক কোথায় পড়ে? যখন রাজা যোশিয় মারা যান, হবক্কূক দেখেন কিভাবে তার দেশের বিপরীতমুখী পরিবর্তন হয় এবং কিভাবে তার জাতি অনেক তাড়াতাড়ি গভীর দেবতাপূজায় ও সামাজিক অন্যায়ে নামে। হবক্কূক ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন: ‘কেন তুমি কিছু কর না?’ (হব ১:২-৪)। ঈশ্বর উত্তরে বলেন যে, তিনি ঠিকই কিছু করবেন: যিহূদাকে তার মন্দতার জন্য বিচার করে তিনি তাদেরকে বাবিলীয়দের হাতে পড়তে দেবেন (হব ১:৫-১১)। তা শুনে হবক্কূক হতভম্ব হয়ে আবারও ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন, কিন্তু এইবার তিনি উল্টো বলেন: ‘কি করে সম্ভব যে, তুমি এমন একটি জাতি দ্বারা যিহূদাকে বিচার করবে যারা যিহূদার চেয়েও মন্দ?’ (হব ১:১২-২:১)। হবক্কূকের কথা থেকে বুঝা যায় যে, বাবিল ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী ও ভয়ংকর সাম্রাজ্য হিসাবে পরিচিত – তা না হলে কেন তিনি আপত্তি ওঠাতেন? প্রকৃতপক্ষে ৬১২ এবং আরো বেশি ৬০৯ খ্রীষ্টপূর্বের পরে সব জাতিরা বাবিলের সামরিক দুঃসাহস ও প্রধান ক্ষমতা হওয়ার প্রচেষ্টা বুঝতে পারে। কিন্তু বাবিল তখনও দূরে আছে এবং তারা জাতিদের দখল করতে তখনও শুরু করে নি – তা না হলে কেন হবক্কূক হতভম্ব হতেন শুনে যে, তারা যিহূদাকে আক্রমণ করবে। তাই হবক্কূকের প্রার্থনাটি ৬০৯ খ্রীষ্টপূর্বে যোশিয়ের মৃত্যুর পরে এবং ৬০৫ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলের দখলের আগে ঘটে। তাই বাবিল যিহূদাকে দখল করবে, হবক্কূকের এই ভবিষ্যদ্বাণী অল্প কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ণ হয়।
হবক্কূকের প্রথম অভিযোগ হব ১:২-৪
হবক্কূক দেখেন যোশিয়ের মৃত্যুর পরে কিভাবে তার দেশের বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটে এবং কিভাবে তার জাতি অনেক তাড়াতাড়ি গভীর দেবতাপূজায় ও সামাজিক অন্যায়ে নামে। তিনি ঈশ্বরের নিষ্ক্রিয়তা দেখে তাঁর কাছে কান্না করে বলেন: “হে সদাপ্রভু, আর কতকাল সাহায্যের জন্য আমি তোমাকে ডাকব আর তুমি শুনবে না? কতকাল “অত্যাচার চলছে” বলে তোমার কাছে কান্নাকাটি করব আর তুমি উদ্ধার করবে না? কেন তুমি আমাকে দুষ্টতা দেখতে বাধ্য করছ? কেন তুমি অন্যায় সহ্য করছ? আমার সামনে ধ্বংস ও অত্যাচার হচ্ছে আর অনবরত ঝগড়া ও মারামারি চলছে। আইন-কানুন শক্তিহীন হয়ে পড়েছে এবং কখনও ন্যায়বিচার হচ্ছে না। সৎ লোকদের চেয়ে দুষ্টদের ক্ষমতা বেশী বলে বিচার উল্টা হচ্ছে” (হব ১:২-৪)। তিনি অনেক সমস্যা দেখতে পান, যেমন অন্যায়, দূর্নীতি, অবিচার, দ্বন্দ্ব ও ধ্বংস। বর্ণনাটি অবশ্যই ছিল যিহূদার একটি বাস্তব ছবি, দেবতাপূজার সাথে সাথে সমাজে মন্দতাও বাড়তে থাকে।
ঈশ্বরের নিষ্ক্রিয়তা দেখে হবক্কূক তার হতাশা, বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন, এমন আবেগ ও চিন্তা, যা যিহূদার অধিকাংশ ভক্তদের হৃদয়ে ছিল এবং এমন কি তা আধুনিক যুগের অধিকাংশ পাঠকদের অন্তরেও আছে। কেন মন্দরা সুখ-সুবিধায় বাস করে? কেন ঈশ্বর এই অন্যায়ের প্রতিরোধে কিছু করেন না? মানুষের আচরণের নেতিবাচক ফলাফলগুলো নিয়ে আমরা ঈশ্বরের দোষ ধরি।
ঈশ্বরের প্রথম উত্তর হব ১:৫-১১
ঈশ্বর হবক্কূকের এই অভিযোগে উত্তর দেন (হব ১:৬-২:১)। তিনি হবক্কূকের সাথে একমত যে, যিহূদার অবস্থা খারাপ এবং তা এভাবে চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তিনি তাঁর নিষ্ক্রিয়তার দোষারোপের বিরুদ্ধে বলেন যে, তিনি ঠিকই কিছু করেন, তিনি কলদীয়দের, অর্থাৎ বাবিলীয়দের দ্বারা যিহূদাকে বিচার করবেন। ঈশ্বর বাবিলীয় সামরিক ক্ষমতা নিয়ে বাস্তব কথা বলেন: তারা নিষ্ঠুর, তাড়াহুড়োকারী, দুঃসাহসী, জয়ী, শক্তিশালী ও ভয়ংকর (হব ১:৬-১১)। তারা অহংকারী: “তারা রাজাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে আর শাসনকর্তাদের টিট্কারি দেয়। দুর্গগুলো দেখে তারা হাসে; তারা দেয়াল পার হবার জন্য পাথরের ঢিবি তৈরী করে সেই দুর্গগুলো দখল করে নেয়” (হব ১:১০)। তারা আত্ম-বিশ্বাসে পূর্ণ “তাদের কাছে তাদের শক্তিই হল তাদের দেবতা” (হব ১:১১)।
ঈশ্বর জাতিদের ঠিকই বিচার করেন। তিনি তা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। তিনি মন্দতা ও অন্যায় কিছুক্ষণ ধরে চলতে থাকতে দেন, যেমন আদি ১৫:১৬ পদে বর্ণনা করা হয়েছে: “পাপ করতে করতে ইমোরীয়েরা এখনও এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় নি যার জন্য আমাকে তাদের শাস্তি দিতে হবে”। কিন্তু যখন একটি জাতিতে মন্দতা ও অন্যায় সীমানা পার হয়ে বৃদ্ধি পায়, যখন মন্দতা চলতে দেওয়া হয়ে দাঁড়ায় বিচার করার চেয়ে আরো খারাপ, তখনই ঈশ্বর এই জাতিকে দায়বদ্ধ করে বিচার করেন (লেবীয় ১৮:২৪-৩১)। তিনি যিহূদা ও ইস্রায়েলকে মোশির আইন-কানুন অনুসারে বিচার করেন, কারণ তাদের আইন-কানুন ছিল। কিন্তু তিনি অন্য জাতিদেরকে ‘সোনালী নিয়মের’ মানদণ্ড অনুসারে বিচার করবেন। যেমন হবক্কূকের সময়ে: ঈশ্বর তাঁর মনোনীত কিন্তু পাপে পূর্ণ জাতিকে বাবিল সাম্রাজ্যের হাতে পড়তে দেন।
হবক্কূকের দ্বিতীয় অভিযোগ হব ১:১২-২:১
ঈশ্বরের বিচারের ঘোষণা শুনে হবক্কূক হতভম্ব হয়ে আবারও ঈশ্বরের কাছে কান্না করেন। কিন্তু এইবার তিনি উল্টো বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রজন, তুমি কি চিরস্থায়ী নও? … তুমি এত খাঁটি যে, তুমি মন্দের দিকে তাকাতে পার না এবং অন্যায় সহ্য করতে পার না। তাহলে তুমি কেমন করে সেই বিশ্বাসঘাতকদের ভাল চোখে দেখছ? দুষ্টেরা যখন তাদের চেয়ে ভাল লোকদের গ্রাস করে তখন কেন তুমি চুপ করে থাক?” (হব ১:১২-১:১৩)। হবক্কূক এই পদগুলোতে আরো বাস্তবভাবে বাবিলীয়দের বিষয়ে বর্ণনা দেন: বাবিল বড়শী দিয়ে সব জাতিদের টেনে তোলে বা জাল দিয়ে তাদেরকে ধরে এবং একটির পর একটি জাতি ধ্বংস করতে খুশি হয় (হব ১:১৪-১৭)। তিনি আবারও তাদের আত্ম-বিশ্বাস ও দেবতাপূজার বিষয়ে বলেন “তারা তাদের জালের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করে এবং টানা-জালের উদ্দেশে ধূপ জ্বালায়, কারণ তাদের জাল দিয়েই তারা অনেক লাভ করে এবং ভাল ভাল খাবার খায়”।
হবক্কূক কি বলতে চাচ্ছেন? তিনি ঈশ্বরের ন্যায্য ও খাঁটি চরিত্রকে তার বিনতির কেন্দ্র করেন – ভাল বিনতি সব সময় তা করে! তিনি বলেন যে, বাবিলীয়েরা যিহূদার চেয়েও মন্দ, তাই যদিও যিহূদাকে বিচার করা দরকার তবুও তিনি এই ধরণের লোকদের দ্বারা বিচার নিয়ে আপত্তি উঠান। হবক্কূক এখানে তার দেশের অধিকাংশ লোকদের চিন্তা, মনোভাব ও আবেগের মত কথা বলেন।
হবক্কূকের এই সংগ্রাম হল পুরাতন একটি সংকট: যখন আমরা দেখি যে, মন্দরা যা চায় তা-ই করে তখন আমরা মনে করি মন্দ কাজ ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত। ফলে আমরা ঈশ্বরের ন্যায্যতা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করি। কিন্তু যদি ঈশ্বর বিচার করেন, তবে আমরা ঈশ্বরের ন্যায্যতা নিয়ে উল্টাভাবে সন্দেহ করতে শুরু করি এবং বলি যে, মানুষকে শাস্তি দেওয়া তাঁর ঠিক হয় নি। প্রকৃতপক্ষে আমরা ন্যায্য নই যদি আমরা ঈশ্বরের দোষ ধরি যখন তিনি কিছু না করেন এবং একই মুহূর্তে তাঁর দোষ ধরি যখন তিনি কিছু করেন। আমরা ন্যায্য নই যখন আমরা দাবি করি যে, ঈশ্বর আমাদেরকে দয়া করেন এমন মন্দ কাজের জন্য, যদি আমাদের বিরুদ্ধে কেউ তা করত, তবে আমরা বিচার চাইতাম।
যিহূদা কি প্রকৃতপক্ষে ঐসময়ে বাবিলের চেয়ে ন্যায্য? তা নিশ্চিত না। যিহূদা অবশ্যই বাবিলের চেয়ে বেশি প্রকাশ পেয়েছে (মোশির আইন-কানুন, ভাববাদীদের বাণী)। কিন্তু ঈশ্বর তার কারণে যিহূদাকেও একটি আরো উঁচু মানদণ্ডে দায়বদ্ধ করেন। যা মানুষ জানে না, তার জন্য ঈশ্বর তাদেরকে বিচার করেন না বরং তারা যা জানত, তার জন্যই বিচার করেন। বাবিলীয়দের এক পরিমানে প্রকাশ ছিল, অন্তরে চেতনা ও সাধারণ ন্যায্যতার চিন্তা (‘যে ব্যবহার তুমি অন্যায় বলতে যদি কেউ তা তোমার বিরুদ্ধে করে সেই ব্যবহার যদি তুমি অন্যের প্রতি কর, তবে তা তোমার দোষ হিসাবে দাঁড়াবে’, অর্থাৎ ‘সোনালী নিয়ম’)। তা অনুসারে ঈশ্বর তাদেরকে বিচার করবেন। আসল প্রশ্ন হল: একটি জাতি যা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে তারা কত ভাল সাড়া দিয়েছে? সময়ের একটি ব্যাপারও আছে: বাবিল ঐসময় দেশ হিসাবে মাত্র অল্প বছর ধরে ছিল কিন্তু যিহূদা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করে আসছে। ঈশ্বর একটি দেশ নিয়ে ধৈর্য ধরে আছেন (আদি ১৫:১৬) কিন্তু তাঁর ধৈর্যের একটি সীমানাও আছে। ভাববাদী যিরমিয় পুস্তক থেকে আমরা যিহূদার ঐ শেষ বছরগুলোর একটি বাস্তব বর্ণনা পাই। দেখা যায় যে, ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে যখন বাবিল যিহূদাকে ধ্বংস করে দেয় তখন যিহূদা আক্রমণকারী বাবিলের চেয়ে বিশৃঙ্খল ও মন্দ হয়ে গিয়েছিল (যির ২৬-৪২)। কিন্তু এছাড়াও বলা দরকার যে, ঈশ্বর যে কোনো সময়ে যে কোনো জাতি দ্বারা আর একটি জাতিকে বিচার করতে পারেন। একটি জাতিকে বিচার করার ক্ষেত্রে যদি ঈশ্বর অন্য একটি জাতিকে ব্যবহার করেন, তার অর্থ এই নয় যে, ব্যবহৃত জাতি ন্যায্য বা ধার্মিক। ঈশ্বর দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া, তা অহংকারের বা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করার কোন বিষয় নয়, প্রকৃতপক্ষে তা ব্যবহৃত জাতির জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপনও করে।
হবক্কূক উপসংহারে এসে বলেন: “আমি আমার পাহারা-স্থানে দাঁড়াব, দেয়ালের উপরে জায়গা নেব; তিনি আমাকে কি বলবেন আর আমার নালিশের কি উত্তর দেবেন তার জন্য অপেক্ষা করব” (হব ২:১)। আগে তিনি মনে করতেন যে, ঈশ্বর উত্তর দেবেন না (হব ১:২) কিন্তু এখন তিনি মনোযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে ঈশ্বরের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করেন। “পাহারা-স্থানে দাঁড়াব, দেয়ালের উপরে জায়গা নেব” এই কথা এখানে তার বিশ্বাস ও নিশ্চয়তার প্রকাশ হিসাবেও দাঁড়ায়: ঈশ্বর যা বলেছেন, তিনি অবশ্যই তা-ই করবেন। তিনি পাহারাদারের মত দিগন্তের দিকে তাকাচ্ছেন জেনে যে, বাবিলীয়েরা ঈশ্বরের কথা মত শীঘ্রই আসবে। অথবা হয়তো তিনি এখানে আদর্শ হয়ে সেই মনোভাব দেখান, যা তিনি চান যেন তার পাঠকদের মধ্যেও থাকুক: ঈশ্বরের সাথে সংগ্রাম করা, কঠিন প্রশ্ন করা, দেশের জন্য চিন্তাশীল হওয়া এবং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা।
ঈশ্বরের দ্বিতীয় উত্তর হব ২:২-২০
ঈশ্বর উত্তরে বলেন: “এই দর্শনের কথা লেখ এবং পাথরের ফলকের উপরে স্পষ্টভাবে খোদাই কর যাতে তা সহজে পড়া যায়, কারণ এই দর্শনের কথা পূর্ণ হবার সময় এখনও বাকী আছে, কিন্তু তা তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছে এবং সেই দর্শন মিথ্যা প্রমাণিত হবে না। দেরি হলেও তার জন্য অপেক্ষা কর; তা ঠিক সময়ে নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুমি এই কথা লেখ: …” (হব ২:২-৩)। ঈশ্বর হবক্কূককে এখানে লিখতে, যোগাযোগ করতে এবং অন্যদেরকে (বা পরবর্তী প্রজন্মকে) পরিষ্কারভাবে, ধৈর্য সহকারে ও নিশ্চয়তার সঙ্গে সব কিছু জানাতে বলেন। হবক্কূকের বিরক্তি ও হতাশা থেকে, ঈশ্বরের সঙ্গে তার সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা থেকে এমন কিছু তৈরি হয়, যা অন্যদেরকে তাদের সংগ্রামে সাহায্য করবে। যদিও ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেশের পূর্বাভাস ভাল নয় তবুও হবক্কূকের এই অভিজ্ঞতা তাদেরকেও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে সাড়া দিতে উৎসাহিত করবে। ধীরে ধীরে অন্য ভাববাদীদের মত হবক্কূক শুধুমাত্র সংবাদই দিচ্ছেন না বারং তিনি নিজেই সংবাদ হয়ে যাচ্ছেন।
ঈশ্বর অন্যদের কি জানাবেন? “অহংকারী বাবিল সৎ নয়, কিন্তু যাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় সে তার বিশ্বস্ততার দরুন বেঁচে থাকবে” (হব ২:৪)। প্রকৃতপক্ষে ইব্রীয়তে “বাবিল” শব্দটি এই পদটিতে নেই, তাই এভাবেও অনুবাদ করা যায়: “অহংকারীরা সৎ নয় …”। ঈশ্বর এখানে হবক্কূককে আরো বড় কিছু দেখান: একদিন ঈশ্বর মন্দতার বিষয়টি আরো অনেক ভিত্তিকভাবে হাতে নেবেন এবং তার সমাধানও করবেন। তিনি বিশ্বস্ততা (বা বিশ্বাস) দ্বারাই নির্দোষ লোকদেরকে বাঁচতে দেবেন। এই পদ হল হবক্কূক পুস্তক থেকে নতুন নিয়মে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃতি করা পদ (রোম ১:১৭, গাল ৩:১১, ইব্রীয় ১০:৩৯)। পৌল তা উদ্ধৃতি করে বলেন যে, যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর মন্দকে যে শুধুমাত্র বিচার করবেন (যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু) তা নয় বরং তিনি ইচ্ছুকদের জন্য গ্রহণযোগ্য বা ধার্মিক হওয়ার পথও খুলে দেবেন (যীশুতে পরিত্রাণ)। যীশুতে পরিত্রাণ মানে ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য বা ধার্মিক হওয়া এবং একই সাথে পরিবর্তিত হওয়া, যেন ঈশ্বরের জ্ঞান ও তাঁর জন্য ভালবাসা ভরা একটি জীবন সম্ভব হয়: “সমুদ্র যেমন জলে ভরা থাকে তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমার জ্ঞানে পরিপূর্ণ হবে” (হব ২:১৪)। দেবতাপূজা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে (হব ২:১৮-২৯) এবং ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় রাজত্ব করবে (হব ২:২০)।
কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য ঈশ্বর হবক্কূককে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি অবশ্যই বাবিলকেও বিচার করবেন, অবশেষে তিনি সব মন্দদের ঠিকই বিচার করবেন। হবক্কূক ২:৬-২০ পদগুলোতে ঈশ্বর “ধিক যারা …” শব্দটি দিয়ে ৫ বার তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেন। (তা বাংলা সাধারণ অনুবাদে প্রকাশ কম পায় কিন্তু কেরী অনুবাদে দেখা যায়, এটাকে ‘woe oracle’ বলা হয়)। এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর প্রকাশ করেন যে, তিনি ঠিক কি মনোভাব ও আচরণকে বিচার করবেন:
- হব ২:৫ গর্বে ভরা, ধনী, লোভী, অসন্তুষ্ট হওয়া, দমন করা।
- হব ২:৬-৮ ঠাট্টা-বিদ্রূপ, অন্যদের জিনিস নিজের জন্য জমা, জামিনের জিনিস দিয়ে ধনী, ধন-সম্পদ লুট করার জন্য মানুষের রক্তপাত, লোকদেরকে অত্যাচার করা।
- হব ২:৯-১১ অন্যায় লাভ, বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মিথ্যা বিশ্বাস, অনেক জাতিকে ধ্বংস করা।
- হব ২:১২-১৩ রক্তপাতের দ্বারা শহর গড়া, অন্যায় কাজের দ্বারা গ্রাম স্থাপন করা।
- হব ২:১৫-১৭ রাগ করে প্রতিবেশীদের কড়া মদ খাইয়ে মাতাল করে তোলে যাতে তাদের উলংগতা দেখা যায়, লোকদেরকে অত্যাচার করা, মানুষের রক্তপাত করা।
- হব ২:১৮-২০ প্রতিমার উপর নির্ভর করা, প্রতিমা শিক্ষা দিতে বা কথা বলতে পারে না, শ্বাসবায়ু নেই।
এই পদগুলো হল বাবিল এবং যিহূদা উভয়ের জন্য সাবধাণবাণী: তারা উভয়ই পাপ করেছে এবং ঈশ্বর তাদের উভয়কেই বিচার করবেন। ব্যতিক্রম নেই, যতজন পাপ করেছে ততজনকে বিচার করা হবে – দুঃখের বিষয় হল যে, যিহূদা অন্য জাতিদের চেয়ে ভিন্ন নয়।
হবক্কূক ২:১১ পদে একটি লক্ষণীয় রূপক ব্যবহৃত: “তোমার ঘরের দেয়ালের পাথরগুলো তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাবে এবং ঘরের বীমগুলো সেই কথায় সায় দেবে”। হয়তো রূপকের অর্থ এই: অনেক দখলকারী ও দমনকারী জাতি (যেমন আসিরিয়া, বাবিল, মিসর) প্রায়ই তাদের সামরিক অভিযান, যুদ্ধে জয়, পরাজিতদের প্রতি হিংস্রতা এবং দমন অহংকারের সঙ্গে তাদের রাজবাড়ীর দেওয়ালে খোদাই করা ছবিতে উপস্থাপন করত। ঈশ্বর এখানে তাদের নিজের গর্বের ছবিগুলো তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসাবে ব্যবহার করেন “তোমার ঘরের দেয়ালের পাথরগুলো তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাবে”।
উদাহরণ: নিচে দেওয়া ছবিতে আসিরিয়ার রথ এবং যিহূদার লাখিশ শহরের বিরুদ্ধ তাদের অত্যাচার দেখানো হয়েছে (যেমন লোকদের জীবিত অবস্থায় চামড়া কেটে তোলা):
হবক্কূকের প্রার্থনা হব ৩:১-১৯
ঈশ্বরের কাছ থেকে এই প্রকাশ পেয়ে হবক্কূকের উপর ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় আসে। তিনি বলেন “হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কাজের কথা শুনে ভয় পেলাম। হে সদাপ্রভু, আমাদের কালে সেগুলো তুমি আবার কর; আমাদের সময়ে তুমি সেগুলো দেখাও। ক্রোধের সময় তুমি মমতা করবার কথা ভুলে যেয়ো না” (হব ৩:২)। এখানে তার পরিবর্তিত মনোভাব স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তিনি ঈশ্বরের মহত্ব সম্বন্ধে আগেও কিছু জানতেন এবং তা উল্লেখ করে ঈশ্বরকে তার অনুরোধে বাধ্য করতে চেষ্টাও করেছিলেন (হব ১:২-৩, ১:১২-১৩)। কিন্তু এখন তিনি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে ঈশ্বরের মহান কাজগুলো স্বীকার করেন, বিচারের ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ নতুন চোখে দেখতে পান। এমন কি, তিনি ঈশ্বরের বিচার চাইতেও শিখেছেন: “আমাদের কালে সেগুলো তুমি আবার কর; আমাদের সময়ে তুমি সেগুলো দেখাও। ক্রোধের সময় তুমি মমতা করবার কথা ভুলে যেয়ো না”। তিনি নিশ্চিত যে, ঈশ্বর তা সঠিক সময়ে করবেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ঈশ্বরের ক্রোধেও তাঁর ন্যায্যতা প্রকাশিত এবং তিনি ঈশ্বরের মমতার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি জানেন যে, ঈশ্বরের ক্রোধেও তাঁর দয়া ও মমতা উপস্থিত। তিনি এখন দায়ূদের মত বলতে পারেন যে, মানুষের হাতে পড়ার চেয়ে ঈশ্বরের হাতে পড়াই ভাল (২ শমূ ২৪:১৪)। যদিও বর্তমানে দেশের জন্য পূর্বাভাস ভাল নয় তবুও তিনি ঈশ্বরের মঙ্গল উদ্দেশ্য এবং তাঁর মহাপরিকল্পনা দেখতে পান। যিহূদার বিচারের পরে ঈশ্বর একটি চমৎকার পুনরুদ্ধার নিয়ে আসবেন, এর উপর হবক্কূক নির্ভর করতে শিখেছেন।
হবক্কূকের প্রার্থনার পরবর্তী পদগুলোতে তিনি ঈশ্বরের মহিমা, পরাক্রম ও পৃথিবীতে তাঁর শক্তিশালী হস্তক্ষেপ (প্রাকৃতিক ও সামরিক রূপকে) বর্ণনা করে ঘোষণা করেন যে, ঈশ্বর এগিয়ে এসে তাঁর লোকদেরকে ও তাঁর অভিষিক্ত লোককে উদ্ধার করবেন (হব ৩:৩-১৫)।
তিনি খোলাভাবে প্রকাশ করেন যে, ভয় ও কাঁপাকাঁপির সঙ্গে তিনি অপেক্ষা করেন, জেনে যে তার জাতি শীঘ্রই অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু কষ্টের মধ্যেও ঈশ্বরের হাত বুঝতে পেরে তিনি তার বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন যে, ঈশ্বর শেষে অত্যাচারীদেরকেও বিচার করবেন: “তবুও আমি সেদিনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব যেদিন আমাদের আক্রমণকারীদের উপর বিপদ আসবে” (হব ৩:১৬)। এখানে “আক্রমণকারী” বলতে অবশ্য বাবিলীয়দের বুঝায়, কিন্তু তার প্রথম অভিযোগে দেখে বুঝা যায় যে, তাতে যিহূদা দেশের মন্দরাও অন্তর্ভুক্ত।
তিনি জানেন যে, অল্পক্ষণের মধ্যে খুব ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে এবং অভাবের একটি সময় আসবে। কিন্তু এখন তিনি তা মানুষের পাপের ফলাফল হিসাবে দেখেন, তিনি এটা নিয়ে ঈশ্বরকে আর দোষারোপ করেন না। অপর পক্ষে তিনি নিশ্চয় জানেন যে, তাও ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু নয়। বরং তিনি বিশ্বাস ও নির্ভরতার সঙ্গে তার সেই বিখ্যাত কথা বলতে পারেন “যদিও ডুমুর গাছে কুঁড়ি ধরবে না আর আংগুর লতায় থাকবে না কোন আংগুর, যদিও জলপাই গাছে ফল ধরবে না আর ক্ষেতে জন্মাবে না খাবারের জন্য কোন শস্য, যদিও ভেড়ার খোঁয়াড়ে থাকবে না ভেড়া আর গোয়াল ঘরে থাকবে না গরু, তবুও আমি সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ করব, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়ে খুশী হব” (হব ৩:১৭-১৮)।
হবক্কূক এখানে ঠিক এমন মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস দেখান, যা তিনি আশা করেন তার পাঠকদের মধ্যেও থাকবে: দেশে যখন দখল, ধ্বংস ও নির্বাসন ঘটবে, তখনও যেন তারা ধৈর্য ধরতে সক্ষম হয় এবং বিশ্বাস ও আশা না হারায়। তিনি দেখান কিভাবে প্রাণপণে ঈশ্বরকে ধরে রাখা যায়, তাঁর বাক্যের আলোতে আরো বড় দৃষ্টি ও পুনরুদ্ধারের নিশ্চয়তা ধরে রাখা যায়, কিভাবে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে থেকে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ সব কিছুর মাঝখানে ঈশ্বরই তাঁর লোকদেরকে শক্তি দেবেন “প্রভু সদাপ্রভুই আমার শক্তি; তিনি আমার পা হরিণীর পায়ের মত করেন” (হব ৩:১৯)।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য দয়া করে www.englishbiblestudy.com দেখুন!