ভাববাদী সখরিয় নির্বাসন থেকে ফিরে আসা যিহূদীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘর নির্মাণ পুনরায় শুরু করে এবং যেন তারা অনুতপ্ত হয়ে মশীহের আগমনের জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করে, যিনি তিনটি ভূমিকা পূর্ণ করবেন: রাখাল, পুরোহিত ও রাজা।
ভাববাদী সখরিয় বাবিলের নির্বাসন থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে আসা যিহূদীদের কাছে কথা বলেন। ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে মাদিয়-পারস্যের রাজা কোরস বিশাল বাবিল সাম্রাজ্যকে দখল করেন। বাবিলীয়েরা পরাজিত জাতিদেরকে জোরপূর্বকভাবে নির্বাসিত এবং এক জাতির সঙ্গে অন্য জাতিকে মিশ্রিত করত, কিন্তু মাদিয়-পারস্যের রাজা কোরস এই নিয়ম বাতিল করেন। তিনি ৫৩৮ খ্রীষ্টপূর্বে নির্বাসিত জাতিদেরকে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার এবং সেখানে তাদের দেবতার মন্দির পুনরায় নির্মাণ করার অনুমতি দেন (ইষ্রা ১:২-৪)। যিরমিয়ের সেই ভবিষ্যদ্বাণী যে, নির্বাসন শুধুমাত্র সত্তর বছর স্থায়ী থাকবে, তা এভাবে পূর্ণ হয় (যিরমিয় ২৯:১০)।
প্রায় পঞ্চাশ হাজার উচ্চাকাঙ্ক্ষী যিহূদীরা এই ঐতিহাসিক ঘটনা সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদায়, অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যায়। প্রকৃতপক্ষে নির্বাসনে যিহূদীদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল, তা নয়। তারা বাবিলে কাজ করে অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, যার কারণে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে এখন নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া ছিল তাদের বড় সিদ্ধান্ত ও ত্যাগ-স্বীকারের বিষয়। যারা ফিরে যায় তারাই ছিল সবচেয়ে বাধ্য, ইচ্ছুক ও ঈশ্বরের বাক্যের উপর রির্ভরশীল যিহূদী। তারা এমন যিহূদীরা যারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর তাঁর নির্বাসিত জাতিকে ত্যাগ করেন নি এবং ঈশ্বরের আহ্বান ও প্রতিজ্ঞা এখন তাদেরই উপরে আছে। তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকার পাওয়া আশা করে এবং বিশ্বাস করে যে, নির্বাসনের আগে ভাববাদীদের (যেমন যিশাইয়, মীখা বা আমোষ) সেই চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো এখনও প্রযোজ্য এবং ঈশ্বর সেগুলো অবশ্যই পূর্ণ করবেন ।
কিন্তু তারা যেভাবে বড় প্রতাশা করেছিল, যিহূদায় ফিরে এসে তারা নিজেকে তেমন ভাল অবস্থায় খুঁজে পায় না: তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভাল নয়, দেবতাপূজারী মাদিয়-পারস্যেরা এখনও তাদের উপরে রাজত্ব করে এবং কর আদায় করে। এছাড়া তাদেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে অন্য জাতিদের সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে, এমন জাতি যারা যিহূদীরা নির্বাসনে চলে যাওয়ার পরে সেখানে বাস করতে শুরু করেছিল।
৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদীরা যিহূদা দেশে ফিরে এসে তারা প্রথমেই যিরূশালেমে আগের স্থানে পুড়ানো উৎসর্গের ব্রোঞ্জ বেদী পুনরায় স্থাপন করে, উৎসর্গ পদ্ধতি পুনরায় চালু করে, বাৎসরিক পর্বগুলো পালন করতে শুরু করে এবং উপাসনা-ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে (ইষ্রা ৩:২-৭)। কিন্তু যিহূদায় বসবাসকারী অন্যান্য জাতি তাড়াতাড়ি তাদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়: তারা ফিরে আসা যিহূদীদের হুমকি দেয়, তাদের কাজ থামানোর জন্য কর্মচারীদের ঘুষ দেয় এবং বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে যেন যিহূদীরা উপাসনা-ঘর নির্মাণে ব্যর্থ হয় (ইষ্রা ৪:৪-৫)। যিহূদীরা নিরুৎসাহিত হয়ে উপাসনা-ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং পরিবর্তে নিজের ঘর-বাড়ী তৈরি ও নিজের জীবন গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় ১৬ বছর এভাবে পার হয়ে যায়।
কিন্তু ৫২০ খ্রীষ্টপূর্বে ঈশ্বর ভাববাদী হগয় ও সখরিয়কে আহ্বান করেন যেন তারা যিহূদীদেরকে উপাসনা-ঘর নির্মাণ পুনরায় চালিয়ে নিতে চ্যালেঞ্জ করেন। সখরিয় তার প্রথম বাণীতে যিহূদীদের অনুতপ্ত হতে ডাকেন (সখরিয় ১:১-৬)। পরবর্তীতে তিনি তাদের আটটি বেশ কঠিন দর্শনের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দেন যে, ঈশ্বরের হাত তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে (সখরিয় ১:৭-৬:৮)। আটটি দর্শনের মধ্য দিয়ে সখরিয় যিহূদীদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে নির্শয়তা দেন: ঈশ্বর তাঁর জাতিকে সুরক্ষা করেন, আবারও আশীর্বাদ করেন এবং তাদের শত্রুদেরকে পরাজিত করেন। তিনি নির্বাসিত যিহূদীদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার ডাক দেন। তিনি যিরূশালেমকে পুনরায় বেছে নিয়েছেন এবং পাপকে অভিশাপ দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা বেশ স্থির আছে বলে যিহূদীরা নির্মাণ কাজ চালিয়ে নিতে পারবে।
দর্শনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েক বার যিহূদীদের বর্তমান নেতাদের নাম পাওয়া যায়: সরুব্বাবিল, দায়ূদের বংশের রাজা যিহোয়াখীনের নাতী, যাকে মাদিয়-পারস্য সরকার যিহূদীদের শাসনকর্তা হিসাবে স্থাপন করেছে এবং মহাপুরোহিত যিহোশূয়। একটি দর্শনে (সখরিয় ৪) সখরিয় এই দু’জন নেতাদের দু’টি জলপাই গাছ হিসাবে দেখেন, যারা একটি বাতিদানের জন্য তেল যোগান করেন। দর্শনটি হল সরুব্বাবিলের কাছে একটি উৎসাহের বাণী যেন তিনি উপাসনা-ঘর নির্মাণের সেই কঠিন কাজে নিরুৎসাহিত না হন: “তখন তিনি আমাকে বললেন, “সদাপ্রভু সরুব্বাবিলকে এই সংবাদ দিচ্ছেন, ‘শক্তি বা ক্ষমতার দ্বারা নয়, কিন্তু আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমার আত্মা দ্বারা তুমি সফল হবে। হে বিরাট পাহাড়, কে তুমি? সরুব্বাবিলের সামনে তুমি হবে সমভূমি। উপাসনা-ঘরের শেষ পাথরটা লাগাবার সময় লোকেরা চিৎকার করে বলবে যে, ওটা খুব সুন্দর হয়েছে” (সখরিয় ৪:৬-৭)।
আর একটি দর্শনে সখরিয় দেখেন যে, শয়তান নোংরা কাপড় পড়া মহাপুরোহিত যিহোশূয়কে দোষারোপ করেন। দর্শনে যিহোশূয়কে শুচি করা হয় এবং তাকে একটি চারা ও একটি পাথর সম্বন্ধীয় ভাববাণী দেওয়া হয়। পাথর সম্বন্ধীয় ভাববাণীতে প্রতিজ্ঞা দেওয়া হয় যে, এক দিনে সব পাপ দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে (সখরিয় ৩:৮-৯)। আর একটি দর্শনে এই দু’জন নেতাদেরকে (শাসনকর্তা ও মহাপুরোহিতকে) একজন ব্যক্তিতে পরিণত করা হয়, অর্থাৎ একজন মুকুট পড়া মহাপুরোহিতকে দেখানো হয়, যার নেতৃত্বে “যারা দূরে আছে তারা এসে সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর কাজে সাহায্য করবে” (সখরিয় ৬:৯-১৫)। দর্শনটি হল মশীহ সম্বন্ধীয় একটি ভবিষ্যদ্বাণী, অর্থাৎ তা যীশুকে বুঝায়। তিনিই সেই “চারা”, সেই “পাথর” (সখরিয় ৩:৯), রাজাদের রাজা এবং সত্যিকার মহাপুরোহিত, যিনি সমস্ত জাতি থেকে তাঁর উপাসনা-ঘর তৈরি করবেন, অর্থাৎ তিনি তাঁর মণ্ডলী বিভিন্ন জাতি থেকে গড়ে তুলবেন।
কিছু যিহূদীরা সখরিয়কে জিজ্ঞাসা করে, তাদেরকে এখনও প্রথম উপাসনা-ঘরের ধ্বংসের দিনের বাৎসরিক শোক উপবাস পালন করতে হবে কিনা। সখরিয় উত্তরে তাদেরকে প্রকৃতভাবে অুতপ্ত হতে এবং সঠিক উপবাস করতে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি প্রকৃত অনুতাপ ও সত্যিকারের উপবাসের সংজ্ঞা এভাবে দেন: মনেপ্রাণে ঈশ্বরকে অন্বেষণ করা এবং তাঁর বাধ্য থাকা (সখরিয় ৭-৮)।
সখরিয় পুস্তকের বাকি অধ্যায়গুলো বোঝা অনেক কঠিন, কিন্তু তার মধ্যে বেশ কিছু নতুন নিয়মের বিখ্যাত উদ্ধৃতি পাওয়া যায়, যেমন: “হে সিয়োন-কন্যা, খুব আনন্দ কর … দেখ, তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন; তিনি ন্যায়বান ও তাঁর কাছে উদ্ধার আছে; তিনি নম্র, তিনি গাধার উপরে, গাধীর বাচ্চার উপরে চড়ে আসছেন” (সখরিয় ৯:৯)। এই অধ্যায়গুলোতে যীশুকে একজন অগ্রাহ্য করা রাখাল হিসাবে দেখানো হয়, যাকে লোকেরা তুচ্ছ করে বেতন হিসাবে ত্রিশটা রূপার টুকরা দেয় (সখরিয় ১১)। তাঁর আরো বর্ণনা দেওয়া হয় সেই লোক হিসাবে “যাঁকে তারা বিঁধেছে” এবং যাকে নিয়ে তারা বিলাপ করবে (সখরিয় ১২:১০-১৪)। সখরিয় পুস্তক যীশুর দ্বিতীয় আগমনের একটি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে সমাপ্ত হয়, যার প্রকাশিত বাক্যের সাথে অনেক মিল আছে: ঈশ্বর মন্দের উপর জয় করে তা বিচার করবেন এবং একটি অদ্ভূত পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন করবেন।
লেখক সখরিয়
পুস্তকের শুরুতে সখরিয় নিজের পরিচয়ের ক্ষেত্রে নিজের নাম “সখরিয়”, বাবার “বেরিখিয়” ও পিতামহের নাম “ইদ্দো” উল্লেখ করেন (সখরিয় ১:১)। সখরিয়ের নামের অর্থ হল ‘ঈশ্বর স্মরণ করেছেন’। নহিমিয় ১২:৪ পদে উল্লেখ করা আছে যে, ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে শাসনকর্তা সরুব্বাবিলের সাথে ফিরে যাওয়ার যিহূদীদের দলে “ইদ্দো” নামে একজন পুরোহিত ছিলেন। সম্ভাবনা বেশি যে, এই ইদ্দো ছিলেন সখরিয়ের পিতামহ। যদি তাই হয় তবে সখরিয় ছিলেন একটি পুরোহিত পরিবারের ছেলে। আরো বলা যায় যে, যখন তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিল থেকে যিহূদায় ফিরে আসেন তখন তার বয়স খুবই কম এবং ৫২০ খ্রীষ্টপূর্বে যখন তিনি তার প্রথম ভাববাণী দেন, তখনও তার বয়স অতি বেশি ছিল না। সখরিয় ২:৪ পদে উল্লিখিত সেই “যুবক” সম্ভবত সখরিয়কে বুঝায়। যদি তাই হয় তবে সখরিয় অল্প বয়সে পরিচর্যা শুরু করেন, এই চিন্তা আরো সমর্থন পায়।
এছাড়া লেখক ইষ্রাও তার পুস্তকে সখরিয়ের পরিচয় “ইদ্দোর বংশধর” হিসাবে দেন (ইষ্রা ৫:১, ৬:১৪)। আবারও যীশু একজন সখরিয়কে উল্লেখ করে বলেন: “আপনারা যে বরখিয়ের ছেলে সখরিয়কে পবিত্র স্থান আর বেদীর মাঝখানে খুন করেছিলেন” (মথি ২৩:৩৫)। সম্ভাবনা বেশি যে, যীশু কথাটি দ্বারা সখরিয় পুস্তকের লেখককে বুঝান, যদিও তার বাবার নামের বানান একটু ভিন্ন। যদি তাই হয় তবে আমরা জানতে পারি যে ভাববাদী সখরিয় শহীদ মৃত্যুবরণ করেছেন, অথচ এই ঘটনা বাইবেলে আর কোথাও উল্লেখ করা হয় নি।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
সখরিয় তার কয়েকটি বাণীর তারিখ সুন্দরভাবে উল্লেখ করেন (সখরিয় ১:১, ১:৭, ৭:১)। বাণীগুলোর তারিখ এবং ইষ্রা পুস্তকে সখরিয়কে উল্লেখ করার কারণে (ইষ্রা ৫:১, ৬:১৪) পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় সখরিয় কোন সময়ে পরিচর্যা করেন এবং তার বাণীর ঐতিহাসিক পরিস্থিতি কি: তিনি নির্বাসন থেকে যিহূদায় ফিরে আসা যিহূদীদের কাছে কথা বলেন।
৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে মাদিয়-পারস্যের রাজা কোরস বিশাল বাবিল সাম্রাজ্যকে দখল করেন। বাবিলীয়েরা পরাজিত জাতিদেরকে জোরপূর্বকভাবে নির্বাসিত এবং এক জাতির সঙ্গে অন্য জাতিকে মিশ্রিত করত, কিন্তু মাদিয়-পারস্যের রাজা কোরস এই নিয়ম বাতিল করেন। তিনি ৫৩৮ খ্রীষ্টপূর্বে নির্বাসিত জাতিদেরকে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার এবং সেখানে তাদের দেবতার মন্দির পুনরায় নির্মাণ করার অনুমতি দেন (ইষ্রা ১:২-৪)। যিরমিয়ের সেই ভবিষ্যদ্বাণী যে, নির্বাসন শুধুমাত্র সত্তর বছর স্থায়ী থাকবে, তা এভাবে পূর্ণ হয় (যিরমিয ২৯:১০)।
প্রায় পঞ্চাশ হাজার উচ্চাকাঙ্ক্ষী যিহূদীরা এই ঐতিহাসিক ঘটনা সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদায়, অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যায়। প্রকৃতপক্ষে নির্বাসনে যিহূদীদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল, তা নয়। তারা বাবিলে কাজ করে অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, যার কারণে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে এখন নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া ছিল তাদের বড় সিদ্ধান্ত ও ত্যাগ-স্বীকারের বিষয়। যারা ফিরে যায় তারাই ছিল সবচেয়ে বাধ্য, ইচ্ছুক ও ঈশ্বরের বাক্যের উপর রির্ভরশীল যিহূদী। তারা এমন যিহূদীরা যারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর তাঁর নির্বাসিত জাতিকে ত্যাগ করেন নি এবং ঈশ্বরের আহ্বান ও প্রতিজ্ঞা এখন তাদেরই উপরে আছে। তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকার পাওয়া আশা করে এবং বিশ্বাস করে যে, নির্বাসনের আগে ভাববাদীদের (যেমন যিশাইয়, মীখা বা আমোষ) সেই চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো এখনও প্রযোজ্য এবং ঈশ্বর সেগুলো অবশ্যই পূর্ণ করবেন ।
কিন্তু তারা যেভাবে বড় প্রতাশা করেছিল, যিহূদায় ফিরে এসে তারা নিজেকে তেমন ভাল অবস্থায় খুঁজে পায় না:
- মোশির সময়ে প্রস্থানে ইস্রায়েলের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ লক্ষ (যাত্রা ১২:৩৭)। বাবিল থেকে যিহূদীদের এই ‘দ্বিতীয় প্রস্থানে’ তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম, অর্থাৎ মাত্র পঞ্চাশ হাজারের মত।
- যদিও তাদের শাসনকর্তা হলেন দায়ূদ বংশধর সরুব্বাবিল তবুও দেবতাপূজারী মাদিয়-পারস্যেরা তাদের উপরে রাজত্ব করে।
- মাদিয়-পারস্য সারকার তাদের থেকে কর আদায় করে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশি ভাল নয়।
- তাছাড়া তাদেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে অন্য জাতিদের সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে, এমন জাতি যারা যিহূদীরা নির্বাসনে চলে যাওয়ার পরে সেখানে বাস করতে শুরু করেছিল।
- ফিরে আসা যিহূদীরা হল যিহূদা ও বিন্যামিন গোষ্ঠির লোক (ইষ্রা ১:৫)। ইস্রায়েলের অন্য ১০টি বংশের লোকদের আর পাওয়া যায় না।
- যিহূদার শহরগুলো এখনও ভাঙ্গা অবস্থায় আছে, অর্থাৎ প্রাচীর বা সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই।
- যদিও রাজা কোরস শলোমনের উপসনা-ঘরের জিনিস-পত্র যিহূদীদের ফেরত দেন এবং তারা সেগুলো যিহূদায় ফিরে নিয়ে আসে (ইষ্রা ১:৬-১১), তবুও নিয়ম-সিন্দুক আর নেই এবং উপাসনা-ঘরের মহাপবিত্র স্থান খালি থাকবে।
৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদীরা যিহূদা দেশে ফিরে এসে তারা প্রথমেই যিরূশালেমে আগের স্থানে পুড়ানো উৎসর্গের ব্রোঞ্জ বেদী পুনরায় স্থাপন করে, উৎসর্গ পদ্ধতি পুনরায় চালু করে, বাৎসরিক পর্বগুলো পালন করতে শুরু করে এবং উপাসনা-ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে (ইষ্রা ৩:২-৭)। কিন্তু যিহূদায় বসবাসকারী অন্যান্য জাতি তাড়াতাড়ি তাদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়: তারা ফিরে আসা যিহূদীদের হুমকি দেয়, তাদের কাজ থামানোর জন্য কর্মচারীদের ঘুষ দেয় এবং বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে যেন যিহূদীরা উপাসনা-ঘর নির্মাণে ব্যর্থ হয় (ইষ্রা ৪:৪-৫)। যিহূদীরা নিরুৎসাহিত হয়ে উপাসনা-ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং পরিবর্তে নিজের ঘর-বাড়ী তৈরি ও নিজের জীবন গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় ১৬ বছর এভাবে পার হয়ে যায়।
কিন্তু ৫২০ খ্রীষ্টপূর্বে ঈশ্বর ভাববাদী হগয় ও সখরিয়কে আহ্বান করেন যেন তারা যিহূদীদেরকে উপাসনা-ঘর নির্মাণ পুনরায় চালিয়ে নিতে চ্যালেঞ্জ করেন। হগয়ের প্রথম বাণীর ২ মাস পরে সখরিয় তার প্রথম বাণী দেন, কিন্তু হগয়ের তুলনায় সখরিয় দীর্ঘদিন ধরে বাণী দিতে থাকেন। সখরিয় উপাসনা-ঘর নির্মাণের প্রায় অর্ধেক সময় পর্যন্ত বাণী দিতে থাকেন (৫২০-৫১৮ খ্রীঃপূঃ)। পুস্তকের ৯ অধ্যায় থেকে সখরিয় বাণীর তারিখ আর উল্লেখ করেন না। নিচের ছকে সখরিয় ও হগয়ের বাণী, ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা এবং লোকদের সাড়া দেখানো হয়েছে:
ভাববাণী বা ঐতিহাসিক ঘটনা | পুস্তকে উল্লিখিত তারিখ | পদ | আধুনিক পদ্ধতিতে তারিখ |
nM‡qi cÖ_g fveevYx | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে ষষ্ঠ মাসের প্রথম দিনে | nMq 1:1-11, Blªv 5:1 | 29 AvMó 520 Lªxtc~t |
৫৩৬–৫২০ খ্রীঃপূঃ উপাসনা–ঘর নির্মান বন্ধ হয়েছিল। ৫২০ খ্রীঃপূঃ হগয় ও সখরিয়ের উৎসাহে পুনরায় শুরু (ইষ্রা ৪:১–৫, ৮:২৪) | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে ষষ্ঠ মাসের ২৪ম দিনে | nMq 1:12-15 Blªv 5:2 | 21 †m‡Þ¤^i 520 Lªxtc~t |
nM‡qi 2q fveevYx | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে সপ্তম মাসের ২১শ দিনে | nMq 2:1-9 | 17 A±ei 520 Lªxtc~t |
mLwi‡qi fveevYx ejvi ïiy | mLwiq 1:1-6 | A±ei / b‡f¤^i 520 Lªxtc~t | |
nM‡qi 3q fveevYx | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে সপ্তম মাসের ২৪ম দিনে | nMq 2:10-19 | 18 wW‡m¤^i 520 Lªxtc~t |
nM‡qi 4_© fveevYx | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে সপ্তম মাসের ২৪ম দিনে | nMq 2:20-23 | 18 wW‡m¤^i 520 Lªxtc~t |
wbg©v‡bi e¨vcv‡i kvmbKZ©v ZËb‡qi wPwV ivRv `vwiqve‡mi Kv‡Q (wbg©v‡bi cybvivq ïiyi wKQy¶Y c‡i ZËbq AvcwË DVv‡Z ïiy K‡i)। | Blªv 5:3-6:14 | 519-518 Lªxtc~t | |
mLwi‡qi 8Uv `k©b | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে ৮ম মাস | mLwiq 1:7-6:8 | 15 †deªyqvix 519 Lªxtc~t |
wh‡nvk~q‡K gyKzU cov‡bv | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে ৮ম মাস (?) | mLwiq 6:9-15 | 16 (?) †deªyqvix 519 Lªxtc~t |
gb wdiv‡bvi WvK, Avkxe©v‡`i cÖwZÁv | দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে ৯ম মাস ৪র্থ দিনে | mLwiq 7-8 | 7 wW‡m¤^i 518 Lªxtc~t |
gw›`i cÖwZôv Kiv | রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের ছয় বছরের সময় অদর মাসের তৃতীয় দিনে | Blªv 6:15-18 | 12 gvP© 516 Lªxtc~t |
mLwi‡qi †kl fveevYx | ? | mLwiq 9-14 | ৪৮০ খ্রীষ্টপূর্বের পরে |
যদি তার পরিচর্যার শুরুতে সখরিয় যুবক ছিলেন এবং যদি তিনি বেশ কিছু বছর ধরে ভাববাণী দিতে থাকেন তবে তিনি সম্ভবত প্রায় এমন সময় পর্যন্ত পরিচর্যা করতে থাকেন, যখন ইষ্রা নির্বাসিত যিহূদীদের দ্বিতীয় দল নিয়ে যিহূদায় ফিরে আসেন (৪৫৮ খ্রীঃপূঃ)।
সখরিয়ের প্রথম বাণী
সখরিয় তার প্রথম বাণীতে (সখরিয় ১:১-৬) যিহূদীদের অনুতপ্ত হতে আহ্বান করেন: “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, ‘তোমরা আমার দিকে ফেরো, তাতে আমিও তোমাদের দিকে ফিরব” (সখরিয় ১:৩)। তিনি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মত না হয়, যারা তাদের যুগের ভাববাদীদের কথাগুলো অগ্রাহ্য করত (সখরিয় ১:৪-৬)। তিনি তার শ্রোতাদের মন ফিরাতে, ঈশ্বরের চরিত্র বুঝতে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সুসম্পর্কে বাস করতে আহ্বান করেন, যেমন তার আগে অনেক ভাববাদীরাও বলত।
আমরা জানি যে সখরিয় তার এই প্রথম বাণী হগয়ের প্রথম বাণীর ২ মাস পরে দেন, অর্থাৎ এমন সময়ে যখন যিহূদীরা ইতিমধ্যে হগয়ের চ্যালেঞ্জে বাধ্য হয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তাহলে অনুতপ্ত হওয়ার আদেশ কেন প্রয়োজন? সম্ভাবনা বেশি যে, যিহূদীদের বাহ্যিক বাধ্যতা দেখে সখরিয় তাদেরকে মনেপ্রাণে অনুতপ্ত হতে এবং নিজেদেরকে আরো বেশি ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করতে চ্যালেঞ্জ করেন।
রাতের বেলায় সখরিয়ের ৮টি দর্শন
প্রায় ২ মাস পরে সখরিয় রাতের বেলায় ৮টি দর্শন পান (সখরিয় ১:৭-৬:৮)। দর্শনগুলোতে বেশ কিছু অদ্ভুত ধরণের ছবি, চিহ্ন ও রূপক পাওয়া যায়। সম্ভবত, ৮টি দর্শনগুলোকে বাতিদান হিসাবে সাজানো হয়েছে, অর্থাৎ ১ম ও ৮ম দর্শন সম্পর্কিত, ২য় ও ৭ম দর্শন সম্পর্কিত, ৩য় ও ৬ষ্ঠ দর্শন সম্পর্কিত এবং ৪র্থ ও ৫ম দর্শন সম্পর্কিত। ৮টা দর্শনের পরে সখরিয় আলাদা একটি ৯ম দর্শন দেখেন যাতে এমন নাটকীয় ভাববাদীমূলক চিহ্ন পাওয়া যায়, যা ৪র্থ ও ৫ম দর্শন আরো বুঝায়। একটি দর্শন বাতিদানের যত মাঝখানে থাকে, সেই দর্শনে তত মশীহ সম্বন্ধীয় কথা পাওয়া যায়।
বেশ কয়েকটি দর্শনে একটি স্বর্গদূত সখরিয়ের সাথে কথা বলেন। ঈশ্বর প্রায়ই সরাসরিভাবেও কথা বলেন। কিছু পদগুলোতে সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় না, কে বলছেন এবং কাকে তা বলা হয়েছে।
১ম দর্শন সখরিয় ১:৭-১৮ ঘোড়াসওয়ায়েরা ক
সখরিয় গুলমেঁদি গাছগুলোর মাঝখানে লাল ঘোড়ার উপরে একজন দেখেন। তার চারিদিকে আরো লাল, মেটে ও সাদা ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ায়েরা ছিল, যাদের সম্বন্ধে বলা হয়ে যে, “সারা পৃথিবীতে ঘুরে দেখবার জন্য সদাপ্রভু এগুলোকে পাঠিয়েছেন।” তারা সংবাদ নিয়ে আসেন: “গোটা জগতটা নির্ভয়ে ও শান্তিতে রয়েছে”।
তখন ঈশ্বরের দূত জিজ্ঞাসা করেন: “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি যিরূশালেম ও যিহূদার অন্যান্য শহরগুলোর উপর এই যে সত্তর বছর অসন্তুষ্ট হয়ে রয়েছ তাদের উপর আর কতকাল তুমি মমতা না করে থাকবে?” এখানে “শান্তি” তাহলে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত, অর্থাৎ যিরূশালেম ও যিহূদার দুরাব্স্থার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। ঈশ্বর উত্তরে “মংগলের ও সান্ত্বনার কথা” বলেন: “যিরূশালেমের জন্য, অর্থাৎ সিয়োনের জন্য আমি অন্তরে খুব জ্বালা বোধ করছি। আমি নিশ্চিন্তে থাকা সেই সব জাতির উপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছি, কারণ আমি যখন আমার লোকদের উপর কেবল একটুখানি অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম তখন সেই সব জাতি আমার লোকদের দুর্দশার সংগে আরও দুর্দশা যোগ করেছিল। সেইজন্য আমি যিরূশালেমকে মমতা করবার জন্য ফিরে আসব। সেখানে আমার ঘর আবার তৈরী হবে এবং যিরূশালেম শহরকে মেপে আবার গড়ে তোলা হবে” (সখরিয় ১:১৪-১৭)।
যিরূশালেম শহর ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলীয়দের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল, অর্থাৎ সখরিয়ের দর্শনের সময়ে (৫১৯ খ্রীঃপূঃ) যিরূশালেম ৬৭ বছর ধরে ধ্বংসাবশেষ হিসাবে পড়ে আছে। ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন যে, নির্বাসন শুধুমাত্র ৭০ বছর স্থায়ী থাকবে (যিরমিয় ২৫:১২)। এই ৭০ বছর প্রায় সম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে বলে, বুঝা যায় দর্শনে কেন এই প্রশ্ন উঠানো হয় “কতকাল মমতা না করে থাকবে?” ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দেন যে, তিনি যিরূশালেমে ফিরে এসেছেন এবং তাঁর উপাসনা-ঘর নির্মাণ এবার সফল হবে। তিনি আরো প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি যিহূদার অবস্থা ভাল দিকে পরিণত করবেন। তিনি স্বীকার করেন যে, যদিও তিনি যিহূদাকে বিচার করার জন্য বাবিলকে ব্যবহার করেছিলেন তবুও বাবিলের অতিরিক্ত হিংস্র ও মন্দ ব্যবহারের কারণে ঈশ্বর ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে তাদেরকে মাদিয়-পারস্যদের হাতে পড়তে দিয়েছেন।
তাই প্রথম দর্শন দ্বারা ঈশ্বর যিহূদীদেরকে উপাসনা-ঘর পুনরায় নির্মাণের জন্য আরো উৎসাহিত করেন এবং তাদেরকে তাঁর দয়ার নিশ্চয়তা দেন।
৮ম দর্শন সখরিয় ৬:১-৮ ৪টি রথ ক’
৮ম দর্শনে ১ম দর্শন থেকে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং এভাবে ৮টি দর্শনগুলোর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হয়। সখরিয় দু’টি ব্রোঞ্জ পাহাড়ের মাঝখানে ৪টি রথ ও বিভিন্ন রঙ্গের ঘোড়া দেখেন (লাল, কালো, সাদা, নানা রঙ্গের ছাপের ঘোড়া)। এই ৪টি রথকে “আকাশের ৪টি বায়ূ” (বায়ূ বা আত্মা) বলা হয় যাদের ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন যেন তারা প্রথিবীর অবস্থা নিয়ে খোঁজ নেয়। তাদের সংবাদ এমন যে, পরে বলা হয় “দেখ, যারা উত্তর দেশের দিকে যাচ্ছে তারা আমার ক্রোধ শান্ত করেছে” (সখরিয় ৬:৮)। দর্শনটি সম্ভবত বুঝায়, যে ঈশ্বর অনেক যত্নসহকারে যিহূদীদের এবং তাদের চারিদিকের রাজনৈতিক অবস্থা লক্ষ্য ও নিয়ন্ত্রণ করেন। হতে পারে ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ বাবিলের ধ্বংস হল সেই ঘটনা যা ঈশ্বরের “ক্রোধ শান্ত করেছে”।
২য় দর্শন সখরিয় ১:১৮-২১ ৪টি শিং ও ৪জন মিস্ত্রী খ
২য় দর্শনে সখরিয় ৪টি শিং এবং ৪জন মিস্ত্রী (“কামার”) দেখেন। শিং রূপকভাবে শক্তি বুঝায়। দর্শনে বুঝানো হয় যে, “এগুলো সেই শিং যা যিহূদা, ইস্রায়েল ও যিরূশালেমের লোকদের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছে”। অর্থাৎ শিংগুলো আসিরিয়া ও বাবিল সাম্রাজ্যকে বুঝায়, যাদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে (৭২২ খ্রীঃপূঃ) এবং যিহূদাকে (৫৮৬ খ্রীঃপূঃ) বিচার করেছিলেন।
পরবর্তীতে সখরিয় ৪জন মিস্ত্রী দেখেন, যারা শিংদের শক্তি ধ্বংস করে। তাহলে মিস্ত্রী বলতে মাদিয়-পারস্যদের বুঝানো হয়, যাদের ঈশ্বর ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করেছেন। দর্শনটি আবারও সান্ত্বনাদায়ক: ঈশ্বর শক্তিশালী মানবীয় সাম্রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং তিনি শেষে ন্যায্যতা স্থাপন করেন। কেউ কেউ ব্যাখ্যা করে যে, ৪জন মিস্ত্রীর উল্লেখ (মিস্ত্রী মানে কাজে দক্ষ্য লোক) উপাসনা-ঘর নির্মাণ কাজে ঈশ্বরের সমর্থন বুঝায়।
৭ম দর্শন সখরিয় ৫:৫-১১ মাপের পাত্রে স্ত্রীলোক খ’
৭ম দর্শনে সখরিয় একটি মাপের পাত্রে একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পান। ইব্রীয় ভাষায় “পাত্র” শব্দটি হল “ঐফা”, বেচাকেনায় ব্যবহৃত একটি মাপ। পাত্রকে “গোটা দেশের অন্যায়ের” একটি ছবি বলা হয় এবং স্ত্রীলোককে “দুষ্টতা” বলা হয়। দর্শনে স্ত্রীলোককে “পাত্রের মধ্যে ঠেলে দিয়ে পাত্রের মুখে সীসার ঢাকনিটা চেপে” দেওয়া হয় এবং সারস পাখি ডানার দু’টি স্ত্রীলোক পাত্রটিকে শিনিয়র দেশে নিয়ে গিয়ে সেখানে একটি নির্দিষ্ট ঘরে বসায়। “শিনিয়র” এই শব্দটি বাইবেলে ৮ বার ব্যবহৃত এবং তা বাবিল অথবা মেসোপটেমিয়া এলাকাকে বুঝায়।
দর্শনটি দেখায় যে, পাপ বা মন্দতা যিহূদীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে তা বাবিল দেশে রাখা হয়। অসরাসরিভাবে তা বাবিলে থেকে যাওয়া যিহূদীদেরকে বাবিল ত্যাগ করে যিহূদায় ফিরে আসতে উৎসাহিত করবে। হয়তো “শিনিয়র” এখানে রূপকভাবে এদন বাগানও বুঝায়, অর্থাৎ সেই স্থান যেখানে মানব ইতিহাসের শুরুতে পাপ ঘটেছিল। উভয় ২য় ও ৭ম দর্শন সান্ত্বনাদানকারী: আগে যে পাপ করা হয়েছিল, ঈশ্বর তা সমাধান করেন এবং নতুন একটি শুরু দান করেন।
৩য় দর্শন সখরিয় ২:১-১৩ মাপের দড়ি নিয়ে একজন লোক গ
এই দর্শনে সখরিয় “মাপের দড়ি নিয়ে একজন লোককে দেখতে পান” যিনি যিরূশালেম শহরকে মাপতে যাচ্ছেন। তার পিছনে একটি সংবাদ পাঠানো হয়: “যিরূশালেমের মধ্যে মানুষ ও পশু সংখ্যায় বেশী হওয়ার দরুন তাতে কোন দেয়াল থাকবে না। সদাপ্রভু বলছেন যে, তিনি নিজেই তার চারপাশে আগুনের দেয়াল হবেন এবং তিনিই তাঁর মহিমায় সেখানে থাকবেন” (সখরিয় ২:৪-৫)।
এই দর্শনটিও সান্ত্বনাদানকারী: ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন যে, যিরূশালেমে মানুষ ও পশুদের সংখ্যা বাড়বে, যে ঈশ্বর নিজেই শহরের নিরাপত্তা ও মহিমা হবেন। যে অল্পজন যিহূদীরা কষ্ট করে যিরূশালেমে উপাসনা-ঘর নির্মাণ করে, তাদের জন্য তা প্রয়োজনীয় একটি উৎসাহ বাণী। নহিমিয় পরবর্তীতে যিরূশালেমের দেওয়াল পুনরায় নির্মাণ করবেন (নহিমিয় ২-৬) এবং যিরূশালেমের লোকসংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেবেন (নহিমিয় ১১)। সম্ভবত দর্শনটি যিহূদীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে, তাদের এমন একটি আকর্ষণীয় ও আশীর্বাদের সমাজ হওয়া দরকার, যেন চারিদিকের জাতিগুলো তাদের মধ্যে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পায় (যাত্রা ১৯:৪-৬, দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬-৮)।
এমন যিহূদীরা যারা নির্বাসন থেকে ফিরে আসে নি, তাদেরকে এখানে জরুরী আদেশ দেওয়া হয়, যেন তারাও প্রতিজ্ঞাত দেশে চলে আসে: “শোন, শোন। আমি তো চারদিকে তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা উত্তর দেশ থেকে পালিয়ে এস। ওহে সিয়োনের লোকেরা, তোমরা যারা বাবিলে বাস করছ, তোমরা পালিয়ে এস” (সখরিয় ২:৬-৭)। ঈশ্বর আবারও নিশ্চয়তা দান করেন যে, তিনি তাঁর লোকদেরকে রক্ষা করবেন: “যে কেউ তোমাদের ছোঁয় সে আমার চোখের মণি ছোঁয়” (সখরিয় ২:৮)।
পরবর্তী পদগুলো মশীহ সম্বন্ধীয় বাণীতে পরিণত হয়: “হে সিয়োন-কন্যা, আনন্দে গান কর এবং খুশী হও, কারণ আমি আসছি, আর আমি তোমাদের মধ্যে বাস করব। সেই দিন অনেক জাতি আমার সংগে যুক্ত হয়ে আমার লোক হবে। আমি তোমাদের মধ্যে বাস করব।” যখন তা ঘটবে তখন তোমরা জানবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন” (সখরিয় ২:১০-১১)। এখানে পরিষ্কার একটি মশীহ সম্বন্ধীয় ছবি প্রকাশিত: ঈশ্বর যিহূদীদের বেছে নেন, তিনি যিরূশালেম কেন্দ্র হিসাবে স্থাপন করবেন এবং যত জাতি ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হবে, তাদের উপরেও ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকবে। একই বিষয় নতুন নিয়মের ভাষায় বললে: অদ্বিতীয় একটি ঘটনা ঘটনার জন্য ঈশ্বর যিরূশালেমকে বেছে নেবেন। সেখানে যীশু তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ অর্জন করবেন এবং যে কোনো জাতির লোক যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, অর্থাৎ ঈশ্বর সমস্ত জাতি থেকে একটি মণ্ডলী গড়ে তুলবেন এবং এভাবে তিনি তাঁর লোকদের মধ্যেই বাস করবেন। একই ধরণের ছবি বা রূপক ভাষা মীখা ৪:১-২ এবং সখরিয় ৮:২০-২৩ পদেও পাওয়া যায়।
৬ষ্ঠ দর্শন সখরিয় ৫:১-৪ উড়ন্ত বই বা স্ক্রল গ’
৬ষ্ঠ দর্শনে সখরিয় একটি খোলা বই বা স্ক্রল দেখেন যা চামড়ার পতাকার মত আকাশে উড়ে। স্ক্রলটির বর্ণনা বলা হয় “এটা হল সেই অভিশাপ যা সমস্ত দেশে প্রকাশিত হবে” এবং স্ক্রলটি চোরদের ও মিথ্যা শপথকারীদের ঘরে গিয়ে ধ্বংস ঘটাবে। সম্ভবত দর্শনটি দেখায় যে, ঈশ্বরের বাক্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে মন্দদের শাস্তি দেয় এবং এভাবে সাধারণ লোকদেরকে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়ে আসে।
তার সম্পর্কিত ৩য় দর্শনে বিভিন্ন জাতি থেকে মশীহের অনুসরনকারীরা যিরূশালেমে এমন একটি সমাজে পরিণত হয় যা দ্বারা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত।
৪র্থ দর্শন সখরিয় ৩:১-১০ শয়তান ও মহাপুরোহিত যিহোশূয় ঘ
৪র্থ দর্শনের মহাপুরোহিত যিহোশূয় নোংরা কাপড় পড়ে দাঁড়ািয়ে আছেন এবং শয়তান তাকে দোষারোপ করে। দর্শনে যিহোশূয় সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় কিন্তু ঈশ্বর স্বক্রিয়ভাবে তাকে “আগুন থেকে বের করে নেওয়া কাঠ” বলেন, তার নোংরা কাপড় খুলে ফেলার আদেশ দেন এবং তাকে নতুন, পরিষ্কার ও সুন্দর কাপড় ও পাগড়ী পরান।
ঈশ্বর তাকে প্রতিজ্ঞা দেন: “তুমি যদি আমার পথে চল ও আমার সেবা-কাজ কর তাহলে তুমি আমার ঘরের সব কিছু পরিচালনা করবে এবং আমার উঠানের দেখাশোনার ভার পাবে, আর যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে আমি তাদের মতই আমার সামনে আসবার অধিকার তোমাকে দেব” (সখরিয় ৩:৭)। ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা শর্তযুক্ত, অর্থাৎ তার পূর্ণতা যিহোশূয়ের বাধ্যতার উপর নির্ভরশীল। একই ধরণের শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞা মোশির আইন-কানুন, রাজাবলি ও বংশাবলি পুস্তকেও প্রায়ই দেখা যায়।
৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে যখন যিরূশালেমে উপাসনা-ঘর ও বেদী বাবিলীয়দের দ্বারা ধ্বংস হয়, তখন উৎসর্গ পদ্ধতি বন্ধ হয়। ফলে পুরোহিতদের ভূমিকা অর্থহীন হয়ে পড়ে, যা তাদের জন্য অবশ্যই লজ্জার বিষয় ছিল। এই দর্শন দেখায়, যখন যিহূদীরা যিরূশালেমে ফিরে আসে, ব্রোঞ্জ বেদী পুনরায় তৈরি করে এবং উপাসনা-ঘর পুনর্নির্মাণ করে, তখন সাথে পুরোহিতদের ভূমিকাও পুনর্স্থাপন করা হয়। ঈশ্বর পুরোহিতদেরকে আবারও সেই সম্মানের মধ্যস্থকারী ভূমিকা পালন করতে দেন।
দর্শনের পরবর্তী অংশে মশীহ সম্বন্ধীয় কথা পাওয়া যায়: “হে মহাপুরোহিত যিহোশূয়, তুমি শোন এবং তোমার সামনে বসে থাকা তোমার সংগী-পুরোহিতেরা শুনুক। আমি যে সেই চারাকে, অর্থাৎ আমার দাসকে নিয়ে আসব এই পুরোহিতেরা হল তার চিহ্ন” (সখরিয় ৩:৮)। উভয় “চারা” এবং “আমার দাস” শব্দগুলো হল আগের ভাববাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত মশীহ সম্বন্ধীয় রূপক বা পদবী (যিশাইয় ১১:১, ৪৯:৬, যিরমিয় ২৩:৫ ইত্যাদি)।
ঈশ্বর আরো বলেন: “হে যিহোশূয়, আমি তোমার সামনে একটা পাথর রেখেছি। সেই পাথরের উপরে সাতটা চোখ রয়েছে, আর তার উপরে আমি একটা কথা খোদাই করব এবং আমি এক দিনেই এই দেশের পাপ দূর করে দেব” (সখরিয় ৩:৯)। এটা যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু সম্বন্ধীয় কত চমৎকার একটি ভবিষ্যদ্বাণী। “পাথর” শব্দটি হল আর একটি মশীহ সম্বন্ধীয় রূপক, যেমন দানিয়েল ২:৪৪ পদে, যেখানে ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি পাথর সব মানবীয় সাম্রাজ্য ধ্বংস করে ফেলে এবং একটি বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়, যা ঈশ্বরের রাজ্যকে বুঝায়। যিশাইয় ২৮:১৬ পদে বলা হয়েছে: “দেখ, আমি যাচাই করে নেওয়া খুব দামী একটা পাথর বেছে নিয়েছি; সেটা সিয়োনের ভিত্তির কোণের পাথর হিসাবে স্থাপন করেছি। যে কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করে সে সব সময় স্থির থাকবে”, যা যীশুতে পূর্ণ হয় (মার্ক ১২:১০)। সুসমাচারগুলোতে যীশুকে সেই উছোট খাওয়ার পাথর, সেই ভিত্তির কোণের পাথর, সেই আলফা ও ওমিগা, আমাদের বিশ্বাসের আদি ও সিদ্ধিকর্তা বলা হয় (যিশাইয় ১৪:৮, রোম ৯:৩৩, ১ পিতর ২:৮, ইব্রীয় ১২:২, প্রকাশিত ১:৮)। সখরিয় ৩:১০ পদে উল্লিখিত আঙ্গুর ও ডুমুর গাছ হল অর্থনৈতিক সুঅবস্থার ও শান্তির চিহ্ন বা রূপক (মীখা ৪:৪, যিরমিয় ২৩:৫ দেখুন)।
৫ম দর্শন সখরিয় ৪:১-১৪ দু’টি জলপাই গাছের মাঝে বাতিদান ঘ’
৪র্থ দর্শন ছিল আত্মিক নেতা মহাপুরোহিত যিহোশূয় সম্বন্ধীয়, ৫ম দর্শন হল রাজনৈতিক নেতা শাসনকর্তা সরুব্বাবিল সম্বন্ধীয়, যিনি রাজা দায়ূদের একজন বংশধর।
সখরিয় ৭টি শাখার একটি বাতিদান দেখেন, যার তেলের যোগান পাশাপাশি দু’টি জলপাই গাছ থেকে আসে। এই দু’টি গাছ এভাবে বুঝানো হয় “ঐ দু’টা হল সেই দু’জন যারা সমস্ত জগতের প্রভুর সেবা করবার জন্য অভিষিক্ত হয়েছে” (সখরিয় ৪:১৪)। বাইবেলে শুধুমাত্র রাজাকে ও পুরোহিতকে নিযুক্ত করার সময়ে তেলের অভিষেক দেওয়া হত। একারণে বলা যায় যে, দর্শনে দু’টি জলপাই গাছ সরুব্বাবিলকে (রাজনৈতিক নেতা) এবং যিহোশূয়কে (আত্মিক নেতা) বুঝায়।
সরুব্বাবিলকে একটি বাণী ও প্রতিজ্ঞা দেওয়া হয় “সদাপ্রভু সরুব্বাবিলকে এই সংবাদ দিচ্ছেন, ‘শক্তি বা ক্ষমতার দ্বারা নয়, কিন্তু আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমার আত্মা দ্বারা তুমি সফল হবে। হে বিরাট পাহাড়, কে তুমি? সরুব্বাবিলের সামনে তুমি হবে সমভূমি। উপাসনা-ঘরের শেষ পাথরটা লাগাবার সময় লোকেরা চিৎকার করে বলবে যে, ওটা খুব সুন্দর হয়েছে।’ … সরুব্বাবিলের হাত এই উপাসনা-ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং তারই হাত সেটা শেষ করবে” (সখরিয় ৪:৪-৯)।
এই দর্শনটিতে রাজা দায়ূদের বংশধর সরুব্বাবিলকে তার ভূমিকায় অনুমোদন ও সমর্থন দেওয়া হয়, যিনি সাহসের সঙ্গে উপাসনা-ঘর নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ২ বছর আগে ভাববাদী হগয় তার শেষ বাণীতে সরুব্বাবিলকে ‘বেছে নেওয়া’ একজন এবং “সীলমোহরের আংটি” বলেছেন (হগয় ২:২০-২৩), যা মশীহ সম্বন্ধীয় একটি ছবি। ভাববাদী সখরিয় সরুব্বাবিলের বিষয়ে আরো মশীহ সম্বন্ধীয় রূপক বা প্রতিজ্ঞা বলেন: সরুব্বাবিল শুধুমাত্র সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘর তৈরি করবেন তা নয়, প্রকৃতপক্ষে তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর একটি আত্মিক উপাসনা-ঘরও নির্মাণ করবেন, “শক্তি বা ক্ষমতার দ্বারা নয়” বরং ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা। এছাড়া বাতিদানের ছবিও যীশু সম্বন্ধীয়: যীশুই জগতের আলো (যোহন ৮:২৩) এবং তাঁকে দিয়ে স্থাপিত মণ্ডলী হল ঈশ্বরের আলো বহনকারী বাতিদান (প্রকাশিত ১:২০)। এসব কিছু কিভাবে হবে? ঈশ্বরের দয়া দ্বারাই তা হবে (বাংলা অনুবাদে “খুব সুন্দর হয়েছে” এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “দয়া”)।
৯ম দর্শন, নাটকীয় ভাববাদীমূলক একটি চিহ্ন সখরিয় ৬:৯-১৫ চারাকে মুকুট পড়ানো
ঈশ্বর সখরিয়কে একটি নাটকীয় ভাববাদীমূলক চিহ্ন উপস্থাপন করতে বলেন: তিনি একটি মুকুট বানিয়ে তা মহাপুরোহিত যিহোশূয়কে পরাবেন। এই চিহ্নতে এবং সাথে ঈশ্বরের দেওয়া বাণীতে পুরোহিতের ভূমিকা এবং রাজার ভূমিকা এক করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তা অদ্ভুত একটি বিষয় কারণ পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর এই দু’টি ভূমিকাকে উভয় গুরুত্বপূর্ণ বলেন কিন্তু একই সাথে খুব পরিষ্কারভাবে আলাদাও করেন। যদি পুরোহিত রাজার কাজ করেন অথবা রাজা পুরোহিতের কাজ করেন, তবে ঈশ্বর বেশ কঠোরভাবে বিচার করেন। উদাহরণস্বরূপ: রাজা শৌল যখন পুরোহিতের ভূমিকা দখল করে নিজের হাতে উৎসর্গ করেন (১ শমূয়েল ১৩:৮-১৪), দায়ূদ যখন নিয়ম-সিন্দুক সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে যিরূশালেমে আনতে চেষ্টা করেন (২ শমূয়েল ৬:১-১১, ১ বংশা ১৫:১-১৫) এবং রাজা উষিয় যখন উপাসনা-ঘরে প্রবেশ করে ধূপ জ্বালান (২ রাজা ২৬:১৬-২০) তখন ঈশ্বর তাদেরকে সাথে সাথে বিচার করেন।
ঈশ্বর মহাপুরোহিত যিহোশূয়কে বলেন: “এই সেই লোক, যার নাম চারাগাছ; সে নিজের জায়গায় থেকে বেড়ে উঠবে এবং সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করবে। হ্যাঁ, সে-ই সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করবে। তাকে রাজার সম্মান দেওয়া হবে আর সে তার সিংহাসনে বসে শাসন করবে। সে একজন পুরোহিত হিসাবে সিংহাসনে বসবে এবং তাতে এই দুই পদের মধ্যে কোন অমিল থাকবে না” (সখরিয় ৬:১২-১৩)। লক্ষ্য করুন ৯ম দর্শনে এবং বিশেষভাবে এই দু’টি পদে কিভাবে সরুব্বাবিল ও যিহোশূয়, রাজনৈতিক ও আত্মিক ভূমিকা, অর্থাৎ রাজা ও পুরোহিত ভূমিকা এক করা হয়। শুধুমাত্র এখানে, অর্থাৎ শুধুমাত্র মশীহতে এই দু’টি ভূমিকা এক হয়ে যায়: যীশু হলেন উভয় মহাপুরোহিত এবং রাজাদের রাজা, তাঁর মধ্যে উভয় ছবি পূর্ণতা পায়। সাধারণ মানুষ যদি দু’টি অধিকার বা ভূমিকা একসাথে পায় তবে ক্ষমতা বেশি আছে বলে সে তা অবশ্যই ভুলভাবে ব্যবহার করবে, অর্থাৎ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। শুধু যীশুর মত চরিত্রের ব্যক্তি দু’টি অধিকার একসাথে বহন করতে পারে।
লক্ষ্য করুন যে, “এই সেই লোক” (সখরিয় ৬:১২) হল ঠিকে সেই শব্দগুলো যা পন্তীয় পীলাত (না বুঝে) যীশু সম্বন্ধে ব্যবহার করেন যখন যিহূদীরা যীশুর মৃত্যু দাবি করে (যোহন ১৯:৫)।
এই দর্শনগুলো সমাপ্ত হয়ে যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী দিয়ে: “যারা দূরে আছে তারা এসে সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর কাজে সাহায্য করবে। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। যদি তোমরা যত্নের সংগে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্য পালন কর তবেই এই সব হবে” (সখরিয় ৬:১৫)। এখানে দেখানো হয় যে, দূরের লোকেরা কাছে এসে সদাপ্রভুর ঘর তৈরির কাজে সাহায্য করবে, অর্থাৎ অন্য জাতিগুলো থেকে ইচ্ছুক লোকেরা আসবে এবং উপাসনা-ঘরের কাজে অংশ গ্রহণ করবে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেই উপাসনা-ঘরের অংশ হবে, অর্থাৎ মণ্ডলীর অংশ হবে, ঈশ্বরের সেই উপাসনা-ঘর যা সব জাতির লোকদের দিয়ে তৈরি।
ভণ্ডা ও প্রকৃত উপবাস সখরিয় ৭-৮
৮টি দর্শন দেখার প্রায় এক বছর পরে, অর্থাৎ ৫১৮ খ্রীষ্টপূর্বে যখন উপাসনা-ঘরের নির্মাণ ইতিমধ্যে ২ বছর চলছে, যিহূদীরা একটি ব্যবহারিক প্রশ্ন নিয়ে ভাববাদী সখরিয়ের কাছে আসে। তারা প্রায় ৭০ বছর ধরে কিছু শোক দিবসে উপবাস করে আসছে যাতে যিরূশালেমের ধ্বংসের সম্পর্কিত কয়েকটি দুঃখের ঘটনাগুলো স্মরণ করা হত: ৪র্থ মাসে উপবাস (যে তারিখ যখন যিরূশালেমের দেওয়াল ভেঙ্গে বাবিলীয়েরা প্রথম শহরে প্রবেশ করেছিল, যিরমিয় ৩৯:২), ৫ম মাসে উপবাস (যে তারিখ যখন যিরূশালেম পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, ২ রাজা ২৫:৮), ৭ম মাসে উপবাস (যে তারিখ যখন শাসনকর্তা গদলিয়কে খুন করা হয়েছিল, ২ রাজা ২৫:২৫) এবং ১০ম মাসে উপবাস (যে তারিখ যখন বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর প্রথমে যিরূশালেম শহরকে ঘেরাও করে রেখেছিল, ২ রাজা ২৫:১)। যেহেতু যিহূদীরা এখন যিরূশালেমে ফিরে এসে উপাসনা-ঘর পুনরায় নির্মাণ করছে তাদের মনে প্রশ্নটি উঠে, এই শোক দিবসগুলো এখনও পালন করা উচিত কিনা।
সখরিয় একটি বেশ শক্তিশালী উত্তর দেন (সখরিয় ৭:৫-৭)। মোট কথা তিনি বলেন যে, ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে এই উপাসনার দিন ও শোক দিবসগুলো পালন করার আদেশ দেন নি। লোকেরা সেগুলো নিজেই স্থাপন করেছিল, হয়তো দুঃখ, আফসোস বা আত্ম-মায়াদয়ার মনোভাবে। ঈশ্বর তাদের উপবাস নিয়ে বেশি খুশি, তা নয়। বরং ভাববাদী যিরমিয় দ্বারা ঈশ্বর পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন তিনি কি ধরণের উপবাস চান: পাপ থেকে মন ফিরানো, বাবিলের নির্বাসন তাদের পাপের উপযুক্ত বিচার হিসাবে মেনে নেওয়া এবং ঈশ্বরের পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা বিশ্বাসে ধরে রাখা।
সখরিয় ঘোষণা করেন ঈশ্বর কি ধরণের উপবাস পছন্দ করেন (যিশাইয় ৫৮ অধ্যায়ের মত): “তোমরা ন্যায়ভাবে বিচার কর; একে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত হও ও মমতাপূর্ণ ব্যবহার কর। তোমরা বিধবা, অনাথ, বিদেশী ও গরীবদের উপর অত্যাচার কোরো না; মনে মনে একে অন্যের বিরুদ্ধে কুমতলব কোরো না” (সখরিয় ৭:৯-১০, একইভাবে ৮:১৬-১৭, ৮:১৯)।
ফিরে আসা যিহূদীদের নিয়ে ঈশ্বর তাঁর প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন: “সিয়োনের জন্য আমার অন্তরে খুব জ্বালা আছে … আমি সিয়োনে ফিরে গিয়ে যিরূশালেমে বাস করব। তখন যিরূশালেমকে ‘সত্যের শহর’ … সদাপ্রভুর পাহাড়কে ‘পবিত্র পাহাড়’ বলা হবে … পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা আবার যিরূশালেমের খোলা জায়গায় বসে সময় কাটাবে … শহরের বিভিন্ন খোলা জায়গায় অনেক ছেলেমেয়ে খেলা করবে … এই সব যে ঘটবে তা এই জাতির বেঁচে থাকা লোকদের কাছে অসম্ভব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে তা অসম্ভব নয়” (সখরিয় ৮:২-৬, ৮:১৯ পর্যন্ত)। তিনি তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন যে, যদি তারা ইচ্ছুক, অনুতপ্ত ও বাধ্য হয় তবে তিনি সব উদ্ধারের প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূর্ণ করবেন। দেখা যায় যে, ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা পুরোপুরিভাবে পূর্ণ হয় না কারণ যিহূদীরা মনেপ্রাণে বাধ্য হয় না (ইষ্রা, নহিমিয় দেখুন)।
পুস্তকের এই অংশটি চমৎকার একটি মশীহ সম্বন্ধীয় বাণী দিয়ে সমাপ্ত হয়: যিহূদীরা চারিদিকের জাতিদের জন্য এবং এমন কি দূরের সব জাতি ও বিভিন্ন ভাষার লোকদের জন্য আলোস্বরূপ হবে এবং সবাই যুক্ত হয়ে ঈশ্বরের অন্বেষণ করবে (সখরিয় ৮:২০-২৩)।
ভবিষ্যদ্বাণীর একটি রংধনু প্রথম অংশ সখরিয় ৯-১১ অধ্যায়
সখরিয় পুস্তকের ৯ থেকে ১৪ অধ্যায়ে বেশ মাথা ঘুরানোর মত ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়, যাতে অনেক রূপক, চিহ্ন ও অন্যান্য এ্যপোকালিপ্টিক ধরণের উপাদান, অর্থাৎ প্রকাশিত বাক্যের মত ভাষা থাকে। একারণে এই অধ্যায়গুলোকে রূপকভাবে ব্যাখ্যা করা ভাল। মনে রাখুন যে, এ্যপোকালিপ্টিক ধরণের লেখাগুলো কষ্টে বা অত্যাচারে পড়া বিশ্বস্তদের উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্য লেখা হয়, যেন তারা কষ্টের মধ্য দিয়ে গেলেও ঈশ্বরের ভালবাসা, ক্ষমতা ও ন্যায্যতার নিশ্চয়তা পায় (প্রকাশিত বাক্যের শিক্ষা দেখুন)। সখরিয়ের লেখা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বলা যায় যে, সখরিয় পুস্তকটি পণ্ডিতদেরকে নম্রতা শেখানোর জন্যই লেখা হয়েছে :-)! প্রকৃতপক্ষে লেখাটি বোঝা অনেক কঠিন। এক বিষয় পরিষ্কার: লেখার মধ্যে যেখানে সেখানে অনেক বিখ্যাত ও অতি সুন্দর মশীহ সম্বন্ধীয় বাণী পাওয়া যায়, যা নতুন নিয়মে উদ্ধৃতি করা হয়।
সখরিয় ৯:১-৮ পদে সখরিয় যিহূদার চারিদিকের এলাকা বা জাতিদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচারবাণী দেন। তিনি দেখান যে, ঈশ্বর ক্ষমতাশালী ও সার্বভৌম এবং তিনি তাঁর জাতির ঐসময়ের শত্রুদের উপর ন্যায় বিচার করবেন। সম্ভাবনা বেশি যে, এই বিচারবাণীগুলো পূর্ণ হয় যখন প্রায় ১০০ বছর পরে গ্রীসের সেনাপ্রধান আলেকজান্ডার উল্লেখিত ধারাবাহিকতা অনুসারে সম্পূর্ণ এলাকাকে দখল করেন। ঐসময় সম্বন্ধীয় কিছু ঐতিহাসিক তথ্য:
- ৩৩৩ খ্রীঃপূঃ দামেষ্কের লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করে আলেকজান্ডারের সেনাপতির কাছে আত্ম-সমর্পণ করে।
- ৩৩২ খ্রীঃপূঃ ৭ মাস ঘেরাও করার পরে আলেকজান্ডার সোর শহরকে দখল করতে সক্ষম হন।
- ৩৩২ খ্রীঃপূঃ পলেষ্টীয়েরা আলেকজান্ডারের কাছে আত্ম-সমর্পণ করে।
সখরিয় ৯:৭খ পদে পলেষ্টীয়দের সম্বন্ধে একটি ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া আছে: “তাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা হবে আমার লোক; তারা হবে যিহূদার একটা বংশের মত এবং ইক্রোণ হবে যিবূষীয়দের মত”। এই আশারবাণী আক্ষরিক অর্থে এবং রূপক অর্থে পূর্ণ হয়: নতুন নিয়মের সময় পলেষ্টীয়দের এলাকাকে রোমীয়দের অধীনে যিহূদা প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সেখানে সুসমাচার তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে (প্রেরিত ৮-৯)। লক্ষ্য করুন যে সখরিয় ৯:৮ পদ কিন্তু আক্ষরিকভাবে পূর্ণ হয় না, পুরাতন ও নতুন নিয়মের মাঝের সময়েও পূর্ণ হয় না, নতুন নিয়মের সময়ও পূর্ণ হয় না: “আক্রমণকারী সৈন্যদলের হাত থেকে আমি আমার লোকদের রক্ষা করব। কোন অত্যাচারী আর কখনও আমার লোকদের কাছে আসবে না, কারণ এখন আমি পাহারা দিচ্ছি।” প্রকৃতপক্ষে, এই এলাকাকে প্রায়ই আক্রমণ ও দখল করা হচ্ছে, যেমন: গ্রীসের আলেকজান্ডার, প্টলেমীদের ও সিলুকীয়দের দ্বারা। পরবর্তীতে যিহূদীরা মাক্কাবীয়দের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে এবং এলাকাটি তাদের অধীনে চলে আসে। কিন্তু নতুন নিয়মের সময়ের একটু আগে তা রোমীয়দের দ্বারা পুনরায় দখল হয়।
সখরিয় ৯:৯-১৭ পদে বর্ণনা করা হয় কিভাবে একজন খুব ভিন্ন রাজা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজ্য স্থাপন করেন, অর্থাৎ কিভাবে মশীহ ঈশ্বরের রাজ্য নিয়ে আসেন। সখরিয় ৯:৯ পদটি নতুন নিয়মে মথি ২১:৫, লূক ১৯:৩৫ এবং যোহন ১২:১৫ পদে উদ্ধৃতি করা হয়। সম্ভবত সখরিয় ৯:১০-১৬ হল রূপক ভাষায় নতুন নিয়মের মণ্ডলীর ছড়িয়ে পড়ার একটি বর্ণনা। লক্ষ্য করুন, যীশু ও যীশুর চরিত্র সখরিয় ৯:৯-১০ পদে কত নির্দিষ্ট ও সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং খ্রীষ্টেতে নতুন চুক্তি সখরিয় ৯:১১-১২ পদে কত সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সখরিয় ১০:১-১১:৩ পদে যিহূদা ও ইস্রায়েলের পুনরুদ্ধারের একটি ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়। যে অল্পসংখ্যক যিহূদীরা কষ্ট করে উপাসনা-ঘর নির্মাণ করছে, তাদের জন্য এই বাণীটি অবশ্যই উৎসাহের ছিল। যদিও তারা বর্তমানে দেবতাপূজারী ও দমনকারী সাম্রাজ্যগুলোর অধীনে থাকে তবুও বাণীটি তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।
সখরিয় ১১:৪-১৭ পদে ভাল ও বাজে (বা নির্বোধ) মেষপালক, অর্থাৎ ভাল ও খারাপ নেতাদের বিষয়ে একটি গল্প পাওয়া যায়। সম্ভাবনা বেশি যে, ভাল রাখাল মশীহকে বুঝায়, কিন্তু এছাড়া গল্পটি বেশি পরিষ্কার নয়। খারাপ রাখালেরা ভাল রাখালকে অগ্রাহ্য করে এবং তার চাকরী নষ্ট করে। তারা তাকে মাত্র ৩০ রূপার টুকরা (বা ‘রৌপ্য মুদ্রা’) বেতন দেয়, যা তিনি “সদাপ্রভুর ঘরে কুমারের কাছে” ফেলে দেন। এই পদগুলো মথি ২৭:৯-১০ পদে উদ্ধৃতি করা হয় এবং ৩০ রূপার টাকার জন্য যিহূদার বিশ্বাসঘাতকতার সাথে বেশ মিল পাওয়া যায়। আইন-কানুন অনুসারে ৩০ রূপার টুকরা ছিল একটি মৃত দাসের জন্য ক্ষতিপূরণ (যাত্রা ২১:২৩), অর্থাৎ তুচ্ছ করার মত একটি কথা বা মূল্যায়ন। কেউ কেউ মনে করে যে গল্পটি বাস্তব, অর্থাৎ সখরিয় প্রকৃতপক্ষে রাখাল হিসাবে কাজ করে খারাপ ব্যবহার পেয়েছেন। অন্যেরা মনে করে যে গল্পটি রূপক।
পদগুলোতে কিছু ভয়ংকর কথাও পাওয়া যায়। হয়তো তা এমন যিহূদীদের জন্য সাবধানবাণী, যারা যীশুকে বিশ্বাস করতে প্রত্যাখ্যান করে। সম্ভবত তা আরো বুঝায় যে, যীশুই হলেন সেই উছোট খাওয়ার পাথর, তাঁর সম্মুখীন হয়ে সবাইকে সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি বিশ্বাস করবে বা তাঁকে অগ্রাহ্য করবে।
ভবিষ্যদ্বাণীর একটি রংধনু দ্বিতীয় অংশ সখরিয় ১২-১৪
সখরিয় যখন “সেই দিন” বলেন (সখরিয় ১২:৪), সম্ভবত তিনি শেষকাল নিয়ে কথা বলেন। অর্থাৎ তিনি যীশুর প্রথম আগমনকে বুঝান না, বরং যীশুর দ্বিতীয় আগমন, অর্থাৎ আমাদের বর্তমান যুগেরও পরের একটি ঘটনা। সখরিয়ের বাণী এবং যোয়েল ৩ অধ্যায়ে, যিহিষ্কেল ৩৮ অধ্যায়ে এবং প্রকাশিত বাক্যে ২০ অধ্যায়ে শেষ যুদ্ধের বর্ণনার সাথে মিল পাওয়া যায়। বাণীটিতে “ইস্রায়েল” ও “যিহূদা” নিয়ে কথা হয়, কিন্তু সম্ভবত তা এভাবে ব্যাখ্যা করা ভাল: “ইস্রায়েল” মানে “ঈশ্বরের লোক”, অর্থাৎ উভয় যিহূদী ও অযিহূদী বিশ্বাসী (গালাতীয় ৩:৬)। একইভাবে যখন “যিরূশালেম” বা “সদাপ্রভুর শহর” বলা হয়, তা রূপকভাবে ঈশ্বরের সমস্ত লোকদের বাসস্থান, অর্থাৎ মণ্ডলীকে বুঝায় (মীখা ৪:১-২)।
সখরিয় ১২:১-৯ পদে শেষ যুদ্ধ, যিরূশালেমের উদ্ধার এবং সব মন্দ মানুষ ও মন্দ সরকারের উপরে ঈশ্বরের জয় বর্ণনা করা হয়। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছুক লোকদের মধ্যেও একটি রূপান্তর বা পরিবর্তন দরকার: সখরিয় ১২:১০-১৩:৯ পদে বর্ণনা করা হয়, কিভাবে মানুষ মন ফিরায় এবং ভাল মেষপালকের নেতৃত্বকে গ্রহণ করে, এমন কিছু যা শুধুমাত্র ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা সম্ভব: “আমি দায়ূদের বংশ ও যিরূশালেমের বাসিন্দাদের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব; তিনি দয়া করেন ও প্রার্থনার মনোভাব দেন। তাতে তারা আমার দিকে, অর্থাৎ যাঁকে তারা বিঁধেছে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখবে। একমাত্র সন্তানের জন্য বিলাপ করবার মত করে তারা তাঁর জন্য বিলাপ করবে এবং প্রথম সন্তানের জন্য যেমন শোক করে তেমনি ভীষণভাবে শোক করবে” (সখরিয় ১২:১০, যা উদ্ধৃতি করা হয় যোহন ১৯:৩৭ পদে)। এর প্রথম পূর্ণতা পঞ্চাশত্তমী দিনে ঘটে যখন হাজার হাজার মানুষ মন ফিরে যীশুতে বিশ্বাসী হয়ে যায় (প্রেরিত ২)। কিন্তু তা পরবর্তীতেও পূর্ণ হয়, যেমন লূক ২৩:৪৮ পদে যখন অনেকে যীশুর মৃত্যুর সাক্ষী হয়: “যে লোকেরা সেখানে জড়ো হয়েছিল তারা এই সমস্ত ঘটনা দেখে বুক চাপ্ড়াতে চাপ্ড়াতে সেখান থেকে ফিরে গেল”। কিন্তু পবিত্র আত্মার চেতনাদায়ক কাজের কারণে যখন কোনো একজন ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে যীশুতে বিশ্বাস রাখে, তখনই এই বাণী পূর্ণ হয়। সখরিয়ের কথটি বাইবেলে অন্যান্য মশীহ সম্বন্ধীয় পদের সাথে মিলে, যেমন গীত ২২ অথবা প্রকাশিত বাক্য ১:৭ “দেখ, তিনি মেঘের সংগে আসছেন। প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দেখবে; যারা তাঁকে বিঁধেছিল তারাও দেখবে এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাঁর জন্য জোরে জোরে কাঁদবে। তা-ই হোক, আমেন”। যিশাইয় ৫৩:৫ পদ স্মরণ করিয়ে দেয়, ঠিক কোন কারণে যীশুকে বিঁধানো হয়েছিল: “আমাদের পাপের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে; আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে। যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে”। সখরিয় ১৩:১-৯ পদে বর্ণনা করা হয়, কিভাবে মশীহ পাপ ও অন্যায় থেকে সেই শুচিকরণ অর্জন করেছেন, যার ফলে মানুষ রূপান্তরিত হয়ে একটি নতুন জীবন করতে সক্ষম হয়। সখরিয় ১৩:৭ সেই বিখ্যাত পদ “হে তলোয়ার, তুমি আমার পালকের বিরুদ্ধে, আমার সংগের লোকের বিরুদ্ধে, জেগে ওঠো। পালককে আঘাত কর, তাতে মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে; আমি মেষের বাচ্চাগুলোর বিরুদ্ধেও আমার হাত উঠাব” উদ্ধৃতি করা হয়েছে মথি ২৬:৩১ এবং মার্ক ১৪:২৭ পদে।
সখরিয় ১৪:১-৫খ পদে যিরূশালেমের পতনের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হতে পারে তা রোমীয়দের দ্বারা ৭০ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেমের ধ্বংসকে বুঝায়, এমন কি রূপক ভাষায় পেল্লার দিকে যিরূশালেম মণ্ডলীর পলায়নের বর্ণনাও পাওয়া যায় (৬৮ খ্রীষ্টাব্দে, সখরিয় ১৪:৩-৫)। অথবা সম্পূর্ণ অংশ (সখরিয় ১৪:১-২১) যীশুর দ্বিতীয় আগমনকে বুঝায়, যাতে শেষ যুদ্ধে মন্দকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করা হবে এবং যীশু ভাল সব কিছুকে পুনরুদ্ধার করবেন। ফলে একটি শুচি, পবিত্র ও শান্ত অবস্থা তৈরি হবে যেখানে সব কিছু তার সঠিক ভূমিকা পালন করবে।
সখরিয় তার শ্রোতাদের ও পাঠকদের কাছে আশার একটি ছবি এবং মশীহের জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করার অনুপ্রেরণা দান করে তার পুস্তক সমাপ্ত করেন।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন!