নির্বাসন থেকে ফিরে আসা যিহূদী, যারা নিরাশিত ও শিথিল হয়ে গেছে, ভাববাদী মালাখি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা মনেপ্রাণে ঈশ্বরের বাধ্য হয় এবং যেন আগ্রহের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাত মশীহের জন্য অপেক্ষা করে।
মালাখি হলেন পুরাতন নিয়মের শেষ ভাববাদী। মালাখি সম্বন্ধে পুরাতন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকে উল্লেখ নেই এবং তিনি তার পুস্তকেও নিজের জীবন সম্বন্ধে কিছু জানান না। তাই আমরা তার সম্বন্ধে শুধুমাত্র তার বাণীগুলো জানি। তার নাম মালাখি (মালাখি ১:১), যার অর্থ হল ‘সংবাদদাতা’। সম্ভবত তা ছিল মা-বাবার দ্বারা দেওয়া তার সাধারণ নাম (যিহূদীদের অধিকাংশ নামের অর্থ আছে)। অথবা তিনি তার সাধারণ নাম উল্লেখ না করে বরং তার ভূমিকা অনুসারে নিজের পরিচয় দেন। তিনি সেই শব্দ ‘মালাখ’ (ইব্রীয় ‘সংবাদদাতা’) এই ছোট পুস্তকে প্রথম পদের পাশাপাশি আর তিন বার ব্যবহার করেন, একবার তিনি তা ব্যবহার করেন পুরোহিতদের ভূমিকা বর্ণনা করার জন্য (মালাখি ২:৭) এবং আর দু’বার মশীহের পথ প্রস্তুতকারীকে বর্ণনা করার জন্য (মালাখি ৩:১)।
যিহূদীদের তিনটি দল বাবিলে নির্বাসন থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরেছিল (৫৩৬, ৪৫৮ ও ৪৪৪ খ্রীষ্টপূর্বে)। তারা অনেক বড় আশা, উঁচু আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস নিয়ে নিজের দেশে ফিরেছিল। তাদের প্রতাশা ছিল আগের ভাববাদীরা যেমন বলেছিলেন, ঈশ্বর ঠিক তেমনি মশীহ দিয়ে শাসিত সেই রাজ্য শীঘ্রই স্থাপন করবেন।
কিন্তু তাদের আশা যত বড় ছিল, যিহূদায় ফিরে এসে তারা নিজেকে তত ভাল অবস্থায় খুঁজে পায় নি: দেবতাপূজারী মাদিয়-পারস্যরা এখনও তাদের উপর রাজত্ব করে; প্রতিজ্ঞাত দেশে তাদেরকে অন্য জাতিদের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে (যারা নির্বাসনের সময়ে যিহূদায় বাস করতে শুরু করেছিল); তারা খুব কষ্ট করে যিরূশালেমের উপাসনা-ঘর ও দেওয়াল পুনরায় নির্মাণ করেছে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। তাহলে “দুধ ও মধুর অভাব নেই” সেই প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা কোথায়? তাদের হতাশা ধীরে ধীরে পরিণত হয় একটি হাল্কা-পাতলা মনোভাবে: উপাসনা-ঘর নিয়ে, উৎসর্গগুলো নিয়ে এবং এমন কি ঈশ্বরকে নিয়ে। তারা বলে “ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে এবং শোক প্রকাশ করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করাতে আমাদের কি লাভ হল?” (মালাখি ৩:১৩-১৪) এবং “কোথায় সে ঈশ্বর যিনি ন্যায়বিচার করেন?” (মালাখি ২:১৭)।
ভাববাদী মালাখি তাদের শিথিল হৃদয়, ঠাণ্ডা ধার্মিকতা ও অবহেলার মনোভাবের বিষয়ে দোষ ধরেন। তিনি তাদেরকে চেতনা দেন যে, এভাবে ধর্মকর্ম করা মানে ঈশ্বরকে অসম্মান দেখানো, তাঁকে না জানা, না বুঝা এবং তাঁকে চারিদিকে জাতিদের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করা। মালাখি এই বিষয়ে বিশেষভাবে পুরোহিতদের দোষ ধরেন, যারা আত্মিক নেতা হলেও খোঁড়া বা অসুস্থ পশু উৎসর্গ হিসাবে গ্রহণ করে মানদণ্ড কমতে দিচ্ছেন। মালাখি বর্তমান পুরোহিতদের স্মরণ করিয়ে দেন, মোশির সময়ে পুরোহিতেরা কত চমৎকারভাবে কাজ করেছিলেন এবং তাদের উঁচু আহ্বানে তারা কত গুরুত্ব দিয়েছিলেন: “তাদের (লেবির বংশের) জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা হল জীবন ও মংগলের ব্যবস্থা… যেন তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে; সত্যিই তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করত। তাদের মুখে সত্যিকারের শিক্ষা ছিল এবং তাতে কোন মিথ্যা থাকত না। শান্তিতে ও সততায় তারা আমার সংগে চলাফেরা করত এবং অনেককে পাপ থেকে ফিরাত। আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া পুরোহিতদের উচিত যাতে সেই শিক্ষা হারিয়ে না যায়। এছাড়া ঈশ্বরের বাক্য জানবার জন্য পুরোহিতদের কাছেই লোকদের যাওয়া উচিত, কারণ তারাই সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সংবাদদাতা” (মালাখি ২:৪-৭)।
সম্ভবত, পুরোহিতদের দুর্নীতি এবং শিথিল হৃদয় দেখে লোকেরা দশমাংশ দেওয়া বন্ধ করেছিল। যারা দশমাংশ দান করার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত এবং ভাল কাজ করে, তাদের জন্য মালাখি ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রতিজ্ঞা দেন।
তাছাড়া যিহূদীরা নিজেদের স্ত্রীকে ত্যাগ করে চারিদিকের জাতিদের মধ্য থেকে দেবতাপূজারী মহিলাদেরকে বিয়ে করতে শুরু করেছে। এতে তারা ঠিক সেই পাপে পুনরায় লিপ্ত হয়, যার ফলে ইস্রায়েল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছিল, একেবারে বিচারকর্তৃগণের যুগ থেকে। মালাখি শক্তিশালীভাবে দেবতাপুজারী বিয়ে করার বিরুদ্ধে (মালাখি ২:১১-১২) এবং যে কোনো কারণে স্ত্রীকে ত্যাগ বা বিচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে কথা বলেন (মালাখি ২:১৪-১৬)। তিনি বিবাহ বিচ্ছেদকে অত্যাচার বা হিংস্রতার সঙ্গে তুলনা করেন। বিচ্ছেদের অর্থ হল ঈশ্বর যা নিজেই এক করেছেন (আদি ২:২৪), তা জোর করে কেটে ভাগ করা। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ হল হিংস্র কাজ এবং গভীরভাবে ক্ষতিকারক।
মালাখি খুব চেতনাদায়ক কথা দিয়ে যিহূদীদেরকে দেখান যে, তাদের ধর্মকর্ম (যেমন বেদী চোখের জলে ভাসানো) ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ তারা জীবনের সাধারণ ব্যবহারিক বিষয়ে ঈশ্বরের বাধ্য হতে প্রত্যাখ্যান করে। যেমন: তারা যৌবনকালের স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে (মালাখি ২:১৩,১৫)। আইন-কানুন অনুসারে যদি একজন তার প্রতিবেশীর প্রতি ন্যায্য ব্যবহার না করে বরং দাবি করে যে, সে ধর্মকর্মে ব্যস্ত, তবে তা হল অজুহাত মাত্র এবং তা ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত নয়।
ঈশ্বর বলেন না যে, বিবাহ বিচ্ছেদ সব ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। তিনি একটি অত্যাচারিত স্ত্রী (অথবা স্বামী) বছরের পর বছর অত্যাচার সহ্য করতেও বলেন না। বরং ঈশ্বর বিবাহ ভাঙ্গার দোষ সেই ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেন, যে প্রথম বিবাহের চুক্তি ভেঙ্গে দিয়েছে, যে তার বিবাহ দিনের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্ত নয় (স্ত্রীকে ভালবাসা, তার নিরাপত্তা, যোগান ও সমর্থন নিশ্চিত করা)।
অবশেষে মালাখি যিহূদীদের নিশ্চয়তা দেন যে, মশীহ অবশ্যই আসবেন এবং মশীহ দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ হবে। কিন্তু মশীহ যে শুধুমাত্র মন্দদের চ্যালেঞ্জ করবেন, তা নয় বরং সেইসাথে তিনি শিথিল হৃদয়ের লোকদেরকেও চ্যালেঞ্জ করবেন। তিনি তাদের রূপা যাচাই করার ও খাঁটি করে তোলার আগুন দিয়ে এবং ধোপার শক্তিশালী সাবান দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে দেবেন। যারা তাকে ভক্তিপূর্ণ ভয়ে মানে, তাদের জন্য তিনি আলো ও সুস্থতা হবেন এবং তিনি সব ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো পুনরায় ঠিক করবেন। মশীহ সম্বন্ধীয় এই চমৎকার আশা ঈশ্বরের অনুসরণকারীদেরকে সেই দিন পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাবে।
লেখক মালাখি
মালাখি হলেন পুরাতন নিয়মের শেষ ভাববাদী। মালাখি পুরাতন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকে উল্লেখ নেই এবং তিনি তার পুস্তকেও নিজের জীবন সম্বন্ধে কিছু জানান না। তাই আমরা তার সম্বন্ধে শুধুমাত্র তার বাণীগুলো জানি। তিনি নামের পাশাপাশি নিজের বিষয়ে আর কোন তথ্য দেন না, বাবার নাম, বংশ তালিকা, গ্রামের নাম, রাজাদের নাম – এসব তিনি দেন না। তার নাম মালাখি (মালাখি ১:১), যার অর্থ হল ‘সংবাদদাতা’। সম্ভবত, তা ছিল মা-বাবার দ্বারা দেওয়া তার সাধারণ নাম (যিহূদীদের অধিকাংশ নামের অর্থ আছে)। অথবা তিনি তার সাধারণ নাম উল্লেখ না করে বরং তার ভূমিকা অনুসারে নিজের পরিচয় দেন। তিনি সেই শব্দ ‘মালাখ’ (H4401, ইব্রীয় ‘সংবাদদাতা’) এই ছোট পুস্তকে চার বার ব্যবহার করেন:
- মালা ১:১ ১ বার ব্যবহৃত নিজের পরিচয় দান।
- মালা ২:৭ ১ বার ব্যবহৃত পুরোহিতদের ভূমিকা বর্ণনা করার সময়: তারা সদাপ্রভুর ‘মালাখ’।
- মালা ৩:১ ২ বার ব্যবহৃত একজন সংবাদদাতা আসবেন যিনি সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত করবেন, যা সম্ভবত বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে বুঝায়।
কিছু বাইবেল পণ্ডিত মনে করে যে, আইন-শিক্ষক ইষ্রা অথবা শাসনকর্তা নহিমিয় মালাখি পুস্তক লিখেছেন। অবশ্যই ইষ্রা ও নহিমিয় প্রায় মালাখির সমসাময়িক, কিন্তু দু’জন নিজের পুস্তকে নিজের নাম খুব পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেন। কেউ কেউ মনে করে যে, মালাখি ছিলেন লেবীয় বা পুরোহিত, কারণ পুস্তকের একটি বেশ বড় অংশ হল তাদেরই কাছে ঈশ্বরের বাণী, কিন্তু এসব নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না।
আমরা মালাখির জীবন সম্বন্ধে তেমন কিছু জানি না, কিন্তু একটি বিষয় জানা যায়: কিছু শ্রোতা তার বাণীতে সাড়া দিয়েছিল (মালা ৩:১৬)।
মালাখি পুস্তকের লেখার তারিখ
মালাখি তার পুস্তকে কোনো তারিখ, কোনো রাজার রাজত্ব বা ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করেন না। তিনি যখন শাসনকর্তার ভূমিকা উল্লেখ করেন (মালা ১:৮), তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করেন (‘পেহা’), যা ছিল মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যে (৫৩৬-৩৩৩ খ্রীঃপূঃ) শাসনকর্তাদের বুঝানোর জন্য প্রচলিত শব্দ।
মালাখি তার পুস্তকে পুরোহিতদের, চালিত উৎসর্গ পদ্ধতি, বেদী এবং উপাসনা-ঘর উল্লেখ করেন। তাই বুঝা যায় যে, তিনি ৫১৬ খ্রীষ্টপূর্বে সরুব্বাবিল দ্বারা নির্মিত উপাসনা-ঘর সমাপ্ত হওয়ার পরে কথা বলেন। মালাখি তার পুস্তকে লোকদের এবং পুরোহিতদেরকে তাদের হালকা-পাতলা মনোভাবের জন্য চ্যালেঞ্জ করেন। প্রকৃতপক্ষে নহিমিয় যিহূদার শাসনকর্তা হিসাবে (৪৪৪-৪৩২ খ্রীঃপূঃ) যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেষ্টা করেন (যখন তিনি ৪৩২ খ্রীষ্টপূর্বে রাজা অর্তক্ষস্তের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার পরে যিহূদায় ফিরে আসেন) সেগুলো এবং মালাখি পুস্তকে উল্লিখিত সমস্যাগুলোর মধ্যে যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়:
- পুরোহিতেরা দুর্নীতি গ্রস্ত মালাখি ১:৬-২:৯ নহি ১৩:৭-৯
- দেবতাপূজারী স্ত্রীদের গ্রহণ মালাখি ২:১১-১৫ নহি ১৩:২৩-২৭
- সামাজিক অন্যায় মালাখি ৩:৫ নহি ৫:১-১৩
- দশম অংশ ঠিকমত না দেওয়া মালাখি ৩:৮-১০ নহি ১৩:১০-১৪
- বিশ্রামবার ঠিকমত পালন না করা মালাখি ২:৪-৮, ৪:৪ (আইন) নহি ১৩:১৫-২২
উল্লিখিত সমস্যাগুলোর মিল দেখে বুঝা যায় যে, নহিমিয় ও মালাখি প্রায় সমসাময়িক ব্যক্তি। ধরা হয় যে, মালাখি পুরাতন নিয়মের শেষ ভাববাদী ছিলেন এবং তিনি প্রায় ৪৪০-৪০০ খ্রীষ্টপূর্বে কথা বলেছিলেন।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
ভাববাদী মালাখি বাবিলের নির্বাসন থেকে যিহূদায় ও যিরূশালেমে ফিরে আসা যিহূদীদের কাছে কথা বলেন। ৫৩৯ খ্রীষ্টপূর্বে মাদিয়-পারস্য রাজা কোরস বিরাট বাবিল সাম্রাজ্যকে দখল করেন। বাবিলীয়েরা পরাজিত জাতিদের জোরপূর্বকভাবে নির্বাসিত ও মিশ্রিত করত, কিন্তু রাজা কোরস এই নিয়ম বাদ দেন। তিনি ৫৩৮ খ্রীষ্টপূর্বে নির্বাসিত জাতিদেরকে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার এবং সেখানে তাদের দেবতার উদ্দেশ্যে মন্দির পুনরায় নির্মাণ করার অনুমতি দেন (ইষ্রা ১:২-৪)। যিরমিয়ের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ‘নির্বাসন শুধুমাত্র সত্তর বছর টিকে থাকবে’ তা এভাবে পূর্ণ হয় (যিরমিয ২৯:১০)।
প্রায় পঞ্চাশ হাজার উচ্চমনা যিহূদী লোকেরা এই ঐতিহাসিক ঘটনা সুযোগ হিসাবে ধরে এবং সরুব্বাবিলের নেতৃত্বে ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদায় অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে আসে (ইষ্রা ২:৬৪)। তারা কিছু সমস্যার পরে উপাসনা-ঘর পুনরায় নির্মাণ করতে সক্ষম হয় (৫২০-৫১৬ খ্রীঃপূঃ, ইষ্রা ৬:১৬)। ৪৫৮ খ্রীষ্টপূর্বে যিহূদীদের দ্বিতীয় দল আইন-শিক্ষক ইষ্রার নেতৃত্বে (ইষ্রা ৭-৮) এবং ৪৪৪ খ্রীষ্টপূর্বে তৃতীয় দল শাসনকর্তা নহিমিয়ের নেতৃত্বে (নহিমিয় ২) বাবিলের নির্বাসন থেকে যিহূদায় ফিরে আসে। ইষ্রার নেতৃত্বে কিছু আত্মিক পুনঃসংস্কার ঘটে (৪৫৮ খ্রীঃপূঃ, ইষ্রা ৭-১০) এবং নহিমিয়ের নেতৃত্বে যিরূশালেমের দেওয়াল ও ফটক পুনরায় নির্মাণ করা হয় (৪৪৪ খ্রীঃপূঃ, নহিমিয়)।
প্রকৃতপক্ষে, নির্বাসনে যিহূদীদের অবস্থা যে খুব খারাপ ছিল, তা নয়। তারা বাবিলে কাজ করে অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, যার কারণে সব ছেড়ে দিয়ে এখন নিজের দেশে ফিরে আসরা ছিল তাদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত ও ত্যাগ-স্বীকারের বিষয়। যারা ফিরে আসে তারাই হল সবচেয়ে বাধ্য, ইচ্ছুক ও ঈশ্বরের বাক্যের উপর নির্ভর করা যিহূদী। তারা এমন লোক যারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর তাঁর নির্বাসিত জাতিকে ত্যাগ করেন নি এবং ঈশ্বরের আহ্বান এখনও তাদের উপরে আছে। তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের উপর অধিকার পাওয়ার আশা করে এবং বিশ্বাস করে যে, নির্বাসনের আগে দেওয়া ভাববাদীদের চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সব ঈশ্বর পূর্ণ করতে যাচ্ছেন (যেমন যিশাইয়, মীখা এবং আমোষও বলেছিলেন)।
কিন্তু তাদের প্রত্যাশা যত বড় ছিল, যিহূদায় ফিরে এসে তারা নিজেকে তত ভাল অবস্থায় খুঁজে পায় নি, ‘আগের মত’ অবশ্যই লাগে নি, কারণ:
- এই ‘দ্বিতীয় প্রস্থানে’ যিহূদীরা তুলনামূলকভাবে ছোট দল (প্রায় পঞ্চাশ হাজার)। মোশির সময়ে ইস্রায়েলের লোকসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০-৩০ লক্ষ (যাত্রা ১২:৩৭)।
- শুধুমাত্র যে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ, এমন নয়, বরং দেবতাপূজারী মাদিয়-পারস্যরাও তাদের উপরে এখনও রাজত্ব করে ও কর আদায় করে এবং তাদেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে সেই সব পরজাতিদের সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে, যারা নির্বাসনের সময় থেকে সেখানে বাস করতে শুরু করেছিল।
- ফিরে আসা লোকেরা হল যিহূদা ও বিন্যামিন গোষ্ঠির (ইষ্রা ১:৫), অন্য ১০টি গোষ্ঠি আর পাওয়া যায় না।
- যদিও তাদের শাসনকর্তা হলেন দায়ূদের পরিবারের বংশধর (সরুব্বাবিল ৫৩৯ খ্রীঃপূঃ থেকে) বা কম পক্ষে নিজের জাতির একজন (নহিমিয়, ৪৪৪ খ্রীঃপূঃ থেকে), তবুও তিনি দেবতাপূজারী মাদিয়-পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে একজন সরকারি অফিসার মাত্র।
- মাদিয়-পারস্য সরকার কর আদায় করে এবং যিহূদীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশি ভাল না।
- তারা পুনরায় প্রতিজ্ঞাত দেশে বসবাস করে ঠিকই, কিন্তু দেশটিতে অন্য জাতিরাও বাস করে, যারা যিহূদীদের নির্বাসনে যাওয়ার পরে সেখানে চলে এসেছে।
- দেশের শহরগুলো এখনও ভাঙ্গা অবস্থায় আছে, অর্থাৎ প্রাচীর বা সুরক্ষার ব্যবস্থা বেশিরভাগ নেই।
- রাজা কোরস শলোমনের উপাসনা-ঘরের জিনিস-পত্র যিহূদীদেরকে ফেরত দেন এবং তারা সেগুলো যিহূদায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে (ইষ্রা ১:৬-১১), কিন্তু নিয়ম-সিন্দুক আর নেই এবং উপাসনা-ঘর সমাপ্ত হওয়ার পরেও মহাপবিত্র স্থান খালি থাকে।
ফিরে আসা যিহূদীদের সেই উঁচু আশা (প্রতিজ্ঞাত দেশে দায়ূদ রাজবংশের একজন মশীহের অধীনে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপন) যখন বাস্তবায়ন না হয়, তখন হতাশা, ঈশ্বরের প্রতি ক্ষোভ ও ধর্মীয় বিষয়ে হালকা-পাতলা মনোভাব তৈরি হয়। তারা খুঁত সহ পশু উৎসর্গ করে (মালাখি ১:৬-১৪) এবং পুরোহিতেরা তা গ্রহণ করে (মালাখি ২:১-৯)। তারা মোশির আইন-কানুন ভেঙ্গে নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপোষ করে নিজেদের স্ত্রীকে ত্যাগ করে দেবতাপূজারী মহিলাদেরকে বিয়ে করে (মালাখি ২:১০-১৬)। তারা বলে “ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে এবং শোক প্রকাশ করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করাতে আমাদের কি লাভ হল?” (মালাখি ৩:১৩-১৪) এবং “কোথায় সে ঈশ্বর যিনি ন্যায়বিচার করেন?” (মালাখি ২:১৭)।
মালাখি পুস্তকে এই ধরণের একটি ভাব দেখা যায়: দাবি পূর্ণ করার জন্য কোনো রকম ধর্মকর্ম করা, কিন্তু হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় নেই, ঈশ্বরের চরিত্রের গভীর জ্ঞানও নেই। তাদের মধ্যে হতাশা, ক্লান্তি, বিরক্তি এবং এমন কি ক্ষোভ কাজ করে। তারা মনে করে যে, ঈশ্বরের অনেক বেশি দাবি করেন কিন্তু তিনি অল্প পরিমানে আশীর্বাদ করেন।
ঈশ্বর এবং তাঁর লোকদের মধ্যে তর্ক – মালাখি পুস্তকের কাঠামো
মালাখি পুস্তকের একটি বড় অংশ হল ঈশ্বর ও লোকদের মধ্যে তর্কাতর্কি। ঈশ্বর কিছু বলেন, লোকেরা উত্তরে একটি নালিশ বা প্রশ্ন উঠায়, ঈশ্বর তার উত্তর দেন ইত্যাদি। এভাবে কথাবার্তা ৬বার ঘুরে আসে:
প্রথম তর্ক মালাখি ১:২-৫
ঈশ্বর “আমি তোমাদের ভালবেসেছি,”
লোকেরা “তুমি কেমন করে আমাদের ভালবেসেছ?”
ঈশ্বর “এষৌ কি যাকোবের ভাই ছিল না? তবুও তো আমি যাকোবকে ভালবেসেছি কিন্তু এষৌকে অগ্রাহ্য করেছি। আমি তার পাহাড়গুলো ধ্বংসস্থান করেছি ও তার জায়গা মরু-এলাকার শিয়ালগুলোকে দিয়েছি।”
দ্বিতীয় তর্ক মালাখি ১:৬-২:৯
ঈশ্বর “যদি মনিব হয়ে থাকি তবে আমার পাওনা শ্রদ্ধা কোথায়? ওহে পুরোহিতেরা, তোমরাই আমাকে তুচ্ছ করছ।”
লোকেরা “আমরা কেমন করে তোমাকে তুচ্ছ করেছি?”
ঈশ্বর “আমার বেদীর উপরে তোমরা অশুচি খাবার রেখে আমাকে তুচ্ছ করেছ।”
লোকেরা ‘সদাপ্রভুর টেবিল ঘৃণার যোগ্য,’
ঈশ্বর “পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য যখন তোমরা অন্ধ পশু নিয়ে আস তখন তা কি অন্যায় নয়? যখন তোমরা খোঁড়া ও অসুস্থ পশু দিয়ে উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর, তখন কি তা অন্যায় নয়? “
তৃতীয় তর্ক মালাখি ২:১০-১৬
ঈশ্বর “যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যিহূদার লোকেরা দেবতা পূজাকারী মেয়েদের বিয়ে করেছে। চোখের জলে তোমরা সদাপ্রভুর বেদী ভাসাও। তোমরা যা দাও তার প্রতি তিনি আর মনোযোগ দেন না কিম্বা খুশী মনে তোমাদের হাত থেকে তা গ্রহণও করেন না।
লোকেরা “কেন করেন না?”
ঈশ্বর “এর কারণ হল, সদাপ্রভু তোমাদের প্রত্যেক লোকের ও তার যৌবনকালের স্ত্রীর বিয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন; কিন্তু যদিও সেই স্ত্রী তার সংগী, তার বিয়ের চুক্তি করা স্ত্রী, তবুও সে তার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
চতুর্থ তর্ক মালাখি ২:১৭-৩:৫
ঈশ্বর “তোমরা নিজেদের কথার দ্বারা সদাপ্রভুকে ক্লান্ত করে তুলেছ।”
লোকেরা “কেমন করে আমরা তাঁকে ক্লান্ত করেছি?”
ঈশ্বর: “তোমরা বলেছ, “যারা অন্যায় করে তারা সবাই সদাপ্রভুর চোখে ভাল এবং তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট,” কিম্বা বলেছ, “কোথায় সেই ঈশ্বর যিনি ন্যায়বিচার করেন?”
ঈশ্বর: “দেখ, আমি আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি … তিনি উপস্থিত হলে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না; কারণ তিনি হবেন রূপা যাচাই করবার আগুন অথবা ধোপার সাবানের মত … তখন আমি বিচার করবার জন্য তোমাদের কাছে আসব … যারা আমাকে ভয় করে না তাদের সকলের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে দেরি করব না।”
পঞ্চম তর্ক মালাখি ৩:৬-১২
ঈশ্বর “তোমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই তোমরা আমার সব নিয়ম-কানুন … পালন কর নি। আমার কাছে ফিরে এস।”
লোকেরা “আমরা কেমন করে ফিরে আসব?”
ঈশ্বর “মানুষ কি ঈশ্বরকে ঠকাবে? কিন্তু তোমরা তো আমাকে ঠকাচ্ছ।”
লোকেরা “আমরা তোমাকে কি করে ঠকাচ্ছি?”
ঈশ্বর “দশমাংশ ও দানের ব্যাপারে তোমরা আমাকে ঠকাচ্ছ … তোমরা তোমাদের সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডার-ঘরে আনবে যাতে আমার ঘরে খাবার থাকে। এই বিষয়ে তোমরা আমাকে পরীক্ষা করে দেখ …”
ষষ্ঠ তর্ক মালাখি ৩:১৩-১৮
ঈশ্বর “তোমরা আমার বিরুদ্ধে শক্ত শক্ত কথা বলেছ”
লোকেরা “তোমার বিরুদ্ধে আমরা কি বলেছি?”
ঈশ্বর “তোমরা বলেছ, ‘ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে এবং শোক প্রকাশ করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করাতে আমাদের কি লাভ হল? এখন আমরা গর্বিত লোকদের ধন্য বলছি; হ্যাঁ, অন্যায়কারীরা উন্নতি করছে; তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেও রেহাই পাচ্ছে।’”
এই তর্কের কথাবার্তাতে ইস্রায়েল জাতির কঠিনতা, উদাসীনতা ও ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তারা ঈশ্বরের হৃদয় ও আকাঙ্ক্ষা আর জানে না, তাঁর আইনের মঙ্গলময়তাও আর বুঝে না। তারা মনে করে যে, ঈশ্বর ক্লান্তিকর এবং তাঁর দাবি অনেক বেশি। এছাড়া কথাবার্তাতে তাঁর জাতি নিয়ে ঈশ্বরের হতাশা এবং তাঁর হৃদয়ে আঘাতও প্রকাশ পায়। ঈশ্বর যে তাদের বাধ্যতা ও মনেপ্রাণে ভক্তিতে আনন্দ পান এবং তা না পেয়ে তাঁর খারাপ লাগে, এটা আসলে ঈশ্বরের নম্রতার একটি প্রকাশ। ঈশ্বর সহজে তাদের বাদ দিয়ে অন্য লোক বেছে নিতে পারতেন, কিন্তু এর চেয়ে তিনি লজ্জা মেনে নিয়ে ও কষ্ট করে তাদেরকে শেখাতে চেষ্টা করেন, তাঁর ইচ্ছা এবং তাদের জন্য তাঁর হৃদয় আসলে কি।
প্রথম তর্ক মালাখি ১:২-৫ ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা
এই তর্কে দেখা যায় যে, যিহূদীদের মধ্যে একটি ক্ষোভ কাজ করে: ঈশ্বর কেন তাদেরকে বাবিলের কাছে পরাজিত হতে দিয়েছিলেন? কেন তাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন? কেন শত্রু জাতিদেরকে (যেমন ইদোম) তাদের উপর জয় করতে দিয়েছিলেন? মালাখির মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি শেষে সব মন্দদের বিচার করবেন, অর্থাৎ যারা তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, তিনি তাদেরকেও বিচার করবেন। যে যিহূদীরা বাবিলে সব কিছু ত্যাগ করে ফিরে এসেছে, অর্থাৎ যারা আকাঙ্ক্ষী, নম্র ও বাধ্য, তাদের জন্য ঈশ্বর তাঁর ভালবাসার নিশ্চয়তা দেন। যদিও তাদের মধ্যে বিরক্তি ও ক্ষোভ কাজ করে এবং যদিও তাদের বর্তমান অবস্থা বেশি ভাল নয়, তবুও ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো তাদের উপরেই আছে এবং তাদের মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতে মশীহের রাজ্য স্থাপিত হবে (মালা ২৩:১, ৪:১-৫)।
ঈশ্বর এই অনুচ্ছেদে বলেন “আমি যাকোবকে ভালবেসেছি কিন্ত এষৌকে অগ্রাহ্য করেছি” (মালাখি ১:২-৩, আক্ষরিক অনুবাদ: “আমি এষৌকে ঘৃণা করেছি”)। এই কথাটি আধুনিক পাঠকদের জন্য বিঘ্নস্বরূপ, বিশেষভাবে যেহেতু পৌল তা রোমীয় ৯:১৩ পদে উদ্ধৃতি করেন দেখানোর জন্য যে, ঈশ্বর তাঁর করূণায় সার্বভৌম। আসলে কথাটি হল একটি রূপক (Litote), যেখানে অতিরিক্ত কিছু বলা দ্বারা একটি সংবাদ শক্তিশালীভাবে ঘোষণা করা হয়। মালাখি কঠিন হয়ে যাওয়া যিহূদীদের দেখাতে চান যে, ঈশ্বর তাদেরকে অবশ্যই এবং এখনও ভালবাসেন (মালাখি ১:৩)। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর কোনো মানুষকে ঘৃণা করেন না এবং তিনি অবশ্যই কাউকে জাতিগত পরিচয়ের জন্য (যা পরিবর্তন করা যায় না) অগ্রাহ্য করেন না। মালাখির সময়ে এষৌ বা ইদোম (এষৌয়ের বংশধরেরা) রূপক অর্থে অহংকারী, আত্ম-নির্ভরশীল ও অনিচ্ছুক মানুষদেরকে বুঝায়, অর্থাৎ যারা ঈশ্বরের উদ্ধার অগ্রাহ্য করে।
দ্বিতীয় তর্ক মালাখি ১:৬-২:৯ অপমান করার মত উৎসর্গ
ভাববাদী মালাখি তাদের শিথিল হৃদয়, ঠাণ্ডা ধার্মিকতা ও অবহেলার মনোভাবের বিষয়ে দোষ ধরেন: তারা অন্ধ, খোঁড়া, অসুস্থ বা খুঁত সহ পশু উৎসর্গ করে। তিনি বিষয়টি জোরালোভাবে প্রকাশ করেন: “তোমাদের শাসনকর্তার কাছে সেগুলো উৎসর্গ করলে সে কি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে?” (মালাখি ১:৮)। তিনি তাদেরকে চেতনা দেন যে, এভাবে ধর্মকর্ম করা মানে ঈশ্বরকে অসম্মান দেখানো। আরো খারাপ: “তোমরা তুচ্ছ করবার মনোভাব নিয়ে এ-ও বলে থাক, ‘এ কি জ্বালা!’” (মালাখি ১:১৩)। সর্বনিম্ন ধর্মকর্মও না করে সব কিছুকে অতিরিক্ত দাবি এবং অনেক কষ্টের বিষয় মনে করা, এই অনিচ্ছুক মনোভাব মানে ঈশ্বরকে না জানা, না বুঝা এবং চারিদিকে জাতিদের কাছে তাঁকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা। এই ধরণের মনোভাবে ধর্মকর্ম করা হল লজ্জার বিষয় এবং তার চেয়ে ঈশ্বর চান যেন: “হায়! যদি তোমাদের মধ্যে একজনও উপাসনা-ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করত আর তোমরা আমার বেদীর উপরে অনর্থক আগুন না জ্বালাতে তবে আমি খুশী হতাম” (মালা ১:১০)। এমন কি ঈশ্বরকে তাঁর নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্যও কথা বলতে হয়: “আমিই মহান রাজা এবং সমস্ত জাতি আমাকেই ভয় করে। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি” (মালাখি ১:১৪)। ইস্রায়েল জাতির হওয়ার কথা ছিল সেই মহান রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি জাতি এবং অন্য জাতিদের কাছে তাঁর অধীনে একটি একটি আকর্ষণীয় দেশ (যাত্রা ১৯:৪-৬)। কিন্তু এই বিষয় তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে, তা আসলে লজ্জার বিষয়।
মালাখি বিশেষভাবে বর্তমান পুরোহিতদের চ্যালেঞ্জ করেন, যারা আত্মিক নেতৃত্ব হলেও ঈশ্বরের মানদণ্ড কমিয়ে দিয়ে অন্ধ, খোঁড়া বা অসুস্থ পশু উৎসর্গ হিসাবে গ্রহণ করছেন। মালাখি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, মোশির সময়ে পুরোহিতেরা কত চমৎকারভাবে কাজ করেছিলেন এবং তারা তাদের উঁচু আহ্বানে কত গুরুত্ব দিয়েছিলেন: “আমি তোমাদের কাছে এই সতর্কবাণী পাঠিয়েছি যাতে লেবির বংশের জন্য স্থাপন করা আমার ব্যবস্থা চালু থাকে। তাদের জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা হল জীবন ও মংগলের ব্যবস্থা… যেন তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে; সত্যিই তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করত। তাদের মুখে সত্যিকারের শিক্ষা ছিল এবং তাতে কোন মিথ্যা থাকত না। শান্তিতে ও সততায় তারা আমার সংগে চলাফেরা করত এবং অনেককে পাপ থেকে ফিরাত। আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া পুরোহিতদের উচিত যাতে সেই শিক্ষা হারিয়ে না যায়। এছাড়া ঈশ্বরের বাক্য জানবার জন্য পুরোহিতদের কাছেই লোকদের যাওয়া উচিত, কারণ তারাই সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সংবাদদাতা” (মালাখি ২:৪-৭)।পুরোহিতেরা যদি তাদের ভূমিকা পালন না করে তবে এর ধ্বংসাত্মক ফলাফল কি, মালাখি তাও দেখান: “কিন্তু তোমরা ঠিক পথ থেকে সরে গেছ এবং তোমাদের শিক্ষার দ্বারা অনেককে উছোট খাইয়েছ। এইভাবে লেবির বংশের জন্য স্থাপন করা ব্যবস্থা তোমরা বাদ দিয়েছ। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি। তোমরা আমার পথে চল নি বরং আইন-কানুনের ব্যাপারে লোকদের সংগে তোমরা একচোখামি করেছ। সেইজন্য সমস্ত লোকদের সামনে আমি তোমাদের তুচ্ছের ও অসম্মানের পাত্র করেছি” (মালাখি ২:৮-৯)।
তৃতীয় তর্ক মালাখি ২:১০-১৬ বিবাহ বিচ্ছেদ ও দেবতাপূজারী মহিলাদেরকে বিয়ে
এছাড়া যিহূদীরা নিজেদের স্ত্রীকে ত্যাগ করে চারিদিকের জাতিদের মধ্য থেকে দেবতাপূজারী মহিলাদেরকে বিয়ে করতে শুরু করেছে। এতে তারা ঠিক সেই পাপে পুনরায় লিপ্ত হয়, যার ফলে ইস্রায়েল ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছিল, একেবারে বিচারকর্তৃগণের যুগ থেকে। মালাখি শক্তিশালীভাবে দেবতাপুজারীকে বিয়ে করার বিরুদ্ধে কথা বলেন (মালাখি ২:১১-১২), যা তিনি “বিশ্বাসঘাতকতা”, “জঘন্য কাজ” এবং “সদাপ্রভুর ধর্মধাম অপবিত্র করা” হিসাবে আখ্যায়িত করেন (কেরী অনুবাদ)। মিশানো বিবাহ করা মানে ঈশ্বরের আইন-কানুন ভেঙ্গে আপোষ করা, সন্তানদেরকে দেবতাপূজায় বড় করা এবং পরিবার ভাঙ্গনের মুখে ফেলা।
মালাখি একইভাবে স্ত্রী ত্যাগ বা বিবাহ বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে কথা বলেন (মালাখি ২:১৪-১৬)। তিনি বিবাহ বিচ্ছেদকে অত্যাচার বা হিংস্রতার সঙ্গে তুলনা করেন (মালাখি ২:১৬)। বিচ্ছেদের অর্থ হল, ঈশ্বর যা নিজেই এক করেছেন (আদি ২:২৪), তা জোর করে কেটে ভাগ করা। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ হল হিংস্র কাজ এবং গভীরভাবে ক্ষতিকারক।
মালাখি খুব চেতনাদায়ক কথা দিয়ে যিহূদীদেরকে দেখান যে, তাদের ধর্মকর্ম (যেমন বেদী চোখের জলে ভাসানো) ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তারা জীবনের সাধারণ ব্যবহারিক বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হতে প্রত্যাখ্যান করে, যেমন: তারা যৌবনকালের স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে (মালাখি ২:১৩,১৫)। আইন-কানুন অনুসারে যদি একজন তার প্রতিবেশীর প্রতি ন্যায্য ব্যবহার না করে বরং দাবি করে যে, সে ধর্মকর্মে ব্যস্ত, তবে তা হল অজুহাত মাত্র এবং তা ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত নয়।
ঈশ্বর বলেন না যে, বিবাহ বিচ্ছেদ সব ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। তিনি একটি অত্যাচারিত স্ত্রীকে (অথবা স্বামীকে) বছরের পর বছর অত্যাচার সহ্য করতে বলেন না। বরং ঈশ্বর বিবাহ ভাঙ্গার দোষ সেই ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেন, যে প্রথম বিবাহের চুক্তি ভেঙ্গে দিয়েছে, যে তার বিবাহ দিনের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্ত নয় (স্ত্রীকে ভালবাসা, তার নিরাপত্তা, যোগান ও সমর্থন নিশ্চিত করা)।
চতুর্থ তর্ক মালাখি ২:১৭-৩:৫ শুচিকরণ ও বিচার
যখন ঈশ্বরের লোকেরা নিজেদেরকে বিভিন্ন কষ্টে, সংকটে, হতাশায় বা বিরক্তির মধ্যে খুঁজে পায় তখন তারা মনে মনে বা প্রকাশ্যে ঈশ্বরের ন্যায্যতা নিয়ে সন্দেহ বা সংগ্রাম করে। মালাখির সময়ের যিহূদীরা ঠিক এভাবে বলে: “যারা অন্যায় করে তারা সবাই সদাপ্রভুর চোখে ভাল এবং তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট” অথবা “কোথায় সেই ঈশ্বর যিনি ন্যায়বিচার করেন?” এতে বুঝা যায় যে, তারা ঈশ্বরকে নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। তারা ঈশ্বরকে দোষারোপ করে বলেন যে, তিনি তাদেরকে জয়ী হতে দেন না বা তাঁর রাজ্য নিয়ে আসতে দেরি করেন।
উত্তরে ঈশ্বর মালাখির মধ্য দিয়ে তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি একজন “সংবাদদাতা” অবশ্যই পাঠাবেন (মালাখি ৩:১), এবং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো অবশেষে পূর্ণ হবে। এই সংবাদদাতা (মশীহের মত কেউ, অথবা মশীহের জন্য প্রস্তুতকারী) আসবেন, কিন্তু তিনি যে শুধুমাত্র মন্দদের চ্যালেঞ্জ করবেন, তা নয় (মালাখি ৩:৫) বরং তিনি শিথিল হৃদয়ের লোকদেরকেও চ্যালেঞ্জ করবেন (মালা ৩:২-৪)। রূপা যাচাই করার ও খাঁটি করে তোলার আগুন দিয়ে এবং ধোপার শক্তিশালী সাবান দিয়ে ঘষে তিনি তাদেরকে পরিষ্কার করে দেবেন (মালা ৩:২-৩)। ভক্তদেরও পরিবর্তন ও শুচিকরণ প্রয়োজন। মশীহ তাদের জন্য হবেন আলো ও সুস্থতা (মালা ৪:২) এবং তিনি সব ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো পুনরায় ঠিক করবেন (মালা ৪:৫-৬)।
মার্ক তার সুসমাচারের শুরুতে মালাখি ৩:১ পদ উদ্ধৃতি করেন (মার্ক ১:২) এবং বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে সেই “সংবাদদাতা” হিসাবে চিহ্নিত করেন, যিনি প্রভুর আগে, অর্থাৎ মশীহের আগে পথ প্রস্তুত করবেন।
মশীহ সম্বন্ধীয় এই চমৎকার আশা ঈশ্বরের অনুসরণকারীদেরকে সেই দিন পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাবে।
পঞ্চম তর্ক মালখি ৩:৬-১২ দশমাংশ
ঈশ্বর যিহূদীদেরকে দশমাংশ না দেওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালীভাবে দোষ ধরেন: “তোমরা তো আমাকে ঠকাচ্ছ” (মালাখি ৩:৮-১০)। সম্ভবত, দশমাংশ বন্ধ করার কারণ ছিল পুরোহিতদের দুর্নীতি এবং ঈশ্বরের বিষয়ে লোকদের শিথিল হৃদয়। যারা দশমাংশ বিশ্বস্তভাবে দান করে এবং এভাবে ঈশ্বরকে প্রাধান্য ও গুরুত্ব দেয়, তাদের জন্য ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি তাদের উপরে চোখে পড়ার মত আশীর্বাদ ঢেলে দেবেন। তিনি তাদেরকে এই বিষয়ে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করার অনুমতি দেন এবং এমন কি তাঁকে পরীক্ষা করার আহ্বানও করেন (মালাখি ৩:১০)। ঈশ্বর যিহূদীদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ক্ষ্ট হল তাদের অবাধ্যতা বা অর্ধেক হৃদয়ের বাধ্যতা এবং ঈশ্বরের সঙ্গে চুক্তি ভাঙ্গার একটি ঘোষিত ফলাফল (লেবীয় ২৬, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮)। কিন্তু এর অর্থ এইও যে, অনুতপ্ত হয়ে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করলে এই দুরাবস্থা তাড়াতাড়ি কেটে যেতে পারে (মালাখি ৩:১০-১১)। চাইলে তারা এই মুহূর্ত থেকে সেই খুশি ও সুঅবস্থার দেশ হতে শুরু করতে পারে, সেই “আনন্দদায়ক দেশ”, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে তাদের হওয়ার কথা (মালাখি ৩:১২)।
ষষ্ঠ তর্ক মালাখি ৩:১৩-১৮ ঈশ্বরকে সম্মান দেওয়া
ঈশ্বর আরো এক ক্ষেত্রে যিহূদীদের দোষ ধরেন: তারা তাঁর বিরুদ্ধে “শক্ত শক্ত কথা” বলেছে: “ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে এবং শোক প্রকাশ করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করাতে আমাদের কি লাভ হল? এখন আমরা গর্বিত লোকদের ধন্য বলছি; হ্যাঁ, অন্যায়কারীরা উন্নতি করছে; তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেও রেহাই পাচ্ছে” (মালাখি ৩:১৩-১৪)। ষষ্ঠ ও চতুর্থ তর্কের বেশ মিল আছে: যিহূদীরা মনে করে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয়ে তারা কোনো পুরষ্কার বা লাভ পায় নি। বরং তারা বাধ্য হওয়ার জন্য নিজেদেরকে মুর্খ মনে করে। তারা বলে যে, ঈশ্বর তাদেরকে ঠকিয়েছেন, তাদেরকে সুরক্ষা করেন নি এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করেন নি। ঈশ্বর চতুর্থ তর্কের মত উত্তর দেন: তিনি মালাখির মাধ্যমে সদাপ্রভুর দিন ঘোষণা করেন, অর্থাৎ মশীহ আসার দিন, যখন ন্যায্যতা স্থাপন করা হবে, ভক্তদের শুচি করা হবে এবং সব প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে।
কিন্তু মশীহ সম্বন্ধীয় বাণী দেওয়ার আগে পুস্তকে একটি ঘটনা উল্লেখ করে: কিছু লোক মালাখির বাণীগুলো শুনে ঈশ্বরকে ভয় করে সাড়া দেয়। তারা “একে অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলল … তাদের স্মরণ করবের জন্য তাঁর সামনে একটি বই লেখা হল” (মালাখি ৩:১৬)। তারা যে বিশেষভাবে মালাখির বাণীগুলো স্মরণ করে অথবা পবিত্র শাস্ত্রের লেখাগুলো স্মরণ করে, তা এই পদ থেকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয় না। কিন্তু একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট: ঈশ্বরের বাক্যে গুরুত্ব দেওয়ার তাদের এই উদ্যোগ দেখে, ঈশ্বর সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন “তাদের বিষয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমার নির্দিষ্ট করা দিনে তারা আমার নিজের বিশেষ সম্পত্তি হবে; তারা আমারই হবে। একজন লোক যেমন তার সেবাকারী ছেলেকে মমতা করে শাস্তি থেকে রেহাই দেয় তেমনি করে আমি তাদের রেহাই দেব। তখন তোমরা সৎ ও দুষ্টের মধ্যে, অর্থাৎ যে আমার সেবা করে আর যে করে না তাদের মধ্যে আমি কিভাবে পার্থক্য করি তা দেখতে পাবে” (মালাখি ৩:১৭-১৮)। এটা তো ঠিক সেই বিষয় যা লোকেরা চতুর্থ ও ষষ্ঠ তর্কে দাবি করেছিল এবং না পেয়ে অভিযোগ করেছিল। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দেন যে, তারা তা ঠিকই পেতে পারে, কিন্তু তারা কোন দলে পড়বে (যারা ঈশ্বরকে সেবা করে বা যারা তাঁর সেবা করে না), এই সিদ্ধান্ত তাদেরই।
ন্যায় বিচারের প্রতিজ্ঞা এবং সদাপ্রভুর দিন
মালাখি যেমন ইতিমধ্যে মালাখি ৩:১-৭ পদে শুরু করেছিলেন, তেমনি তিনি তার পুস্তক একটি ভবিষদ্বাণী দিয়ে সমাপ্ত করেন (মালা ৪ অধ্যায়): ঈশ্বর অবশ্যই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন, অর্থাৎ সদাপ্রভুর দিনে মন্দদের বিচার করবেন (মালাখি ৪:১,৩) এবং মশীহ তাঁর রাজ্য স্থাপন করবেন যা বিশ্বস্তদের জন্য হবে আলো, আনন্দ ও সুস্থতা (মালাখি ৪:২)। কিন্তু তাঁর রাজ্যের জন্য বিশ্বস্তদেরও শুচিকরণ প্রয়োজন, তাই মশীহ হবেন সেই রূপা যাচাই করার ও খাঁটি করে তোলার আগুন এবং ধোপার শক্তিশালী সাবান (মালাখি ৩:২-৪)।
যেমন মোশি ইস্রায়েল জাতির সামনে তুলে ধরেছেন বাধ্যতা ও অবাধতা, জীবন ও মৃত্যু (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫-২০), ঠিক তেমনি মালাখিও তার শ্রোতাদের সামনে সেগুলো তুলে ধরেন: তারা কি নম্র হয়ে তাদের ক্ষোভ ও অর্ধেক হৃদয়ের বাধ্যতা থেকে মন ফিরাবে এবং নতুন করে তাদের বিশ্বাস ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপরে স্থির করবে? তারা কি রাগ ও হতাশা ছেড়ে দিয়ে সন্তানের সৎ-সরল ও নির্ভর করার হৃদয় স্বর্গস্থ পিতার কাছে আসবে? মালাখি বলেন যে, একজন আসবেন (লূক ৭:২৭ পদ অনুসারে তিনি হলেন বাপ্তিস্মদাতা যোহন), যিনি ঠিক এই কাজটি তার শ্রোতাদের মধ্যে ঘটাবেন, অর্থাৎ পিতাদের ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্মিলন করবেন (মালাখি ৪:৫-৬)। স্বর্গস্থ পিতা ইচ্ছুক ও প্রস্তুত, কিন্তু শ্রোতারা কি সন্তান হিসাবে তাঁর সাথে পুনর্মিলন চাইবে?