শিক্ষা ০৪ – কিভাবে সত্য জানব? (Epistemology)

বিভিন্ন দৃষ্টভঙ্গি প্রশ্নটির ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেয়। নিচে ৭টি ভিন্ন প্রচলিত দৃষ্টভঙ্গির চিন্তা অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়:

১ যুক্তিবাদ                      (Rationalism)

যুক্তিবাদ অনুসারে কিভাবে সত্য জানব?

যদি একটি বিষয় যুক্তি দিয়ে বুঝা যায়, তবে তা-ই অবশ্যই সত্য হবে (if it makes sense it must be true)।

  • সত্য জানার ভিত্তি: যুক্তি, মনের চিন্তা, বুঝার ক্ষমতা।
  • কারা এভাবে চিন্তা করে: বিজ্ঞানীরা।

যুক্তিবাদের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • ঈশ্বর মানুষকে মন, যুক্তি দেখানো, চিন্তা করা ও বুঝবার ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি বাইবেলে মানুষকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা যুক্তি, কারণ ও বাস্তব প্রমাণ দেখিয়ে শিক্ষা দেন। মানুষ সত্যকে জানতে পারে। আমাদের বুঝার ক্ষমতা আছে। আমাদের যুক্তি-তর্ক করার ক্ষমতা আছে।
  • যিশাইয় ১:১৮        “এখন এস, আমরা বোঝাপড়া করি।” কেরী: “আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি।”
  • যিশাই ৪৫:১৮-১৯    “সদাপ্রভু, যিনি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন…তিনি বাস করবার অযোগ্য করে পৃথিবী সৃষ্টি করেন নি…কোন অন্ধকার …জায়গা থেকে আমি গোপনে কথা বলি নি…যা ঠিক তা-ই ঘোষণা করি।”

 

যুক্তিবাদ নিয়ে সমস্যা কি?

  • মানুষের মন, যুক্তি, চিন্তা ও বুঝার ক্ষমতা সীমিত। ভাল মনোভাবে সত্য খুঁজলেও সহজেই ভুল চিন্তা করা যায় বা ভুল উপসংহারে আসা যায়। আমরা নিজেকে যত নিরপেক্ষ মনে করি, তত নিরপেক্ষ আসলে নই। অধিকাংশ সময় আমাদের মন অনুসন্ধান শুরু করার আগেই অনেক কিছু দ্বারা প্রভাবিত: আমাদের ইতিমধ্যে অনেক চিন্তা, উদ্দেশ্য, লজ্জা, আঘাত বা ভয় আছে। যা আমরা হৃদয়ে ইতিমধ্যে পছন্দ করেছি (ভাল না মন্দ হোক), তার জন্য আমরা মনে মনে যুক্তি বানাই বা কারণ খুঁজে বের করি।
  • রোমীয় ১:১৯-২৩ “মানুষ তাঁর সম্বন্ধে জানবার পরেও ঈশ্বর হিসাবে তাঁর গৌরবও করে নি, তাঁকে কৃতজ্ঞতাও জানায় নি। তাদের চিন্তাশক্তি অসার হয়ে গেছে এবং তাদের বুদ্ধিহীন অন্তর অন্ধকারে পূর্ণ হয়েছে। ২২ যদিও তারা নিজেদের জ্ঞানী বলে দাবি করেছে তবুও আসলে তারা মুর্খই হয়েছে। ২৩ চিরস্থায়ী, মহিমাপূর্ণ ঈশ্বরের উপাসনা ছেড়ে দিয়ে তারা অস্থায়ী মানুষ, পাখী, পশু ও বুকে-হাঁটা প্রাণীর মূর্তির পূজা করেছে।”
  • যোহন ৩:১৯-২০ “তাকে দোষী বলে স্থির করা হয়েছে কারণ জগতে আলো এসেছে, কিন্তু মানুষের কাজ মন্দ বলে মানুষ আলোর চেয়ে অন্ধকারকে বেশী ভালবেসেছে। ২০ যে কেউ অন্যায় কাজ করতে থাকে সে আলো ঘৃণা করে। তার অন্যায় কাজগুলো প্রকাশ হয়ে পড়বে বলে সে আলোর কাছে আসে না।”
  • হিতো ২৮:২৬ “যে নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে সে বিবেচনাহীন, কিন্তু যে ঈশ্বরের দেওয়া বুদ্ধির পথে চলে সে নিরাপদে থাকে।”

২ আবেগবাদ                    (Empiricism)

আবেগবাদ অনুসারে কিভাবে সত্য জানব?

যদি ভাল লাগে তবে তা-ই অবশ্যই সত্য (if it feels good it must be true)

  • সত্য জানার ভিত্তি: আবেগ, অনুভূতি, ইন্দ্রিয়।
  • কারা এভাবে চিন্তা করে: গায়িকা মাডন্না, পশ্চিমা দেশের লোক।

আবেগবাদের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • ঈশ্বর আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও ইন্দ্রিয় দিয়েছেন
  • আমাদের হৃদয়ের টান ও গভীর আকাঙ্ক্ষা অনেক বার ঈশ্বর থেকে আসে ও তিনি সেগুলো আমাদের পরিচালনা করার জন্য ব্যবহার করেন। ঈশ্বর আমাদের উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলো তাঁর সময়ে ও তাঁর মত করে পূর্ণ করেন।
  • গীত ৩৭:৪ “সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাক; তোমার মনের ইচ্ছা তিনিই পূরণ করবেন।”
  • আবেগ হল হৃদয়ের একটি ‘বার্তা’ বা ‘প্রকাশ’ যা বাস্তব কিছু দেখায়। মাঝে মধ্যে আবেগ আমাদের এমন কিছু দেখায় যা আমরা মনের চিন্তায় আসতে দিতে চাই না। নিজের আবেগ সম্পর্কে খেয়াল করা ভাল।

 

আবেগবাদ নিয়ে সমস্যা কি?

  • আবেগ শুধুই আবেগ; আবেগ ইঙ্গিত দেয়। আবেগ অনেক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল এবং পরিবর্তনশীল। আবেগকে ‘পরিচালক’ বানালে মনের অনেক অস্থিরতা থাকবে ও জীবন নীতিহীন হয়ে যাবে। আবেগ মুহূর্তের জিনিস ও প্রায়ই এমন কিছু চায় যা ঈশ্বর নিষেধ করেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আবেগ স্থির বা স্থায়ী কোনো ভিত্তি নয়। মুহূর্তের আবেগে চললে যে জীবন তৈরি হয়, তাতে বহুদিনের খারাপ আবেগ বেশি থাকে।
  • অনেক সময় যদি আমরা ‘ছোট আকঙ্ক্ষা’ (যেমন কামনা)-কে আমাদের জীবনে রাজত্ব করতে না দেই, তবে আস্তে আস্তে আরো গভীর, সত্য ও বড় আকাঙ্ক্ষা উঠে আসে (আহবানের সাথে যার মিল আছে)। তাই আবেগকে আবেগ হিসাবে বিবেচনা করেন, কিন্তু আবেগ দিয়ে চালিত হবেন না।
  • যিরমিয় ১৭:৯ “অন্তর সব কিছুর চেয়ে ঠগ, তাকে কোন রকমে ভাল করা যায় না। কেউ মানুষের অন্তর বুঝতে পারে না।”

৩ ন্যায্যতাবোধ                  (Criticism)

ন্যায্যতাবোধ অনুসারে কিভাবে সত্য জানব?

বিবেক যা বলে, তা-ই সত্য (what conscience says is true)।

  • সত্য জানার ভিত্তি: বিবেক, সংবেদ, সৎজ্ঞান।
  • যারা এভাবে চিন্তা করে: ন্যায়পরায়ণ আপত্তিকারী (the conscientious objector)।

ন্যায্যবোধের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • বিবেক বা সংবেদ বা চেতনা হল ঈশ্বরের একটি দান, যা ঈশ্বরের রব শোনার জন্য দরকার। যদি বিবেক পবিত্র আত্মা ও ঈশ্বরের সত্য বাক্য দ্বারা পরিচালিত হতে দেই তবে বিবেক ভাল পরিচালনা দেয়। বিবেক বা চেতনায় আমরা যত বেশি সাড়া দেই ও তা অনুসারে কাজ করি, তত বেশি ঈশ্বরের রব বুঝতে পারি।
  • প্রেরিত ২৪:১৬ পৌল: “সেইজন্য আমি ঈশ্বর ও মানুষের কাছে সব সময় আমার বিবেককে পরিষ্কার রাখবার চেষ্টা করি।”

 

ন্যায্যতাবোধ নিয়ে সমস্যা কি?

  • আমাদের বিবেক, সংবেদ বা চেতনা সব সময় ঠিক কথা বলে না। ছোটবেলা থেকে পরিবার, মণ্ডলী, সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে বিবেককে কি খাওয়ানো হয়েছে, তা চেতনাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ: রাস্তায় ময়লা ফেলা, পরিবেশ রক্ষা, মদ খাওয়া।
  • যদি বিবেক বা চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকি, তবে বিবেক ধীরে ধীরে কঠিন বা অনুভূতিহীন হয়ে যায় এবং অবশেষে অন্যদের প্রতি অত্যাচার, অন্যায়, অপরাধ বা হিংস্রতা করতে বিবেক আর বাধা দেয় না।
  • বিবেককে ভুল কিছু দ্বারা পূর্ণ করলে তা অনেক ভুলভাবে পরিচালনাও দিতে পারে। উদাহরণ: ভ্রান্ত দল, যে কোন ধর্মে জঙ্গিবাদ, বাইবেলে পুরোহিত কাইয়াফা যিনি মনে করেন যে ‘ঈশ্বরের পক্ষে’ কাজ করেন যখন যীশুকে রায় দেন।
  • হিতো ১৪:১২ “একটা পথ আছে যেটা মানুষের চোখে ঠিক মনে হয়, কিন্তু সেই পথের শেষে থাকে মৃত্যু।”

৪ সন্যাসবাদ / অতীন্দ্রিয়বাদ (Mysticism) বা অস্তিত্ববাদ (Existentialism)

সন্যাসবাদ অনুসারে কিভাবে সত্য জানব?

যদি একটি বিশেষ আত্মিক অভিজ্ঞতা পাই তবে তা সত্য (if I had a spiritual experience or enlightenment it is true)

  • সত্য জানার ভিত্তি: বিশেষ প্রকাশ, অতীন্দ্রিয় বা আত্মিক একটি অভিজ্ঞতা, স্বপ্ন, দর্শন।
  • কারা এভাবে চিন্তা করে: গৌতম বৌদ্ধ, হিন্দু সাধুরা, যোষেফ স্মিথ্, শার্লী ম্যাকলেইন।

সন্যাসবাদ, অতীন্দ্রিয়বাদ বা অস্তিত্ববাদের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • যদি ঈশ্বর বাস্তব ও তাঁর বাক্য সত্য হয় তবে দৈনিক জীবনে তাঁর অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব হওয়ার কথা। বর্তমান সময়েও ঈশ্বরকে বাস্তব জীবনে ও ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করতে চাওয়া হল উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা। ঈশ্বর আশ্চর্য কাজ করেন, তিনি স্বপ্নে, দর্শনে বা বিশেষ আত্মিক অভিজ্ঞতায় নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন ও করেন। তিনি ইতিহাসে তা অনেক বার করেছেন, তা আজকেও করতে সক্ষম।
  • প্রেরিত ২৬:১৯ পৌল: “রাজা আগ্রিপ্প, এইজন্য স্বর্গ থেকে এই দর্শনের মধ্য দিয়ে আমাকে যা বলা হয়েছে তার অবাধ্য আমি হই নি।”

 

সন্যাসবাদ, অতীন্দ্রিয়বাদ বা অস্তিত্ববাদ নিয়ে সমস্যা কি?

  • আমি কিছু উপলব্ধি করি বা না করি, ঈশ্বর সত্য ও বাস্তব। তিনি বস্তুনিষ্ঠা ও ঐতিহাসিক সত্য, এটা আমার কোন আবেগের উপর নির্ভরশীল নয়। ‘বর্তমান অভিজ্ঞতা’ স্থায়ী কোন কিছু নয় বরং পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত ও তা সহজেই পরিবর্তিত হয়, তাই তা সত্যের ভিত্তি হিসাবে যথেষ্ট স্থায়ী নয়।
  • উদাহরণ: চিন্তা করুন, ঈশ্বর যদি আপনার সকল প্রার্থনার উত্তর দিতেন তাহলে কেমন হত? আমরা অনেক সময় ভুল জিনিসকে ভুলভাবে চেয়ে থাকি।
  • উদাহরণ: যারা ঈশ্বর থেকে কোন বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করে, তারা পরে অনেক সময় মনে করে যে অন্যদেরও একই অভিজ্ঞতা থাকা উচিত, তারা তখন নিজেকে ‘বিশেষ ব্যক্তি’ মনে করে। যেমন ১ করি ৮:১ পদে বলা আছে: “জ্ঞান মানুষকে অহংকারী করে, কিন্তু ভালবাসা মানুষকে গড়ে তোলে।” অনেক ভাল লোক ও মণ্ডলী এই ফাঁদে পড়েছে। তার প্রতিরোধ হল নম্রতা, সুসম্পর্ক ও পরস্পরের উপর নির্ভরতা।
  • কলসীয় ২:১৮-১৯ “নিজেদের দেহকে কষ্ট দেওয়া ও স্বর্গদূতদের উপাসনা করা যারা দরকারী বলে মনে করে তারা যেন তোমাদের পুরস্কার পাবার পথে বাধা না জন্মায়। এই রকমের লোক যা দেখেছে বলে ভান করে সেই বিষয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে এবং বিনা কারণেই অহংকারে ফুলে ওঠে, কারণ তাদের মন পাপ-স্বভাবের অধীন। ১৯ তারা শক্তভাবে মাথাকে, অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টকে ধরে রাখে না।”

৫ প্রয়োগবাদ বা বাস্তবধর্মিতা      (Pragmatism)

প্রয়োগবাদ অনুসারে কিভাবে সত্য জানব?

যা কাজ করে তা অবশ্যই সত্য (if it works it must be true)

  • সত্য জানার ভিত্তি: কার্যকারিতা, সাথে সাথে ফলাফল, অভিজ্ঞতা।
  • যারা এভাবে চিন্তা করে: ব্যবসায়ীরা, এন.জি.ও, কিছু প্রচারক।

প্রয়োগবাদের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • যদি ঈশ্বর বাস্তব ও তাঁর বাক্য সত্য হয় তবে তার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা বাস্তব জীবনে আশা করা যায়। সত্য সব সময় কার্যকর। ঈশ্বরের বাক্য নিজেকে বাস্তব জীবনে প্রমাণিত করে। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, কোন পদ্ধতি কার্যকারী কিনা, ফলবান কিনা, তবে তা হল উপযুক্ত প্রশ্ন। কিন্তু ভুলে যাবেন না যে ফল পেতে সময় লাগে।
  • লূক ৬:৪৩-৪৪ “ভাল গাছে খারাপ ফল ধরে না, আবার খারাপ গাছেও ভাল ফল ধরে না।ফল দিয়েই গাছ চেনা যায়।”

 

প্রয়োগবাদ বা বাস্তবধর্মিতা নিয়ে সমস্যা কি?

  • কিছু বিষয় বা কিছু কাজ আছে, যা হয়তো কার্যকর (বা আমরা কার্যকর মনে করি), কিন্তু তা ভাল না, উপযুক্ত না ও ঈশ্বরের পথও না। কিছু বিষয় বা কিছু কাজ আছে, যা হয়তো ‘কার্যকর’ কিন্তু তাতে আসল লক্ষ্য পূর্ণ হয় না, বরং তা লক্ষের বিরুদ্ধে কাজ করে। উদাহরণ: সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে মার দেওয়া। খ্রিষ্টান সংস্থা বা মণ্ডলীতে উঁচু-নিচু নেতৃত্ব। Rapid Action Battalion। আধুনিক মেডিকেল চিকিৎসা বিজ্ঞান (যদি আমরা কিছু করতে সক্ষম হই তাহলে এর অর্থ কি এই যে, তা করা আমাদের ঠিক হবে? যা কিছু কার্যকর তা কি সব করা উচিত?)
  • যিশাইয় ৪৩:১৯ “দেখ, আমি একটা নতুন কাজ করতে যাচ্ছি। তা এখনই শুরু হবে আর তোমরা তা জানতে পারবে। আমি মরু-এলাকার মধ্যে পথ করব আর মরুভুমিতে নদী বইয়ে দেব।” ঈশ্বর আরো অনেক কিছু করতে চান যা আমরা এখনও চিন্তা করতে পারি নি, যার কার্যকারিতা আমরা এখনও চাইতে শিখি নি।

৬ ঐতিহ্যকে প্রাধান্য             (Traditionalism)

ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিলে কিভাবে সত্য জানব?

সব সময় যেভাবে বিশ্বাস করা হত সেটাই সত্য (if it’s always been believed it must be true)।

  • সত্য জানার ভিত্তি: ঐতিহ্য, আগে যেমন ছিল, আগে যেমন করা হত।
  • যারা এভাবে চিন্তা করে: ফরীশীরা, অনেক মণ্ডলী ও মণ্ডলীর নেতারা।

ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • আমি যদি মনে করি আগের যুগের ও সব জায়গার বিশ্বাসীরা ভুল মনে করেছে কিন্তু আমি এখন এর চেয়ে ভাল বুঝি তবে সেটা অবশ্যই অহংকারের মনোভাব।
  • যদি আমি মনে করি: ‘আমি ঠিক বলছি এবং সবাই ভুল বলেছে’ তবে তা প্রজ্ঞার চিন্তা নয়, বরং বিপজ্জনক হতে পারে। নম্রতা ও বিবেচনা আমাকে নিরাপত্তা হিসাবে দাঁড়ায়। অনেকের পরামর্শ বিবেচনা করা হল প্রজ্ঞার কাজ। ঈশ্বর আমাদের একটি পরিবার, মণ্ডলী ও সমাজের মধ্যে রেখেছেন যেন আমরা একে অন্যের উপর নির্ভর করি ও পরস্পরের কাছ থেকে শিখি।
  • ঈশ্বর তাঁর সমস্ত প্রকাশ ও প্রজ্ঞা একজনকে দেন না। ঈশ্বর আগের যুগেও নিজেকে প্রকাশ করেছেন; সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। যে প্রজ্ঞা ও দক্ষতা ঈশ্বর বিভিন্ন ব্যক্তি, মণ্ডলী ও সংস্থার মধ্যে দিয়েছেন তাও আমাদের দরকার।
  • যিরমিয় ৬:১৬ ”তোমরা রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখে পুরানো পথের কথা জিজ্ঞাসা কর; ভাল পথ কোথায় তা জিজ্ঞাসা করে সেই পথে চল। তাতে তোমরা নিজের নিজের অন্তরে বিশ্রাম পাবে।”

 

ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিলে সমস্যা কি?

  • আমাদের পূর্বপুরুষেরা হয়তো ভুল বুঝেছে বা ভুল করেছে। যা সব সময় করা হয়েছে তা সবচেয়ে ভাল নাও হতে পারে, এমন কি ভুলও হতে পারে। একটি সামাজিক অন্যায় যদি যুগের পর যুগ ধরে চলে, তার অর্থ এই নয় যে তা গ্রহণযোগ্য। তার অর্থ এইটিও নয় যে এভাবে চলতে থাকতে হবে।
  • ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হল পরিবর্তন, উন্নয়ন ও নতুন দর্শনের বাধা ।
  • উদাহরণ: শাশুড়ি ছেলের বউকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রসব হলেও ক্লিনিকে যেতে বাধা দেয়। কারণ তার সময়ও তাকে কেউ ক্লিনিকে নিয়ে যায় নি । এই ধরণের চিন্তা পরিবর্তন দরকার ।
  • উদাহরণ: কয়েক শতাব্দী ধরে খ্রিষ্টান দেশগুলোতে দাসত্ব গ্রহণযোগ্য মনে করা হত। আধুনিক বিষয়: নারী অধিকার।
  • মার্ক ৭:৯ “যীশু তাঁদের আরও বললেন, “ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের চলতি নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভাল উপায়ই আপনাদের জানা আছে।”

৭ কর্তৃত্ববাদ                     (Authoritarianism)

নেতা / প্রধান / ডাক্তার যা বলে তা সত্য

  • সত্য জানার ভিত্তি: নেতৃত্ব, পদ, অধিকার, কর্তৃত্ব (রাজনৈতিক, আত্মিক, শিক্ষাগত)।
  • যারা এভাবে চিন্তা করে: অনেক মণ্ডলী, সব ভ্রান্ত দল, একনায়কতন্ত্র।

কর্তৃত্ববাদের কোন কোন চিন্তা ঠিক?

  • ঈশ্বর বিভিন্ন ধরণের নেতৃত্ব ও অধিকার স্থাপন করেছেন। যদিও নেতৃত্ব ভুল করে নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত হওয়া, তাদের কাছ থেকে শেখা ও তাদের প্রতি বাধ্য থাকা ভাল, তাতে অনেক আশীর্বাদ পাওয়া যায়। নম্রতা, মেনে নেওয়ার ও গ্রহণ করার মনোভাব অনেক লাভজনক।
  • যদি আমি কিছু ক্ষেত্রে (যেখানে দুর্বল বা যেখানে পাপ করি) কারও পরামর্শ শুনতে চাই না, কারও কথা মানতে রাজি হই না, তবে তা খুবই বিপজ্জনক। অধিকার ও নেতৃত্বে বশীভূত হওয়া, শিষ্যত্ব গ্রহণ করা ও দায়বদ্ধ থাকা প্রজ্ঞার কাজ। একই লক্ষ্যে পৌছানোর বিভিন্ন পথ আছে এবং সবাই তার ইচ্ছা বিস্তার করতে পারবে না, তাই পরস্পর্কে মেনে নেওয়া ভাল।
  • ইব্রীয় ১৩:৭     “যাঁরা তোমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বলতেন তোমাদের সেই নেতাদের কথা মনে রেখো। তাঁদের জীবনের শেষ ফলের কথা ভাল করে চিন্তা কোরো এবং তাঁদের মত করে তোমরাও বিশ্বাস কোরো।”
  • ১ পিতর ২:১৩ “তোমরা প্রভুর প্রতি বাধ্য হয়ে মানুষের নিযুক্ত শাসনকর্তাদের অধীনতা স্বীকার কর। সম্রাট সকলের প্রধান বলে তাঁর অধীনে থাক।’
  • ১ পিতর ৫:৫   “সেইভাবে যুবকেরা, তোমরা প্রধান নেতাদের অধীনে থাক। তোমরা সবাই নম্র হয়ে একে অন্যের সেবা কর।”

 

কর্তৃত্ববাদ নিয়ে সমস্যা কি?

  • নেতারা বা শিক্ষকরা হয়তো ভুল কিছু বলে, হয়তো মারাত্মকভাবে ভুল কিছু বলে ও ভুল আদেশ দেয়। তারা হয়তো জানেও না তারা কত ভুল করে বা তারা কত প্রতারিত – অথবা তারা তা জানে।
  • সঠিক মনোভাব থাকলে আমরা এমন কি খারাপ নেতৃত্ব থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি।
  • কিন্তু সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা আমাদের দায়িত্ব: “সব কিছু যাচাই করে দেখো। ২১ যা ভাল তা ধরে রেখো” (১ থিষ ৫:২০-২১)।
  • আমরা প্রথমত ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ, এর পরে মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। নেতা বা শিক্ষকেরও উর্ধ্বে আমার জীবনে পবিত্র আত্মার অধিকার আছে। চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করবেন না। যদি একজন নেতার আচরণ আঘাতস্বরূপ হয় বা যদি সে অনৈতিক কিছু দাবি করে, তবে একটি পথ খুঁজতে হবে যাতে বিষয়টি সংশোধন করা যায়। অথবা যদি সংশোধন না হয়, তবে ঐ স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে।
  • উদাহরণ: অধিকাংশ ভ্রান্ত দল। ‘The Wave’ নামে একটি ফিল্ম। আঘাত দেওয়ার গবেষণা।
  • প্রেরিত ৪:১৯-২০ “উত্তরে পিতর ও যোহন বললেন, “আপনাদের আদেশ পালন করব, না ঈশ্বরের আদেশ পালন করব? ঈশ্বরের চোখে কোন্‌টা ঠিক, আপনারাই তা বিচার করে দেখুন। ২০ আমরা যা দেখেছি আর শুনেছি তা না বলে তো থাকতে পারি না।”

৮ বাইবেলীয় মতবাদ             (Biblical Epistemology)

ঈশ্বর যা বলেন তা অবশ্যই সত্য (if God says so it must be true)

  • সত্য জানার ভিত্তি: ঈশ্বরের বাক্য (এবং বিজ্ঞান, বাস্তবতা ও চেতনা)
  • কে এইভাবে চিন্তা করে: কিছু খ্রিষ্টানরা

বাইবেলীয় মতবাদ নিয়ে সমস্যা কি?

  • যদি আমি এখনও নিশ্চিত হই নি যে বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য তবে কিভাবে এই নিশ্চয়তা পাব?
  • প্রথমত: একটি ইচ্ছুক মন, নম্র ও বাধ্য হওয়ার একটি মনোভাব প্রয়োজন (যোহন ৮:৩১-৩২)। ঈশ্বর আস্তে-আস্তে তাঁর প্রকাশ, পবিত্র আত্মার পরিচালনা, চেতনার রব, হৃদয়ে অশান্তি বা শান্তি দ্বারা আমাদের কথা বলেন। আমরা যুক্তি দেখে একমত (convinced) হই, দৈনিক জীবনে ঈশ্বরের হাত উপলব্ধি করি এবং সব মিলিয়ে বুঝতে পারি যে ঈশ্বর বাস্তব ও তাঁর বাক্য সত্য।

 

কেন আমাদের বাইবেলকে ভিত্তি হিসাবে দরকার?

  • ঈশ্বর বাস্তব। তাঁর বাক্যই সত্য। তিনি সত্য প্রকাশ করেন। তিনি চান যেন আমরা জানি ও বুঝি। তিনি আমাদের তাঁর বাক্য দিয়েছেন যেন তাঁর বাক্য অনুসারে সব কিছু বিচার-বিবেচনা করি। বাক্যই হল মানদণ্ড। আমি বাক্যকে বিচার করি না, বাক্য আমাকে বিচার করে।
  • উদাহরণ: Higher German criticism। বিবর্তনবাদ।
  • যোহন ৮:৩১-৩২ “যীশু তাদের বললেন, “আমার কথামত যদি আপনারা চলেন তবে সত্যিই আপনারা আমার শিষ্য। ৩২ তা ছাড়া আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।”
  • ২ তীমথিয় ৩:১৬ “পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী।”