শিক্ষা ০৫ – ভিত্তিক চিন্তা
মার্টিন স্নীদের ‘সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে শারীরিক শাস্তি’ বইয়ের সারাংশ
বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে সন্তানকে মানুষ করা হয়
- সন্তানকে মানুষ করার কাজ ‘শূন্যস্থানে’ ঘটে না বরং বাবা-মায়ের মূল্যবোধ অনুসারেই সন্তান মানুষ হয়। বাবা-মায়ের খেয়াল থাকুক বা না থাকুক তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যা, তারা তা অনুসারেই সন্তানদের মানুষ করে। মানুষ কে বা কি? কেন আমাকে জীবন দেওয়া হল? এই পৃথিবীতে আমার স্থান ও ভূমিকা কি? – এই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি কি, তা অনুসারেই তারা সন্তানদের লালন-পালন করে।
- মানুষের বিষয়ে বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের দেখায়, সন্তান মানুষ করার ভিত্তি কি এবং সন্তান মানুষ করার আসল লক্ষ্য কি। বাবা-মায়ের চিন্তাগুলি যত বাইবেলীয়, তাদের সন্তান মানুষ করার ধরণ তত বেশি ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে হবে।
মানুষ সম্বন্ধীয় বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গি
- ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি হিসাবে তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বর মানুষের সাথে সম্পর্ক ও সহভাগিতা চান। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি দ্বারা, তাঁর বাক্য দ্বারা এবং শেষে তাঁর পুত্রের মধ্যে দিয়ে নিজেকে মানুষের কাছে প্রকাশিত করেছেন।
- ঈশ্বর নিয়ম অনুসারে চালিত ও দৃশ্যমান একটি মহাবিশ্ব এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সম্পর্ক ও সন্তানকে লালন-পালন করার নীতিমালা ঈশ্বর তাঁর বাক্যে দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণ বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা এই নীতিগুলি প্রমাণ করা যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বাইবেলের সত্যগুলির মধ্যে মিল আছে।
- বাইবেল ‘মানুষ সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের দৃষ্টি’ সরাসরি শেখায় না বরং বাইবেলের ইতিহাসের লেখা ও প্রত্যেক গল্পের মধ্য দিয়ে তা শেখায়। বাইবেল অধ্যয়ন করে আমরা মানুষ সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টি যে কত উঁচু আবিষ্কার করতে পারি এবং যত বেশি অধ্যয়ন করি তত বেশি তা বুঝতে পারি।
- অবশ্যই বাবা-মা হিসাবে আমরা সন্তান লালন-পালন করার ক্ষেত্রে আমাদের চারপাশের সংস্কৃতি ও প্রচলিত মতামত দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হই। উদাহরণ: সন্তানের আত্ম-বিশ্বাস কত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে আগের যুগের বই বা গবেষণা পড়লে কোনো কিছু পাওয়া যায় না কিন্তু আধুনিক বইগুলোতে সন্তান লালন-পালন করার বিষয় তা হল একটি বড় বিষয়। হয়তো পরবর্তী আর কিছু দশকের মধ্যে ‘পরস্পরকে বিবেচনা করা কত গুরুত্বপূর্ণ’, তা পুনরায় আবিষ্কার করা হবে। আসলে বাইবেলে সব সময় এই বিষয়গুলি ছিল, কিন্তু বর্তমান মতামতের কারণে আমরা তা আর ভালভাবে বুঝি না।
- মানুষ নিয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টির ভিত্তি হল আদি ১:২৬-২৭ পদ, শুধুমাত্র মানুষই ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি‘ বা ‘ঈশ্বরের মত সৃষ্টি‘। তাই যদি হয় তা থেকে আমরা কি কি নীতিমালা পাই?
মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি – এর থেকে কি নীতিমালা পাই?
মানুষ ঈশ্বরের উপরে নির্ভরশীল
- মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি, তারা ঈশ্বরের মত ব্যক্তি।
- ঈশ্বর তাদের সাথে কথা বলেন, তাদের আশীর্বাদ করেন, তাদের একটি কাজ বা আহবান দেন ও তাদের দিক-নির্দেশনা দেন।
- মানুষের গুরুত্ব ও সম্মান ঈশ্বর থেকে আসে: তাদের তাঁর সাথে সম্পর্কে আছে, তারা তাঁরই লোক, তারা তাঁর উপর নির্ভরশীল, তারা তাঁর কাছ থেকে আহবান ও উদ্দেশ্য পায়। ঈশ্বর যে উদ্দেশ্যে একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন যখন তা সে আসলে পূর্ণ করে, তখন তার হৃদয়ে সিদ্ধি, সন্তোষ ও গভীর তৃপ্তি আসে।
- পাপের কারণে ঈশ্বর মানুষকে ত্যাগ করেন না বরং তিনি নিজেকে তাদের কাছে প্রকাশিত করতে থাকেন, তাদের জীবনে হাত দেন ও উদ্ধার করতে থাকেন; মানবীয় ইতিহাস ধরেই তা করেন এবং শেষে যীশুর আগমনের মধ্যে দিয়ে তা করেন।
- সন্তান মানুষ করলে তাদের দেখানো দরকার যে আমরা তখনই ‘আসল মানুষ’ হতে পারি, যখন ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে থাকে। কিন্তু একজন মানুষ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে থাকতে চায় কিনা তা হল প্রত্যেক মানুষের স্বাধীন সিদ্ধান্ত।

- অবশ্যই খ্রিষ্টান বাবা-মায়ের এক নম্বর আশা হবে যে তাদের সন্তান খ্রিষ্টেতে পরিত্রাণ পাবে। কিন্তু তবুও বাবা-মা যদি ‘পরিত্রাণ’ তাদের সন্তান মানুষ করার এক নম্বর লক্ষ্য হিসাবে রাখে তা সমস্যা বা চাপ হিসাবে দাঁড়ায়।
- যোহন ৬:৪৪ পদে যীশু বলেন: ‘আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি টেনে না আনলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না।‘ বাবা-মা যত বিশ্বস্ত বিশ্বাসী হোক বা তারা যত চমৎকার বাবা-মা হোক, তারা সন্তানদের পরিত্রাণ নিশ্চিত করতে পারবে না। কিন্তু বাবা-মা হিসাবে তারা সন্তানদের পরিত্রাণের প্রস্তাব দিতে পারে এবং (আরো শক্তিশালী) তাদের সামনে একটি আকর্ষণীয় ‘পরিত্রাণ-প্রাপ্ত জীবন’ দেখাতে পারে।
মানুষ সম্পর্কের জন্যই তৈরি
- ঈশ্বর সম্পর্কের ঈশ্বর। ঈশ্বর ত্রিত্ব ঈশ্বর: স্বর্গস্থ পিতা, পুত্র যীশু ও পবিত্র আত্মা অনন্তকাল আগে থেকেই সুসম্পর্কে ও শান্তিতে বাস করেন। তাই মানুষ (যিনি ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি) অবশ্যই সম্পর্কের লোক।
- শিশুদের যদি খাওয়ানো ও সেবা-যত্ন দেওয়া হয়, কিন্তু ভালবাসা, কথা বা স্পর্শ দেওয়া না হয় তবে তারা অল্পক্ষণের মধ্যে বিনা কারণে মারা যায়। প্রাপ্ত বয়সের মানুষও যদি সম্পূর্ণ একা থাকে বা সম্পর্ক বিহীন হয়ে যায়, তাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়ে ও তারা সহজেই অসুস্থ হয়ে যায়।
মানুষের অতুলনীয় মূল্য ও সম্মান দেওয়া হয়েছে
- মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি হয়েছে বলে তার অতুলনীয় মূল্য ও উঁচু সম্মান নিশ্চিত করা হয়েছে (গীত ৮:৫-৯ দেখুন)। তাই যে কোনো মানুষ সম্মানজনক ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য। ঈশ্বর মানুষকে ‘এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার এক জাত পুত্রকে দান করিলেন…‘ (যোহন ৩:১৬)।
- এই কথাও ঠিক যে সন্তান মানুষ হিসাবে পাপ-স্বভাব আছে এবং ‘ছোটবেলা থেকেই তো মানুষের মনের ঝোঁক মন্দের দিকে।‘ (আদি ৮:২১)। কিন্তু সে একই পদ ঈশ্বর আরো বলে যে ‘মানুষের দরুন আর কখনও আমি মাটিকে অভিশাপ দেব না, কারণ এবার যেমন আমি সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে ধ্বংস করেছি তেমন আর কখনও করব না।’
- অবশ্যই যীশু মানুষকে অনুতপ্ত হওয়ার ডাক দেন কারণ তারা আসলে পাপী, কিন্তু যীশুর জীবন দেখলে তাঁর মধ্যে কোনো ‘বিচার করার মনোভাব’ পাই না (যদিও মানুষকে বিচার করার তাঁর অধিকার ও যথেষ্ট কারণ আছে) বরং যা দেখি হল যীশু মানুষকে কত সম্মান, দয়া ও ভালবাসার চোখে দেখেন এবং এমন কি সমাজের বাইরে পড়া লোকদের প্রতি (পাপী, কর-আদায়কারী, রাজাকার, অসুস্থ বা অশুচি, মহিলা, ছোট, অন্য জাতির লোক) তাঁর ব্যবহার কত স্নেহশীল।
- সুসমাচারে পৃষ্ঠা পর পৃষ্ঠা দেখা যায় যীশু মানুষকে কত মূল্য দিয়েছেন, তাদের কত স্পর্শ দিয়েছেন ও তাদের জীবন পরিবর্তন করেছেন।
- পাপের বিষয়ে চেতনা বাবা-মায়ের ভূমিকা না বরং পবিত্র আত্মার কাজ। বাব-মা হিসাবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা সন্তানদের সম্মান, মূল্য ও নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া অধিকার নষ্ট না করি।
মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও দায়িত্ব আছে
- যেমন ঈশ্বরের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে, তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি মানুষেরও ঠিক তা আছে।
- ঈশ্বর মানুষকে সমস্ত স্বাধীনতা, একটি মাত্র নিয়ম এবং (চাইলে) নিয়ম ভাঙ্গারও ক্ষমতাও দিয়েছেন। ‘তুমি মানুষকে স্বর্গ দূতের চেয়ে সামান্য নিচু করেছ; রাজমুকুট হিসাবে তুমি তাকে দান করেছ গৌরব ও সম্মান। ৬ তোমার হাতের সৃষ্টির শাসনভার তুমি তারই হাতে দিয়েছ আর তার পায়ের তলায় রেখেছ এই সব‘ (গীত ৮:৫-৬)।
- ঈশ্বর জীবন-দাতা এবং আসল অধিকারী, তাই সৃষ্ট মানুষ হিসাবে তাঁকে সম্মান দেওয়া হল উপযুক্ত কাজ। সে একটি নিয়ম ভাঙ্গা মানেই ঈশ্বরকে হৃদয়ে প্রথম স্থান না দেওয়া এবং নিজেকে ঈশ্বরের চেয়ে বড় হিসাবে ঘোষণা করা।
- ঈশ্বর আগে থেকে তাদের বুঝিয়েছেন যে এই সিদ্ধান্তের ফলাফল মৃত্যু। কিন্তু শারীরিক মৃত্যু সাথে সাথে আসে না, মানুষকে সময় দেওয়া হয়েছে আরো সিদ্ধান্ত নিয়ে ও তার সিদ্ধান্তের বাস্তব ফল উপভোগ করতে।
- যখন ঈশ্বর যীশুকে পাঠাবেন মানুষকে উদ্ধার করার জন্য তিনি একইভাবে মানুষকে পরিত্রাণের প্রস্তাব দেন, কিন্তু আসলে ‘প্রস্তাব’: মানুষের ক্ষমতা আছে গ্রহণ করতে অথবা অগ্রাহ্য করতে।
- পৌল এভাবে বলেন: ‘আসলে ঈশ্বর যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই খ্রীষ্টের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা ঈশ্বরের সংগে মিলিত হও” (২ করি ৫:২০)।
- মানুষের সিদ্ধান্তের ভার আছে: সিদ্ধান্তের ফলাফল আছে, তা অস্বীকার করা যায় না, এড়িয়েও যাওয়া যায় না ‘তোমরা ভুল কোরো না, ঈশ্বরের সংগে তামাশা চলে না; কারণ যে যা বুনবে সে তা-ই কাটবে‘ (গালা ৬:৭)।
- এইটা হুমকিস্বরূপ নয় বরং ঈশ্বর থেকে মানুষকে দেওয়া সে সম্মান ও ক্ষমতার একটি অংশ: মানুষের সিদ্ধান্তের ভার আছে, বাস্তব ফলাফল আছে, ঈশ্বর মানুষের সিদ্ধান্ত উল্টায়ও না, সিদ্ধান্তের ফলাফল ‘মুছে ফেলবে’ না। সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতার সাথে দায়িত্ব জড়িত। উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন: ‘মহত্বের জন্য যে দাম দিতে হয়, তা হল দায়িত্ব’।
- সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে বাবা-মাকে বুঝতে হবে যে সন্তানদের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তা বাতিল করতে চেষ্টা করা ঠিক নয়। বরং সন্তানদের তাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল বুঝাতে হয় ও তাদের উৎসাহ দিতে হয় যেন প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে।
মানুষকে দেওয়া হয়েছে আত্মসিদ্ধান্ত
- ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট মানুষের নিজের জীবন চালানোর বা আত্মসিদ্ধান্তের একটি আকাঙ্ক্ষা আছে।
- যদিও মানুষের আত্মসিদ্ধান্তের সীমানা আছে তবুও ঈশ্বর সারা দিন আদম ও হবার পিছনে লেগে তাদের প্রত্যেক কাজ বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছেন তা নয়, বরং তিনি তাদের সাথে সন্ধ্যায় দেখা করতেন (আদি ৩:৮)।
- ঈশ্বরে মানুষকে এই পৃথিবী নিজের অধীনে আনার আদেশ দিলেন যা করতে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্বচালিত হওয়া, আত্মসিদ্ধান্ত, সচেতনতা ও স্বনিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রয়োজন।
- বাইবেলে অনেক পদ এই আত্মপরিচালনা বা আত্মসিদ্ধান্তগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়: ‘এখানকার মন্দ জগতের চালচলনের মধ্যে তোমরা নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ো না, বরং ঈশ্বরকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন হয়ে ওঠো, যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে পার।’ (রোমীয় ১২:২)। ‘যদি রাগ কর তবে সেই রাগের দরুন পাপ কোরো না; সূর্য ডুববার আগেই তোমাদের রাগ ছেড়ে দিয়ো’ (ইফিষীয় ৪:২৬)।
মানুষ যোগাযোগকারী
- যেমন ঈশ্বর যোগাযোগকারী ঠিক তেমনি তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট মানুষও যোগাযোগকারী।
- যখন আদম প্রথম বার হবাকে দেখেন, তিনি সাথে সাথে কথা বলে ফেলেন (আদি ২:২৩)। যোগাযোগ যদি ঠিকমত হয় না তবে অনেক সমস্যা, যেমন বাবিলের উঁচু গৃহের গল্প দেখায় (আদি ১১:১-৯)। উপযুক্ত যোগাযোগ শিখতে হয় ও তা একটি সফল জীবনের জন্য আবশ্যক।
- যোগাযোগ যে মানুষ করতে পারে তা দেখায় যে মানুষ ব্যক্তি, যার চিন্তা, সচেতনতা, আত্মনির্ধারণ ও ইচ্ছার শক্তি আছে এবং যে একটি আসল বাস্তব পৃথিবী আছে, যার সম্বন্ধে কিছু বলা যায়। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত শিক্ষার জন্য ‘যোগাযোগ ১২ যোগাযোগের জন্য ভিত্তি’ দেখুন।
- সন্তান মানুষ করার জন্য যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের যত বয়স বেড়ে যায় তত বেশি তার আলোচনায় ও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে।
মানুষের আহবান ও সৃজনশীলতা আছে
- যেমন ঈশ্বরের মহা পরিকল্পনা আছে ঠিক তেমনি ঈশ্বর মানুষকে ও একটি কাজ বা আহবান দিয়েছেন। এই কাজ বা আহবান পূর্ণ করার জন্য ঈশ্বর মানুষকে প্রয়োজনীয় অধিকার, দক্ষতা ও সৃজনশীলতাও দিয়েছেন।
- যেমন ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও, মানুষের দান, তালন্ত ও সৃজনশীলতা আছে বলে তার তা সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানোর একটি দায়িত্বও আসে। মানুষ তা করলে আনন্দ, সন্তোষ ও তৃপ্তি পায় এবং আত্ম-সম্মান বাড়ে।
- ইতিহাসের প্রত্যেক যুগে ঈশ্বর মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ ও যোগ্য কাজে লাগাতে থাকেন। যীশু শিষ্যদের সুসমাচার ছড়ানো ও মণ্ডলী গঠন কাজে লাগান।
- সন্তানকে মানুষ করার ধরণ এমন হতে হবে যেন সন্তান তার দান, তালন্ত ও আকাঙ্ক্ষাগুলি আবিষ্কার করতে পারে ও সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে সুযোগ ও সমর্থন পায়। সন্তানের বাবা-মায়ের উৎসাহ প্রয়োজন যেন তারা নিজের কাজের ও ইতিবাচক উপাদানে সুযোগ ও আনন্দ পায়।
সমস্ত মানুষের একই মূল্য আছে
- বাইবেলে ঈশ্বর আমাদের নিজেকে এবং প্রতিবেশীকে ভালবাসতে আদেশ দেয়। এই দুটি আদেশ একটি উপযুক্ত টেনশনের আছে: নিজেকে ভালবাসা ও সম্মান দেখানো এবং অন্যকেও তা দেখানো: ‘প্রত্যেক মানুষকে নিজের মত করে ভালবাসতে হবে’ (লেবীয় ১৯:১৮)। তাতে প্রকাশিত যে প্রত্যেক মানুষই মূল্যবান।
- যদিও একটি মানুষের হয়তো খুব বিশেষ তালন্ত বা নেতৃত্ব দেওয়ার দান আছে তবে তা অন্যদের সেবা ও গঠনের জন্য ব্যবহার করার আদেশ আছে: ‘তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে’ (মথি ২০:২৬)।
- সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবহার (social competence) মানে ঠিক তাই: অন্যদের সাথে উপযুক্ত সম্পর্কে থাকা, অন্যদের প্রয়োজনগুলিতে গুরুত্ব দেওয়া কিন্তু সাথে সাথে আমার প্রয়োজনগুলি ও উপযুক্তভাবে শেয়ার করা ও সাহায্য চাওয়া। ‘নিজের লাভের আশায় বা অহংকারের বশে কিছু কোরো না, বরং নম্রভাবে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় স্থান দাও। কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকো না, বরং একে অন্যের জন্য চিন্তা কর‘ (ফিলিপীয় ২:৩-৪)।
- যদি আমি শুধুমাত্র আমার প্রয়োজন ও দাবী মেটাতে ব্যস্ত, আমি স্বার্থপর হব, একা হয়ে পড়ব এবং আমার উপযুক্ত সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু যদি আমি শুধুমাত্র অন্যদের প্রয়োজন ও দাবী মেটাতে ব্যস্ত, তবে আমি নিজেকে মুছে ফেলে নিজেকে হারাব এবং এভাবেও উপযুক্ত সম্পর্ক থাকবে না। সমস্ত মানুষের একই মূল্য আছে বলে একটি ভাল ও উপযুক্ত ভারসাম্য তৈরি হয় যাতে পরস্পরকে বিবেচনা ও দুইপাশে সেবা থাকবে।
ঈশ্বর মানুষকে নিয়ে আনন্দ করেন
- যখন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন এই মন্তব্য পাই: ‘ঈশ্বর তাঁর নিজের তৈরী সব কিছু দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল‘ (আদি ৩১:১)। এই পদে সৃষ্টি নিয়ে ঈশ্বরের তৃপ্তি ও আনন্দ বুঝা যায়। ‘সদাপ্রভুর গৌরব অনন্তকাল থাকুক; তিনি যেন নিজের কাজে আনন্দিত হন‘ (গীত ১০৪:৩১)।
- মণ্ডলীতে অনেক শতাব্দী ধরে একটি শিক্ষা প্রচলিত ছিল যে ঈশ্বর ‘মানুষকে সহ্য করে মাত্র’ এবং যে ‘আনন্দভোগই হল পাপ’। আধুনিক পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতিতে আনন্দভোগকে হয়তে অতিরিক্ত বড় স্থান দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ওপার পাশে আমরা বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের বিষয়ে ঈশ্বরের আনন্দ, বড় মনে ও দানশীলতার জ্ঞান যেন না হারাই।
- যীশু বলেন: ‘চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়।‘ (যোহন ১০:১০)।
- এই পৃথিবীর কষ্ট, যন্ত্রণা ও অন্যায়ের পূর্ণ খেয়াল থাকার পরেও যীশু এমন একটি জীবন করেন যাতে ঈশ্বরর আনন্দ ও অনুমোদন বুঝা যায়: তিনি পানি থেকে দ্রাক্ষারস বানান যেন বর-কনে লজ্জায় না পড়ে, ফরীশীরা তাঁর দোষ ধরে কারণ তিনি কর-আদায়কারী ও রাজাকারদের সাথে ভোজ খান, তিনি ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব উপভোগ করেন (যেমন লাষার, মার্থা ও মরিয়মের সাথে), তিনি একটি পাপী মহিলাকে অনুমতি দেন, তার একটি অতি দামী সুগন্ধী তেল তাঁর জন্য ‘নষ্ট করতে’, তিনি সারা রাত পরিশ্রম করা জেলেদের জন্য নাস্তা প্রস্তুত করে রাখেন (যোহন ২১:৯)।
- নহিমিয় ও ইষ্রা অনুতপ্ত যিহূদীদের বলেন ‘আপনারা গিয়ে ভাল ভাল খাবার ও মিষ্টি রস খান আর যাদের কোন খাবার নেই তাদের কিছু কিছু পাঠিয়ে দিন। আজকের দিনটা হল আমাদের সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আপনারা দুঃখ করবেন না, কারণ সদাপ্রভুর দেওয়া আনন্দই হল আপনাদের শক্তি‘ (নহিমিয় ৮:১০)।
- ঈশ্বর চান যে তাঁর পরিত্রাণ, তাঁর সে শান্তি, সে ‘শালোম’, তাঁর সে জীবনের উৎযাপন সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়।
- সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের তা করা দরকার: যেন পরিবার হিসাবে খেলা-ধূলা, ভোজ, আনন্দ বা মজা থাকে, পরিমাণ মত, এবং মাঝের মধ্য ‘পরিমাণ মত’ এর চেয়েও বেশি যেন থাকে।
- এমন সন্তান যাদের ভালবাসা হয়, গুরুত্ব দেওয়া হয়, উৎসাহ দেওয়া হয়, যাদের নিয়ে আনন্দ করা হয়, যাদের নিজেকে এবং অন্যদের ভালবাসতে শেখানো হয়, তাদের সম্পর্কগুলি অনেক স্বাধীন, উপযুক্ত ও ‘সুস্থ’।
- এমন বাবা-মা যাদের ঈশ্বরের সঙ্গে একটি জীবিত, ব্যক্তিগত ও আকর্ষণীয় সম্পর্ক আছে তারা তাদের সন্তানদের বাইবেলীয় মূল্যবোধ শেখাতে সবচেয়ে সফল হবে।
সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে কি প্রয়োজন তার আধুনিক ভাষায় বর্ণনা
- বাবা-মা থেকে গুরুত্ব (appreciation) > সুসম্পর্ক, ভালবাসা, সম্মান, আনন্দ।
- বাবা-মা থেকে দাবী ও সীমানা > দায়িত্ব, আত্মনির্ধারণ।
- আত্ম দিয়ে চালিত হওয়ার উৎসাহ > স্বাধীন ইচ্ছা, আহবান, তালন্ত, সৃজনশীলতা, অনুদান।