পরিবার ১০ – সন্তানদের মানুষ করা
ঈশ্বর বাবা-মাকে অধিকার দেন সন্তানদের উপর
- যাত্রা ২০:১২, দ্বি বি ৫:১৬ ‘তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে।’
- যাত্রা ২১:১৫ ‘বাবাকে কিম্বা মাকে যে আঘাত করে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।’
- লেবীয় ২০:৯ ‘যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।’
- দ্বি বি ২৭:১৬ ‘সেই লোক অভিশপ্ত যে মা কিম্বা বাবাকে অসম্মান করে।’ তখন সকলে বলবে আমেন।’
- লূক ১১:১৩ ‘তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান
- ইফি ৬:১ ‘ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত।’
- কল ৩:২০ ‘ছেলেমেয়েরা, তোমরা সব বিষয়ে মা-বাবার বাধ্য থেকো, কারণ এতে প্রভু খুশী হন।’

সন্তানদের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ কি কি?
বাবা-মাকে সম্মান করার আদেশ
যাত্রা ২০:১২, দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬ ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ মেনে তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে। তাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে এবং তোমাদের মংগল হবে।’
সম্মান করা মানে কি? ‘সম্মান’ শব্দ ইব্রীয়তে ‘কাবদ’, যার অর্থ হল: গুরুত্ব দেওয়া, সম্মান দেওয়া, ভার দেওয়া। তাই ঈশ্বর চান যেন আমরা বাবা-মাক সম্মান, গুরুত্ব, মূল্য, সময় ও মনোযোগ দেই, তাদের গ্রহণ করি, ভালবাসি, তাদের অবদান ও ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি, তাদের প্রতি বাধ্য থাকি।
- দুইটি সম্ভব: সম্মানের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি অবাধ্য হওয়া এবং অসম্মানের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়া।
- কেন বাবা-মাকে সম্মান করব?
- > তারা আমার জন্য অনেক ত্যাগ-স্বীকার ও সর্বোচ্চ ভাল করার চেষ্টা করছেন।
- > তারা আমার শিকড় ও আমার উৎসব, যেখান থেকে আমি আসি। তারা আমার হওয়ার কারণ ও আমার পরিচয়।
- এমন কি যদি একজনের বাবা-মা অবহেলার, অনৈতিকতার অথবা হিংস্রতার লোক, বাবা-মা কম পক্ষে একটি ভাল কাজ করেছে: তারা একজনকে জন্ম দিয়েছেন। উদাহরণ: ধর্ষণে, পতিতার কাজে বা ব্যভিচারের ফলে যদি একটি বাচ্চার জন্ম হয়।
- আমি কিভাবে বাবা-মাকে সম্মান দিতে পারি যদি বাধ্য হতে না পারি? আমি তাদের ভালবাসতে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে, তাদের কথা শুনতে, তাদের যত্ন নিতে, তাদের সাথে সম্পর্কে থাকতে ও তাদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারি। উদাহরণ: একটি বিশ্বাসী সন্তান একটি অবিশ্বাসী পরিবারে।
- এই আজ্ঞা কেন দশ আজ্ঞার মধ্যে পাওয়া যায়? তা দ্বারা বুঝা যায় ঈশ্বর কত গুরুত্ব দেন পরিবারকে, পরিবারের সুঅবস্থা বা শান্তিকে, বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ককে যেন তা হতে পারে জীবনের ও সেবা-যত্ন পাওয়ার স্থান। পরিবারই সমাজের ভিত্তি। পরিবারের অবস্থা যা হয়, তা শিঘ্রই সমাজের অবস্থা হবে।
- ১০ আজ্ঞার মধ্যে মাত্র এক আজ্ঞাতে একটি প্রতিজ্ঞা যুক্ত আছে: বাবা-মাকে সম্মান করলে মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু হবে।
- বাবা এবং মা উভয় সম্মান পাওয়ার যোগ্য। সন্তানের জীবনে তাদের ভূমিকা একটু ভিন্ন হলেও তারা
দুইজনই সন্তানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ও তাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। - যীশু এই আজ্ঞা উদ্ধৃতি করেন ও এভাবে প্রয়োগ করেন: বুড়ো হয়ে গেছে বাবা-মাকে যত্ন নেওয়ার আমাদের দায়িত্ব আছে (মার্ক ৭:৯-১৩)।
বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ
ইফিষীয় ৬:১-৩ “ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত। ২ পবিত্র শাস্ত্রে প্রথম যে আদেশের সংগে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা এই-‘তোমার মা-বাবাকে সম্মান কর, ৩ যেন তোমার মংগল হয় এবং তুমি অনেক দিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পার।”
কলসীয় ৩:২০
“ছেলেমেয়েরা, তোমরা সব বিষয়ে মা-বাবার বাধ্য থেকো, কারণ এতে প্রভু খুশী হন।”
বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ…কত দূর? কতক্ষণ? সব ক্ষেত্রে? সব বিষয়ে? বাধ্যতার কোনো সীমানা আছে? > সীমানা আছে: বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়ার আদেশ বাতিল হয় যদি বাবা বা মা:
- অনৈতিক ব্যবহার দাবী করে। উদাহরণ: মাতাল বাবা কন্যাকে পতিতা হিসাবে বন্ধুদের দেয়। বাবা ছেলেকে গুপ্তচোর হিসাবে ব্যবহার করে।
- সন্ত্রাসী কাজ করা দাবী করে। উদাহরণ: বাবা ছেলেকে নেশা ক্রয়-বিক্রয়ে লাগাতে চায়।
- এমন ব্যবহার করে যা সন্তানের চেতনার বিরুদ্ধে যায়, তার আত্ম-সম্মান নষ্ট করে, যা সন্তানের স্বাস্থের বা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। উদাহরণ: গালাগালী, আবেগীয় যন্ত্রণা, ভয়ংকর বা ক্ষতিকর শারীরিক অত্যাচার, হিংস্রতা।
- আর একজনকে অনৈতিক, আইনের বিরুদ্ধে বা হিংস্র কাজ করে, তা চলতে দেওয়া। উদাহরণ: একটি কন্যা তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করে যেন বাবা তার মত ছোট বোনদের যৌন সম্পর্কে ব্যবহৃত করতে না পারে।
- একটি ধর্ম গ্রহণ করতে অথবা একটি ধর্ম না ছাড়তে চাপ দেয়। ঈশ্বরের চেয়ে বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্য হওয়া উচিত নয়। উদাহারণ: ধর্মান্তরিত লোক।
- একজন প্রাপ্ত বয়সের (ও আর্থিক দিকে স্বাবলম্বী) সন্তানের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। উদাহরণ: প্রাপ্ত বয়সের ও আর্থিক দিকে স্বাবলম্বী সন্তানকে যদি নিজের সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবর্তে বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুসারে চলে।
- একজন প্রাপ্ত বয়সের (ও আর্থিক দিকে স্বাবলম্বী) সন্তান যে বিবাহ করেছে। নতুন পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর্কের কাছে দায়বদ্ধ, কিন্তু দুইপাশের বাবা-মায়ের প্রতি আর নয়।
- কলসীয় ৩:২০ পদে সে আদেশ ছেলে-মেয়েদের প্রতি আদেশ। বাবা-মা তাদের বাধ্য করানোর আদেশ নয়।
- এখানে ১০ আজ্ঞাকে ও পুরাতন নিয়মকে উদ্ধৃতি করা হয় যেন ছেলে-মেয়েরা তার গুরুত্ব বুঝে ও
যেন তারা ‘কারণ ও ফলাফল’ বুঝে। - ঐ যুগের আর কোনো লেখা নেই যা সরাসরি ছেলে-মেয়েদের প্রতি কথা বলে আদেশ বা দিক-নির্দেশনা দেয়।
- আরো নির্দিষ্ট কথার জন্য ‘পরিবার ১১ সন্তানদের শাসন করা’ দেখুন।
বাবা-মায়ের কথা শোনার ও প্রজ্ঞাবান হওয়ার আদেশ
ছেলে-মেয়েদের কাছে কথা:
হিতো ১:৮ “ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না।’…হিতো ৪:১-২ ‘সন্তানেরা, বাবার উপদেশে কান দাও, বিচারবুদ্ধি লাভ করবার দিকে মনোযোগ দাও। ২আমি তোমাদের ভাল শিক্ষা দিচ্ছি, সেইজন্য আমার নির্দেশের অবাধ্য হোয়ো না।’… হিতো ৪:১০ ‘ছেলে আমার, শোন, আমার কথা তোমার অন্তরে রাখ, তাতে তুমি অনেক বছর বেঁচে থাকবে।’… হিতো ৫:৭ ‘ছেলেরা আমার, এবার আমার কথা শোন, আমি যা বলি তা থেকে সরে যেয়ো না।’… হিতো ৮:৬ প্রজ্ঞা বলেন: ‘শোন, আমি উপযুক্ত কথা বলব, সঠিক কথা বলবার জন্য আমার মুখ খুলব।’… হিতো ৮:৩২-৩৩ প্রজ্ঞা বলেন: ‘ছেলেরা আমার, এখন আমার কথা শোন; যারা আমার পথে চলে তারা সুখী। ৩৩ আমার নির্দেশে কান দাও, জ্ঞানবান হও, অবহেলা কোরো না।’… হিতো ১৯:২৭ ‘ছেলে আমার, যদি তুমি শাসন না মান তবে তুমি জ্ঞানের শিক্ষা থেকে অন্যদিকে সরে যাবে।’… হিতো ২৩:১৯ ‘ছেলে আমার, কথা শোন, জ্ঞানী হও, তোমার অন্তর ঠিক পথে চালাও।’
সবার কাছে কথা:
হিতো ১:৫ ‘জ্ঞানীরা এই সব উপদেশ শুনুক ও আরও শিক্ষা লাভ করুক, আর বুদ্ধিমানেরা শুনে পথ চলায় পাকা হোক’… হিতো ১৯:২০ ‘উপদেশে কান দাও, শাসন মেনে চল; পরে তুমি জ্ঞানী হতে পারবে।’… হিতো ২২:১৭ ‘জ্ঞানীদের কথায় কান দাও, তাঁরা যা বলেছেন তা শোন; আমি তোমাকে যে শিক্ষা দিই তাতে তুমি মনোযোগ দাও।’
- কথা শোনা, মনোযোগ বা গুরুত্ব দেওয়া… একটি ইচ্ছুক হৃদয়, শেখা ও গ্রহণ করার আগ্রহ, নতুন চিন্তা বা বিষয় বিবেচনা করার মনোভাব, খোলা মন, নম্রতা, অন্যদের সম্মান করা ও সম্মান পাওয়ার মত মন।
- তাতে দেখা যায় বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে ভাল সম্পর্ক থাকা ও পরস্পর্কে বিশ্বাস করা কত আবশ্যক:
- নম্রতা না থাকলে শেখা যায় না … যদি মনে করি আমি ইতিমধ্যে সবার চেয়ে ভাল জানি, নতুন কিছু গ্রহণ করব না
- নিরাপত্তা না থাকলে শেখা যায় না … যদি আমার নিজেকে ‘রক্ষা করতে হয়’, তবে নতুন কিছু গ্রহণ করব না
- বিশ্বাস না থাকলে শেখা যায় না … যদি আগের চিন্তা ছাড়তে রাজি না বা ভয় পাই, তবে নতুন চিন্তা বিবেচনা করা যায় না।
- সব বাবা-মায়ের প্রজ্ঞা আছে, তা নয়। প্রজ্ঞা যেখানে খুঁজে পাই না কেন, প্রজ্ঞা গ্রহণ করার মনোভাব থাকা দরকার।
বাবা-মায়ের প্রতি কি কি আদেশ?
সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার আদেশ
দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৭ শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব
‘এই সব আদেশ যা আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। ৭ তোমাদের ছেলেমেয়েদের তোমরা বার বার করে সেগুলো শিখাবে।’
- ঈশ্বর প্রধানত সরকার বা মণ্ডলীর কাছে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব দেন নি বরং বাবা-মায়ের কাছে দিয়েছেন। বাবা-মায়েরই দায়িত্ব সন্তানের চরিত্রের উন্নয়ন, মূল্যবোধ গ্রহণ , নৈতিক ও ধার্মিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
- ‘অন্তরে যেন থাকে …বার বার করে শিখাবে’ যদি বাবা-মা নিজেই নীতিমালা বা মূল্যবোধগুলি হৃদয়ে ও জীবনে পালন না করে, তারা সেগুলি সন্তানের শেখাতে পারবে না।
দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯ কখন শিক্ষা দেওয়া? কিভাবে শিক্ষা দেওয়া?
‘তোমাদের ছেলেমেয়েদের তোমরা বার বার করে সেগুলো শিখাবে।ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’
- দৈনন্দিন, ব্যবহারিক, সাধারণ জীবনের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা দান, যখন বিষয়গুলি বা প্রশ্নগুলি এমনি উঠে আসে।
- ঈশ্বর এখানে আদেশ দেন ব্যবহারিক সত্য, আইনগুলি, মূল্যবোধগুলি, কারণগুলি, সিদ্ধান্তগুলি ও সিদ্ধান্তের ফলাফলের বিষয়ে সন্তানদের সাথে সারা দিন আলোচনায় থাকতে।
- শিক্ষা এখানে এমন কিছু যা দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনের অংশ। শিক্ষা ও জীবন কোনোভাবে আলাদা নয় (integrated approach)।
‘৮ তোমরা তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। ৯ তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে ও ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে।’ - দর্শনযোগ্য বস্তু, স্মরণ করার সাহায্যকারী জিনিস, চিহ্ন, ছবি ইত্যাদির ব্যবহার। সন্তানদের শেখানো হল সারা পরিবারের কাজই: সবার ও সব কিছুর এর মধ্যে একটি ভূমিকা আছে। এভাবে সন্তানেরা তাদের শেখার ও উন্নয়নের গুরুত্ব বুঝতে পারে ও তাতে সমর্থন পায়।
দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২০-২৪ শিক্ষা মানে একটি আইনের উদ্দেশ্য, কারণ, ভূমিকা, গুরুত্ব ও প্রয়োগ দেখানো
‘ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই যে সব সাবধানের কথা, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের দিয়েছেন সেই সবের মানে কি?’ ২১ তখন তোমরা তাদের বলবে, ‘মিসর দেশে আমরা ফরৌণের দাস ছিলাম, কিন্তু সদাপ্রভু শক্তিশালী হাত ব্যবহার করে সেখান থেকে আমাদের বের করে এনেছেন। ২২ সদাপ্রভু আমাদের চোখের সামনে ফরৌণ ও তাঁর বাড়ীর সকলের উপর এবং মিসর দেশের উপর বড় বড় এবং ভয়ংকর চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। ২৩ কিন্তু সেখান থেকে তিনি আমাদের বের করে এনেছিলেন যাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার শপথ তিনি করেছিলেন সেই দেশে নিয়ে গিয়ে আমাদের তা দিতে পারেন। ২৪ আজকের মত যেন সব সময় আমাদের মংগল হয় আর আমরা বেঁচে থাকতে পারি সেইজন্য সদাপ্রভু আমাদের এই সব নিয়ম পালন করতে এবং আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে আদেশ দিয়েছেন।’
- বাবা-মায়ের দায়িত্ব এমন একটি ভয় মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে সন্তানের চিন্তা, প্রশ্ন, অংশ গ্রহণ ও মূল্যায়ন করার উৎসাহ পায়।
- ছেলে মেয়েদের যে প্রশ্ন উঠে আসে, তার মানে ‘জ্ঞানের অভাব’ না বরং এর মানে আগ্রহ, আকর্ষণ ও উপযুক্ত অংশ গ্রহণ চলছে।
- আইন মুখস্ত করা যথেষ্ট না। ঈশ্বরের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ভিত্তি করে প্রত্যেকটি আইন কিভাবে উঠে আসে, তা শেখানো দরকার।
- আইন শিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেকটি আইনের উদ্দেশ্য, কারণ, ভূমিকা, গুরুত্ব ও প্রয়োগ দেখানো দরকার ...‘যেন সব সময় আমাদের মংগল হয়’।
- একটি আইন এমনি ‘নিয়ম হিসাবে’ শেখানো যথেষ্ট নয় এবং তাতে বহুদিনের ফল পাওয়া যাবে না।
যাত্রা ১২:২৬-২৭ নিস্তার বা উদ্ধার পর্ব > শিক্ষা দেওয়ার একটি সুযোগ
‘তোমাদের ছেলেমেয়েরা যখন তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘এই অনুষ্ঠানের মানে কি?’ ২৭ তখন তোমরা বলবে…’
যাত্রা ১৩:১৪-১৬ সব পর্বগুলি > শিক্ষা দেওয়ার একটি সুযোগ
‘ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে, ‘সদাপ্রভু মিসরের গোলামীর হাত থেকে তাঁর শক্তি দেখিয়ে আমাদের বের করে এনেছিলেন… ১৫ তখন সদাপ্রভু মিসর দেশের মানুষ ও পশুর প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে মেরে ফেলেছিলেন।… সেইজন্য আমি …আমার প্রথম ছেলেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছি।’
- ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের বেশ কয়েকটা পর্ব পালন করতে বলেন (লেবীয় ২৩) যার দ্বারা ইতিহাসে প্রকাশিত ঈশ্বরের সত্যগুলিকে স্মরণ করা হয়। পর্বগুলি ছিল ছেলে-মেয়েদের জন্য আকর্ষণীয় বিষয়: তাতে ঐতিহাসিক জাতীয় নাটক, বিশেষ গান, ধর্মকর্ম ও খাবার, যিরূশালেমে যাত্রা, বড় সভা, তুরীধ্বনি, উৎসর্গ এবং আর অনেক কিছু পালন করা হত।
‘ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে…’ - সন্তানদের প্রশ্ন, চিন্তা ও প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা দেন। সন্তান যে গতিতে জিজ্ঞাসা করছে, সে গতিতে শিক্ষা দেন। তা করলে যাকে শেখানো হচ্ছে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং সে তার সুবিধা অনুসারে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে (learner-centered and learner-driven teaching)।
যিহোশূয় ৪:৫-৭, ৪:২১-২৪ জাতীয় স্মৃতিসৌধ দ্বারা ইতিহাস শিক্ষা
‘তোমরা যর্দন নদীতে নেমে …ইস্রায়েলীয়দের বারোটা গোষ্ঠীর জন্য প্রত্যেকে একটা করে মোট বারোটা পাথর কাঁধে তুলে নাও। ৬ এগুলো তোমাদের মধ্যে একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে তোমাদের ছেলেমেয়েরা ঐ পাথরগুলোর মানে জিজ্ঞাসা করলে তোমরা তাদের জানাবে যে, সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি যখন যর্দন নদী পার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার জলের স্রোত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।… ২২ তখন তোমরা তাদের বলবে, ‘ইস্রায়েলীয়েরা শুকনা মাটির উপর দিয়ে হেঁটে এই যর্দন নদী পার হয়ে গিয়েছিল।’ ২৩ আমরা লোহিত সাগর পার হয়ে না আসা পর্যন্ত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন আমাদের সামনে সাগরটা শুকনা অবস্থায় রেখেছিলেন তেমনি যর্দন নদীতেও তা-ই করলেন। তোমরা নদীটা পার হয়ে না আসা পর্যন্ত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সামনে যর্দন নদী শুকনা অবস্থায় রেখেছিলেন। ২৪ তিনি এই কাজ করেছিলেন যাতে পৃথিবীর সমস্ত জাতি জানতে পারে যে, সদাপ্রভুর হাত শক্তিশালী আর যাতে তোমরা সব সময় তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে চল।’
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও মূল্যবোধ শিক্ষায়। পরিবার হিসাবে তাতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
- কেবলমাত্র জাতীয় ইতিহাস না বরং পারিবারিক ইতিহাসও স্মরণ ও উৎযাপন করা দরকার। উদাহরণ: ঈশ্বরের একটি বিশেষ যোগান বা সাহায্যের বাৎসরিক স্মরণ করার অনুষ্ঠান।
বাবা-মায়ের অধিকার ভুলভাবে ব্যবহার না করার দায়িত্ব
ইফিষীয় ৬:৪ সন্তানদের বিরক্ত করে তুলো না
‘যারা বাবা, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করে তুলো না, বরং প্রভুর শাসন ও শিক্ষায় তাদের মানুষ করে তোল।’
কলসীয় ৩:২১ সন্তানদের বিরক্ত করে তোলো না
‘তোমরা যারা পিতা, তোমাদের ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না, যেন তারা উৎসাহহীন হয়ে না পড়ে।’
- দুইটি পদে বিশেষভাবে বাবাদের সন্তানদের বিরক্ত করে তোলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
- কেন মা-দেরকে এই সাবধাণবাণী দেওয়া হয় না? হয়তো মায়েরা সন্তানের কি কষ্ট বা খারাপ লাগে, তা আরো ভালভাবে বুঝতে পারেন? বাবাদের কি দমন করা বা তাদের ক্ষমতা স্বার্থপরভাবে ব্যবহার করার প্রলোভন বেশি?
- একটি বাচ্চাকে কেন বিরক্ত করে তোলার প্রলোভন আসে? আসলে এটা কি স্বাভাবিক? কিন্তু কেন আপনি বাচ্চার সাথে এমন করবেন? কারণ এটা হল বয়স্ক মানুষ হিসাবে সন্তানের প্রতি আমার আরো ক্ষমতা ও বুদ্ধি বেশি দেখানোর আমোদ, তৃপ্তি ও জয়ের প্রকাশ। ঈশ্বর বলেন যে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
সন্তানদের শাসন করার আদেশ
শাসন করা মানে আসলে কি? তা সন্তানের মঙ্গলের জন্য কিভাবে করব? > ‘পরিবার ১১ – সন্তানদের শাসন করা‘ দেখুন।
সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে আমার প্রধান লক্ষ্য কি হওয়া উচিত?
> বাবা-মা হিসাবে সন্তান দ্বারা গৌরব পাওয়া? একটি সন্তানের ১০০ ভাগ বাধ্যতা নিশ্চিত করা?
> একটি সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা? মন্দ জগত থেকে সন্তানকে রক্ষা করা?
- আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত:
> সন্তান যেন ভালবাসা, নিঃশর্তে গ্রহণ, নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ পেতে পারে।
> সন্তান যেন মন্দ বা ভাল, ঠিক বা ভুল বুঝতে পারে এবং কারণ ও ফলাফল বুঝতে পারে।
> সন্তান যেন নিজে থেকে ভালটা ও সঠিকটা পছন্দ করতে শিখতে উৎসাহ পায় ।
> বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা থেকে শুরু করে > > > যেন নিজেই ভাল সিদ্ধান্ত নিতে শেখে।
সন্তান বড় হতে হতে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যগুলি পরিবর্তন হওয়া দরকার
- শুরুতে: বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা > > > শেষে: ঈশ্বরের প্রতি ও যা ভাল, তার প্রতি স্বেচ্ছায় বাধ্যতা
- শুরুতে: বাবা-মায়ের উপর নির্ভরতা > > > নিজেই দায়িত্ব নেওয়া
- নিয়ন্ত্রণ > > > স্বনিয়ন্ত্রণ
- নিরাপদ পরিবেশ তৈরি > > > যে কোনো পরিবেশে ভাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
- বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন > > > সন্তান নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে জানেন
- বাবা-মা প্রস্তাব বা উদ্যোগ দেন > > > সন্তান স্বচালিত, স্বক্রিয় ও ভাল আকাঙ্খা দিয়ে পূর্ণ
উদাহরণ: একটি ৩০ বছরের ছেলে যে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের জন্য বাবা-মায়ের সাহায্য নেয় এবং ১০০ ভাগ বাধ্য থাকে, তা আসলে ভাল নয়!
প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলি = সন্তানদের মানুষ করার জন্য উদ্দেশ্যগুলি
- যেভাবে যীশু সম্মান দেখিয়ে লোকদের আকৃষ্ট করেন, শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দেন ও তাদের স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করেন, তা দেখায় ঈশ্বর প্রত্যেকজন বিশ্বাসীর জন্য কি চান এবং বাবা-মায়ের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে:
> আদর্শ দেখানো > বুঝানো > প্রশিক্ষণ দেওয়া > প্রেরণা ও উৎসাহ দান > মুক্ত করা - মানুষ সম্বন্ধে বাইবেলীয় দৃষ্টির জন্য ‘পরিবার ১১ – সন্তানদের শাসন করা‘ ও ‘শিক্ষা ০৫ – ভিত্তিক চিন্তা‘ দেখুন।