ধর্ম ০৯ – নতুন নিয়মে নেতৃত্ব – একজন ব্যক্তি নিয়ে অধ্যয়ন: তীমথিয়
যুবক হিসাবে তীমথিয় ৫০ খ্রীঃ তীমথিয়ের বয়স: ১৬ বছর (?)
প্রেরিত ১৬:১-৩ তীমথিয়ের পরিবার ও শহর
- তীমথিয় লুস্ত্রা শহরের বাসিন্দা। লুস্ত্রা হল গালাতীয়া জেলার, এশিয়া মাইনরের প্রদেশের একটি শহর (আজকে: তুর্কী)।
- তার বাবা গ্রীক, তার মা যিহূদী। যিহূদী মা থাকলেও তাকে ছেলেবেলায় সুন্নত করানো হয় নি।
- তিনি লুস্ত্রা প্রথম বিশ্বাসীদের মধ্যে একজন। মণ্ডলী মাত্র ৪৮ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপন করা হয়েছিল, এখন আমরা ৫০ খ্রিষ্টাব্দে আছি।
- যদিও তিনি যুবক ও যদিও মণ্ডলী বেশ নতুন, ইতিমধ্যে তীমথিয়ের লুস্ত্রায় একটি সুনাম আছে।
২ তীমথিয় ১:৫ ‘তোমার অন্তরে যে সত্যিকারের বিশ্বাস আছে সেই কথাও আমার মনে আছে। এই বিশ্বাস আগে তোমার দিদিমা লোয়ীর ও তোমার মা উনীকীর অন্তরে ছিল, আর আমি নিশ্চয় জানি, এই বিশ্বাস তোমার অন্তরেও আছে।’
- তীমথিয়ের দিদিমার নাম ছিল লোয়ী, তার মায়ের নাম ছিল উনীকী। দুইজন তার আগে বিশ্বাসী হয়েছিলেন। ইংরেজী অনুবাদ: ‘সত্যিকারের বিশ্বাস’ দুইজনের অন্তরে ছিল, যেমন তীমথিয়ের অন্তরেও। তাদের পরিত্রাণ পাওয়ার গল্প জানি না; হয়তো তারা তীমথিয়ের ঠিক আগেই পৌল ও বার্ণবার প্রচারে বিশ্বাসী হয়েছিলেন।
২ তীমথিয় ৩:১৫ ‘ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষালাভ করেছ।…’
- যেহেতু সবাই নতুন বিশ্বাসী, পৌল এই কথা পুরাতন নিয়মের সাধারণ যিহূদী শিক্ষার বিষয়ে বলেন যা তীমথিয় তার দিদিমা ও মায়ের মাধ্যমে পেয়েছিলেন। বোধ হচ্ছে তারা ছিলেন নম্র যিহূদী যারা পবিত্র শাস্ত্র ঠিকভাবে বুঝতেন কারণ যখন তারা সুসমাচার পান তারা সাথে সাথে সাড়া দেন ও বিশ্বাসী হয়ে যান।
২ তীমথিয় ৩:১০-১১ ‘তুমি আমার শিক্ষা, চালচলন, উদ্দেশ্য, বিশ্বাস, সহ্যগুণ, ভালবাসা ও ধৈর্য ভাল করেই লক্ষ্য করেছ। ১১ এছাড়া আন্তিয়খিয়ায়, ইকনিয়ে ও লুস্ত্রাতে আমি যে সব অত্যাচার ও কষ্টভোগ করেছি সেই সব অত্যাচারের কথাও তুমি জান, কিন্তু প্রভু সেই সব থেকে আমাকে রক্ষা করেছিলেন।
- তীমথিয় পৌলের প্রচারও শুনেন, তার জীবন, এবং হয়তো তার কষ্টভোগও দেখেন। হয়তো তিনি লুস্ত্রায় পৌলকে পাথর ছুঁড়ে মারার প্রচেষ্টা নিজের চোখে দেখেছেন (প্রেরিত ১৪:১৯)। তাই তিনি একটি বাস্তব চিত্র দেখেছেন প্রেরিত হওয়া মানে কি। যদিও তীমথিয় অল্প বয়সের ও লাজুক, তিনি সাহস করে তারপরও পৌলের দলে যোগ দেন।
- আমরা ঠিক জানি না তীমথিয় যখন পৌলের দলে যোগ দেন, তখন তার বয়স আসলে কত ছিল। কিন্তু আমরা জানি যে তিনি ৫০ খ্রিষ্টাব্দে যোগ দেন এবং অনেক বছর পরে (হয়তো ১২ বছর পরে, তা নির্ভর করে ১ তীমথিয় চিঠির কি তারিখ মনে করা হয়) পৌল এখনও তাকে ‘যুবক’ বলেন (১ তীম ৪:১২): ‘তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে। কথায়, চালচলনে, ভালবাসায়, বিশ্বাসে এবং পবিত্রতায় তুমি বিশ্বাসীদের কাছে আদর্শ হও’ । তাই অনুমান করা যায় যে তিনি ৫০ খ্রিষ্টাব্দে আসলে কিশোর বা যুবক মাত্র, হয়তো ১৬ বছর বয়স।
- তাই বুঝা যায় যে লুস্ত্রা মণ্ডলীর স্থাপন থেকে (৪৮ খ্রিঃ, ১ম প্রচার যাত্রা, প্রেরিত ১৪) পৌল ফিরে আসা পর্যন্ত (৫০ খ্রীঃ, ২য় প্রচার যাত্রা, প্রেরিত ১৬) তীমথিয় সে দেড় বা ২ বছরের মধ্যে ইতিমধ্যে একজন মনে-প্রাণে বিশ্বাসী এবং সুনামের লোক হয়ে উঠেন।
- তার অর্থ তাও যে তিনি পৌল সে সমস্যার কারণে গালাতীয় চিঠি লিখেছিলেন (সুন্নত করার চাপ), মণ্ডলী সে ঝামেলা বা টেনশন উপলব্দি করেছেন। বুঝা যায় যে তার পরিবার বা তিনি সুন্নতের চাপে সাড়া দেন নি।
১ তীমথিয় ৬:১২ ‘খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্য তাঁর পক্ষে প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যাও। যে অনন্ত জীবনের জন্য ঈশ্বর তোমাকে ডেকেছিলেন সেই অনন্ত জীবন ধরে রাখ। তুমি অনেক লোকের সামনেই তোমার বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিয়েছিলে।’
- তীমথিয় অনেক লোকদের সামনেই তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তা হতে পারে তার বাপ্তিস্মকে বুঝায়।
- পৌল তীমথিয়কে তার দলে যোগ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেন। হতে পারে সে সময় মণ্ডলী তীমথিয়ের জন্য প্রার্থনা করে তাকে অনুমোদিত করে দিল (অথবা তা পরে ঘটে):
১ তীমথিয় ৪:১৪ ‘মণ্ডলীর নেতারা যখন তোমার উপরে তাঁদের হাত রেখেছিলেন তখন নবী হিসাবে কথা বলবার মধ্য দিয়ে যে বিশেষ দান তোমাকে দেওয়া হয়েছিল সেই দান তুমি অবহেলা কোরো না।’
২ তীমথিয় ১:৬ ‘এইজন্য আমি তোমাকে আবার এই কথা বলতে চাই-তোমার উপর আমার হাত রাখবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তোমাকে যে বিশেষ দান দিয়েছেন তা আবার জাগিয়ে তোলো।’
পৌলের সহকর্মী হিসাবে তীমথিয় ৫০-৬৪ খ্রীঃ তীমথিয়ের বয়স: ১৬-৩০ বছর
প্রেরিত ১৬:৩ ‘পৌল তীমথিয়কে সংগে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর সুন্নত করালেন, কারণ ঐ সব জায়গায় যে যিহূদীরা থাকত তারা জানত তীমথিয়ের বাবা একজন গ্রীক।’
- যদিও পৌল এইমাত্র গালাতীয় চিঠি লিখেছেন বিশ্বাসীদের বুঝানোর জন্য যে সুন্নত করার কোনো প্রয়োজন নেই, তবুও পৌল এখন তীমথিয়কে সুন্নত করিয়ে ফেলেন। পৌল নিজের কথার বিপরীত কাজ করেন কিন্তু তা অসঙ্গতি নয়: যদি একজন মনে করে যে সুন্নত গ্রহণ করলে সে ঈশ্বরের চোখে আরো গ্রহণযোগ্য হবে তবে তার জন্য সুন্নত করা একটি ভুল নির্ভরতা ও তাই নিষেধ (গালাতীয় ৫:২-৩)। কিন্তু যদি একজন জানে যে আমরা যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা মাত্র গ্রহণযোগ্য হই, তবে সে সুন্নত করতে পারে, নাও করতে পারে (গালাতীয় ৫:১৫)। পৌল এবং তীমথিয় জানেন যে সুন্নত করা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায় না ও তাই তারা স্বাধীন, কিন্তু পরিচর্যার ক্ষেত্রে যেন তীমথিয়ের জন্য বাধা সৃষ্টি না হয়, তাই পৌল তীমথিয়কে সুন্নত করান।
- তীমথিয় তাড়াতাড়ি পৌলের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী হয়ে যান, যিনি পরিচর্যার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকবার বিশেষ দায়িত্ব পান ও ভূমিকা পালন করেন:
- প্রে ১৭:১০ তীমথিয় থিষলনীকীয়ায় থাকেন যখন পৌলকে আন্দোলনের কারণে চলে যেতে হয়
- প্রে ১৭:১৪-১৫ তীমথিয় সীলের সঙ্গে বিরিয়াতে থাকেন যখন পৌলকে চলে যেতে হয়।
- ১ থিষ ৩:৬ পৌল তীমথিয়কে থিষলনীকীয় মণ্ডলীর সাথে দেখা করতে পাঠান।
- হতে পারে তীমথিয় পৌলের ১ ও ২ থিষলনীকীয়চিঠি পৌঁছিয়ে দেন ও রিপোর্ট নিয়ে আসেন।
- প্রেরিত ১৯ পৌল তীমথিয়কে ইফিষ থেকে ম্যাসিডোনিয়ায় পাঠান।
- ১ করি ৪:১৭, ১৬:১০ পৌল তীমথিয়কে ইফিষ থেকে করিন্থ মণ্ডলীর কাছে পাঠান।
- ফিলি ২:১৯ পৌল তীমথিয়কে ফিলিপী মণ্ডলীর কাছে পাঠান।
- ১ তীম ১:৩ পৌল তীমথিয়কে ইফিষ মণ্ডলীর দেখাশোনার ভার দেন।
- বিশেষভাবে থিষলনীকীয়ার গল্পে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় পৌল ও তীমথিয়ের ভূমিকা কত ভিন্ন কিন্তু তারা ভালভাবে একতায় কাজ করেন ও পরস্পরের পরিপূরক হন:
- যখন থিষলনীকিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়, পৌল ও সীলকে সাথে সাথে চলে যেতে হয় যেন তারা মণ্ডলীর উপরে আরো অত্যাচার টেনে নিয়ে না আসেন (প্রেরিত ১৭:১০)। কিন্তু যুবক তীমথিয় থাকতে পারেন, মণ্ডলীকে আর কিছুক্ষণ ধরে যত্ন নিয়ে তাদের উৎসাহ ও শিক্ষা দিতে থাকেন।
- কিছুক্ষণ পরে, যখন পৌল এই তাড়াতাড়ি স্থাপিত ও অত্যাচারিত মণ্ডলী নিয়ে দুশ্চিন্তিত, তিনি নিজে পরে আর মণ্ডলীতে যেতে পারেন না কারণ তার মুখ দেখে আন্দোলন আবার জাগবে, কিন্তু যুবক তীমথিয়, যিনি বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেন না ও যাকে কেউ ভয় পায় না, তিনি ঠিকই যেতে পারেন (১ থিষ ৩:৬)।
- তাই তীমথিয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি পালন করতে থাকেন: তিনি অনেক মণ্ডলীর স্থাপনের সাহায্যকারী, স্থাপিত মণ্ডলীগুলির যত্নকারী, চিঠি বহনকারী ও তাদের পক্ষে যোগাযোগকারী (১ থিষ ৩:৬); তিনি সঠিক শিক্ষার শিক্ষক (১ তীমথিয় ১:৩); ভ্রান্ত শিক্ষকদের সংশোধনকারী (২ তীম) এবং পৌলের কথার বা খোঁজ-খবরের বাহক (ফিলিপীয় ২:২৩)।
তীমথিয়ের ভূমিকা বা স্বভাব-চরিত্রের পৌলের বর্ণনা
রোমীয় ১৬:২১ ‘আমার সঙ্গে কাজ করেন’
২ করি ১:১, কল ১:১, ফিলি ১:১, ১ থিষ ৩:২, ইব্রী ১৩:২৩ ‘ভাই’
১ করি ৪:১৭ ‘প্রিয় আর বিশ্বস্ত সন্তান’
১ থিষ ৩:২ ‘ভাই’, ‘সহকর্মী’
ফিলি ২:২০-২২ ‘আমার সংগে এমন আর কেউ নেই, যে তীমথিয়ের মত করে সত্যিই তোমাদের জন্য চিন্তা করে। ২১ অন্য সকলে যীশু খ্রীষ্টের ব্যাপারে ব্যস্ত না থেকে নিজেদের ব্যাপারেই ব্যস্ত থাকে। ২২ কিন্তু তোমরা জান যে, তীমথিয় তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, কারণ যেভাবে ছেলে বাবার সংগে কাজ করে সেইভাবেই তিনি আমার সংগে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের কাজে পরিশ্রম করেছেন।
- পৌল তীমথিয়ের জন্য সুন্দর সুপারিশ দেন একটি সৎ, যোগ্য, সত্যিই যত্নশীল ও স্বার্থহীন ব্যক্তি হিসাবে।
- সব ক্ষেত্রে তীমথিয়ের চেয়ে বড় হলেও পৌল তাকে খুব ভালবাসেন, আপন হিসাবে দেখেন ও তার বন্ধুত্ব থেকে আনন্দ ও সান্ত্বনা পান। যদিও তারা দুইজন অনেক ভিন্ন ব্যক্তিত্বের লোক তাদের মধ্যে একটি গভীর ও ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। আজকে আমরা বড় নেতাদের পরামর্শ দেই তাদের অনুস্মরণকারীদের সাথে অতি ঘনিষ্ট সম্পর্কে না নামতে, কিন্তু পৌল এর বিপরীত করেন: তিনি ‘দূরে’ থাকেন না বরং আবেগ দিয়ে এবং মনে প্রাণে এই বন্ধুত্বে সমর্পিত আছেন, যেমন ২ তীম ১:৪ পদও দেখায়: ‘তুমি যে কাঁদছিলে সেই কথা মনে করে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে, যেন আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে।’
- পৌল তীমথিয়ের নেতৃত্বকে গঠন করেন। যত বেশি তীমথিয় পরিচর্যায় বৃদ্ধি পান, তত বেশি পৌল তাকে দায়িত্ব, বিভিন্ন ভূমিকা ও অধিকার দিতে থাকেন এবং তাকে সাথে দিক-নির্দেশনাও দেন:
- ১ তীম ১:৩ ‘তুমি থাক যাতে কতগুলো লোককে নির্দেশ দিতে পার যেন তারা আর ভুল শিক্ষা না দেয়।’
- ১ তীম ৪:১১ ‘তুমি এই সব বিষয়ে আদেশ ও শিক্ষা দাও।’
- ১ তীম ৬:২ ‘এই সব বিষয় শিক্ষা দাও এবং উপদেশ দাও।’
- ২ তীম ২:১৪ ‘সব কথা লোকদের মনে করিয়ে দিতে থাক। ঈশ্বরের সামনে তাদের সাবধান করে দাও।’
- ২ তীম ৪:২ ‘ঈশ্বরের বাক্য প্রচার কর; …সব সময়েই প্রচারের জন্য প্রস্তুত থাক; খুব ধৈর্যের সংগে শিক্ষা দিয়ে লোকদের দোষ দেখিয়ে দাও, তাদের সাবধান কর ও উপদেশ দাও।’
তীমথিয়ের পরিচর্যার সময় তালিকা
যাত্রা | সাল | পদ | বর্ণনা |
১ম | ৪৮-৪৯ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৮:১-২৩, ২ তীম ৩:১০-১১ | তীমথিয়ের পৌল ও বার্ণবার সঙ্গে দেখা হয়, সুসমাচার পান ও বিশ্বাসী হয়ে যান। |
২য় | ৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৬:১-৩ | তীমথিয়ের সুনাম আছে। তিনি পৌল ও সীলের দলে যোগ দেন। পৌল তাকে সুন্নত করেন। |
৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৭:১৪-১৫ | তীমথিয় ও সীল বিরিয়াতে থাকে যখন পৌল এথেন্সে যান। | |
৫০ খ্রীঃ | প্রেরিত ১৮:৫ | তীমথিয় ও সীল এথেন্সে ও করিন্থে যান, পৌলের সাথে আবার মিলিত হয় | |
৫০ খ্রীঃ | ১ থিষ ৩:২, ৩:৬ | তীমথিয়কে অত্যাচারিত থিষালনীকীয় মণ্ডলীর কাছে ফিরে পাঠানো হয় যেন খোঁজ নেন তারা কেমন। | |
৫০ খ্রীঃ | ১ থিষ ১:১ | তীমথিয় পৌলকে রিপোর্ট দেন, ১ম থিষলনীকীয় চিঠির সহ-লেখক হন ও হতে পারে চিঠিটি পৌছিয়ে দেন। | |
৫১ খ্রীঃ | ২ থিষ ১:১ | তীমথিয় পৌলকে রিপোর্ট দেন, ২য় থিষলনীকীয় চিঠির সহ-লেখক হন ও হতে পারে চিঠিটি পৌঁছিয়ে দেন। | |
৫১-৫২ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল, সীল, প্রিষ্কিল্লা ও আকিলার সঙ্গে করিন্থ শহরে পরিচর্য্যা করেন। | ||
৩য় | ৫২ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল ও সীলের সঙ্গে ইফিষ, যিরূশালেম ও আন্তিয়খিয়ায় যান। | |
৫৩ খ্রীঃ | তীমথিয় পৌল ও তার দলের সঙ্গে ইফিষে যান ও পরিচর্য্যা করেন। | ||
? | প্রেরিত ১:২২ | পৌল তীমথিয় ও ইরাস্তকে ম্যাসিদোনিয়ায় পাঠান। | |
৫৫ খ্রীঃ | ১ করি ৪:১৭, ১ করি ১৬:১০ | করিন্থ মণ্ডলী সম্বন্ধে খারাপ রিপোর্ট পেয়ে পৌল তীমথিয়কে করিন্থে পাঠান দেখার জন্য তার চিঠি (১ করিন্থীয়) কেমন মেনে নেওয়া হয়েছে। | |
৫৬ খ্রীঃ | ২ করি ২:১ | তীমথিয় করিন্থ থেকে খারাপ রিপৌর্ট নিয়ে আসে। উত্তরের পৌল তাড়াতাড়ি করিন্থে যান। | |
৫৬ খ্রীঃ | ২ করি ১:১ | পৌল ও তীমথিয় তীতের অপেক্ষায় ত্রোয়া ও ম্যাসিদোনিয়ায় যান। তীমথিয় ২য় করিন্থীয় চিঠির সহলেখক হন। | |
৫৭ খ্রীঃ | প্রেরিত ২০:৪-৫ | করিন্থে যাওয়ার পরে তীমথিয় পৌলের সঙ্গে ম্যাসিদোনিয়া, ত্রোয়া ও যিরূশালেমে যান। | |
৫৭-৬২ খ্রীঃ | কিছু উল্লেখ নেই। হয়তো তিনি কৈসরিয়ায় ও রোমে বন্দী পৌলের সঙ্গে থাকেন। | ||
৪র্থ | ৬২ খ্রীঃ | ফিলিপীয় ১:১, কল ১:১, ফিলীমন ১ | তীমথিয় রোমে পৌলের সঙ্গে আছেন। তিনি ফিলিপীয়, কলসীয় ও ফিলীমনের চিঠির সহ-লেখক হয়ে যান। |
৬২-৬৪ খ্রীঃ | ১ তীম ১:৩ | পৌল তীমথিয়কে ইফিষে রেখে যান (?)। | |
৬৪ খ্রীঃ | ২ তীম ৪:৯ | পৌল তীমথিয়কে অনুরোধ করেন যেন তিনি তার মৃত্যুর আগে তার কাছে আসেন। ত্রোয়ার কার্প থেকে জিনিষ-পত্র নিয়ে আসতে বলেন। | |
৬৪ খ্রীঃ? | ইব্রী ১৩:২৩ | তীমথিয় বন্দী করা হয়েছে, উদ্ধার আবারও পেয়েছেন। | |
৮১ খ্রীঃ | মণ্ডলীর ইতিহাস | ইফিষে একটি দেবতা-পূজার পর্বে তীমথিয়কে লাঠি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। |
তীমথিয়ের ব্যক্তিত্ব
- ১ করি ১৬:১০ পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীকে নির্দেশনা দেন তীমথিয়কে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করতে যেন তিনি তাদের মধ্যে নির্ভয়ে থাকতে পারেন।
- তা দ্বারা এবং ১ ও ২ তীমথিয় চিঠিতে তীমথিয়ের কাছে পৌলের দিক-নির্দেশনা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে তীমথিয়ের ব্যক্তিত্ব এমন ছিল না যে তিনি সহজেই নেতৃত্ব দখল করতেন, হাল ধরতেন বা অন্যদের রাজি করতে পারতেন। তিনি সামনে দাঁড়ানোর লোক নন, সবার চোখে পড়ার লোক নন, সবাইকে রাজি করানোর লোক নন, সহজে মিশার লোক, হাসি-খুশি বা ভূমিকা দখল করার লোকও নন। বরং বোধ হয় যে তিনি ছিলেন লাজ্জুক, শান্ত ও অন্তর্মুখী ব্যক্তি, চুপ করে থাকার একজন যিনি সহজে মনোযোগ বা দায়িত্ব দখল করেন না। পৌল তাকে নীচের দিক-নির্দেশনা দেন:
- ১ তীম ৪:১২ ‘তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে।’
- ১ তীম ৪:১৩-১৫ ‘তুমি বিশ্বাসীদের পবিত্র শাস্ত্র পড়ে শোনানো, প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখ। … যে বিশেষ দান তোমাকে দেওয়া হয়েছিল সেই দান তুমি অবহেলা কোরো না।’
- ২ তীম ১:৬ ‘ঈশ্বর তোমাকে যে বিশেষ দান দিয়েছেন তা আবার জাগিয়ে তোলো।’
- ২ তীম ১:৭ ‘ঈশ্বর আমাদের ভয়ের মনোভাব দেন নি; তিনি আমাদের এমন মনোভাব দিয়েছেন যার মধ্যে শক্তি, ভালবাসা ও নিজেকে দমনে রাখবার ক্ষমতা রয়েছে।’
- ২ তীম ২:১৫ ‘যার উপর ঈশ্বর সন্তুষ্ট, অর্থাৎ যার লজ্জা পাবার কোন কারণ নেই সেই রকম কাজের লোক হিসাবে এবং যে নির্ভুল ভাবে সত্যের বাক্য শিক্ষা দেয় সেই রকম লোক হিসাবে নিজেকে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত করবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হও।
- ১ তীম ৫:২৩ হয়তো তীমথিয়ের ঘনঘন অসুখ ও হজমের সমস্যার একটি কারণ ছিল যে তিনি দায়িত্ব বহন করতে এত সহজ মনে করতেন না বা সহজে দুশ্চিন্তিত হতেন। পৌল অবশ্যই তীমথিয়ের শারীরিক সমস্যার জন্য বিনতী করতেন কিন্তু সেগুলি সহজে সরে আসে নি, বোধ হয়।
- বোধ হচ্ছে যে তীমথিয় ২ তীম ১:৮ পদে পৌলের নির্দেশনা ‘সুখবর প্রচারের জন্য আমার সংগে কষ্টভোগ কর’ ঠিকই পালন করেছেন কারণ পরে দেখা যায় যে তীমথিয়ও জেলে 🙂 (ইব্রীয় ১৩:২৩)।
পৌলের জীবনের শেষে তীমথিয় ৬৪-৬৫ খ্রীঃ তীমথিয়ের বয়স: ৩০-৩১ বছর
২ তীম ৪:৯-১৬ ‘তুমি খুব চেষ্টা কর যাতে আমার কাছে শীঘ্র আসতে পার, কারণ দীমা এখনকার জগতকে ভালবেসে আমাকে ছেড়ে থিষলনীকীতে চলে গেছে। এছাড়া ক্রীষ্কেন্ত গালাতিয়াতে এবং তীত দালমাতিয়াতে গেছেন; ১০ কেবল লূক আমার কাছে আছেন। তুমি মার্ককে সংগে করে নিয়ে এস…১২ আমি তুখিককে ইফিষে পাঠিয়েছি। ১৩ ত্রোয়াতে কার্পের কাছে আমি যে গায়ের কাপড়টা ফেলে এসেছি, আসবার সময় তুমি সেটা নিয়ে এস। তা ছাড়া গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষ করে যেগুলো চামড়ার উপর লেখা, সেগুলো সংগে করে নিয়ে এস। … ১৬ প্রথম বার যখন আমার বিচার হয়েছিল তখন কেউ আমাকে সাহায্য করে নি, বরং সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’

- পৌল তার শেষ চিঠি (২ তীমথিয়) তার সবচেয়ে দীর্ঘদিনের ও অতি বিশ্বস্ত সমকর্মী তীমথিয়কে পাঠান।
- পৌল জানেন যে তিনি এই বন্ধন থেকে আর মুক্ত হবেন না (২ তীম ৪:৬-৭) বরং যে তাকে নীরোর আদেশে মৃত্যুর রায় দেওয়া হবে (রোম শহরে যেখানে পৌলকে শিরশ্ছেদ করা হয় তার স্মরণে St. Paolo নামে একটি বড় গির্জা নির্মাণ হয়েছে)।
- ২ তীমথিয় চিঠি হল এমন একটি ব্যক্তিগত ও সরাসরি চিঠি যাতে পৌল কোনো কিছু বলতে নিজেকে স্বাধীন মনে করেন: যা কষ্টের (লোক যারা চলে যায়), যা আনন্দের (পরিচর্যা এগিয়ে যায়), যা ব্যবহারিক (কিছু মালপত্র নিয়ে আস!) এবং যাতে ‘না’ বলা যায় না (খুব চেষ্টা কর শীঘ্র আসতে!)।
- এই চিঠিতে বুঝা যায় যে পৌল মনে প্রাণে চান যে এই শেষ সময় তীমথিয় তার সঙ্গে থাকেন, কারণ এখনও অনেক কিছু করা যাবে (গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, চামড়ার উপর লেখা বই) এবং এখনও বিশেষ প্রয়োজনের খবর শুনে লোক পাঠানো যেত (মার্ক)।
- ২ তীমথিয় চিঠির এমন ভাব এমন যে একজন দৌড়ে গিয়ে আর একজনের হাতে লাঠিটি দিয়ে দেয়। সে লাজ্জুক যুবক তীমথিয় এখন এমন একজন লোক হয়ে উঠেছেন যার যত্নে পৌল তার কতগুলো মণ্ডলীর জন্য দায়িত্ব এবং তার পরিচর্যার ভার হস্তান্তর করেন। তীমথিয় হলেন পৌলের পরিচর্যার উত্তরাধিকারী।
পৌলের পরে তীমথিয়ের জীবন ৬৫-৮১ খ্রীঃ তীমথিয়ের বয়স: ৩১-৪৭ বছর
- ইব্রীয় চিঠির লেখক তার চিঠির শেষে উল্লেখ করেন যে তীমথিয়কে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে (ইব্রীয় ১৩:২৩)। তিনি এই সুখবর জানিয়ে তার অত্যাচারিত শ্রোতাদের উৎসাহ দিতে চান (৬৪-৬৭ খ্রীঃ)।
- আমরা তীমথিয়ের বাকি জীবন সম্বন্ধে বেশি কিছু জানি না। মণ্ডলীর ইতিহাস বলে যে তাকে ৮১ খ্রীঃ ইফিষে একটি দেবতা-পূজার পর্বে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হয় এবং এভাবে তীমথিয় শহীদ মৃত্যু বরণ করেন।
সারাংশ
- আশ্চর্য লাগে খেয়াল করতে পৌল এবং তীমথিয় কত ভিন্ন, কিন্তু কত ঘনিষ্ট সম্পর্ক তাদের আছে ও কত ভালভাবে তারা একসাথে কাজ করে।
- পৌল তীমথিয়কে আসলে ভালবাসেন, তার সঙ্গে কাজ করতে আনন্দিত, তার সে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, দান ও তালন্তকে মূল্য দেন, যে পরিচর্যা তার জন্য করা সম্ভব তাতে তাকে মুক্ত করেন এবং তাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে তার উপর অনেক নির্ভর করেন।
- পৌলের তীত এবং লূকের সঙ্গেও ঘনিষ্ট দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে, কিন্তু তীমথিয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের পার্থক্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে এবং তাদের একতায় ফলবান কাজ করতে দেখে সবচেয়ে সুন্দর লাগে।
- তীমথিয়কে তার সে শক্তিশালী নেতার দ্বারা কখনও চেপে বা আটকিয়ে বা সীমিত করে রাখা হয় নি; অথবা তীমথিয় তা ঘটতে দেন নি। যদিও পৌল এত শক্তিশালী একজন নেতা তবুও তীমথিয় – যার ব্যক্তিত্ব, দান ও আহবান পৌলের চেয়ে এত ভিন্ন – নিজের ভূমিকা ঠিকই খুঁজে পান ও তাতে ফলবান হন।
- তীমথিয় পৌলের সাথে পরিচর্যা করার ক্ষেত্রে এবং এমন ভূমিকায় যা পৌল পালন করতে পারলেন না তাতেও তিনি ফুটে ওঠেন।
- তীমথিয়ের আদর্শ দেখায় যে বাইবেলে নেতৃত্ব একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব বা দানের উপর নির্ভরশীল নয়। সব ধরণের ব্যক্তিত্বের লোকদের নেতৃত্ব প্রয়োজন।