ধর্ম ১৩ – ত্রিত্ব ঈশ্বর

ভূমিকা
  •  খ্রিষ্টান বিশ্বাসে কিছু বিষয় আছে যা বুঝা কঠিন, বুঝানোও কঠিন কিন্তু বিষয় তারপরেও মৌলিক। এর মধ্যে প্রধানটা হল যে ঈশ্বর ত্রিত্ব ঈশ্বর।
  • যারা মণ্ডলীতে বড় হয় তারা ত্রিত্ব ঈশ্বর সম্বন্ধে শুনতে থাকে, তাই বিষয়টি তেমন ‘অন্য রকম’ আর লাগে না, কিন্তু এমন না যে বিশ্বাসী হিসাবে আমরা ঈশ্বর যে ত্রিত্ব হন, তা তেমন ভালভাবে বুঝি।
  •  এবং ঈশ্বর ত্রিত্ব, তা হল ইসলাম ধর্মের সাথে আমাদের এক নম্বর তর্কের বিষয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে সর্বোচ্চ পাপ হল যে একজন মানুষ নিজেকে ‘ঈশ্বর’ হিসাবে প্রকাশ করে, তা তো অহংকার, ভক্তিহীনতা ও মূর্খতার শীর্ষ!। কিন্তু যীশু অসরাসরি এবং কিছুটা সরাসরিভাবে ঠিক তাই দাবি করেন।
  •  খ্রিষ্টান হিসাবে আমরা অনেক বার এই বিষয় নিয়ে সংকটে পড়ি। আমরা বিষয়টি তেমন ব্যাখ্যা করতে পারি না। তাই অজুহাত দেখাই বা হৃদয়ে চিন্তা করি যে ঈশ্বর ত্রিত্ব না হলে আরো অনেক সুবিধা হত। কিন্তু এই সারাংশে আসার আগে আরো চিন্তা করা দরকার:
  •  হ্যাঁ, আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের কোনো সরল-সহজ-সুন্দর সংজ্ঞা দিতে সক্ষম হই না, কিন্তু তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ভাল বুঝি অথবা তেমন ভাল নাও বুঝি। কিন্তু কিভাবে তা আমার দৈনন্দিন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
  •  প্রথম পরিষ্কার বলতে হয় ‘ত্রিত্ব ঈশ্বর’ বলতে আমরা কি বুঝাই:
    • ১ স্বর্গস্থ পিতা,
    • ২ পুত্র যীশু এবং
    • ৩ পবিত্র আত্মা; তারা তিনজনই ঈশ্বর এবং তিনজনই এক।
  •  কিছু লোক মনে করে যে ত্রিত্ব ঈশ্বর বলতে আমরা পিতা ঈশ্বর, মরিয়ম ও যীশুকে বুঝি। তা অবশ্যই ভুল চিন্তা এবং সমস্ত খ্রিষ্টানরা রাজি যে যদি কেউ তা দাবি করে তা আসলে শুধুমাত্র একটি হাস্যকর বিষয়।
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বর ইতিমধ্যে পুরাতন নিয়মে প্রকাশিত, এবং আর অনেক বেশি নতুন নিয়মেও প্রকাশিত। এমন না যে ‘ত্রিত্ব ঈশ্বর’ হল নতুন নিয়মের একটি ‘আবিষ্কার’!

ত্রিত্ব ঈশ্বর পুরাতন নিয়মে

  •  আদি ১:১        ‘আদিতে ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।’ ইব্রীয় ভাষায় ‘ঈশ্বর’এর জন্য সে শব্দ দেওয়া আছে হল ‘এলোহীম’ ‘Elohim’। আশ্চর্য বিষয় যে ‘এলোহীম’ আসলে একটি বহুবচন!
  •  আদি ১:১        ‘আদিতে ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।’আদি ১:২ ঈশ্বরের আত্মা সেই জলের উপরে চলাফেরা করছিলেন। … আদি ১:৩ ‘ঈশ্বর বললেন, “আলো হোক।’ এই প্রথম তিন পদে আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের একটি প্রথম প্রকাশ পাই: ঈশ্বর (পিতা), ঈশ্বরের আত্মা (পবিত্র আত্মা) ও ঈশ্বরের বাক্য (যীশু, তার একটি টাইটেল, যোহন ১:১, ১:১৪)।
  •  আদি ১:২৬      ‘তারপর ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি।’ দুইটি বহুবচন ‘আমরা’ ও ‘আমাদের’ যেখানে আমরা কোনো বহুবচন আশা করি নি।
  •  আদি ১১:৭      ‘কাজেই এস, আমরা নীচে গিয়ে তাদের ভাষায় গোলমাল বাধিয়ে দিই যাতে তারা একে অন্যের কথা বুঝতে না পারে।’… আবারও ঈশ্বর একটি বহুবচন ব্যবহার করে নিজেকে প্রকাশ করেন।
  •  আদি ১৮ অধ্যায়ে অব্রাহামের কাছে ৩জন লোক বেড়াতে আসেন, কিন্তু তা নিয়ে আদি ১৮:১ পদে মন্তব্য হল: ‘সদাপ্রভু একদিন তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন।’
  •  দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ সে বিখ্যাত ও যিহূদীদের মধ্যে সর্বপ্রিয় ‘shema’, যা তারা নিজের বিশ্বাসের প্রকাশ হিসাবে বলে: ‘ইস্রায়েলীয়েরা, শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এক।’ … আসলে বাক্যের দ্বিতীয় অংশ একটি বহুবচন পাওয়া যায়, আক্ষরিকভাবে অনুবাদ করলে: ‘তারাই এক’। আশ্চর্য বিষয় যে যিহূদী ধর্মে একেশ্বরবাদের (monotheism) সারাংশের পদেই আমরা একটি বহুবচন পাই!
  •  যীশু তার সে অতি-নিশ্চিত ও অতি অগ্রাহ্যকারী ফরীশীদের খোঁচা মারার জন্য গীত ১১০:১ পদের উদ্ধৃতি করেন: ‘তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তবে দায়ূদ কেমন করে মশীহকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় প্রভু বলে ডেকেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, ৪৪ ‘সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বললেন, যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডানদিকে বস।’ ৪৫ দায়ূদ যখন মশীহকে প্রভু বলে ডেকেছেন তখন মশীহ কেমন করে দায়ূদের বংশধর হতে পারেন?’ (মথি ২২:৪৪, মার্ক ১২:৩৬, লূক ২০:৪২)
  •  যিশাইয় ৬:৮      পদে ঈশ্বর জিজ্ঞাসা করেন: ‘তারপর আমি প্রভুর কথা শুনতে পেলাম। তিনি বললেন, “আমি কাকে পাঠাব? আমাদের পক্ষ হয়ে কে যাবে?’ .. আবারও একবচন ও বহুবচন একইসাথে পাওয়া যাচ্ছে।
  • তা ছাড়া: যখন যিশাইয় তার দর্শনে দূত দেখেন, তারা ঈশ্বরের সামনে বলেন: ‘সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র; তাঁর মহিমায় গোটা পৃথিবী পরিপূর্ণ।’ (যিশাইয় ৬:৩)। ‘পবিত্র’ শব্দ তিনগুণ ব্যবহৃত তার অর্থ কি? হতে পারে তা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পুনরুক্তি করে বলা অথবা তা ত্রিত্ব ঈশ্বরের একটি প্রকাশ: তিনজনই পবিত্র।
  •  যিশাইয় ৯:৬      পদে সে বিখ্যাত মশীহ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞাতে মশীহের একটি আশ্চর্য বর্ণনা দেওয়া হয়: ‘এই সমস্ত হবে, কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে। শাসন করবার ভার তাঁর কাঁধের উপর থাকবে, আর তাঁর নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা, শক্তিশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির রাজা।’ যে ছেলে যা দেওয়া হবে তার নাম হবে ‘চিরস্থায়ী পিতা’ !
  •  হিতোপদেশ ৩০:৪‘কে স্বর্গে উঠেছেন এবং নেমে এসেছেন? হাতের মুঠোয় কে বাতাস ধরেছেন? কে নিজের কাপড়ের মধ্যে সমস্ত জল জমা করে রেখেছেন? পৃথিবীর সব দিকের শেষ সীমা কে স্থাপন করেছেন? তাঁর নাম ও তাঁর পুত্রের নাম কি?
  •  যিশাইয় ৪২:১    ‘সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমার দাস, যাঁকে আমি সাহায্য করি; আমার বাছাই করা লোক, যাঁর উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব আর তিনি জাতিদের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। আরো একটি মশীহ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞা আমরা পাই যেখানে ঈশ্বর, তাঁর দাস (একটি মশীহ সম্বন্ধীয় টাইটেল) এবং ঈশ্বরের আত্মা তিনজনই উল্লিখিত।
  •  যোহন ১:১-১৪   ‘প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। ২ আর প্রথমেই তিনি ঈশ্বরের সংগে ছিলেন। ৩ সব কিছুই সেই বাক্যের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর যা কিছু সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয় নি।…১৪ সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন। পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর যে মহিমা সেই মহিমা আমরা দেখেছি। তিনি দয়া ও সত্যে পূর্ণ।’ যোহন এখানে কবিতার ভাষায় সৃষ্টির পুনরালোচনা করেন। তিনি ঈশ্বরের সে সৃষ্টিকারী বাক্যকে যীশু হিসাবে বুঝায়। যীশু দ্বারা সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু তিনি পৃথিবীতে নেমে মানুষ হিসাবে জন্ম গ্রহণ করেছেন, ঈশ্বর আমাদের মধ্যেই আছেন। নতুন নিয়ম থেকে আরো নির্দিষ্ট আলোচনা পরে দেওয়া হবে।

আমাদের অনুমতি নেওয়া হয় নি

  •  আমাদের ভাল লাগে অথবা ভাল নাও লাগে, ত্রিত্ব ঈশ্বর হলেন একটি বাস্তবতা, যা পুরাতন নিয়ম এবং আরো বেশি নতুন নিয়মে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা বুঝি বা না বুঝি, আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি, অথবা ব্যাখ্যা করতে নাও পারি, ঈশ্বর ত্রিত্ব। ঈশ্বর আমাদের অনুমতি বা মতামত নেন নি। তিনিই ত্রিত্ব। তিনি যে ত্রিত্ব, এই বাস্তবতা আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের ছোট মস্তিষ্ক তা ধরতে পারে অথবা তা ধরতে নাও পারে।
  •  অবশ্যই ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তা খুব কঠিন বিষয়, এবং এমন একটি চিন্তা, যা মানুষ করে না, মানুষের মাথায় ঢুকেও না। মানুষ হয়তো দেব-দেবতার উপস্থিতির চিন্তা করে। মানুষ হয়তো এক প্রধান দেবতার চিন্তাও করে। কিন্তু ত্রিত্ব ঈশ্বর বলতে কেউ আছেন, তা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না, মানুষ থেকে চিন্তাটি সৃষ্টিও হয় নি। ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, আমরা তা বুঝিও না, তা চাওয়ার জন্য আমাদের প্রজ্ঞাও থাকে না। এই চিন্তা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসছে।
  •  যদিও ত্রিত্ব ঈশ্বরকে ব্যাখ্যা করা কঠিন, বিশ্বাসী হিসাবে আমরা তার বাস্তবতা দৈনন্দিন জীবনে উপলব্দি করি। আমরা স্বর্গস্থ পিতার কাছে প্রার্থনা করি, যীশুকে আরাধনা করি, পবিত্র আত্মার কাছে ও দ্বারা প্রার্থনা করি এবং আমাদের মন বা চেতনা এতে কোনো আপত্তি উঠায় না। আমরা ‘আপনা আপনি জানি’ যে যীশুর কাছে প্রার্থনা করলে স্বর্গস্থ পিতা তাতে অপমানিত হন না। পবিত্র আত্মা আমাদের কাছে স্বর্গস্থ পিতাকে প্রকাশিত করে। আমরা তিনজনের সাথে সম্পর্ক রাখি এবং আমাদের আত্মায় কোনো দ্বন্দ্ব বা সংকোচ নেই।

ত্রিত্ব ঈশ্বরের মতবাদের ইতিহাস

  •  মণ্ডলীর আদিপিতারা (যারা প্রেরিতদের পরে প্রথম তিন-চারটি শতাব্দী ধরে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দিলেন)। তারা যীশু যে নিজেই ঈশ্বর হন, তা বলেন ও ‘পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মাকে’ নিয়ে কথা বলতেন।
  •  আন্তিয়খিয়ার ইগ্নাটীয় (Ignatius of Antioch) ১১০ খ্রিঃ ত্রিত্ব ঈশ্বরের মতবাদ সমর্থন করেন এবং বিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেন যেন তারা ‘খ্রিষ্ট, পিতা ও আত্মার’ প্রতি বাধ্য হয়।
  •  যাষ্টিন মার্টীর (Justin Martyr, ১০০-১৬৫ খ্রিঃ) লিখেন ‘ঈশ্বরের নামে, যিনি পিতা ও মহাবিশ্বের কর্তা, এবং আমাদের ত্রাণকর্তা যীশু খ্রিষ্টের নামে এবং পবিত্র আত্মার নামে’।
  •  আন্তিয়খিয়ার থিয়ফিল (Theophilus of Antioch, কম বেশি ১৫০-২০০ খ্রিঃ) ত্রিত্ব ঈশ্বরের সংজ্ঞা এভাবে দিলেন: ‘ঈশ্বর এবং তার বাক্য (Logos) এবং তার প্রজ্ঞা (Sophia)’।
  •  তের্তুল্লিয়ান (Tertullian), একজন ল্যাটিন খ্রিষ্টান পণ্ডিত যিনি ২০০ খ্রিঃ পরে লিখতে শুরু করেছেন প্রথম সে ল্যাটিন শব্দ ‘ত্রিত্বতা’, ‘তিনজন ব্যক্তি’ এবং ‘একইsubstance’ ব্যবহার করেছেন বুঝানোর জন্য যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা ‘তিনজনই এক যদিও তারা তিনজন ব্যক্তি’ (‘three persons but one in essence—not one in Person’)। তিনি ত্রিত্ব ঈশ্বরের মতবাদ সুরক্ষা করেছেন ‘Praxean’ ভুল শিক্ষা থেকে।
  •  রোম শহরের মণ্ডলী ২২০ খ্রিঃ ‘সাবেল্লিয়ানিস্ম’ (Sabellianism) নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষাকে প্রতিরোধ করে। সাবেল্লিয়ানিস্ম বলে যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মাই একই; যে ‘পিতা’, ‘পুত্র’ বা ‘পবিত্র আত্মা’ মাত্র একই ঈশ্বরের ভিন্ন ভূমিকা বুঝায়, পার্থক্য হল মাত্র বর্ণনা বা কথার পার্থক্য।
  •  ২৬৯ খ্রিঃ আন্তিয়খিয়ায় মণ্ডীর সভায় (Synods of Antioch) একটি ভ্রান্ত শিক্ষার প্রতিরোধ করে যার নাম ‘দত্তক নেওয়া’ (Adoptionism)। এই শিক্ষা বলত যে যীশু সাধারণ মানুষ ছিলেন কিন্তু বাপ্তিস্মের সময় ঈশ্বর তাকে খ্রিষ্ট ও ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে দত্তক নিয়েছিলেন ।
  •  ৩২৫ খ্রিঃ নীখেয়ায় মণ্ডলীর সভায় (Church council of Nicaea) আরিয়ানিস্ম (Arianism) নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষাকে প্রতিরোধ করা হল। আরিয়ানিস্ম বলতেন যে যীশু ছিলেন ঈশ্বরের সর্বপ্রথম সৃষ্ট জিনিস যাকে পরে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ হওয়ার সে সম্মান দেওয়া হল। মণ্ডলীর সভায় ঘোষণা করল যে যীশুই ১০০ ভাগ ঈশ্বর।
  •  নীখেয়ার বিশ্বাসের পত্র: যীশু হলেন ‘ঈশ্বর হইতে ঈশ্বর, আলো হইতে আলো, পুত্র কিন্তু সৃষ্ট নয়, পিতার সাথে এক’ (Nicean Creed: ‘God of God, Light of Light, very God of very God, begotten, not made, being of one substance with the Father’)।
  •  আলেকসান্দ্রিয়া শহরের আথানাসিয়াস (Athanasius of Alexandria, ২৯৬-৩৭৩ খ্রিঃ) পবিত্র আত্মা যে ঈশ্বর ও নিজেই ব্যক্তি, এই বিষয়ে লিখতেন। তিনি নীখেয়ার ঘোষণা সুরক্ষা রেখেছেন ও তার সংজ্ঞা আরো পরিষ্কার করেছেন।
  • ৩৮১ খ্রিঃ কনস্ট্যান্টিনোপল শহরে মণ্ডলীর সভায় আপল্লিনারিয়ানিস্মকে (Apollinarianism) প্রতিরোধ করা হয়েছে। আপল্লিনারিয়ানিস্ম বলে যে যীশুর কখনও মানুষের আত্মা ছিল না। সভা ঘোষণা করল যে যীশু ১০০ ভাগ ঈশ্বর, কিন্তু ১০০ ভাগ মানুষও। ত্রিত্ব ঈশ্বরের মতবাদও ঘোষণা করা হল, বিশেষভাবে যে পবিত্র আত্মাও ঈশ্বর।
  •  ৪৩১ খ্রিঃ ইফিষ শহরে মণ্ডলীর সভায় নেস্তরিয়ানিস্ম (Nestorianism) নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষার প্রতিরোধ করা হয়েছে। নেস্তরিয়ানিস্ম বলত যে যীশুই মানুষ নন বরং একটি ‘রূপ’ বা ‘চেহারা’ মাত্র যার মধ্যে ঈশ্বর উপস্থিত। সভা ঘোষণা করল যে যীশুই ছিলেন একজন সম্পূর্ণ মানুষ, তাঁর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, মানুষ ও ঈশ্বর বলতে তাঁর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই (unified person, having no division within himself of human and divine)।
  •  ৪৫১ খ্রিঃ খাল্সেডন শহরে মণ্ডলীর সভায় ঐটিখিয়ানিস্ম (Eutychianism) নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষা প্রতিরোধ করা হয়েছে। ঐটিখিয়ানিস্ম বলে যে যখন বাপ্তিস্মের সময় পবিত্র আত্মা যীশুর উপরে আসলেন, তখন তিনি মানুষ আর নয় বরং তিনি ‘ঈশ্বর’ বা ‘ঐশ্বিক’ হয়ে যান। সভা ঘোষণা করল যে যীশুই একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন যার মধ্যে কোনো বিভেদ বা পরিবর্তন নেই। তিনি ১০০ ভাগ মানুষ এবং ১০০ ভাগ ঈশ্বর (Christ is a unified person, having one nature and being fully human and fully divine)।
  •  ৫৫৩ খ্রিঃ কনস্ট্যান্টিনোপল শহরে মণ্ডলীর সভায় মনোথেলিটিস্ম নামে একটি ভ্রান্ত শিক্ষার প্রতিরোধ করা হয়েছে। মনোথেলিটিস্ম (Monothelitism) বলত যে যীশুর কোনো মানবীয় ইচ্ছা ছিল না, ছিল শুধুমাত্র ঐশ্বরিক ইচ্ছা। সভা ঘোষণা করল যে যীশু একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি। তিনি ১০০ ভাগ মানুষ এবং ১০০ ভাগ ঈশ্বর। একটা অন্যটাকে সরিয়ে ফেলে না (unified person, both human and divine, neither replacing the other)।

নতুন নিয়মে ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্কের বর্ণনা

পিতা পুত্রের কাছে বা পুত্রের সম্বন্ধে কথা
মার্ক ১:১১         ‘সেই সময় স্বর্গ থেকে এই কথা শোনা গেল, “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুব সন্তুষ্ট।’
মার্ক ৯:৭          ‘এই সময় একটা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, আর সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোন।’
যোহন ১২:২৭-২৮  “আমার মন এখন অস্থির হয়ে উঠেছে। আমি কি এই কথাই বলব, ‘পিতা, যে সময় এসেছে সেই সময়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর?’ কিন্তু এরই জন্য তো আমি এই সময় পর্যন্ত এসেছি। পিতা, তোমার মহিমা প্রকাশ কর।” স্বর্গ থেকে তখন এই কথা শোনা গেল, “আমি আমার মহিমা প্রকাশ করেছি এবং আবার তা প্রকাশ করব।”
যোহন ৩:১৬-১৭   “ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। ঈশ্বর মানুষকে দোষী প্রমাণ করবার জন্য তাঁর পুত্রকে জগতে পাঠান নি, বরং মানুষ যেন পুত্রের দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পায় সেইজন্য তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন।
যোহন ৫:১৯-২০   ‘এতে যীশু সেই নেতাদের বললেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, পুত্র নিজ থেকে কিছুই করতে পারেন না। পিতাকে যা করতে দেখেন কেবল তা-ই করতে পারেন, কারণ পিতা যা করেন পুত্রও তা-ই করেন। পিতা পুত্রকে ভালবাসেন এবং তিনি নিজে যা কিছু করেন সমস্তই পুত্রকে দেখান।’
যোহন ৩:৩৫      ‘পিতা পুত্রকে ভালবাসেন এবং তাঁর হাতে সমস্তই দিয়েছেন।’
যোহন ১৬:১৫     ‘পিতার যা আছে তা সবই আমার। সেইজন্যই আমি বলেছি, আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন।’
ইফি ১:৩-৭       ‘আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা ও ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছি বলে স্বর্গের প্রত্যেকটি আত্মিক আশীর্বাদ ঈশ্বর আমাদের দান করেছেন। ৪…ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করবার আগেই খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের বেছে নিয়েছেন। তাঁর ভালবাসার দরুন তিনি খুশী হয়ে নিজের ইচ্ছায় আগেই ঠিক করেছিলেন যে, যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর সন্তান হিসাবে তিনি আমাদের গ্রহণ করবেন। …৭ ঈশ্বরের অশেষ দয়া অনুসারে খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর রক্তের দ্বারা আমরা মুক্ত হয়েছি, অর্থাৎ পাপের ক্ষমা পেয়েছি।’

পুত্রের কথা পিতার কাছে বা পিতার সম্বন্ধে
যোহন ১১:৪১-৪২ ‘তখন লোকেরা পাথরখানা সরিয়ে দিল। যীশু উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পিতা, তুমি আমার কথা শুনেছ বলে আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই। ৪২ অবশ্য আমি জানি সব সময়ই তুমি আমার কথা শুনে থাক। কিন্তু যে সব লোক চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা যেন বিশ্বাস করতে পারে যে, তুমি আমাকে পাঠিয়েছ, সেইজন্যই এই কথা বললাম।”
লূক ২২:৪২       ‘পিতা, যদি তুমি চাও তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছামত নয়, তোমার ইচ্ছামতই হোক।’
যোহন ৫:২২-২৩  ‘পিতা কারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারের ভার পুত্রকে দিয়েছেন, ২৩ যেন পিতাকে যেমন সবাই সম্মান করে তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে সম্মান করে না, যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাকেও সে সম্মান করে না।’
যোহন ৫:৩০      ‘আমি নিজ থেকে কিছুই করতে পারি না; যেমন শুনি তেমনই বিচার করি। আমি ন্যায়ভাবে বিচার করি, কারণ আমি আমার ইচ্ছামত কাজ করতে চাই না কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছামত কাজ করতে চাই।’
যোহন ৫:৩৬      ‘কিন্তু যোহনের সাক্ষ্যের চেয়ে আরও বড় সাক্ষ্য আমার আছে, কারণ পিতা আমাকে যে কাজগুলো করতে দিয়েছেন সেগুলোই আমি করছি। আর সেগুলো আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দেয় যে, পিতাই আমাকে পাঠিয়েছেন।’
যোহন ৬:৪৫-৪৬  ‘নবীদের বইয়ে লেখা আছে, ‘তারা সবাই ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাবে।’ যে কেউ পিতার কাছ থেকে শুনে শিক্ষা পেয়েছে সে-ই আমার কাছে আসে। ৪৬ পিতাকে কেউ দেখে নি, কেবল যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন তিনিই তাঁকে দেখেছেন।
যোহন ৭:১৬-১৭   ‘উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি যে শিক্ষা দিই তা আমার নিজের নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই। যদি কেউ তাঁর ইচ্ছা পালন করতে চায় তবে সে বুঝতে পারবে যে, এই শিক্ষা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, না আমি নিজ থেকে বলছি।
যোহন ৮:২৯      ‘যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনিই আমার সংগে আছেন। তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেন নি, কারণ যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন আমি সব সময় সেই কাজই করি।’
যোহন ৮:৫৫      ‘আপনারা কখনও তাঁকে জানেন নি, কিন্তু আমি তাঁকে জানি। … কিন্তু আমি তাঁকে জানি এবং তাঁর কথার বাধ্য হয়ে চলি।’
যোহন ১৭:৪-৫    ‘তুমি যে কাজ আমাকে করতে দিয়েছ তা শেষ করে এই জগতে আমি তোমার মহিমা প্রকাশ করেছি। ৫ পিতা, জগৎ সৃষ্ট হবার আগে তোমার সংগে আমার যে মহিমা ছিল সেই মহিমা তুমি আবার আমাকে দাও।’

পিতার কথা পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে
যোহন ৩:৩৪      ‘ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি ঈশ্বরেরই কথা বলেন, কারণ ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র আত্মা মেপে দেন না।’

পুত্রের কথা পবিত্র আত্মার সম্বন্ধে
যোহন ১৪:১৭-১৮  ‘সেই সাহায্যকারীই সত্যের আত্মা। …তোমরা কিন্তু তাঁকে জান, কারণ তিনি তোমাদের সংগে সংগে থাকেন আর তোমাদের অন্তরে বাস করবেন। ১৮“আমি তোমাদের অনাথ অবস্থায় রেখে যাব না।’
যোহন ১৪:২৬      ‘সেই সাহায্যকারী, অর্থাৎ পবিত্র আত্মা যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন।’
যোহন ১৬:১২-১৫  “তোমাদের কাছে আরও অনেক কথা আমার বলবার আছে, কিন্তু এখন তোমরা সেগুলো সহ্য করতে পারবে না। ১৩ কিন্তু সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, কিন্তু যা কিছু শোনেন তা-ই বলবেন, আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। ১৪ সেই সত্যের আত্মা আমারই মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন।’
যোহন ১৬:৭       ‘তবুও আমি তোমাদের সত্যি কথা বলছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।’

পিতা <=> পুত্র <=> পবিত্র আত্মা
যোহন ১৪:২৬    ‘সেই সাহায্যকারী, অর্থাৎ পবিত্র আত্মা যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন।’
মথি ২৮:১৯      ‘এইজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার শিষ্য কর। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিস্ম দাও।’
ইফি ২:১৭-১৮   ‘তোমরা যারা দূরে ছিলে এবং তারা যারা কাছে ছিল, সকলের কাছেই তিনি এসে শান্তির সুখবর প্রচার করেছিলেন। ১৮ তাঁরই মধ্য দিয়ে একই পবিত্র আত্মার দ্বারা পিতার কাছে যাবার অধিকার আমাদের সকলের আছে।’

ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক

  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের তিনজনই ব্যক্তি পরস্পর্কে সম্মান করেন, পরস্পর্কে সুপারিশ করেন, পরস্পর্কে গৌরবান্বিত করেন, পরস্পরকে প্রতিনিধিত্ব করেন, পরস্পর্কে বুঝিয়ে দেন, পরস্পরের প্রতি বাধ্য হন, পরস্পরের প্রতি বশীভূত হন, পরস্পরের উপর বিশ্বাস ও নির্ভর করেন।
  •  তিনজনের মধ্যে, অর্থাৎ ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যেই উদ্দেশ্য, ইচ্ছা, মনে ও আবেগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মিল আছে। তারা একসাথে কাজ করে, তারা পরস্পরের পূরক হন, তারা একতায় ও একই উদ্দেশ্যে কাজ করেন।
  •  তারা তিনজনই ঈশ্বর, তিনজনই এক, প্রত্যেকে অন্যদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
  •  তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করেন ও ভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারেন, কিন্তু তারা তিনজনই একই কাজও করতে পারেন ও যে কোনোভাবে যা করেন তা একই উদ্দেশ্যে করেন। উদাহরণ: পিতা সান্ত্বনা দেন, যীশু সান্ত্বনা দেন কিন্তু পবিত্র আত্মাকে সান্ত্বনাদাতা বলা হয়।
  •  তারা একই নয়, তারা হুবহু নয়, কিন্তু তারা এক। খ্রিষ্টান ধর্ম একেশ্বরবাদে সমর্পিত থাকেন যেমন পুরাতন নিয়ম থেকে যিহূদী ধর্মও ছিল (Christianity fully remains Monotheistic)। যীশু তার শিক্ষায় তা সব সময় সমর্থন করেন। উদাহরন: যীশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ পদ উদ্ধিতে করেন (মার্ক ১২:২৯) ‘ইস্রায়েলীয়েরা, শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এক’। অথবা যীশু মথি ১৯:১৮-১৯ পদে পুরাতন নিয়মের ১০ আজ্ঞা উদ্ধৃতি করেন যার প্রথম আজ্ঞা হল (দ্বি বি ৫:৬-৭) ‘আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।…আমার জায়গায় কোন দেব-দেবতা দাঁড় করাবে না’। পৌল তার লেখাতেও একেশ্বরবাদকে সমর্থন করেন যেমন ১ তীম ২:৫ পদে ‘ঈশ্বর মাত্র একজনই আছেন।’
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে তিনজন ব্যক্তিই কি অনন্ত? তাদের মধ্যে কি সময়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে? সব সময় কি তিনজনই ছিলেন? এই প্রশ্ন উঠে আসতে পারে কলসীয় ১:১৫ পদে যীশুর একটি বর্ণনা থেকে: ‘ইনিই অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি, সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত’। ‘প্রথম জাত’ শুনে আমরা মনে করতে পারি যে যীশুকে এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জন্ম দেওয়া হয়েছে, তাঁর এখানে শুরু হয়েছে, তিনি আর একজনের কাছ থেকে এসেছেন। তাই যদি হত তবে যীশু ‘ঈশ্বর’ হতেন না, কারণ ঈশ্বরের শুরু নেই, ঈশ্বর অনন্ত, ঈশ্বর আর কারও কাছ থেকে আসেন নি বরং তাঁরই কাছ থেকে সব কিছু এসেছে।
  •  সাধারণ বাংলা অনুবাদে তারা ‘সৃষ্টির প্রথমজাত’ রাখেন নি বরং এভাবে অনুবাদ দিলেন ‘সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন’। কেন? কারণ চারিদিকে পথ দেখলে পরিষ্কার হয়ে যায় ‘সৃষ্টির প্রথমজাত’ মানে কি:
  •  কলসীয় ১:১৫-১৯ ‘এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন (কেরী: ‘তিনি সৃষ্টির প্রথম জাত’) এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান, ১৬ কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৭ তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে। ১৮ এছাড়া তিনিই তাঁর দেহের, অর্থাৎ মণ্ডলীর মাথা। তিনিই প্রথম আর তিনিই মৃত্যু থেকে প্রথম জীবিত হয়েছিলেন, যেন সব কিছুতে তিনিই প্রধান হতে পারেন। ১৯ ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তাঁর সব পূর্ণতা খ্রীষ্টের মধ্যেই থাকে।
  •  যীশুর কোনো শুরু নেই, আসলে তিনিই সব কিছুর শুরু ও উৎস, তাঁর দ্বারা ও তাঁর জন্য সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সব কিছুর কারণ, কর্তা ও উৎস। যীশু সৃষ্টির অংশ নন, তিনি সৃষ্টির চেয়ে ভিন্ন। ‘প্রথমজাত’ মানে না ‘আগে ছিলেন না’, মানে না ‘তাঁকে পরে সৃষ্টি করা হয়েছে’। যীশুর শুরু নেই, যীশুই অনন্ত, যীশুকে কেউ সৃষ্টি করেন নি, তাঁর উৎস নেই, বরং তিনি সব কিছুর উৎস। কিন্তু – যেহেতু তিনি মানুষ হয়েছেন, এই সৃষ্টির অংশ হয়েছেন এবং এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন- তাঁকে একটি সাধারণ সৃষ্ট ব্যক্তি মনে করা যায়। পৌল কলসীয়দের সরণ করিয়ে দেন যে এইভাবে জন্ম নিলেও তিনি সম্পূর্ণ অন্য জাত: তিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি সব কিছুর আগে ছিলেন, তাঁর শুরু বা উৎস নেই, তিনি সব কিছুর চেয়ে ভিন্ন ও উর্দ্ধে।
  •  আর একটি পদ আছে যা সহজেই ভুল বুঝা হয়: ইব্রীয় ২:৭ পদে গীত ২:৭ পদ উদ্ধৃতি করা হয়: “সদাপ্রভু যা স্থির করেছেন আমি তা ঘোষণা করব; তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুমি আমার পুত্র, আজই আমি তোমার পিতা হলাম।’ এইটি একটি বিখ্যাত মশীহ সম্বন্ধীয় পদ। পদের অর্থ এই নয় যে ‘স্বর্গস্থ পিতা আগে একা ছিলেন এবং পরে যীশুকে জন্ম দিয়েছিলেন’ বরং এই পদ দ্বারা সে মুহূর্ত বুঝানো হয় যখন ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা মরিয়মের গর্ভে একটি বাচ্ছা সৃষ্টি করেন: ‘স্বর্গদূত বললেন, “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এইজন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে।’ (লূক ১:৩৫)।
  • মূলত একজনকে ‘সৃষ্ট’ এবং একই সময়ে ‘ঈশ্বর’ বলা সম্ভব না। ‘ঈশ্বর’ মানেই অসৃষ্ট (যাঁকে কেউ সৃষ্টি করেন নি), এমন একজন হওয়া যাঁর শুরু নেই, সব কিছুর আগে, আর কারোর উপর নির্ভর্শীল নয়।
  • আর একটি প্রশ্ন হল ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে কোন কাঠামো বা উঁচু-নীচু আছে। কে বড়? কে ছোট? কেউ কেউ বলেন যে স্বর্গস্থ পিতা হলেন সর্বোচ্চ, যীশুর তাঁর অধীনে থাকেন এবং পবিত্র আত্মা যীশুর অধীনে থাকেন।
  • আমরা সাধারণ জগতের লোক, আমরা পতিত, আমরা পাপ, প্রতিযোগিতা, উঁচু-নীচু নেতৃত্ব, কাঠামো ও ক্ষমতার লড়াইয়ে অভ্যস্ত। তাই আমরা অনেক বার আমাদের এই চিন্তা থেকে ত্রিত্ব ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে তাঁর সম্বন্ধে এই চিন্তা করি। কিন্তু আসলে কি তা ঠিক?
  • নতুন নিয়ম থেকে যে ছবি দেখায় হল উঁচু-নীচু কোনো কাঠামো না, বরং ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে পরস্পর্কে সম্মান দেওয়া, পরস্পর্কে প্রাধান্য দেওয়া, পরস্পরের কাছে বশীভূত থাকা ও পরস্পরের কাছে বাধ্যতা দেখি।
  • পবিত্র আত্মা যীশুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে পৃথিবীতে আসেন। স্বর্গস্থ পিতা যীশুর অনুরোধ ও প্রতিজ্ঞা অনুসারে পবিত্র আত্মাকে পাঠান। স্বর্গস্থ পিতা যীশুর অনুরোধ অনুসারে লাসারকে মৃত্যু থেকে উঠান। যীশু চলে যান যেন পবিত্র আত্মা তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারেন। যীশু গেৎশিমানী বাগানে স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা মেনে নেন জেনে যে আমাদের উদ্ধার করার জন্য অন্য কোনো পথ নেই।
  • রসিকতার সঙ্গে বলা যায়: যীশুকে পৃথিবীতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কিভাবে হল? পিতা ও পবিত্র আত্মা দল বেঁধে জোট করিয়ে ভোট দিলেন ২ বনাম ১ যে যীশুরই গিয়ে মরতে হবে??
  • কাঠামোর চেয়ে সে মিলের ছবি আমরা আদি ১:২৬ পদেও পায়, যেখানে আমরা এক মুহূর্তের জন্য ত্রিত্ব ঈশ্বর কিভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তা একটু টের পাই: ‘ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি।’ এখানে আমরা কোনো উপর থেকে নীচ দিকে আদেশ দেখি না (তুই কর্!!) বরং আমরা যোগাযোগ, প্রস্তাব, খোলামেলা ভাব, আলোচনা ও একমতের সিদ্ধান্ত ধরণের একটি ছবি দেখি।

ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তার গুরুত্ব ও প্রয়োগ কি?

  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরকে এবং ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, এই বিষয়ের গুরুত্বকে আরো ভালভাবে বুঝব যদি আমরা দেখি, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য এবং আমাদের চারিদিকে বাস্তবতার জন্য কত ভিত্তিমূলক।
  •  নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া আছে:
১     ত্রিত্ব ঈশ্বর: এই সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ভিত্তিমূলক বিষয় হল ‘সম্পর্ক’
  •  যখন আমরা জিজ্ঞাসা করি ‘ঈশ্বর কে?’ তবে আমরা কি উত্তর দেব। উয়েষ্টমিনষ্টার ঘোষণা (the Westminster declaration) প্রটেস্টেন্ট মণ্ডলীর জন্য একটি ভিত্তিক দলিল এই প্রশ্নের যে উত্তর দেয়, সে প্রত্যেক মুসলিমও দিতেন: মূলতভাবে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান।
  •  এবং তাই তো, ঈশ্বর অবশ্যই সর্বশক্তিমান। কিন্তু তা কি ঈশ্বরের সম্বন্ধে সবচেয়ে ভিত্তিক বিষয়?
  •  ঈশ্বর যদি ত্রিত্ব হন তবে আমাদের সর্বপ্রথম ঈশ্বর সম্বন্ধে আর একটি বিষয় বলা দরকার: ঈশ্বর সম্পর্কের ঈশ্বর। ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক চলছে। ত্রিত্ব ঈশ্বরের তিনজন ব্যক্তির মধ্যে অনন্তকাল আগে থেকেই সম্পর্ক আছে এবং চিরদিন থাকবে।
  • ঈশ্বর ‘একা’ ছিলেন না। ঈশ্বর সম্পর্কশূন্য ছিলেন না। ঈশ্বর ‘সহভাগিতা পাওয়ার জন্য’ মানুষ সৃষ্টি করেন নি (যদিও তিনি আমাদের সহভাগিতা চান)। সম্পর্ক এমন কিছু নয় যা সৃষ্টি নিয়ে শুরু, সম্পর্ক ছিল একটি ভিত্তিক বাস্তবতা অনন্তকাল আগে থেকেই।
  • ঈশ্বর কোনো কিছু করেন না ‘কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে’। তিনিই পূর্ণতা। তিনিই সব কিছু। তার কোনো অভাব নেই। তাঁর কোনো কিছু দরকার নেই। কিন্তু তাঁর সে বড় মন ও পূর্ণতা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁর পাশাপাশি আরো কিছু থাকুক, যেমন মানুষ। ত্রিত্ব ঈশ্বর তাঁর সুসম্পর্কের বৃত্ত খুলে আমাদেরও যু্ক্ত হতে দেন, তাঁর অভাব থেকে না বরং তাঁর অদ্ভূত দানশীলতা থেকে।
  • অনন্তকাল আগে থেকে তাহলে সম্পর্কের কি ধরণের মান ছিল? সর্বোচ্চ ধরণের সম্পর্ক: সম্মান, ভালবাসা, সমর্পণ, প্রাধান্য দেওয়া, এক উদ্দেশ্য কাজ, প্রতিনিধিত্ব।
  • আমরা – ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি হয়েছি বলে – আমরাও সম্পর্কের লোক, আসলে আমরা সম্পর্ক ছাড়া বাঁচতে পারি না। তা অবাক লাগার কিছু নেই। এক সময় কিছু শিশুদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হল: তাদের খাওয়ানো ও পরিষ্কার রাখা হল, কিন্তু তাদের আদর করা, তাদের সাথে কথা বলা হত না। প্রত্যেকটি শিশু এমনি এমনি মারা গিয়েছিল।
  • মানুষ শুধুমাত্র বাঁচে, বৃদ্ধি পায়, উন্নতি হয়, ফুটে উঠে যখন অন্যদের সাথে সম্পর্কে আছে, ঈশ্বরের সঙ্গে এবং অন্যান্য মানুষের সঙ্গে।
  • ঈশ্বর চান যেন আমরা সম্পর্কে থাকি, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে, এবং পরস্পরের সাথে সম্পর্কে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সুসম্পর্কে না থাকি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করি না। অন্যদের সাথে সুসম্পর্কে না থাকলে আমরা তাঁর ইচ্ছা কি, তা বুঝতে পারি না। তাঁর সঙ্গে না থাকলে, আমরা তাঁর ইচ্ছা বুঝতে পারি না: ‘সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় হল সুবুদ্ধির ভিত্তি; সেই পবিত্রজনকে জানতে পারলে বিচারবুদ্ধি লাভ হয়। ‘ (হিতোপদেশ ৯:১০)।
২    ত্রিত্ব ঈশ্বর: মণ্ডলীতে সম্পর্কের ভিত্তি
  •  ইফিষীয় ৫:১-২ ‘ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান হিসাবে তোমরা ঈশ্বরের মত করে চল। ২ খ্রীষ্ট যেমন আমাদের ভালবেসেছিলেন এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে সুগন্ধযুক্ত উৎসর্গ হিসাবে নিজেকে দিয়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে তোমরাও ভালবাসার পথে চল।’ যদি মানুষ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি এবং মানুষের ঈশ্বরের মত হওয়া উচিত তবে ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে মানের সম্পর্ক আছে, সে মানের সম্পর্ক আমাদের মধ্যেও থাকা দরকার।
  •  অন্য কথায়: ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্কের ধরণ হল বিশ্বাসীদের মধ্যে সম্পর্কের মানদন্ড। তাই বিশ্বাসীদের মধ্যে উঁচু-নীচু না থাকুক বরং আর যে প্রথম হতে চায় তাকে সকলের দাস হতে হবে’ (মার্ক ১০:৪৪)। বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বার্থপরতা না থাকুক বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান, ভালবাসা, বশীভূত হওয়া, পরস্পরের প্রতিনিধিত্ব, একই উদ্দেশ্যে কাজ করা ও একতা ‘আমরা যেমন এক তারাও তেমনি এক হতে পারে, …তাতে জগতের লোকেরা জানতে পারবে যে, তুমিই আমাকে পাঠিয়েছ’ (যোহন ১৭:২২-২৩)
  •  এইটাই – এবং এর চেয়ে কম না – মণ্ডলীর সে মহান আহবান। ত্রিত্ব ঈশ্বর অনন্তকাল আগে থেকে এই ধরণের সুসম্পর্কে বাস করে আসছেন। তিনি আমাদের করতে বলেন না যা তিনি করতে রাজি নন। ত্রিত্ব ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর সম্পর্কের গভীরতা ও পূর্ণতায় অংশ গ্রহণ করি।
৩    ত্রিত্ব ঈশ্বর: মানুষের মধ্যে দুইটি লিঙ্গ থাকার প্রধান কারণ
  •  মৌলিকভাবে একটি প্রশ্ন করা যায়: কেন ঈশ্বর দুইটি লিঙ্গের মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন? ”পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে’ (আদি ১:২৭)।
  •  আমাদের সাধারণ উত্তর হল যে দুই লিঙ্গ না থাকলে প্রজনন বজায় রাখা সম্ভব না এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করানো হল ঈশ্বরেরই আদেশ (আদি ১:২৮)।
  •  উত্তরটি অবশ্যই ভুল না, কিন্তু তা কি প্রশ্নের যথার্থ উত্তর? আসলে ঈশ্বর প্রকৃতিতে এমন জাত তৈরি করেছেন যাদের লিঙ্গ নেই ও যারা তারপরেও সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই চাইলে ঈশ্বর মানুষের জন্যও লিঙ্গ ছাড়া একটি পদ্ধতি তৈরি করতে পারতেন। লিঙ্গই যে প্রয়োজন, তা না।
  •  তাই কেন ঈশ্বর মানুষ দুই লিঙ্গ হিসাবে সৃষ্টি করেছিলেন?
  •  আরো গুরুত্বপূর্ণ উত্তর আসে যখন আমরা দেখি কিভাবে ‘২ লিঙ্গ’ এবং ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি’ ব্যাপার যুক্ত করা আছে আদি ১:২৭ পদে।
  •  কেন এক লিঙ্গ যথেষ্ট নয়? একজন মানুষ একা ঈশ্বর সম্বন্ধে কি প্রকাশ করতে অক্ষম? মানুষ কার প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি?
  •  উত্তর: একজন ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে। ঈশ্বরই তিনজন। মানুষের হতেই হয় কম পক্ষে দু্ইজন, মানুষ হতে হয় সম্পর্কের লোক যদি মানুষ ঈশ্বরের চরিত্রের ও বৈশিষ্টের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
  •  একজন মানুষ একা ঈশ্বরকে প্রকাশিত করতে পারে না যেমন দুইজন সুসম্পর্কে ঈশ্বরকে প্রকাশিত করতে পারে। ঈশ্বরের চরিত্র, যেমন তাঁর ভালবাসা, তাঁর ন্যায্যতা, তাঁর করুণা, তা মাত্র সম্পর্কে প্রকাশিত: আপনার প্রতি কি আমার ব্যবহার ভালবাসার? ন্যায্যতার? করুণাময়ের? একজন মানুষ একা একটি দ্বীপে বসে আছে সম্মান, ভালবাসা, ন্যায্যতা বা করূণা দেখাতে অক্ষম।
  •  কেন মানুষ দুই লিঙ্গ হিসাবে সৃষ্টি? এর সবচেয়ে গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ উত্তর হল: কারণ আমরা একজন ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ও প্রকাশ।
৪     ত্রিত্ব ঈশ্বর: বিবাহ সম্পর্কের মানদণ্ড
  •  যদি মানুষের দুই লিঙ্গ ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে, তবে অবশ্যই বিবাহের সম্পর্কও ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে। এমন কি বলা যায় যে মানুষদের সম্পর্কের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক হল ত্রিত্ব ঈশ্বরের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
  •  এই বিষয় আমাদের উপরে ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় নিয়ে আসে: আমি আমার স্ত্রীর প্রতি, আমার স্বামীর প্রতি কি ধরণের ব্যবহার করি? আমি কার প্রতিনিধি যখন এভাবে ব্যবহার করি? ত্রিত্ব ঈশ্বরেরই প্রতিনিধি!
  •  তাই আবারও: ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সে উঁচু মানের সম্পর্ক আছে তা হল বিবাহের সম্পর্কের জন্য মানদন্ড।
  •  আবারও আমরা কোনো উঁচু-নিচু পাই না, বরং পরস্পরকে মেনে নেওয়ার একটি মনোভাব: ‘খ্রীষ্টের প্রতি ভক্তির দরুন তোমরা একে অন্যকে মেনে নেওয়ার মনোভাব নিয়ে চল’ (সাধারণ অনুবাদ)। ‘খ্রীষ্টের ভয়ে একজন অন্য জনের বশীভূত হও’ (কেরী অনুবাদের, ইফিষীয় ৫:২১)। ঈশ্বর আমাদের বিবাহের সম্পর্কে কোন স্বার্থপরতা বা দমন চান না, বরং পরস্পরকে সম্মান, ভালবাসা, প্রাধান্য দেওয়া, বশীভূত হওয়া, পরস্পরের প্রতিনিধিত্ব করা, একতায় ও একই উদ্দেশ্যে কাজ করা চান। আমরা তা তাড়াতাড়ি অন্যের কাছ থেকে দাবি করতে রাজী। ঈশ্বর তা দুইজনের কাছ থেকেই দাবি করেন।
৫    ত্রিত্ব ঈশ্বর: একতা ও ভিন্নতার ভিত্তি
  •  ঈশ্বর যে ত্রিত্ব হন, তা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অনুমোদিত করে: একতা এবং ভিন্নতা। ত্রিত্ব ঈশ্বরের তিনজন ব্যক্তি একই নন, হুবহু নন, তারা ভিন্ন, কিন্তু তারা এক, তারা এমন একতায় থাকেন যে তাদের ‘এক ঈশ্বর’ বলা যায়। খ্রিষ্টান ধর্ম একেশ্বরবাদ ধরে রাখে।
  •  ভিন্নতা কি ভয়ংকর কিছু বা ভাল বিষয়? ঈশ্বর কি ভিন্নতা ভালবাসেন? প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আমরা অতি পরিষ্কারভাবে দেখি, ঈশ্বর ভিন্নতা কত পছন্দ করেন। পৃথিবীতে ৩০ হাজার ধরণের গাছ আছে, কোনো দুই ফ্লেক তুষার একই নয়, কোনো দুটি আঙ্গুলের ছাপ একই নয়। জাতের উপরে জাত, ধরণের উপরে ধরণ। প্রকৃতি হল একটি বিরাট জলপ্রপাত, হাজার হাজার রং, স্বাদ, গন্ধ, মসলা, আকার, চেহারা, ভূমিকা, বয়ন ও গঠন। এত ভিন্নতা দেখে আমাদের বুঝা দরকার এই ভিন্নতার সবচেয়ে গভীর শিকড় ও মনে-প্রাণে অনুমোদন হল ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যেই। তাঁর মধ্যে ভিন্নতা আছে, তাই ভিন্নতা ভাল বিষয়। এবং প্রকৃতি দেখে আমাদের বুঝা দরকার তা হল ত্রিত্ব ঈশ্বরের প্রকাশ।
  •  ধর্মীয় বিষয়ে অনেক বার আমরা মনে করি যে ভিন্নতা ভয়ংকর বিষয়: আমরা চাই যে সবাই ঠিক একইভাবে বিশ্বাস করে, একই কথা বলে, একই কাজ করে, একই ধরণের কাপড় পরে। তাই যদি হয় তবে আমরা নিশ্চিত যে আমরা ‘ঠিক আছি’। অবশ্যই ভিত্তিক সত্যগুলি আমাদের ধরে রাখা দরকার, কিন্তু আমাদের বুঝা দরকার যে বিশ্বাসী হিসাবে আমরা সবাই একই ধরণের নই। যীশুর ১২ শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে তা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়, তাদের স্বভাব-চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, আচরণ ও ব্যাকগ্রাউন্ড যথেষ্ট ভিন্ন ছিল।
  •  ঈশ্বর ভিন্নতা ভালবাসেন, তিনি প্রত্যেকটি মানুষ অদ্বিতীয় ও সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকজনের ব্যক্তিত্ব, দান, তালন্ত, দক্ষতা, আগ্রহ ও তৃপ্তি ভিন্ন। ঈশ্বর সবাইকে ‘সমান’ বানাতে ব্যস্ত না, তিনি সবাইকে সব কিছু একই পরিমাণে দেওয়ায় ব্যস্ত না। যদিও মানুষের মূল্য ঈশ্বরের চোখে একই, তার অর্থ এই নয় যে আমরা ‘এত সমান’ যে ‘একজন থেকে অন্যজনকে চেনা যায় না’। আমরা যা পেলাম তার জন্য আমরা দায়ী।
  • কিন্তু ঈশ্বর ভিন্নতা নিয়ে আনন্দ পান, সে ঈশ্বর একা থাকা স্বার্থপর জীবন চান না, এমন লোক যার কারও সাথে ভাল সম্পর্ক নেই। আমরা ‘নিজেই সব কিছু’ নই। ঈশ্বর আমাদের সম্পর্ক ও একতার জন্য তৈরি করেছেন।
  •  এমনভাবে একতা দাবি করবেন না, যে ভিন্নতা আর অনুমোদিত না। এমনভাবে ভিন্নতা দাবি করবেন না, যে একতা ও সম্পর্ক হারিয়ে যায়।
৬ ত্রিত্ব ঈশ্বর: সরকারের জন্য আদর্শ
  •  আমরা দেখলাম যে আদি ১:২৬ পদে আমাদের একটি মুহূর্তের দৃষ্টি দেওয়া হয় ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া কেমন: ‘তারপর ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি।’
  •  সরকারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কি? ঈশ্বর কিভাবে রাজত্ব করেন? ত্রিত্ব ঈশ্বর কিভাবে সিদ্ধান্ত নেন?
  •  আবারও: আমরা এই পদে কোনো ‘উপর থাকে নীচ দিকে আদেশ’ দেখি না, আমরা দেখতে পাই যোগাযোগ, প্রস্তাব, খোলামেলা বিবেচনা ও একসাথে সিদ্ধান্ত।
  •  যদি ত্রিত্ব ঈশ্বর এভাবে সিদ্ধান্ত নেন ও রাজত্ব করেন, তবে তা সরকারের জন্য আদর্শস্বরূপ: দমন না, ‘উপর থেকে নিচ দিকে আদেশ’ না, ‘জোর করিয়ে’ না, বরং একটি প্রক্রিয়া যেখানে সবাই অংশ গ্রহণ করে, যেখানে একসাথে ও মিলেমিশে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়, যেখানে সবাই সিদ্ধান্তটি নিজের মনে করে।
  •  আর একটি বড় বিষয় আছে। আমরা বলতে পারি যে ত্রিত্ব ঈশ্বর আমাদের শেখান যে ক্ষমতা ভাগ করা দরকার। ক্ষমতা একজনের হাতে না থাকুক। বরং ক্ষমতা ভাগ করা দরকার অথবা একসাথে ধরে রাখা দরকার, এবং দায়বদ্ধতা প্রয়োজন।
  •  লর্ড এ্যাক্টনের উদ্ধৃতি: “Power corrupts, absolute power corrupts absolutely.” বাংলায়: ‘ক্ষমতা মানুষের জন্য দুর্নীতির প্রলোভন, সর্বক্ষমতা মানুষের জন্য দুর্নীতির নিশ্চয়তা’। অবশ্যই ঈশ্বরের ক্ষেত্রে, যিনি সর্বশক্তিমান হলেও সম্পূর্ণ খাঁটি, সৎ, স্বনিয়ন্ত্রিত ও আইন-শৃঙ্খল, তার ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু আমরা পতিত মানুষ এবং আমাদের বেশি ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি প্রলোভিত হই। চিন্তা করুন: যে নিখুঁত ঈশ্বরের মধ্যে যদি ক্ষমতা তিনজনেরই হাতে আছে, তবে আর কত বেশি মানুষদের ক্ষেত্রে ক্ষমতা ভাগ করা দরকার ও সীমিত ও দায়বদ্ধ রাখা আবশ্যক।
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এমন একটি ছবি দেখানো হয় যাতে তিনজের মধ্যে কেউ ক্ষমতা ধরে রাখেন না বরং তারা নিজেকে দান করেন, পরস্পর্কে মানেন, পরস্পর্কে সমর্থন করেন, পরস্পরকে সম্মান ও বাধ্যতা দেখান।
  •  যেমন: ‘এর কারণ হল, পিতা নিজে যেমন জীবনের অধিকারী তেমনি তিনি পুত্রকেও জীবনের অধিকারী হতে দিয়েছেন। ২৭ পিতা পুত্রকে মানুষের বিচার করবার অধিকার দিয়েছেন, কারণ তিনি মনুষ্যপুত্র” (যোহন ৫:২৬-২৭)। অথবা: ‘যদি কেউ আমার কথা শুনে সেইমত না চলে তবে আমি নিজে তার বিচার করি না…৪৮
Andrey Rublev, ১৪০৮-১৫২৫ খ্রীঃ, আদি ১৮ তিন ব্যক্তি বা রূপকভাবে ত্রিত্ব ঈশ্বরকে বুঝায় যে মুহূর্তে তারা সিদ্ধান্ত নেই যে যীশু পৃথবীতে এসে ক্রুশু মারা যাবেন।
  • যে আমাকে অগ্রাহ্য করে এবং আমার কথা না শোনে তার জন্য বিচারকর্তা আছে। যে কথা আমি বলেছি সেই কথাই শেষ দিনে তাকে দোষী বলে প্রমাণ করবে; ৪৯ কারণ আমি তো নিজে থেকে কিছু বলি নি, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতা নিজেই আমাকে আদেশ করেছেন কি কি বলতে হবে। ৫০ আমি জানি তাঁর আদেশই অনন্ত জীবন। এইজন্য আমি যে সব কথা বলি তা আমার পিতার আদেশ মতই বলি’ (যোহন ১২:৪৭-৫০)।
৭    ত্রিত্ব ঈশ্বর: শ্রম বা কাজ বিভাগ
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে আমরা শ্রম বা কাজ বা ভূমিকার বিভাগ দেখতে পাই। ত্রিত্ব ঈশ্বরের তিনজনই ভিন্ন সময়ে ভিন্ন কাজ করে বা ভিন্ন ভূমিকা পালন করেন, কিন্তু তা সব সময় একতায় ও একই উদ্দেশ্যে করেন।
  •  কিন্তু ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যা আমরা পাই না, তা হল উঁচু-নীচু কাজের ভাগ বা বিভিন্ন কাজের ভিন্ন মূল্য (‘এই কাজ নীচু কাজ’, ‘এই কাজ মাত্র এরা করে’, ‘এই কাজের মূল্য নেই’)। ত্রিত্ব ঈশ্বরের ক্ষেত্রে আমরা কখনও বলতাম না: ‘পিতার কাজ যীশুর কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বা ‘পবিত্র আত্মা ক্রুশে মারা যেতে চাইলেন না, তাই যীশুকে তা করতে হল’।
  •  তাই এভাবে আমাদের মানবীয় শ্রমের গুরুত্ব ও শ্রম ভাগের ভিত্তি আসে: বিভিন্ন কাজ আছে, বিভিন্ন ভূমিকা, বিভিন্ন সেবা বা পরিচর্য্যা, বিভিন্ন দান ও তালন্ত।
  •  কিন্তু: সব ধরণের কাজ প্রয়োজন, সব ধরণের কাজ যোগ্য ও তা করা উপযুক্ত। কাজের কোনো উঁচু-নীচু নেই। সবার সব ধরণের কাজ করতে রাজী হওয়া উচিত যদিও কিছু লোক কিছু কাজের জন্য বেশি আগ্রহী ও দক্ষতাশীল হবে।
  •  আর একটি চিন্তা: ত্রিত্ব ঈশ্বর এই পৃথিবীতে এবং এই জগতের জন্য কাজ করেন। তাই আমরা কি ত্রিত্ব ঈশ্বরকে ‘জাগতিক’ বলব? অবশ্যই না! কিন্তু তাহলে আমাদের ক্ষেত্রেও: যদি আমরা ঈশ্বরের নীতি ও ইচ্ছা অনুসারে এই পৃথিবীতে ও পৃথিবীর জন্য কাজ করি, তবে তা ‘জাগতিক’ কাজ বলা যাবে না।

সারাংশ

  •  যদিও আমরা ত্রিত্ব ঈশ্বরকে সহজে বুঝতে পারি না, তবে ঈশ্বর আমাদের জানিয়েছেন যে তিনি ত্রিত্ব ঈশ্বর।
  •  ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তা এমন একটি বাস্তবতা যার প্রভাব আমরা চোখ খুললে তাঁর সৃষ্টির মধ্যেও দেখতে পাই: একটি অতি বৈচিত্র্য প্রকৃতি, সম্পর্ক ভিত্তিক মানুষ ও নানা অন্য বিষয়ে।
  •  ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তা ভিত্তিক বিষয় হিসাবে দাঁড়ায় যখন আমরা বুঝতে চাই মানুষ কে, লিঙ্গের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল, বিবাহ, মণ্ডলী, এমন কি সরকার যা হওয়ার কথা।
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে যে উঁচু মানের সম্পর্ক আছে (পরস্পরকে সম্মান, ভালবাসা, প্রাধান্য দেওয়া, বশীভূত হওয়া, পরস্পরের প্রতিনিধিত্ব করা, একতায় ও একই উদ্দেশ্যে কাজ করা) তা হল মানুষের সম্পর্কের জন্য মানদণ্ড, বিশেষভাবে বিবাহ ও মণ্ডলীর জন্য।
  •  ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে তিনজন ভিন্ন ব্যক্তি আছে বলে আমরা ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য এবং একতার অনুমোদন এবং তা উৎযাপন করার সমর্থন পাই। সাথে স্বাধীনতার ভিত্তি পাই।
  •  আসুন আমরা ঈশ্বর যে ত্রিত্ব, তার জন্য অজুহাত দেখাব না, তা সমস্যা আর মনে করব না। বরং আসুন আমরা আরো বুঝতে চেষ্টা করি, তা কত চমৎকার, গুরুত্বপূর্ণ ও ভিত্তিক বিষয়। আসুন আমরা উৎযাপন করি যে ঈশ্বরই ত্রিত্ব!

আরো কিছু চিন্তা (খ্রিষ্টিয়ান এ সোয়ার্টস্ থেকে)

  •  বিশ্বের সব খ্রিষ্টান বিশ্বাসীরা ত্রিত্ব ঈশ্বরের মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ধরে রাখে। কিন্তু দেখা যায় যে কেউ কেউ ত্রিত্ব ঈশ্বরের মধ্যে একজন ব্যক্তির উপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
  •  নিচে দেওয়া ছকে দেখানো হল বিশ্বাসীদের মধ্যে কোন দলগুলি সাধারণত ত্রিত্ব ঈশ্বরের কোন ব্যক্তির উপর একটু বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তার ফলাফল। এই ছক সমালোচনা কারার উদ্দেশ্য দেওয়া হয় নি বরং দেখানোর জন্য ত্রিত্ব ঈশ্বর যে তিনজন ব্যক্তিই, তা কেন এত প্রয়োজন।
 

স্বর্গস্থ পিতা ঈশ্বর

সৃষ্টিকর্তা

পুত্র যীশু ঈশ্বর

পবিত্র আত্মা ঈশ্বর

কে কে ত্রিত্ব ঈশ্বরের এই ব্যক্তির উপরে বেশি গুরুত্ব দেয়

লিবারাল (Liberals)

ক্যাথলিক (Catholics)

ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল (Evangelicals)

ক্যারিসম্যাটিক্স

(Charismatics)

জ্ঞানের কোন উৎসকে সাধারণত প্রাধান্য দেওয়া হয়

বিজ্ঞান

ইতিহাস

প্রকাশ, সাক্ষ্য,

ঈশ্বরের বাক্য

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লাভ

ঈশ্বরের কোন কাজের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়

সৃষ্টি

পরিত্রাণ

পবিত্র জীবন

এই ব্যক্তি থেকে বিশেষভাবে কি পাচ্ছি

নীতি

অনুপ্রেরণা

কাজের ক্ষমতা

ঈশ্বরকে কোথায় পাই?

ঈশ্বর আমাদের উপরে

ঈশ্বর আমাদের মধ্যে

ঈশ্বর আমাদের অন্তরে

যদি ত্রিত্ব ঈশ্বরের অন্য ব্যক্তিদের উপরেও গুরুত্ব দেওয়া না হয় তবে কি ঝুঁকি?

অন্য ধর্মের সাথে মিশে যাওয়ার ঝুঁকি

(syncretism)

অতি কঠোর নীতি বা সরু মতবাদের ঝুঁকি (dogmatism)

অন্য আত্মার প্রভাবে পড়ার ঝুঁকি (spiritualism)