ধর্ম ১৭ – যীশুর দ্বিতীয় আগমন

যীশুর দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধে কিছু ভিত্তিক সত্য

তারিখ জানা যায় না
  • মথি ২৪:৩০,৩৬  ‘এমন সময় আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন পৃথিবীর সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা মনুষ্যপুত্রকে শক্তি ও মহিমার সংগে মেঘে করে আসতে দেখবে।…সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না, স্বর্গের দূতেরাও না, পুত্রও না; কেবল পিতাই জানেন।’
  •  মার্ক ১৩:৩২ ‘সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না-স্বর্গের দূতেরাও না, পুত্রও না, কেবল পিতাই জানেন।’
  •  যীশুর দ্বিতীয় আগমন কখন হবে, তা মানুষ, স্বর্গদূত, এমন কি যীশু জানে না। যীশু যে জানেন না তা অবশ্যই অবাক লাগার বিষয়। হয়তো কথাটা চিরন্তন সত্য অথবা তা সত্য ছিল যীশু মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে থাকার সময়ে। যে ভাবে হোক, আমরা অবশ্যই যীশুর চেয়ে কম জানি।
  •  যারা যীশুর দ্বিতীয় আগমন নিয়ে তারিখ বা সাল ঘোষণা করে, তারা নিজের লজ্জা বা অহংকার প্রকাশ করে। সমস্ত ‘গণনা’ বা ‘হিসাব’ থেকে দূরে থাকুন! কখনও ভয় পাবেন না যে হয়তো আপনার ‘সে বিশেষ জ্ঞান নেই’। বার বার বিশ্বাসীদের এই ধরণের ভবিষদ্বাণী দিয়ে অস্থির করে তোলা হয়েছে। গতবার একটা বিখ্যাত বিষয় ছিল যে যীশু ২০০০ সালে ফিরে আসবেন। কিন্তু ভুল তারিখ দেওয়ার একটি দীর্ঘদিনের ইতিহাস আছে।
  •  উদাহরণ: উইলিয়াম মিল্লার বলেছেন যে ১৮৪৩ বা ১৮৪৪ খ্রিঃ যীশুর আগমন ঘটবে। এদ্গার ওয়াইসেনান্ট (Edgar Wisenant): ৮ আগষ্ট ১৯৮৮ খ্রিঃ। ২০০০ খ্রিঃ অথবা সবচেয়ে বর্তমান উদাহরণ: ২০১২ সালে।
  •  যারা এই তারিখগুলি ঘোষণা করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজনও ক্ষমা চায় নি, অনুতপ্তও হয় নি। কেউ কেউ এমন কি তাদের গণনাতে ভুল পেয়ে এক বছর পরে আরেকটি তারিখ ঘোষণা করল।
  •  বিষয়টি কিন্তু ক্ষতিকারক কারণ এভাবে করলে আমরা অবিশ্বাসীদের চোখে ঈশ্বরের বাক্য হাস্যকর বানাই এবং বিশ্বাসীদের সন্দেহে ফেলি বাইবেল আসলে সত্য কিনা।
  •  হাজার বাইবেল পদ উদ্ধৃতি করলেও এই ধরণের গণনাতে প্রভাবিত হবেন না ও এই ধরণের ভবিষদ্বাণীতে ভয় পাবেন না।
যীশুর আগমন এমন একটি ঘটনা যা ‘মিস’ করা যায় না

মথি ২৪:২৯-৩১ (মার্ক ১৩:২৪-২৭)    ‘সেই সময়কার কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না। ৩০ এমন সময় আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন পৃথিবীর সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা মনুষ্যপুত্রকে শক্তি ও মহিমার সংগে মেঘে করে আসতে দেখবে। ৩১ জোরে জোরে তূরী বেজে উঠবে আর সংগে সংগে মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই দূতেরা পৃথিবীর এক দিক থেকে অন্য দিক পর্যন্ত চার দিক থেকে তাঁর বাছাই করা লোকদের একসংগে জড়ো করবেন।’

  •  যীশুর দ্বিতীয় আগমন এমন কোন ঘটনা নয় যাতে ভয় করতে হয় যে, সে দিন ঘটে গেছে কিন্তু আমি বুঝতে পারি নি।
  •  অনেক শিক্ষা শোনা যায় ‘বিশ্বাসীদের তুলে নেওয়ার’ বিষয়ে (rapture) যে যীশুর আগমন হল এমন কিছু যা হঠাৎ করে অল্প লোকদের নিয়ে গোপনে ঘটবে। এই পদগুলি অনুসারে যীশুর আগমন গোপন ঘটনা নয়, এমন কিছু যা না চাইলেও চোখে পড়বে।
যীশুর দ্বিতীয় আগমন মানে সব কিছুর উপরে খ্রীষ্টের রাজত্ব শুরু
  •  যীশুর দ্বিতীয় আগমন মানে না যে ‘পৃথিবীকে বাতিল করা হবে’ বা ‘বিশ্বাসীরা সবাই জগত ফেলে রেখে স্বর্গে পালাবে’। বরং যীশুর আগমন মানে যে যীশুর রাজত্ব, যা তার প্রথম আগমনে শুরু হয়েছে এখন সমাপ্ত হবে: সমস্ত সৃষ্টির উপরে, দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুর উপরে, আত্মিক ও বস্তু জগতের উপরে যীশু রাজত্ব করবেন।
  •  দানিয়েল ৭:১৩-১৪     ‘রাতের বেলা আমার সেই স্বপ্নের মধ্যে আমি তাকিয়ে মনুষ্যপুত্রের মত একজনকে আকাশের মেঘের মধ্যে আসতে দেখলাম। তিনি সেই বৃদ্ধ জনের কাছে এগিয়ে গেলে পর তাঁকে তাঁর সামনে নিয়ে যাওয়া হল। ১৪ সেই মনুষ্যপুত্রকে কর্তৃত্ব, সম্মান ও রাজত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল যেন সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা তাঁর সেবা করে। তাঁর রাজত্ব চিরস্থায়ী; তা শেষ হবে না আর তাঁর রাজ্য কখনও ধ্বংস হবে না।’
  •  যীশু দানিয়েলের এই ভবিষদ্বাণী যিহূদী পরিষদের সামনে তাঁর মামলার সময়ে নিজের বিষয়ে উদ্ধৃতি করেন। যিহূদীরা দানিয়েলের এই প্রিয় পদগুলি মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষদ্বাণী হিসাবে বুঝতেন। তাই যখন যীশু সেগুলি নিজের জন্য দাবি করেন ও তাতে নিজেকে মশীহ হিসাবে ঘোষনা করেন তখন যিহূদীদের চোখে পরিষ্কার যে তিনি ভ্রান্ত (মথি ২৬:৬৩-৬৫, মার্ক ১৪:৬১-৬৪, লূক ২২:৬৯-৭০)। যীশুই ভাল জানতেন যে তারা এই কথার পরে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
  •  ১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৬    ‘এর পরে খ্রীষ্ট যখন সমস্ত শাসন-ব্যবস্থা, অধিকার আর ক্ষমতা ধ্বংস করে পিতা ঈশ্বরের হাতে রাজ্য দিয়ে দেবেন তখনই শেষ সময় আসবে। ২৫ ঈশ্বর যে পর্যন্ত না খ্রীষ্টের সমস্ত শত্রুকে তাঁর পায়ের তলায় রাখেন সেই পর্যন্ত খ্রীষ্টকে রাজত্ব করতে হবে। ২৬ শেষ শত্রু যে মৃত্যু, তাকেও ধ্বংস করা হবে।
  •  কলসীয় ১:১৫-২০ ‘এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান, ১৬ কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৭ তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে। ১৮ এছাড়া তিনিই তাঁর দেহের, অর্থাৎ মণ্ডলীর মাথা। তিনিই প্রথম আর তিনিই মৃত্যু থেকে প্রথম জীবিত হয়েছিলেন, যেন সব কিছুতে তিনিই প্রধান হতে পারেন। ১৯ ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তাঁর সব পূর্ণতা খ্রীষ্টের মধ্যেই থাকে। ২০ তা ছাড়া পৃথিবীতে হোক বা স্বর্গে হোক, খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে সব কিছুর মিলনও তিনি চেয়েছিলেন। খ্রীষ্ট ক্রুশের উপর তাঁর রক্ত দান করে শান্তি এনেছিলেন বলেই এই মিলন হতে পেরেছে।’ কেরী: ‘সকলই সম্মিলিত করেন, তাঁহার দ্বারাই করেন।’
  •  এখানে আশ্চর্য একটি ছবি দেখানো হয়: এমন না যে ব্স্তু জগত বাতিল করে আমাদের একটি ‘আত্মিক স্বর্গে’ নিয়ে যাওয়া হয়। বরং যীশুতে ও যীশু দ্বারা সমস্ত কিছু, দৃশ্য ও অদৃশ্য, মিলনে আনা হবে!
  •  প্রকাশিত ২১:১ ‘তারপর আমি একটা নতুন মহাকাশ ও একটা নতুন পৃথিবী দেখলাম।’
  •  প্রকাশিত বাক্য আমাদের শেষ বাস্তবতা একটি অবস্থা দেখায় যেখানে সব কিছু পুনরুদ্ধার করা হবে, একটি নতুন মহাকাশ এবং একটি নতুন পৃথিবী থাকবে যার উপরে খ্রীষ্ট রাজত্ব করবেন – এবং তাতে বিশ্বাসীরা অংশ পাবে।

কিভাবে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের জন্য প্রস্তুত হব? > পৃথিবীতে কাজ করতে থাক!

  •  নতুন নিয়মের মোটামুটি যতবার যীশুর দ্বিতীয় আগমনের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় তত বার শেষে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য একটি ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখানো হয়: কিভাবে আমরা তাঁর আগমনের জন্য প্রস্তুত হব বা তাঁর আগমন পর্যন্ত কি করব।
  •  মার্ক ১৩:১-২৭ যীশু ৭০ সালে রোমীয়দের হাত দ্বারা যিরূশালেমের ধ্বংসের ভবিষদ্বাণী বলেন (মার্ক ১৩:১-২৩), পরে তিনি তাঁর নিজের আগমন সম্বন্ধে কথা বলেন (মার্ক ১৩:২৪-২৭)। পরে তিনি দুইটি ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখায়। যিরূশালেমের ধ্বংসের ক্ষেত্রে তিনি শিষ্যদের উৎসাহিত করেন যেন তারা এই ঘটনাগুলি দেখে বুঝতে পারবে বিষয়টি এখন পূর্ণ হয়ে যাবে এবং যেন শহর থেকে পালায় (মার্ক ১৩:২৮-৩১)। কিন্তু যীশুর দ্বিতীয় আগমনের বিষয়ে তিনি বলেন যে কেউ জানবে না তা কখন ঘটবে। তাহলে কি করব? এই বিষয়ে যীশু একটি দৃষ্টান্ত বলেন যেখানে দাস জানে না মনিব কোন সময় ফিরবে তাই দাস জেগে থাকে যেন মনিব ফিরে এসে দাসকে কাজে ব্যস্ত দেখতে পান (মার্ক ১৩:৩২-৩৭)। যীশুর উদাহরণ হল একজন বিশ্বস্ত দাস যে অপেক্ষা না করে কাজে ব্যস্ত থাকে।
  •  মথি ২৪ এবং মার্ক ১৩ হল সমান্তরাল পদগুলি। দ্বিতীয় আগমনে শিক্ষার প্রয়োগ হিসাবে যীশু আরো তাঁর শ্রোতাদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা ‘প্রস্তুত’ থাকে যেহেতু কেউ জানে না কখন যীশু ফিরে আসবেন (এই বিষয়ে প্রচলিত রূপক হল ‘রাতের বেলা যেভাবে চোর আসে’, ১ থিষ ৫:২, ২ পিতর ৩:১০)। আবারও আমরা ভাল ও বিশ্বস্ত দাসের দৃষ্টান্ত পাই: ‘সেই দাস ধন্য, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন’ যখন মনিব ফেরেন (মথি ২৪:৪৬)।
  •  ১ করি ১৫:১-৫৭ ভবিষ্যতে যে পুনরুত্থান হবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার পরে পৌল তার কথার উপসংহার এভাবে দেন (১ করি ১৫:৫৮): ‘সেইজন্যই, আমার প্রিয় ভাইয়েরা, শক্ত হয়ে দাঁড়াও; কোন কিছুই যেন তোমাদের নড়াতে না পারে। সব সময় প্রভুর কাজের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দিয়ে দাও, কারণ তোমরা জান, তাঁর কাজে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।’
  •  ১ থিষ ৫:৮-১১ দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার শেষে পৌল উপসংহার হিসাবে এই কথাগুলি বলেন: ‘আমরা কিন্তু দিনের লোক…; কাজেই বুক রক্ষার জন্য বিশ্বাস ও ভালবাসা দিয়ে বুক ঢেকে …আমরা নিজেদের দমনে রাখি।…১১ এইজন্য তোমরা এখন যেমন করছ তেমনি করে একে অন্যকে উৎসাহ দান করতে ও একে অন্যকে গড়ে তুলতে থাক।’ এই পদগুলিতে আমরা আবার একই নির্দেশনা পায়: লক্ষ্য করা, বুঝা, প্রস্তুত থাকা, বিশ্বস্ত হওয়া, পরস্পরকে উৎসাহ দেওয়া।
  •  ২ থিষ ২:১৩-১৭ এখানে পৌল দ্বিতীয় আগমনের আর একটি শিক্ষায় এই কথা দিয়ে উপসংহার করেন: ‘তোমাদের জন্য সব সময়ই ঈশ্বরকে আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য ঈশ্বর প্রথম থেকেই তোমাদের বেছে রেখেছেন।…স্থির থাক, আর চিঠির দ্বারা বা কথার দ্বারা যে শিক্ষা আমরা তোমাদের দিয়েছি তা ধরে রাখ। ১৬ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজে এবং আমাদের পিতা ঈশ্বর তোমাদের অন্তরে উৎসাহ দান করুন এবং সমস্ত ভাল কাজে ও কথায় তোমাদের স্থির রাখুন। তিনিই আমাদের ভালবেসেছেন আর দয়া করে অশেষ উৎসাহ এবং আনন্দপূর্ণ আশ্বাস দান করেছেন।’
  •  তাই যীশুর দ্বিতীয় আগমনের শিক্ষার প্রয়োগ বা ফল কি হওয়া উচিত? > যেন আমরা জানি, প্রস্তুত থাকি, অস্থির হয়ে না যাই, আশা ধরে রাখি এবং এই পৃথিবীতে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে থাকি।
  •  কিন্তু কেন তাহলে আজকাল প্রচলিত দ্বিতীয় আগমন বিষয়ে শিক্ষা ঠিক বিপরীত তৈরি করে? > বিশ্বাসীরা অতি উত্তেজিত হয়ে পড়ে, ভিত হ্য়, দুশ্চিন্তা করে, তারিখের উপর ভুলভাবে গুরুত্ব দেয় এবং এমন অস্থির হয় যার কারণে এই পৃথিবীতে বিশ্বস্তভাবে কাজ করাই বাদ দেয়। প্রচলিত শিক্ষা লোকদের প্রায় পঙ্গু অবস্থায় ফেলে এবং তাদের বর্তমান পৃথিবীর জন্য কাজ করতে নিরুৎসাহিত করে। প্রচলিত শিক্ষার একটি বিখ্যাত প্রবাদ হল ‘কেন ডুবে যাওয়ার পথে জাহাজে পিতলের জিনিস ঘষাঘষি করব?’ (‘why polish brass on a sinking ship?’)। যীশু এবং পৌলের শিক্ষা তা থেকে কত ভিন্ন!
  •  তা থেকে কত ভিন্ন মার্টিন লুথারের কথা যিনি বলেছেন: ‘আগামীকাল যীশু আসবেন যদি আমি জানতাম, তবুও আজকে গাছ লাগাতাম’।
  •  অথবা আমেরিকান সরকারের প্রথমদিকে একটি ঘটনার মত: সংসদ ভবনে এমপিরা একটি আইনের বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন যখন একটি সূর্যগ্রহণ ঘটল। সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠছে দেখে সংসদের ষ্পিকার তাদের বলেন: ‘ভাইয়েরা, হয় যীশু আসছেন, না হয় তিনি এখনও আসবেন না। যদি তিনি না আসেন, তবে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ করার কোনো কারণ নেই। যদি তিনি আসছেন, তবে যেন তিনি আমাদের কাজে ব্যস্ত অবস্থায় খুঁজে পান। আসুন আমরা কাজ করি!’ ষ্পিকারের এই কথা সম্পূর্ণ বাইবেলীয় ও উপযুক্ত!
  •  তাই যত বার নতুন নিয়মে যীশুর দ্বিতীয় আগমন নিয়ে কথা হয়, তবে নির্দেশনা হল প্রস্তুত হতে, যার অর্থ হল এখানে বিশ্বস্ত ও উপকারী জীবন-যাপন করা, এই পৃথিবীতে আমাদের আহবান পূর্ণ করা, অস্থির না হওয়া বরং পরস্পর্কে উৎসাহ দেওয়া। তাই:
  •  অস্থির হয়ে ভয়ে পঙ্গুর মত বসে থাকবেন না যীশুর অপেক্ষায়!
  •  যীশুর ফেরার তারিখ নিয়ে অংক করে কোনো শিক্ষা শুনে অস্থির হয়ে উঠবেন না! এই ধরণের শিক্ষা দেবেনও না!
  •  ভয় করবেন না! কাউকে ভয় দেখাবেন না!
  •  পৌল যীশুর আগমন নিয়ে শিক্ষা দিতেন বিশ্বাসীদের উৎসাহ ও স্থিরতা দান করার জন্য, তাদের অস্থির বা ভীত করে তোলার জন্য না…ভয় দেখিয়ে তাদের অনুতপ্ত করার জন্যও না…ভয় দেখিয়ে তাদের বাধ্য বানানোর জন্যও না।
  •  উদাহরণ: পৌল ১ থিষ ৪:১৩-১৮ পদে তার দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কীয় শিক্ষাতে এই কথা দিয়ে সমাপ্ত করেন: ‘সেইজন্য তোমরা এই সব কথা বলে একে অন্যকে সান্ত্বনা দাও’
  •  আপনার দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধীয় কথা বা শিক্ষা অন্য কিছু তৈরি না করুক!

যীশুর দ্বিতীয় আগমনে কি ঘটবে?

  • অনেক প্রচলিত শিক্ষার সাথে অমত হয়ে আমি বলি যে যদিও নতুন নিয়মে দ্বিতীয় আগমনের বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়, তা হল একটি বিরাট ঘটনা, নানা ঘটনা নয়:
  •  যীশু এক মুহূর্তে শয়তান, মন্দ আত্মা ও মন্দ মানুষের উপরে জয় লাভ করবে ( প্রকাশিত ১৯:১৯-২১)।
  •  সমস্ত লোকদের পুনরুত্থান ও তাদের আচার-ব্যবহারের জন্য বিচার হবে (প্রকাশিত ২০:১১-১৫)।
  •  যীশু শয়তানকে, মন্দ আত্মাদের, মন্দ মানুষদের ও অবশেষে মৃত্যুকে বাতিল করবেন (প্রকাশিত ২০:১০)।
  •  এই বর্তমান মহাকাশ এবং পৃথিবী আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হবে (২ পিতর ৩:৭)।
  •  কিন্তু মহাকাশ এবং পৃথিবী নতুন করে সৃষ্টি করা হবে (প্রকাশিত ২১:১), সমস্ত কিছু “সম্মিলিত” করা হবে (কলসীয় ১:২০) এবং সব কিছুর উপরে যীশু খ্রীষ্টের রাজত্ব দ্বারা সৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ন্যায্যতা ও শান্তি স্থাপন করা হবে (১ করি ১৫:২৫-২৭)।
  •  পৃথিবী ও মহাকাশের, বস্তু ও আত্মিক জগতের, দৃশ্য ও অদৃশ্য বাস্তবতা সব (!) পুনরুদ্ধার করা হবে। এই আশ্চর্য ও বিরাট পুনরুদ্ধারের বিভিন্ন বাইবেল পদে বিভিন্ন ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা হয়:
  •  সমস্ত সৃষ্টি ‘ধ্বংসের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে …একদিন ঈশ্বরের সন্তানদের গৌরবময় স্বাধীনতার ভাগী হতে পারবে’ (রোমীয় ৮:১৯-২২)।
  •  একটি সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হবে, যেমন নবীদের দ্বারা ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: ‘ঈশ্বর সব কিছু যে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন’ (প্রেরিত ৩:২১)।
  •  আমরা সবাই যে মারা যাব তা নয়, কিন্তু বদলে যাব (১ করি ১৫:৫১-৫৩)। কথাটি মানুষ সম্বন্ধীয়, কিন্তু আগে উল্লিখিত প্রাণী বা জিনিস সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞাও (যেমন গাছ-পালা, জীব-জন্তু, তারা ইত্যাদি)।
  •  তিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর সব কিছু মিলিত করে খ্রীষ্টের শাসনের অধীনে আনবেন (ইফিষীয় ১:৯-১০)।
  •  ‘ঈশ্বর সব কিছু খ্রীষ্টের পায়ের তলায় রেখেছেন এবং তাঁকে সব কিছুর অধিকার দিয়েছেন’ (১ করি ১৫:২৫-২৭, ইফিষীয় ১:২২)।
  •  তাঁহার দ্বারা যেন আপনার সহিত কি স্বর্গস্থিত, কি মর্ত্যস্থিত, সকলই সম্মিলিত করেন’ (কলসীয় ১:২০)।
  •  মহাকাশ ও পৃথিবী নতুন করা হবে ‘একটা নতুন মহাকাশ ও একটা নতুন পৃথিবী’ (প্রকাশিত ২১:১)।
  •  আমাদের সে প্রচলিত ‘জগত থেকে একটি আত্মিক স্বর্গে পালাব’, তার চেয়ে এই বাইবেল পদগুলি কত ভিন্ন!
  •  আমাদের সে প্রচলিত ‘সব কিছু খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়ে যাবে’, তার চেয়ে এই পদগুলি কত ভিন্ন!

প্রকাশিত বাক্য নিয়ে কিছু কথা

  •  অনেক ভয়ংকর প্রচার, লেখা ও বই আছে যাতে প্রকাশিত বাক্য ব্যাখ্যা করা হয়।
  •  প্রকাশিত বাক্য আসলে বুঝা কঠিন, এবং অনেক অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। একটি দুইচার পৃষ্ঠার শিক্ষায় তা করা সম্ভব না। কিন্তু কিছু ভিত্তিক চিন্তা তারপরেও দেওয়া যায়:
  •  প্রথমত প্রকিশিত বাক্য নিজেকে ‘ভাববাণী’ বলে (প্রকাশিত ১:৩, ১০:১১, ১৯:১০, ২২:৬, ২২:১০, ২২:১৮-১৯)। ভাববাণী হিসাবে প্রকাশিত বাক্য পৌলের একটি দাবিতে পড়ে (১ করি ১৪:৩): ‘কিন্তু নবী হিসাবে যে কথা বলে সে মানুষের কাছে এমন কথা বলে যা তাদের গড়ে তোলে এবং উৎসাহ ও সান্ত্বনা দেয়।’ ভাববাণীর কাজ হল গড়ে তোলা, উৎসাহ ও সান্ত্বনা দান। তাতে সাথে সাথে বুঝা যায় যে প্রকাশিত বাক্যের সে প্রচলিত ভয়ংকর ব্যাখ্যাগুলি মূল বিষয় হারিয়ে ফেলে: প্রকাশিত বাক্য লেখা হয়েছে গড়ে তোলা, উৎসাহ ও সান্ত্বনা দানের উদ্দেশ্যে। তার বাইরে ব্যাখ্যা করবেন না!
  •  ভাববাণী হিসাবে প্রকাশিত বাক্যের পুরাতন নিয়মের ভাববাণীর সাথে মিল আছে: পুরাতন নিয়মের ভাববাণী প্রাথমিকভাবে কৌতুহল মেটানোর জন্য সুদূর ভবিষ্যতের ঘটনার বর্ণনা করেন না বরং তার মূল কাজ হল ঈশ্বরের লোকদের বর্তমান ঘটনার বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টি দেখানো যেন তারা সাড়া দেয় এবং এখন স্থির ও বিশ্বস্ত হয়।
  •  প্রকাশিত বাক্য রোম রাজ্যে এশিয়া প্রদেশের (আজকে: তুরস্ক) অত্যাচারিত বিশ্বাসীদের কাছে লেখা হয়েছে (প্রকাশিত ২:১০)। ইতিমধ্যে ৭টি মণ্ডলীর মধ্যে একটিতে একজন বিশ্বাসী শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছেন (প্রকাশিত ২:১৩)। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচারিত বিশ্বাসীরা প্রকাশিত বাক্য সবচেয়ে ভাল বুঝেছে এবং এই পুস্তক থেকে সবচেয়ে বেশি সান্ত্বনা পেয়েছে।
  •  প্রকাশিত বাক্য রোম রাজ্যে এশিয়া প্রদেশের (আজকে: তুরস্ক) অত্যাচারিত বিশ্বাসীদের কাছে লেখা হয়েছে (প্রকাশিত ২:১০)। ইতিমধ্যে ৭টি মণ্ডলীর মধ্যে একটিতে একজন বিশ্বাসী শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেছেন (প্রকাশিত ২:১৩)। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচারিত বিশ্বাসীরা প্রকাশিত বাক্য সবচেয়ে ভাল বুঝেছে এবং এই পুস্তক থেকে সবচেয়ে বেশি সান্ত্বনা পেয়েছে।
  •  প্রকাশিত নিজেকে ‘প্রকাশ’ও বলে প্রকাশিত ১:১ পদে। ‘প্রকাশ’ সে শব্দ গ্রীক ভাষায় হল: ‘apocalypse’। এই শব্দ অনেকের কানে (বিশেষভাবে ইংরেজীতে) একটি খুবই ভয়ংকর শব্দ যা পৃথিবীর ধ্বংসরের বর্ণনা করে। কিন্তু গ্রীক ভাষায় ‘apocalypse’ ভয়ংকর কিছু বুঝায় না বরং তার অর্থ হল: ‘অপাবৃত, ঘোমটা তোলা, দৃশ্যবান হয়ে আসা, পরিষ্কার হওয়া, প্রকাশিত হওয়া, পরদা তোলা’ (যেমন বিবাহের অনুষ্ঠানে যখন বর কনের ঘোমটা উঠায়।
  •  আমরা মনে করি ‘apocalypse’ মানে ‘গোপন, লুকানো, গুপ্ত জ্ঞান, রহস্য, মাত্র অল্প কয়েকজন জানেন’, কিন্তু আসলে তার অর্থ হল ‘পরিষ্কার হওয়া’।
  •  কিন্তু প্রকাশিত বাক্য তাহলে কি প্রকাশিত করে? ঠিক কি পরিষ্কারভাবে দেখায়? এই অতি-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর হল:
  •  প্রকাশিত বাক্য প্রকাশ করে না কতটা ভয়ংকর ও মন্দ ঘটনা পৃথিবীতে ঘটবে। তা ‘নতুন কিছু’ হত না, অত্যাচারিত বিশ্বাসীরা (যে কোনো শতাব্দীর অত্যাচারিত বিশ্বাসীরা) ভালই জানে মন্দ সরকার, মন্দ মানুষ ও চেপে ধরার মত মন্দ ধর্ম কত অন্যায়, কত নিষ্ঠুর ব্যবহার ও কত যন্ত্রনা করতে পারে।
  •  অত্যাচারিতদের বুঝতে ও বিশ্বাসে ধরে রাখতে হবে যে: অত্যাচার হলেও, সব কিছু ‘নিয়ন্ত্রের বাইরে’ চলে গেলেও, শহীদ মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড়ালেও ঈশ্বর তাদের জন্য সর্বশক্তিমান ও প্রেমের ঈশ্বর।
  •  প্রকাশিত বাক্য ঠিক তা-ই প্রকাশ করতে চায়: পরদা তোলা যেন অদৃশ্য বাস্তবতা দেখা যায়: ঈশ্বর সিংহাসেন আছেন, তিনি সর্বনাশের মাঝখানে তারপরেও সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি অন্যায় বিচার করবেন এবং অবশেষে সব কিছু সুঅবস্থায় নিয়ে আসবেন:
  •  প্রতিজ্ঞা হল যে: মন্দকে থামানো হবে। অন্যায়কে বিচার করা হবে। যারা জীবন হারিয়েছে তা ফিরে পাবে। মৃত্যু শেষ বাস্তবতা নয়, পুনরুত্থান হল শেষ বাস্তবতা। ভালই জিতবে, একটি আশ্চর্য পুনরুদ্ধার আসবে। এইটা আসলে সান্ত্বনা দানকারী কথা! এইটা হল উৎসাহ অত্যাচারে স্থির থাকা ও বিশ্বাস ধরে রাখার শক্তি। যখন আমরা প্রকাশিত বাক্য ঠিকভাবে বুঝি, এই ভাববাণী ঠিকই করে যা ভাববাণীর করার কথা: গড়ে তোলা, উৎসাহ ও সান্ত্বনা দান।

পৌল দ্বিতীয় আগমন নিয়ে কিছু ভয় ও ভুল চিন্তার সংশোধন করেন

১ থিষলনীকীয় ৪:১৩-১৮

  •  থিষলনীকীয়রা একটি বিষয়ে অস্থির হয়েছিল: যদি কেউ যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগে মারা যায় সে কি পুনরুত্থান থেকে বাদ যাবে? পৌল উত্তরে তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশু ফিরে আসলে প্রথমে মৃত লোকেরা পুনরুত্থিত হয়ে উঠবে, পরে যারা সে সময় জীবিত আছে তাদের ‘পরিবর্তন’ করা হবে। তাই কোনো পার্থক্য থাকবে না: সবাই একটি নতুন, শক্তিশালী শরীর পাবে যা আর মৃত্যু দেখবে না; যেমন যীশু পেয়েছিলেন যখন তিনি ক্রুশের পরে তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।

২ থিষলনীকীয় ২:১-১২

  •  একজন ভ্রান্ত লোক থিষলনীকীয়দের পৌলের নামে একটি নকল চিঠি পাঠিয়েছিলেন (২ থিষ ২:২)। চিঠিতে বলা ছিল যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ইতিমধ্যে হয়েছিল এবং থিষলনীকীয়রা তা থেকে বাদ গেছে।
  •  পৌল এই নকল চিঠির খবর পেয়ে তাদের ২ থিষলনীকীয় চিঠি লিখে নিশ্চয়তা দেন যে তারা কোনো রকম বাদ যায় নি কারণ যীশু এখনও ফিরে আসেন নি। এই বিষয় আরো পরিষ্কার করার জন্য তিনি আরো ব্যাখ্যা দেন যে যীশু ফিরে আসার আগে আরো অনেক কিছু ঘটতে হবে, যেমন (পাপ পুরুষের আগমন, বাধাকারীকে তুলে নেওয়া)।
  • যদিও পৌলের সে যোগ দেওয়া ব্যাখ্যাগুলি বুঝতে আসলে কঠিন এবং ভিন্ন পণ্ডিত তার ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন, পৌল এই ব্যাখ্যাগুলি কোন উদ্দেশ্যে দেন, তা অত্যন্ত পরিষ্কার: তাদের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যে যীশুর দ্বিতীয় আগমন এখনও হয় নি এবং তারা বাদ যায় নি।

১ করিন্থীয় ১৫

  •  ১ করিন্থীয় ১৫:১-৩৪ পৌল করিন্থীয়দের দেখান যে যীশুর শারীরিক পুনরুত্থান ছিল একটি আসল ঐতিহাসিক ঘটনা যার অনেক চোখের সাক্ষী আছে। তিনি আরো বলেন যে যীশুর পুনরুত্থান খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন কি বলেন: যদি পুনরুত্থান বাস্তব না হত, তবে খ্রিষ্টান বিশ্বাসী না হওয়া ভাল।
  •  ১ করিন্থীয় ১৫:৩৫-৫৮ পৌল করিন্থীয়দের নিশ্চয়তা দেন যে যেমন যীশুর শারীরিক পুনরুত্থান হয়েছিল, ঠিক তেমনি তাঁর দ্বিতীয় আগমনে সব বিশ্বাসীদেরও পুনরুত্থিত করা হবে। তাই মৃত্যুকে ‘পিছানো’ হবে বা বাতিল করা হবে। পৌল আরো বিস্তারিত শিক্ষা দেন এই পুনরুত্থান দেখতে কেমন হবে: তিনি দেখান যে পুনরুত্থানে ধারাবাহিকতা থাকবে: মানুষের নিজ নিজ ব্যক্তিত্ব পুনরুত্থানে বাতিল করা হবে না বরং আমরা পরস্পরকে চিনব ও জানব। কিন্তু তিনিও দেখান যে আগের অবস্থার চেয়ে এই পুনরুত্থিত শরীর বা জীবন আরো অনেক চমৎকার হবে, আমরা একটি নতুন, ক্ষয়হীন, শক্তিশালী ও মহিমাপূর্ণ শরীর পাব।

যীশু ফিরে আসবেন…কোথায় আসবেন? ‘যীশুর আসা’ নিয়ে একটি অধ্যয়ন

আসা      গ্রীকে ‘erchomai’                     G3952                                  নতুন নিয়মের ৬৩৯ বার

  •  শব্দের অর্থ: আসা, যাওয়া, দেখা দেওয়া, সঙ্গে যাওয়া, নিয়ে আসা, প্রবেশ করা,…
  •  এই শব্দ অনেক বিভিন্ন সাধারণ বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত: সাধারণ মানুষের যাওয়া-আসা। যীশুর প্রথম আগমন সম্বন্ধে এই শব্দও ব্যবহৃত। এমন কি যীশুর দ্বিতীয় আগমনের জন্যও ব্যবহৃত, এখানে সব পদ দেওয়া হল যেখানে ‘erchomai’ শব্দ যীশুর দ্বিতীয় আগমনকে বুঝায়:
  •  মনুষ্য পুত্র আসবেন (মথি ১০:২৩, ১৬:২৭-২৮, ২৩:৩৯, ২৪:৩০, ২৪:৪২, ২৪:৪৪, ২৫:৩১, ২৬:৬৪। মার্ক ৮:৩৮, ৯:৩, ১৩:২৬,৩৫-৩৬, ১৪:৬২। লূক ৯:২৬, ১৩:৩৫, ১৯:৩৮, ২১:২৭। যোহন ১৪:৩, ১৪:১৮, প্রে ১:১১, ২:২০। ১ করি ৪:৫, ১১:২৬। ইব্রীয় ১০:৩৭। প্রকাশিত ৩:১১, ১৬:১৫, ২২:৭, ২২:১২, ২২:১৭, ২২:২০)।
  •  মনুষ্য পু্ত্র আসবেন দৃষ্টান্তের মধ্যে (মথি ২১:৪০, ২৪:৪৬, ২৪:৪৮, ২৫:৬, ২৫:১০, ২৫:১৩, ২৫:১৯, ২৫:২৭। মার্ক ১২:৯। লূক ১২:৩৬-৪০, ১২:৪৩, ১২:৪৫, ১৯:১৩, ১৯:২৩, ২০:১৬)।

আসা      গ্রীকে ‘parousia’                       G3952                                নতুন নিয়মের ২৪ বার

  •  শব্দের অর্থ: আসা, কাছে নিয়ে আসা, এসে পড়া, ফিরে আসা, উপস্থিতি।

শব্দটি সাধারণ লোক সম্বন্ধে ব্যবহৃত:

  •  ১ করি ১৬:১৭    ‘স্তিফান, ফর্তুনাত আর আখায়িক এসেছেন বলে আমি খুব খুশী হয়েছি, কারণ তোমরা না থাকবার অভাব তাঁরাই পূরণ করেছেন।’
  •  ২ করি ৭:৬       ‘তবে ঈশ্বর, যিনি দুঃখিতদের সান্ত্বনা দান করেন, তিনি তীতের আসবার মধ্য দিয়ে আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন।’
  •  ২ করি ১০:১০    ‘কোন কোন লোক বলে, “তার চিঠিগুলো মনে দাগ কাটে এবং তা শক্তিশালীও বটে, কিন্তু সে কাছে থাকলে দেখা যায়, সে দুর্বল এবং তার কথা শোনবার মত এমন কিছু নয়।’
  •  ফিলি ১:২৬       ‘ফলে তোমাদের মধ্যে আমার আবার আসবার দরুন তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাকে নিয়ে আনন্দে উপ্‌চে পড়বে।’

‘অবাধ্যতার-পুরুষ’ সম্বন্ধে ব্যবহৃত:

  •  ২ থিষ ২:৯       ‘সেই অবাধ্যতার পুরুষ যখন আসবে তখন তার সংগে থাকবে শয়তানের শক্তি। সেই শক্তি প্রকাশ পাবে সব রকম মিথ্যা চিহ্ন এবং আশ্চর্য ও শক্তির কাজের মধ্যে।

যীশু সম্বন্ধে ব্যবহৃত:

  •  মথি ২৪:৩        ‘পরে যীশু যখন জৈতুন পাহাড়ে বসে ছিলেন তখন শিষ্যেরা গোপনে তাঁর কাছে এসে বললেন, “আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে এবং কি রকম চিহ্নের দ্বারা বুঝা যাবে আপনার আসবার সময় ও যুগ শেষ হবার সময় হয়েছে?’
  •  মথি ২৪:২৭       ‘বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব দিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চম্‌কে যায় মনুষ্যপুত্রের আসা সেইভাবেই হবে।’
  •  মথি ২৪:৩৭-৩৯  নোহের সময়ে যে অবস্থা হয়েছিল মনুষ্যপুত্রের আসবার সময়ে ঠিক সেই অবস্থাই হবে।…খাওয়া-দাওয়া…বিয়ে… ৩৯ যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেই পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারল না। মনুষ্যপুত্রের আসাও ঠিক সেই রকমই হবে।’
  •  ১ করি ১৫:২৩    ‘তবে তার মধ্যে পালা রয়েছে-প্রথম ফলের মত প্রথমে খ্রীষ্ট, তারপর যারা খ্রীষ্টের নিজের। খ্রীষ্টের আসবার সময়ে তাদের জীবিত করা হবে।’
  •  ১ থিষ ২:১৯      ‘আমাদের প্রভু যীশু যখন আসবেন তখন তাঁর সামনে তোমরাই কি আমাদের আশা, আনন্দ ও গৌরবের জয়ের মালা হবে না?’
  •  ১ থিষ ৩:১৩      ‘তাহলে তিনি তোমাদের অন্তর স্থির করবেন, যাতে আমাদের প্রভু যীশু যখন তাঁর নিজের সমস্ত লোকদের সংগে নিয়ে আসবেন তখন আমাদের পিতা ও ঈশ্বরের সামনে তোমরা নিখুঁত এবং পবিত্র হও।’
  •  ১ থিষ ৪:১৫      ‘প্রভুর শিক্ষামতই আমরা তোমাদের বলছি, আমরা যারা জীবিত আছি এবং প্রভুর ফিরে আসা পর্যন্ত জীবিত থাকব, আমরা কোনমতেই সেই মৃতদের আগে যাব না।’
  •  ১ থিষ ৫:২৩      ‘শান্তিদাতা ঈশ্বর নিজেই তোমাদের সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করুন, আর আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আসবার সময়ে তোমাদের সম্পূর্ণ দেহ-আত্মা- মন নির্দোষ রাখুন।’
  •  ২ থিষ ২:১-২     ‘ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আসবেন এবং আমাদের একসংগে মিলিত করে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে যাবেন। এই বিষয়ে আমরা তোমাদের এই অনুরোধ করছি – ২ “প্রভুর দিন এসে পড়েছে,” এই অর্থে নবী হিসাবে বলা কারও কথা বা অন্য কারও কথা কিম্বা আমাদের লেখা মনে করে কোন চিঠির দরুন তোমরা সহজে চঞ্চল হয়ো না বা ভয় পেয়ো না।’
  •  ২ থিষ ২:৮        ‘প্রভু যীশু তাঁর মুখের নিঃশ্বাসে তাকে ধ্বংস করবেন এবং তাঁর মহিমাপূর্ণ উপস্থিতির দ্বারা তার শক্তি শেষ করে দেবেন’। কেরী: ‘আপন আগমনের প্রকাশ দ্বারা লোপ করিবেন।’
  •  যাকোব ৫:৭-৮    ‘এইজন্য ভাইয়েরা, যে পর্যন্ত না প্রভু আসেন সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সব সহ্য কর। ক্ষেতের দামী ফসলের জন্য চাষী কেমন ভাবে অপেক্ষা করে… ৮ তোমরাও তেমনি করে ধৈর্য ধর আর অন্তর স্থির রাখ, কারণ প্রভু শীঘ্রই আসছেন।’
  •  ২ পিতর ১:১৬    ‘আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শক্তি ও তাঁর আসবার বিষয় তোমাদের কাছে জানাতে গিয়ে আমরা কোন বানানো গল্প বলি নি; আমরা তাঁর মহিমা নিজেদের চোখেই দেখেছি।’
  •  ২ পিতর ৩:৪     ‘আর বলবে, “তাঁর আসবার যে প্রতিজ্ঞা ছিল তার কি হল?’
  •  ২ পিতর ৩:১২    ‘সব কিছু যখন এইভাবে ধ্বংস হতে যাচ্ছে তখন তোমাদের কি রকম লোক হওয়া উচিত? আগ্রহের সংগে ঈশ্বরের দিনের অপেক্ষায় থেকে তোমাদের পবিত্র ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটানো উচিত।’ কেরী: ‘ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে…।’
  •  ১ যোহন ২:২৮    ‘সন্তানেরা, তাই বলছি, তোমরা খ্রীষ্টের মধ্যেই থাক যাতে তিনি যখন প্রকাশিত হবেন তখন আমাদের সাহস থাকে এবং তিনি যখন আসবেন তখন তাঁর সামনে আমাদের লজ্জা পেতে না হয়।’
  •  ‘Parousia’ এই শব্দ কোনো ‘খ্রিষ্টান’ শব্দ নয় বরং রোম রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি শব্দ: যখন সম্রাট বা একজন উঁচু পদের কর্মকর্তা একটি শহরে বেড়াতে আসতেন, তবে শহরের নেতৃত্ব থেকে একটি দল (শহরের নামী-দামী লোকেরা) শহর ছেড়ে তাঁর দিকে রওনা দিতেন, সম্রাটের সাথে দেখা করতেন এবং তাকে সম্মানের সঙ্গে শহরে নিয়ে আসতেন। তা ছিল সম্রাটের ‘parousia’ (N.T. Wright)।
  •  আধুনিক মণ্ডলীতে যীশুর আসার বিষয়ে আমাদের মাথা একটি ভিন্ন ছবি ভাসছে: যীশু আসবেন, আমাদের আকাশে তুলে নেবেন এবং আমাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন। তা আমরা মনে করি হচ্ছে ‘parousia’। আমাদের অনেক গানেও এই চিন্তা পাওয়া যায় ‘যীশু আমাকে নিতে আসিবেন’। কিন্তু পৌল আসলে কি বলেন?
  • বাম পাশের ছবি দেখায় থিষলনীকীয় চিঠিতে পৌল যা সরাসরি বলেন: যীশু আসবেন, এবং আমাদের আকাশে তুলে নেওয়া হবে ও তাঁর সাথে দেখা হবে।
  • কিন্তু এখন কি ঘটে? আমরা বলি: তিনি আমাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন (মাঝখানের ছবি)। কিন্তু তা আসলে লেখা নেই।
  •  কিন্তু যখন নতুন নিয়মের পাঠকরা যীশুর আগমনের বিষয়ে এই শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখত, তাদের চোখে ঐ রাজনৈতিক ছবি ভাসত: যীশু আসবেন, বিশ্বাসীরা আকাশে তাঁর সাথে দেখা করবে ও তাঁকে সম্মানের সঙ্গে শহরে নিয়ে আসবে (ডান পাশের ছবি দেখুন)।
  •  যীশু কি আমাকে ‘নিতে আসবেন’? না কি যীশু আসবেন এবং এসে এখানে আমাদের সঙ্গে তাঁর রাজত্ব স্থাপন করবেন? ছবি কত ভিন্ন!
  •  যে ‘parousia’ এইভাবে ব্যবহৃত, তা প্রমাণ পায় যখন শব্দটি মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়: প্রত্যেকটি পদে ‘একজন আসবে’ মানে ‘তিনি এসে সেখানে থাকবে’। ১ করি ১৬:১৭, ২ করি ৭:৬, ২ করি ১০:১০, ফিলি ১:২৬ এই পদগুলি দেখুন।

বাইবেলের সরল সময় তালিকা

  •  বাইবেলে ইতিহাসের ঘটনা একটি পরিষ্কার ও সরল সময় তালিকা অনুসারে দেওয়া হয়: সৃষ্টি, মানুষের পতন, যীশুর প্রথম আগমন যখন তিনি মানুষ হিসাবে জন্ম গ্রহণ করেন, মানুষের মধ্যে বাস করেন, পিতাকে প্রকাশিত করেন, ক্রুশে মারা যান এবং পুনরুত্থিত হন (কালো রঙ্গে দেখানো)।
  •  যীশুর দ্বিতীয় আগমনে তিনি রাজা হিসাবে আসবেন, মন্দ ও অন্যায়কে বিচার করবেন ও তা বন্ধ করবেন, পুনরুত্থান নিয়ে এসে মৃত্যুকে বাতিল করবেন এবং সব কিছু পুনরুদ্ধার করে (লাল রঙ্গে দেখানো) তার উপরে চিরকাল পর্যন্ত রাজত্ব করবেন (সবুজ রঙ্গে দেখানো)।

যীশুর দ্বিতীয় আগমনের আগে যীশুর সঙ্গে থাকা

  •  যখন একজন বিশ্বাসী মারা যায় তবে কি হয়? মূলত বিশ্বাসীর জন্য মৃত্যুর পরে দুই বিষয় অপেক্ষা করছে:
  •  প্রথমতঃ শান্তিতে ও আনন্দে যীশুর সঙ্গে থাকা যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস এখনও চলছে। যীশু এই বিষয়ে কথা বলেন যখন তিনি তার পাশের ক্রুশে লোককে বলেন: “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সংগে পরমদেশে উপস্থিত হবে।’ অথবা যোহন ১৪:২ ‘আমার পিতার বাড়ীতে থাকবার অনেক জায়গা আছে। তা না থাকলে আমি তোমাদের বলতাম, কারণ আমি তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি।’ ‘পরমদেশ’ সেই শব্দ মানে ‘বাগান’, ‘পার্ক’, ‘এদন’, ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতার একটি স্থান। তা অবশ্যই চমৎকার, কিন্তু তার চেয়ে অনেক চমৎকার কিছু পরে ঘটবে:
  •  দ্বিতীয়তঃ যীশুর দ্বিতীয় আগমনের সময় একটি অতুলনীয়, শারীরিক পুনরুত্থান ঘটবে, সমস্ত সৃষ্টির পুনরুদ্ধার করা হবে এবং চিরকাল পর্যন্ত যীশুর রাজত্ব স্থির থাকবে।