যোগাযোগ ১৩ – যীশুর দৃষ্টান্তের ব্যবহার
দৃষ্টান্তের ব্যবহারের বিষয়ে যীশুর কথা
লূক ৮:৯-১০ যিশাইয় ৬:৯-১০ পদের উদ্ধৃতি
‘এর পরে তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে সেই গল্পের অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন। ১০ তখন যীশু বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গোপন সত্যগুলো তোমাদেরই জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে আমি তা গল্পের মধ্য দিয়ে বলি, যেন তারা দেখেও না দেখে আর শুনেও না বোঝে।
মার্ক ৪:১০-১২ যিশাইয় ৬:৯-১০ পদের উদ্ধৃতি
‘ভিড় কমে গেলে পর যীশুর চারপাশের লোকেরা আর তাঁর বারোজন শিষ্য সেই গল্পের বিষয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। ১১ যীশু তাঁদের বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত সত্য তোমাদেরই জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে গল্পের মধ্য দিয়ে সব কথা বলা হয়, ১২ যেন পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, ‘তারা তাকিয়েও দেখতে না পায় এবং শুনেও বুঝতে না পারে। তা না হলে তারা হয়তো ঈশ্বরের দিকে ফিরবে এবং ক্ষমা পাবে।’
মার্ক ৪:৩৩-৩৪
‘এই রকম আরও অনেক গল্পের মধ্য দিয়ে যীশু ঈশ্বরের বাক্য লোকদের কাছে বলতেন। তারা যতটুকু বুঝতে পারত ততটুকুই তিনি তাদের কাছে বলতেন। ৩৪ গল্প ছাড়া তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন না, কিন্তু শিষ্যেরা যখন তাঁর সংগে একা থাকতেন তখন তিনি সব কিছু তাঁদের বুঝিয়ে দিতেন।’
কেন যীশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন?

- কে কে দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা পায়? যীশু কি আসলে চান যেন লোকেরা না বুঝে। যীশু কি আসলে চান যেন লোকেরা ক্ষমা না পায়। কেন যীশু সেই অপ্রিয় যিশাইয় ৬:৯-১০ পদগুলি টেনে নিয়ে আসেন?
- মার্ক ৪:১০ পদ থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যতজন যীশুর কাছে এসে একটি দৃষ্টান্তের অর্থ জানতে চায়, ততজনই উত্তর পায়। এমন না যে কেবলমাত্র ১২জন শিষ্য উত্তর পায় বরং যে কোনো একজন অনুস্মণকারী, যে কোনো আগ্রহী লোক যে একটু সময় বের করে জিজ্ঞাসা করে, সে উত্তর পায়।
- যীশু কোনো আগ্রহী অনুস্মরণকারীকে জানা থেকে বাদ দেন না যদিও তিনি জোর করে সবার কাছে ব্যাখ্যাও দেন না।
- তাই এটি ‘গুপ্ত জ্ঞানের বিষয়’ না, যা কেবল মাত্র অল্প বিশেষ মনোনীত লোক জানে। আবারও যে কেবলমাত্র ১২ শিষ্যরা জানে এবং শুধুমাত্র তাদের শিক্ষা দেওয়ার অধিকার আছে, তাও না।
- কিন্তু যীশু কেন দৃষ্টান্ত দিয়ে কথা বলেন এবং কেন তিনি তার ব্যাখ্যা সবার কাছে দেন না?
- যীশুই চমৎকার একজন শিক্ষক। তিনি ভালই জানেন যে আসল সমস্যা বা বাধা এই নয় যে জ্ঞান পাওয়া যায় না। তা মনে করলে আমরা এখনও শিক্ষার বিষয়ে গভীর চিন্তা করি নি। আমরা বলি: ‘যদি আমাদের এই জ্ঞান থাকত তবে জানতাম!’ কিন্তু জ্ঞান পাওয়া যায় কিনা তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান পাওয়ার আগ্রহ, আকাঙ্খা, খোলা মন ও ইচ্ছুক হৃদয়।
- যীশুর দৃষ্টান্ত বুঝতে চাইলে একজনের কথা গ্রহণ করতে হয়, চিন্তা করতে হয়, প্রশ্ন করতে হয়, চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় ও উত্তর চাইতে হয়। যীশু দৃষ্টান্ত দিয়ে ইচ্ছুকদের ও অন্বেষণকারীদের খুঁজে বের করেন।
- কারণ একটি দৃষ্টান্ত ‘দূর থেকে’ বুঝা যায় না। একটি দৃষ্টান্ত বুঝতে গেলে নতুন চিন্তা করার ইচ্ছুক মন দরকার, একটু নম্রতা ও বশীভূত হওয়ার মনোভাব লাগে, গল্পে ঢুকতে হবে, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে অনুমতি দিতে হবে, একটু অপেক্ষা করা ও সাথে থাকার ধৈর্য্য লাগবে।
- দৃষ্টান্ত শ্রোতাদের মধ্যে চিন্তা সৃষ্টি করে, প্রশ্ন উঠিয়ে দেয় এবং লোকদের নিজেই উপসংহারে আসতে উৎসাহ দেয়।
- আমরা অনেক বার মনে করি, শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে আমাদের কাজ হল লোকদের উত্তর দেওয়া যেখানে তারা এখনও প্রশ্ন করে না, এমন উপসংহার খাওয়ানো যেখানে লোকেরা এখনও সমস্যার সম্মুখীন হয় নি। আমরা ‘চামচ দিয়ে’ লোকদের জ্ঞান খাওয়াতে চাই।
- দৃষ্টান্ত ঠিক এর বিপরীতভাবে কাজ করে: দৃষ্টান্ত শ্রোতাকে বলে না, তার কি চিন্তা করাতে হবে বরং নতুন চিন্তা উৎসাহিত করে, নিজেই উপসংহারে আসতে ও সাড়া দিতে চ্যালেঞ্জ করে। যদি শ্রোতা এখনও প্রশ্ন বুঝে না, সঠিক উত্তর দিলেও লাভ হবে না, যদি শ্রোতা এখনও সমস্যা বুঝে না, সঠিক সমাধান দিলেও তারা সমাধানের গুরুত্ব বুঝবে না।
- যদি আমরা সত্যের প্রতি আগ্রহী না হই, সত্যের অন্বেষণকারী না হই তবে আমরা সত্য আসলেও তা সত্য হিসাবে বুঝব না। যারা অনিচ্ছুক তারা উত্তর পেলেও তা উত্তর হিসাবে বুঝে না, সমাধান শুনলেও তার গুরুত্ব বুঝে না।
স্মরণ করার সুবিধা, শেখার ধরণ ও মনে চলতে থাকার বিষয় - অনেক সংস্কৃতিতে (বিশেষভাবে মৌখিক সংস্কৃতিততে, oral cultures) অধিকাংশ শিক্ষা গল্পের মাধ্যমে শেখানো হয়।
- সবাই গল্প শুনতে পছন্দ করে এবং একটি গল্প শুনলে আমরা তা বেশ ভালভাবে স্মরণ করতে পারি, যদিও অন্য ধরণের শিক্ষা আমরা সহজেই ভুলে যাই।
- উদাহরণ: অধিকাংশ লোকেরা হারানো পুত্রের দৃষ্টান্ত বা বীজ বুনার দৃষ্টান্ত মোটামুটি বলতে পারে, যদিও গীর্জায় গত রবিবারের প্রচার থেকে দুই তিনটি মূল পয়েন্ট আর বলতে পারবে না।
- দৃষ্টান্তগুলি শ্রোতাদের মনের চিন্তা ও হৃদয়ের আবেগ উৎসাহিত করতে চায় কেবল মাত্র শোনার সময়ে নয়, বরং পরবর্তী দিনগুলিতেও তা মনে মনে ঘুরতে থাকবে।
- দৃষ্টান্তগুলি শ্রোতাদের ধরতে চায়, তাদের ফাঁদে ফেলতে চায় ও তাদের চেতনা দিতে চায়: গল্প শুনতে শুনতে শ্রোতা গল্পের একজন ব্যক্তির সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবে, ব্যক্তির চিন্তা বা আচরণের সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবে। কিন্তু পরে এই ব্যক্তি গল্পতে তার সেই চিন্তা বা ব্যবহারের কারণে ধরা খায় বা চেতনা পায়। তাই দৃষ্টান্তগুলি চেতনাদায়ক।
- বিভিন্ন লোকদের শেখার ধরণ ভিন্ন। দৃষ্টান্তগুলি অনেক শেখার ধরণের জন্য সুবিধা: গল্পের ব্যবহার, রূপক বা মনের ছবির ব্যবহার, নাটক ব্যবহার।
আমাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান জানাতে ঈশ্বর সমর্পিত
- যদি ঈশ্বর না চাইতেন যেন আমরা বুঝি কেন তিনি আমাদের বাইবেলে এক হাজার পৃষ্ঠার ব্যাখ্যা দিয়েছেন? যদি তিনি না চাইতেন যেন আমরা বুঝি তবে দৃষ্টান্ত বলার কি প্রয়োজন ছিল?
- ঈশ্বর অতি আগ্রহী ও সমর্পিত আমাদের শেখানোর জন্য, আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি, আমাদের কল্পনার চেয়ে বেশি, এমন অনেক কিছু যা চাওয়ারও আমাদের এখনও প্রজ্ঞা হয় নি। জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে ঈশ্বর বাধাদানকারী নন বরং আমরাই, আমরা নিজের জ্ঞান লাভ সীমিত করে ফেলি।
- অনিচ্ছুক মনের মানুষকে এমন কি ঈশ্বরও শেখাতে পারেন না। ঈশ্বর মানুষকে নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ দিয়েছেন, আমরা ঠিক করি কি শিখব এবং কি শিখব না। আমরা যে কোনো কিছু প্রত্যাখ্যানও করতে পারি। আমরা না চাইলে কেউ আমাদের কিছু শেখাতে পারে না।
- যীশু ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার শিক্ষক। তারপরেও এমন লোক ছিল যাদের তিনি শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। উদাহরণ: যীশুর চারিদিকে অধিকাংশ ধর্ম শিক্ষক, যদিও নিজেই পণ্ডিত ও ধর্মে আগ্রহী, তারা যীশুর শিক্ষা বুঝতে পারে নি।
কিভাবে দৃষ্টান্তগুলির অর্থ বোঝা উচিত
অনেক বার দৃষ্টান্ত ভুল বোঝা হয় ও ভুলভাবে প্রয়োগ করা হয়। যে কোনো দৃষ্টান্ত ঠিকমত বুঝতে গেলে খুঁজে বের করুন যীশু এই দৃষ্টান্ত কোন সময় ও কোন পরিস্থিতিতে বলেছিলেন:
লক্ষ্যের প্রশ্নগুলি
- যীশুর চারিদিকে কে দাঁড়িয়ে আছেন যখন তিনি এই দৃষ্টান্ত বলেন?
- এই দৃষ্টান্ত বলার ঠিক আগে কি ঘটল, কি আলোচনা, প্রশ্ন বা তর্ক উঠেছিল?
- দৃষ্টান্তের প্রধান বিষয় কি কি? শ্রোতারা গল্পের কোন ব্যক্তির সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবে?
- দৃষ্টান্তের চমকানোর মুহূর্ত কোনটা? শ্রোতাকে ফাঁদে ফেলার বিষয় কি? চেতনাদায়ক বিষয় কি?
- কাকে বা কাদের ধরা হয়?
ব্যাখ্যার প্রশ্নগুলি
- দৃষ্টান্ত কি ধরণের সাড়া ঘটাতে চায়?
- যীশু এই দৃষ্টান্ত বলার পরে ঐ সময়ের শ্রোতারা কি সাড়া দিয়েছিল?
প্রয়োগের প্রশ্নগুলি
- এই দৃষ্টান্তে কি অনন্ত সত্যগুলি শেখানো হয়? আমি এই দৃষ্টান্ত থেকে কি শিখতে পারি?
কিভাবে দৃষ্টান্তগুলি ব্যাখ্যা করা উচিত নয়!
- দৃষ্টান্ত কাহিনী ভিত্তিক রূপক (allegory) নয় যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রত্যেক বিষয়ের একটি গুপ্ত অর্থ আছে।
- ইতিহাসে অনেক শতাব্দী ধরে দৃষ্টান্ত ঠিক এভাবে কাহিনী ভিত্তিক রূপক হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
- যেহেতু যীশু ‘গুপ্ত সত্য’ ও ‘ঈশ্বরের রাজ্যের গোপন সত্যগুলি’ উল্লেখ করেছিলেন অনেকে মনে করেছেন যে দৃষ্টান্তের মধ্যে গোপন সত্য লুকিয়ে আছে যা খুঁজে বের করতে হবে (মার্ক ৪:১০-১২, লূক ৮:৯-১০)।
- উদাহরণ: মণ্ডলীর আদিপিতা অগাস্টিন অফ্ হিপ্পো (Augustine of Hippo, ৩৫৪-৪৩০ খ্রিঃ) দয়ালু শমরীয় দৃষ্টান্তের এই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন (লূক ১০:৩০-৩৭):
দৃষ্টান্তে ব্যবহৃত শব্দ এর অর্থ কি (আগষ্টিন অনুসারে)
একজন লোক = আদম
যিরূশালেম = স্বর্গীয় শান্তির শহর, যা থেকে আদম পাপের কারণে পড়ে গিয়েছিল
যিরীহো = চাঁদ, যার অর্থ হল আদমের মরণশীলতা
ডাকাতদের হাতে পড়ল = শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা
তারা কাপড় খুলে ফেলল = আদম তার অমরত্ব হারিয়ে ফেলল
তাকে মেরে = পাপের প্রলোভনের ফেলার মধ্য দিয়ে
আধমরা করে রেখে গেল = তাই আদম আত্মিক দিকে মৃত, কিন্তু শারীরিক দিকে জীবিত
পুরোহিত, লেবীয় = যাজকত্ব, পুনাতন নিয়মের পরিচর্যা
শমরীয় = দেখাশুনাকারী, তাই তা খ্রীষ্টকে বুঝায়
আঘাত বেঁধে দিল = পাপের বন্ধনে বেধে রাখলেন
তেল = যে আশা সান্ত্বনা দেয়
আংগুর-রস = মনে-প্রাণে ভাল কাজ করার জন্য উৎসাহ
তার নিজের গাধার উপর = যীশুর শরীর (যেহেতু যীশু মনুষ্যরূপে এসেছেন)
হোটেল = মণ্ডলী
পরের দিন = পুনরুত্থানের পরে
দু’টা দীনার = এই জীবনের এবং অনন্ত জীবনের আশা
হোটেলের মালিক = পৌল
- দৃষ্টান্তটি কি আসলে মণ্ডলী ও পৌলের ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার একটি পদ্ধতি?? এই ধরণের ব্যাখ্যা শুনে স্মরণ করেন যে আসলে যীশু এই দৃষ্টান্ত বলেন নি ‘পরিত্রাণের ইতিহাস’ দেখানোর জন্য বরং বুঝানোর জন্য যে প্রতিবেশী মানে আমাদের চারিদিকের লোক, যাদের আমাদের ভালবাসা উচিত।
লূক ১০:২৭-৩০ ‘সেই ধর্ম-শিক্ষক যীশুকে উত্তর দিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে; আর তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।” ২৮ যীশু তাঁকে বললেন, ‘আপনি ঠিক উত্তর দিয়েছেন। যদি আপনি তা করতে থাকেন তবে জীবন পাবেন।’ ২৯ সেই শিক্ষক নিজের সম্মান রক্ষা করবার জন্য যীশুকে বললেন, ;আমার প্রতিবেশী কে?’ ৩০ যীশু উত্তর দিলেন, ‘একজন লোক যিরূশালেম থেকে যিরীহো শহরে যাবার সময় ডাকাতদের হাতে পড়ল। তারা লোকটির কাপড় খুলে ফেলল এবং তাকে মেরে আধমরা করে রেখে গেল।’
বিভিন্ন ধরণের দৃষ্টান্ত লূকের সুসমাচারে
দৃষ্টান্ত বিভিন্ন ধরণের আছে। নীচে লূক সুসমাচারের সব দৃষ্টান্তগুলি ধরণ অনুসারে তালিকায় উঠানো হয়েছে। যে দৃষ্টান্তে একটি তারা * দেওয়া হয়েছে, তা হল এমন দৃষ্টান্ত যা কেবল মাত্র লূক সুসমাচারে পাওয়া যায়, অন্য সুসমাচারে উল্লিখিত নয়:
রাজ্য সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্ত: ‘ঈশ্বরের রাজ্য কিসের মত? কিসের সংগে আমি এর তুলনা করব?’
লূক ৮:৫-৮ চাষী বীজ বোনার দৃষ্টান্ত (লূক ৮:১০-১৫)
লূক ১৩:১৮-১৯ সর্ষে দানার দৃষ্টান্ত
লূক ১৩:২০-২১ খামির দৃষ্টান্ত
বড় দৃষ্টান্ত যাতে শ্রোতাদের চমকানো হয় বা চেতনা দেওয়া হয় (যীশু এগুলি বেশিরভাগ
ফরীশীদের বিরুদ্ধে বলেন)
লূক ৭:৪১-৪৩ * ঋণদাতা ও ঋনগ্রাহকদের দৃষ্টান্ত
লূক ১০:৩০-৩৭ * দয়ালু শমরীয়ের দৃষ্টান্ত
লূক ১৪:১৬-২৪ বিরাট ভোজের দৃষ্টান্ত
লূক ১৫:৪-৬ হারানো ভেড়ার দৃষ্টান্ত
লূক ১৫:৮-১০ * হারানো টাকার দৃষ্টান্ত
লূক ১৫:১১-৩২ * হারানো ছেলের দৃষ্টান্ত
লূক ১৮:১০-১৪ * ফরীশী ও কর-আদায়কারীর দৃষ্টান্ত
লূক ২০:৯-১৬ আংগুর-ক্ষেতএর চাষীরা
শিক্ষা দেওয়ার দৃষ্টান্ত যাতে একটি উপমা দিয়ে বুঝানো হয় (যীশু এগুলি বেশিরভাগ শিষ্যদের বলেন)
প্রার্থনা সম্বন্ধীয় লূক ১১:৫-৮ * মাঝরাতে বন্ধুর আগমন
লূক ১৮:২-৫ * বিধবা ও অন্যায্য বিচারকের দৃষ্টান্ত
ধন সম্বন্ধীয় লূক ১২:১৬-২১ মূর্খ ধনী লোকের দৃষ্টান্ত
লূক ১৬:১-৮ * অসৎ কর্মচারীর দৃষ্টান্ত
লূক ১৬:১৯-৩১ * লাসার ও একজন ধনীর দৃষ্টান্ত
বিচার সম্বন্ধীয় লূক ১২:৩৫-৪০ প্রস্তুত থাকা দাসদের দৃষ্টান্ত
লূক ১২:৪২-৪৮ বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী কর্মচারীর দৃষ্টান্ত
লূক ১৯:১২-২৭ * মনিব ও দাসদের দৃষ্টান্ত
লূক ২১:২৯-৩০ ডুমুর গাছ দেখে গরমকালের আসা
রূপক ভাষা দ্বারা ছবি দেখানোর দৃষ্টান্ত যাতে যীশুর শিক্ষার একটি উপমা দেখানো হয়
লূক ৫:৩৬ নতুন জামার টুকরা ছিঁড়ে পুরানো জামায় তালি দেওয়া
লূক ৫:৩৭-৩৮ টাটকা আংগুর-রস পুরানো চামড়ায়
লূক ৬:৪৭-৪৯ পাথর বা মাটির উপরে ঘর তৈরি
লূক ৮:১৬-১৭ পাত্র দিয়ে ঢাকা বাতি জ্বালানো
লূক ১১:৩৩ গোপন জায়গায় বা ঝুড়ির নীচে বাতি
লূক ১৩:৬-৯ * ফলহীন ডুমুরগাছ
লূক ১৪:৮-১০ * ভোজে সম্মানের জায়গায় বসা
লূক ১৪:২৮-৩৩ সব কিছু ছেড়ে আসা
লূক ১৭:৭-১০ * মনিব ও দাস
মার্ক সুসমাচারের দৃষ্টান্ত পাঠকদের অবস্থা মনে রেখে ব্যাখ্যা করা
- মার্ক তার সুসমাচার রোম শহরের মণ্ডলীর জন্য লিখেছিলেন যখন সম্রাট নীরো তাদের হিংস্রভাবে অত্যাচার করতেন (৬৪-৬৭ খ্রিঃ)। তাই মার্ক তার কষ্টভোগের মধ্যে পাঠকদের কয়েকটি বড় বিষয় জানাতে চান:
- যীশুর অদ্ভূত ক্ষমতা যাতে প্রমাণিত যে তিনি মশীহ … ‘তুমি কোনো মিথ্যা বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করছ না!’
- যীশুর ত্যাগ-স্বীকারের জীবন এবং মৃত্যু বিশেষভাবে প্রমাণ করে যে ‘যীশুই ভালবাসা’ … ‘ঈশ্বর তোমাদের ভালবাসেন’ যদিও তিনি তোমাদের এই মুহূর্তে রক্ষা করেন না!’
- শিষ্য হওয়া মানেই ত্যাগ-স্বীকার … ‘তুমি যীশুর মত হচ্ছ ও তার মত কষ্টভোগ করছ!’
- মার্ক তার সুসমাচারে যীশুর ক্ষমতায়, যীশুর ভালবাসায় ও তাঁর কষ্টভোগের উপরে গুরুত্ব দেন। তাই মার্ক যীশুর শিক্ষা বিস্তারিতভাবে দেন না এবং মাত্র অল্প কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেন। তিনি এমন দৃষ্টান্ত পছন্দ করেছেন যা তার অত্যাচারিত রোমীয় পাঠকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ:
চাষী বীজ বোনার দৃষ্টান্ত মার্ক ৪:১-৯, ১৩-২০
- কিছু বীজ পাথরের মধ্যে পড়ে, যখন অত্যাচার আসে, তা বাঁচে না > অত্যাচারে বিশ্বস্ত হওয়ার চ্যালেঞ্জ।
ঝুড়ি বা খাটের নীচে রাখা বাতির দৃষ্টান্ত মার্ক ৪:২১-২৫
- বিশ্বাসীদের সম্রাট নীরোর ভোজে বা ষ্টেডিয়ামে মশালের মত পুড়ানো হত > তোমার মৃত্যু ও সাক্ষ্য সবাই দেখছে, রোমীয়রা তোমার বিশ্বস্ততা ও সাহস দেখে বুঝবে যে তুমি নির্দোষ।
সর্ষে দানা থেকে বড় গাছ উঠার দৃষ্টান্ত মার্ক ৪:৩০-৩২
- প্রত্যেক শহীদদের মৃত্যুবরণের গুরুত্ব আছে। ঈশ্বর তোমাদের জীবনের সাক্ষ্য এমন শক্তিশালীভাবে ব্যবহার করবে যাতে তোমরা কল্পনার চেয়েও ফলবান হবে।