শিক্ষা ০১ – স্বশিক্ষিত হওয়া
কেন মানুষকে বুঝার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? কেন আমরা কিছু জানতে পারি?
- ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁকে চিনি ও জানি …তাই তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন।
- ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁকে অন্বেষণ করি …তাই তিনি নিশ্চিত করেছেন যে আমরা তাকে খুঁজে পাই।
- ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর চিন্তা ও পথ বুঝি …তাই তিনি আমাদের কাছে বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন।
- এক হাজাররেরও বেশি পৃষ্ঠার বাইবেল প্রমাণ করে যে ঈশ্বর চান যেন আমরা জানি।
জ্ঞানের ঈশ্বর
- ঈশ্বর সত্য যিনি জ্ঞানের ঈশ্বর। ঈশ্বর হলেন বুঝাবার ক্ষমতার, স্বচ্ছতার ও পরিষ্কার যোগাযোগের ঈশ্বর।
- আমরা তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি:
- আমাদের মন জানতে ও আবিষ্কার করতে আগ্রহী (হিতো ২৫:১)
- আমাদের বলা হয়েছে ‘চাও, … খোঁজ কর, … দরজায় ঘা দেও, …’ (লূক ১১:৯-১০)
- ছেলেমেয়েদের মত কৌতুহলী মন হল একটি চমৎকার বিষয়
আপনি কি নতুন কিছু শিখতে বা আবিষ্কার করতে ভালবাসেন? আপনি কি সব বিষয় জানার জন্য আগ্রহী?
মৌলিক দার্শনিক প্রশ্ন
- আমরা কি জানতে পারি? – আমরা সত্য জানতে পারি যদিও কোন বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান নেই।
- আমরা কি কি জানতে সক্ষম? – তথ্য, অর্থ ও সত্য
- আমরা কিভাবে জানি?
- পাঁচটি ইন্দ্রিয় দ্বারা (দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ)
- মনে মনে চিন্তা, ব্যাখ্যা ও যুক্তি দ্বারা
- প্রকাশ দ্বারা
শেখার জন্য প্রয়োজনীয় মনোভাব
১ বংশা ২৮:৯-১০ দায়ূদ শলোমনকে বলেন: “তোমার অন্তর স্থির রেখে ও মনের ইচ্ছা দিয়ে তাঁর সেবা করবে, কারণ সদাপ্রভু প্রত্যেকটি অন্তর খুঁজে দেখেন এবং চিন্তার প্রত্যেকটি উদ্দেশ্য বোঝেন। তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইলে তুমি তা জানতে পারবে…এখন মনোযোগী হও…শক্তিশালী হও এবং কাজ কর।”
যোহন ৮:৩১-৩২ যীশু তার অনুসরণকারীদের বলেন: “আমার কথামত যদি আপনারা চলেন তবে সত্যিই আপনারা আমার শিষ্য…আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।”
দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩ “খিদেয় কষ্ট দিয়ে এবং যে মান্নার…খাইয়ে তিনি তোমাদের অহংকার ভেংগে দিয়েছেন। এতে তিনি তোমাদের এই শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখের প্রত্যেকটি কথাতেই বাঁচে।”
কার্যকরভাবে শেখার জন্য কি ধরণের মনোভাব আবশ্যক?
- আমার জ্ঞানের অভাব স্বীকার করার মত সেই নম্রতা।
- এমন একটি মনোভাব যা সর্বদা আগ্রহী ও নতুন চিন্তা বিবেচনা করতে রাজি।
- এমন একটি হৃদয় যা কথা মানতে, প্রয়োগ করতে ও বাধ্য হতে ইচ্ছুক।
- আগ্রহ, অন্বেষণ, ধৈর্য্য, লেগে থাকা… এবং শিশুর মত কৌতুহল মানসিকতা।
নিজেকে শেখানোর জন্য আদেশ – যিহোশূয় ১:৭-৮
“সব আইন-কানুন পালন করবার দিকে মন দেবে, তা থেকে একটুও এদিক ওদিক সরবে না… আইন-কানুনের এই বইয়ের মধ্যে যা লেখা আছে তা যেন সব সময় তোমার মুখে থাকে। এর মধ্যে যা লেখা আছে তা যাতে তুমি পালন করবার দিকে মন দিতে পার সেইজন্য দিনরাত তা নিয়ে তুমি গভীরভাবে চিন্তা করবে।”
- মনোযোগী হও > ঈশ্বরের আইন বা বাক্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ও তা পালন করার জন্য।
- নিজেকে শেখানোর আদেশ
- আমার এক নম্বর শিক্ষক হল আমি নিজেই
- অনিচ্ছুক মানুষকে শেখানো অসম্ভব
ঈশ্বর শিক্ষা দেন – দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১
“ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের যে সব নিয়ম ও আইন-কানুন শিক্ষা দিতে যাচ্ছি তা তোমরা এখন শোন। এগুলো তোমাদের মেনে চলতে হবে যাতে তোমরা বেঁচে থাক এবং…অধিকার করে নিতে পার।”
- একটি সত্যিকারের শেখার উদ্দেশ্য ‘জ্ঞান লাভ’ নয় বরং সত্যের প্রতি বাধ্যতা ও প্রয়োগ।
- সেই সত্যে যদি বাধ্য না হই তাহলে সত্যটি শিখলাম না এবং বাধ্য যদি না হই তবে সে সত্যে জীবন ও অধিকার পাব না।
- ঈশ্বর আমাদের আইন-কানুন দ্বারা শেখান: ‘যদি…তবে…’ তিনি শেখান কোন আচরণের কি ফলাফল।
- বাইবেলের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় ঈশ্বর আমাদেরকে আমাদের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব ও বাস্তব ফলাফল বুঝান।
স্মরণ কর! – দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৯
“যতদিন তোমরা বেঁচে থাকবে ততদিন তোমরা সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের উপর কড়া নজর রাখবে যাতে তোমরা চোখে যা দেখেছ তা ভুলে না যাও এবং তোমাদের অন্তর থেকে তা মুছে না যায়। এই সব তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের এবং তাদের পরে তাদের ছেলেমেয়েদের শিখাবে।”
- ইতিহাস স্মরণ কর! যা ঈশ্বর করেছেন তা মনে রেখ!
- যদি আমি নিজেকে স্বক্রিয়ভাবে মনে করিয়ে দিতে না থাকি তবে অবশ্যই ভুলে যাব।
- এই জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে হবে।
জাতিকে শেখানো – দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১০-১২
“প্রত্যেক সপ্তম বছরে…সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হবার জন্য তাঁর বেছে নেওয়া জায়গায় যাবে তখন তোমরা এই আইন-কানুন তাদের পড়ে শোনাবে। পুরুষ, স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে এবং…ভিন্ন জাতির লোকদের ডেকে তোমরা একসংগে জড়ো করবে, যাতে তারা তা শুনতে পারে এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে শেখে আর এই আইন-কানুনের সমস্ত কথা…পালন করে।”
দেশের আইন, জাতির মূল্যবোধ এবং যে নীতির উপর দেশটি স্থাপন করা হয়েছে, তা লোকদের রীতিমত শেখানো আবশ্যক।
শেখার অনুক্রম – ইষ্রা ৭:১০
“ইষ্রা সদাপ্রভুর আইন-কানুন পড়বার, তা পালন করবার এবং তার নিয়ম ও নির্দেশ ইস্রায়েল দেশে শিক্ষা দেবার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।”
- শেখা, পড়া … আগ্রহের সঙ্গে নিজেই অধ্যয়ন করা
- পালন করা … যা শিখি তা প্রয়োগ করা, কাজে লাগানো, তা মানা
- শিক্ষা দেওয়া … অন্যদের কাছে তা পৌছানো
বাইবেলীয় চিন্তা ও ইব্রীয় ভাষায়:
- জানা = চেনা = সম্পর্কে থাকা = ভালবাসা = করা।
- ‘জ্ঞান’ ও ‘ব্যবহারিক জীবনের’ মধ্য অমিল থাকা নিষেধ। ‘যা জানি’ যদি তা না করি তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘জানি না’।
আমার মন আমার দায়িত্ব – রোমীয় ১২:২
“এখানকার মন্দ জগতের চালচলনের মধ্যে তোমরা নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ো না, বরং ঈশ্বরকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন হয়ে ওঠো, যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে পার। ঈশ্বরের ইচ্ছা ভাল, সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং তাতে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন।”
আমার মন আমার অধীনে। নিজের মন পরিষ্কার রাখা হল আমার দায়িত্ব: মিথ্যা বা ভুল চিন্তা অগ্রাহ্য এবং সত্যকে গ্রহণ। প্রবাদ আছে: ‘মনে নোংরা প্রবেশ করালে নোংরাই বের হয়ে আসবে’ (garbage in, garbage out)। নিজের মনকে প্রতিনিয়ত সত্য খাওয়ানো নিজেরই দায়িত্ব।
সারাংশ
- ঈশ্বর এই মহাবিশ্বের প্রথম শিক্ষক। তিনি শেখাতে আগ্রহী। যীশুর অনুসরণকারী হওয়া মানেই শেখা।
- ইতিহাসে দেখা যায় যে যেখানেই সুসমাচার পৌঁছেছে সাথে সাথে সেখানেই স্কুল স্থাপিত হয়েছে।
- আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ঈশ্বর আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি শেখাতে আগ্রহী ও সমর্পিত।
- আমরা জানার জন্য ঈশ্বরের প্রকাশ, আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয় এবং মনের চিন্তা ও যুক্তি ব্যবহার করি।
- শুধুমাত্র যিনি একটি বিষয় ভালবাসেন ও বাস্তবে তা প্রয়োগ করেন তিনিই তা জানেন। মানে বলতে পারেন ‘আমি জানি’।
- যা না জানেন তা নিয়ে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করুন! আগ্রহী ও কৌতুহলী হন! শিখতে ভালবাসুন ও আনন্দ করুন!
উদাহরণ: প্রেরিত পিতর যিনি ছিলেন জেলে, হতে পারে সমান্য অক্ষর জ্ঞান ছিল। যীশুর অনুসরণকারী হওয়ার পর, আস্তে আস্তে তিনি এমন একজন নেতা ও লেখক হয়ে যান, যার দ্বারা নানা জাতি ও যুগ প্রভাবিত হতে থাকছে।