শিক্ষা ০২ – পরবর্তী প্রজন্মকে শেখানো

 
দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১-৩ একটি জাতিকে শেখানো

“তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য আমাকে আদেশ দিয়েছেন…তোমরা তা পালন করে চল। ২ এতে তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা ও তাদের বংশধরেরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করে তাঁর দেওয়া এই সব নিয়ম ও আদেশ সারা জীবন পালন করবে এবং তার ফলে অনেক দিন বেঁচে থাকবে…৩ যাতে দুধ আর মধুতে ভরা সেই দেশে যাবার পরে…তোমাদের মংগল হয় আর তোমরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠতে পার।”

  • একটি জাতি যদি ঈশ্বরের আদেশ জানে ও মানে তবে সেই জাতি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, লোকসংখ্যা বাড়বে ও দেশ স্থির থাকবে। পরবর্তী প্রজন্মকে জাতীয় মূল্যবোধ ও নীতিগুলো শেখানোর উপর দেশের দীর্ঘদিনের স্থিরতা নির্ভরশীল।
  • ঈশ্বর > মোশি > তুমি > তোমার ছেলেমেয়েরা > বংশধরেরা: এক প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দান
  • আমাদের পরের প্রজন্মগুলোকে মনে রেখে সক্রিয়ভাবে নিজের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া দরকার। সন্তানদেরকে শেখাতে হবে যেন তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়।
  • প্রায়ই দেখা যায় যে পরিবারগুলো ও মণ্ডলীগুলো তা করতে সক্ষম হয় না: শক্তিশালী লোকদের নাতি-নাতনী শক্তিশালী নাও হতে পারে। অধিকাংশ আত্মিক জাগরণ এক দুই প্রজন্ম পরে বন্ধ হয়ে যায়। সমাজকে সেবা করার চেয়ে ভাল জীবন কাটানো প্রাধান্য পায়।

 

বাবা-মায়ের কাছে দিক-নির্দেশনা

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৭ শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব

‘এই সব আদেশ…যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। ৭ তোমাদের ছেলেমেয়েদের তোমরা বার বার করে সেগুলো শিখাবে…এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’

  • দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬ পদে আদেশ দেওয়া হয় যেন বাবা-মারা নিজেই আদেশগুলো পালন করে। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদে বলা হয় যেন তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়। যদি আমি নিজেই মনে প্রাণে বাধ্য না হই তবে আমার শিক্ষা দেওয়ার কোনো অধিকার থাকবে না। যা নিজে করি না তা কাউকে শেখাতে পারব না।
  • সন্তানদের শেখানো, মূল্যবোধ বুঝানো, চরিত্র গঠন ও নৈতিকতা শেখানোর দায়িত্ব ঈশ্বর বাবা-মাকে দেন, মণ্ডলীকেও দেন না, সরকারকেও দেন না।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭-৯ কখন শিক্ষা? কিভাবে শিক্ষা?

“ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।”

  • কখন সন্তানদের শেখাব? দৈনন্দিন, ব্যবহারিক বিষয়ে, বাস্তব জীবনে যে পরিস্থিতি আসে বা যা ঘটনা ঘটবে, তা দ্বারা সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার আদেশ। যখন সাধারণ জীবনে বিষয়, প্রশ্ন বা সমস্যা উঠে তখনই সেগুলো ঈশ্বরের আইন, নীতি, চিন্তা ও হৃদয়ের আলোতে দেখা ও তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
  • এটিই হল সন্তানদের সাথে সারা দিন ধরে সম্পর্কে থাকা ও যোগাযোগে থাকার আদেশ।
  • এটিই হল বাস্তবতা, সমস্যা, কারণ, ফলাফল, মূল্যবোধ, নীতি ও সত্য নিয়ে কথা বলার আদেশ। এটিই হল একটি সব কিছু অন্তর্ভুক্তিকরণ শেখানোর পদ্ধতি যা সাধারণ জীবন দ্বারা সমর্থিত।
  • শেখার উদ্দেশ্য ‘মুখস্থ করা’ বা ‘অন্ধ বাধ্যতা’ নয় বরং যেন সন্তানেরা বাস্তব পৃথিবীতে ও বাস্তব চ্যালেঞ্জে পড়ে নিজেই বুঝতে পারে এই বিষয়ে ঈশ্বরের প্রযোজ্য নীতি বা প্রজ্ঞা কি?
  • “৮ তোমরা তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। ৯ তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে ও ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে।”
  • স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য দর্শনযোগ্য বস্তু, চিহ্ন, ছবি বা লেখা ব্যবহার করুন। শেখার জন্য একটি সাহায্যকারী পরিবেশ তৈরি করুন যাতে বার বার একটি বিষয় উঠে আসে, পুনরুক্তি করা হয়, সহজে মুখস্থ করা যায় ও স্মরণ হয়।
  • সন্তানদের শেখা হল সারা পরিবারের প্রচেষ্টা ও পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাতে সবাই অংশ গ্রহণ করে। সন্তানরা সমর্থন পায় এবং শেখার গুরুত্ব (ও তাদের গুরুত্ব) বুঝে।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮-২০ স্মরণ করার জন্য সাহায্যকারী জিনিসের ব্যবহার

“তোমাদের অন্তর ও মনে আমার এই কথাগুলো গেঁথে রাখবে, তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। ১৯ তোমাদের ছেলেমেয়েদের সেগুলো শিখাবে। ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। ২০ তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে এবং ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে।”

  • দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮ পদ আবারও দেখায়: নিজে পালন না করলে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার অধিকার নেই।
  • আবারও সে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ও সবাই অংশ গ্রহণ করার পদ্ধতি: সন্তানদের শেখানো হল পরিবার ও সমাজের দৈনন্দিন জীবনের একটি প্রকল্প।
  • আবারও: স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য দর্শনযোগ্য বস্তু, চিহ্ন, ছবি বা লেখা, সাহায্যকারী পরিবেশ, পুনরুক্তি ও পাঁচ ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার করা যেন সন্তানরা সহজে বুঝতে ও মনে রাখতে পারে।

 

বাইবেলের পর্বগুলো ও পর্বের গুরুত্ব

যাত্রা ১৩:১৪-১৬ উদ্ধার (নিস্তার) পর্ব এবং সমস্ত পর্ব
  • যখন ঈশ্বর শক্তিশালী হাত দিয়ে ইস্রায়েলকে মিসরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন তিনি একটি নতুন পর্ব ও কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি স্থাপন করেন যেন বছরের পর বছর এই ঘটনা স্মরণ করা হয়:
    ‘ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে, “সদাপ্রভু মিসরের গোলামীর হাত থেকে তাঁর শক্তি দেখিয়ে আমাদের বের করে এনেছিলেন…তখন সদাপ্রভু মিসর দেশের মানুষ ও পশুর প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে মেরে ফেলেছিলেন। সেইজন্য আমি …আমার প্রথম ছেলেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছি। ১৬ এটা এমন একটা চিহ্ন হবে যা…তোমাকে মনে করিয়ে দেবে।”
  • ঈশ্বর এভাবে কয়েকটি পর্ব স্থাপন করেন ও ইস্রায়েলকে তা বাৎসরিক ভাবে পালন করতে বলেন। ঈশ্বর পর্বগুলোর তারিখ এমনভাবে বসিয়ে দিয়েছেন যে ইস্রায়েলীয়রা বছরে ৩ বার তাম্বুতে একত্রিত হত। পর্বের বর্ণনা লেবীয় ২৩ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
  • এই পর্বগুলো তিন ধরণের:
    • এমন পর্ব যাতে ইতিহাসে ঈশ্বরের শক্তিশালী হাত স্মরণ করা হয় (যেমন উদ্ধার ও কুঁড়ে-ঘরের পর্ব)
    • এমন পর্ব যাতে রীতিমত ঘটনার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া হত (যেমন: প্রথম ফসল ও ফসলের পর্ব)
    • এমন পর্ব যাতে ঈশ্বরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য স্মরণ করা হয় (যেমন: প্রায়শ্চিত্ত দিন বা পাপ ঢাকা দেওয়ার দিন)
  • এই পর্বগুলো প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য অনেক মজা ও আনন্দপূর্ণ ছিল এবং ছোটদের জন্য আরো বেশি মজার ও আনন্দপূর্ণ ছিল। পর্বে অনেক কিছু ঘটত যেমন: ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে নাটক, বিশেষ গান বা গীত, ধর্মীয় রীতি, অনুষ্ঠান, খাবার, যিরূশালেমে যাত্রা, বড় সভা, তুরীধ্বনি, উৎসর্গ, পারিবারিক ভোজ ইত্যাদি।
  • পর্বগুলোতে পরিবারের সবাই একসাথে ছুটির দিন হিসেবে সময় কাটাত। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, অন্য ছেলে-মেয়েরা ও সব বয়সের লোকেরা একসাথে পর্বগুলো পালন করত।
  • ছেলে-মেয়েদের জন্য এই পর্বগুলো একটি বিশেষ সময় ছিল: মজা করার মত, আকর্ষণীয়, অংশ গ্রহণ করার মত, জাঁকজমক, সক্রিয়, উত্তেজনাপূর্ণ, আবেগময়, মনকে জাগানোর মত, উচ্ছ্বসিত, গুরুত্বপূর্ণ।
  • পর্বগুলোতে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ই যুক্ত ছিল: দেখা, শোনা, স্বাদ নেওয়া (যেমন বিশেষ খাবার), গন্ধ নেওয়া এবং অনেক কিছু যাতে অংশ গ্রহণ করতে হত। তাই এই পর্বগুলো বিশেষভাবে চঞ্চল ছেলে-মেয়েদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল যারা কিছু করার মধ্য দিয়ে শেখে।
  • তাই পর্বগুলো মজার, আকর্ষণীয়, উত্তেজনাপূর্ণ ছিল এবং ছেলে-মেয়েদের জন্য অংশ গ্রহণ করার মত একটি পরিবেশ সৃষ্টি করত, যেখানে তারা চিন্তা ও প্রশ্ন করতে পারত: “যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে…”
  • এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রকাশিত:
    • সন্তানের প্রশ্ন, চিন্তা, কৌতূহল ও প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা দেওয়া দরকার।
    • সন্তানের জানতে চাওয়ার গতি ও শেখার পদ্ধতি অনুসারে শিক্ষা দেওয়া দরকার।
    • শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শেখানো দরকার, শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত হয়ে শিক্ষা দেওয়া আরো অনেক কার্যকর।
  • এভাবে শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শেখানো বা পর্বগুলো যে পরিস্থিতি তৈরি করে তার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আছে: তা হল ভয়-মুক্ত বা তুলনা-মুক্ত পরিবেশ। আমাদের আধুনিক স্কুল বিপরীত: আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভয় ও তুলনা ব্যবহার করি যেন ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়।
  • উদাহরণ: রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক যিনি শ্রেণীকক্ষে এমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেন যে তিনি একটি প্রশ্ন করলে সবাই চুপ করে মাথা নিচু করে নিঃশ্বাস না ফেলে অপেক্ষা করত যতক্ষণ না সঠিক উত্তর দেওয়া হয়। (সাধারণত শিক্ষক নিজেই উত্তর দিতেন) আর তা সাথে সাথে লিখতে হত।
  • এই শ্রেণীকক্ষে কোনো ‘বৈজ্ঞানিক চিন্তা’ চলত না। ভয়ের ফলে যদি ব্যর্থ হওয়ার বা ভুল করার স্বাধীনতা না থাকে তবে নতুন কোনো চিন্তা বা আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান ঠিক তাই: বিভিন্ন চিন্তা বা প্রস্তাব দেওয়া, সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা ও যা দ্বারা কাজ হয় না তা বাদ দেওয়া। ভয় ও নিয়ন্ত্রণ হল বিজ্ঞানের বিরোধী।

 

যাত্রা ১২:৩-৮ উদ্ধার পর্বে উৎসর্গ করা ভেড়ার শিশু ৪ দিন পরিবারে রাখা

“এই মাসের দশ তারিখে প্রত্যেকটি পরিবারের কর্তা নিজের পরিবারের জন্য একটা করে ভেড়ার শিশু বেছে নেয়…৫ সেই শিশুটা হবে ছাগল বা ভেড়ার পাল থেকে বেছে নেওয়া একটা এক বছরের পুরুষ শিশু…৬ শিশুটা এই মাসের চৌদ্দ তারিখ পর্যন্ত রাখতে হবে। তারপর…প্রত্যেকটি পরিবার নিজের নিজের ভেড়ার শিশু কাটবে। ৭ তারপর…ঘরের দরজার চৌকাঠের দু’পাশে এবং উপরে কিছু রক্ত নিয়ে লাগিয়ে দেবে। ৮ সেই রাতেই তারা সেই মাংস আগুনে সেঁকে খামিহীন রুটি এবং তেতো শাকের সংগে খাবে।”

  • এই দিক-নির্দেশনা এমন যে একটি সুন্দর নিখুঁত ভেড়া বা ছাগলের শিশু ৪ দিন পরিবারের সাথে থাকবে। সংসারের ছেলে-মেয়েরা অবশ্যই ভেড়ার শিশুকে আদর করে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। যখন চতুর্থ দিনে ভেড়ার শিশুকে জবাই করা হয় ও রক্ত দরজায় লাগানো হয় ছেলেমেয়েদের জন্য সেটা একটি শক্তিশালী আবেগময় ঘটনা ও ছবি।
  • ছেলে-মেয়েদের জন্য তা একটি ভুলে না যাওয়ার মত নাটকীয় ও আবেগময় শেখার পদ্ধতি।
  • আবারও: শেখার পরিবেশ হল পরিবার নিজেই, ছেলে-মেয়েদের শেখার জন্য আলাদা করা হয় না যেমন আমরা আধুনিক স্কুলে করে থাকি।

 

যাত্রা ১৩:৮-১০ খামিহীন রুটির পর্ব

“সেই দিন তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ছেলেকে বলবে, ‘আমি যখন মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিলাম তখন সদাপ্রভু আমার জন্য যা করেছিলেন তা মনে করে আমি এটা করছি।’ ৯ এইভাবে তোমরা সদাপ্রভুর দেওয়া এই নির্দেশের কথা শিক্ষা দেবে। এই নিয়ম পালন এমন একটা চিহ্ন হবে যা হাত ও কপালের স্মরণ-চিহ্নের মত তোমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, সদাপ্রভু তাঁর শক্তি দেখিয়ে মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন। ১০ বছরের পর বছর ধরে নির্দিষ্ট সময়ে তোমরা এই নিয়ম পালন করবে।”

  • আবারও: একটি মজা ও ভক্তিপূর্ণ ভয় তৈরি করার পর্ব এবং ব্যক্তিগত সাক্ষ্য দ্বারা ইচ্ছাকৃত ও সক্রিয়ভাবে পরবর্তী প্রজন্মকে শেখানোর আদেশ।
 
দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১৮ ছেলে-মেয়েরা উৎসর্গ দানে ও মন্দিরে ভোজে উপস্থিত

“তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় তাঁর সামনে এগুলো তোমাদের খেতে হবে। তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা, তোমাদের দাস-দাসীরা এবং তোমাদের গ্রাম ও শহরের লেবীয়েরা তা খাবে এবং তোমাদের পরিশ্রমের ফল নিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে আনন্দ করবে।”

  • এখানে পর্বের একটি অংশ হিসাবে পরিবারের সবাই একসাথে মন্দিরে উৎসর্গ দেয় এবং এর পরে উৎসর্গের মাংস ভোজ হিসাবে খায়। গ্রামের লেবীয়রা সহ পরিবারের সবাই (বড় ও ছোট) আনন্দ সহকারে ভোজ খায়।

 

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২০-২৫ ইতিহাস এবং ‘কারণ > ফলাফল’ শেখানো

“ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই যে সব সাবধানের কথা, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের দিয়েছেন সেই সবের মানে কি?’ ২১ তখন তোমরা তাদের বলবে, ‘মিসর দেশে আমরা ফরৌণের দাস ছিলাম, কিন্তু সদাপ্রভু শক্তিশালী হাত ব্যবহার করে সেখান থেকে আমাদের বের করে এনেছেন। ২২ সদাপ্রভু আমাদের চোখের সামনে ফরৌণ ও তাঁর বাড়ীর সকলের উপর এবং মিসর দেশের উপর বড় বড় এবং ভয়ংকর চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। ২৩ কিন্তু সেখান থেকে তিনি আমাদের বের করে এনেছিলেন …”

  • আবারও: ঈশ্বর বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের শেখাতে আদেশ দেন:
    • ঈশ্বরের বাক্য থেকে (ঈশ্বর কি করেছিলেন)
    • জাতীয় ইতিহাস থেকে (স্মৃতিস্তম্ভ)
    • পরিবারের ব্যক্তিগত ইতিহাস থেকে (সাক্ষ্য)
  • শেখানোর উদ্দেশ্য হল: যেন তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা ও পথ বুঝে ও বাধ্য হয়।
  • যেন তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঈশ্বরের হাত ও পরিচালনা জানে এবং তাতে বাধ্য হয়ে তাদের আহবান পূর্ণ করে।
  • “২৪ আজকের মত যেন সব সময় আমাদের মংগল হয় আর আমরা বেঁচে থাকতে পারি সেইজন্য সদাপ্রভু আমাদের এই সব নিয়ম পালন করতে এবং আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে আদেশ দিয়েছেন। ২৫ আমরা যদি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তাঁর আদেশ মত এই আইন-কানুন মেনে চলবার দিকে মন দিই, তবে সেটাই হবে আমাদের পক্ষে তাঁর ইচ্ছামত চলা।”
  • সন্তানদের সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার আদেশ: ‘যদি…তবে…’, ‘কারণ > ফলাফল’:
    • যদি আমি ঈশ্বরকে ভালবাসি ও তাঁর প্রতি বাধ্য হই > তবে আশীর্বাদ ও জীবন।
    • যদি আমি অবাধ্য হই ও ঈশ্বরের পরিবর্তে দেবতার সেবা করি > তবে অভিশাপ ও মৃত্যু।
  • “সদাপ্রভুর সামনে” মানে আমি প্রথমত ঈশ্বরের সামনেই, শিক্ষকের সামনে নই, বাবা-মায়ের সামনেও নই, অন্যদের সামনেও নই।
  • ঈশ্বরকে ভয় করা মানেই বাধ্যতা। আমি বলতে পারি না: ‘ঈশ্বরকে ভয় করি কিন্তু তাঁকে মানব না।’

 

দ্বিতীয় বিবরণ ৮:২,৫,৬ ঈশ্বর ইস্রায়েলকে শিক্ষা দেন ও শাসন করেন যেমন বাবা সন্তানকে

“মনে করে দেখ, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই চল্লিশটা বছর কিভাবে মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে সারাটা পথ তোমাদের চালিয়ে এনেছেন। তোমাদের অহংকার ভেংগে দেবার জন্য এবং তোমাদের মনে কি আছে, অর্থাৎ তোমরা তাঁর আদেশ পালন করবে কি না, তা পরীক্ষায় ফেলে দেখাবার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন।…৫ এই কথা তোমাদের অন্তরে জেনে রেখো যে, বাবা যেমন ছেলেকে শাসন করেন ঠিক সেইভাবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের শাসন করেন। ৬ তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ পালন করবে…।”

  • “পরীক্ষায় ফেলে দেখাবার জন্য” এর মানে এই নয় যে তিনি জানেন না বরং তিনি তা করেন যেন আমরাই জানি আমাদের হৃদয়ে ঠিক কি আছে। কঠিন পরিস্থিতিতে আমার রাগ ও স্বার্থপরতা প্রকাশ পায়। যদি আমার দুর্বলতা ও অভাব প্রকাশ পায় তবে তা আমার জন্য ভাল।
  • একজন সন্তানের মনে কি আছে, তা আমরা কতদূর বুঝতে পারি? শুধুমাত্র তার আচরণ, কথা বা ভাব প্রকাশ দ্বারা যতটুকু প্রকাশ পায় ততটুকুই তার বিষয় আমরা বুঝতে পারি। একজনের মনের মধ্যে কি আছে তা আমরা জানি না, জোর করে তা জানার ক্ষমতা থাকলেও তা করা ঠিক না। চাপ দেবেন না, জোর করবেন না কিন্তু এমন একটি উৎসাহমূলক ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে সন্তানেরা স্বাধীনভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।

 

পরিবারে শিক্ষা
  • যিহূদী সংস্কৃতিতে প্রত্যেকটি সন্তান তার বাবার কাছ থেকে তার পেশা শিখে থাকে। একসাথে সারাদিন কাজ করে, অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিখে।
  • প্রথমত সন্তান বাবার কাজ দেখে > পরে তারা একসাথে করে > পরে সন্তান করে ও বাবা দেখে > শেষে সন্তান কাজটি একা করতে থাকে।
  • আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে ছেলে-মেয়েদের খুব অল্প বয়স থেকেই আমরা স্কুলে পাঠাই (এমন কি ৩ বছর বয়সেই) এবং তাদের সব ধরণের শেখা শ্রেণীকক্ষেই সীমাবদ্ধ।
  • উদাহরণ: সুইজারল্যান্ডে ছেলে-মেয়েরা সাত বছর বয়স থেকে স্কুলে যায়। অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না বরং বিভিন্ন কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানায় ব্যবহারিক পেশা
    শিখে। তারপরেও তারা অন্য দেশের তুলনায় শিক্ষিত কম না এবং দেশে অর্থনৈতিক সু-অবস্থা আছে।

 

শেখার জন্য প্রয়োজনীয় মনোভাব

হিতো ১:৮ “ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না।”

  • ঈশ্বর চান যেন এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রজ্ঞা ও বুঝার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়।
  • যদি আমি বাবা-মা, ইতিহাস, পূর্ববর্তী লেখা থেকে এবং অন্যদের থেকে কিছু শিখতে রাজি না থাকি, তবে আমি নিজেকে অনেক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে বঞ্চিত করি।
  • যদি আমি অহংকারী ও অতি স্বনির্ভরশীল হই তাহলে কম শিখব।

যিরমিয় ৬:১৬ “তোমরা রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখে পুরানো পথের কথা জিজ্ঞাসা কর; ভাল পথ কোথায় তা জিজ্ঞাসা করে সেই পথে চল। তাতে তোমরা নিজের নিজের অন্তরে বিশ্রাম পাবে।”

  • যা নতুন, যা বিশেষ, যা অন্যরা জানে না, যা আধুনিক, যা প্রগতিশীল, যা ‘কুল’ (cool), যা ফ্যাসন, যা ট্রেন্ডি (trendy), তার জন্য আগ্রহী হওয়ার চেয়ে যা সত্য, যা ভাল, যা ন্যায্য, তার জন্য আগ্রহী হন।

বিতীয় বিবরণ ৮:১২-১৮
“যদি তোমরা সতর্ক না থাক, তবে তোমরা যখন খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবে আর সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর…বাস করতে থাকবে, ১৩ যখন…গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে আর তোমাদের অনেক সোনা-রূপা হবে এবং তোমাদের সব কিছু বেড়ে যাবে… ১৪ তখন তোমরা অহংকারী হয়ে উঠবে এবং…ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমরা ভুলে যাবে। …১৭ তোমরা হয়তো কেউ মনে মনে বলতে পার, ‘আমার নিজের শক্তিতে, নিজের হাতে কাজ করে আমি এই সব ধন-সম্পত্তি করেছি। ১৮ কিন্তু তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা ভুলে যেয়ো না; তিনিই এই সব করবার ক্ষমতা তোমাদের দিয়েছেন।”

  • অহংকারের ফলে আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং ঈশ্বর আমাদের জন্য কি করেছেন তা ভুলে যাই। অহংকারের ফলে আমরা যা এক সময় জানতাম তাও ভুলে যাই। অহংকার অন্যদের অবদান, অংশগ্রহণ করাকে স্বীকার করে না ও মূল্য দেয় না। নিজেকেই একমাত্র উৎস মনে করে।