শিক্ষা ০৩ – বাইবেলীয় নীতি বনাম আধুনিক স্কুল

 

নির্দেশনা

  • কালো কালি = বাইবেল থেকে নীতিমালা (‘শিক্ষা ০২ পরবর্তী প্রজন্মকে শেখানো‘ দেখুন)।
  • লাল কালি = আধুনিক স্কুল পদ্ধতির সাথে তুলনা।
 

একটি জাতিকে শেখানো

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১-৩  “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যেন যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেখানে তোমরা তা পালন করে চল। এতে তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা ও তাদের বংশধরেরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করে তাঁর দেওয়া এই সব নিয়ম ও আদেশ সারা জীবন পালন করবে এবং তার ফলে অনেক দিন বেঁচে থাকবে। ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা আমার কথা শোন এবং সতর্ক হয়ে এই সব মেনে চল, যাতে দুধ আর মধুতে ভরা সেই দেশে যাবার পরে তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমাদের মংগল হয় আর তোমরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠতে পার। 

  • ছেলে-মেয়েদের জ্ঞান, মূল্যবোধ ও সঠিক মনোভাব শেখানোর জন্য ঈশ্বর পরিবারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরিবারে ভাল শিক্ষা ব্যবস্থা একটা জাতিকে শক্তিশালী, সংখ্যায় বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী করে।
  • বাইবেলীয় নীতি এবং আধুনিক স্কুল পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কি কি?
 

শিক্ষা কখন? শিক্ষা কিভাবে?

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৭  ‘ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’

  • দৈনিক, স্বাভাবিক জীবনে বাস্তব ও ব্যবহারিক শিক্ষা।

> আমরা আলাদাভাবে দেখি: বাড়ীতে বা পরিবারে নয় কিন্তু স্কুলে শেখানো হয়।

  • যখন কোনো বিষয়, প্রশ্ন বা সমস্যা উঠে আসে তখনই শেখানো।

> স্কুলে বিষয় বা সময় তালিকা অনুসারে শেখানো হয়, টুকরা করে, সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা একটা বিষয় শিখানো হয়, কোন কিছুর সাথে সম্পর্ক নেই, অন্য পাঠ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই, কাজে লাগানোর মত নয়।

  • সারা দিন ধরে বা দিনে যে কোনো সময়ে সত্য, নীতি, মূল্যবোধ বা কারণ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা।

> ছাত্র-ছাত্রীরা যা এখনও করে নি বা বুঝে নি স্কুলে শুধুমাত্র এমন প্রশ্নের ‘উত্তর’ দেওয়া হয়।

  • সব বিষয় সম্পর্ক রেখে শেখানো হয়, ব্যবহারিক জীবনে যা কাজে লাগে বা প্রয়োগ করা যায়

> স্কুলে যা শেখানো হয় সমস্যা সমাধানে বা ব্যবহারিক জীবনে কোনো প্রয়োগে আসে না, তাই ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়ের গুরুত্বও তেমন বুঝে না, শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করলে ও ভাল গ্রেড পেলেই হয়।

 

স্মরণ করার জন্য সাহায্যকারী জিনিসের ব্যবহার

দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৮-৯  ‘তোমরা তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে ও ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে।’

  • মনে রাখার জন্য দেখার মত কোনো কিছু, ছবি বা লেখার ব্যবহার।

> স্কুলে শিক্ষকের কথা শুনে শিখতে হয় (মাত্র ২০% শিক্ষার্থী  ‘audio learners’, শোনার মাধ্যমে সবচেয়ে ভালভাবে শেখে)।

  • শেখার জন্য সাহায্যকারী ও উৎসাহমূলক পরিবেশ।

> স্কুল যেভাবে চলে, তা শুধুমাত্র কিছু শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল।

> বেশি শিক্ষার্থী থাকার ফলে প্রশ্ন করা, নিজের চিন্তা প্রকাশ করা, চেষ্টা করে দেখা, নিজের মতামতের সাথে আর একজনের মতামত পরীক্ষা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

> সব শিক্ষার্থীদের একই গতিতে ও একই কৌশলে শিখতে বাধ্য করা হয়।

  • সন্তানকে শিখানোই হল পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

> পরিবার ‘স্কুলের অংশ’ হয়ে যায়: ‘পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা কর! বাড়ির কাজ কর!

  • সন্তানেরা বুঝে তাদের শেখা কত গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা তাতে সমর্থন পায়।

> আধুনিক স্কুলে অনেক বেশি জোড় করা হয় যেন উত্তর দেই, কিন্তু যেন প্রশ্ন করি কোনো জোড় নেই।

 

পর্বগুলি

যাত্রা ১৩:১২-১৪  তখন তোমরাও তোমাদের প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দিয়ে দেবে। পশুর প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ বাচ্চা সদাপ্রভুর। কিন্তু তোমরা গাধার প্রথম পুরুষ বাচ্চার বদলে একটা ভেড়ার বাচ্চা দিয়ে তা ছাড়িয়ে নেবে। যদি তা করা না যায় তবে তোমরা গাধার বাচ্চাটার ঘাড় ভেংগে দেবে। তোমরা তোমাদের প্রত্যেকটি প্রথম ছেলেকেও ছাড়িয়ে নেবে। “ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে, ‘সদাপ্রভু মিসরের গোলামীর হাত থেকে তাঁর শক্তি দেখিয়ে আমাদের বের করে এনেছিলেন।”

  • পর্বগুলির মধ্য দিয়ে মজার, আকর্ষণীয়, আবেগময়, অংশ গ্রহণ করার মত একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যাতে ছেলে-মেয়েরা নিজেরাও অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সাথে সাথে তাদের চিন্তার প্রকাশ ও প্রশ্নও করতে পারে।

> স্কুলে কৌতূহলী হওয়া, প্রশ্ন করা, নিজেই চিন্তা করা, নিজের চিন্তা প্রকাশ করা, নিজের প্রচেষ্টায় আগানোর কোনো উৎসাহ নেই।

> স্কুল বেশি মজার, আকর্ষণীয়ও, আবেগময়, অংশ গ্রহণ করার মত না, এমনকি প্রয়োগ বা ব্যবহারিক সমাধানে উৎসাহদানকারীও না।

 
প্রশ্ন করার উৎসাহ

যাত্রা ১৩:১৪  ‘ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে…।’

  • শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, প্রয়োজন, আগ্রহ, চিন্তা ও প্রস্তাব অনুসারে শেখানো।

> স্কুলে সব পাঠ্য বিষয় ও শিক্ষার তথ্য এবং শেখানোর পদ্ধতি আগে থেকে ঠিক করা আছে।

  • শিক্ষার্থীর শেখার গতি ও শেখার ধরণ বা পদ্ধতি অনুসারে  শিক্ষাদান।

> স্কুল সব শিক্ষার্থীদের একই গতিতে চলার জন্য জোড় করে।

> স্কুল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের ব্যক্তিত্ব, শেখার ধরণ ও পদ্ধতির জন্য কোনো ব্যবস্থা করে না।

  • শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দেওয়া হয়, শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ও প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা দেওয়া হয়।

> স্কুলে বেশির ভাগ শিক্ষক ও পাঠক্রমকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দেওয়া হয়।

 
ইতিহাস এবং কারণ-ফলাফল শেখানো – দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২০-২৫
  • ঈশ্বর বাবা-মাকে আদেশ দেন সন্তানদের শেখাতে: ঈশ্বরের বাক্য থেকে (ঈশ্বর কি করেছিলেন), জাতীয় ইতিহাস থেকে (স্মৃতিস্তম্ভ) এবং পরিবারের ব্যক্তিগত ইতিহাস থেকে  (সাক্ষ্য)।

> প্রথমত ঘটনা ও তারিখ নিয়ে ইতিহাস শিক্ষা। ঘটনার কারণ, অর্থ বা গুরুত্ব এবং ঘটনা নিয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টি তেমন শেখানো হয় না, এমন কি খ্রিষ্টান স্কুলেও না।

  • বাবা-মায়ের জীবন বা পরিবারের ইতিহাস থেকে সন্তানদের শেখানো দরকার যেন তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা ও পথ বুঝতে পারে এবং যেন তারা নিজের জীবনে ঈশ্বরের হাত বুঝে তাদের আহ্বান পূর্ণ করতে পারে।

> আমার জীবন, পরিবার বা আমার আহবানের সাথে স্কুলে শেখানো তথ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

> স্কুলে জ্ঞান বা মুখস্থ করা তথ্য নিয়ে দাবী করা হয় কিন্তু সমস্যা সমাধান, ব্যবহারিক দক্ষতা বা চরিত্র নিয়ে কোনো দাবী বা প্রশংসা নেই।

  • আইন এবং ইতিহাস থেকে সন্তানদের শিখানো অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘যদি…তবে…’ বা ‘কারণ > ফলাফল’ শেখাও।

> স্কুলে তথ্য বা জ্ঞান শেখানো হয়, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বা চরিত্রের উন্নয়নের উপরে গুরুত্ব কম।

> স্কুল তথ্য বা জ্ঞান দাবী করে, কিন্তু বুঝা বা প্রয়োগ করার ক্ষমতার উপরে গুরুত্ব কম।

> স্কুল মুখস্থ ও বুদ্ধিকে উৎসাহিত করে, কিন্তু চরিত্র বা ভাল মনোভাবের উপরে গুরুত্ব কম।

 

পরিবারে শিক্ষা

  • যিহূদী সংস্কৃতিতে প্রত্যেকটি সন্তান তার বাবা থেকে তার পেশা শেখে। সারা দিন ধরে, ব্যবহারিক ভাবে, নিজে কাজ করার মধ্যে দিয়ে, একসাথে বাস্তব কাজে ব্যস্ত থাকা দ্বারা জীবনকে সামলাতে শেখানো হয়।

> আধুনিক স্কুলে বাবা-মায়ের প্রভাব খুবই কম।

  • প্রথমত সন্তান বাবার কাজ দেখে > পরে তারা একসাথে করে > পরে সন্তান করে ও বাবা দেখে > শেষে সন্তান কাজটি একা করতে থাকে।

> এমন শিক্ষার্থী যাদের শেখার ধরণ বা পদ্ধতি হল kinesthetic (নিজে হাতে করার মাধ্যমে শেখা, আবিষ্কার বা ব্যবহারিক বুদ্ধি) তারা স্কুলে কোনো সুযোগ বা উৎসাহ পায় না।

 

সারাংশ

আধুনিক পদ্ধতি

আগের পদ্ধতি

ভয় দ্বারা শেখানোস্বাধীন অন্বেষণ, নিরাপদ পরিবেশ
মুখস্থ করা তথ্য বা জ্ঞানদক্ষতা, সমস্যা সমাধান বা ব্যবহারিক কাজ
মাথামাথা, হৃদয় ও হাত
ভাগ করা, টুকরা করাসব মিলিয়ে শেখানো, সব কিছুর কারণ ও সম্পর্ক আছে
শিক্ষক বা পাঠক্রম কেন্দ্রিকশিক্ষার্থী কেন্দ্রিক
  • আপনার পড়াশুনা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আর গর্ব করবেন না! ভুলে যাবেন না যে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আ্লবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein) স্কুলে পরীক্ষা পাশ করতে পারেন নি।
  • এই অধ্যয়নের প্রয়োগ কি? – আমাদের সম্পূর্ণ নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে ও আরো বাইবেলীয় নীতি অনুসারে শিক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে ঈশ্বরের পথ আরও অনেক কার্যকর ও ভাল।