সরকার ০২ – বিচার ব্যবস্থা

মানুষকে বিচার করার দায়িত্ব মানুষকে দেওয়া হয়েছে – আদি ৯:৬

‘ঈশ্বর মানুষকে তাঁর মত করেই সৃষ্টি করেছেন; সেইজন্য কোন মানুষকে যদি কেউ খুন করে তবে অন্য একজনকে সেই খুনীর প্রাণ নিতে হবে।’

  • ঈশ্বর সর্বজান্তা ও সম্পূর্ণ ন্যায়বান বলে আমরা চিন্তা করতে পারি যে ঈশ্বর দ্বারা খুনীর বিচার হলে সবচেয়ে ভাল। কিন্তু ঈশ্বর এই পদে বিচার করার দায়িত্ব পরিস্কারভাবে মানুষের হাতে দিয়েছেন।
  • এটা বাইবেলের সর্বপ্রথম কথা যে সরকারের প্রয়োজন ও ঈশ্বরের কাছ থেকে দেওয়া একটি বিষয়।
 
বিচারকদের কাছে ঈশ্বরের আদেশ – ২য় বিবরণ ১:১৬-১৮

‘এই সব বিচারকদের তখন আমি বলেছিলাম, ‘তোমরা ঝগড়া-বিবাদের সময়ে দু’পক্ষের কথা শুনে ন্যায়ভাবে বিচার করবে – সেই ঝগড়া ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্যেই হোক কিম্বা ইস্রায়েলীয় এবং ভিন্ন জাতির লোকদের মধ্যেই হোক। বিচারের ব্যাপারে তোমরা কারও পক্ষ নেবে না এবং বড়-ছোট সবার কথা শুনবে। বিচারের কাজটা আসলে ঈশ্বরের; তাই কোন মানুষকে তোমরা ভয় করবে না। যদি কোন বিচার তোমাদের কাছে শক্ত বলে মনে হয় তবে তোমরা তা আমার কাছে নিয়ে আসবে, আমি সেই বিচার করব।’ (২য় বিবরণ ১:১৬-১৭)

বিচারকদের কি কি করতে হবে?

  • দু’পক্ষের কথা শুনতে হবে… ন্যায়ভাবে বিচার করতে হবে। তা:
    • ইস্রায়েলীয় ভাই হোক বা ভিন্ন জাতির লোক হোক।
    • বড় হোক বা ছোট হোক।
  • ভিন্ন জাতির লোকেরা কিভাবে স্থানীয় লোকের চেয়ে দুর্বল? > হয়তো সে ভাষা তেমন জানে না, দেশের আইন বা বিচার পদ্ধতি তেমন জানে না, সরকারি অফিসারদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, তার পক্ষ্যে ‘ভয় দেখানো’ বা ‘চাপ প্রয়োগ’ করা সম্ভব নয় বা ‘অনেক সমর্থনকারী আনা’ কষ্টের হবে।
  • কারও পক্ষ নিও না।
  • কোন মানুষকে ভয় কোরো না, কোন মানুষের চাপ গ্রহণ কোরো না …কারণ বিচার কাজ হল ঈশ্বরেরই।
  • এটা বিচারককে চ্যালেঞ্জ করে যেন তিনি ঈশ্বরের উপর ভক্তিপূর্ণ ভয় রেখে বিচার করেন: বিচারক হিসাবে তিনি ঈশ্বরেরই প্রতিনিধি!
  • এটা বিচারককে উৎসাহ ও নিশ্চয়তা দেয় যে ঈশ্বর নি-জেই একজন ন্যায়বান বিচারকের সাথে দাঁড়ান।
  • যদি একটি মামলা কঠিন হয় বা রায় নিয়ে অমত থাকে তবে উচ্চ আদালতে আপীল করার অধিকার আছে।
  • বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার ৩টি স্তর: স্থানীয় আদালত, উঁচ্চ আদালত, সর্বোচ্চ আদালত।
 
আবারও: বিচারকদের কাছে ঈশ্বরের আদেশ – ২য় বিবরণ ১৬:১৮-২০

‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে সব গ্রাম ও শহর দিতে যাচ্ছেন তার প্রত্যেকটিতে প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য তোমরা বিচারক ও কর্মচারী নিযুক্ত করবে। তারা ন্যায়ভাবে লোকদের বিচার করবে। তোমরা অন্যায় বিচার করবে না কিম্বা কারও পক্ষ নেবে না। তোমরা ঘুষ নেবে না, কারণ ঘুষ জ্ঞানীদের চোখ অন্ধ করে দেয় এবং নির্দোষ লোকদের কথায় প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিচ্ছেন, তোমরা যাতে বেঁচে থেকে তা ভোগ-দখল করতে পার সেইজন্য তোমরা কেবল ন্যায়কেই মেনে চলবে।’ (২য় বিবরণ ১৬:১৮-২০)

  • ন্যায়ভাবে বিচার করবে।
  • অন্যায় বিচার করবে না।
  • কারও পক্ষ নেবে না।
  • ঘুষ নেবে না… কারণ ঘুষ জ্ঞানীদের চোখ অন্ধ করে দেয়: বিচারক তদন্তে প্রমাণ পেলেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করে > ফলে রায় উল্টে যায় > নির্দোষদের অধিকার অস্বীকার > অন্যায় বিচার বা অবিচার।
  • ঘুষ নেবে না… যেহেতু ধনীরা গরীবদের চেয়ে বেশী ঘুষ দিতে পারে, রায় ধনীদের পক্ষে যাবে।
  • তাই তালিকা আরো বিস্তার করা যায়: ন্যায় বিচার কোরো…
    • ইস্রায়েলীয় ভাই হোক বা ভিন্ন জাতির লোক হোক
    • বড় হোক বা ছোট হোক
    • ধনী হোক বা গরীব হোক
    • শক্তিশালী হোক বা দুর্বল হোক
 
কারও পক্ষ নেওয়া যাবে না, গরীবদের পক্ষও নেওয়া যাবে না – লোবীয় ১৯:১৫

‘অন্যায় বিচার করা চলবে না। বিচারে ছোট-বড় কারও পক্ষ নেওয়া চলবে না; তোমরা প্রত্যেকের প্রতি ন্যায়বিচার করবে।’ (লোবীয় ১৯:১৫)

  • গরীব, দুর্বল বা ছোটদেরও পক্ষ নেবে না… শুধুমাত্র ন্যায় বিচার যে যাই করুক না কেন।
 
ন্যায় বিচার দেশকে স্থিরতা এনে দেয় ২য় বিবরণ ১৬:২০

‘তোমরা যাতে বেঁচে থেকে তা ভোগ-দখল করতে পার সেইজন্য তোমরা কেবল ন্যায়কেই মেনে চলবে।’ (২য় বিবরণ ১৬:২০)

  • ন্যায় বিচার না থাকলে > দেশের আইন অমান্য করা হয় > উচ্ছৃঙ্খলা > নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায়, অস্থিরতা।
  • ন্যায় বিচার না থাকলে লোকেরা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। মাথা গরমের কারণে দ্রুত শাস্তি দেওয়া হলে নতুন অন্যায় সৃষ্টি হয় (কারণ সঠিক তদন্ত বা আপীল করার সময় থাকে না ও শাস্তির পরিমাপ ঠিক থাকে না)।
  • উদাহরণ: বাংলাদেশে রাস্তায় দূর্ঘটনা, মোবাইল চুরি, পদ্মা চরে চাঁদাবাজকে খুন করা।
  • উদাহরণ: আল্বেনিয়া দেশ, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে আঘাত-প্রতিশোধ চলচ্ছে, এমন কি খুন করতে করতে পরিবারে আর কোনো পুরুষই নেই।
 
চারকদের কিভাবে নিযুক্ত করা হয়? – ২য় বিবরণ ১:১৩, ১৬:১৮
  • ২য় বিবরণ ১:৯-১৫ পদে ছিল সরকারি নেতাদের নিযুক্ত করার নির্দেশনা, ১:১৬ পদে উল্লেখ আছে যে বিচারকদেরও এই পদ্ধতিতে নিযুক্ত করা হবে।
  • ২য় বিবরণ ১৬:১৮ পদে সরকারি কর্মচারী ও বিচারকদের নিযুক্ত করা একইসাথে উল্লেখ করে।
  • সুতরাং: সরকারি নেতাদের (কর্মচারী হোক বা বিচারক হোক) একই নীতি অনুসারে নিযুক্ত করা হয়।
 
কর্মচারী ও বিচারকদের সম্পর্ক ২য় বিবরণ ১৬:১৮, ১:১৬

‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে সব গ্রাম ও শহর দিতে যাচ্ছেন তার প্রত্যেকটিতে প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য তোমরা বিচারক ও কর্মচারী নিযুক্ত করবে। (২য় বিবরণ ১৬:১৮, ১:১৬)

  • পদটিতে পরিস্কারভাবে বুঝা যায় যে কর্মচারীরা ও বিচারকেরা একই দল নয়। পার্থক্য করা হচ্ছে কর্মচারীরা (শাসন ব্যবস্থা ‘executive’) ও বিচারকদের (বিচার ব্যবস্থা ‘judiciary’) মধ্যে।
  • কেন তা প্রয়োজন? দুইটি দল পরস্পর্কে দায়বদ্ধ রাখবে, তারা পরস্পরের ক্ষমতা সীমিত রাখবে। শাসন ব্যবস্থাকে (executive) অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়, যেহেতু পুলিশ ও সৈন্য তাদের অধীনে থাকে। এত ক্ষমতা পাওয়ার পরে তাদের আইনের অধীনে থাকতে বাধ্য করা যায় কিভাবে? > বিচারকদের দ্বারা। একটি স্বাধীন বা স্বনির্ভর বিচার ব্যবস্থা আবশ্যক।
  • সুতরাং: একটি দেশে শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা আলাদা করা আবশ্যক। তা না হলে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিশ্চিত।
  • বাংলাদেশ: সরকার বার বার প্রতিজ্ঞা দিলেন যে তারা শাসন ও বিচারব্যবস্থা আলাদা করবে। ১লা নভেম্বর ২০০৭ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
 
ক্ষমতার ভাগকরণ?
  • সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন ত্রিত্ব ঈশ্বর। ঈশ্বরের তিনজন ব্যক্তি – স্বর্গস্থ পিতা, যীশু ও পবিত্র আত্মা – তারা একইসাথে সর্বক্ষমতার অধিকারী।

‘সদাপ্রভুই আমাদের ন্যায়বিচারক ও আমাদের আইনদাতা; সদাপ্রভুই আমাদের রাজা, তিনি আমাদের রক্ষা করবেন।’ (যিশাইয় ৩৩:২২)

  • পদটিতে ঈশ্বর সম্পর্কে বর্ণনায় বুঝা যায় যে ক্ষমতার বিভিন্ন ভাগ আছে, ন্যায়বিচারক (বিচার ব্যবস্থা), আইনদাতা (আইন ব্যবস্থা) ও রাজা (শাসন ব্যবস্থা)।
  • বাইবেলে অধিকাংশ সময়ে দেখায় যে আত্মিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভাগ করা দরকার। আত্মিক নেতা (যেমন পুরোহিত, লেবীয়, নবী) ও রাজনৈতিক নেতা (যেমন রাজা, শাসনকর্তা, কর্মচারী) একই লোক নয়। একজনের উপর বেশী ক্ষমতা থাকলে দুর্নীতি নিশ্চিত।
  • লর্ড এ্যাক্টনের উদ্ধৃতি: “Power corrupts, absolute power corrupts absolutely.” বাংলায়: ‘ক্ষমতা মানে দুর্নীতি থাকার সম্ভাবনা বেশি, সর্বক্ষমতা মানে দুর্নীতি থাকার নিশ্চয়তা’
 
দুই ক্ষেত্রে ক্ষমতা না থাকুক

বাইবেলের উদাহরণ আছে যেখানে এক ক্ষেত্রের নেতা অন্য ক্ষেত্রে ভূমিকা নেন এবং ঈশ্বর তা বিচার করেন:

  • ১ শমূয়েল ১৩:৮-১৪ রাজা শৌল পুরোহিতদের মত উৎসর্গ করেন > শৌলের রাজত্ব স্থির থাকবে না।
  • ২ শমূয়েল ৬:১-১১ ও ১ বংশাবলি ১৫:১-১৫ রাজা দায়ূদ প্রথম বার সামরিক অভিযান চালিয়ে নিয়ম-সিন্দুক যিরূশালেমে আনতে চান > একজনের মৃত্যু হয়। ২য় বার ঠিকমত পুরোহিতদের দ্বারা আনেন।
  • ২ রাজাবলি ২৬:১৬-২০ রাজা উষিয় পুরোহিতদের মত তাম্বুতে ঢুকে ধূপ জ্বালান > সাথে সাথে তার কূষ্ঠরোগ হয়েছিল।
  • বাইবেলে এমনও উদাহরণ আছে যেখানে শুরুরদিকে একজন নেতার দুই ক্ষেত্রে ভূমিকা আছে কিন্তু পরে ভূমিকাগুলি ভাগ হয়:
  • যাত্রা ২৮:১ মোশি যদিও ইস্রায়েলের আত্মিক নেতা (ঈশ্বরের রব শোনেন, পরিচালনা দেন) মহাপুরোহিতের ভূমিকা বা দায়িত্ব তার কাছে দেওয়া হয় না।
  • নতুন রাজনৈতিক নেতা শৌলকে অভিষেক করার পরে শমূয়েল বিচারক হিসাবে আর কাজ করেন না বরং নবী বা আত্মিক নেতা হিসাবে তা করেন (১ শমূয়েল ১২ অধ্যায়ের পর থেকে)।