সরকার ০৪ – খুন কোরো না
দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭ “খুন কোরো না”
- ঈশ্বরের আদেশ কি? খুন কোরো না! খুন মানে: উদ্দেশ্যমূলক, ইচ্ছাকৃত, পূর্বপরিকল্পিত হত্যা।
- ঈশ্বর কেন এই আদেশ দিয়েছেন? খুন করা কেন নিষেধ?
- খুন জীবন ধ্বংস করে
- খুন হল অপরিবর্তনীয়, জীবন আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না
- ঈশ্বর হলেন জীবন দাতা ও তিনিই জীবন ফিরিয়ে নেন, তিনিই সকল জীবনের সত্যিকারের উৎস ও মালিক।
- আমরা জীবন তৈরি করতে পারি না > আমাদের তা ধ্বংস করার কোন অধিকার নেই।
- ঈশ্বর আমাদের জীবনকে অতুলনীয় মূল্যবান হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
খুন কিভাবে ধ্বংসাত্মক? কি ক্ষতি হয়?
- যে খুনের শিকার হয়: সে জীবন হারায় (সর্বোচ্চ ক্ষতি)
- যাকে খুন করা হয়, তার পরিবার?
- জীবন, সম্পর্ক, নেতৃত্ব, দান, দক্ষতা, যোগান, বিনিয়োগ, সমর্পন হারিয়ে ফেলে
- ঈশ্বর ও সমাজের জন্য: জীবন, সম্পর্ক, দান, দক্ষতা, আহ্বান, অবদান হারিয়ে ফেলে
- খুন দারিদ্রতা বা ক্ষতি বয়ে আনে। সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- খুন ভয় তৈরি করে, জীবনের মূল্য কমে যায়, নিরাপত্তার ভয়, চলাফেরা কমে যায়
- খুন হতাশা নিয়ে আসে, যা অপরিবর্তনীয়
- ভয়ের ফলে কি হয়?
- সবাই ‘পঙ্গুর মত’ হয়ে যায়, কিছু করতে আর সাহস পায় না, সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে।
- অন্য সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়।
- পড়াশুনা, সম্ভাবনা, সুযোগ, চলাফেরা, চাকরি, কাজ কমিয়ে দেয় এবং ফলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মানুষের সবচেয়ে ভিত্তিক অধিকার হল বেঁচে থাকার অধিকার। যদি এই অধিকার রক্ষা করা না হয়, তাহলে আর কোন অধিকারই রক্ষা করা যাবে না।

আশ্রয় শহর: অনিচ্ছাকৃত হত্যা – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:২-৭
“তার মধ্য থেকে আশ্রয়-শহর হিসাবে তিনটা শহর তোমরা আলাদা করে নেবে এবং সেখানে যাবার পথও তৈরী করে নেবে। তাহলে কেউ যদি কারও হাতে মারা পড়ে তবে যে মেরেছে সে তার কাছের আশ্রয়-শহরে পালিয়ে যেতে পারবে…“মনে কোন হিংসা না রেখে যদি কেউ হঠাৎ কাউকে মেরে ফেলে এবং নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তার কাছের আশ্রয়-শহরটিতে পালিয়ে যায় তবে তার সম্বন্ধে এই হল নিয়ম। তা না হলে রক্তের শোধ যার নেবার কথা সে রাগের বশে তাকে তাড়া করতে পারে আর আশ্রয়-শহর কাছে না হলে তাকে মেরে ফেলতে পারে, যদিও মনে হিংসা নিয়ে মেরে ফেলে নি বলে মৃত্যু তার পাওনা শাস্তি নয়।”
- কি আদেশ দেওয়া হয়েছে?
- আশ্রয় শহর বেছে নাও
- এলাকা ভাগ করে দাও যেন সব জায়গা থেকে সহজেই যাওয়া যায়
- আশ্রয় শহর কিসের জন্য দরকার?
- যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তাদের জন্য
- সঠিক বিচার ও বিচার প্রক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া ও নিশ্চিত করার জন্য
- ঈশ্বর আচরণের পিছনের উদ্দেশ্য বিবেচনা করেন
- খুন = ইচ্ছাকৃত, পূর্বপরিকল্পিত, উদ্দেশ্যমূলক
- নরহত্যা = অনিচ্ছাকৃত, দূর্ঘটনাবশতঃ, কারণ ছাড়া হত্যা
- উদ্দেশ্য বা মনোভাব আসল বিষয়
- ঈশ্বর কেন আশ্রয় শহরের আদেশ দিয়েছেন?
- সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে।
- নায্যতা রক্ষা করতে।
- সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়ার কারণে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া, এর প্রতিরোধ করতে।
- তীব্র হিংস্রতার প্রতিরোধ করতে > অসমাপ্ত পারিবারিক শত্রুতা (যেমন: আল্বেনিয়া দেশে)।
- প্রতিশোধমূলক হত্যা প্রতিরোধ করতে (প্রতিশোধমূলক হত্যা খুন হিসাবে দাঁড়ায়)।

- আশ্রয় শহরের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর কি বলছেন?
- হত্যার পিছনে মনোভাব বা উদ্দেশ্য।
- হত্যার অবশ্যই সঠিক তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার।
- নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া নিষেধ
- … কারণ এটাও ন্যায্য নয় (কোন তদন্ত বা বিচার নাই, শাস্তির ভুল পরিমাণ)।
- … কারণ এটা আরো নির্দোষী লোকদেরকে খুন করতে পরিচালনা দেবে।
খুন: ইচ্ছাকৃত হত্যা – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১১-১৩
“কিন্তু যদি কেউ হিংসা করে কাউকে মেরে ফেলবার জন্য ওৎ পেতে বসে থাকে এবং তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে আর তার পরে তার কাছের আশ্রয়-শহরটিতে পালিয়ে যায়, তবে তার শহরের বৃদ্ধ নেতারা লোক পাঠিয়ে সেই শহর থেকে তাকে ধরে আনবে এবং রক্তের শোধ যার নেবার কথা তার হাতে তাকে মেরে ফেলবার জন্য তুলে দেবে। তাকে তোমরা কোন দয়া দেখাবে না। তোমরা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে নির্দোষ লোকের রক্তপাতের দোষ মুছে ফেলবে। তাতে তোমাদের মংগল হবে।”
- এখন ঈশ্বর খুনের বিষয় কথা বলছেন। খুন মানে ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যমূলক হত্যা।
- আশ্রয় শহরের প্রাচীনরা প্রমাণিত দোষীকে অবশ্যই হস্তান্তর করবে।
- খুনের অবশ্যই তদন্ত, বিচার ও শাস্তি হতে হবে।
- দোষীকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে, নির্দোষীর রক্তপাতের অভিশাপ ধুয়ে যায়।
- ঈশ্বর কেন এই আদেশ দিয়েছেন? কি হবে যদি আমরা এটার বাধ্য না হই?
- যাকে খুন করা হয়েছে তার প্রতি অবিচার।
- যাকে খুন করা হয়েছে তার পরিবারের প্রতি অবিচার।
- অপরাধমূলক কাজ উৎসাহিত হবে, তার মানে জীবনের বেশি মূল্য থাকবে না।
- খুন করার উৎসাহ আরো বাড়বে।
- নির্দোষীর রক্তপাত দেশের উপরে অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসে।
- শাস্তি কি অর্জন করবে?
- নায্যতা নিয়ে আসবে।
- রক্তপাতের অপরাধ, অভিশাপ ধুয়ে যাবে।
- পরবর্তীতে অপরাধ নিরুৎসাহিত হবে।
- জীবন যে মূল্যবান, তা রক্ষা করা হবে।
- সমাজে মানুষের জীবনের স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা, মূল্য তুলে ধরা হবে।
সঠিক তদন্ত – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৫
“যদি কারও বিরুদ্ধে দোষ বা অন্যায় করবার নালিশ আনা হয়, তবে মাত্র একজন সাক্ষী দাঁড়ালে চলবে না; দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথা ছাড়া কোন বিষয় সত্যি বলে প্রমাণিত হতে পারবে না।”
- ভুল প্রমাণের উপর ভুল বিচার যেন না হয়, তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়?
- ঈশ্বর কি আদেশ দিয়েছেন? – কমপক্ষে ২ থেকে ৩ জন সাক্ষী লাগবে।
- ঈশ্বর কেন এই আদেশ দিয়েছেন? – ভাল তদন্ত নিশ্চিত করা > যেন সত্য জানা যায় > যেন ন্যায় বিচার হয়।
- তদন্ত করলে সত্য জেনে নেওয়া যায়।
- বাস্তব জগতে অপরাধ করলে তার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় (forensic evidence)।
আদালতে মিথ্যা সাক্ষী – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৬-১৯
“যদি কেউ ক্ষতি করবার মনোভাব নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কাজের নালিশ আনে, … বিচারকেরা ব্যাপারটা ভাল করে তদন্ত করে দেখবে। যদি সে তার ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার দরুন মিথ্যাবাদী বলে ধরা পড়ে, তবে সে তার ভাইয়ের প্রতি যা করতে চেয়েছিল তা-ই তার প্রতি করতে হবে।”
কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে না?
- মিথ্যা সাক্ষীর জন্য সাজা হল = অন্য ব্যক্তির প্রতি যে অপরাধের দোষ দিতে চেয়েছিল তাকে সেই শাস্তি দেওয়া হবে। খুনের বিষয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য মানে মৃত্যুদন্ড!
- যারা আদালতে দাঁড়ায় তাদের প্রতি ঈশ্বর একটি কঠিন সতর্কবাণী দিচ্ছেন !
- ‘কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না।’ দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২০
- যে কোন দ্বন্দের উভয় দিকই ঈশ্বর জানেন।
শাস্তির উদ্দেশ্য – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৯-২০
“তোমাদের মধ্য থেকে এই রকমের মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। এই কথা শুনে অন্য সব ইস্রায়েলীয়েরা ভয় পাবে এবং এই রকম অন্যায় আর কখনও তারা করবে না।”
সঠিক বিচার কেন প্রয়োজন?
- ধরা পড়ার ভয়ে লোকেরা অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত হবে।
- এটা সাধারণ লোকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
- অনেকে বলে: ‘মৃত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনা যায় না। এটার জন্য অন্যজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ায় আর কোন পার্থক্য তৈরি করবে না’। আমরা বুঝতে পারি কেন লোকেরা এই কথা বলে কিন্তু আসলেই কথাটি ঠিক নয়।
- ন্যায় বিচারের ফল হল শান্তি।
দয়া ছাড়া বিচার – দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:২১
“তোমরা তার প্রতি কোন দয়া দেখাবে না – প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত এবং পায়ের বদলে পা নেবে।”
- অপরাধের শাস্তি অবশ্যই থাকতে হবে।
- কিন্তু শাস্তি তীব্রতর নয় (যেমন ৭গুণ ফিরিয়ে দেওয়া)।
“সহানুভূতির ঈশ্বর কেন এখানে দয়া না দেখানোর আদেশ করেন? যীশু কি কিছুটা ভিন্ন শিক্ষা দেন না? তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো।” মথি ৫:৩৯, লুক ৬:২৯
- ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরীয় মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দেশে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থাও আবশ্যক।
- ঈশ্বর সরকারকে বলেন নায্যতা নিশ্চিত করতে।
- ঈশ্বর মন্ডলীকে বলেন দয়া দেখাতে।
- উভয়েই ঈশ্বর ও তাঁর চরিত্র প্রকাশ করে। উভয়ই দরকার।
- উদাহরণ: একটা ধর্ষণ। ধরুন ধর্ষণকারী অনুতপ্ত হয় ও বিশ্বাসী হয়ে যায়।
- উদাহরণ: টাম্মি ফে বেকার (Tammy Faye Baker) এর মৃত্যুদন্ড।
অজানা খুন – দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১-৯

কি করতে হবে যদি একটা খুন ঘটে কিন্তু কোন দোষীকে পাওয়া না যায়? – জটিল পদ্ধতি!
- প্রাচীন ও বিচারকেরা চারিপাশের শহরের দূরত্ব পরিমাপ করে, যে শহর ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি, তাদের খুনের দায়িত্ব নিতে হবে (আজকের দিনে: কোন থানার অধীনে লাশ পাওয়া গেছে)।
- শহরের প্রাচীনদের একটি বকনা বাছুর নিতে হবে, নদীর কাছাকাছি যাজকদের উপস্থিতিতে বাছুরটির ঘাড় ভাঙ্গবে।
- সকল প্রাচীনদের এর উপর হাত ধুতে হবে ও ঘোষনা করতে হবে: “এই রক্তপাত আমরা নিজেরা করি নি এবং হতেও দেখি নি। ৮ হে সদাপ্রভু, তোমার মুক্ত করা ইস্রায়েলীয়দের তুমি ক্ষমা কর। এই লোকটির রক্তপাতের জন্য তুমি তোমার লোকদের দায়ী কোরো না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:৭-৮)
- রাজনৈতিক নেতাদের অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। আত্মিক নেতাদের অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে হবে।
- শপথে তাদের ঘোষণা করতে হয় যে তারা নির্দোষ এবং এই বিষয়ে তারা কিছু জানে না। যদি তারা কিছু জানে > আদালতে অবশ্যই অভিযোগ করতে হবে।
- নির্দোষ রক্তপাত হলে হয় শাস্তি, না হয় এই পদ্ধতিতে প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। তা না হলে অভিশাপ ও দোষ থেকে যাবে।
এর মানে কি?
- খুনকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না এবং তা সুরাহা না করে রাখা যাবে না। নাহলে রক্তের অপরাধ দেশের উপরে পড়বে।
- রাজনৈতিক নেতাদের (যেহেতু নিরাপত্তা, আইনে চলা ও ন্যায় বিচার তাদেরই দায়িত্ব) একটা অজানা খুনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে।
- যদি একটা খুনের শাস্তি, সুরাহা, প্রায়শ্চিত্ত না করা হয় তবে এর অর্থ হল ‘জীবনের মূল্য কমিয়ে দেওয়া’।
- শাস্তি, সুরাহা, প্রায়শ্চিত্ত জীবনের অতুলনীয় মূল্য নিশ্চিত করে। তা নাহলে ‘জীবন খুবই সস্তা’ হয়ে যায়।
আদি ৪:১১ হেবলকে খুন করার পর কয়িনকে “জমির অভিশাপই তোমার উপর পড়ল।”
লেবীয় ১৮:২৪-২৫, ২৮ দেশের মধ্যে পাপ, অনায্যতা, রক্তের অপরাধ বেশি হলে জাতি বিধ্বস্ত হবে।