সরকার ১০ – সরকার বিষয় নিয়ে গীত-ধ্যান
গীত ১০১ একজন সরকারী ব্যক্তির ন্যায্য ভূমিকার উপর ধ্যান (দায়ূদের গীত)
আমি তোমার অটল ভালবাসা ও ন্যায়বিচারের গান গাইব;
হে সদাপ্রভু, আমি তোমার উদ্দেশে প্রশংসার গান গাইব।
২ নিখুঁত জীবন কাটাবার দিকে আমি মনোযোগ দেব; কবে তুমি আমার কাছে আসবে?
আমার নিজের ঘরে আমি খাঁটি অন্তরে থাকব।
৩ আমি খারাপ কোন কিছু আমার চোখের সামনে রাখব না।
বিপথে যাওয়া লোকদের কাজ আমি ঘৃণার চোখে দেখি; সেগুলো আমাকে আঁকড়ে ধরতে পারবে না।
৪ আমার অন্তরে আমি কুটিলতাকে স্থান দেব না;
মন্দতার সংগে আমার কোন যোগ থাকবে না।
৫ যারা গোপনে অন্যদের নিন্দা করে তাদের আমি শেষ করব;
যাদের চোখে গর্ব আর বুকে অহংকার রয়েছে তাদের আমি সহ্য করব না।
৬ দেশের বিশ্বস্ত লোকদের দিকে আমার নজর থাকবে যাতে তারা আমার সংগে বাস করতে পারে;
যাদের জীবন নিখুঁত তারাই আমার কাজ করবে।
৭ ছলনাকারীরা আমার বাড়ীতে বাস করতে পারবে না;
মিথ্যাবাদীরা আমার কাজে বহাল থাকতে পারবে না।
৮ রোজ সকালে দেশের দুষ্ট লোকদের আমি শেষ করব,
যাতে সদাপ্রভুর শহর থেকে প্রত্যেকটি অন্যায়কারীকে উপ্ড়ে ফেলা যায়।
- রাজা দায়ূদ এই গীতে তার ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করছেন: সরকারের প্রধান হিসাবে আমার কি করা উচিত?
- ১ ঈশ্বর যিনি ন্যায্য তাকে নিয়ে ধ্যান করা প্রয়োজন। সব কিছুর, এমন কি সরকারেরও ভিত্তি হল ঈশ্বরের চরিত্র। আমার কাজের বা পেশার ভূমিকা বুঝতে আমাকে ঈশ্বরের চরিত্র জানতে ও প্রদর্শন করতে হবে। সঠিক বিষয়ে প্রশংসা করা, গৌরব দেওয়া ও আকাঙ্খা করার মাধ্যমে আমি আমার চিন্তা ও মানসিকতা সঠিক দিকে ধাবিত করতে পারি।
- ২ বুঝার ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও তার অনুশীলন করা আপনা আপনি হয়ে যায় না। তা নিয়ে অধ্যয়ন করা, চেষ্টা করতে থাকা ও আকাঙ্খা থাকা দরকার। দায়ূদের কথায় প্রকাশিত বিষয়টি নিয়ে তিনি কত মনোযোগ ও গুরুত্ব দেন। প্রথমত আমার ব্যক্তিগত জীবনে, বাড়িতে, পরিবারে বিশ্বস্ত হওয়া দরকার। তারপর আমি তা কার্যক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারি। সরকারি কাজ মন্দ নয়, ন্যায্যতায় তা করা যায়। আমি কত দূরে আছি তা বুঝতে স্ব-উদ্যোগ, আত্ম-মূল্যায়ন ও নম্রতা দরকার।
- ৩ মনকে নিজের পরিচালনায় রাখা আবশ্যক: “আমি মনোযোগ দেব” “আমি…চোখের সামনে রাখব না।” আমাকে স্বক্রিয়ভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে ও বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। খারাপ কিছু নিয়ে নয় বরং ভাল কিছু নিয়ে ধ্যান করা। ফিলিপীয় ৪:৮ ‘শেষে বলি, ভাইয়েরা, যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য, সেই দিকে তোমরা মন দাও।’ আমাকে স্বক্রিয়ভাবে মন্দতার প্রত্যাখ্যান করতে হবে, মন্দ থেকে দূরে থাকতে হবে ও মন্দ কিছুর সাথে যুক্ত হওয়া অস্বীকার করতে হবে। তা শুধুমাত্র ভিতরের মনোভাব নয় কিন্তু একটি প্রকাশিত সমর্পণ হওয়া প্রয়োজন যেন আমি ভাল লোকদের আকর্ষণ করতে পারি এবং মন্দ লোকদের আমার কাছে আসতে নিরুৎসাহিত করতে পারি। আমি যার জন্য দাঁড়াচ্ছি তা জানানোর জন্য ইচ্ছুক থাকতে হবে।
- ৪ কুটিলতাকে প্রত্যাখ্যান করব, কোন মন্দতার বিষয় নিয়ে আগ্রহী হব না, মন্দ বিষয় নিয়ে ধ্যান করব না, মন্দ জানার চেষ্টাও করব না (আদি ৩)। সবকিছু অভিজ্ঞতা লাভ করার দরকার নেই। মন্দ কাজ করার মধ্য দিয়ে নয়, মন্দের সাথে খেলা করার মধ্য দিয়ে নয় বরং মন্দকে প্রতিরোধ ও ঘৃণা করার মাধ্যমে মন্দ সম্বন্ধে আরও ভাল জানতে পারি।
- ৫ আমি মন্দদের সহ্য করব না, বরং যারা অন্যদের নিন্দা করে, অসৎ, মিথ্যা দোষারোপকারী, ভুল দিকে প্রভাববিস্তারকারী, ক্ষমতার ভুল ব্যবহারকারী, গর্বিত বা অহংকারী তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব ও তাদের ধ্বংস করব। যারা অন্যদের প্রয়োজন ও অধিকার নীচু চোখে দেখে আমি তাদের সহ্য করব না। আমি কোন অলস, সমালোচনাকারী, ফন্দিবাজ, অমনোযোগী নেতৃস্থানীয় লোক তৈরি করব না, সুবিধা বা সমর্থনও দেব না। আমার ক্ষেত্রে এবং সহকর্মীদের ক্ষেত্রে অহংকার, স্বার্থপরতা ও সেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধি হতে দেব না। আমি আমার রাজত্বকে ধীরে ধীরে মন্দতার দিকে ধাবিত হতে দেব না; বিলাসিতা, ক্ষমতার খেলা, নিজের উন্নতি করা, দায়িত্বের অপব্যবহারের দিকে যেতে দেব না। আমি যা চাই, যা চাই না, তার পরিষ্কার বার্তা দেব যেন সবাই জানে। এইভাবে যারা ন্যায্য মনোভাবের লোক, তারা আমার চারপাশে আসবে।
- ৬ আমি বিশ্বস্ত, নির্দোষ, শান্তিপূর্ণ, নম্র ও সৎ লোকদের পক্ষে থাকব। আমি আমার চারপাশের সততায়পূর্ণ লোকদের আকর্ষণ ও সংগ্রহ করতে চাই। কাজ করতে ও বাস করতে তাদের বেছে নেব। তারা আমার সহকর্মী হবে ও তাদেরই উন্নতি হবে।
- ৭ অসততা, মিথ্যা, ফন্দিবাজি অথবা প্রতারণা আমি সহ্য করব না, অনুমতিও দেব না। আমি সত্য, বাস্তবতার প্রতি, যা শোনা দরকার তার প্রতি, যা দেখা দরকার তার প্রতি সমর্পিত হব। হ্যাঁ হ্যাঁ বলা এবং প্রশংসা গাওয়া লোকদের আমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে এবং আমার বোধশক্তি উল্টাতে সুযোগ দিব না। যারা সৎ এবং সত্য তথ্য দেয় (যারা মিষ্টি কথার পরিবর্তে কঠিন কথাও বলতে রাজী) এরকম লোক খোঁজ করব। আমি একটা পরিবেশ সৃষ্টি করব, যেখানে ভয় ছাড়াই কঠিন কিছু বলা যায়।
- ৮ সরকারের কাজ হল: দুষ্টদের ধ্বংস করা, অন্যায্যতার বিচার করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, যাতে সাধারণ লোকেরা শান্তিতে বাস করতে পারে। বিশেষ বিশেষ অভিযান নয় কিন্তু দৈনিক মন্দের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও মন্দ লোকদের বিচারে আনা দরকার। ‘বিশেষ কেস’ নয় বা ‘উদাহরণযোগ্য কঠোর শাস্তি’ও নয় বরং প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুহূর্তে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক। তা করলে সবাই বুঝবে যে আইনের বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে। আজকে আমরা কড়া ভাষা পছন্দ করি না, কিন্তু এই গীতে দেওয়া আছে (শেষ কর! উপড়ে ফেল!), কারণ অন্যায্যতা ধ্বংসাত্মক এবং তা থামানো আবশ্যক।
- প্রত্যেক পেশার ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা করুন: এই পেশার জন্য ঈশ্বরের হৃদয় কি? আমার কাজ বা পেশার প্রতি বাইবেলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কি?
গীত ১৫ একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায্য ভূমিকার উপর ধ্যান (দায়ূদের গীত)
- ১ গীতটি ঈশ্বরের চরিত্র নিয়ে একটি ধ্যান। তাছাড়া এটি একটি প্রজ্ঞার গীত, ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা দেওয়ার একটি গীত। এই গীতের কাঠামো: প্রশ্ন (১) > উত্তর (২-৫ক) > সারাংশ (৫খ)। দায়ূদ এই গীতে দেখান যে শুধুমাত্র যখন একজন তার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ন্যায় ব্যবহার করে তখন ঈশ্বরের উপস্থিতিতে আসে ও তাঁর সাথে বাস করার অধিকার আছে। ধর্ম ও দৈনন্দিন জীবন আলাদা করা যায় না। ধর্মভীরুতা (মন্দিরে যাওয়া, উৎসর্গ করা, পর্বে অংশ নেওয়া) তখনই একমাত্র গ্রহণযোগ্য যখন প্রত্যেকদিনের ব্যাপারে সততা থাকে। ঈশ্বরের পবিত্রতার সাথে অন্যায্যতা থাকতে পারে না। ঈশ্বরের চোখে ‘ধর্মের সাথে অন্যায্যতা যুক্ত করা’ হল একটা জঘন্য বিষয় (আমোষ ৫:২১-২৪)। এটা একটা অসঙ্গতি। ধার্মিকতা = যথার্থতা = ন্যায্যতা। ধার্মিকতা শুধুমাত্র একটা ‘ধর্মীয়’ শব্দ নয়।
- ২-৫ নির্দোষী হিসাবে চলা, যা সঠিক তাই করা, সত্য বলা, নিন্দা না করা, বন্ধুদের প্রতি মন্দ না করা, প্রতিবেশীর সম্মান নষ্ট না করা, মন্দদের অবজ্ঞা করা, ভালদের সম্মান করা, প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা, সুদ না নেওয়া, নির্দোষীদের বিরুদ্ধে ঘুষ না নেওয়া…এগুলো একচেটিয়া ভাবে টিক দেওয়ার বিষয় নয়, এটা হল সাধারণ আইন সংক্ষিপ্ত আকারে, যা সঠিক ও যা ন্যায্য। যদিও উপাদান ও ক্রম গুরুত্বপূর্ণ।
- ২ নির্দোষী হওয়া এটা কোন নিষ্ক্রিয়তার বিষয় নয় (‘আমি কিছুই ভুল করছি না’), এটা সক্রিয় হওয়া, একটা ভূমিকা বা দায়িত্ব পূর্ণ করা ও সেবা করা: ‘যা সঠিক তা কর!’। সত্য বলা মানে শুধু ‘মিথ্যা না বলার’ চেয়েও বেশি অর্থ প্রকাশ করে, এটার মানে প্রয়োজনমত সত্য বলা, যা সঠিক তার জন্য দাঁড়ানো, মিথ্যাকে দাঁড়াতে না দেওয়া, অন্যদের পক্ষে একটা স্বর হওয়া। হৃদয় থেকে সত্য বলা মানে খোলামেলা, ছেঁকে কথা না বলা, ভিতরের একটা সততা ও মনোভাব যা থেকে কথা বের হয়।
- ৩ কথার ক্ষেত্রে পাপ করার এখানে তিন প্রকার দেখানো হয়: নিন্দা রটানো (ইচ্ছাকৃতভাবে কোন লোককে আঘাত দেওয়ার জন্য), বন্ধুর বিরুদ্ধে কিছু করা (সমালোচনা, মিথ্যা রিপোর্ট, প্রতিরোধ না করা, ফন্দি করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা, প্রতারণা করা) এবং প্রতিবেশীর সম্মান নষ্ট করা (মন্দ বিষয় তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করা, তাড়াতাড়ি কারও পক্ষ নেওয়া, পক্ষপাতিত্ব, অন্য পক্ষের কথা না শোনা)।
- ৪ ‘ঘৃণার যোগ্য লোককে ত্যাগ করে চলে’। যারা মন্দতা ভালবাসে তাদের সম্পূর্ণ হৃদয় থেকে বা ভিতর থেকে অপছন্দ করা। গোপনে মনে মনে ঈর্ষা নয়, (‘আমি যদি এরকম করতে পারতাম বা আমার এরকম থাকত’) বরং সম্পূর্ণভাবে মন্দতাকে প্রত্যাখ্যান করা, ঈশ্বর যেভাবে এটাকে পাপ হিসাবে দেখেন সেইভাবে দেখা। ‘সদাপ্রভুর ভক্তদের সম্মান করেন’: ঈশ্বরীয় লোকদের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ থাকা, তাদের জনসম্মূখে সমর্থন করা, তাদের সত্যিকারভাবে সম্মান করা। তাদের দৃষ্টিকটু করুনা, ‘দয়া-মায়া’ বা তোষামোদ না করা।
- ৫ক ‘সুদ ছাড়াই টাকা ধার দেয়’। এটা কি গরীবের ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে মাত্র (গরীবদের থেকে সুদ নিয়ো না!)? বা সবার ক্ষেত্রে (কারও থেকে সুদ নেওয়া যাবে না)? ব্যবসায়ী এবং অন্যদের ঋণ দেওয়ার মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?)। যে ভাবে হোক, পরিষ্কার যে অভাবীদের কষ্ট থেকে যেন কেউ লাভ না করে। এইপদে অন্যায়ের বর্ণনা ‘কথা-ভিত্তি’ নয় (যেমন ৪ পদে) বরং এমনি অন্যায় লাভ, অন্যায্য ব্যবহার, আইন-ভাঙ্গা, ঘুষ নেওয়া দ্বারা নির্দোষদের বিরুদ্ধে অন্যায়, পদের বা ক্ষমতার ভুল ব্যবহার দ্বারা অন্যায় লাভ ইত্যাদি।
- ৫খ ‘যে এইভাবে চলে সে সব সময় স্থির থাকবে’। স্থায়িত্ব, সুরক্ষা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষার জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা, যারা এগুলো করে তাদের জন্য সম্মান আছে। এই প্রতিজ্ঞা অনন্তকালের জন্য একইভাবে বর্তমান সময়ের জন্যও: যারা এইভাবে চলে তারা স্থির থাকবে, তারা পরাজিত হবে না বরং তারা প্রমাণিত হবে।
- ২-৫ যে মন্দ কার্যক্রমগুলো দেখানো হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই সরকারি অফিসার করলে আরো ক্ষতিকারক, কিন্তু এই গীতে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার চেয়ে সাধারণ লোকদের চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে যেন তারা অন্যায় না করে। নির্দোষীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হতে পারে সরকারি ব্যক্তির পাপ, কিন্তু তা সরকারি ব্যক্তিই হতে হবে তা নয়, যেমন একজন স্বাক্ষী টাকা নিয়ে চুপ হয়ে গেল, একজন লোক ভুল নির্দেশনায় পরিচালনা দিল অথবা ভুল উপদেশ দিল।
১ হে সদাপ্রভু, তোমার আবাস-তাম্বুতে কে দাঁড়াবার যোগ্য?
তোমার পবিত্র পাহাড়ে কে বাস করার যোগ্য?
২ সে-ই যোগ্য, যে নিখুঁত জীবন কাটায়, ন্যায় কাজ করে,
সত্যে ভরা অন্তর থেকে কথা বলে,
৩ পরের নিন্দা করে না, সংগীর ক্ষতি করে না,
প্রতিবেশীর সম্মান নষ্ট করে না,
৪ ঘৃণার যোগ্য লোককে ত্যাগ করে চলে আর সদাপ্রভুর ভক্তদের সম্মান করে,
ক্ষতি হলেও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে,
৫ সুদ ছাড়াই টাকা ধার দেয়, আর ঘুষ খেয়ে নির্দোষীর ক্ষতি করে না।
যে এইভাবে চলে সে সব সময় স্থির থাকবে।
গীত ৮২ ঈশ্বর সরকারকে দায়বদ্ধ করেন (আসফের গীত)
১ ঈশ্বর তাঁর বিচার-সভার মধ্যে দাঁড়িয়েছেন;
তিনি শাসনকর্তাদের মাঝখানে থেকে তাদের বিচার করে আদেশ দিচ্ছেন:
২ “আর কতকাল তোমরা অন্যায়ের শাসন চালাবে? কতকাল দুষ্টদের পক্ষে থাকবে? [সেলা]
৩ তোমরা গরীব ও অনাথদের প্রতি ন্যায়বিচার কর,
দুঃখী ও অভাবীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা কর,
৪ গরীব ও কাংগালদের বাঁচাও; দুষ্টদের হাত থেকে তাদের রক্ষা কর।”
৫ শাসনকর্তাদের জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি বলে কিছু নেই, তারা অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে;
জগৎ-সংসারের সব ভিত্তি টলমল করছে।
৬ আমি বলেছিলাম, “তোমরা যেন ঈশ্বর, তোমরা সবাই মহান ঈশ্বরের সন্তান।
৭ কিন্তু তবুও তোমরা মানুষের মতই মরবে;
অন্যান্য শাসনকর্তাদের মতই তোমাদের পতন হবে।”
৮ হে ঈশ্বর, তুমি ওঠো, পৃথিবীর বিচার কর,
কারণ সমস্ত জাতিই তোমার অধিকারে আছে।
- ১ ঈশ্বর সমস্ত শাসনকর্তাদের বা সমস্ত সরকারকে দায়বদ্ধতায় ধরে রাখবেন। এই গীত ভালভাবে পড়ে বুঝা যায় এখানে ‘তোমরা যেন ঈশ্বর’ (ইব্রীয়তে বহুবচন; এর অন্য অনুবাদও সম্ভব যেমন: ‘দেবগণ’ বা ‘প্রভুগণ’) মানুষকে বুঝায়, বিশেষ করে যারা সরকারি কার্যক্রমে জড়িত। সীমা ছাড়া কোন কর্তৃত্ত্ব নয়, দায়বদ্ধতা ছাড়া কোন ক্ষমতা দেওয়া হয় নি।
- ২-৪ যে মানদন্ডে ঈশ্বর তাদের (সমস্ত জাতিদের, ৮ পদ) ধরে রাখবেন, হল ‘ভিত্তিক ন্যায্যতা’ বা ‘সাধারণ আইন’: দুর্বল বা অভাবীদের প্রতি ভুল ব্যবহার না করা, যারা ভঙ্গুর (এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে: ৩ গরীব, অনাথ, দুঃখী, অভাবী ও ৪ কাংগাল) তাদের অধিকার নষ্ট না করা । সরকারের প্রধান কাজ হল ন্যায় বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এখানে প্রধান অভিযোগ হল: অন্যায্য বিচার এবং পক্ষপাতিত্ব, যা সরকারের ভূমিকার স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ করে।
- ৫ ঈশ্বরের রায় হল: তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা অবুঝ, তারা অন্ধকারে চলে। এটা কোন অজুহাতের ব্যাখ্যা নয় (অজ্ঞতা এখানে ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতা বুঝায়), কিন্তু এটা সত্য রায়। এটার পরিণতি হল: সবার জন্য অন্ধকার এবং ভিত্তি টলমল করানো।
- ৬-৭ ঈশ্বরের দন্ডাদেশ: মৃত্যুদন্ড। যদিও আপনি ক্ষমতাশালী, আপনার বিচার হবে এবং তা এড়াতে পারবেন না। একজন ক্ষমতাশালী লোক যদি মনে করে সে এড়িয়ে যেতে পারে, তবে ইতিমধ্যে তার ভুল মনোভাব প্রকাশিত: সে নিজেকে আইনের উর্দ্ধে মনে করে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করতে স্বাভাবিক মনে করে।
- ৮ ঈশ্বরীয় লোকেরা তার কার্যে ঈশ্বরকে বিচারক হিসাবে স্বাগত জানায়, স্বীকার করে সকল জাতির উপরে ঈশ্বরের কর্তৃত্ত্বের বৈধতা, অন্যদের দায়বদ্ধ রাখতে তাঁর অধিকার আছে। এমন একটি পৃথিবীতে যেখানে মনে হয় ন্যায় বিচার আসে না, আসফ এই দর্শন-গীত দিয়ে আমাদের অদৃশ্য বাস্তবতা দেখান: ঈশ্বর বিচার করবেন।
গীত ৯৪ ন্যায়বিচারের জন্য ঈশ্বরকে নির্ভর করা (অজানা লেখকের গীত)
- যখন মনে হয় মন্দতা ক্ষমতায়, অন্যায্যতা জয় লাভ করছে এবং মন্দ লোকেরা উদ্ধত, আত্মপ্রত্যয়ী ও সক্রিয় তখন কি করব?
- > মনে রাখুন: ঈশ্বর তিনি দেখেন, তিনি জানেন, ঈশ্বর যিনি অন্যায্যতা ঘৃণা করেন তিনি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন – এখনও বিচার করেন, অবশেষেও অবশ্যই বিচার করবেন। ঈশ্বর ন্যায্যদের ত্যাগ করবেন না।
- যদিও এর বিপরীত মনে হচ্ছে – ধন্য যাদের ঈশ্বর শাসন করেন, যারা ঈশ্বরের শাসন গ্রহণ করে, ঈশ্বর তাঁর আইন থেকে যাদের শিক্ষা দেন, যাদের ঈশ্বর সাময়িক মুক্তি, নিশ্চয়তা, সান্ত্বনা, সুরক্ষা দেন ও নির্দোষ প্রমাণ করেন, তারা ধন্য।
- ‘কে আমার পক্ষ হয়ে দুষ্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে?…’এই জায়গায় মনে হচ্ছে ঈশ্বর সরাসরি আহবান করছেন। যদিও ঈশ্বর অবশেষে ন্যায্যতা স্থাপন করবেন, তবুও মানুষকে আহবান করেন, এখনই যেন ভাল লোক ও ভাল সরকার ন্যায্যতার পক্ষে দাঁড়ায়। দুষ্টদের উপর ন্যায় বিচার চাইলে, আমারও ন্যায় বিচারের প্রতি সমর্পন থাকা দরকার: ১২ ‘হে সদাপ্রভু, সেই লোক ধন্য যাকে তুমি শাসনে রাখ আর তোমার আইন-কানুন শিক্ষা দাও, … ১৫ বিচারের রায় আবার ন্যায়পূর্ণ হয়ে উঠবে; যাদের অন্তর খাঁটি তারা সবাই তা মেনে চলবে।’
- ঈশ্বর একজনের পক্ষে ও আরেক জনের বিপক্ষে হন, তা নয় বরং ঈশ্বর সব সময় ন্যায্যতার পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে, যে কেউ অন্যায় করুক না কেন।
১ হে সদাপ্রভু, অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকারী ঈশ্বর,
হে অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকারী ঈশ্বর, তোমার আলো প্রকাশিত হোক।
২ হে জগতের বিচারকর্তা, তুমি ওঠো; অহংকারীদের যা পাওনা তা তুমি তাদের দাও।
৩ আর কতকাল, হে সদাপ্রভু, আর কতকাল দুষ্ট লোকেরা আনন্দে মেতে থাকার সুযোগ পাবে?
৪ তাদের মুখ থেকে কেবল দেমাক-ভরা কথার স্রোত বের হয়ে আসে;
সেই অন্যায়কারীর দল বড়াই করে বেড়ায়।
৫ হে সদাপ্রভু, তারা তোমার লোকদের দলে-পিষে মারছে;
যারা তোমার নিজের সম্পত্তি তাদের উপর তারা জুলুম করছে।
৬ বিধবা আর বিদেশীদের তারা মেরে ফেলছে আর অনাথদের খুন করছে।
৭ তারা বলছে, “এদিকে সদাপ্রভুর চোখ নেই; যাকোবের ঈশ্বর খেয়াল করেন না।”
৮ অসাড় অন্তরের লোকেরা, তোমরা কান দাও; ওহে বিবেচনাহীন লোকেরা, কবে তোমাদের সুবুদ্ধি হবে?
৯ যিনি কান সৃষ্টি করেছেন তিনি কি শুনতে পান না? যিনি চোখ গড়েছেন তাঁর কি দেখার শক্তি নেই?
১০ যিনি সব জাতিকে শাসন করেন ও মানুষকে শিক্ষা দেন তিনি কি শাস্তি না দিয়ে থাকবেন?
১১ সদাপ্রভু মানুষের সব চিন্তা জানেন; তিনি জানেন যে, সে সবই নিষ্ফল।
১২ হে সদাপ্রভু, সেই লোক ধন্য যাকে তুমি শাসনে রাখ আর তোমার আইন-কানুন শিক্ষা দাও,
১৩ যাতে বিপদের দিনে সে সাহস পায়, যে পর্যন্ত না দুষ্ট লোকদের জন্য গর্ত তৈরী শেষ হয়।
১৪ সদাপ্রভু কখনও তাঁর লোকদের ত্যাগ করবেন না;
যারা তাঁর নিজের সম্পত্তি তাদের তিনি ফেলে দেবেন না।
১৫ বিচারের রায় আবার ন্যায়পূর্ণ হয়ে উঠবে; যাদের অন্তর খাঁটি তারা সবাই তা মেনে চলবে।
১৬ কে আমার পক্ষ হয়ে দুষ্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? আমার পক্ষ হয়ে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে?
১৭ যদি সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য না করতেন, তবে মৃত্যুর নীরবতায় চলে যেতে আমার দেরি হত না।
১৮ যখনই আমি ভাবি আমার পা পিছ্লে যাচ্ছে, তখনই হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা আমাকে ধরে রাখে।
১৯ আমার মনে যখন দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, তখন তোমার দেওয়া সান্ত্বনা আমার অন্তরকে আনন্দিত করে।
২০ মন্দ শাসনকর্তারা মন্দ কাজের জন্য আইন তৈরী করে; তোমার সংগে তাদের কি কোন সম্বন্ধ থাকতে পারে?
২১ তারা সৎ লোকের বিরুদ্ধে দল পাকায় আর নির্দোষকে মৃত্যুর শাস্তি দেবার জন্য দোষী বানায়।
২২ কিন্তু সদাপ্রভুই আমার দুর্গ; আমার ঈশ্বরই আমার আশ্রয়-পাহাড়।
২৩ তাদের অন্যায় তিনি তাদেরই মাথার উপর নিয়ে আসবেন,
তাদের দুষ্টতাতেই তিনি তাদের শেষ করে দেবেন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তা করবেন।
গীত ২১ একজন রাজার ঈশ্বরকে স্বীকার করা ও তাঁকে নির্ভর করা (দায়ূদের গীত)
হে সদাপ্রভু, তোমার শক্তি দেখে রাজা আনন্দিত হন;
তুমি তাঁকে জয় দান করলে তিনি কত খুশী হন।
২ তুমি তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ করেছ, তাঁর মুখের কথা অগ্রাহ্য কর নি। [সেলা]
৩ মংগলের অনেক আশীর্বাদ নিয়ে তুমি তাঁকে এগিয়ে আনতে গেছ, তাঁর মাথায় দিয়েছ খাঁটি সোনার মুকুট।
৪ তিনি তোমার কাছে জীবন চেয়েছিলেন, আর তুমি তাঁকে তা দিয়েছ; তুমি তাঁকে দিয়েছ অশেষ আয়ু।
৫ তোমার দেওয়া জয় তাঁর সম্মান বাড়িয়েছে; তুমি তাঁকে দিয়েছ গৌরব ও মহিমা।
৬ তুমি তাঁকে চিরস্থায়ী আশীর্বাদ করেছ; তোমার উপস্থিতির আনন্দে তাঁকে আনন্দিত করেছ।
৭ সদাপ্রভুর উপরেই রাজা নির্ভর করেন; মহান ঈশ্বরের অটল ভালবাসা তাঁকে স্থির রাখবে।
৮ তোমার হাতই তোমার সব শত্রুদের ধরবে; যারা তোমাকে ঘৃণা করে তোমার ডান হাত তাদের ধরবে।
৯ তোমার প্রকাশকালে তুমি তাদের করে তুলবে চুলার জ্বলন্ত কয়লার মত।
সদাপ্রভু ক্রোধে তাদের গিলে ফেলবেন, তাঁর আগুন তাদের পুড়িয়ে ফেলবে।
১০ পৃথিবীর বুক থেকে তাদের বংশধরদের তুমি ধ্বংস করে ফেলবে;
ধ্বংস করে দেবে তাদের বংশ মানুষের মধ্য থেকে।
১১ যদিও তারা তোমার বিরুদ্ধে দুষ্ট ষড়যন্ত্র আর কুমতলব করেছে,
তবুও তারা তাতে সফল হতে পারবে না;
১২ কারণ তুমি তাদের মুখ লক্ষ্য করে যখন তোমার ধনুকে টান দেবে,
তখন তাদের পালিয়ে যেতে তুমি বাধ্য করবে।
১৩ হে সদাপ্রভু, তোমার শক্তিতে তুমি প্রকাশিত হও; আমরা তোমার শক্তির প্রশংসা ও গান করব।
- দায়ূদ সম্পূর্ণভাবে, সমস্ত হৃদয় দিয়ে, উচ্ছ্বাসিত হয়ে ঈশ্বর কে হন ও ঈশ্বর তাকে কত কিছু দিয়েছেন, তা স্বীকার করেন: ১ শক্তি, জয় দান, ২ ইচ্ছা পূরণ অগ্রাহ্য কর নি, ৩ মংগলের অনেক আশীর্বাদ খাঁটি সোনার মুকুট, ৪ জীবন; অশেষ আয়ু। ৫ সম্মান, গৌরব ও মহিমা ৬ চিরস্থায়ী আশীর্বাদ, উপস্থিতি ৭ অটল ভালবাসা, স্থিরতা ৮-১২ শত্রু থেকে সুরক্ষা ও তাদের উপর বিজয়।
- দায়ূদ কোনো মেধার দাবী করেন না, কোনো পরিচয় তুলে ধরেন না, নিজের ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেন না। চাপা ভাব নেই, কোনো ধারণ নেই, কোনো জমা রাখা ভাব নেই, ‘বাধ্যবাধকতা’ এরকম অনুভূতি নেই: তিনি সম্পূর্ণ হৃদয়ে, ইচ্ছুকভাবে প্রশংসা করেন। কোনো অহংকার নেই, কোনো লজ্জ্বা নেই, মেপে কথা বলা নেই, ভান বা গোপন করার কিছু নেই … তার কথা সরাসরি হৃদয় থেকে বের হয়ে আসে।
- আমাদের ক্ষমতার মহত্ব প্রদর্শনের থেকে কত পার্থক্য (আমরা কত নীরব ও মিতভাষী, সতর্কভাবে মেপে কথা বলা, নিজের সচেতনতা প্রদর্শন করি)। দায়ূদের মর্যাদা রক্ষা করার ভাব নেই, লজ্জা লুকানোর ভাব নেই, তার প্রমাণ করার কিছু নেই বা তার রাজপদ ধরে রাখার কোনো ভাব নেই। তিনি যা হন বা যা নন তা নিয়ে তার আশ্বাস ও আহবানেই তার নিশ্চয়তা আছে; অর্পিত অধিকার তিনি বুঝতেন ও তা রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতেন, তা সবই এই গীতে প্রকাশিত। ঈশ্বর প্রদত্ত সত্যিকারের কর্তৃত্ত্ব দেখতে এরকম হবে।
গীত ২০ সদাপ্রভু তার রাজাকে জয় দিয়ে আশীর্বাদ করুন (দায়ূদের গীত)
- গীতটি দায়ূদ দিয়ে লিখিত, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে রাজার জন্য একটি প্রার্থনাও বটে। হতে পারে দায়ূদ লোকদের ঈশ্বরীয় প্রার্থনা দেখান: সরকারকে কিভাবে আশীর্বাদ করা যায় এবং রাজা হিসাবে তার কি করা দরকার, তা নিয়ে প্রার্থনা করতে শিখাচ্ছেন।
- গীত ২১ এর মত দায়ূদ মনে-প্রাণে ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি দেন, এখানে ধন্যবাদ গীত হিসাবে নয় কিন্তু বিনতি গীত হিসাবে: ‘ঈশ্বর, সমস্ত মঙ্গলের তুমিই উৎস, রাজার ও আমাদের যা মঙ্গল, তাই প্রদান কর!’
- ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস ও নির্ভরতার এটা একটা ইচ্ছাকৃত ঘোষণা, বিশেষ করে সামরিক বিজয়ের জন্য। আবারও ‘সাধারণ বুদ্ধির’ বিপরীতে এটা একটা ইচ্ছাকৃত ঘোষণা: রথ ও ঘোড়ার (সৈন্যের ক্ষমতা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক সরঞ্জাম) উপর নির্ভরতা নয়।
- যে মনোভাব প্রদর্শিত হয়েছে, একেবারে যিশাইয় যিহুদা জাতি ও এর রাজাদের কাছে যেরকম চেয়েছিলেন ঠিক সেই রকম: ঈশ্বরের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা, সতর্ক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক মিত্রতার উপর নির্ভরতা নয় (যিশা ৩০, ৭:৯ ইত্যাদি)
- যেহেতু রাজা দায়ূদ গীতটি নিজেই লিখেছেন: তিনি যুদ্ধে যাওয়ার আগে সামরিক ক্ষমতা দেখিয়ে সেনাদের উস্কানি করেন না (‘আমরা অনেক শক্তিশালী, আমরা পারবই!’) বরং নিজের দুর্বলতা ও নির্ভরতা স্বীকার করে তাদের ঈশ্বরের উপর আশা রাখতে বলেন। ঈশ্বরই সৈন্যের সাহস।
- হতে পারে গীতটি সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল ইস্রায়েল সৈন্যদের কুচকাওয়াজের পূর্বের প্রার্থনা হিসাবে।
১ তোমার দুঃখের দিনে সদাপ্রভু তোমার ডাকে সাড়া দিন; যাকোবের ঈশ্বর তোমাকে নিরাপদে রাখুন।
২ তাঁর পবিত্র জায়গা থেকে তিনি তোমাকে সাহায্য করুন আর সিয়োন পাহাড় থেকে তোমাকে শক্তি দিন।
৩ তোমার সমস্ত উৎসর্গের কথা তাঁর মনে থাকুক, তোমার পোড়ানো-উৎসর্গগুলো তিনি গ্রহণ করুন। [সেলা]
৪ তোমার মনের ইচ্ছা তিনি পূরণ করুন, তোমার সমস্ত পরিকল্পনা সফল করুন।
৫ তোমার জয়ে আমরা যেন আনন্দ করি আর আমাদের ঈশ্বরের নামে পতাকা উড়াই। সদাপ্রভু তোমার সমস্ত প্রার্থনা গ্রাহ্য করুন।
৬ এখন আমি জানি, সদাপ্রভু তাঁর অভিষেক করা লোককে রক্ষা করেন; তাঁর ডান হাতের রক্ষা করার মহাশক্তিতে তিনি পবিত্র স্বর্গ থেকে তাঁর অভিষেক করা লোকের ডাকে সাড়া দেন।
৭ অনেকে তাদের রথের বড়াই করে, অনেকে করে তাদের ঘোড়ার, কিন্তু আমরা করি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর।
৮ তারা নীচু হয়েছে, তারা পড়ে গেছে, কিন্তু আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি।
৯ হে সদাপ্রভু, রক্ষা কর; হে রাজা, আমাদের ডাকে সাড়া দাও।
গীত ৩৩:১২-২২ সরকার বা সামরিক বাহিনীর উপর মিথ্যা আশা নয় (অজানা লেখকের গীত)
১২ ধন্য সেই জাতি, যার ঈশ্বর সদাপ্রভু;
সেই লোকেরা ধন্য, যাদের তিনি নিজের সম্পত্তি হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
১৩ সদাপ্রভু স্বর্গ থেকে নীচে তাকিয়ে দেখেন আর সমস্ত মানুষকে লক্ষ্য করেন।
১৪ যারা পৃথিবীতে বাস করে তাঁর বাসস্থান থেকে তিনি তাদের খেয়াল করেন।
১৫ সকলের অন্তর তিনিই গড়েন; তারা যা কিছু করে তা তিনি বুঝতে পারেন।
১৬ বড় সৈন্যদল থাকলেও কোন রাজা তা দিয়ে রক্ষা পেতে পারে না;
মহাশক্তি দ্বারাও কোন বীর যোদ্ধা রক্ষা পেতে পারে না।
১৭ রক্ষা পাবার জন্য ঘোড়ার উপর নির্ভর করা মিথ্যা আশা;
মহাশক্তি থাকলেও ঘোড়া রক্ষা করতে পারে না।
১৮ কিন্তু সদাপ্রভুর প্রতি যাদের ভক্তিপূর্ণ ভয় আছে, যারা তাঁর অটল ভালবাসার উপর আশা রাখে,
তাদের উপর তাঁর নজর রয়েছে;
১৯ যাতে মৃত্যু থেকে তিনি তাদের রক্ষা করতে পারেন আর দুর্ভিক্ষের সময়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।
২০ আমরা সদাপ্রভুর জন্য অপেক্ষা করছি; তিনিই আমাদের সাহায্যকারী ও আমাদের ঢাল।
২১ হ্যাঁ, তাঁকেই ঘিরে রয়েছে আমাদের অন্তরের আনন্দ, কারণ আমরা তাঁর পবিত্রতার উপর নির্ভর করি।
২২ হে সদাপ্রভু, আমাদের উপরে তোমার ভালবাসা থাকুক,
কারণ আমরা তোমার উপরেই আমাদের আশা রেখেছি।
- ১২-১৫ সাধারণ লোক ও তাদের হৃদয়ের মনোভাবের প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টি: ইস্রায়েল একটা জাতি হিসাবে আশীর্বাদ প্রাপ্ত, ব্যক্তি হিসাবেও আশীর্বাদ প্রাপ্ত। প্রত্যেক জনের সিদ্ধান্ত, বাধ্যতা ও কাজ গুরুত্বপূর্ণ।
- ১৬ প্রেক্ষাপটে এটা মনে হচ্ছে: সাধারণ মানুষেরা তাদের নিরাপত্তার জন্য একজন রাজা, যোদ্ধা, ক্ষমতাশালী সামরিক শক্তি ও সৈন্যের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু গীতের লেখক তাদের (ও অবশ্যই রাজাকেও) তা না করতে উৎসাহিত করছেন। গীতটি ভুল জিনিসের উপর নির্ভর না করা বরং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা, তাঁর ইচ্ছার বাধ্য হওয়া ও তাদের আহবান পূর্ণ করার একটি আহবান। যিশাইয় ভাববাদীর মত বার্তা: রাজনৈতিক মিত্র ও মিথ্যা নিরাপত্তা নয় বরং অনুতাপ ও বাধ্যতা।
গীত ৭৫ ঈশ্বর অধার্মিকদের বিচার করবেন (আসফের গীত)
- ঈশ্বরের জন্য প্রশংসার গীত, যিনি আশ্চর্য কাজ করেন, যিনি সমানভাবে পৃথিবীর বিচার করেন ও স্থিরতা দান করেন, যিনি সরকার বসান ও সরিয়ে দেন।
- নিশ্চয়তা যে ন্যায্যতা অবশ্যই বিজয়ী হবে। নিরুপিত সময়ে তা হবে, যদিও আমরা যা মনে ও আশা করি তার চেয়ে দেরী হতে পারে – কিন্তু ন্যায্যতা আসবেই।
- সারা বাইবেলে যেমন এই গীতেও তেমন প্রকাশিত যে ইতিহাস, মানুষের ক্ষমতা, সরকার ও সম্রাটের উপরে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব।
- এই সত্য ধরে রেখে আমরা ঈশ্বরকে এখনই প্রশংসা করতে পারি, কষ্টে স্থির থাকতে পারি, ন্যায্যতা আসার নিশ্চয়তায় আইনের বাধ্য থাকতে পারি যদিও আমাদের চারপাশে মন্দ কাজ চলে। যেমন প্রকাশিত বাক্যও আমাদের উৎসাহিত করে।
১ হে ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই,
কারণ তুমি কাছেই আছ; লোকে তোমার আশ্চর্য কাজের কথা ঘোষণা করে।
২ তুমি বলে থাক, “ঠিক সময় আমিই বেছে নিই, আমিই ন্যায়বিচার করি।
৩ পৃথিবী ও তার মানব-সমাজের নিয়ম-শৃঙ্খলা যখন ভেংগে যায়,
তখন আমিই তার থামগুলো টিকিয়ে রাখি। [সেলা]
৪ “আমি অহংকারীদের বলি, ‘গর্ব কোরো না,’ আর দুষ্টদের বলি, ‘শিং উঁচু কোরো না।
৫ তোমাদের শিং উঁচুতে তুলো না আর ঘাড় বাঁকিয়ে কথা বোলো না।’ ”
৬ পূর্ব কি পশ্চিম কিম্বা মরু-এলাকা থেকে কেউ রক্ষা করতে আসে না;
৭ কিন্তু ঈশ্বরই বিচার করেন; তিনি একজনকে নীচে নামান ও আর একজনকে উপরে তোলেন।
৮ সদাপ্রভুর হাতে একটা পেয়ালা আছে, তাতে ফেনিয়ে ওঠা মশলা মিশানো আংগুর-রস রয়েছে। তিনি সেই পেয়ালা থেকে ঢেলে দেন; পৃথিবীর সব দুষ্ট লোককে তার তলানি পর্যন্ত খেতেই হবে।
৯ কিন্তু আমি চিরদিন ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রচার করব আর যাকোবের ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসা-গান করব।
১০ আমি দুষ্টদের সমস্ত শিং কেটে ফেলে দেব, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের শিং উঁচুতে তোলা হবে।
গীত ১২৫ ন্যায্যতার দেশ ঈশ্বর সুরক্ষা দিবেন (অজানা লেখকের গীত)
১ যারা সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে তারা সিয়োন পাহাড়ের মত অটল ও চিরকাল স্থায়ী।
২ যিরূশালেমের চারপাশ যেমন পাহাড়ে ঘেরা তেমনি করে সদাপ্রভু তাঁর লোকদের ঘিরে রাখেন,
এখন রাখছেন এবং চিরকাল রাখবেন।
৩ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা যাতে অন্যায় কাজে হাত না দেয়
সেজন্য ঈশ্বরের দেওয়া তাদের দেশের উপর দুষ্টদের রাজত্ব করতে দেওয়া হবে না।
৪ হে সদাপ্রভু, যারা ভাল এবং অন্তরে খাঁটি তাদের তুমি মংগল কর;
৫ কিন্তু যারা নিজের তৈরী বাঁকা পথে উছোট খেতে খেতে চলে
সদাপ্রভু অন্যায়কারীদের সংগে তাদের দূর করে দেবেন। ইস্রায়েলীয়দের উপর শান্তি আসুক!
- ১-৩ সমান্তরাল বাক্যগুলি খেয়াল করুন: অবশেষে ভক্তদের বিজয় হবে, ঈশ্বর বিহীনতা জয়ী হবে না। ঈশ্বর অনন্তকাল পর্যন্ত স্থির আছেন > তাই ধার্মিকেরা যারা ঈশ্বর ও সিয়োনের উপর নির্ভর করে, তারাও স্থির থাকবে। ঈশ্বর অনন্তকাল পর্যন্ত স্থির আছেন > তাই দুষ্টতা, অধার্মিকতার অর্জন, দখল করা বা চুরি করা সবই সরানো হবে। ঈশ্বর নিজেই এর নিশ্চয়তা দেন, তার উপর সমস্ত কিছু নির্ভর করছে।
- ৩ ঈশ্বর ধার্মিকদের জমি-জমার সুরক্ষা দিবেন, যাতে তারা ভুল করার জন্য প্রলোভিত না হয়। বাংলাদেশে বাস্তবতা হল যে প্রতিদিন জমি দখল ও চুরি হয়। ফলে রাগ, তিক্ততা, প্রতিশোধ, নিজেও অধার্মিক কাজ করা লোকদের জন্য বড় প্রলোভন।
- ৪ আশীর্বাদ করার জন্য, ভাল করার জন্য ও ভাল লোকদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ঈশ্বরের কাছে সাধারণ অনুরোধ। কারণ যদি তা না হয়, সেখানে আরও কষ্টভোগ ও মন্দ কাজ করার অনেক প্রলোভন থাকবে। ‘আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না, বরং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা কর’ (মথি ৬:১৩, লুক ১১:৪)।
- ৫ একটা নিশ্চয়তা যে, শেষে ঈশ্বরের ন্যায্যতা জয়ী হবে যদিও তা প্রত্যেক মূহুর্তে বা শেষ বিচারের আগে হয় না। গীত হল শান্তির আশীর্বাদ যাচ্ঞার গীত। শান্তি ঠিক এই: মন্দদের থামানো ও ভালদের বিরুদ্ধে মন্দ কাজ ও অন্যায় বন্ধ, এমন যে ভালদের হতাশার ও প্রতিশোধের প্রলোভনে আর পরতে হয় না। ‘এইভাবে রাজাদের জন্য আর যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে এবং সৎ ভাবে চলে আমরা স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি’ (১ তীমথিয় ২:২)।