সরকার ১৩ – ইষ্কারিয়োৎ যিহূদা
যিহূদার বিষয়ে অধ্যায়নটি কেন হল
মথি লিখিত সুসমাচার পড়লে যীশুর ক্ষ্টভোগের বর্ণনায় এই পদটি উল্লেখ আছে: ‘যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা যখন দেখল যীশুকে বিচারে দোষী বলে ঠিক করা হয়েছে তখন তার মনে খুব দুঃখ হল। সে প্রধান পুরোহিতদের ও বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেই ত্রিশটা রূপার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “আমি নির্দোষীকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দিয়ে পাপ করেছি।” (মথি ২৭:৩-৪)। সাধারণ অনুবাদে ‘দুঃখ হল’ দেওয়া হয়েছে, ক্যারীতে ‘অনুশোচনা ‘, অন্য অনুবাদে ‘মন ফিরাল’ বা ‘অনুতপ্ত হল’। যিহূদা কি মন ফিরাল? যদি মন ফিরাল তবে ঈশ্বর তো তাকে ক্ষমা করবে। মন ফিরানো এবং বিশ্বাস করা হল পরিত্রাণের জন্য একমাত্র শর্ত। যদি সে ক্ষমা পেল কেন আত্মহত্যা করল? আসলে, যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করার পরে যা করল তা হল দ্বিতীয় বিবরণ ১৯ অধ্যায়ে দেওয়া আইনগুলি অনুসারে কাজ। প্রচারে যদি যিহূদার কথা উঠে আসে তবে তা সাধারণত হল যিহূদার অনন্তকালীন নরকভোগের নিশ্চয়তা নিয়ে। কিন্তু তাহলে ‘মন ফিরাল’ বা ‘অনুতপ্ত হল’ মানে কি? আর একটি প্রশ্ন: লেখা আছে ‘যখন দেখল যীশুকে বিচারে দোষী বলে ঠিক করা হয়েছে’। যখনই যিহূদা দেখল যে মৃত্যুদন্ড এগিয়ে যাচ্ছিল সে মন ফিরাল। কেন? তা কি তার উদ্দেশ্য ছিল না? তবে তার উদ্দেশ্য কি ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে এই বাইবেল অধ্যয়ন:
‘মনে খুব দুঃখ হল’, ‘অনুশোচনা’, ‘মন ফিরাল’, ‘অনুতপ্ত হল’ – তার গ্রীক শব্দ নিয়ে অধ্যয়ন
মথি ২৭:৩ পদে গ্রীক ভাষায় কি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে? যদি তার অনুবাদ ‘মন ফিরাল’ বা ‘অনুতপ্ত হল’ হতে পারে, শব্দটি কি সে একই শব্দ যা সাধারণত ব্যবহৃত যখন সুসমাচাগুলিতে অনুতাপ, বিশ্বাস ও পরিত্রাণের বিষয় উল্লেখ?
সুসমাচারগুলিতে অনুতাপের জন্য দুইটি গ্রীক শব্দ ব্যবহৃত: একটি শব্দ হল G3340 μετανοέω metanoeō (নতুন নিয়মে ৩৪ বার ব্যবহৃত) যার অর্থ হল: মন পরিবর্তন, পরে ভিন্ন চিন্তা করা, অনুতাপ, আবার বিবেচনা করা, অনুশোচনা। অন্য শব্দটি হল G3338 μεταμέλλομαι metamellomai (নতুন নিয়মে ৬ বার ব্যবহৃত), যার অর্থ হল: পরে চেতনা পাওয়া, আফসোস করা, মন পরিবর্তন করা, অনুতপ্ত হওয়া।
মথি ২৭:৩ পদে ব্যবহৃত সে শব্দ হল G3338, মানে দুইটি শব্দের মধ্যে কম ব্যবহৃতটা শব্দ। এই শব্দটি যখন সুসমাচারগুলিতে বিভিন্ন পদে ব্যবহৃত, তা কি এমন সময় যখন অনুতাপ, বিশ্বাস ও পরিত্রাণের বিষয়ে কথা হচ্ছে?
উত্তর হল: হ্যাঁ, যেমন মথি ২১:২৯ পদে এবং মথি ২১:৩২ পদে। এইপদগুলিতে যিরূশালেমে যীশুর শেষ সপ্তার বর্ণনা করা হয়। যাজকেরা ও প্রাচীনেরা যীশুর সাথে তর্ক করতে এসেছে, এমন কি তাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্য তর্ক করছে। উত্তরে যীশু দুই পুত্রের দৃষ্টান্ত বলেন: একজন পুত্র বাবার আদেশ প্রথম মানে না কিন্তু পরে সে মন পরিবর্তন করে, বাধ্য হয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যবহার করে (G3338 ব্যবহৃত মথি ২১:২৯)। যীশু তাদের আরো চ্যালেঞ্জ করে বলেন: কর-আদায়কারীরা ও পতিতারা ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকছে, কিন্তু নেতারা তা দেখার পরেও মন পরিবর্তন করেন নি ও বিশ্বাস করেন নি (G3338 ব্যবহৃত মথি ২১:৩২)। তাই দুইটি পদে শব্দটি (G3338) এই অর্থে ব্যবহৃত: অনুতাপ ও বিশ্বাস দ্বারা ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা, গ্রহণযোগ্য হওয়া বা পরিত্রাণ পাওয়া – যেমন G3340 শব্দও।
তা যদি হয় তবে চিন্তা করা যায় যে যিহূদা আসলে মন পরিবর্তন করেছে ও অনুতপ্ত হয়েছে। তা যদি হয় তবে ঈশ্বর তাকে অবশ্যই ক্ষমা করেছেন। কিন্তু বাকী গল্পের সাথে তা কি মিলে? উত্তর পেতে হলে সুসমাচারগুলিতে যিহূদা সম্বন্ধে যতটা পদ আছে, তা একসাথে দেখতে হবে। নীচে দেওয়া হয়েছে সুসমাচারগুলিতে যিহূদা সম্বন্ধীয় সমস্ত পদ। পদগুলি সময় অনুসারে সাজানো হয়েছে:
যিহূদার নাম ও বর্ণনা যিহুদা মথি ১০:৪, মার্ক ৩:১৯, লূক ৬:১৬
যিহূদা নামটি ছিল একটি ভাল ও খুবই প্রচলিত যিহূদী নাম। পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলের আদিপিতা যাকোবের চতুর্থ ছেলের নাম যিহূদা। যিহূদা বংশ ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই নাম পরে যিহূদা এলাকাকে ও পরে যিহূদা দেশকে নাম দেয়। নতুন নিয়মে ‘যিহূদা’ এলাকার নাম ‘যিহূদিয়া’ হয়ে গেছে। যীশুর দুইজন শিষ্যের এই নাম ছিল (লূক ৬:১৬, যোহন ১৪:২২)। যীশুর একজন ভাইয়েরও এই নাম ছিল (মথি ১৩:৫৫, মার্ক ৬:৩)। পরবর্তীতে প্রথম মণ্ডলীর একজন শিষ্যেরও এই নাম ছিল (প্রেরিত ১৫:২২)।
ঈষ্কারিয়োৎ (Iscariotes, H3063 থেকে G2455, সম্ভবত এর অর্থ হল: ‘করিয়োৎ গ্রাম থেকে’)। করিয়োৎ-হিব্রোণ নামে একটি গ্রাম যিহোশূয় ১৫:২৫ পদে উল্লিখিত করা হয়েছে (উত্তরের হাৎসোর শহরের সাথে)। করিয়োৎ নামে একটি মোয়াবীয় শহরও আছে (যিরমিয় ৪৮:২৪, ৪১, আমোষ ২:২)। কেউ কেউ বলেন, যিহূদা ছিলেন যিহূদা এলাকা থেকে একমাত্র শিষ্য, অন্যরা ছিলেন গালীলের বাসিন্দা।
বারোজন শিষ্যের তালিকায় তাকে ৩ টি সুসমাচারে দেখা যায়, ১২তম নাম হিসাবে, কনানীয় শিমোনের সাথে (মথি ১০:৪, মার্ক ৩:১৯) অথবা যাকোবের ভাই যিহুদার সাথে (লূক ৬:১৬)। তাই লূক দুইজন যিহূদাকে একসাথে উল্লেখ করেন।
মথি ও মার্ক তার বর্ণনা দেয় একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে (মথি ১০:৪, মার্ক ৩:১৯ H3860 Paradidomi, যার অর্থ হল ‘সমর্পণ করা, ছেড়ে দেওয়া, বেশি দেওয়া, ধরে সমর্পণ করা, ছুঁড়ে আনা, বিশ্বাসঘাতকতা প্রেরণ ইত্যাদি’। লূক তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকেন (লূক ৬:১৬, G4273 prodotes, ‘শত্রুদের হাতে তুলে দেওয়া, সমর্পণ করা, বিশ্বাসঘাতক, দেশদ্রোহী’)।
যীশুর পরিচর্য্যার সময় যিহূদা যোহন ৬:৬৭-৭১
- তাৎক্ষণিক প্রেক্ষাপট: ৫০০০ লোককে খাওয়ানোর পরে যে ভিড় জমে গেছে তা যীশুর কঠিন শিক্ষা শুনতে শুনতে (‘আমি জীবন রুটি’) পাতলা হয়ে যাচ্ছে। যীশুর জনপ্রিয়তার পর বেশ তাড়াতাড়ি অনেক বিরোধীতা ও প্রত্যাখান প্রকাশিত হয়।
এইজন্য যীশু সেই বারোজন শিষ্যকে বললেন, “তোমরাও কি চলে যেতে চাও?” ৬৮ শিমোন-পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমরা কার কাছে যাব? অনন্ত জীবনের বাণী তো আপনারই কাছে আছে। ৬৯ আমরা বিশ্বাস করেছি আর জানতেও পেরেছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।” ৭০ তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের বারোজনকে কি বেছে নিই নি? অথচ তোমাদেরই মধ্যে একজন শত্রু আছে।” ৭১ এখানে যীশু শিমোন ইষ্কারিয়োতের ছেলে যিহূদার কথা বলছিলেন, কারণ সে-ই পরে যীশুকে ধরিয়ে দেবে। সে ছিল সেই বারোজনের মধ্যে একজন।
- প্রত্যাখ্যান ও লোকেরা যীশুকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যীশু তাঁর শিষ্যদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় বলেন এবং প্রথমবার ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, তাঁরই একজন শিষ্য তাঁর বিরুদ্ধে যাবে। বিশ্বাসঘাতক সম্বন্ধীয় অন্য সব ভবিষ্যদ্বাণীগুলো হল শেষ ভোজের সময়ে।
- কিন্তু কেন যীশু এখানে বিশ্বাসঘাতকের প্রথম উল্লেখ করেন? হয়তো এই জনপ্রিয়তা হারানোর সময় হল প্রথমবার যে যিহূদার মনে মনে যীশুর বিরুদ্ধে চিন্তা আসতে দেয়। যীশু তাকে কি তার চিন্তা সম্পর্কে সতর্ক করেন? যীশু কি তাকে দেখান যে কোন কিছুই তাঁর কাছ থেকে লুকানো যাবে না? যে যীশু বিশ্বাসঘাতকের চিন্তা করলেও তাকে জয় করতে চান? হয়তো যীশু চেষ্টা করেন যেন যিহূদা ভিতরে ভিতরে দূরত্ব সৃষ্টি করার চেয়ে তার সন্দেহ বা অসন্তোষ খোলাভাবে প্রকাশ করেন।
- যিহূদার সরাসরি প্রতিক্রিয়া উল্লেখ নেই। তিনি তার সন্দেহ, হতাশা ও দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে সামনাসামনি আসেন না।
- কেন ঠিক এই সময় যিহূদা মনে মনে যীশুর থেকে সরে যায়, অথবা প্রথমবার যীশুকে নিয়ে সন্দেহে পড়ে? প্রেক্ষাপট কি ছিল? কারণ ঠিক কি? যীশুর ক্ষমতাশালী আশ্চর্য কাজের পরে (যাতে মশীহের আশা জাগানো হয়েছে) যীশুর কঠিন শিক্ষা শুনে (যোহন ৬:৬০) হয়তো যিহূদার মনে একটা বড় হতাশা তৈরি হয়। আশ্চর্য কাজ দেখার কারণে যিহূদা হতেও পারে আরো নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে যীশুই প্রকৃতপক্ষে মশীহ এবং তার আশা বাড়ল যে শিঘ্রই যীশু তাঁর পরাক্রম প্রমাণিত করে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপন করবেন। তাই যখন কঠিন শিক্ষার কারণে ভিড় কমে যায়, যখন যীশু তাঁর খ্যাতি, জনপ্রিয়তা ও প্রেরণা হারান, যিহূদা অখুশি হন। কেন যীশু এমন করেন? কেন ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেন? যিহূদার মনে প্রশ্ন আসে, যেমন অন্যদের শিষ্যদের মনেও।
- সে এখন কি করবে? অপেক্ষা করে দেখবে কিভাবে বিষয়টি এগিয়ে যাবে? মনে মনে চিন্তাগুলি ঘুরতে থাকবে? সে কি শিষ্যদের দল থেকে চলে যাবে? অথবা সে যীশুকে দেখাবে মশীহের কেমন কাজ করা দরকার?
- যোহন ৬:৭১ পদে পাঠকদের কাছে ব্যাখ্যা করেন যে যীশু যিহূদার বিষয়ে মন্তব্যটি করেন। তাতেও বুঝা যায় যে মন্তব্য করার সময় শিষ্যদের মধ্যে একজনও তা যিহূদার সম্পর্কীয় মনে করে না।
- এই মন্তব্য অন্য শিষ্যেরা কিভাবে নিয়েছিলেন? যীশু ক্লান্ত হয়েছেন বলে? নিরুৎসাহিত হয়েছেন? মনমরা? হতে পারে যীশুর এই মন্তব্য তারা সেই ভাবে নিয়েছিল যেভাবে তারা ‘মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী’ও নিয়েছিল: মন অস্থির, দ্বন্দ্ব, কিন্তু গুরুত্ব সহকারে নেয় নি।
যোহন ১২:৩-৮ যিহূদার অভিযোগ, চুরি, যীশুর মৃত্যুদণ্ডের ঘোষনা
‘এমন সময় মরিয়ম কমবেশ তিনশো গ্রাম খুব দামী, খাঁটি সুগন্ধি আতর নিয়ে আসলেন এবং যীশুর পায়ে তা ঢেলে দিয়ে নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছে দিলেন। সেই আতরের সুগন্ধে সারা ঘর ভরে গেল। যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন, যে তাঁকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে, সেই যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ বলল, “এই আতর তিনশো দীনারে বিক্রি করে গরীব- দুঃখীদের দেওয়া যেত। কেন তা করা হল না?” যিহূদা যে গরীবদের বিষয়ে চিন্তা করে এই কথা বলেছিল তা নয়। আসলে সে ছিল চোর। টাকার বাক্স তার কাছে থাকত বলে যা কিছু জমা রাখা হত তা থেকে সে চুরি করত। যীশু বললেন, “তোমরা ওর মনে কষ্ট দিয়ো না। আমাকে কবর দেবার সময়ে সাজাবার জন্যই ও এটা রেখেছিল। গরীবেরা তো সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।
মার্ক ১৪:৩-৯ ‘অপচয়’ নিয়ে বিরক্ত, মহিলাকে প্রতিরোধ, যীশুর মৃত্যুর ঘোষণা
যীশু তখন বৈথনিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন। তিনি যখন খাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী ও খাঁটি আতর আনল। পাত্রটা ভেংগে সে যীশুর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল। ৪ সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিরক্ত হয়ে একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এইভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন? ৫ এটা বিক্রি করলে তো তিনশো দীনারেরও বেশী হত এবং তা গরীবদের দেওয়া যেত।” এই বলে তাঁরা স্ত্রীলোকটিকে বকাবকি করতে লাগলেন। ৬ তখন যীশু বললেন, “থাম, কেন তোমরা ওকে দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে। ৭ গরীবেরা সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, আর যখন ইচ্ছা তখনই তোমরা তাদের সাহায্য করতে পার, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না। ৮ ও যা পেরেছে তা করেছে। আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে ও আগেই আমার দেহের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। ৯ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, জগতের যে কোন জায়গায় ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করা হবে, সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ওর এই কাজের কথাও বলা হবে।’
- যোহন উল্লেখ করেন যে, যিহূদা টাকার থলে রাখত আর সেখান থেকে নিয়মিত চুরি করত। তিনি কিভাবে জানেন? যীশু পুনরুত্থানের পর বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করেন? যোহন ১৩:২৮-২৯ থেকে এটা পরিষ্কার যে, কোন শিষ্যই জানত না এবং কেউ সন্দেহও করে নি।
- যীশু কেন যিহূদাকে টাকা রাখার ও থলে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছেন? যীশু সর্বজ্ঞ (অথবা কমপক্ষে তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা অন্তর্দৃষ্টি আছে যে, যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করবে), তাহলে কেন চুরি প্রতিরোধ করেন না? চুরি করার জন্য কেন কোন ধমক দেন না? তাকে চুরি করার প্রলোভনে কেন রাখেন?
- হতে পারে সাধারণ তালন্ত ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুসমাচারগুলি পড়ে দেখা যায় যে কোন শিষ্যই এটা নিয়ে সমস্যা মনে করে নি, যদিও অন্য সময়ে তারা পদ নিয়ে লড়াই করে। টাকা রাখার যে প্রলোভন তুলনায় ছোট বিষয় মাত্র: আশ্চর্যকাজ করার ক্ষমতা অবশ্যই আরও উঁচু মানের। প্রলোভন যে কোন ভাবে থাকবে। প্রলোভন যে কোন ভাবে অতিক্রম করতে শিখতে হবে।
- মথি ১০:৮ পদে যীশু বলেন শিষ্যরা যেন প্রচার ও আশ্চর্যকাজের জন্য টাকা না নেয়। তাতে বুঝা যায় যে ক্ষমতার সহজাতই প্রলোভন। প্রদত্ত ক্ষমতা, পদ বা ভূমিকা ভুল ব্যবহারের প্রলোভন কোন সময়ই অনুপস্থিত নয়। শিষ্যরা পদ ও মর্যাদা নিয়ে যখন লড়াই করে (মথি ২০:২০-২৭, মার্ক ১০:৩৫-৪৫) পরিষ্কারভাবে দেখায় যে সাধারণ টাকা রাখার থলের চেয়ে বড় প্রলোভন আছে।
- তাই এমন না যে যীশু যিহূদাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রলোভনে ফেলেন। বাস্তব জগতে যে কোন দায়িত্ব, ভূমিকা, পদ বা ক্ষমতার সাথে প্রলোভন আছে; যে কোন ভাবে প্রলোভনের প্রতিরোধ ও অতিক্রম করা শিখতে হবে।
- একবার যিহূদা যখন চুরি শুরু করে, কেন যীশু তাকে ধমক দেন না? হয় পবিত্র আত্মা যীশুর কাছে এই তথ্য প্রকাশিত করেন নি, না হয় তিনি জানেন কিন্তু এই বিষয়ে কিছু করেন না। যেভাবেই হোক: একজনকে যে কোন দায়িত্ব, অধিকার, পদ বা ক্ষমতা দিলে, প্রত্যেক মুহূর্তের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব না। কাউকে প্রত্যেক সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না এবং উচিতও না। যা প্রয়োজন তা এই: নিজের হৃদয় থেকে সততায় সমর্পিত থাকা।
- কেন যিহূদা চুরি শুরু করে? হতে পারে কোনো ‘ব্যক্তিগত জরুরী’ দরকার থেকে যিহূদা চুরি শুরু করে। কিন্তু তা সত্যি হলেও: সে টাকার জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে না, যীশুকে তার সমস্যা বলে না বা সাহায্য চায় না।
- চুরি শুরু করতে ‘তার হৃদয়ে’ কি দরকার ছিল? যদিও যীশু দেখিয়েছেন যে তিনি সব জানেন অথবা যে তাঁর পবিত্র আত্মার পরিচালনা দ্বারা অসাধারণ জ্ঞান আছে (মার্ক ২:৮) তবুও যিহূদা তা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে না। সে মনে করে যে যীশুকে ভুলানো যায়। যিহূদা তার চেতনার বিরুদ্ধে এবং পুরাতন নিয়মের (ও ফরীশীদের) শিক্ষার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে।
- যিহূদার হৃদয়ে চুরির শুরুতে কি হয়েছিল? একবার যখন সে চুরি করে ও যীশু তার দোষ ধরেন না, চেতনা অগ্রাহ্য করতে করতে চালাকি, আত্মসন্তুষ্টির অনুভুতি আপনা আপনি তার হৃদয়ে আসবে। সাথে সাথে অন্যদের উপরে শ্রেষ্ঠত্বের চেতনা, অন্যদের অবজ্ঞা করা, উদাসীনতা, পরিকল্পনা করা, গোপন করা, ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি তা হৃদয়ে আসবে। তাতে সে বিবেকের চেতনা ভঙ্গ করতে থাকে।
- টাকাকে প্রভু বানিয়ে ও নিজের মনকে লোভে ছেড়ে দিয়ে যিহূদার মনোভাব আরো পরিবর্তন হয়ে যায়: যিহূদা মরিয়মের অত্যধিক দেওয়ার অপব্যয়ে ও ভালবাসার দানে রাগ করে ও বিরক্তি পায়। মার্ক তার সুসমাচারে বলেন যে ‘কিছু লোক’ মরিয়মের আচরণে আপত্তি করেন, যোহন আমাদের জানান যে, যিহূদা ছিলেন সেই লোক যে অভিযোগে পরিচালনা দেয়, যদিও অন্যদের মাথায়ও একই রকম চিন্তা ছিল। মার্ক দেখান যে সৎভাবে প্রশ্ন করার পরিবর্তে অথবা উন্মুক্ত যু্ক্তিতর্কের পরিবর্তে তারা নিজেরাই বলাবলি করে।
- যিহূদা উপহারের মূল্য জানেন ও তা নিয়ে চিন্তা করেন, ৩০০ দিনার, এক বছরের শ্রমের দাম, আসলেই একটা উদারতার উপহার। তার নেতিবাচক মন্তব্যের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য এবং তার রাগ ও বিরক্তি লুকানোর জন্য সে দানটি গরীবদের দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। তাতেও যীশুর জন্য যিহূদার অবজ্ঞা বুঝা যায়: সে যীশুকে এই উপহারের যোগ্য মনে করে না। যিহূদার সে মন্তব্যে তার ভিতরের জগতের লোভ, অবজ্ঞা ও খারাপ উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয়।
- মথি ও মার্ক উভয় বলেন যে, যিহূদার মনে বিশ্বাসঘাতকতার পরিকল্পনা ঠিক এই অভিষেকের পরে শুরু। মার্ক বলেন ‘এরপর’, মথি বলেন ‘তখন’। তাই বুঝা যায় যে অভিষেকটি যিহূদাকে প্রান্তের দিকে ধাক্কা দেয়।
- কিন্তু কেন? অভিষেকের কি বিষয় তাকে ধাক্কা দেয়? যীশু যে প্রথম বার কিছু বিলাসিতা গ্রহণ করেন, তার কারণে? ভাল পরিমাণে টাকা যিহূদার অধীনে আসে নি, তার কারণে? যীশু যে নিজের মৃত্যু নিয়ে ভবিষদ্বাণী দেন যাতে যিহূদা মনে করে যীশু ‘মশীহের’ কাজ ঠিকমত বুঝেন না?
যীশুকে ধরে দেওয়ার জন্য যিহূদা প্রধান পুরোহিতের সাথে একমত হয়
মার্ক ১৪:১০-১১ পুরোহিতেরা খুশী, টাকা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা, সুযোগ খোঁজা শুরু
এর পর যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের কাছে গেল। ১১ পুরোহিতেরা যিহূদার কথা শুনে খুশী হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে কথা দিলেন। তখন যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।
মথি ২৬:১৪-১৬ ত্রিশটা রূপার টাকা, সুযোগ খোঁজা শুরু
তখন সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে শিষ্যটি প্রধান পুরোহিতদের কাছে গিয়ে বলল, ১৫ ‘যীশুকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিলে আপনারা আমাকে কি দেবেন?” প্রধান পুরোহিতেরা ত্রিশটা রূপার টাকা গুণে তাকে দিলেন। ১৬ তার পর থেকেই যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল
লূক ২২:২-৫ পুরোহিতেরা খুশী, টাকা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা
‘প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যীশুকে গোপনে মেরে ফেলবার উপায় খুঁজছিলেন, কারণ তাঁরা লোকদের ভয় করতেন। ৩ এই সময় যিহূদা, যাকে ইষ্কারিয়োৎ বলা হত, তার ভিতরে শয়তান ঢুকল। এই যিহূদা ছিল যীশুর বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন। ৪ কেমন করে যীশুকে প্রধান পুরোহিতদের ও উপাসনা-ঘরের কর্মচারীদের হাতে ধরিয়ে দেবে এই বিষয়ে সে গিয়ে তাঁদের সংগে পরামর্শ করল। ৫ এতে তাঁরা খুব খুশী হয়ে যিহূদাকে টাকা দিতে স্বীকার করলেন।
- যিহূদা রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াইগুলি ভাল বোঝে। তাই সে ভাল জানে প্রধান যাজক ও ধর্ম-শিক্ষকেরা কি চায়, এবং যে, বিশ্বাসঘাতকতার জন্য একটা মূল্য দাবী করা যাবে। হয়তো এভাবে যীশুর কাছ থেকে চলে যাওয়ার তার দীর্ঘ পরিকল্পনাকে সে লাভজনক বানাতে পারে।
- তার মনে লোভ ছিল, কিন্তু যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ার পিছনে সে লোভ প্রধান উদ্দেশ্য নাও হতে পারে। কারণ সে যদি যীশুর দলের টাকার থলে রাখার কাজ করে যেত, হতে পারে সে ধীরে ধীরে ৩০ মুদ্রা থেকেও বেশি লাভ করতে পারত। অথবা সে তার যীশুর কাছ থেকে চলে যাওয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনাকে লাভজনক করতে চেষ্টা করছে?
- যিহূদা কি অর্জন করতে চায়? হতে পারে এখন যিহূদা নিশ্চিত হয়েছে যে যীশু মশীহ নন, বরং যে তিনি প্রতারক হন (ফরীশীদের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন) এবং যে, তাকে হত্যা করা দরকার। কিন্তু মথি ২৭:৩ পদ দেখে মনে হয় যে, যিহূদা চিন্তা করে নি যীশুর মৃত্যুদন্ড হবে। তাহলে যিহূদা কি অর্জন করতে চায়?
- সে কি চায় যে যীশুকে ধমক দেওয়া হোক? একটু মার খাক? তিরস্কার করা হোক? হুমকি দেওয়া হোক? রাজনৈতিকভাবে দক্ষ হয়ে উঠুক? যীশু এমন সংকটে পড়ুক যে তিনি অবশেষে তাঁর পরাক্রম দেখাবেন? নিজেকে রক্ষা করবেন? নিজেকে মশীহ্ হিসাবে প্রমাণ করবেন এবং অবশেষে তাঁর রাজ্য বিস্তার করবেন? যিহূদা কি একটি ‘বাস্তবতার পরীক্ষা ঘটাতে চায়, যাতে হয় যীশুই নিজেকে পরাক্রমশালী মশীহ হিসাবে প্রমাণ করবে, না হয় সবাই অবশেষে জানবে যে তা নিয়ে কোনো আশা নেই? হয়তো যিহূদার এই পরিকল্পনা একটি প্রতারিত ও সেচ্ছাচারী প্রচেষ্টা ‘মশীহকে সাহায্য করতে’। অথবা অবশেষে প্রমাণ পেতে তিনি আসলে কে হন বা না হন।
- যিহূদার ভিতরে শয়তান প্রবেশ করে তা লূক এখানে উল্লেখ করেন। যোহন ১৩:২ শেষ ভোজের পূর্বে শয়তান যিহূদার হৃদয়ের ভিতরে ধরিয়ে দেওয়ার চিন্তা দেয়, তা উল্লেখ করেন। এবং মাত্র যোহন ১৩:২৭ পদে শেষ ভোজের সময় যিহূদা যীশুর কাছ থেকে রুটির টুকরা নেওয়ার সময়ে শয়তান তার ভিতরে প্রবেশ করে। যেভাবে হোক, পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে যিহূদার দীর্ঘ সময় ধরে চেতনাকে অস্বীকার ও ভুল চিন্তাকে গ্রহণ করা, অথবা ভিতরের সন্দেহ লুকানো ও সামনা-সামনি আসতে প্রত্যাখ্যান করার ফলে শয়তান এখন ক্ষমতা পায়। দীর্ঘ দিনের একটি প্রক্রিয়া এখন বাস্তবতায় আসে: যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
শেষ ভোজে যিহূদা
যোহন ১৩:২ পা ধোয়ানো ও শেষ ভোজের শুরুতে ঘটনা: শয়তানের প্রলোভন
তখন খাবার সময়। এর আগেই শয়তান শিমোনের ছেলে যিহূদা ইষ্কারিয়োতের মনে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবার ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছিল।
মথি ২৬:২১-২৫ ঘোষণা, প্রশ্ন, সতর্ক করা, যিহূদার প্রশ্ন
খাবার সময়ে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।” ২২ এতে শিষ্যেরা খুব দুঃখিত হয়ে একজনের পর একজন যীশুকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “সে কি আমি, প্রভু?”২৩ উত্তরে তিনি তাঁদের বললেন, “যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে হাত দিচ্ছে সে-ই আমাকে ধরিয়ে দেবে। ২৪ মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যেভাবে লেখা আছে ঠিক সেইভাবে তিনি মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে মনুষ্যপুত্রকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয়! সেই মানুষের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।” ২৫ যে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল সেই যিহূদা বলল, “গুরু, সে কি আমি?” যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক কথাই বললে।”
মার্ক ১৪:১৮-২১ ঘোষণা , প্রশ্ন, রুটি ডুবানো, সতর্ক করা
তাঁরা যখন বসে খাচ্ছিলেন তখন যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে, আর সে আমার সংগে খাচ্ছে।’ ১৯ শিষ্যেরা দুঃখিত হলেন এবং একজনের পরে আর একজন বলতে লাগলেন, ‘সে কি আমি, প্রভু?’ ২০ যীশু তাঁদের বললেন, ‘সে এই বারোজনের মধ্যে একজন, যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে রুটি ডুবাচ্ছে। ২১ মনুষ্যপুত্রের মৃত্যুর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তিনি সেভাবেই মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়! সেই লোকের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।’
লূক ২২:২১-২৩ ঘোষনা, সতর্ক করা, প্রশ্ন
দেখ, যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার হাতের সংগে এই টেবিলের উপরেই আছে। ২২ ঈশ্বর যা ঠিক করে রেখেছেন সেই ভাবেই মনুষ্যপুত্র মারা যাবেন বটে; কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়!” ২৩ শিষ্যেরা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন যে, তাঁদের মধ্যে কে এমন কাজ করবেন। ২৪ কাকে সবচেয়ে বড় বলা হবে এ নিয়ে শিষ্যদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হল।
যোহন ১৩:২১-৩০ ঘোষণা, প্রশ্ন, রুটি ভিজানো, মুক্ত করা
এই সব কথা বলবার পরে যীশু অন্তরে অস্থির হলেন। তিনি খোলাখুলিভাবে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদেরই মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।” ২২ যীশু কার কথা বলছেন তা বুঝতে না পেরে শিষ্যেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলেন।… সেই শিষ্য তখন যীশুর দিকে ঝুঁকে বললেন, “প্রভু, সে কে?” ২৬ যীশু উত্তর দিলেন, “এই রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে যাকে দেব সে-ই সেই লোক।” আর তিনি রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে শিমোন ইষ্কারিয়োতের ছেলে যিহূদাকে দিলেন। ২৭ রুটির টুকরাটা নেবার পরেই শয়তান যিহূদার মধ্যে ঢুকল। যীশু তাকে বললেন, “যা করবে তাড়াতাড়ি কর।” ২৮ যাঁরা যীশুর সংগে খাচ্ছিলেন তাঁরা কেউই বুঝলেন না কেন যীশু যিহূদাকে এই কথা বললেন। ২৯ কেউ কেউ ভাবলেন, পর্বের জন্য যা দরকার যীশু যিহূদাকে তা কিনে আনতে বললেন কিম্বা গরীবদের কিছু দিতে বললেন, কারণ তাঁদের টাকার বাক্স যিহূদার কাছেই থাকত। ৩০ রুটির টুকরাটা নেওয়ার সংগে সংগে যিহূদা বাইরে চলে গেল। তখন রাত হয়েছে।
- মথি, মার্ক ও লূক উল্লেখ করেন যে যীশুর সামনে ক্রুশ আছে তা বাক্যে ভবিষ্যদ্ববাণী অনুসারে। কিন্তু যে ধরিয়ে দিবে সে অভিশপ্ত। কথাটির দুই দিক আছে:
- ১ সব ঘটনার উপরে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা এবং কঠিন পরীক্ষার মধ্যে যীশুর পরিপূর্ণ বাধ্যতা (‘আমিই আসল মশীহ!’ ‘যা করা প্রয়োজন, আমি তাই করি’ ‘যদিও তুমি বুঝতে পার না, ঘটনাগুলি যেখানে যাওয়া দরকার, সেখানেই যাচ্ছে!’)। কথাটি যিহূদার জন্য মন ফিরানোর একটা আহ্বান। যতক্ষণ পর্যন্ত যিহূদা মনে করে যে সে যীশুকে ভুলাতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে তাকে বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু যদি যীশু জেনে বুঝে পথটিতে চলতে রাজী হয়েছেন, তা চেতনাদায়ক বিষয়।
- ২ সাবধানবাণী: যদিও যীশুর মৃত্যু পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ঘটছে, তারপরও মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আছে: ধিক সেই লোক যার দ্বারা তা ঘটবে। যীশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হল একটি বড় ও ভয়ংঙ্কর ভুল।
- যিহূদা অনেক দিন ধরে প্রতারণার খেলা খেলেছে, তাই দুঃখের বিষয় যে এখানে তাঁর জন্য নাটক করতে থাকা সহজ হয়েছে। যেমন সবাই বলছে, যিহূদাও বলছে: “গুরু, সে কি আমি?”।
- কেন যীশু বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলেন? যীশু যিহূদাকে আর একবার আহ্বান করেন অনুতপ্ত হওয়ার জন্য। তা দ্বারা যীশু যিহূদাকে দেখান যে তার হৃদয়ের চিন্তা প্রকাশিত, তার চালাকি ও কৌশল, চুরি ও বিশ্বাসঘাতকতার চিন্তা সব জেনেই তিনি তারপরেও তার জন্য আকাঙ্খী। দরজা এখনও খোলা আছে।
- যীশু সে সাবধাণবাণী দ্বারা এবং রুটি ভিজানোর মাধ্যমে তিনি যিহূদাকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে দেন যে তার সব চিন্তা যীশুর খেয়ালে আছে, যদিও অন্যরা বিষয়টি বুঝতে পারে নি। এবং এখনও যিহূদার মন পরিবর্তনের জন্য আশা আছে। শয়তান তার মধ্যে প্রবেশ করাতে ও তাকে ভ্রষ্ট করতে যীশু তাকে রুটি দেন নি, বরং তিনি যিহূদার চোখে তাকান, তিনি যে সব কিছু জানেন, তা তিনি যিহূদার কাছে প্রকাশ করেন, সাবধানবাণী দেন, আহ্বান করেন ও তাকে মোটামুটি বলেন: ‘তুমি কি আসলেই এটা করতে চাও?’ রুটি নেওয়ার মধ্য দিয়ে যিহূদা খোলামেলা না হতে, স্বীকার না করতে, অনুতপ্ত না হতে সিদ্ধান্ত নেয়। বরং সে মনোযোগ আকর্ষণ না করার জন্য খেলা খেলতে থাকে এবং তার চারপাশের শিষ্যদের ঠিকই বোকা বানায়।
- যীশুর মন্তব্য ‘তাড়াতাড়ি কর’ শুধুমাত্র যিহূদার বিবেকের শেষ অগ্রাহ্যের পরে, যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরে (যদিও যীশু তার অলৌকিক জ্ঞান প্রকাশ করেছিলেন), রুটি নিয়ে, যীশু সর্বশেষ অনুগ্রহ দেওয়ার উদ্যোগ অগ্রাহ্য করে শয়তান তার মধ্যে প্রবেশ করে (লূক)।
- হতে পারে তা থেকে মন্দ আত্নায়-পাওয়ার বিষয়ে কিছু শেখা যায়: শুধুমাত্র যিহূদার মিথ্যা গ্রহণ ও দীর্ঘদিন মিথ্যাকে ধরে রাখার, শুধুমাত্র দীর্ঘ সময় ধরে পাপ করার পরে, শুধুমাত্র সহিংসতাকে আলিঙ্গন করার পর ও চেতনার সর্বশেষ প্রত্যাখ্যানের পর শয়তান তার ভিতরে ঢুকতে পারে।
যিহূদা গেৎশিমানী বাগানে
যোহন ১৮:২-৩ স্থান, আলাদা হওয়া, যীশুর উত্তর, সেখানে যিহূদা
যীশুকে শত্রুদের হাতে যে পরে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদাও এই জায়গাটা চিনত, কারণ যীশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদের সংগে সেখানে এক সংগে মিলিত হতেন। ৩ প্রধান পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা যিহূদাকে এক দল সৈন্য এবং কয়েকজন কর্মচারী দিলেন। তখন যিহূদা তাদের সংগে বাতি, মশাল আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। ৪ তাঁর নিজের উপর যা ঘটবে যীশু তা সবই জানতেন। এইজন্য তিনি বের হয়ে এসে সেই লোকদের বললেন, “আপনারা কাকে খুঁজছেন?” ৫ তারা বলল, “নাসরতের যীশুকে।” যীশু তাদের বললেন, “আমিই সেই।” যীশুকে যে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদাও তাদের সংগে দাঁড়িয়ে ছিল।
মথি ২৬:৪৭-৫০ আলাদা হওয়া, চিহ্ন, চুমু ও শুভেচ্ছা, যীশুর উত্তর
যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এদের পাঠিয়েছিলেন। ৪৮ যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল; সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব সে-ই সেই লোক; তোমরা তাকে ধরবে।” ৪৯ তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু, মংগল হোক।” এই কথা বলেই সে যীশুকে চুমু দিল। ৫০ যীশু তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, কর।” সংগে সংগেই লোকেরা এসে যীশুকে ধরল
মার্ক ১৪:৪৩-৪৬ আলাদা হওয়া, চিহ্ন, চুমু ও শুভেচ্ছা
যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা, ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন। ৪৪ যীশুকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে-ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।’ ৪৫ তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল। ৪৬ তখন সেই লোকেরা যীশুকে ধরল।
লূক ২২:৪৭-৫৩ আলাদা হওয়া, চুমু, সহিংসতা, সুস্থতা ও ধমক
যীশু তখনও কথা বলছেন এমন সময় অনেক লোক সেখানে আসল। যিহূদা নামে তাঁর বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন সেই লোকদের আগে আগে আসছিল। যিহূদা যীশুকে চুমু দেবার জন্য তাঁর কাছে আসল। ৪৮ তখন যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা, চুমু দিয়ে কি মনুষ্যপুত্রকে ধরিয়ে দিচ্ছ?” ৪৯ যাঁরা যীশুর চারপাশে ছিলেন তাঁরা বুঝলেন কি হতে যাচ্ছে। এইজন্য তাঁরা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমরা কি ছোরা দিয়ে আঘাত করব?” ৫০ তাদের মধ্যে একজন ছোরার আঘাতে মহাপুরোহিতের দাসের ডান কানটা কেটে ফেললেন। ৫১ যীশু বললেন, “থাক্, আর নয়।” এই বলে তিনি লোকটির কান ছুঁয়ে তাকে ভাল করলেন। ৫২ যে সব প্রধান পুরোহিতেরা, উপাসনা-ঘরের কর্মচারীরা এবং বৃদ্ধ নেতারা যীশুকে ধরতে এসেছিলেন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে এসেছেন? ৫৩ উপাসনা-ঘরে দিনের পর দিন আমি আপনাদের সামনে ছিলাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। তবে এখন অবশ্য আপনাদেরই সময়; অন্ধকারের ক্ষমতা এখন দেখা যাচ্ছে।”
- মথি ও মার্ক একমত হওয়ার চিহ্নের বিষয়ে এবং ‘এ কথা বলেই’ এই বাক্য উল্লেখ করেন। হতে পারে তাতে বুঝা যায় যে যিহূদা এখানে ‘যত দ্রুত তত ভাল’ অনুসারে আগায়, কারণ না হলে তার চেতনা আবার কথা বলবে ও সে বিশ্বাসঘাতকতা করার আর সাহস পাবে না।
- লূক অনুসারে মহাযাজকের দাসের কান সুস্থ করা হল যীশুর শেষ আশ্চর্য কাজ। শেষ পর্যন্ত যীশু উপকার করার জন্য তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করেন, যদিও আত্ম-রক্ষার জন্য না। লূক আরো দেখান যে যীশু আপত্তি উঠান চুপিচুপি তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে। তিনি মিথ্যা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
- মথি উল্লেখ করেন যে যীশু নিশ্চিত করেন যেন শিষ্যেরা জায়গা ছেড়ে চলে যেতে পারে, যীশুর একেবারে সর্বশেষ দয়াশীলতা ও স্বার্থহীনতার একটি কাজ।
যীশুর মামলার সময়ে যিহূদা ও তার আত্মহত্যা
মথি ২৭:৩-৮ অনুতাপ, স্বীকার, ও পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা, আত্মহত্যা
- এই সময় মহাযাজক ধর্মনিন্দার জন্য যীশুকে মৃত্যুদন্ডে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। যেহেতু শুধুমাত্র রোমীয় শাসনকর্তার কাছে মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন করার অধিকার ছিল, মহাযাজক যীশুকে পীলাতের কাছে পাঠিয়েছেন।
যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা যখন দেখল যীশুকে বিচারে দোষী বলে ঠিক করা হয়েছে তখন তার মনে খুব দুঃখ হল (অন্য অনুবাদ: ‘মন ফিরাল’ বা ‘অনুতপ্ত হল‘)। সে প্রধান পুরোহিতদের ও বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেই ত্রিশটা রূপার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ৪ ‘আমি নির্দোষীকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দিয়ে পাপ করেছি।’ তাঁরা বললেন, “তাতে আমাদের কি? তুমিই তা বুঝবে।” ৫ তখন যিহূদা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে উপাসনা-ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গলায় দড়ি দিয়ে মরল। ৬ প্রধান পুরোহিতেরা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে বললেন, “এই টাকা উপাসনা-ঘরের তহবিলে রাখা ঠিক নয়, কারণ এটা রক্তের দাম।” ৭ পরে তাঁরা পরামর্শ করে সেই টাকা দিয়ে বিদেশীদের একটা কবরস্থানের জন্য কুমারের জমি কিনলেন। ৮ সেইজন্য সেই জমিকে আজও ‘রক্তের জমি’ বলা হয়।
- যিহূদা বিচারের জায়গায় উপস্থিত, লেখা আছে যিহূদা ”দেখল”। তিনি কেন উপস্থিত? বিবেক কি তাকে তাড়না করছে? তিনি কি ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’? এখনও তিনি কি আশা করছেন যে যীশু ক্ষমতা দিয়ে নিজেকে মশীহ হিসাবে প্রমাণিত করবেন এবং তাঁর রাজ্য বিস্তার করবেন? অথবা এই খবর না শুনার কোন পথ ছিল না ?
- যখন যিহূদা দেখে যে যীশুর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে, মনে হয় তখন যিহূদা তা দেখে সে আচমকা, সে এমন আশা করে নি। কিন্তু তাহলে তার বিশ্বাসঘাতকতা দ্বারা কি চেয়েছে? কি মনে করেছে যে হবে? অথবা তার চেতনা আবার কথা বলতে শুরু করে এবং তিনি এখন বুঝতে পারে কি সে করল?

- যীশু পূর্বে যা বলেছিলেন (মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষদ্বাণী ও শেষ ভোজে তাঁর প্রচেষ্টা যিহূদাকে বুঝাতে যে তিনি জানেন) তা যিহূদা এখন নতুন আলোতে দেখছে: যীশু আসলে জানতেন কি হবে। তার ব্যবহার ছিল না মুর্খতা বরং জেনে বুঝে দয়া দান! এমন না যে যিহূদা তাঁকে ভুলিয়েছিল। সাধারণ যিহূদীদের চোখে যীশুর মৃত্যুদন্ডে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত যে তিনি মশীহ নন (সত্যিকার মশীহ মারা যাবেন না বরং জয় করেন!) কিন্তু এখানে যিহূদা বিপরীত উপসংহারে পৌছায়: যীশু আসলে মশীহ। কিন্তু এখন তিনি আমার কারণে মারা যাচ্ছেন।
- হয়তো একজন বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য যিহূদা এখন চেতনা পাচ্ছে (যদিও হয়তো এখনও মনে করে যে যীশু প্রতারিত)। যিহূদা পরে বলবে যে একজন ‘নির্দোষীকে’ ধরিয়ে দিল।
- সম্ভাব্য যে যিহূদা মন্দ আত্মায় পাওয়া কিন্তু তারপরেও তার চেতনা আবার কথা বলতে শুরু করে। তা হল আশার চিহ্ন। সে শুধুমাত্র আফসোস করে তা না বরং চেতনায় সাড়া দিয়ে সে মন পরিবর্তন করে ও তা অনুসারে আচরণ করতে শুরু করে – যদিও এখন মন পরিবর্তন করা আরও অনেক কঠিন হয়েছে: যিহূদাকে নিজের কাছে স্বীকার করতে হবে যে, সে নিজেকে চালাক মনে করে প্রতারণায় পড়ল। যে, বিগত বছরগুলিতে সে যা বিশ্বাস করেছে, তা ছিল নিজের তৈরি করা মিথ্যা।
- যিহূদা এখন বিপরীত কাজ শুরু করে। তাতে বুঝা যায় যে অনুতাপ মানে কি, তা সে বুঝে: শুধুমাত্র আফসোস না, শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাওয়া না, বরং একজন আত্মিক নেতার কাছে পাপ স্বীকার করা, পুনরুদ্ধার বা ক্ষতিপূরণ চেষ্টা করা (টাকা ফেরত দেয়), তার কাজের পরিণতি রোধ করার চেষ্টা করা (মহাযাজকের কাছে যায়, ব্যক্তিগত কোন পরামর্শদাতার কাছে যায় না, হয়তোবা এই আশায় যে তারা যীশুর রায় পরিবর্তন করবে), অথবা যদি তার আশা আর থাকে না, তারপরও কম পক্ষে নম্রতা প্রকাশ করা।
- মহাযাজক ও নেতারা নিষ্ঠুর: তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছিয়েছেন, তারা যাকে ব্যবহার করেছে তার বিবেকের তাড়না নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তার আত্মিক জীবন নিয়ে বা তার চেতনার কামড় নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ায় যে সে ভাল কাজ করেছে, তার নিশ্চয়তাও তারা তাকে দেয় না: ‘তাতে আমাদের কি? তুমিই তা বুঝবে।’
- হতে পারে তার চিন্তা আরো পরিষ্কার হয়ে যিহূদা এখন বুঝতে পারে: আইন অনুসারে নির্দোষী রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকা অথবা খুনের ক্ষেত্রে মিথ্যা মৃত্যুদন্ডের জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, তা হল মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৯, ৫:১৭)।
- তার মানে যে যিহূদা মহাযাজকের কাছে স্বীকার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহসী ছিল। কারণ আইন অনুসারে এখন নেতার দায়িত্ব হবে যিহূদাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৯)। অবশ্যই তারা তাকে বিচার করতে চাইবে না (কারণ তাদের নিজেদেরকে সাথেও বিচার করতে হত) কিন্তু তারপরেও যিহূদা ঝুঁকি নিয়ে তার দোষ স্বীকার করে। যিহূদার এই সাহস ও বাধ্যতায় বুঝা যায় যে তার বিবেক কথা বলছে, যা হল আশার চিহ্ন।
- সে শেষে মন্দিরের মধ্যে টাকা ফেলে দেয়। কেন? যিহূদা চেতনা পেয়ে ক্ষতিপূরণ করতে চেষ্টা করে। হয়তো সে গণনা ৫:৮ পালন করে যেখানে লেখা আছে যে ক্ষতিপূরণ করলে যদি লোকটি আর জীবিত নয়, তবে টাকা যাজকের কাছে দিতে হবে। যিহূদা যীশুকে টাকা আর দিতে পারে না তাই যাজকের কাছে দিতে চায়। যাজক টাকা অগ্রাহ্য করেন তাই টাকা মন্দিরে দেয়। যিহূদা চেষ্টা করে যতদূর সম্ভব তার বিশ্বাসঘাতকতা পিছাতে। হয়তো সে এখন তার নিজের লোভকে ঘৃণা করতে শুরু করে, যার ফলে সে ভুল পথে চলে গিয়েছিল। এবং আত্ম-হত্যার চিন্তা যদি সে করে তবে টাকা যে কোনো ভাবে আর কাজে লাগে না।
- যিহূদা চলে যায় ও নিজেকে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে। এটা হতে পারে চরম হতাশা ও আশাহীন অবস্থায় তার মন্দ আত্মায় পাওয়ার ফল। কিন্তু হয়তো তা হল নিজের প্রতি নিজের বিচারের ইচ্ছাকৃত কর্ম। যাজকেরা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন নি তাই সে নিজেকেই মৃত্যুদন্ড দেবে।
- ঐতিহ্যগতভাবে আমরা নিশ্চিত যে, যিহূদা অনন্তকালীন নরকবাসী, সে প্রত্যাখান করে ও যীশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে ধরিয়ে দেয়, সে মন্দ আত্মায় পরিচালিত হয় এবং নিষিদ্ধ কাজ দিয়ে তার জীবন শেষ করে দেয়: আত্মহত্যা। ঐতিহ্য অনুসারে সকল আত্মহত্যাকারী অনন্তকালীন নরকে থাকবে।
- আমি মনে করি গল্প যেভাবে বলা হয়েছে তাতে সম্ভবত আরও কিছু আশা প্রকাশ পায়: যিহূদা অনুতাপ করে (ক্ষমার পাওয়ার শর্তে), কষ্ট করে সঠিক কাজ করতে চেষ্টা করে, ক্ষতিপূরণ করতে চেষ্টা করে, যীশুর মামলা উল্টাতে চেষ্টা করে, বিচার আনতে চেষ্টা করে (সব হল অনুতাপের ফল)। অথবা হতে পারে সে শুধুমাত্র চেতনার কামড়ে তা সব করে। কিন্তু বিবেক যে তারপরও কথা বলে এটা ভাল চিহ্ন, কারণ সাধারণত এর মানে যে লোকটি পুনরুদ্ধারের বাহিরে নয় (পুনরুদ্ধারের বাইরে লোকের উদাহরণ: যাত্রাপুস্তকে ফরৌণ)। হয়তো শয়তান তার শিকারীকে টিটকারী করে। কিন্তু যিহূদা এখানে তার চেতনা অনুসারে কাজ করে, তা আমরা আশার চিহ্ন হিসাবে ধরতে পারি।
- তাই যিহূদার আত্মহত্যা সম্পূর্ণ আশাহীন হয়ে পড়ার ফল হতে পারে। অথবা নিজেকে হত্যা করা ন্যায্য বিচার স্থাপনের একটা ধরণও হতে পারে। ‘গাছে টাংগিয়ে রাখা লোক ঈশ্বরের অভিশপ্ত‘ (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:২৩), হতে পারে এই আইন সম্পর্কে সে সচেতন ছিল। আবার হতে পারে সে যীশুর সাথে (যাকে শিঘ্রই ‘গাছে টাংগিয়ে রাখা’ হবে) সমান্তরাল করে নিজেকে বিচার করছে।
- মহাযাজক ও নেতারা আবার ‘সঠিকভাবে ও আইনগতভাবে’ নিশ্চিত করে যেন এই ফেলে দেওয়া টাকা মন্দিরের কোষাগারে না যায়। তাদের সমাধান খুবই চালাক ও আইনপূর্ণ এবং তাদের কাছে তা ভাল মনে হয়: অপবিত্র টাকা ব্যবহার হোক অপবিত্র বিষয়ের জন্য: তারা বিদেশীদের কবর দেওয়ার জন্য কবর স্থান কিনেন।
যিহূদার মৃত্যু ও রক্তের ক্ষেত্র কেনা
প্রেরিত ১:১৫-১৯
সেই সময় পিতর একদিন খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী প্রায় একশো কুড়িজন লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ১৬ “ভাইয়েরা, পবিত্র আত্মা অনেক দিন আগে রাজা দায়ূদের মুখ দিয়ে যিহূদার বিষয়ে যা বলেছিলেন পবিত্র শাস্ত্রের সেই কথা পূর্ণ হবার দরকার ছিল। যারা যীশুকে ধরেছিল, এই যিহূদাই তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ১৭ সে আমাদেরই একজন ছিল এবং আমাদের সংগে কাজ করবার জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।” ১৮ মন্দ কাজের দ্বারা যিহূদা যে টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে সে এক খণ্ড জমি কিনল, আর সেখানে পড়ে তার পেট ফেটে গেল এবং নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে পড়ল। ১৯ যিরূশালেমের সবাই সেই কথা শুনেছিল।
- এই গল্পটি সারাংশ করে বলে পরে কি ঘটল। এটা দেখায় বাইবেল কত স্বাধীনভাবে ভাষা ব্যবহার করে: ‘মন্দ কাজের দ্বারা যিহূদা যে টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে সে এক খণ্ড জমি কিনল’, যেখানে আমরা মথি পুস্তক থেকে জানি যে যিহূদা নিজের হাতে ক্ষেত্র কিনে নি, মহাযাজক ও নেতারা সেই ক্ষেত্র কিনেন।
- কিভাবে যিহূদার মৃত্যুর দুই ধরণ মিলানো যায়? ‘গলায় দড়ি দিয়ে মরল’ (মথি ২৭:৫) এবং ‘সেখানে পড়ে তার পেট ফেটে গেল এবং নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে পড়ল’। (প্রেরিত ৫:১৮)?
- যিহূদী গুরুদের লেখার উপরে ভিত্তি করে এর সম্ভাব্য ব্যাখা এই (যিহূদী পণ্ডিত Fruchtenbaum অনুসারে): যিহূদা আত্মহত্যা করে একটা মহা পর্বের দিনে (নিস্তার পর্ব)। ফলে যিরুশালেম শহর আনুষ্ঠানিক ভাবে অপবিত্র হয়ে যায় (লাশ উপস্থিত)। রব্বিদের লেখা অনুসারে এটা উৎসর্গ চালিয়ে যাওয়া বাধা করে দেয়, তাই ঐতিহ্যগত ভাবে মৃতদেহ দ্রুত শহরের সীমানার উপর দিয়ে হিন্নোম উপত্যকায় (একটি অশুচি জায়গা) ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত। এভাবে করলে মৃতদেহ পড়ে পেট ফেটে নাড়ীভূঁড়ি বের হওয়া স্বাভাবিক।
সারাংশ
- যেহেতু আমরা বাইবেলের ব্যক্তিদের হৃদয়ের চিন্তা-ভাবনা জানি না (যদি তা সরাসরি বলা হয় নি), আমরা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি না, যিহূদা নিয়ে ঠিক কি চলছিল। কিন্তু যে যিহূদা অনুতপ্ত হয়েছে, তা সম্ভব।
- ঈশ্বর, যিনি অনুতপ্তদের প্রতি সব সময় দয়ালু অবশ্যই ক্ষমা করেছেন যদি ক্ষমা করার সুযোগ থাকল।
- যিহূদার মৃত্যু হতে পারে চেতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই, হতাশা, আশাহীনতা ও মন্দ আত্মা পাওয়ার কারণে। কিন্তু আবারও হতে পারে অনুতাপের পরে কোনো রকম ন্যায্যতা নিয়ে আসার প্রচেষ্টা।
- আমরা যিহূদার গল্প যেভাবে ব্যাখ্যা করব না কেন, গল্পটি একটি গম্ভীর সাবধানবাণী দেয়: যেন আমরা চেতনার বিরুদ্ধে কাজ না করি এবং যেন আমরা প্রতারণা, অহংকার, স্বেচ্ছায় চিন্তা ও লোভ নিয়ে খুবই সচেতন হই। কারণ তা আমাদের হৃদয় কঠিন ও অসার করে ফেলে।