প্রেরিত পিতর তার এই চিঠিতে পাঠকদের সত্যে স্থির করে দাঁড়াতে এবং ঈশ্বরীয় চরিত্রে বৃদ্ধি পেতে বলেন। তিনি তাদের যীশুর দ্বিতীয় আগমনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেন যেন তারা ভ্রান্ত শিক্ষদের প্রভাব অস্বীকার করতে সক্ষম হয়।
প্রেরিত শিমোন-পিতর ২ পিতর চিঠির লেখক। যারা “আমাদেরই মত একই অমূল্য বিশ্বাস লাভ” করেছে, তিনি তাদের কাছে চিঠিটি লেখেন (২ পিতর ১:১)। পিতর উল্লেখ করেন যে তার পাঠকরা ইতিমধ্যে তার কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছিল (২ পিতর ৩:১)। সম্ভব যে ১ ও ২ পিতর পুস্তকের পাঠকরা একই লোক। তাই যদি হয় তবে তারা হলেন এশিয়া মাইনরে প্রদেশের পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া ও বিথুনিয়া জেলার মণ্ডলীগুলি, যা আধুনিক যুগে তুর্কী দেশের এলাকায় পড়ে (১ পিতর ১:২)। কিন্তু হয়তো ২ পিতর পুস্তকের পাঠকরা হল আলাদা একটি দল যারা পিতরের কাছ থেকে অন্য একটি চিঠি পেয়েছিল যা হারানো এবং তাই বাইবেলের সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি। তাই যদি হয় তবে ২ পিতর চিঠির পাঠকরা অজানা।
পিতর বলেন যে তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন (২ পিতর ১:১৪-১৫)। মণ্ডলীর ইতিহাস অনুসারে পিতর কমবেশি ৬৪-৬৫ খ্রীষ্টাব্দে নীরোর অত্যাচারে শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেন। তাই সম্ভাবনা বেশি যে ২ পিতর হল রোম শহর থেকে লিখিত পিতরের শেষ চিঠি।
এশিয়া মাইনরের মণ্ডলীগুলি মোটামুটি পনেরো বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে তারা নস্টিক ধরণের ভ্রান্ত শিক্ষকদের প্রভাবে পড়েছে। নস্টিক শিক্ষকরা বলত যে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বিশেষ জ্ঞান ও প্রকাশ প্রয়োজন। তারা দাবি করত যে পরিত্রাণ সবার জন্য নয় বরং শুধুমাত্র অল্প আলোকিত লোকদের জন্য যারা বিশেষ আত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। নস্টিকরা আরো দাবি করত যে বস্তু জগত মূল্যহীন ও মন্দ, কিন্তু আত্মিক জগত হল ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ। নস্টিকদের এই দ্বিখণ্ডিত চিন্তা থেকে উভয় সন্যাস (আত্মিক হওয়া মানে শরীরকে কষ্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা) এবং ‘যা চাই তাই’ ধরণের চিন্তা তৈরি হয়েছিল (শরীর নিয়ে যা চাই তাই করা যায় কারণ শরীর দ্বারা নস্টিকদের মধ্যে সে শ্রেষ্ঠ আত্মাকে দূষিত করা যায় না)।
পিতর তার চিঠি এই ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে লেখেন। তিনি দাবি করেন যে যীশুকে গভীরভাবে জানার মধ্য দিয়ে, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ একটি জীবন কাটানোর জন্য বিশ্বাসীদের যা প্রয়োজন, তা তারা ইতিমধ্যে পেয়েছে (২ পিতর ১:৩)। তিনি যীশুকে গভীরভাবে জানার গুরুত্ব স্বীকার করেন – জ্ঞান দরকার! – কিন্তু তিনি দাবি করেন যে এই জ্ঞান সব বিশ্বাসীদের ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো দাবি করেন যে জ্ঞানের আবশ্যক ফল হল ঈশ্বরীয় চরিত্র, নিজেকে দমন, ধৈর্য, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও ভাইদের প্রতি ভালবাসা (২ পিতর ১:৫-৮)। নস্টিক চিন্তা অনুসারে জ্ঞান, প্রকাশ ও আত্মিক অভিজ্ঞতা অতি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা পিতর সংশোধন করেন। তিনি দেখিয়ে দেন যে সেগুলি শেষ লক্ষ্য নয় বরং একটি মাধ্যম। যদি সেগুলি অন্যদের প্রতি ভালবাসায় ও সেবায় পরিণত না হয় তবে সেগুলি মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। পিতর তাদের চ্যালেঞ্জ করেন “এইজন্য ভাইয়েরা, ঈশ্বর যে সত্যিই তোমাদের ডেকেছেন এবং বেছে নিয়েছেন তা নিশ্চিত করে তুলবার জন্য আরও বেশী আগ্রহী হও” (২ পিতর ১:১০)।
পিতর, যিনি বারো প্রেরিতদের মধ্যে একজন এবং চোখের সাক্ষী, এমন কি রূপান্তরেরও চোখের সাক্ষী (২ পিতর ১:১৬-১৮), তিনি মণ্ডলীকে সুখবরের মূল সত্যগুলি স্মরণ করিয়ে দেন (২ পিতর ১:১২-১৫)। তিনি তাদের নিশ্চয়তা দেন যে, যা তারা ভাববাদীদের ও প্রেরিতদের কাছ থেকে শুনেছিল এবং যে সাক্ষ্যের উপর তারা তাদের বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তা হল সত্য (২ পিতর ১:১৯-২১)।
পরে পিতর ভ্রান্ত শিক্ষার মূল বিষয়ের বর্ণনা না দিয়ে বরং তিনি ভ্রান্ত শিক্ষকদের চরিত্রের বর্ণনা দেন: গাছের ফল দেখে বুঝা যায় গাছটি কি ধরণের! ভ্রান্ত শিক্ষকরা শাসন তুচ্ছ করে ও সংশোধন অগ্রাহ্য করে (২ পিতর ২:১০)। তারা লোকদের উপর প্রভাব ফেলতে ও ক্ষমতা খাটাতে চায় (২ পিতর ২:২-৩, ২:১৪, ২:১৯ ইত্যাদি), তারা লোভী (২ পিতর ২:৩, ২:১৪-১৫), তারা পাপ-স্বভাবের মন্দ ইচ্ছা মত ও শারীরিক অভিলাষে চলে (২ পিতর ২:১০, ২:১২-১৪, ২:১৯-২০ ইত্যাদি) এবং নির্দিষ্টভাবে যৌন ক্ষেত্রে মন্দ কাজ করে (২ পিতর ২:২, ২:১০, ২:১৪, ২:১৮-১৯)। তারা বানানো গল্প বলে (২ পিতর ১:১৬), তারা ছলনার কথা বলে (২ পিতর ২:৩), তারা অস্থিরমনা লোকদের লোভ দেখিয়ে ভুল পথে নিয়ে যায় (২ পিতর ২:১৪), তারা অসার ও বড় বড় কথা বলে (২ পিতর ২:১৮), তারা লোকদের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা দেয় (২ পিতর ২:১৯), তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে (২ পিতর ৩:৩) এবং যীশুর দ্বিতীয় আগমন হাস্যকর বানায় (২ পিতর ৩:৪-৫)। তারা দাবি করে যে তাদের ‘জ্ঞান’ আছে, কিন্তু তাদের ‘জ্ঞান’ কোন ঈশ্বরীয় চরিত্র, ভালবাসা ও সেবায় পরিণত হয় না বরং এর বিপরীত। পিতর বার বার সাবধানবাণী দেন ভ্রান্ত শিক্ষকদের এবং যারা তাদের কথা মানে, তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে: “তাদের শাস্তি অনেক দিন ধরে তাদের উপরে ঝুলছে, আর তাদের ধ্বংস চুপচাপ বসে নেই” (২ পিতর ২:৩)।
পিতর তার চিঠি লেখেন যেন বিশ্বাসীরা সত্যে ও ঈশ্বরীয় চরিত্রে শক্তিশালী হয়ে উঠে। তিনি অবুঝ ও অস্থিরমনা বিশ্বাসীদের কথা বলেন (তাদের সাবধান কর!)। তিনি নতুন বিশ্বাসী, যারা নিজেকে আবার খারাপ কাজে লিপ্ত করার ঝুঁকিতে আছে, তাদেরকে কথা বলেন (তাদের রক্ষা কর!)। তিনি পাঠকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের কথায় গুরুত্ব দিতে না বলেন (তাদের অস্বীকার কর!) এবং ভ্রান্তদেরকে কঠোর চ্যালেঞ্জ দেন (এক্ষুণি মন ফিরাও!)।
পিতর পাঠকদের নিশ্চয়তা দেন যে যীশুর আগমন ঘটবে। যারা বিশ্বাস করে না ও বিশেষভাবে ছলনাকরীদের জন্য তা হবে চুড়ান্ত বিচারের দিন (২ পিতর ২:৪, ২:৯, ২:১২, ৩:৭)। বিশ্বাসীদের জন্য তা হল আনন্দের ও প্রমাণিত হওয়ার দিন। পিতর চান যেন তারা এই নিশ্চয়তা ধরে রাখে (২ পিতর ১:১৬), যেন তারা কঠিন সময়েও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে (২ পিতর ২:৯) এবং যেন যীশুর দ্বিতীয় আগমনের অপেক্ষায় পবিত্র ও ঈশ্বরীয় জীবন-যাপন করতে থাকে (২ পিতর ৩:১১)।
চিঠির লেখক
লেখক নিজের পরিচয় “শিমোন-পিতর, খ্রীষ্টের একজন দাস” হিসাবে দেন (২ পিতর ১:১)। নিজেকে দাস বললেও বারো প্রেরিতদের এবং যীশুর চোখরের সাক্ষী হিসাবে তিনি অধিকারের সঙ্গে লেখেন, যেমন যখন তিনি রূপান্তরের ঘটনা (মার্ক ৯:২-৮) বর্ণনা করেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শক্তি ও তাঁর আসবার বিষয় তোমাদের কাছে জানাতে গিয়ে আমরা কোন বানানো গল্প বলি নি; আমরা তাঁর মহিমা নিজেদের চোখেই দেখেছি। “ইনি আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপরে আমি খুব সন্তুষ্ট,” স্বর্গ থেকে বলা এই কথার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্মান ও গৌরব লাভ করেছিলেন। আমরা যখন তাঁর সংগে সেই পবিত্র পাহাড়ে ছিলাম তখন স্বর্গ থেকে বলা এই কথাগুলো শুনেছিলাম” (২ পিতর ১:১৬-১৮)। শুধুমাত্র তিনজনই মানুষ আছে যারা এই সাক্ষ্য দিতে সক্ষম।
পিতর এই চিঠির লেখক তা নিয়ে সন্দেহ
পিতরের প্রথম চিঠিতে ব্যবহৃত গ্রীক হল বেশ সাধারণ গ্রীক, কিন্তু তার দ্বিতীয় চিঠিতে ব্যবহৃত গ্রীক অনেক ভাল। এই কারণে কেউ কেউ সন্দেহ করে যে পিতর ২ পিতর পু্স্তকের লেখক কিনা। কিন্তু এই সন্দেহ করা প্রয়োজন না কারণ পিতর পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন যে তিনি তার প্রথম চিঠিতে একজন সাহায্যকারী লেখক ব্যবহার করেছেন (১ পিতর ৫:১২)। তিনি তার দ্বিতীয় চিঠি লেখার জন্য অন্য একজন আরো দক্ষ সাহায্যকারী লেখক ব্যবহার করেছেন, তার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। পৌলও দুইবার উল্লেখ করেন যে তিনি সাহায্যকারী লেখকদের ব্যবহার করতেন (রোমীয় ১৬:২২, গালা ৬:১১), তাই বিষয়টি অদ্ভূৎ কিছু নয়।
তা ছাড়া পিতরের উভয় প্রথম এবং দ্বিতীয় চিঠিতে বেশ কিছু কম ব্যবহৃত গ্রীক শব্দ পাওয়া যায় যা দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে আসলে একই লেখকই দুটি চিঠি লিখেছিলেন (এই তুলনা বাংলা অনুবাদে তেমন পরিষ্কার দেখা যায় না কিন্তু গ্রীকে শব্দগুলি হুবহু ব্যবহৃত):
- ১ পিতর ১:৭,১৯ ২ পিতর ১:১ “অমূল্য”, “দাম” precious
- ১ পিতর ২:৯ ২ পিতর ১:৩ “আলাদা করা”, “ভক্তিপূর্ণ জীবন” virtue
- ১ পিতর ৪:১১ ২ পিতর ১:৫ “ঈশ্বর দেওয়া”, “যোগ করা” supply
- ১ পিতর ১:২২ ২ পিতর ১:৭ “বিশ্বাসী ভাই তোমাদের প্রিয়”, “ভাইদের প্রতি ভালাবাসা” love of brethren
- ১ পিতর ২:১২, ৩:২ ২ পিতর ১:১৬ ”লক্ষ্য করে”, “নিজেদের চোখেই দেখা” eyewitness
- ১ পিতর ১:১৯ ২ পিতর ৩:১৪ “নির্দোষ ও নিখুঁত” blemish, spot
তা ছাড়া পিতরের দুইটি চিঠিতে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও দুইটি চিঠিতে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের বর্ণনা একটু ভিন্ন তবুও অনেক সমান্তরাল চিন্তা পাওয়া যায়:
১ পিতর | ২ পিতর |
বিশ্বাসীরা কষ্ট বা অত্যাচারের কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে: আশা ধরে রাখ! | বিশ্বাসীরা ভ্রান্ত শিক্ষার কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে আছে: সত্য জেন ও পবিত্র জীবন কর! |
সান্ত্বনা, নিশ্চয়তা ও উৎসাহ দান, ক্রুশ বহন করার চ্যালেঞ্জ | সাবধানবাণী, চ্যালেঞ্জ, মন্দের বিচার হবে তার নিশ্চয়তা |
যীশুর পুনরুত্থান | যীশুর দ্বিতীয় আগমন |
এ্যাপোকালিপ্স = হঠাৎ করা পরদা সরানো যাতে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে অদৃশ্য হলেও ঈশ্বর সব সময় বিশ্বস্তভাবে বিশ্বাসীদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন, কষ্টভোগেও তাদের সঙ্গে আছেন। | পারৌসিয়া = হঠাৎ করে অনুপস্থিত রাজা তার নাগরিকদের বা দাসদের মধ্যে এসে পড়ে দেখেন কে বিশ্বস্ত বা কে বিশ্বস্ত নয়। |
১ পিতর ১:৫, ৪:৭ শেষ সময়ে | ২ পিতর ৩:৩, ১০ শেষকালে |
১ পিতর ১:১০–১২ নবীরা আগে বলে গেছেন | ২ পিতর ১:১০, ৩:২ নবীরা যা বলেছেন |
১ পিতর ৩:২০ নোহের জাহাজ দ্বারা রক্ষা | ২ পিতর ২:৫, ৩:৬ নোহের সময়ে প্লাবন বা বন্যা |
১ পিতর ২:১৬ স্বাধীন লোক হিসাবে জীবন কাটাও | ২ পিতর ২:১৯ স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা |
১ পিতর ২:৯ ঈশ্বরের আহবান > সাড়ায় ভাল স্বভাব–চরিত্রের ও সৎ কাজের লোক হওয়া | ২ পিতর ১:৩ ঈশ্বরের শক্তি যোগান > সাড়ায় ভাল স্বভাব–চরিত্রের ও সৎ কাজের লোক হওয়া |
১ পিতর ৪:৫,১৩,১৭ যীশুর আসা (‘পারৌসিয়া’) উভয় বিচার এবং আনন্দ নিয়ে আসে | ২ পিতর ৩:৭,১৩ যীশুর আসা (‘পারৌসিয়া’) উভয় বিচার এবং আনন্দ নিয়ে আসে |
১ পিতর ৪:৭ যীশুর দ্বিতীয় আগমনের নিশ্চয়তার আলোতে পবিত্র জীবন কাটাও | ২ পিতর ৩:১১,১৪ যীশুর দ্বিতীয় আগমনের নিশ্চয়তার আলোতে পবিত্র জীবন কাটাও |
তাছাড়া প্রেরিত পুস্তকে এবং ২ পিতর পুস্তকে পিতরের কথার মিল পাওয়া যায়:
- প্রেরিত ১:১৭ ২ পিতর ১:১ “লাভ করা“ obtained
- প্রেরিত ৩:১২ ২ পিতর ১:৭ “ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি“ godliness
- প্রেরিত ২:২৩ ২ পিতর ২:৮ “আইন-কানুনের বিরুদ্ধে কাজ“ unlawful
- প্রেরিত ২:২০ ২ পিতর ৩:১০ “প্রভুর দিন“ day of the Lord
- প্রেরিত ১:১৮ ২ পিতর ২:১৩, ২:১৫ “খারাপ কাজের পাওনা“ wages or reward of iniquity
তাই সম্ভাবনা বেশে যে ১ ও ২ পিতরের পু্স্তকের মধ্য ভাষার পার্থক্যের কারণ হল যে পিতর দুইজন সাহায্যকারী লেখক ব্যবহার করেন এবং দুই ধরণের সমস্যা বা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
চিঠির পাঠকরা
পিতর তার চিঠের পাঠকরা এভাবে চিহ্নিত রাখেন: “তোমরাও আমাদেরই মত একই অমূল্য বিশ্বাস লাভ করেছ। এইজন্য আমি তোমাদের কাছে এই চিঠি লিখছি” (২ পিতর ১:১)। তা থেকে জানা যায় না তিনি কোন জায়গার বিশ্বাসীদের বুঝান।
পিতর উল্লেখ করেন যে পাঠকরা তার কাছ থেকে ইতিমধ্যে একটি চিঠি পেয়েছিল (২ পিতর ৩:১) যার অর্থ হতে পারে যে ১ ও ২ পিতরের পাঠকরা একই লোক। তাই যদি হয় তবে ২ পিতর চিঠির পাঠকরা হল সে “ঈশ্বরের … সব বাছাই করা লোক” যারা “পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া, এশিয়া ও বিথুনিয়া প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশী হিসাবে বাস করছে” (১ পিতর ১:১-২)। পিতর উল্লেখ করেন যে ২ পিতর চিঠির পাঠকরা পৌলকে চিনেন এবং তার থেকে কিছু লেখাও পেয়েছিল (২ পিতর ৩:১৫-১৬)। আসলে এশিয়া মাইনর প্রদেশে পৌলের কয়েকটি চিঠি গেল: গালাতীয়, ইফিষীয়, কলসীয়, ফিলীমন ও ১ তিমথিয়, তাই এ কথা মিলত।
কিন্তু হয়তোবা ২ পিতর পুস্তকের পাঠকরা হল অন্য একটি দল বিশ্বাসীরা যারা পিতর থেকে একটি চিঠি পেয়েছে যা বাইবেলের সংগ্রহে চলে আসে নি। তা যদি হয় তবে আমরা পাঠকদের সম্বন্ধে বেশি কিছু জানি না।
চিঠির লেখার তারিখ ও স্থান
পিতর এই চিঠিতে বলেন যে তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন (২ পিতর ১:১৪-১৫)। মণ্ডলীর ইতিহাস বলে যে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সম্রাট নীরোর অত্যাচারে পিতর শহীদ মৃত্যু গ্রহণ করেন (৬৪-৬৫ খ্রীঃ)। তাই হতে পারে ২ পিতর পুস্তক পিতরের শেষ চিঠি এবং কমবেশি সে সময়ে রোম শহর থেকে লেখা।
ঐতিহাসিক পরিস্থিতি: ভ্রান্ত শিক্ষা
এশিয়া মাইনর এলাকার মণ্ডলীগুলি কমবেশে পনেরো বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে তারা ভ্রান্ত শিক্ষার প্রভাবে পড়েছে। সে ভ্রান্ত শিক্ষকরা হতে পারে এমন বিশ্বাসী যারা নস্টিক চিন্তা দিয়ে প্রভাবিত।
নস্টিসিস্ম শিক্ষা দিতে যে শুধুমাত্র জ্ঞান ও বিশেষ প্রকাশ দ্বারা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব – সব বিশ্বাসীরা যে পরিত্রাণ পাবে, তা নয় বরং অল্প কিছু আলোকিত লোক যারা বিশেষ প্রকাশ ও আত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। গ্রীক ভাষায় ‘জ্ঞান’ মানে ‘নসিস’ (gnosis)। এই শব্দ থেকে ‘নস্টিসিন্ম’ তার নাম পেয়েছিল। নস্টিসিস্ম ঘোষণা করত যে এই বস্তু জগত এবং মানুষের শরীর হল নীচু ও মন্দ, কিন্তু আত্মিক জগত ও মানুষের আত্মি হল ভাল ও উচ্চতর। নস্টিসিস্মের এই দ্বিখণ্ডিত চিন্তার ফলে দুই ধরণের আচর-ব্যবহার দেখা দিত: কেউ কেউ সারাংশে আসত যে আত্মিক হতে গেলে সন্যাসী হতে হবে (আত্মা দ্বারা মন্দ শরীরকে দমন করতে হবে)। অন্য পাশে কেউ কেউ সারাংশে আসত যে মানুষের আত্মা তার শরীরের চেয়ে এত উঁচু যে শারীরিক বিষয় আত্মাকে কখনও দুষিত করতে পারে না (তাই শরীর নিয়ে যা চাই তাই করা যায়, অনৈতিক ব্যবহার সমস্যা নেই)।
নস্টিসিস্ম আরো দাবি করত যে ঈশ্বর আত্মা হিসাবে কখনও বস্তু জগতে প্রবেশ করবে না – তা যদি করত আত্মা নিজেকে দুষিত করত। যীশু যে ঈশ্বর কিন্তু মানুষ হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন – খ্রিষ্টান ধর্মের সেই মৌলিক চিন্তা নস্টিসিস্ম মুর্খ বা জঘন্য মনে করতে। নস্টিসিস্ম দ্বারা প্রভাবিত বিশ্বাসীরা শিক্ষা দিত যে যীশু একটি আত্মা ছিলেন যিনি এই জগতে শুধুমাত্র “ভাসত” কিন্তু নিজেকে দুষিত করত না। আবারও কেউ কেউ দাবি করত যে যীশু ছিলেন একজন সাধারণ ভাল মানুষ যিনি বাপ্তিস্মের সময় ‘খ্রীষ্ট আত্ম-পাওয়া’ হয়েছিল এবং তাই তার মধ্যে অদ্ভুত ক্ষমতা দেখা গেল। কিন্তু খ্রীষ্ট আত্ম খাঁটি ও শুচি বলে কখনও কষ্টভোগ করবেন না, মৃত্যুও গ্রহণ করবেন না তাই খ্রীষ্ট আত্মা যীশুকে কষ্টভোগ ও ক্রুশীয় মৃত্যুর আগে ত্যাগ করে স্বর্গে ফিরে গেলেন। যে নস্টিকরা তাই দাবি করত তাদেরই শিক্ষাকে ‘ডোসিটিসিস্ম’ বলা হত।
ঈশ্বরীয় চরিত্র ও জ্ঞান
পিতর তার চিঠিতে নস্টিসিস্ম ও ডোসেটিসিস্মের এই ভুল চিন্তার বিরুদ্ধে লেখেন। তিনি নস্টিকদের সর্বপ্রিয় শব্দ “জ্ঞান” তার প্রারম্ভিকায় তুলে নেন (২ পিতর ১:২): “ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু যীশুকে গভীর ভাবে জানবার মধ্য দিয়ে তোমাদের উপর প্রচুর দয়া ও শান্তি থাকুক”। তিনি চিঠির শুরুতেই একটি ভুল চিন্তা সংশোধন করেন: জ্ঞান নিজেই আসল নয়, যীশুকে জানাই আসল।
পিতর ঘোষণা করেন যে যা একটি ঈশ্বরীয় জীবনের জন্য প্রয়োজন ঈশ্বর তা তিনি ইতিমধ্যে দিয়েছেন – এবং প্রত্যেক বিশ্বাসীকে দিয়েছেন (২ পিতর ১:৩-৪): “যিনি তাঁর মহিমা ও তাঁর গুণের দ্বারা আমাদের ডেকেছেন, তাঁকে গভীর ভাবে জানবার মধ্য দিয়েই তাঁর ঈশ্বরীয় শক্তি আমাদের এমন সব দান দিয়েছে যার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি। তিনি নিজের মহিমায় ও গুণে আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান ও মহান প্রতিজ্ঞা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হল, মানুষের মন্দ ইচ্ছার দরুন জগতে যে সব নোংরামি জমা হয়েছে তা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যেন ঈশ্বরের স্বভাবের ভাগী হও”। পিতর জ্ঞানকে ভাল বলেন কিন্তু তিনি দাবি করেন যে জ্ঞান অবশ্যই একটি ঈশ্বরীয় জীবন উৎসাহিত করবে। যদি জ্ঞান পেয়ে একজন বিশ্বাসী আরো যীশুর মত হয়ে না যান তবে সে জ্ঞান জ্ঞানই নয়।
পিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রমবৃদ্ধ দেখান (২ পিতর ১:৫-৮): “এইজন্য খুব আগ্রহী হয়ে তোমাদের বিশ্বাসের সংগে ভাল স্বভাব, ভাল স্বভাবের সংগে জ্ঞান, জ্ঞানের সংগে নিজেকে দমন এবং নিজেকে দমনের সংগে ধৈর্য, ধৈর্যের সংগে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, ভক্তির সংগে ভাইদের প্রতি ভালবাসা এবং সেই ভালবাসার সংগে আরও গভীর ভালবাসার মনোভাব যোগ কর”। পিতর দেখান যে সবচেয়ে ভিত্তিক বিষয় জ্ঞান নয় বরং বিশ্বাস এবং যে জ্ঞান বিশ্বাসীর মধ্যে যীশুর মত মনোভাব, আচরণ ও অন্যদের প্রতি সেবা তৈরি করার কথা। পিতর তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেন: “এইজন্য ভাইয়েরা, ঈশ্বর যে সত্যিই তোমাদের ডেকেছেন এবং বেছে নিয়েছেন তা নিশ্চিত করে তুলবার জন্য আরও বেশী আগ্রহী হও। এই সব করলে তোমরা কখনও উছোট খাবে না” (২ পিতর ১:১০-১১)। ঈশ্বর সবাইকে নিঃশর্তভাবে মনোনিত করেছেন ও আহ্বান দান করেছেন কিন্তু এই দয়া পেয়ে প্রত্যেকজনের আগ্রহের সঙ্গে সাড়া দিতে ও বিশ্বস্তভাবে জীবন-যাপন করা দরকার।
পিতর, যিনি বারো প্রেরিতদের একজন এবং যীশুর (এবং এমন কি রূপান্তরের চোখের সাক্ষী, ২ পিতর ১:১৬-১৮), তিনি পাঠকদের অধিকারের সঙ্গে সুসমাচারের মূল সত্যগুলি স্মরণ করিয়ে দেন (২ পিতর ১:১২-১৫)। তিনি তাদের নিশ্চয়তা দেন যে যা তারা নবীদের এবং প্রেরিতদের থেকে শুনে এসেছিল, তা সবই সত্য (২ পিতর ১:১৯-২১)। নস্টিকরা তাদের ‘আত্মিক অভিজ্ঞতাগুলি’ নিয়ে বড় কথা বলে, কিন্তু যে অভিজ্ঞতা পিতর লাভ করেছেন তা হল এর চেয়ে অদ্ভূত – এবং বাস্তব।
ভ্রান্ত শিক্ষকদের চরিত্র ও ব্যবহার
পিতর তার চিঠিতে তেমন উল্লেখ করেন না ভ্রান্ত শিক্ষকরা কি শিক্ষা দিত এবং তিনি তা নিয়ে তর্কও করেন না। কিন্তু তিনি ভ্রান্ত শিক্ষকদের চরিত্র ও ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট বর্ণনা দেন: গাছের ফল দেখলে গাছকে জানা যায়! ভ্রান্ত শিক্ষকদের বর্ণনাগুলি লক্ষ্য করে সেগুলি কমবেশি ৪টি বিষয়ে ভাগ করা যায়: ভ্রান্ত শিক্ষকরা
- অধিকারের অধীনে থাকতে চায় না এবং নেতাদের ও সংশোধন অমান্য করে।
- দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে চালিত। তারা প্রতারণা দিয়ে লোকদের উপর প্রভাব ও ক্ষমতা বিস্তার করে।
- লোভ দিয়ে চালিত এবং তারা লাভ করার জন্য অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
- যৌন-আকাঙ্ক্ষা ও শারীরিক বিলাসিতা দিয়ে চালিত।
নিচে দেওয়া তালিকায় ভ্রান্ত শিক্ষকদের গুনগুলি সে ৪টি বিষয় অনুসারে রং দিয়ে দেখানো হল:
- ২ পিতর ১:১৬ বানানো গল্প বলে
- ২ পিতর ২:১ প্রভুকে অস্বীকার করে যিনি তাদের কিনেছেন
- ২ পিতর ২:২ অনেকেই তাদের দেখাদেখি লস্পট হয়ে উঠবে
- ২ পিতর ২:৩ লোভের বশে ছলনার কথা বলে তারা নিজেদের লাভের জন্য তোমাদের কাজে লাগাবে
- ২ পিতর ২:৩ তাদের জন্যই লোকেরা সত্যের পথের নিন্দা করবে
- ২ পিতর ২:১০ পাপ-স্বভাবের মন্দ ইচ্ছা মত চলে
- ২ পিতর ২:১০ শাসন তুচ্ছ করে
- ২ পিতর ২:১০ দুঃসাহসী, নিজেদের ইচ্ছামত চলে
- ২ পিতর ২:১০ পবিত্রদের বিরুদ্ধে অপমাণের কথা বলতে ভয় পায় না
- ২ পিতর ২:১২ বুদ্ধিহীন জীব-জানোয়ারেরা তাদের স্বাভাব ইচ্ছার অধীন
- ২ পিতর ২:১২ তাদেরই মত তারা যা বোঝে না তার সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে
- ২ পিতর ২:১৩ দিনের বেলায় ভোজ সভায় হৈ-হল্লা করে মদ খেতে আনন্দ পায়
- ২ পিতর ২:১৩ তারা তোমাদের সঙ্গে খেতে বসে তখন হৈ-হল্লা করে মদ খেতে খেতে তদের কামনায় তারা সেই খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে লজ্জা ও অসম্মান আনে
- ২ পিতর ২:১৪ তাদের চোখ ব্যভিচারে ভরা
- ২ পিতর ২:১৪ এবং তারা পাপ কাজ করা কখনও বন্ধ করে না
- ২ পিতর ২:১৪ যারা অস্থিরমনা তাদের তারা লোভ দেখিয়ে ভুল পথে নিয়ে যায়
- ২ পিতর ২:১৪ তাদের অন্তর কেবল লোভ করতেই শিখেছে
- ২ পিতর ২:১৫ তারা বিলিয়মেরনপথ ধরেছে…মন্দ কাজের পুরস্কার পেতে চায়
- ২ পিতর ২:১৫ তারা সোজা পথ ছেড়ে ভুল পথে গেছে… বিলিয়মের পথ ধরেছে
- ২ পিতর ২:১৭ শুকিয়ে যাওয়া ফোয়ারার মত…ঝোড়ো হাওয়ার বয়ে নিয়ে যাওয়া কুয়াশার মত
- ২ পিতর ২:১৮ তারা অসার ও বড় কথা বলে
- ২ পিতর ২:১৮ মানুষের পাপ-স্বভাবের কামনা পূর্ণ ইচ্ছা জাগিয়ে তুলে তারা এমন লোকদের ভুল পথে নিয়ে যায়
- ২ পিতর ২:১৯ তারা সেই লোকদের স্বাধীনতা দেবার প্রতিজ্ঞা করে
- ২ পিতর ২:১৯ নিজের জঘন্য কাজের দাস হয়ে থাকে
- ২ পিতর ২:২০ জগতের মন্দতা থেকে পালিয়ে গিয়েও তখন তারা আবার সেই একই মন্দের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে আর কাছে হার মেনেছে
- ২ পিতর ২:২২ কুকুর নিজের বমির দিকে ফেরে…শুকরকে ধোওয়ানো হলেও সে কাদায় গড়াগড়ি দেয়
- ২ পিতর ৩:৩ ঠাট্টা বিদ্রুপই করবে
- ২ পিতর ৩:৩ তারা নিজেদের কামনা-বাসনা অনুসারেই চলবে
- ২ পিতর ৩:৪-৫ যীশুর ২য় আগমন ও বিশ্বাসীদের নিয়ে হাসাহাসি করবে
পিতর ভ্রান্ত শিক্ষকদেরকে সাবধানবাণী দেন: যদি তারা মন না মন ফিরাতে প্রক্যাখ্যান করে তবে তারা শেষ পর্যন্ত নিজের উপর বিচার নিয়ে আসবে: “তাদের শাস্তি অনেক দিন ধরে তাদের উপরে ঝুলছে, আর তাদের ধ্বংস চুপচাপ বসে নেই” (২ পিতর ২:৩)। এই ছোট চিঠিতে পিতর বারো বার বিচার উল্লেখ করেন! যারা ভ্রান্ত শিক্ষকদের দ্বারা প্রভাবিত তারা যদি এই পথে থেকে মন না ফিরায় তবে শেষ পর্যন্ত তাদের উপরও বিচার আসবে – যেমন শিক্ষক তেমন অনুসরনকারী।
পিতন ভ্রান্ত শিক্ষকদের বর্ণনা করার জন্য শক্তিশালী রূপক ব্যবহার করেন: “কিন্তু যে বুদ্ধিহীন জীব-জানোয়ারেরা তাদের স্বাভাবিক ইচ্ছার অধীন এবং ধরে মেরে ফেলবার জন্যই যাদের জন্ম” (২ পিতর ২:১২), “এই লোকেরা দিনের বেলায় ভোজ সভায় হৈ-হল্লা করে মদ খেতে আনন্দ পায় … তাদের কামনায় তারা … লজ্জা ও অসম্মান আনে” (২ পিতর ২:১৩)। “তাদের চোখ ব্যভিচারে ভরা এবং তারা পাপ কাজ করা কখনও বন্ধ করে না” (২ পিতর ২:১৪), as “এই লোকেরা শুকিয়ে যাওয়া ফোয়ারার মত এবং ঝোড়ো হাওয়ায় বয়ে নিয়ে যাওয়া কুয়াশার মত” (২ পিতর ২:১৭)।
পিতর তার পাঠকদের বলেন একজন শিক্ষক তার বড় কথা বা আত্মিক ভাব দিয়ে মূল্যায়ন না করতে বরং তাদের চরিত্র, মনোভাব ও ব্যবহার দেখে। এটাতে তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝা যাবে।
ভ্রান্ত শিক্ষার প্রভাব হলে তবে কি করব?
যখন ভ্রান্ত শিক্ষা একটি মণ্ডলীতে প্রবেশ করেছে তবে অনেক কিছু ঘটবে: কিছু বিশ্বাসীরা প্রজ্ঞাবান বলে তা অস্বীকার করবে। কিছু বিশ্বাসীরা এই শিক্ষার বিপদ বুঝবে কিন্তু তারপরেও এক পরিমানে প্রভাবিত হবে। কিছু বিশ্বাসীরা ভ্রান্ত শিক্ষার প্রভাবে পড়বে এবং আবারও কিছু বিশ্বাসীরা আগাগোড়া শিক্ষা গ্রহণ করবে ও তার প্রচারক হয়ে যাবে। পিতর তাই তার চিঠিতে বিভিন্ন অবস্থার বিশ্বাসীদের কাছে কথা বলবেন:
পিতর সব বিশ্বাসীদের সত্যে ও ঈশ্বরীয় আচার-ব্যবহারে আরো শক্তিশালী গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে। তিনি প্রজ্ঞাহীন ও অস্থিরমনা বিশ্বাসীদের সাবধানবাণী দেন (২ পিতর ৩:১৭): “তোমরা এই কথা আগেই জানতে পেরেছ বলে সাবধান হও, যেন এই সব উচ্ছঙ্খল লোকদের ভুল তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়, আর তোমাদের মনের স্থিরতা থেকে তোমরা সরে না পড়”। তিনি নতুন বিশ্বাসীদের শক্তিশালীভাবে সাবধান করেন যেন তারা ভ্রান্ত শিক্ষার ফাঁদে না পড়ে (২ পিতর ২:১৮-২২): “আমাদের প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টকে গভীর ভাবে জানবার ফলে জগতের মন্দতা থেকে পালিয়ে গিয়েও যখন তারা আবার সেই একই মন্দের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে তার কাছে হার মেনেছে, তখন তাদের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয়েছে”। ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের বিষয়ে পিতর বলেন (২ পিতর ৩:৩-৫): “প্রথমে এই কথা মনে রেখো যে, ভাল বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাই যাদের স্বভাব তারা শেষকালে এসে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ই করবে। তারা নিজেদের কামনা-বাসনা অনুসারেই চলবে, আর বলবে, “তাঁর আসবার যে প্রতিজ্ঞা ছিল তার কি হল?”। পিতর বিশ্বাসীদের এই ধরণের লোকদেরকে কান না দিতে বলেন।
যখন পিতর তার চিঠিতে একজনকে ‘ভ্রান্ত শিক্ষক’ বলেন তিনি এমন লোক বুঝান যে পরিকল্পিতভাবে লোকদের উল্টাপাল্টা শিক্ষা দেয় যেন সে তার নিজের স্বার্থপর উদ্দেশ্যগুলি পূর্ণ করতে পারে, এমন লোক যে অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে যেন তাদের বাধ্য করিয়ে সে তার উদ্দেশ্য – দমন, লোভ বা কামনা হোক – পূর্ণ করতে পারেন। এই ধরণের প্রতারকদের পিতর কঠোর সাবধানবাণী দেন এবং – যদি তারা মন না ফিরায় – তাদের প্রভাব অগ্রাহ্য করে তাদেরকে মণ্ডলী থেকে বের করতে হবে।
নতুন নিয়মের অন্য কিছু পুস্তকে এমন লোকদের উল্লেখ করা হয়েছে যারা বিশ্বাসী, কিন্তু নিজেই প্রতারিত এবং এভাবে তারা একটি খারাপ প্রভাব ফেলে। এই ধরণের ভ্রান্ত লোক বা শিক্ষকের দোষ কিছুটা কম। কিন্তু তারা যদি সংশোধন মেনে না নেয় তবে তাদেরও বেশিক্ষণ মণ্ডলীতে মেনে নেওয়া যাবে না। প্রতারিত হওয়া (‘আমি জানতাম না!’) তাই সম্পূর্ণ নির্দেষ একটি অবস্থা, তা নয়। হয়তো কেউ শুরুতে আসলে নির্দোষভাবে প্রতারিত হয়েছে (জ্ঞানের অভাবে, অল্প বয়সের কারণে ইত্যাদি) কিন্তু সময় পার হতে হতে এবং সংশোধন অগ্রাহ্য করতে করতে প্রতারিত হওয়া আর নির্দোষ বিষয় নয়। একজন প্রতারিত মানুষ শেষে প্রতারণা ধরে রেখেছে এবং এভাবে সে প্রতারকেও পরিণত হয়।
মণ্ডলীতে ভ্রান্ত শিক্ষার প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়? এই চিঠিতে বুঝা যায় পিতরের উত্তর কি: বিশ্বাসীদের সত্যে, সঠিক শিক্ষায়, ঈশ্বরীয় জীবন-যাপনে ও অন্যদের সেবায় বৃদ্ধি করানো দ্বারা তাদের শক্তিশালী হতে সাহায্য করা দরকার। শক্তিশালী ও ‘সুসাস্থ্যের’ বিশ্বাসীরা ভ্রান্ত শিক্ষা প্রতিরোধ করতে জানবে।
যীশুর দ্বিতীয় আগমন
২ পিতর চিঠি দেখে বুঝা যায় যে ভ্রান্ত শিক্ষরা মণ্ডলীর একটি শিক্ষা নিয়ে বিশেষভাবে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত: যীশুর দ্বিতীয় আগম। তারা যীশু দ্বিতীয় আগন হাস্যকর বানিয়ে বলত “তাঁর আসবার যে প্রতিজ্ঞা ছিল তার কি হল? জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে যেমন চলছিল ঠিক তেমনি আমাদের পূর্বপুরুষদের মৃত্যুর পর থেকে সব কিছু তো সেই একইভাবে চলছে” (২ পিতর ৩:৪)। নস্টিসিস্ম বলত যে একজন পবিত্র, খাঁটি ঈশ্বর যিনি আত্ম কখনও একটি মনুষের শরীরের আকারে বস্তু জগতে নেমে মানুষের মধ্যে বাস করতেন না। তাই যীশুর দ্বিতীয় আগমনও তাদের চোখে হাস্যকর।
পিতের বিশ্বাসীদের নিশ্চয়তা দেন যে সে সুখবর তারা নবীদের ও প্রেরিতদের থেকে শুনেছিল তা হল সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য (২ পিতর ৩:১-২) এবং যে ঈশ্বর আগেও মানুষকে বিচার করতেন, যেমন নোহের সময়ে (২ পিতর ৩:৫-৭)। যীশুর আগমন যে এখনও ঘটে নি তার কারণে পিতর পাঠকদের সন্দেহ না করতে বা অস্থির না হতে বলেন – কারণ ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনা ও সময় নিয়ে দৃষ্টি হল এমন কিছু যা মানুষ সম্পূর্ণ বুঝতে পারে না (২ পিতর ৩:৮)। পিতর তার চেয়ে বরং পাঠকদের উৎসাহিত করেন সে দেরি ঈশ্বরের দয়া হিসাবে বুঝতে: “আসলে তিনি তোমাদের প্রতি ধৈর্য ধরছেন, কারণ কেউ যে ধ্বংস হয়ে যায় এটা তিনি চান না, বরং সবাই যেন পাপ থেকে মন ফিরায় এটাই তিনি চান” (২ পিতর ৩:৯)।
যীশুর দ্বিতীয় আগমন নিশ্চিত হবে, এই সত্যের আলোতে আমি বিশ্বাসী হিসাবে বর্তমান জীবন কিভাবে করব? পিতরের উত্তর হল: এখন আমাদের পবিত্র ও ঈশ্বরীয় জীবন করা দরকার! ২ পিতর ৩:১১-১২ পদে তিনি বলেন: “সব কিছু যখন এইভাবে ধ্বংস হতে যাচ্ছে তখন তোমাদের কি রকম লোক হওয়া উচিত? আগ্রহের সংগে ঈশ্বরের দিনের অপেক্ষায় থেকে তোমাদের পবিত্র ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটানো উচিত। সেই দিন মহাকাশ পুড়তে পুড়তে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আগুনে গলে যাবে”। যেমন নতুন নিয়মের অন্যান্য লেখকও বলেন: যীশুর দ্বিতীয় আগমনের নিশ্চয়তা বিশ্বাসীকে অলস বা পঙ্গু বা ভিত বানানো উচিত নয়। তার চেয়ে বরং তা বিশ্বাসীদের অনুপ্রেরণা দেওয়া উচিত যেন তারা দৈনন্দিন জীবনে বিশ্বস্ত হয় এবং যেন যা ঈশ্বর করতে বলেছেন তা নির্ভয়ে করে জেনে যে “যারা প্রভুকে ভক্তি করে তাদের তিনি পরীক্ষার মধ্য থেকে রক্ষা করতে জানেন” (২ পিতর ২:৯)।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।