যখন প্রতিজ্ঞাত দেশ দখলের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, ইস্রায়েল জাতি তা করতে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ঈশ্বর তাদেরকে চল্লিশ বছর মরুভূমিতে বিচরণ করান, এমন সময় পর্যন্ত যে, একটি নতুন বাধ্য ও বিশ্বাসপূর্ণ প্রজন্ম উঠে আসে।
ইস্রায়েল জাতি যখন চল্লিশ বছর ধরে মরুভূমিতে বিচরণ করে, সম্ভবত সেই সময়ে মোশি তার পাঁচটি পুস্তক লেখেন (মোশির পঞ্চপুস্তক, Pentateuch)। তিনি পঞ্চপুস্তকে উভয় ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো এবং ঈশ্বরের আইন-কানুনের বর্ণনা দেন। কিভাবে জানা যায় যে, মোশি পঞ্চপুস্তকের লেখক? পাঁচটি পুস্তকে বেশ কয়েক বার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মোশি “সব কিছু লিখে রাখলেন”। পুরাতন ও নতুন নিয়মের পরবর্তী লেখকেরা – এবং যীশু নিজেই – প্রায়ই “মোশির লেখা” হিসাবে চিহ্নিত করে এই পাঁচটি পুস্তকের উল্লেখ বা উদ্ধৃতি করেন। তাই মোশি লেখক হিসাবে ঘোষিত। গণনাপুস্তক হল মোশির চতুর্থ পুস্তক।
যেমন মোশির সব পুস্তক, গণনা পুস্তকও অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিত্তিক একটি পুস্তক। গণনাপুস্তকে ইস্রায়েলের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়, কিভাবে তারা সিনাই পাহাড় থেকে রওনা দেয়, প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণ সীমানায় পৌঁছায়, তা দখল করতে প্রত্যাখ্যান করে এবং ফলে চল্লিশ বছর মরুভূমিতে বিচরণ করে।
গণনাপুস্তকের ঘটনাগুলো সিনাই পাহাড়ে শুরু হয়। ঈশ্বর তাঁর জাতিকে গঠনের কাজটি আরো এগিয়ে নিয়ে যান: তাঁর আদেশে মোশি একটি সামরিক গণনা করেন, ইস্রায়েলের ছাউনি সাজিয়ে নেন, তাদের যাত্রা করার পদ্ধতি ঠিক করেন এবং তাদের আরো আইন-কানুন দেন। ইস্রায়েলের প্রথম জাত দাবি করার পরিবর্তে ঈশ্বর লেবীয় বংশকে গ্রহণ করেন এবং আবাস-তাম্বুর দেখাশোনার ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব দান করেন। আরো কার্যকারীভাবে যোগাযোগ করার জন্য তূরী বাজানোর একটি পদ্ধতি স্থাপন হয়। ইস্রায়েল জাতি বাধ্য ও ইচ্ছুক (গণনা ১-১০)।
যখন মেঘের থাম, অর্থাৎ ঈশ্বরের দৃশ্যমান উপস্থিতি আবাস-তাম্বু থেকে ওঠে, ইস্রায়েল জাতি সিনাই পাহাড় থেকে উত্তরদিকে, অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে রওনা দেয়।
যাত্রা করার সময় বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয় (গণনা ১০-১২)। ইস্রায়েলীয়দের অনবরত অভিযোগ ও অবিশ্বাস মোশিকে ক্লান্ত করে ফেলে এবং ঈশ্বরকে রাগান্বিত করে তুলে। ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদের মনকে নেতিবাচক চিন্তায়, অসন্তোষে ও অবিশ্বাসে পড়তে দেয়। প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণের সীমানায় যখন তারা পৌঁছায়, তখন তারা ঈশ্বরের ক্ষমতা ও বিশ্বস্ততা অস্বিকার করতে করতে তাদের এমন অবস্থায় হয় যে, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশ দখলের জন্য প্রয়োজনীয় সাহস ও বিশ্বাস আর উঠাতে সক্ষম হয় না। তারা কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে একদম প্রত্যাখ্যান করে।
ঈশ্বর তাদেরকে নিজের অবিশ্বাসের কথা অনুসারে শাস্তি দেন: তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে যেতে চাইল না, তাই ঈশ্বরের শাস্তি হল যে, তারা দেশটি পাবে না। তারা মরুভূমিতে ঘুরে মারা যাওয়া ভাল বলেছে, তাই তাদের শাস্তি হবে মরুভূমিতে ঘুরে মারা যাওয়া। তারা বলেছিল যে, তাদের সন্তানেরা শত্রুদের হাতে পড়বে (গণনা ১৪:৩), ঈশ্বর বলেন যে, তিনি এই সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখবেন এবং তারাই পাবে যা বর্তমান প্রজন্ম এইমাত্র হাত ছাড়া করেছে (গণনা ১৩-১৪)।
ইস্রায়েল জাতির মরুভূমিতে চল্লিশ বছর বিচরণের সময় সম্বন্ধে মোশি গণনাপুস্তকে বেশি কথা বলেন না, কিন্তু যখন ইস্রায়েলের দ্বিতীয় প্রজন্ম উঠে আসে, তখন তিনি ঘটনাগুলো আবার উল্লেখ করতে শুরু করেন: ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে উত্তরদিকে যাত্রা শুরু করে। পথে তারা ইদোম, মোয়াব ও অম্মোন দেশে পা না দিয়ে চারিদিকে হেঁটে যায়, কিন্তু ইম্মোরীয়দের ভূমি তারা ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে দখল করে। ইম্মোরীয়দের সেই ভূমি মোশি ইস্রায়েলের তিনটি বংশের উত্তরাধিকার হিসাবে ভাগ করে দেন। এভাবে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে দেশের অধিকারী হওয়ার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে শুরু করেন (গণনা ২০-২১,৩১-৩৬)।
দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েলও সমস্যায় পড়ে, বিশেষভাবে যখন মিদিয়ন ও মোয়াব দেশের নেতারা ইস্রায়েলকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য গণক বিলিয়মকে ডাকে। ঈশ্বর বিলিয়মের অভিশাপ আশীর্বাদে পরিণত করেন কিন্তু বিলিয়ম মিদিয়ন ও মোয়াব নেতাদেরকে পরামর্শ দেন, যেন তারা ইস্রায়েল জাতিকে ব্যভিচার ও দেবতাপূজায় লিপ্ত করে। কিছু ইস্রায়েলীয়েরা এভাবে পাপ করার মাধ্যমে সারা জাতির উপর ক্ষতি নিয়ে আসে, কিন্তু ইস্রায়েল জাতির বড় অংশ মন ফিরায় এবং প্রতিশোধে মিদিয়ন দেশকে পরাজিত করে (গণনা ২২-২৫,৩১)। গণনাপুস্তকের শেষে ইস্রায়েল যর্দনের পূর্ব পাড়ে ছাউনি ফেলে। তারা পশ্চিম দিকে যাওয়ার ও কনান দেশ দখল করার জন্য প্রস্তুত।
গণনাপুস্তকের লেখক, সংক্ষণ ও লেখার তারিখ
গণনাপুস্তক হল মোশির পঞ্চপুস্তকের মধ্যে চতুর্থ পুস্তক। সম্ভবত, মোশি পঞ্চপুস্তক লেখেন যখন ইস্রায়েল জাতি চল্লিশ বছর মরুভূমিতে বিচরণ করে। পঞ্চপুস্তকে উভয় ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা এবং ঈশ্বরের দেওয়া আইন-কানুন পাওয়া যায়। আমরা কিভাবে জানতে পারি যে, মোশি পঞ্চপুস্তকের লেখক? পাঁচটি পুস্তকে বেশ কয়েক বার উল্লেখ করা হয়েছে যে মোশি “সব কিছু” লিখে রাখতেন (যাত্রা ১৭:১৪, ২৪:৪, ৩৪:২৭, গণনা ৩৩:২, ২য় বিবরণ ৩১:৯)। গণনা ৩৩:১-২ পদে মিসর থেকে মোয়াবের তলভূমি পর্যন্ত মোশি ইস্রায়েলের যাত্রার একটি বিস্তারিত ভৌগলিক বর্ণনা লিখে রাখেন। মোশি গণনা পুস্তক একটি সারাংশ দিয়ে সমাপ্ত করেন: “যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দন নদীর ধারে মোয়াবের সমভূমিতে সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের এই সব আদেশ ও নিয়ম দিয়েছিলেন” (গণনপ ৩৬:১৩)। তাই সম্ভাবনা বেশি যে, মোশি সিনাই পাহাড় থেকে সেই ৪০ বছর ধরে গণনা পুস্তকটি লিখতে থাকেন, অর্থাৎ ১৪৪৫ থেকে ১৪০৬ খ্রীষ্টপূর্ব পর্যন্ত, যখন ইস্রায়েল যর্দনের পূর্ব পাড়ে মোয়াবের তলভূমিতে পৌঁছায়।
পুরাতন নিয়মের পরবর্তী লেখকেরা বার বার পঞ্চপুস্তককে (এবং তার মধ্যে গণনাপুস্তকও) “মোশির আইন-কানুন” বা “মোশির পুস্তকগুলি” বলে উল্লেখ বা উদ্ধৃতি করেন (যিহো ১:৭-৮, ১ রাজা ২:৩, ১৪:৬, দানিয়েল ৯:১১-১৩, ইষ্রা ৬:১৮, নহি ১৩:১, মালা ৪:৪)। পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, তারা পঞ্চপুস্তকের লেখক হিসাবে মোশিকে চিহ্নিত রাখেন। ঠিক তেমনি নতুন নিয়মের লেখকেরা – এবং যীশু নিজেই – আইন-কানুন থেকে উদ্ধৃতি করার সময় তা “মোশির লেখা” হিসাবে চিহ্নিত রাখেন এবং এভাবে মোশিকে লেখক হিসাবে ঘোষিত করেন (মথি ৮:৪, ২২:২৪, মার্ক ১:৪৪, ১২:২৬, লূক ১৬:২৯-৩১, যোহন ১:১৭, ৭:১৯, প্রেরিত ৩:২২, ২৬:২২, রোমিয় ১০:১৯, ১ করি ৯:৯, ২ করি ৩:১৫)। এভাবে আমরা নিশ্চিত জানতে পারি যে, মোশি পঞ্চমপুস্তকের লেখক।
ইস্রায়েল জাতির জন্য গণনা পুস্তকটির গুরুত্ব
পঞ্চপুস্তকের অন্যান্য পুস্তকের মত গণনা পুস্তকটিও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিক্তিক পুস্তক, যাতে সিনাই পাহাড় থেকে ইস্রায়েল জাতির রওনা, প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে যাত্রা, প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল করার প্রত্যাখ্যান এবং ফলে মরুপ্রান্তরে ৪০ বছর বিচরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ঈশ্বরেরই দৃষ্টিতে দেখানো হয় – মোশি দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েলকে দেখান, কেন এবং কিভাবে তাদের মা-বাবারা প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং ফলে তা অধিকার করা থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করেছিল। পুস্তকটি বর্ণনা করে, কোন কারণে ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদেরকে এখন মরুপ্রান্তরে খুঁজে পায়। প্রথম প্রজন্ম ইস্রায়েল অভিযোগ করতে করতে নিজেদের মনকে এমন নেতিবাচক চিন্তায়, অসন্তোষে ও অবিশ্বাসে পড়তে দিয়েছিল যে, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশ দখলের জন্য প্রয়োজনীয় সাহস ও বিশ্বাস আর উঠাতে সক্ষম হয় নি। দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েল যেন তাদের মা-বাবাদের মত ভুল পুনরায় না করে, গণনা পুস্তকটি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। পুস্তকটি দ্বারা মোশি ইস্রায়েলের দ্বিতীয় প্রজন্মকে শিষ্যত্ব দেন, যেন তারা বিশ্বাসে ও বাধ্যতায় উঠে আসে, অর্থাৎ যখন তারাও মা-বাবাদের মত সেই একই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে (প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল) তখন যেন তারা ভেঙ্গে না পড়ে বরং সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যায়।
গণনা ১, ২৬ অধ্যায় লোকগণা
ইস্রায়েল যখন এখনও সিনাই পাহাড়ে উপস্থিত তখন ঈশ্বর একটি লোক বা সেনা গণনা দিয়ে তাদেরকে মানসিকভাবে ও ব্যবহারিকভাবে পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। শুধুমাত্র ২০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের পুরুষদের গুনা হয়। ২০ বছরের চেয়ে কম বয়সের যুবকদের সেনা হিসাবে নেওয়া হয় না। গণনায় মোট ৬ লক্ষ পুরুষ বা সেনা পাওয়া য়ায় (গণনা ১)। ৪০ বছর পরে যখন দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েল কনান দেশ দখল করার জন্য যর্দনের পূর্বের পাড়ে উপস্থিত তখন দ্বিতীয় একটি গণনা করা হয় (গণনা ২৬)। মিসরে ইস্রায়েল জাতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল (যাত্রা ১:৭), কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, মরুভূমিতে সেই ৪০ বছরের মধ্যে ইস্রায়েলের লোকসংখ্যা কিছুটা কমে। হয়তো তা যুদ্ধের কারণে হয়েছিল, কিন্তু সম্ভাবনা বেশি যে, এর প্রধান কারণ হল ঈশ্বরের বিচারগুলো (গণনা ১১, ১৩-১৪, ১৬, ২১, ২৫)। এছাড়া তারা সম্ভবত তাদের দর্শন ও প্রত্যাশার অভাবের কারণে কম সন্তান নিয়েছিল।
গণনা ২,১০ অধ্যায় ইস্রায়েলকে সংগঠিত করা
ঈশ্বরের পরিচালনায় মোশি ইস্রায়েলের ছাউনি নতুন করে সংগঠিত করেন: ঈশ্বর ও তাঁর মিলন-তাম্বু ঠিক মাঝখানে থাকে, চারিদিকে পুরোহিত ও লেবীয় বংশের পরিবারগুলো থাকে এবং তার বাইরে উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ৪টি ছাউনি থাকে যেখানে এক একটা ছাউনিতে ৩টি বংশ বাস করে (গণনা ২)। এভাবে ইস্রায়েলের ছাউনি আরো সাজানো, সুন্দর ও কার্যকারী হয়ে যায় এবং অভিমুখী করার জন্য আরো সুবিধার হয়। ঈশ্বর তাঁর জাতির কেন্দ্র হিসাবে তাদের মধ্যেই বাস করেন, এই বিষয়ও ইস্রায়েলের ছাউনি দেখে খুব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায়।
ছাউনির সংগঠনের সাথে রওনা দেওয়ার একটি অনুক্রমও স্থাপন করা হয়। যখন মেঘের থাম, অর্থাৎ ঈশ্বরের দৃশ্যমান উপস্থিতি আবাস-তাম্বু থেকে ওঠে তখন পুরোহিতেরা খুব সতর্কতা ও ভক্তিপূর্ণ ভয়ের সঙ্গে আবাস-তাম্বু গুছিয়ে নেন (গণনা ৪)। নিয়ম-সিন্দুক সবার প্রথমে রওনা দেয়, পরে আসে প্রথম ছাউনি (যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন বংশ), পরে লেবী বংশের গের্শোনীয়েরা ও মরারীয়েরা (যারা আবাস-তাম্বুর কাঠামো, পর্দা ও ঢাকনা বহণ করে), পরে দ্বিতীয় ছাউনি (রূবেণ, শিমিয়োন ও গাদ বংশ), পরে লেবীয় বংশের কহাতীয়েরা (যারা তাম্বুর আসবাব-পত্র বহন করে), পরে তৃতীয় ছাউনি (ইফ্রায়িম, মনঃশি ও বিন্যামিন বংশ) এবং শেষে চতুর্থ ছাউনি (দান, আশের ও নপ্তালী বংশ, গণনা ২)। মেঘের থাম এবং নিয়ম-সিন্দুক সমস্ত জাতির সামনেই যাচ্ছে, তা হল ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের পরিচালনার এবং সুরক্ষার একটি শক্তিশালী ছবি। কারণ একটি জাতি কেন তার সবচেয়ে মূল্যবান সোনার জিনিষ সৈন্য ছাড়া একা সামনে অপরিচিত এলাকায় পাঠাবে? ঈশ্বর নিজেই ইস্রায়েলের নিরাপত্তা।
ঈশ্বর দু’টি রূপার তুরী বানাতে আদেশ করেন এবং এভাবে একটি যোগাযোগ পদ্ধতি স্থাপন করেন, যেন এই বিস্তারিত ছাউনিতে সবাই সংকেত শুনতে পায় (গণনা ১০)।
গণনা ৩-৪,৮ অধ্যায় লেবীয়দের কাজে নিযুক্ত
ঈশ্বর যখন ১০ম আঘাত হিসাবে মিসর জাতির প্রথম জাতকে মেরে ফেলেছিলেন তখন তিনি পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি ইস্রায়েলের প্রথম জাতকেও নিজের জন্য দাবি করেন। গণনাপুস্তকে তিনি প্রত্যেক পরিবারের প্রথম জাতের পরিবর্তে ইস্রায়েলের একটি বংশ, অর্থাৎ লেবীয় বংশকে গ্রহণ করেন। কেন লেবীয় বংশ? সোনার বাছুরের ঘটনার সময়ে লেবীয়েরা নিজের পরিবারের চেয়ে ঈশ্বরের জন্য বিশেষ আগ্রহ ও ভক্তি প্রমাণ করেছিল (যাত্রা ৩২:২৯)। খুব সম্ভবত একারণে ঈশ্বর তাদের এখন প্রথম জাতের পরিবর্তে নিযুক্ত করেন। গণনাপুস্তক ৩ অধ্যায়ে তাদের নিযুক্ত করার অনুষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া যায়: লেবীয়দের উদ্দেশ্যে পাপ ও পুড়ানো উৎসর্গ দেওয়ার পরে তাদের নিজেদেরই দোলানো উৎসর্গ হিসাবে ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করা হয়। হারোণ পরিবারের পুরোহিতদের সমর্থন করার এবং আবাস-তাম্বুর সেবা-যত্নের দায়িত্ব ঈশ্বর লেবীয়দের দান করেন। লেবীয় বংশে তিনটি গোষ্ঠির এক একটাকে আবাস-তাম্বুর বহনের ক্ষেত্রে ভূমিকা দেওয়া হয়: কহাতীয়েরা তাম্বুর মহাপবিত্র আসবাব-পত্র বহন করে। মরারীয়েরা আবাস-তাম্বুর কাঠামো, ফ্রেম, হুড়কা, খুঁটি ও পা-দানিগুলো বহন করে এবং গের্শোনীয়েরা তাম্বুর মসীনার কাপড়, ছাগল লোমের ঢাকন, ভেড়ার ও শুশুকের চামড়ার ছাউনি এবং ঢুকার দর্জার পর্দা বহন করে।
একটি লক্ষণীয় বিষয় হল যে, আবাস-তাম্বু বহন করার দায়িত্ব মানে যে, ব্যবহারিকভাবে লেবীয়রা বেশি ব্যক্তিগত সম্পদ জমাতে পারবে না কারণ তাদের উভয়ই বহন করে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে লেবীয়দের সম্পদ জমানোর একটি সীমানা দেওয়া হয়। গণনাপুস্তক ১৮ অধ্যায়ে লেবীয়দের যোগানের পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়: তাদের আয় ইস্রায়েলীয়দের দশমাংশ ও উৎর্গ থেকে আসে। এর অর্থ এই যে, সাধারণ লোকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হলে লেবীয়রাও বেশি আয় পায় কিন্তু সাধারণ লোকেরা অভাবে পড়লে লেবীয়দেরও আয় কমবে। কনান দেশ দখলের পরে লেবীয়েরা সীমিত পরিমাণে শহরগুলো এবং সাথে পাল চড়ানোর জমি পায় (গণনা ৩৫:১-৮, যিহোশূয় ২১) কিন্তু তারা কোন বংশগত জমি পায় না। দেখা যায় যে, ঈশ্বর সাধারণ লোকদের আয়ের সঙ্গে মিল রেখে আত্মিক নেতাদের আয় ঠিক করেন এবং তিনি আত্মিক নেতাদের সম্পদের একটি সর্বোচ্চ সীমা রাখেন।
গণনা ৫-৬ অধ্যায় আইন-কানুন
গণনাপুস্তকে ঈশ্বর কিছু আইনগুলোর পুনরালোচনা করেন এবং নতুন কিছু আইনও স্থাপন করেন, যেমন: অশুচি লোকদের ছাউনির বাইরে থাকার নিয়ম (গণনা ৫:১-৪), ক্ষতিপূরণের টাকা কিভাবে দিতে হয় যদি প্রাপক মারা যায় (গণনা ৫:৫-১০), ব্যভিচার করার সন্দেহ যদি হয়, তার বিষয়ে আইন (গণনা ৫:১১-৩১) এবং নাসরীয় শপথের নিয়ম, যা দ্বারা একজন সাধারণ লোক নিজেকে একটি সময়ের জন্য স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করতে পারে (গণনা ৬)।
গণনা ১০-১২ অধ্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে রওনা ও যাত্রা
মিসর থেকে প্রস্থানের ১৩ মাস পরে, অর্থাৎ সিনাই পাহাড়ের সামনে ১১ মাস সময় কাটানোর পরে ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের পরিচালনায় উত্তর দিকে প্রতিজ্ঞাত দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বেশ তাড়াতাড়ি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়: ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করে: তারা মিসরের খাবার নিয়ে হাহা করে, মান্না নিয়ে নালিশ করে এবং মোশি থেকে মাংসের ব্যবস্থা দাবি করে (গণনা ১১:৪-৯)। ঈশ্বর একটি বিরাট ভারুই পাখীর ঝাঁক এনে ইস্রায়েল জাতির জন্য মাংসের ব্যবস্থা করেন কিন্তু যখন তারা লোভে পাখী ধরে মাংস খায় তখন ঈশ্বর একটি ভীষণ মড়ক পাঠান। হতে পারে ইস্রায়েলীয়েরা মাংসের যোগান দেখে ধন্যবাদ দেয় না, ঈশ্বরের আশ্চর্য যোগান দেখে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে না বা নিজের অভিযোগ নিয়ে লজ্জাও পায় না, সম্ভবত একারণেই ঈশ্বর তাদেরকে মড়ক দিয়ে বিচার করেন। মোশির উপরে অনেক চাপ আছে বলে, ঈশ্বর তার জন্য সমর্থনকারী হিসাবে ৭০জন প্রাচীনদের ঠিক করেন এবং তাদের উপরে তাঁর আত্মা দান করেন। এই প্রাচীনেরা কারা? সম্ভবত, তারা সেই প্রাচীনেরা যাদের যিথ্রোর পরামর্শ অনুসারে ইতিমধ্যে নিযুক্ত করা হয়েছিল (যাত্রা ১৮ ও ২৪)।
আরো একটি চাপের বিষয় হল যে, মোশির নেতৃত্ব দলে (মীখা ৬:৪), অর্থাৎ মোশি, হারোণ ও মরিয়মের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। বিশেষভাবে মরিয়ম কিছু বিষয়ে মোশির দোষ ধরেন: মোশি একটি কূশীয় মহিলাকে বিয়ে করেছেন, তার ঈশ্বরের সঙ্গে অর্তরঙ্গ সম্পর্ক আছে এবং নেতৃত্বের অধিকার প্রধানভাবে তারই (গণনা ১২)। ঈশ্বর কঠোর ধমক দিয়ে মরিয়মকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করেন। হয়তো মোশি অপমান বোধ করেছিলেন কিন্তু তিনি তা তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেন এবং অসুস্থ মরিয়মের জন্য বিনতি প্রার্থনা শুরু করেন। ঈশ্বর তার কথা অনুসারে মরিয়মকে ৭ দিনের মধ্যে আবার সুস্থ করেন।
গণনা ১৩-১৪ অধ্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশের দখল প্রত্যাখ্যান
যখন ইস্রায়েল জাতি কাদেশ নামে কনান দেশের দক্ষীনের একটি ফাঁড়িতে পৌছায়, মোশি কনানে ১২জন গুপ্তচর পাঠান যেন তারা দেশেটি দেখে খবর নিয়ে আসে। তারা ফিরে এসে প্রতিবেদন করে বলে যে. কনান দেশ আসলে চমৎকার একটি দেশ, কিন্তু কনানীয় শহরগুলো বড় ও দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং সেই কনানীয়রা শক্তিশালী ও লম্বা। ১০জন গুপ্তচর উপসংহারে বলে যে, দেশটি দখল করা ইস্রায়েল জাতির পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের উপসংহারের সমর্থনে তারা মিথ্যা কথাও বলেন, যেমন: “সেই দেশটা তার বাসিন্দাদের গিলে ফেলে”। তাদের অবিশ্বাসের দৃষ্টি থেকে তারা আরো বলে “তাদের দেখে আমরা নিজেদের মনে করলাম ঘাস-ফড়িং আর তারাও আমাদের তা-ই মনে করল” (গণনা ১৩:২৫-৩৩)। বাকি ২জন গুপ্তচর, যিহোশূয় ও কালেব, উত্তরে বলেন যে, ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে আছেন এবং তিনি কনান দেশকে অবশ্যই পরাজিত করতে সক্ষম (গণা ১৪:৫-১০)। তাই তো, ঈশ্বর শক্তিশালী মিসরকে পরাজিত করেছিলেন, কেন তিনি কনানকে পরাজিত করতে পারবেন না? কিন্তু লোকেরা নিজেদেরকে আত্ম-দয়ামায়ায়, অতি আবেগীয় প্রতিক্রিয়া, অভিযোগ ও বিশ্বাসবিহীন কথায় ছেড়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ তারা বলে যে “মিসর দেশে বা এই মরু-এলাকায় মারা যাওয়াই ছিল আমাদের পক্ষে ভাল”। এক রাত ধরেই তারা এই ধরণের কথা বলতে থাকে এবং এভাবে পরস্পর্কে আরো উস্কিয়ে দেয়। পরের দিনে তারা কনান দখল একেবারে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে একজন নেতা ঠিক করতে যাচ্ছে যিনি তাদেরকে মিসরে ফিরে নিয়ে যাবেন।
ঈশ্বর উত্তরে বলেন “আর কত কাল এই লোকগুলো আমাকে তুচ্ছ করে চলবে? তাদের মধ্যে আমি যে সব আশ্চর্য চিহ্ন দেখিয়েছি তার পরেও আর কতকাল তারা আমাকে অবিশ্বাস করবে?” (গণনা ১৪:১১)। মোশি ইস্রায়েলের জন্য বিনতি করে ঈশ্বরকে তাঁর মহিমা ও দয়ার চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ঈশ্বর মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে বলেন যে, তিনি ইস্রায়েল জাতিকে ধ্বংস করবেন না, এর পরিবর্তে তিনি যা তারা চেয়েছে, ঠিক তা-ই তাদেরকে শাস্তি হিসাবে দেবেন: তারা মরুভূমিতে ঘুরে মারা যাওয়া ভাল বলেছে, তাই তাদের শাস্তি হবে মরুভূমিতে ঘুরে মারা যাওয়া। তারা বলেছিল যে, তাদের সন্তানেরা শত্রুদের হাতে পড়বে (গণনা ১৪:৩), ঈশ্বর বলেন যে, তিনি এই সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখবেন এবং তারাই পাবে যা বর্তমান প্রজন্ম এইমাত্র হাত ছাড়া করেছে (গণনা ১৩-১৪)। তাদেরই অবিশ্বাসের কথা দ্বারাই ঈশ্বর তাদেরকে বিচার করেন। ঈশ্বর ৪০ বছরের একটি সময় ঠিক করেন, যার মধ্যে এই অবিশ্বসী প্রজন্ম ধীরে ধীরে মারা যাবে এবং নতুন একটি প্রজন্ম উঠে আসবে। ইস্রায়েলের এই দ্বিতীয় প্রজন্মকে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞাত দেশ অবশ্যই দান করবেন।
গণনা ১৬-১৭ অধ্যায় কোরহের বিদ্রোহ
যদিও মোশি ও হারোণ জাতির পক্ষ হয়ে বিশ্বস্তভাবে বিনতি করেছেন এবং কার্যকারীভাবে ফাটলে দাঁড়িয়েছেন, লেবীয় বংশের কোরহ তাদের দোষ ধরে বলেন যে, মোশি ও হারোণ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ধরে নিজেদেরকে যাজক হিসাবে ঘোষণা করেছেন“আপনারা খুব বাড়াবাড়ি করছেন। গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের প্রত্যেকেই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা এবং সদাপ্রভুও তাদের সংগে আছেন। তবে আপনারা কেন সদাপ্রভুর লোকদের উপরে নিজেদের তুলে ধরেছেন?”। মোশি ও হারোণ এই কথা শুনে আবারও মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বিনতি শুরু করেন। ঈশ্বর আবারও এক রাত সময় দিয়ে তাদেরকে অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দেন। শুধুমাত্র পরের সকালেই ঈশ্বর অপমান বোধ মনোভাবে লেবীয়দের, অর্থাৎ কোরহ, তার সঙ্গে আড়াইশত লেবীয় এবং রূবেণ বংশের কিছু বিরোধিতার পরিচালকদের একত্র করেন। তারা প্রত্যেকজন নিজেকে যাজক বানিয়ে ধূপদানি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ঈশ্বর, অন্যদের সবাইকে সরিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়ার পরে, মাটি খুলে ঠিক তাদেরকে মেরে ফেলেন (গণনা ১৬:১-৪০)।
যদিও ঈশ্বরের এই বিচার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে ঈশ্বর ঠিক কাদের যাজক হিসাবে মানেন এবং কাদের তিনি মানেন না, ইস্রায়েলীয়েরা পরবর্তী দিনে এই লোকদেরকে “সদাপ্রভুল লোক” বলে এবং তাদের মৃত্যুর দোষ মোশির উপরে চাপিয়ে দেয় (গণনা ১৬:৪১)। আবারও মোশি ও হারোণ সাথে সাথে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বিনতি শুরু করেন – ভালভাবে জেনে যে, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের এরজন্য আবারও বিচার করবেন। আসলে ঠিক তা-ই ঘটে, ঈশ্বর তাঁর ক্রোধের প্রকাশ হিসাবে একটি মড়ক পাঠিয়ে দেন। মোশি হারোণকে জরুরীভাবে তার ধূপদানি হাতে নিয়ে লোকদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পাপ ঢাকার ব্যবস্থা করতে বলেন, যেন আরো বেশি লোক মড়কে মারা না যায়। হারোণ ঠিক তা-ই করেন এবং মড়ক তার প্রায়শ্চিত্তে থেমে যায়। এভাবে ঈশ্বর একটি অত্যন্ত স্পষ্ট ছবি দেখান: হানোণেরই বিনতিতে লোকেরা রেহাই পায়, অর্থাৎ ঈশ্বর হারোণকে সত্যিকারের মহাপুরোহিত হিসাবে ঘোষণা করেন (গণনা ১৬:৪১-৫০)।
কিন্তু ঈশ্বর এখানে থামেন না, তিনি হারোণের নিযুক্তকরণ আরো প্রমাণ করার জন্য সব বংশের নেতাদের লাঠিগুলো আবাস-তাম্বুতে নিয়ে আসতে বলেন। লেবীয় বংশের পক্ষ থেকে হারোণ তার লাঠি জমা দেন। পরবর্তী সকালে দেখা যায় যে, হারোণেরই লাঠিতে কেবল অংকুর দেখা যায় না, বরং কুঁড়ি হয়ে ফুল ফুটে বাদামও দেখা যায়। তা দেখে ইস্রায়েলীয়েরা বলে “আমরা মরে গেলাম, ধ্বংস হয়ে গেলাম, সবাই ধ্বংস হয়ে গেলাম! কেউ যদি সাদপ্রভুর আবাস-তাম্বুর কাছে যায় তবে সে মারা পড়বে; তাহলে আমরা কি সবাই মারা পড়বে?” তাদের এই আবেগের বিস্ফোরণ আগের বিদ্রোহী মনোভাবের চেয়ে একটু ভাল, কিন্তু তাদের এই আতঙ্কে প্রকাশ পায় যে, তারা ঈশ্বরকে একদম বোঝে না। তাদের এই ভয়ের কোন কারণ নেই, অর্থও নেই। এই ভয় এমন কি ঈশ্বরকে অপমান করার মত, কারণ ঈশ্বরেরই বিচার কারণ, নীতি ও সীমানাবিহীন স্বেচ্চাচারী বিচার নয়। ইস্রায়েলীয়দের বিপরীতে মোশি ও হারোণ উপযুক্তভাবে ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলেন, তারা এই ক্ষিপ্ত বা উন্মদ ঘটনাগুলোর সময়েও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তারা ঈশ্বরকে বোঝেন, তারা আগে থেকে জানেন ঈশ্বর এখন কি করতে যাচ্ছেন, তারা ঈশ্বরের অপমান উপল্বদি করেন এবং তারা স্বার্থহীন ও কার্যকারীভাবে ইস্রায়েলের জন্য বিনতি করেন।
গণনা ১৫,১৮-১৯, ২৮-২৯ ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্কের বিষয়ে পুনরায় নিশ্চয়তা দান
এই অতি উত্তেজনার ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলোর পরে যখন ৪০ বছর ধরে মরুভূমিতে বিচরণের রায়ের বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে ইস্রায়লীয়েরা নিরাশিত তখন ঈশ্বর দয়ালুভাবে তাঁর জাতির সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পদ্ধতি পুনরায় স্থাপন করেন:
- তিনি উৎসর্গের পুনরালোচনা করেন (গণনা ১৫), যার মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়েরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে পারে এবং নতুন করে নিজেদেরকে তাঁর প্রতি সমর্পিত করতে পারে।
- তিনি বিশ্রামবারের নিয়মের পুনরালোচনা করেন (গণনা ১৫:৩২-৩৬) এবং এভাবে তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো নিশ্চিত করেন।
- তিনি লেবীয় ও যাজকদের ভূমিকা ও নিয়ম পুনরালোচনা করেন কারণ উভয় লেবীয় ও যাজক হওয়ার ভূমিকাগুলো কোরহের বিদ্রোহের সময় আক্রমণ করা হয়েছিল (গণনা ১৮)।
- পরবর্তীতে ঈশ্বর শুচি করার জলের নিয়ম দেন, এমন জল যা মরা মানুষকে স্পর্শ করার পরে শুচি হওয়ার জন্য প্রয়োজন (গণনা ১৯)। এই বিভিন্ন খারাপ ঘটনার পরে ইস্রায়েলীয়দের জানা দরকার, একটি মৃত মানুষকে স্পর্শ করলে কিভাবে আবার শুচি হওয়া যায়।
গণনা ২০-২১ অধ্যায় ৪০ বছর মরুভূমিতে
মরু-এলাকায় সেই দীর্ঘবছরের বিচরণের সময় সম্বন্ধে গণনাপুস্তকে বেশি বর্ণনা পাওয়া যায় না। শুধু দু’টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে: যখন জলের বিষয়ে ইস্রায়েলীয়দের অনবরত অভিযোগের সম্মুখীন হয়ে মোশি ক্লান্ত ও বিরক্ত হন তখন তিনি আগে যেমন অনেক বার করেছিলেন (কিন্তু এবার তা করতে ঈশ্বর আদেশ দেন নি) লাঠি দিয়ে পাথর মেরে বলেন “বিদ্রোহীরা শোন, আমরা কি তোমাদের জন্য এই পাথরটা থেকে জল বের করে আনব?” (গণনা ২০:১১)। মোশি এখানে ঈশ্বরকে দাতা হিসাবে স্বিকৃতি দেন না এবং পাথরকে আদেশ দেওয়ার পরিবর্তে পাথরটি লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। ঈশ্বর একারণে মোশি ও হারোণকে জানান যে, তারাও প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করা থেকে বঞ্চিত হবেন। ঈশ্বরের এই বিচার, যা আমাদের চোখে খুব কঠোর, দেখায় ঈশ্বর নেতাদের কত উঁচু মানদণ্ডে দায়বদ্ধ রাখেন (গণনা ২০:১-১৩)।
আর একটি সময়ে যখন ইস্রায়েল আবারও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসবিহীন অভিযোগ করতে থাকে তখন ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের বিষাক্ত সাপ পাঠিয়ে বিচার করেন। তারা ঈশ্বরের কাছে কান্না করে এবং উত্তরে ঈশ্বর একটি লক্ষণীয় উদ্ধারের পথ দেখান: তিনি মোশিকে খুঁটির উপরে ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি একটি সাপ রাখতে বলেন। যতজন কামড়গ্রস্ত এই সাপের দিকে তাকায়, ততজনই সুস্থতা লাভ করতে পারবে। মৃত্যুর একটি চিহ্ন (সাপ) এখানে জীবনের কারণে পরিণত হয়, তা হল যীশু সম্বন্ধীয় ভাববাদীমূলক একটি ছবি: যীশুকেও একদিন একটি খুঁটিতে উঠানো হবে এবং যতজন বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর দিকে তাকাবে, ততজনই পরিত্রাণ পাবে (গণনা ২১:১-৯)।
মরু-এলাকায় কাটানো ৪০ বছরের মধ্যে প্রথম প্রজন্ম ইস্রায়েলের লোকেরা ধীরে ধীরে মারা যায়। মরিয়ম মারা যান (গণনা ২০:১) এবং হারোণও মারা যান (গণনা ২০:২২-২৯)। হারোণের পরিবর্তে তার ছেলে ইলীয়াসর মহাপুরোহিত হয়ে যান।
গণনা ২০,২১,৩২-৩৪ অধ্যায় আশার চিহ্ন
আস্তে আস্তে কিছু আশার চিহ্নও দেখা যায়: দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েল, অর্থাৎ যারা মিসরের সময়ে ছোট ছিল অথবা মরুভূমিতে জন্ম নিয়েছে, তারা মোশির পরিচালনায় কয়েকটি যুদ্ধ চালায় এবং তারা প্রত্যেকটি যুদ্ধে জয়ী হয়। প্রথম যুদ্ধ হল অরাদ শহরের কনানীয় রাজার বিরুদ্ধে, পরে হিষবোনের ইম্মোরীয় রাজা সীহোনের বিরুদ্ধে এবং শেষে বাশনের ইম্মোরীয় রাজা ওগের বিরুদ্ধে (গণনা ২০:১৪-২১, ২১:১-৩)। এভাবে ইস্রায়েল প্রতিজ্ঞাত এলাকা দখল করতে শুরু করে এবং মোশি দখল করা ভূমি তিনিটি বংশদের মধ্যে ভাগ করেন (রূবেণ, গাদ ও উত্তর মনঃশি, গণনা ৩২)। দ্বিতীয় প্রন্মের ইস্রায়েলীয়দের চোখের সামনে প্রতিজ্ঞগুলো পূর্ণ হতে শুরু করে।
একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য করুন: ইস্রায়েল জাতি যে, নিজের ইচ্ছা মত যত ভূমি তাদের সামনে পড়ে, ততটা দখল করে, এমন নয়। ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে বেশ কয়েকটি জাতির বিষয়ে বলেন যে, তারা এদের ভূমি পাবে না (যেমন: ইদোম, মোয়াব ও অম্মোন, গণনা ২১:১০-২০)। বরং ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে এই দেশগুলোর সীমানা সম্মান করে চারিদিকে হেটে পার হতে বলেন। ইস্রায়েল ঈশ্বরের মনোনীত জাতি বলে, তারা যা চায় তা-ই দখল বা দাবি করতে পারে, এমন নয়। বরং ইস্রায়েলকে মাত্র সাতটি নির্দিষ্ট জাতিদের ভূমির অধিকারের প্রতিজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই সাতটি জাতিগুলো তাদের অতিরিক্তি অন্যায়, মন্দতা ও হিংস্রতার কারণেই নিজের ভূমির উপর অধিকার হারিয়েছে।
যর্দন নদীর পূর্বের এলাকা দখল করার পরে, ইস্রায়েল জাতি নিজেকে যর্দনের পূর্বে পাড়ে, অর্থাৎ মোয়াবের তলভূমিতে খুঁজে পায়, কনান দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
গণনা ২২-২৫, ৩১ মোয়াব তলভূমিতে থাকার সময়ের ঘটনাগুলো
যখন ইস্রায়েল মরু-এলাকা থেকে বের হয়ে এমন এলাকায় চলে আসে যেখানে বিভিন্ন জাতি বাস করে, তখন জাতিরা আতিঙ্ক। তারা শুনেছিল যে, ঈশ্বর আশ্চর্যভাবে শক্তিশালী মিসর দেশকে নত হতে বাধ্য করেছিলেন (যাত্রা ১৫:১৪-১৬, যিহোশূয় ২:৮-১১)। পরবর্তীতে মনে হল যে, ইস্রায়েল ৪০ বছর ধরে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পড়ে গিয়েছিল, তারা এমন এলাকায় থাকত যেখানে এত লোকসংখ্যা কোনভাবেই বাঁচতে পারে না। কিন্তু এখন তারা হঠ্যাৎ করে দিগন্তে বা চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছে!
ইস্রায়েলকে সরাসরি আক্রমণ করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে, দু’টি আকঙ্কিত জাতি (মোয়াব ও মিদিয়ন) সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা একসাথে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে একটি আত্মিক আক্রমণ চালাবে। তা হল দুঃখের বিষয়, কারণ ইস্রায়েল ইতিমধ্যে মোয়াবের সীমানা সম্মান করে চারিদিকে হেঁটে চলে এসেছে এবং মিদিয়ন এত দক্ষীণে অবস্থিত যে, তারা ইস্রায়েলের পথে পড়বে না। তারপরেও তারা দূরদেশ থেকে বিলিয়ম নামে একজন বিখ্যাত ও শক্তিশালী যাদুকরকে বা গণক ভাড়া নেয়।
যদিও ঈশ্বর এই যাদুকরকে পরিষ্কারভাবে বলেন যে, কাজটি সফল হবে না তবুও বিলিয়ম, যিনি মনে করেন আত্মা বা দেবতাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা তার আছে, তিনি লোভে মিদিয়ন ও মোয়াবের প্রস্তাবে রাজি হন। তিনি একটি কাছাকাছি পাহাড় থেকে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে তার আত্মিক ক্ষমতা খাটাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোন কিছু সাধন করতে সক্ষম হন না। বরং তিনি ইস্রায়েলকে বাধ্য হয়ে আশীর্বাদ দেন এবং ঘোষণা করেন যে, “একটা তারা উঠবে যাকোবের বংশে, একটা রাজদণ্ড উঠবে ইস্রায়েলের মধ্য থেকে”, একটি দায়ূদ রাজা সম্বন্ধীয় ভাববাণী যা সর্বোচ্চভাবে যীশুতে পূর্ণ।
মোয়াব ও মিদিয়ন বিলিয়মকে অনেক কষ্ট ও খরচ করে আনিয়েছে বলে তারা রাগান্বিত। কিন্তু বিলিয়ম তাদেরকে খুব বুদ্ধিমান একটি পরামর্শ দেন: তাদের এমন কৌশল করতে হবে যেন ইস্রায়েল ও ঈশ্বরের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে তাদের অভিশাপ দেওয়া যায়। বিলিয়মের পরামর্শ অনুসারে মোয়াব ও মিদিয়ন ইস্রায়েল জাতির কাছে মহিলাদের পাঠায় যারা ইস্রায়েলীয় পুরুষদের সাথে ব্যভিচার করার মাধ্যমে তাদের বাল দেবতার পূজায় বাধ্য করে (‘বাল পিয়োর’)। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে একটি মড়ক পাঠান। শুধুমাত্র যখন মহাপুরোহিত ইলীয়াসরের ছেলে পীনহস সবার সামনে একটি শিমিয়োন বংশের পুরুষ ও তাঁর মিদিয়নীয় প্রেমিকাকে এক বর্শায় মেরে ফেলেন তখন মড়ক থেমে যায়, অথচ ২৪ হাজার ইস্রায়েলীয়েরা সেই মড়কে বিনষ্ট হয়। বাল পিয়োরের ঘটনা হল দ্বিতীয় প্রজন্ম ইস্রায়েলের সর্বনিম্ন মুহূর্ত।
গণনা ২৭ অধ্যায় ইস্রায়েলের নেতৃত্ব
যেমন গণনাপুস্তকের শুরুতে মোশি কনান দখলের প্রস্তুতিতে ইস্রায়েলের প্রথম প্রজন্মের লোকগণনা করেছিলেন, ঠিক তেমনি তিনি এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের লোকগণনা করেন (গণনা ১,২৬)। তিনি সংখ্যাগুলো এবং নেতাদের নাম গণনাপুস্তকে লিখিত রাখেন। নেতাদের তালিকা দেখে বুঝা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে আগের প্রজন্ম আর নেই। আরো লক্ষ্য করা যায় যে, বর্তমান নেতাদের মধ্যে একজনও আগের নেতাদের আপন ছেলে নন! এইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ: রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা যেন পরিবারগতভাবে না চলে বরং নতুন করে জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ লোকদের নিযুক্ত করা হয় (যাত্রা ১৮, দ্বিতীয় বিবরণ ১:৯-১৮)।
ঈশ্বর মোশিকে আগে থেকে বলেছিলেন যে, ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার নেতা হবেন না, বরং ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত আর একজন: ইফ্রায়িম বংশের নূনের ছেলে যিহোশূয় (গণনা ১৩:৮,১৬)। মোশি ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে নেন। যিহোশূয় হলেন একজন ঈশ্বরীয় ও বিশ্বস্ত নেতা, ঈশ্বরের প্রতি আগ্রহী এবং মোশির প্রতি খুব অনুগত ব্যক্তি। তিনি ইতিমধ্যে মোশির ডান হাত হিসাবে ৪০ বছরের উপরে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। যিহোশূয়কে নেতৃত্বে আহ্বানের ক্ষেত্রে আবারও সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করুন: মোশির ছেলেরা তার বাবার নেতৃত্ব পায় না বরং ঈশ্বর যিহোশূয়কে পছন্দ করেন। সরকারের ক্ষেত্রে ঈশ্বর চান নি যে নেতৃত্ব পরিবারগতভাবে বাবা থেকে ছেলের হাতে যায়, এমন কি বংশগতভাবেও যেন না যায়: মোশি হলেন লেবীয় বংশের, যিহোশূয় হলেন ইফ্রায়িম বংশের। ঈশ্বর যেমন বলেছেন, মোশি ঠিক তেমনি ধীরে ধীরে একের পর এক দায়িত্ব যিহোশূয়ের কাছে দেন এবং এই সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব হস্তান্তর করে দেশের স্থিরতা নিশ্চিত করেন (গণনা ২৭:১২-২৩)।
গণনা ২৭, ৩২-৩৬ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কিছু নির্দেশনা
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যবহারিক আদেশ দেন: তাদের প্রথমে ৩টি শহর (যর্দনের পূর্ব পাড়ে) এবং কনান দখলের পরে আরো ৩টি শহর (যর্দনের পশ্চিম পাড়ে) আশ্রয় শহর হিসাবে ঠিক করতে হবে। যদি একজন ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে আর একজনকে হত্যা করেছে তবে সে হত্যাকারী কাছের আশ্রয় শহরে পালিয়ে সেখানে প্রতিশোধ নেওয়ার লোকদের কাছ থেকে আশ্রয় পাবে এবং এভাবে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হবে।
যর্দনের পূর্বের পাড়ে সেই ৩টি শহর ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে: রূবেণ বংশের এলাকায় বেৎসর শহর, গাদ বংশের এলাকায় রামোৎ শহর এবং পূর্ব মনঃশি এলাকায় গোলন শহর। কনান দেশকে দখল করার পরে বাকি ৩টি শহর নিযুক্ত করা হবে।
এছাড়া ঈশ্বর ইস্রায়েলকে বলেন যে, সব বংশদের মধ্যে ছিটিয়ে ৪৮টি লেবীয় শহরগুলো থাকবে। লেবীয়েরা বড় পরিমাণে জমি পাবে না, বরং তারা সেই ৪৮ শহর এবং প্রত্যেক শহরের চারিদিকে কিছুটা পাল চড়ানোর জমি পাবে। তাদের জন্য আয়ের প্রধান উৎস হল ইস্রায়েল জাতির দশমাংশ।
সেই সময়ে জমির উত্তরাধিকারের বিষয়ে একটি প্রশ্ন উঠে এবং তা মোশির কাছে আনা হয়: যদি একজন বাবার শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান থাকে এবং সে মেয়ে আর এক বংশের পুরুষকে বিয়ে করে তবে জমি কি এক বংশ থেকে আর এক বংশে চলে যাবে (গণনা ২৭:১-১১, ৩৬)? মোশি ঈশ্বরের ইচ্ছা জেনে নিয়ে সমস্যাটি সমাধান করে বলেন যে, মেয়েদের নিজের বংশের একজনকে বিয়ে করা দরকার। এই গল্পে বিভিন্ন নীতি রক্ষিত করা হয়: মহিলারা “যাকে খুশী তাকে বিয়ে করতে পারে” (গণনা ৩৬:৬), তারা জমির উত্তরাধিকার পেতে পারে এবং বংশগত জমি স্থির থাকবে।
এসব নির্দেশনা এমন ভবিষ্যতের দিকে তাকায় যখন ইস্রায়েলীয়েরা প্রকৃতপক্ষে প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকারী হবে, কিন্তু সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে গেলে তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের আইন-কানুন পালন করতে ও ন্যায্যতা সুরক্ষিত রাখতে হবে।