খুব অল্প বয়সের একজন যুবক যিরমিয়কে ঈশ্বর যিহূদা ও অন্য দেশের জন্য ভাববাদী হওয়ার আহ্বান দেন। আহ্বানের শুরু থেকে ঈশ্বর যিরমিয়কে বলেন যে, তাকে অনেক অপ্রিয় বাণী ঘোষণা করতে হবে। ফলে তাকে বার বার অপমান, তর্ক এবং এমন কি জীবনের হুমকির সম্মুখীন হতে হবে। ঈশ্বর তাকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা দেন, কিন্তু সাথে সরাসরিভাবে বলেন যে, তাকে কত চাপের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হবে।
ছোটবেলা থেকে যিরমিয় এই কষ্টের আহ্বান বহন করতে শুরু করেন। যদিও তিনি অনেক বার এই কঠিন আহ্বানের বিষয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে সংগ্রাম করেন তবুও তিনি অনেক বিশ্বস্ততার সঙ্গে বছরের পর বছর তার আহ্বান পূর্ণ করেন। দেখা যায় যে তাকে প্রায়ই আক্রমণ করা হয়, ঘৃণা করা হয়, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়, জীবনের হুমকি দেওয়া হয়, কারাগারে বন্দী করা হয়, শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং তাকে রাজাকার বলা হয়, কিন্তু এই সব কষ্টের মধ্যে যিরমিয় ঈশ্বরকে ধরে রাখেন। তিনি তার আহ্বানে বাধ্য থাকেন, এমন সময়েও যখন ঈশ্বর তাকে বিবাহ করার নিষেধাজ্ঞা দেন, যা দ্বারা তিনি আরো একা হয়ে পড়েন। যিরমিয় শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাণী ঘোষণা করেন, তা নয় বরং তিনি যিহূদা জাতিকে ঈশ্বরের হৃদয়ও দেখান: তিনি জাতির জন্য সব সময় আশা ধরে রাখেন, অনবরত বিনতি করতে থাকেন এবং তাদেরকে অনুতপ্ত হওয়ার উৎসাহ দেন। লোকদের থেকে অনেক অত্যাচারিত হওয়ার পরেও যিরমিয়ের কোন আনন্দ নেই যখন ঈশ্বরের বিচার বাস্তবায়ন হয় এবং তিনি বিচারের কষ্ট মেনে নিয়ে লোকদের সঙ্গে থাকেন, এমন কি পরাজয় ও দুঃখের শেষ অবস্থা পর্যন্ত।
যখন যুবক যিরমিয় ভাববাণী বলতে শুরু করেন তখন ইতিমধ্যে যিহূদা দেশের অবস্থা খুব খারাপ। দেশে পুনঃসংস্কার আনার জন্য রাজা যোশিয়ের প্রাণপণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে যিহূদার লোকদের মধ্যে কিছুটা অনুতাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি অনেক অর্ধেক হৃদয়ের বাহ্যিক ধার্মিকতা এবং মিশানো ধর্মকর্মও তৈরি হয়েছে। যে মুহূর্তে রাজা যোশিয় মিসরের বিরুদ্ধে একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে মারা যান (৬০৯ খ্রীঃপূঃ), সে সময়ে যিহূদা অনেক তাড়াতাড়ি এমন গভীর দেবতাপূজায় আসক্ত হয় যে, তারা তা থেকে আর উঠে আসতে সক্ষম হয় না: অসংখ্য পরজাতির দেবতা পূজা যিহূদা দেশে আমদানী করা হয়, এমন কি দেবতাদের মূর্তি ঈশ্বরের উপাসনা-ঘরে দাঁড় করে আরাধনা করা হয়, হারোণের পুরোহিতেরা দুর্নীতিতে লিপ্ত এবং মোলক দেবতার পূজার উদ্দেশ্যে তোফৎ নামে একটি মাজার যিরূশালেমের দেওয়ালের ঠিক বাইরে পুনরায় স্থাপন করা হয়, যেখানে শিশুদেরকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করা হতে। এই ধরণের গভীর দেবতা পূজার সঙ্গে তৈরি হয় সামাজিক অন্যায়-অবিচার এবং আইন-শৃঙ্খলার ভাঙ্গন: ধর্ম অন্যায় লাভের সুযোগে পরিণত হয়, গরীবদের অত্যাচার করা হয় এবং দুর্বলদের অধিকার হরণ করা হয়।
যিহূদার শেষ রাজাদের জীবন-যাপন হল দুঃখের কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও তাদের মধ্যে তিনজনই হলেন যোশিয়ের আপন সন্তান (এবং একজন হলেন তার নাতী), তারা তাদের বাবার মত নন বরং তারা দুর্নীতিগ্রস্ত ও মন্দ, তারা অনুতপ্ত হতে অগ্রাহ্য করেন এবং ইচ্ছাপূর্বকভাবে যিরমিয়ের বাণীগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের নেতৃত্বে যিহূদা এমন একটি দেশে পরিণত হয় যা আর উদ্ধার করা সম্ভব নয় এবং যিরমিয়কে ধ্বংসবাণীর পর ধ্বংসবাণী দিতে হয়।
যিরমিয় ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেন যে, অল্পদিন আগে ক্ষমতায় আসা বাবিল সাম্রাজ্য যিহূদাকে শুধুমাত্র পরাজিত করবেন, তা নয় বরং যিহূদাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস ও যিহূদার লোকদেরকে নির্বাসিতও করবে। শুরুরদিকে যিহূদার লোকেরা যিরমিয়ের ধ্বংসবাণীগুলো বিশ্বাস করে না। আগের শতাব্দীতে ভাববাদীরা লোকদের প্রতিজ্ঞা দিতেন যে, যদি তারা অনুতপ্ত হয় তবে ঈশ্বর ঘোষিত বিচার বাতিল করবেন। পরবর্তীতে, অর্থাৎ যিহূদার অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার সময়ে ভাববাদীরা প্রতিজ্ঞা দিতেন যে অনুতপ্ত হলে ঈশ্বর বিচার পিছাবেন। যিরমিয়ের সময় দেশের অবস্থা এমন খারাপ যে, তিনি শুধুমাত্র প্রতিজ্ঞা দিতে পারেন যে অনুতপ্ত হলে দেশের ধ্বংসের সময়ে ঈশ্বর তাদেরকে বাঁচাবেন এবং তারা মারা না গিয়ে বরং নির্বাসনে জীবন-যাপন করতে পারবে।
যিরমিয় যিহূদার রাজাকে, সাধারণ লোকদেরকে এবং এমন কি অন্য জাতিদেরকে বাবিলের প্রতি আত্ম-সমর্পণ করতে বলেন যেন দেশের সম্পূর্ণ ধ্বংস ও অধিকাংশ লোকদের মৃত্যুর প্রতিরোধ হয়।
যখন বাবিল যিহূদা ও যিরূশালেম শহরকে বার বার দখল করে, প্রত্যেকবার আরো লোকদেরকে নির্বাসিত করে (৬০৫, ৫৯৭ ও চূড়ান্তভাবে ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ) এবং এভাবে যিরমিয়ের অপ্রিয় ধ্বংসবাণী পূর্ণ হতে থাকে, ঈশ্বর তাকে অবশেষে আশারবাণী বলতে অনুমতি দেন। যিরূশালেমে থাকা অহংকারী, অবাধ্য ও একগুঁয়ে যিহূদীরা, যারা এখনও মনে করে তারা বাবিলের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তাদের কাছে যিরমিয় আশারবাণী দেন না। বরং তিনি এমন যিহূদীদের কাছে আশারবাণী দেন যারা ঈশ্বরের বিচার মেনে নিয়ে নিজেদেরকে বাবিলের নির্বাসনে খুঁজে পায়। যিরমিয় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণী দেন যে, নির্বাসন শুধুমাত্র সত্তর বছর অব্যহত থাকবে। যদিও বাবিল সাম্রাজ্যকে অতি শক্তিশালী ও এপর্যন্ত অপরাজেয় বলে মনে হচ্ছে, তবুও সত্তর বছর পরে তা আর একটি সাম্রাজ্য দ্বারা পরাজিত হবে এবং নির্বাসিত জাতিদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
সেই দিন পর্যন্ত যিরমিয় নির্বাসিত যিহূদীদের বলেন, যেন তারা নির্বাসন ঈশ্বরের বিচার হিসাবে মেনে নিয়ে সেখানে ঘর-বাড়ী বানায়, বাগান লাগায়, লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তোলে এবং সেখানকার মঙ্গলের চেষ্টা করে। যিরমিয় নির্বাসিতদের উৎসাহিত করেন যে, নম্রতা ও বিশ্বাস, এই দুইটি মনোভাব তাদেরকে নির্বাসনের সময়ে জাতি হিসাবে বহন করবে। নম্রতায় নির্বাসন মেনে নেওয়া এবং বিশ্বাস ধরে রাখা যে, সত্তর বছর পরে ঈশ্বর তাঁর পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন, এই দুইটি বিষয় তাদেরকে এমন লোকদলে পরিণত করবে, যাদের নিয়ে ঈশ্বর একটি পুনরুদ্ধার ঘটাতে পারবেন।
পুস্তকের লেখক ও লেখার তারিখ
সম্ভাবনা বেশি যে, ভাববাদী যিরমিয় তিনটি পুস্তকের লেখক: তার নামে ভাববাণী (যির ১:১), ১ ও ২ রাজাবলি এবং যিরমিয়ের বিলাপ। ঈশ্বর সরাসরিভাবে তাকে ভাববাণীগুলো লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন (যির ৩০:১-২) এবং তিনি তার বিশস্ত সঙ্গী ও সহ-লেখক বারূকের সাহায্যে তা করেন (যির ৩৮:১৮)। রাজা যিহোয়াকীম যদিও যিরমিয়ের পুস্তক পুড়িয়ে ফেলেন, বারূক ও যিরমিয় তা আর একবার লেখেন এবং নতুন ভাববাণী যোগ দিতে থাকেন (যির ৩৬:২৮,৩২)। সম্ভাবনা বেশি যে, বারূক পুস্তকের শেষ অধ্যায় (যির ৫২) যোগ দেন: যিরূশালেমের ধ্বংসের একটি সারাংশ এবং একটি আশাপূর্ণ শেষ কথা: বাবিলের নির্বাসনে বন্দী যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনকে মুক্ত করা হয় (যির ৫২:৩১-৩৪)।
যিরমিয় তার প্রথম বাণী রাজা যোশিয়ের ১৩ম বছরে দেন (৬২৭ খ্রীঃপূঃ) এবং তিনি ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিরূশালেমের ধ্বংসের পরবর্তী সময় পর্যন্ত বাণী দিতে থাকেন। তিনি যিহূদা দেশের শেষ রাজাদের সময়ে পরিচর্যা করেন, রাজা যোশিয়, যিহোয়াহস, যিহোয়াকীম, যিহোয়াখীন ও সিদিকিয়ের সময়ে।
ভাববাদী যিরমিয়ের শ্রোতারা ও পাঠকেরা
যিরমিয়ের শ্রোতারা হল যিহূদা ও বিশেষভাবে যিরূশালেম শহরের লোকেরা, যাদের সংখ্যা প্রত্যেক বার দখলের সাথে সাথে কমতে থাকে। ঈশ্বর তাদেরকে “খারাপ ডুমুর” বলেন (যির ২৪:১-৭), অর্থাৎ এমন লোক, যারা নিজেদের পাপ অস্বীকার করে অহংকার করে বলেন যে, তাদের ধার্মিকতার কারণেই তাদেরকে নির্বাসনে নেওয়া হয় নি। তারা মনে করে যে, ঈশ্বরের বিচার তাদের উপরে আসবে না বরং তারা চালাকি করে বাবিলের হুমকি এড়িয়ে যেতে পারবে। তাদের কাছে যিরমিয়ের বাণী এই: ‘যিরূশালেম সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে (যির ১:১৩ ইত্যাদি)। তোমাদের মিথ্যা বিশ্বাস তোমাদের সংকটে ফেলবে (যির ৭:৪)। তোমরা এক্ষুনি ঈশ্বরে বিচার মেনে নিয়ে বাবিলের কাছে আত্ম-সমর্পণ কর (যির ৩৮:১৭) কারণ তা করলে ঈশ্বর তোমাদের সর্বনাশের সময়ে বাঁচাবেন এবং বাবিলে তোমাদের নতুন একটি সুযোগ দেবেন।’
যিরমিয়ের পাঠকেরা হল বাবিলে নির্বাসিত যিহূদীরা। ঈশ্বর তাদেরকে “ভাল ডুমুর” বলেন (যির ২৪:১-৭)। তারা ঈশ্বরের বিচার পার হয়ে ও বিচার মেনে নিয়ে এখন নিজেদেরকে বাবিলের নির্বাসনে খুঁজে পায়। তাদের কাছে যিরমিয়ের বাণী এই: ‘ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা এখন তোমাদের উপর রয়েছে। সত্তর বছরের মধ্যে ঈশ্বর তোমাদের প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন (যির ২৯:১০)। সেই সময় পর্যন্ত তোমরা ঘর-বাড়ী বানাও, বাগান লাগাও, বিয়ে কর, সন্তান লালন-পালন কর এবং বাবিলের মঙ্গল চেষ্টা কর’ (যির ২৯:৫-৭)। যিরমিয় নির্বাসিতদের উৎসাহিত করেন যে, নম্রতা ও বিশ্বাস, এই দুইটি মনোভাব তাদেরকে নির্বাসনের সময়ে জাতি হিসাবে বহন করবে। নম্রতায় নির্বাসন মেনে নেওয়া এবং বিশ্বাস ধরে রাখা যে, সত্তর বছর পরে ঈশ্বর তাঁর পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন, এই দুইটি বিষয় তাদেরকে এমন লোকদলে পরিণত করবে, যাদের নিয়ে ঈশ্বর একটি পুনরুদ্ধার ঘটাতে পারবেন।
নির্বাসনের সত্তর বছর পরে ঈশ্বর একটি পুনরুদ্ধার ঘটাবেন, যিরমিয়ের এই বাণী নির্বাসিতদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই বাণী তাদেরকে নির্বাসনের সময়ে বহন করেছিল, এই বাণী দ্বারা তারা যা ঘটেছিল (যিহূদার ধ্বংস) এবং যা এখন ঘটছে (নির্বাসন) তার কারণ বুঝতে পারবে। পরাজিত হলেও বাণীটি নির্বাসিত যিহূদীদের জাতীগত পরিচয় এবং তাদের ভবিষ্যৎ আশা দান করে। যিরমিয়ের প্রত্যেকটি বিচারবাণী পূর্ণ হয়েছে বলে তিনি ঈশ্বরের একজন অধিকারপ্রাপ্ত ভাববাদী হিসাবে প্রমাণিত (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২১-২২)। তাই যেমন তার প্রত্যেকটি বিচারবাণী পূর্ণ হয়েছে, ঠিক তেমনি তার আশার বাণীও বিশ্বাসযোগ্য।
যিহূদা দেশের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি
যিহূদার রাজা মনঃশির দীর্ঘদিনের (৬৮৬-৬৪২ খ্রীঃপূঃ) ও অত্যন্ত মন্দ রাজত্বের কারণে যিহূদা খুব গভীরভাবে বিভিন্ন ধরণের দেবতা পূজায় এবং সঙ্গে সামাজিত অন্যায়-অবিচারে নেমে এসেছিল (২ বংশা ৩৩:১-৯)। মনঃশির ছেলে রাজা আমোন শুধুমাত্র ২ বছর রাজত্ব করেন (৬৪২-৬৪০ খ্রীঃপূঃ) কিন্তু তিনি তার বাবার মত মন্দ রাজা (২ বংশাবলি ৩৩:২১-২৫)। যখন আমোন মারা যান, তার ছেলে যোশিয় ৮ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন (২ বংশা ৩৪:১-৭)। যখন যোশিয়ের বয়স ১৬ বছর তখন তিনি ঈশ্বরকে অন্বেষণ করতে শুরু করেন এবং যখন তার বয়স ২০ বছর তখন তিনি দেশের পুনসংস্কার শুরু করেন (২ বংশা ৩৩:১-৩, ৬২৮ খ্রীঃপূঃ)। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেন যত দেবতাপূজা খুঁজে পান ততটাই নির্মূল করতে: মুর্তি, মাজার, খুঁটি, উঁচু স্থান, মন্দির, দেব-দেবীর পুরোহিতেরা ও পূজার অনুষ্ঠান, তিনি এসব ধ্বংস করেন। তিনি সদাপ্রভুর উপসান-ঘর পরিষ্কার করে পুনরায় স্থাপন করেন এবং পুরোহিত ও লেবীয়দের পুনরায় পরিচর্যায় নিয়োগ করেন। যোশিয়ের এই প্রচেষ্টার সময়ে মোশির আইন-কানুনের গুটানো স্ক্রল পুনরাবিষ্কার করা হয়। যোশিয় আইন-কানুন পড়েন এবং তা নম্রতা সহকারে ও মনেপ্রাণে পালন করতে শুরু করেন (২ বংশা ৩২:৮-২৮)।
যোশিয় পুনসংস্কার শুরু করার এক বছরের মধ্যে ঈশ্বর যুবক যিরমিয়কে আহ্বান করেন। যিরমিয় রাজা যোশিয়ের চেয়ে কমবেশি ৬ বছরের ছোট। যিরমিয় যোশিয়ের পুনসংস্কারে সমর্থন করার জন্য পরিশ্রম করেন কিন্তু তার বুঝতে হয় যে, বাস্তবে অনেক অর্ধেক হৃদয়ের বাহ্যিক ধার্মিকতা এবং অনেক মিশানো ধর্মকর্মও তৈরি হয়েছে। রাজা যোশিয় মিসরের বিরুদ্ধে একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে অতি তাড়াতাড়ি মারা যান (৬০৯ খ্রীঃপূঃ)। যিরমিয় তার জন্য বিলাপ করেন (যির ৩৫:২৫)। যে মুহূর্তে যোশিয়ের মৃত্যু ঘটে সেই মুহূর্তে যিহূদা পুনরায় এমন গভীর দেবতাপূজায় আসক্ত হয় যে, তারা তা থেকে আর উঠে আসতে সক্ষম হয় না: অসংখ্য পরজাতীয় দেবতার পূজা যিহূদা দেশে আমদানী করা হয়, এমন কি দেবতাদের মূর্তি ঈশ্বরের উপাসনা-ঘরে দাঁড় করিয়ে আরাধনা করা হয়। হারোণ বংশের পুরোহিতেরা দুর্নীতিতে লিপ্ত এবং মোলক দেবতার পূজার উদ্দেশ্যে তোফৎ নামে একটি মাজার যিরূশালেমের দেওয়ালের ঠিক বাইরে পুনরায় স্থাপন হয় (যির ১৯-২০), যেখানে শিশুদেরকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করা হতে। এই ধরণের গভীর দেবতা পূজার সঙ্গে তৈরি হয় সামাজিক অন্যায়-অবিচার এবং আইন-শৃঙ্খলার ভাঙ্গন: ধর্ম অন্যায় লাভের সুযোগে পরিণত হয়, গরীবদের অত্যাচার করা হয় এবং দুর্বলদের অধিকার হরণ করা হয়।
যিহূদার শেষ রাজাদের জীবন-যাপন হল দুঃখের কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও তাদের মধ্যে তিনজনই হলেন যোশিয়ের আপন সন্তান (এবং একজন হলেন তার নাতী), তারা তাদের বাবার মত নন বরং তারা দুর্নীতিগ্রস্ত ও মন্দ, তারা অনুতপ্ত হতে অগ্রাহ্য করেন এবং ইচ্ছাপূর্বকভাবে যিরমিয়ের বাণীগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের নেতৃত্বে যিহূদা এমন একটি দেশে পরিণত হয় যা আর উদ্ধার করা সম্ভব নয় এবং যিরমিয়কে ধ্বংসবাণীর পর ধ্বংসবাণী দিতে হয়।
- রাজা যিহোয়াহস (যোশিয়ের ১ম ছেলে) ৬০৯ খ্রীঃপূঃ ৩ মাস রাজত্ব মিসরের ফরৌণ নখো দ্বারা নির্বাসিত
- রাজা যিহোয়াকীম (যোশিয়ের ২য় ছেলে) ৬০৯-৫৯৭ খ্রীঃপূঃ ১২ বছর রাজত্ব বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ঘেরাও
- রাজা যিহোয়াখীন (যিহোয়াকীমের ছেলে) ৫৯৭ খ্রীঃপূঃ ৩ মাস রাজত্ব বাবিলের কাছে আত্ম-সমর্পণ, নির্বাসিত
- রাজা সিদিকিয় (যোশিয়ের ৩য় ছেলে) ৫৯৭-৫৮৬ খ্রীঃপূঃ ১১ বছর রাজত্ব বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পরাজিত
বাবিল সাম্রাজ্য সম্বন্ধীয় ঐতিহাসিক তথ্য
বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে বাবিল ছিল বিশাল আসিরিয়া সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ। ৬২৮ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিলে নাবোপলাসর নামে একজন শক্তিশালী নেতা উঠে আসেন যিনি আসিরিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাবিলকে স্বনির্ভর দেশ হিসাবে ঘোষণা করেন। আসিরিয়া তার বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। ৬২৭ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়ার শেষ শক্তিশালী রাজা অশূরবনিপাল মারা যান।
বাবিল মাদিয়দের সঙ্গে এবং আসিরিয়া সাম্রাজ্যের অন্যান্য শত্রুদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করে। ৬১২ খ্রীষ্টপূর্বে তারা একসাথে আসিরিয়া সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করে তার রাজধানী নিনবীকে এবং ৬১০ খ্রীষ্টপূর্বে হারান শহরকে দখল ও ধ্বংস করে। আসিরিয়ার সৈন্যদল কর্কমিশ শহরে আশ্রয় নেয় এবং মিসরের সাথে একটি মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করে। ৬০৯ খ্রীষ্টপূর্বে মিসরের ফরৌণ নখো একটি সৈন্যদল নিয়ে উত্তরদিকে যাত্রা শুরু করেন কিন্তু যিহূদার রাজা যোশিয় অপ্রয়োজনীয়ভাবে ফরৌণ নখো পথে পড়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। যোশিয়কে যুদ্ধে মেরে ফেলার পরে নখো আসিরিয়ার সাথে এক হয়ে কর্কমিশে বাবিলকে ও তার সঙ্গীদের পরাজিত করেন। কর্কমিশের যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে নখো যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াহসকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে তাকে মিসরে নির্বাসনে নিয়ে যান। নখো যোশিয়ের ২য় ছেলে যিহোয়াকীমকে যিহূদার নতুন রাজা হিসাবে সিংহাসনে বসান।
নাবোপলাসর মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নবূখদনিৎসর বাবিলের রাজা হয়ে সাহস করে আসিরিয়াকে ৬০৫ খ্রীষ্টপূর্বে আর একবার কর্কমিশে আক্রমণ করেন কিন্তু এই বার বাবিল আসিরিয়া ও তার সঙ্গী মিসরকে যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। বাবিল সম্পূর্ণ আসিরিয়া সাম্রাজ্যের অধিকারী হয় এবং অনেক তাড়াতাড়ি দক্ষিণ দিকে সামরিক অভিযানে মিসর পর্যন্ত যত দেশ ও শহর আছে, সবগুলো দখল করেন। এভাবে নিবূখদনিৎসর ৬০৫ খ্রীষ্টপূর্বে যিরূশালেমকেও দখল করেন এবং রাজা যিহোয়াকীমকে পরাজিত করে তাকে মুখাপেক্ষী রাজা হিসাবে রাখেন। তিনি যিহূদার লোকসংখ্যার একটি বড় অংশ নির্বাসিত করেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন দানিয়েল।
বাবিলের অধীনতা অমান্য করে রাজা যিহোয়াকীম ৬০২ খ্রীষ্টপূর্বে মিসরের সাথে মৈত্রী চুক্তি করে বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এর কারণে নবূখদনিৎসর তার সৈন্যদল নিয়ে এসে ৫৯৮ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে যিরূশালেমকে পুনরায় ঘেরাও করেন। যিহোয়াকীম ৫৯৭ খ্রীষ্টপূর্বে ঘেরাওএর সময়ে মারা যান এবং তার ছেলে যিহোয়াখীন শুধুমাতএ ৩ মাস রাজত্ব করার পরে নিবূখদনিৎসরের কাছে আত্ম-সমর্পণ করেন। বাবিল যিহোয়াখীনকে এবং সঙ্গে যিহূদার আর একদল লোকদেরকে বাবিলে নির্বাসিত করে। তাদের মধ্যে একজন হলেন যিহিষ্কেল। বাবিল যোশিয়ের ৩য় ছেলে সিদিকিয়কে যিহূদার নতুন মুখাপেক্ষী রাজা হিসাবে সিংহাসনে বসান।
যেমন তার ভাই যিহোয়াকীম তার আগে করেছিলেন, ঠিক তেমনি রাজা সিদিকিয়ও মিসরের সাথে মৈত্রী চুক্তি করে বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এই কারণে বাবিল ১৫ জানুয়ারি ৫৮৮ খ্রীষ্টপূর্বে তৃতীয় বার যিরূশালেমকে ঘেরাও করতে শুরু করেন। ১৮ জুলাই ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে, অর্থাৎ আড়াই বছর পরে বাবিল যিরূশালেমকে দখল করতে সক্ষম হয়। রাজা সিদিকিয় পালিয়ে যান কিন্তু বাবিল তাকে ধরে অন্ধ করে দেয় এবং বাবিলে নির্বাসিত করে। যিহূদার অনেক উঁচু শ্রেণীর লোকদের ধ্বংস করা হয় কিন্তু যিরমিয়কে সম্মানের সঙ্গে কারাগার থেকে মুক্ত করা হয়। যিহূদার বাকি লোকদের বাবিলে নির্বাসিত করা হয়। শুধুমাত্র অত্যন্ত গরীব লোকদেরকে শাসনকর্তা গদলিয়ের নেতৃত্বে দেশে থাকার অধিকার দেওয়া হয়। যখন গদলিয়কে খুন করা হয় বাবিলের শাস্তির ভয়ে বাকি লোকেরা মিসর দেশে পালিয়ে যায় এবং যিরমিয় ও তার সাহায্যকারী বারূককেও জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভাববাদী যিরমিয়ের পরিবার ও আহ্বান
হিল্কিয়ের ছেলে যিরমিয় একটি পুরোহিত পরিবারে জন্ম নেন (যির ১:১)। তিনি হারোণের বংশধর, অর্থাৎ লেবি গোষ্ঠির এবং তিনি বিন্যামিন বংশের এলাকায় অনাথোৎ নামে একটি শহরে বাস করেন। রাজা দায়ূদের পুরোহিত অবিয়াথর, যাকে শলোমন যিরূশালেম থেকে অনাথোৎ শহরে নির্বাসিত করেন এবং শীলোর মহাপুরোহিত এলি হলেন যিরমিয়ের পূর্বপুরুষ (১ শমূয়েল ৩:১১-১৪)। সম্ভাবনা বেশি যে, যিরমিয় এই সব ইতিহাসের বিষয়ে সচেতন যখন তিনি ঘোষণা করেন “এখন তোমরা শীলোতে যেখানে আমি প্রথমে আমার বাসস্থান করেছিলাম সেখানে যাও আর আমার লোক ইস্রয়েলীয়দের দুষ্টতার জন্য আমি তার অবস্থা কি করেছি তা দেখ” (যির ৭:১২)। এই বাণীতে তিনি যাজকত্বের এবং ইস্রাযেল জাতির আগের যুগের দুর্নীতি ও মন্দতা স্মরণ করিয়ে দেন, যেমন বর্তমানেও দেখা দেয়।
অল্প কিছু বছর পরিচর্যা করার মধ্যে যিরমিয়ের নিজের শহর অনাথোতের লোকেরা তাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে (যির ১১:২১) এবং পরে এমন কি তার নিজের পরিবার তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে (যির ১২:৬)। দেখা যায় যে, যিরমিয়ের পরিবার তাকে সমর্থনও করে না, ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলেও না এবং তারা অবশেষে তাদের অপ্রিয় আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হাত তোলে।
ঈশ্বর যিরমিয়কে রাজা যোশিয়ের ১৩ম রাজত্বের বছরে অর্থাৎ ৬২৭ খ্রীষ্টপূর্বে বালক বয়সে আহ্বান করেন (যির ১:৭)। ঈশ্বর তাকে বলেন যে, তিনি তাকে গর্ভে গঠন করার আগে থেকেই নিজের উদ্দেশ্যে বেছে নিয়েছেন এবং তাকে আলাদা করে জাতিদের কাছে ভাববাদী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন (যির ১:৪-৫)। যিরমিয় আহ্ববানের কথা শুনে ভয় পান। তিনি হয়তো লাজুক বা অতি আগ্রহী নন অথবা তিনি এই আহ্বান পেয়ে হতভম্ব (যির ১:৬)। ঈশ্বর তাকে নিশ্চয়তা দানের জন্য দু’টি ছবি দেখান: প্রথম ছবি হল একটি কাঠবাদামের শাখা যার অর্থ হল যিরমিয়কে নিশ্চয়তা দান যে, ঈশ্বর তাঁর প্রত্যেকটি বাণী ও প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় ছবি হল উত্তর থেকে দক্ষিণে কাৎ হয়ে থাকা একটা পাত্র যার মধ্যে কিছু ফুটছে, যার অর্থ হল উত্তর থেকে যিহূদার বিরুদ্ধে আক্রমণের হুমকি (যির ১:১১-১৩)। ঈশ্বর যিরমিয়কে শুরু থেকে পরিষ্কারভাবে বলেন এই আহ্বানের কারণে তাকে কত কষ্ট মেনে নিতে হবে, অর্থাৎ রাজারা, রাজপুত্রেরা, পুরোহিতেরা এবং সাধারণ লোকেরাও তার বিরুদ্ধাচারণ করবে। যেমন এখানে যিরমিয়ের আহ্বানের শুরুতে ঠিক, তেমনি পরবর্তীতে অনেক বার দেখা যায় যে, ঈশ্বর তাকে দয়া-মায়ার কথা বলার চেয়ে খুব কঠোর চ্যালেঞ্জ করেন: “তুমি কোমর বেঁধে দাঁড়াও এবং আমি তোমাকে যা বলতে আদেশ করি তা-ই তুমি তাদের বল। তাদের দেখে তুমি ভেঙ্গে পড় না, যদি পড় আজ তাহলে আমি এমন করব যাতে তাদের সামনে তুমি একেবারে ভেঙ্গে পড়”। যিরমিয় হয়ে যান একজন অপ্রিয় ব্যক্তি, ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র, অনবরত তর্কের সম্মুখীন একজন, যার জীবন বার বার হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু ঈশ্বর তাকে নিশ্চয়তা দেন যে, যত সংগ্রাম ও দ্বন্দ্ব আসুক না কেন, ঈশ্বর তাকে প্রত্যেকটি থেকে রক্ষা করবেন “আজ আমি তোমাকে একটা শক্তিশালী শহরের মত, একটা লোহার থামের মত ও একটি ব্রোঞ্জের দেয়ালের মত করলাম” (যির ১:১৬-৯)। যুবক যিরমিয় এই ভারী বোঝা ঘাড়ে তুলে নেন এবং যদিও তিনি অনেক বার এই কঠিন আহ্বান নিয়ে সংগ্রাম করেন তবুও তিনি বহুবছর ধরে অতি বিশ্বস্তভাবে আহ্বানটি পূর্ণ করেন।
রাজা যোশিয়ের পুনসংস্কারের সময়ে যিরমিয়
যিরমিয় সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘরের ফটকে দাঁড়িয়ে এমন লোকদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন যারা মনেপ্রাণে না বরং সম্ভবত রাজা যোশিয়ের চাপের মুখে পড়ে সদাপ্রভুর আরাধনা করতে আসে। তিনি তাদেরকে সাবধাণবাণী দেন যেন তারা সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘরের উপর বা বাহ্যিক ধার্মিকতার উপর মিথ্যা আশা না রাখে। বরং “যদি সত্যিসত্যিই তোমরা তোমাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মের পরিবর্তন কর এবং ন্যায্যভাবে একে অন্যের সঙ্গে ব্যবহার কর, যদি বিদেশী, অনাথ কিম্বা বিধবাদের অত্যাচার না কর এবং এই দেশে নির্দোষের রক্তপাত না কর” তবে ঈশ্বর দয়া দেখাবেন। কিন্তু যদি তারা তা না করে তবে যিরূশালেম শীলোর মত হয়ে যাবে, যেখানে ইস্রায়েলের ইতিহাসের শুরুতে ঈশ্বরের উপাসনা-ঘর ও তাঁর উপস্থিতি ছিল, কিন্তু তা পরবর্তীতে তাদের পাপ ও অবাধ্যতার কারণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছিল (যির ৭:১-১২)।
যিরমিয়ের বাণীগুলো যদিও বার বার অস্বীকার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন চলে তবুও তার কোন আনন্দ লাগে না যখন তাকে ধ্বংসবাণী ঘোষণা করতে হয়: “হায়, আমার অন্তর, আমার অন্তর! আমি যন্ত্রণায় মোচড় খাচ্ছি। হায়, আমার অন্তর! আমার ভিতরে আমার অন্তর ধুক্ ধুক্ করছে। আমি চুপ করে থাকতে পারছি না, কারণ আমি তূরীর শব্দ শুনেছি … কত দিন আমাকে যুদ্ধের নিশান দেখতে হবে আর শুনতে হবে তূরীর শব্দ?” (যির ৪:১৭-২১)। যিরমিয়ের মধ্যে যে আবেগগুুলো দেখা যায়, সেগুলো যিহূদার লোকদের মধ্য দেখা যাওয়ার কথা, কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে। তারা না বরং যিরমিয় নিজেই গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন: “আমার দুঃখ এত বেশী যে, তার সান্ত্বনা নেই; আমার মধ্যে আমার অন্তর ভীষণ দুঃখ পাচ্ছে … আমার লোকেরা ভেংগে পড়েছে বলে আমিও ভেংগে পড়েছি; আমি শোক করছি আর ভীষণ ভয় আমাকে ধরেছে” (যির ৮:১৮-৯:২)। এছাড়া যিরমিয় অবিশ্বস্ত যিহূদা দেশের জন্য বিনতি করতে থাকেন। ঈশ্বর যিহূদার জন্য বিনতি আর শুনবেন বলে তিনি যিরমিয়কে প্রার্থনা থামাতে বলেন (মোট তিন বার!) কিন্তু যিরমিয় তার পরেও অনুরোধ করতে থাকেন (যির ৭:১৬, ১৪:১১, ১৫:১)।
যিরমিয়ের অন্তরে অনেক গভীর সংগ্রাম চলছে এবং তিনি ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করে বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমি যখন তোমার বিরুদ্ধে কোন নালিশ করি তখন তুমি যে নির্দোষ তা সব সময়ই প্রমাণিত হয়। তবুও আমি তোমার বিচার সম্বন্ধে তোমার সংগে কিছু কথা বলব। দুষ্টদের পথ কেন ভাল হয়? … হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে জান; তুমি আমাকে দেখে থাক এবং তোমার প্রতি আমার ভক্তি কতখানি তা পরীক্ষা করে থাক … আর কত দিন দেশ শোক করবে?” (যির ১২:১-৪)। যিরমিয় তার সংগ্রামে শিশুর মত ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে থাকেন, তাঁকে ডাকতে ও কেন্দ্র হিসাবে ধরে রাখতে থাকেন, তার মহত্বও স্বীকার করতে থাকেন। সাড়ায় ঈশ্বর তাকে আবারও চ্যালেঞ্জ করেন “মানুষের সংগে দৌড় প্রতিযোগিতায় যদি তুমি ক্লান্ত হয়ে পড় তবে ঘোড়াদের সংগে দৌড়ে তুমি কি করে পারবে? কেবল শান্তিপূর্ণ দেশে যদি তুমি নিজেকে নিরাপদ মনে কর তাহলে যর্দনের ধারের জংগলে তুমি কি করে থাকবে?” (যির ১২:৫)।
তার প্রতি দয়া-মায়া প্রকাশ করার চেয়ে ঈশ্বর যিরমিয়কে বরং জানান যে, বাস্তবে তার নিজের পরিবার তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে (যির ১২:৬)। ঈশ্বর নিজের মনের কষ্ট ও দুঃখ তার কাছে প্রকাশ করেন: “আমার সম্পত্তি আমার কাছে বনের সিংহের মত হয়েছে। সে আমাকে দেখে গর্জন করেছে” (যির ১২:৭-৮)।
যিরমিয় যখন আর একটি হৃদয় ভাঙ্গার সংগ্রামে পড়েন (যির ১৫:১০-২১), ঈশ্বর তাকে আরো চ্যালেঞ্জ করেন (যির ১৫:১৯) এবং যা তার জন্য সান্ত্বনা হতে পারত, তাও ঈশ্বর তুলে নেন: যিরমিয় কখনও বিয়ে করতে পারবেন না, তার স্ত্রী বা সন্তান থাকবে না এবং তিনি কোন আনন্দের ভোজে বা দুঃখের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না (যির ১৬:১-৯)।
ঈশ্বর যিরমিয়ের প্রতি এত কঠোর কেন? ঈশ্বর যে তাকে তার নিজের দুঃখ-কষ্টের অংশিদার হতে দেন, তা প্রকৃতপক্ষে যিরমিয়ের জন্য বড় সম্মানের বিষয়। মনে করা যায় যে, ঈশ্বর ও যিরমিয় দু’জনই তাদের গভীর দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বসে আছেন, ঈশ্বর তাঁর হৃদয় এমন একজনের কাছে প্রকাশ করেন যিনি ‘জানেন তার কেমন লাগে’। যিরমিয় প্রকৃতপক্ষে ইস্রায়েল জাতির কারণে ঈশ্বরের দুঃখ-কষ্টের অংশিদার হয়ে যান এবং এভাবে তিনি তার আহ্বানের আরো গভীরে প্রবেশ করেন। ঈশ্বরের মত হওয়া, ঈশ্বরের প্রতিনিধি হওয়া। যিরমিয় ঈশ্বরের আবেগের অংশিদার ও প্রকাশক হন। যত তার ধ্বংসবাণী ঘোষণা করতে যয় তত তার হতাশা লাগে। লোকদের কাছ থেকে অনেক অত্যাচার পাওয়ার পরেও যিরমিয় কখনও প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা বা ধ্বংসবাণীতে আনন্দ করেন না বরং তিনি বিনতি করতে থাকেন। পুস্তক যত এগিয়ে যায় তত ঈশ্বরের রব ও যিরমিয়ের রব মিলে যায়, পাঠক হিসাবে প্রায়ই আর বুঝা যায় না কথাটি কি যিরমিয়ের? না কি ঈশ্বরের? যেমন যিরমিয় ১৩:১৭ পদ: “তোমরা যদি কথা না শোন তবে তোমাদের অহংকারের জন্য আমি গোপনে কাঁদব, ভীষণভাবে কাঁদব ও আমার চোখ জলে ভেসে যাবে”। যিরমিয় যে, কেবল ঈশ্বরের সংবাদদাতা, তা নয়, তিনি ও তার জীবনই হল সংবাদ, তার মনোভাব হল ঈশ্বরের মনোভাব ও হৃদয়ের সত্যিকারের প্রকাশ।
রাজা যিহোয়াকীমের সময়ে যিরমিয়
যিহূদার রাজনৈতিক পরিস্থিতি যত খারাপের দিকে যাচ্ছে (ইতিমধ্যে অনেক লোকদের বাবিলে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে), যিহূদার রাজনৈতিক ও আত্মিক নেতারা যিরমিয়ের উপরে তত অত্যাচার করছে। এক সময়পশহূর নামে একজন পুরোহিত যিরমিয়কে গ্রেফতার করেন এবং শারীরিক নির্যাতন দেন। পরবর্তীতে যিরমিয়কে আবারও গ্রেফতার করা হয় এবং সব লোকদের সামনে পুরোহিতেরা ও ভাববাদীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করেন (যির ২৬)। উরিয় নামে যিরমিয়ের একজন সহ-ভাববাদীকে খুন করা হয় (যির ২৬:২০-২৩) এবং যখন যিরমিয় বাবিলে নির্বাসিতদের কাছে একটি চিঠিতে ঈশ্বরের বাক্য পৌঁছিয়ে দেন সেখানকার ভাববাদী সময়িয় যিরমিয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন (যির ২৯:২৪-২৮)। রাজা যিহোয়াকীম যিরমিয়ের বাণী লিখিত আকারে পেয়ে তা টুকরা টুকরা করে পুড়িয়ে ফেলেন (যির ৩৬)।
অবশেষে বাবিল যিহূদা ও যিরূশালেম শহরকে বার বার আক্রমণ ও পরাজিত করে এবং প্রত্যেকবার আরো লোকদেরকে নির্বাসিত করে (৬০৫, ৫৯৭ ও চূড়ান্তভাবে ৫৮৬ খ্রীঃপূঃ)। যখন এভাবে যিরমিয়ের অপ্রিয় ধ্বংসবাণী পূর্ণ হতে থাকে তখন ঈশ্বর তাকে প্রথম বার আশারবাণী বলতে অনুমতি দেন (যির ৩২)। ঈশ্বর যিরমিয়কে একটি জমি কিনতে এবং ক্রয়ের দলিল একটি মাটির পাত্রে সীলমোহর করে রাখতে আদেশ দেন যেন তা অনেক বছর টিকে থাকে। যিরমিয় এমন একটি সময়ে যখন যিহূদার অধিকাংশ এলাকা বাবিলের অধীনে চলে গেছে এবং যিরূশালেমের ঘেরাও শুরু তখনই তাকে ঈশ্বর ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার বাণী ঘোষণা করতে বলেন: “এই দেশে ঘর-বাড়ী, জায়গা-জমি ও আংগুর ক্ষেত আবার কেনা-বেচা চলবে” (যির ৩২:১৫)।
রাজা সিদিকিয়ের সময়ে যিরমিয়
৫৯৭ খ্রীষ্টপূর্বে বাবিল সাম্রাজ্য যিরূশালেম দ্বিতীয় বার দখল করে, অনেককে নির্বাসিত করে এবং সিদিকিয়কে তাদের অধীনে রাজা হিসাবে যিহূদার উপর রাজত্ব করতে দেয়। কিন্তু যিরমিয়ের স্পষ্ট সাবধাণবাণী অমান্য করে সিদিকিয় বাবিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং মিসরের সাথে মৈত্রী চুক্তি করেন, ঠিক যেমন তার ভাই যিহোয়াকীম করেছিলেন। রাজা সিদিকিয়ের এই আচরণের ফলে বাবিলের ক্রোধ যিহূদার উপরে নেমে আসে। বাবিল সৈন্যদল পাঠিয়ে যিরূশালেমকে তৃতীয় বার ঘেরাও ও দখল করে এবং শহর ও সদাপ্রভুর ঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে।
যিরমিয় লোকদেরকে বুঝান যে, যিহূদা জাতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দেবতা পূজা করেছে বলে ঈশ্বর এখন বাবিল সাম্রাজ্য দ্বারা তাদের পরাজয় ও নির্বাসন ঘটার অনুমতি দিতে যাচ্ছেন। তিনি তাদেরকে বাবিলের অধীনতা মেনে নিয়ে তাদের কাছে আত্ম-সমর্পণ করতে বলেন। তা যদি করে তবে ঈশ্বর তাদেরকে যুদ্ধের মাঝেও বাঁচিয়ে রাখবেন। কিন্তু যদি তারা নিজের শক্তিতে মিথ্যা আশা রাখে ও দেবতা-পূজায় লিপ্ত থাকে তবে নিশ্চিত যে, ঈশ্বর তাদেরকে বাবিলীয়দের দ্বারা পরাজিত ও ধ্বংস করবেন। এই কথা বলার জন্য যিরমিয়কে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে ঘোষণা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়, জেলে দেওয়া এবং অবশেষে কাদাভরা একটি কূয়াতে ফেলা দেওয়া হয়। যিরমিয় বার বার রাজা সিদিকিয়ের কাছে ঈশ্বরের বাণী দেন, কিন্তু সিদিকিয় একবারও বাধ্য হওয়ার জন্য হৃদয়ে সাহস আনতে পারেন না। দের বছর ঘেরাও চালানোর পরে বাবিল সৈন্যদল অবশেষে ১৮ জুলাই ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে যিরূশালেমের দেওয়াল ভাঙ্গতে সক্ষম হয় এবং শহর ও সঙ্গে উপাসনা-ঘরও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে। বাবিলীয়েরা রাজা সিদিকিয়কে ধরে অন্ধ করিয়ে যিহূদার বাকি লোকদের সঙ্গে নির্বাসিত করে। কিন্তু যিরমিয়কে তারা সম্মানের সঙ্গে মুক্ত করে।
যিরমিয়ের জীবনের শেষ অংশ
মুক্ত হওয়ার পরে যিরমিয় সিদ্ধান্ত নেন, যে তিনি বাবিলে না গিয়ে বরং অত্যন্ত গরীব লোকদের সঙ্গে যিহূদায় থাকবেন, যাদেরকে বাবিলীয়েরা সেখানে রেখে গেছে। বাবিল দ্বারা নিযুক্ত শাসনকর্তা গদলিয়কে যখন খুন করা হয় সেই গরীব লোকেরা যিরমিয়ের নির্দিষ্ট উৎসাহবাণী অমান্য করে মিসরে পালায় এবং তারা যিরমিয়কে জোর করে সেখানে নিয়ে যায়। ৪১ বছর ধরে লোকদের মধ্যে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের বাক্য উপস্থানা করার পরে এবং যরিমিয়ের প্রত্যেকটি বাণী পূর্ণ হওয়ার পরে তারা তখনও তার কথায় গুরুত্ব দেয় না ও তাকে ঈশ্বরের ভাববাদী হিসাবেও মানে না!
অবশ্যই যিরমিয় অনেক দিন ধরে বলে এসেছেন যে, ঈশ্বরের আশীর্বাদ আর যিহূদার বিদ্রোহী যিহূদীদের উপরে নয়, বরং নির্বাসিত যিহূদীদের উপরে, যারা নির্বাসনকে ঈশ্বরের উপযুক্ত শাস্তি হিসাবে মেনে নিয়েছে। নির্বাসিতদের কাছে যিরমিয় চিঠিতে (যির ২৯) এবং যখন তিনি তার ভাববাণী পুস্তক সমাপ্ত করেন (যিরমিয়) তিনি তাদেরকে সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎবাণী দেন যে, তাদের শুধুমাত্র ৭০ বছর নির্বাসনে থাকতে হবে (যির ২৫:১২, ২৯:১০)। যদিও এখন মনে করা যায় যে, বাবিল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কেউ জয়লাভ করতে পারবে না, কিন্তু এক দিন এই শক্তিশালী বাবিল সাম্রাজ্যকে পরাজিত করা হবে (যিরমিয় ৫০-৫১) এবং যে জাতিগুলো তারা জোর করে নির্বাসিত করেছে, তারা নিজের দেশে ফিরতে পারবে।
সেই দিন পর্যন্ত যিরমিয় নির্বাসিত যিহূদীদের বলেন যেন তারা নির্বাসন ঈশ্বরের বিচার হিসাবে মেনে নিয়ে সেখানে ঘর-বাড়ী বানায়, বাগান লাগায়, লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তোলে এবং সেখানকার জায়গার মঙ্গল চেষ্টা করতে চেষ্টা করে। সেই দিন পর্যন্ত যিরমিয় নির্বাসিত যিহূদীদের বলেন, যেন তারা নির্বাসন ঈশ্বরের বিচার হিসাবে মেনে নিয়ে সেখানে ঘর-বাড়ী বানায়, বাগান লাগায়, লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তোলে এবং সেখানকার মঙ্গলের চেষ্টা করে। যিরমিয় নির্বাসিতদের উৎসাহিত করেন যে, নম্রতা ও বিশ্বাস, এই দুইটি মনোভাব তাদেরকে নির্বাসনের সময়ে জাতি হিসাবে বহন করবে। নম্রতায় নির্বাসন মেনে নেওয়া এবং বিশ্বাস ধরে রাখা যে, সত্তর বছর পরে ঈশ্বর তাঁর পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন, এই দুইটি বিষয় তাদেরকে এমন লোকদলে পরিণত করবে, যাদের নিয়ে ঈশ্বর একটি পুনরুদ্ধার ঘটাতে পারবেন।
যিরমিয় হলেন তিনটি পুস্তকের লেখক: রাজাবলি, যিরমিয় ও বিলাপ। তিনটি পুস্তক তিনি লিখেছেন নির্বাসিতদের বুঝানোর জন্য কেন ঈশ্বর যিহূদা জাতিকে নির্বাসিত হতে দিয়েছেন: তাদের কঠোর দেবতাপূজা ও অবাধ্যতার কারণে। যিহূদার পরাজয় মানে এই নয় যে, ঈশ্বর বাবিলীয় দেবতাদের চেয়ে দুর্বল বা তিনি উদ্ধার করতে জানেন না। যিরমিয় নির্বাসিতদের নিশ্চয়তা দেন যে, যেমন তার মুখের প্রত্যেকটি বিচার ও ধ্বংসবাণী পূর্ণ হয়েছে, ঠিক তেমনি তার ঘোষিত ঈশ্বরের উদ্ধার ও আশার বাণীও পূর্ণ হবে: তিনি নিশ্চয়তা দেন যে, ৭০ বছর পরে নিজের দেশে ফিরে আসার সুযোগ অবশ্যই আসবে। তিনি নির্বাসিতদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা নির্বাসনেও বিশ্বাস ধরে রেখে ঈশ্বরের প্রতি ও জাতি হিসাবে তাদের আহ্বানের প্রতি বিশ্বস্ত হতে থাকে।
যিরমিয়ের জীবন এবং যীশুর জীবনের মধ্যে বেশ কিছু মিল পাওয়া যায়। উভয় যিরমিয় ও যীশু বিশ্বস্তভাবে এমন লোকদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য পৌঁছাতে থাকেন যারা অনিচ্ছুক, যারা বিরুদ্ধীয় এবং যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা আছে। উভয় যিরমিয় ও যীশু লোকদেরকে ঈশ্বরের ভালবাসার চোখে দেখেন, তাদেরকে ঈশ্বরের হৃদয় দেখান এবং তাদের বিচারে আনন্দ পান না। উভয় যিরমিয় ও যীশু এমন একটি সময়ে কথা বলেন, যখন ঈশ্বরের জাতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদ্রোহ, ধর্মের বিষয়ে দ্বন্দ্ব, হিংস্রতার সম্ভাবনা এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের হুমকি দেখা যায়। উভয় যিরমিয় এবং যীশু অন্যদের পাপ ও অন্যায়ের কারণে কষ্টভোগ করেন, যিরমিয় তার জাতির সাথে দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, পরাজয়, ধ্বংস ও নির্বাসন দেখেন, যীশু ক্রুশে চুড়ান্তভাবে মানুষের পাপের জন্য কষ্টভোগ করেন। উভয় যিরমিয় ও যীশুকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে অন্যায়ভাবে দোষী বানানো হয়। উভয় যিরমিয় এবং যীশু কষ্টভোগের কারণে সংগ্রাম করেন, যিরমিয় বার বার এবং যীশু গেৎসিমানী বাগানে। উভয় যিরমিয় ও যীশু বিচারের ওপারে একটি অদ্ভুৎ উদ্ধারের ভবিষ্যদ্বাণী দেন। উভয় যিরমিয় ও যীশু লোকদের জন্য বিনতি করেন। উভয়কে ঈশ্বর সর্বোচ্চ দুর্বলতার সময়ে উদ্ধার করেন, যিরমিয়কে বাবিলীয়দের দ্বারা এবং যীশু চুড়ান্তভাবে পুনরুত্থানে।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।