যিহোশূয় চল্লিশ বছর ধরে মোশির বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন (যাত্রা ১৭:১০, ৩৩:১১)। মোশির মৃত্যুর পরে ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসারে তিনি ইস্রায়েলের নতুন নেতা হন (গণনা ২৭:১৮, দ্বি বি ৩১:১৪)। ঈশ্বর ছয়শত বছর আগে অব্রাহাম ও তার বংশধরদের কাছে যে দেশ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন (আদি ১২:৭, ১৫:১৮-২১), ঈশ্বর যিহোশূয়কে সেই কনান দেশ দখল করতে এবং ইস্রায়েল জাতির অধিকারে নিয়ে আসতে আদেশ দেন। যর্দন নদীর পূর্বে অবস্থিত এলাকা মোশির নেতৃত্বে ইতিমধ্যে দখল করা হয়েছে এবং তা রূবেণ, গাদ ও মনঃশি বংশের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে (গণনা ২১, ৩২)। কিন্তু যর্দন নদীর পশ্চিম পাড় থেকে ভূমধ্যসাগর ও ইউফ্রেটিস (ফরাৎ) নদী পর্যন্ত এলাকা, অর্থাৎ কনান দেশ ইস্রায়েল এখনও দখল করে নি।
যিহোশূয় পুস্তকে এই কনান দেশ দখলের বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম অংশে ঈশ্বর এমন একটি আশ্চর্য কাজ করেন যা মোশির সময়ে লোহিত সাগর ভাগ হওয়ার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় (যাত্রা ১৪): ঈশ্বর যর্দন নদী থামিয়ে দেন এবং ইস্রায়েল জাতিকে শুকনা পথে যর্দন নদী পার করিয়ে আনেন (যিহো ৩:১৬)। এই আশ্চর্য কাজ দ্বারা ঈশ্বর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেন:
- ঈশ্বর সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখে যিহোশূয়ের নেতৃত্বকে গৌরবান্বিত করেন (যিহো ৪:১৪)।
- ঈশ্বর দ্বিতীয় প্রজন্মের ইস্রায়েলের কাছে তাঁর ক্ষমতা ও তাদের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি প্রকাশ করেন।
- তিনি কনানীয়দের দেখান যে তাদের সুরক্ষা তুলে নেওয়া হয়েছে।
যর্দনের পশ্চিম পাড়ে পৌঁছে ইস্রায়েলের পথে পড়া প্রথম শহর হল যিরীহো। তাই ইস্রায়েল তাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসাবে এই অতি সুরক্ষিত শহর দখল করতে যাচ্ছে। ঈশ্বর যিরীহোর সমস্ত লোকদেরকে মেরে ফেলার আদেশ দেন, এমন কি তাদের সমস্ত ধন-সম্পও পুড়িয়ে দিতে বলেন। এভাবে যিরীহো একটি ‘প্রথম ফসল’ বা ‘অগ্রিমাংশ’ হিসাবে দাঁড়ায়, এটা এমন কিছু যা ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে নিজের জন্য দাবি করেন (যিহো ৬:১৭-১৮)। যিরীহো দখলের এই বিখ্যাত গল্পে, শহরের দেওয়ালের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় – দেওয়ালগুলো এক মুহূর্তে পড়ে যায় (যিহো ৬:২০)। কনানীয়রা তাদের দুর্গের উপর মিথ্যা বিশ্বাস রাখত, তারা দেওয়াল শক্তিশালী বানানোর জন্য দেবতাদের কাছে মানুষ উৎসর্গ করে সেগুলো নির্মাণ করত। হয়তো এই কারণে ঈশ্বর দেওয়ালগুলোকে তাঁর বিচারের কেন্দ্রবিন্দু করেছেন।
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে আদেশ দেন, তারা যেন কনানে বাস করা সাতটি নির্দিষ্ট জাতিকে (কনানীয়, যিবূষীয়, গির্গাশীয়, পরিষীয়, ইম্মোরীয়, হিব্বীয় ও হিত্তীয়, দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১-২) ধ্বংস করে। অনেকে চিন্তা করে থাকেন ইস্রায়েল জাতির ভূমি প্রয়োজন, এই কারণে ঈশ্বর এই সাতটি জাতি ধ্বংস করার কথা বলেন, অর্থাৎ ঈশ্বর তাঁর প্রিয় মনোনীত জাতিকে ভূমি দেওয়ার জন্য এই সাতটি জাতি সরিয়ে দেন। কিন্তু এই চিন্তাটি আসলে ভুল। দ্বিতীয় বিবরণে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে কনানীয়দের মন্দতার জন্যই ঈশ্বর তাদের বিচার করেন। যে দেশগুলো মোটামুটি ভাল করছে, সেই দেশের জমি ইস্রায়েল পায় না (যেমন ইদোম, মোয়াব ও অম্মোন, দ্বিতীয় বিবরণ ২:১০, ২:২১)। কিন্তু কনানীয়েরা তাদের জঘন্য ধর্মকর্মের জন্য (যেমন প্রতিমা পূজায় সন্তান উৎসর্গ করা) এবং তার ফলে সামাজিক মন্দতা ও অন্যায়ের জন্যই পরিচিত ছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৪)। তাই ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে এই সাতটি জাতি ধ্বংস করতে বলেন। সঙ্গে ইস্রায়েল জাতিকে তিনি সাবধানবাণী দেন যেন তারা এই সাতটি জাতি ধ্বংস করে, কারণ তা না করলে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সাথে বসবাস করবে, তাদের সাথে বিয়ে করবে এবং এভাবে তাদের সেই জঘন্য কাজগুলো দ্বারা প্রভাবিত হবে (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২-৪)। ঈশ্বর আরো চ্যালেঞ্জ করেন: যদি ইস্রায়েল এই জাতিদের মত কাজ করতে শুরু করে তবে ঈশ্বর নিজেই ইস্রায়েলকেও ঠিক তেমনি প্রতিজ্ঞাত দেশ থেকে সরিয়ে দেবেন (লেবীয় ১৮:২৪-৩১)।
যিহোশূয় পুস্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করুন: যতজন কনানীয় লোক কনানীয় দেবতার উপর ভরসা না রেখে বরং ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝে, অথবা যতজন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে বরং ইস্রায়েলের কাছ থেকে দয়া চায়, ততজনই এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় (যিহোশূয় ২ অধ্যায়ে যিরীহোর রাহব এবং যিহোশূয় ৯ অধ্যায়ে গিবিয়োনীয়েরা)।
আখন বাদে (যিনি যিরীহোর লুট করা মাল নিজের জন্য রাখে) ইস্রায়েল জাতি এই সময় বিশ্বাস ধরে রাখে এবং ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয়ে যিহোশূয়ের নেতৃত্বে এগিয়ে যায়। যদিও কনানীয়দের সৈন্য দল ইস্রায়েলের চেয়ে বড় এবং যদিও তাদের সামরিক প্রযুক্তি ইস্রায়েলের চেয়ে অনেক উন্নত, যিহোশূয় ও ইস্রায়েল একের পর এক যুদ্ধে জয়লাভ করে। সাত বছরের মধ্যে ইস্রায়েল জাতি সমস্ত কনান দেশ দখল করে, কনানীয় রাজাদের ও সৈন্যদের ধ্বংস করে এবং কনানীয় লোকদেরকে তাড়িয়ে দেয় (যিহোশূয় ১৮:৩)।
ইস্রায়েল বংশের নেতাদের উপস্থিতিতে যিহোশূয় ও মহাপুরোহিত ইলিয়াসর গুলিবাঁটের সাহায্যে দখল করা ভূমি বিভিন্ন বংশের লোকসংখ্যা অনুসারে তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন। প্রতিজ্ঞাত দেশের সীমানা (গণনা ৩৪:১-১২, যিহোশূয় ১:৪), প্রত্যেক বংশের ভূমির সীমানা (যিহোশূয় ১৩-২০), আটচল্লিশটি লেবীয় শহর (যিহোশূয় ২১) এবং ছয়টি আশ্রয় শহর (যিহোশূয় ২০), এসব আনুষ্ঠানিকভাবে ভাগ করা হয় এবং তার তথ্যগুলো গুরত্বের সঙ্গে লিখিত রাখা হয়।
যেমন মোশি তার আগে করেছিলেন, যিহোশূয়ও তার জীবনের শেষে ইস্রায়েলের নেতাদের (যিহো ২৩) এবং সব ইস্রায়েল জাতিকে (যিহো ২৪) একত্রিত করেন। এমন কি ইস্রায়েল জাতির নতুন প্রজন্মকে, যারা দখল করার সময়ে ঈশ্বরের হাত এবং সব আশ্চর্য ঘটনা নিজের চোখে দেখে নি, তাদেরও একত্রিত করেন। যিহোশূয় তাদের প্রতিজ্ঞার পূ্র্ণতার বিষয়ে ঈশ্বরের বিশ্বস্ততা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি তাদেরকে চুক্তির বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দেন: যদি তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে, তাঁর সেবা করে ও আইন-কানুন পালন করে তবে ইস্রায়েল জাতির মঙ্গল, আশীর্বাদ ও স্থিরতা টিকে থাকবে। কিন্তু যদি তারা ঈশ্বরকে ছেড়ে দেবতাপূজা শুরু করে এবং ঈশ্বরের আইন-কানুন অমান্য করে তবে তারা নিজের উপর অভিশাপ, অভাব ও মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসবে। যিহোশূয় নতুন উঠে আসা প্রজন্মকে জোরের সঙ্গে অনুরোধ করেন, যেন তারা ঈশ্বরকে, অর্থাৎ জীবনকে পছন্দ করে (যিহোশ ২৪:১৪-১৫)।
পুস্তকের লেখক এবং পাঠকেরা
ইফ্রায়িম বংশের যিহোশূয়, অর্থাৎ নূনের ছেলে হোশেয় (গণনা ১৩:৮,১৬) তিনি চল্লিশ বছর ধরে মোশির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সহকর্মী হিসাবে ইস্রায়েলকে সেবা করেছিলেন। প্রস্থানের পরেই যখন অমালেকীয়রা ইস্রায়েল জাতিকে মরু-এলাকায় আক্রমণ করে তখনই মোশি যিহোশূয়কে প্রধান সেনাপতি হিসাবে যুদ্ধ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন (যাত্রা ১৭:১০)। তিনি মোশির বিশ্বস্ত সাহায্যকারী, উঁচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ঈশরের প্রতি অতি আগ্রহী (যাত্রা ৩২:১৩, ৩৩:১১)। তিনি মোশিকে ভালবাসেন এবং তার মান-সম্মান রক্ষা করা তার দায়িত্ব মনে করেন (যাত্রা ১১:২৮)। কনান দেশে পাঠানো ১২জন গুপ্তচরদের মধ্যে যিহোশূয় একজন (গণনা ১৩:১-১৬)। অন্যরা ভয় পেলেও কালেবের সঙ্গে তিনি সাহস ও বিশ্বাস করে কনান দখলের পক্ষে কথা বলেন এবং ইস্রায়েলকে বাধ্যতার দিকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেন। অনেক বছর বিশ্বস্তভাবে সেবা করার পরে ঈশ্বর যিহোশূয়কে মোশির পরের নেতা হিসাবে চিহ্নিত করেন (গণনা ২৭:১৮-২২)। মোশি ধীরে ধীরে যিহোশূয়কে নেতৃত্বের বিভিন্ন দায়িত্ব দেন এবং এভাবে ইস্রায়েল জাতি একটি চমৎকার ও শান্তিপূর্ণ নেতৃত্ব হস্তান্তর দেখতে পায়। দু’জন নেতার মধ্যে এত সুন্দর প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার হস্তান্তর করা হয় যা দেখায় যে উভয় নেতার নম্রতা ও মনেপ্রাণে সেবা করার মনোভাব আছে। মোশি মারা যাওয়ার ঠিক আগেই ঈশ্বর যিহোশূয়কে আর একবার ইস্রায়েলের নেতা হিসাবে সবার সামনে অনুমোদন দেন। মোশির মত একজন নেতার পরে অন্য কেউ নেতৃত্বে আসা অবশ্যই কঠিন কাজ, তাই ঈশ্বর যিহোশূয়কে উৎসাহিত করে চমৎকার প্রতিজ্ঞা দান করেন এবং তাঁকে আর একবার নিশ্চয়তা দেন যে ইস্রায়েল তার নেতৃত্বে কনান দখল ও অধিকার করবে (যিহোশূয় ১)।
যদিও কনানীয়দের সৈন্যদল বিশাল এবং সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তারা ইস্রায়েলের চেয়ে অনেক উন্নত তবুও যিহোশূয় ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয়ে সাহসের সঙ্গে একটি পর একটি যুদ্ধে নামেন এবং জয়লাভ করেন (যিহোশূয় ৬-১২)। সমস্যায় পড়লে তিনি ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসারে এগিয়ে যান (যিহোশূয় ৭,৯)। জয়লাভ করার পরে যিহোশূয় এবং মহাপুরোহিত ইলিয়াসর একসাথে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশগুলোর মধ্যে ভূমি ভাগ করে দেন (যিহোশূয় ১৩-২১)। তিনি একজন আদর্শ নেতা হিসাবে তার জীবনের শেষে ইস্রায়েল জাতিকে বিশ্বস্ত হওয়ার চ্যালেঞ্জ করেন (যিহোশূয় ২৩-২৪)।
তিনি ভূমির লিখিত জরিপ করতে আদেশ দেন (যিহোশূয় ১৮:৩) এবং তিনি “সমস্ত কিছু … একটা বইয়ে লিখে রাখলেন” (যিহোশূয় ২৪:২৬)। তাই সম্ভাবনা বেশি যে তিনি তার নামের পুস্তক নিজেই লিখেছিলেন। তিনি তা ইস্রায়েলের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য লিখেছিলেন, এমন ইস্রায়েলীয়রা যারা দখলের পরে জন্ম নেয়, অর্থাৎ যারা মিসর থেকে প্রস্থান, মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো ও কনান দেশ দখল নিজের চোখে দেখে নি। যিহোশূয় তাদের কাছে – এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে – লেখেন যেন তারা ঈশ্বরের অদ্ভুত বিশ্বস্ততা ও প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার ক্ষমতা এবং ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও বিশ্বস্ততার প্রয়োজনীয়তা জানে (যিহোশূয় ২৩-২৪)। সম্ভবত যিহোশূয় তার পুস্তক তার জীবনের শেষদিকে, অর্থাৎ প্রায় ১৩৭০-১৩৬০ খ্রীষ্টপূর্বে লেখেন (যিহোশূয় ২৪:২৯-৩০)।
কনান দখলের জন্য প্রস্তুতি যিহোশূয় ১-৫ অধ্যায়
পুস্তকের শুরুতে ইস্রায়েল জাতি শিটীমের কাছাকাছি, অর্থাৎ মোয়াবের তলভূমিতে যর্দন নদীর পূর্বে অবস্থিত। মোশির নেতৃত্বে তারা ইতিমধ্যে যর্দনের পূর্ব পাড়ের ইম্মোরীয়দের সম্পূর্ণ এলাকা দখল করেছে এবং রূবেণ, গাদ ও পূর্ব মনঃশি বংশের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে। তাদের সামনে আছে কনান, অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত দেশ, সেখানে যে সাতটি জাতি বাস করে যাদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে আদেশ দিয়েছেন। যিহোশূয় নতুন নেতা হিসাবে ঈশ্বরের উৎসাহ ও অনুমোদন পায় (যিহোশূয় ১:২-৯)। ইস্রায়েলের ১২ বংশের লোকেরা, বিশেষভাবে পূর্বের তিনটি বংশ যিহোশূয়ের কাছে তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে।
যিহোশূয় কনান দেশের, বিশেষভাবে যিরীহো শহরের খোঁজ নেওয়ার জন্য দু’জন গুপ্তচর পাঠান কারণ নদীর পার হওয়ার পরে যিরীহো হবে প্রথম শহর। গুপ্তচরেরা যিরীহোতে প্রবেশ করে এবং শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করার জন্য লোক পাঠানো হয়। রাহব নামে এক কনানীয় পতিতা গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। রাহব তাদের বলেন যে কনানীয়রা সবাই লোহিত সাগর পার হওয়ার ঘটনা এবং ইম্মোরীদের উপরে ইস্রায়েলের জয়লাভের খবর শুনে “আমাদের অন্তরের সব আশা-ভরসা ফুরিয়ে গেছে এবং আপনাদের ভয়ে সবাই সাহস হারিয়ে ফেলেছে” (যিহোশূয় ২:৮-১১)। রাহব এই ঘটনাগুলো শুনে এই উপসংহারে আসেন যে ইস্রায়েলের ঈশ্বর কনানীয় দেবতাদের চেয়ে শক্তিশালী এবং তিনি এই ঈশ্বরের কাছে আবেদন করে করুণা পাওয়ার অনুরোধ করেন (যিহোশূয় ২:১২-১৪)। রাহবের বিশ্বাস ও সাহসের কারণে যিরীহোর যুদ্ধে শুধুমাত্র তিনি ও তার পরিবার রক্ষা পান, তিনি একজন ইস্রায়েলীয়কে বিয়ে করেন এবং এভাবে তিনি দায়ূদ এবং যীশুরও আদিমাতা হয়ে যান (রূত ৪:১৭, মথি ১:৫-৬)। নতুন নিয়মেও রাহবকে একজন বিশ্বাসের বীর এবং আদর্শ হিসাবে ঘোষণা করা হয় (ইব্রীয় ১১:৩১, যাকোব ২:২৩-২৫)।
ইস্রায়েল যখন অবশেষে পূর্বের দিকে রওনা দেয় এবং যর্দন নদীর পাড়ে দাঁড়ায় তখন ঈশ্বর নিয়ম-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতদের সামনে যর্দন নদী থামিয়ে দেন এবং ইস্রায়েল শুকনা পথ দিয়ে যর্দন নদী পার হয়ে যায় (যিহোশূয় ৩:১৬)। ঈশ্বরের এই আশ্চর্য কাজ অবশ্যই মিসর থেকে প্রস্থানের সময়ে লোহিত সাগর ভাগ করার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় (যাত্রা ১৪)। এভাড়া এই আশ্চর্য কাজটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও দেয়:
- ঈশ্বর সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখে যিহোশূয়ের নেতৃত্বকে গৌরবান্বিত করেন (যিহো ৪:১৪)।
- ঈশ্বর দ্বিতীয় প্রজন্মের ইস্রায়েলের কাছে তাঁর ক্ষমতা ও তাদের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি প্রকাশ করেন।
- তিনি কনানীয়দের দেখান যে তাদের সুরক্ষা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত স্মরণ করার জন্য যিহোশূয় নদী থেকে কিছু বড় পাথর নিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে, অর্থাৎ গিলগলে তার প্রথম স্মৃতি সৌধ তৈরি করেন।
ঈশ্বরের আদেশে যিহোশূয় গিলগলে ইস্রায়েলীয় পুরুষদেরসুন্নত করেন (যিহোশূয় ৫:২-৯)। এটা থেকে বুঝা যায় যে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে ইস্রায়েল জাতি পুরুষ শিশুদের সুন্নত করার আদেশে বাধ্য হয় নি। সুন্নত ছিল অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের চুক্তি এবং নিজেকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করার একটি চিহ্ন (আদি ১৭)। গিলগলে যিহোশূয়ের মাধ্যমে করা এই সুন্নত ছিল ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার একটি চিহ্ন, কারণ শত্রুদের ভূমিতে এসে সব সেনাদের এমন অবস্থায় ফেলা যাতে তারা যুদ্ধ করতে অক্ষম, তা ছিল সামরিক কৌশলের ক্ষেত্রে একটি বড় মুর্খতা!
ইস্রায়েল জাতি সেই সময় নিস্তার বা উদ্ধার পর্বও পালন করে (যিহোশূয় ৫:১০)। মিসরে ঈশ্বরের শক্তিশালী আশ্চর্য কাজ (১০ আঘাত ও প্রস্থান) এই অনুষ্ঠানে স্মরণ ও উৎযাপন করা হয়। ঐসময়ে ঈশ্বরের শক্তিশালী হস্তক্ষেপ স্মরণ করার মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির বর্তমান চ্যালেঞ্জের জন্য, অর্থাৎ কনান দেশ দখলের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্বাস গড়ে তোলা হয়।
যে দিন ইস্রায়েল যর্দনের পশ্চিম পাড়ে পা দেয়, সেই দিনেই ঈশ্বর মান্নার দৈনিক যোগান (যা চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল) বন্ধ করে দেন (যিহোশূয় ৫:১০-১২)। মান্নার যোগান বন্ধ করার মাধ্যমে ঈশ্বর স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন যে ইস্রায়েলকে ত্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার যুগ শেষ হয়েছে এবং নতুন একটি যুগ শুরু: এখন ইস্রায়েল জাতি জমি অধিকার করবে এবং নিজের শ্রম দিয়ে চাষ করে প্রয়োজনীয় খাবার উৎপাদন করবে। রূপকভাবে বললে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে বুকের দুধ খাওয়া থেকে এখন সাধারণ খাবারে নিয়ে আসেন – ইস্রায়েলের দায়িত্বশীলতা নতুন একটি পর্যায়ে উঠে আসতে হবে।
যুদ্ধের আগে যিহোশূয়ের জন্য একটি শেষ প্রস্তুতি হিসাবে ঈশ্বর তার সাথে আশ্চর্যভাবে সাক্ষাৎ করেন (যিহোশূয় ৫:১৩-১৫)। তিনি হঠাৎ করে “খোলা তলোয়ার হাতে একজন … সদাপ্রভুর সৈন্যদলের সেনাপতি” দেখতে পান। কেউ কেউ বলেন তিনি ঈশ্বরের একজন স্বর্গদূত, আবার অন্যরা মনে করে তা হল একটি “খ্রীষ্টফানি” (christophany), অর্থাৎ একটি বিশেষ সময় যখন যীশু তাঁর জন্মের সময়ের আগে পৃথিবীতে দেখা দেন। সম্ভবত তিনি যিহোশূয়কে যিরীহের দখলের বিষয়ে সামরিক নির্দেশনা দেন। কিন্তু এই ঘটনা দ্বারা আরো অনেক কিছু প্রকাশিত: যিহোশূয় যখন প্রথম তাকে চ্যালেঞ্জ করেন “আপনি কার পক্ষের লোক – আমাদের না আমাদের শত্রুদের?” সেই সেনাপতি উত্তরে বলেন “আমি কারও পক্ষের লোক নই”। এই কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – যিহোশূয় এমন একটি যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন যা ঈশ্বর স্পষ্টভাবে ও পুনরুক্তিভাবে করার আদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরেও ঈশ্বর বলেন যে তিনি ‘ইস্রায়েলের পক্ষেও নন, কনানের বিপক্ষেও’ নন। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে এই যুদ্ধে জয় করতে দেবেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তিনি ‘কনানীয়দের বিরুদ্ধে’। ঈশ্বর সব সময় লোকদের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে – যে-ই অন্যায় করুক না কেন।
যিরীহো শহর দখল যিহোশূয় ৬ অধ্যায়
যিরীহো ছিল বাণিজ্যিক সড়কে অবস্থিত ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। যিরীহো ছিল প্রাচীরবেষ্টিত অতি সুরক্ষিত শহর এবং ঐসময়ে প্রচলিত ধারণা ছিল যে যিরীহো কখনও দখল করা সম্ভব নয়।
যিহোশূয় পুস্তকে যিরীহো দখলের গল্পে বিশেষভাবে শহরের দেওয়ালের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় – দেওয়ালগুলো এক মুহূর্তে “ধ্বসে পড়ে” গেল (যিহো ৬:২০)। কনানীয়েরা তাদের শহরগুলোর অতি সুরক্ষিত দেওয়ালের উপর মিথ্যা বিশ্বাস রাখত এবং তারা দেওয়াল শক্তিশালী বানানোর জন্য দেবতাদের প্রতি মানুষ উৎসর্গ করেই সেগুলো নির্মাণ করত। হয়তো ঈশ্বর একারণে দেওয়ালগুলো তাঁর বিচারের কেন্দ্রবিন্দু করেছেন। ঈশ্বর আদেশ দেন যেন যিরীহোর সমস্ত লোকদেরকে মেরে ফেলা এবং তাদের সমস্ত ধন-সম্পও যেন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে যিরীহো একটি ‘প্রথম ফসল’ বা ‘অগ্রিমাংশ’ হিসাবে দাঁড়ায়, এটা এমন কিছু যা ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে নিজের জন্য দাবি করেন (যিহো ৬:১৭-১৮)।
যিরীহো দখল করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নির্দেশগুলো অবশ্য সামরিক কৌশলের চিন্তা অনুসারে মুর্খতা: ভেড়ার শিংগা বাজিয়ে সাত দিন যাবত নিরবে তীরের নাগালের বাইরে শহরের চারিদিকে হাটা। হয়তো যিরীহের সৈন্যরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত – অথবা তাদের জন্য এই নিরবতা নিশ্ক্রিয়ভাবে সহ্য করা ছিল খুব ভয়ংকর ও হুমকিস্বরূপ। সপ্তম দিনে সাতটি চক্রের পরে ইস্রায়েলীয়রা অবশেষে জোরে চিৎকার করে এবং ঈশ্বর দেওয়াল ধ্বসে পড়তে দেন যেন সব সৈন্যরা সোজাভাবে এগিয়ে গিয়ে যিরীহো শহর আক্রমণ করতে পারে (যিহোশূয় ৬:১-২১)। যিরীহোর ধ্বংসাবশেষ (আজকের নাম: তেল-এস-সুলতান) খনন করা হয়েছে এবং ১৪০০ খ্রীষ্টপূর্বের ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া গেছে (ছবি দেখুন)।
সবাইকে ও সব কিছু ধ্বংস করার আদেশ
ঈশ্বর স্পষ্টভাবে আদেশ দিয়েছিলেন যে কনান দেশে অবস্থিত সাতটি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে: হিত্তীয়, গির্গাষীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয় জাতি (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১-২)। তাদেরকে ধ্বংসের আদেশের কারণ হল তাদের পাপ, দেবতাপূজা, বিকৃত ও জঘ্যন ধর্মকর্ম (ব্যভিচার, যৌন নির্যাতন এবং এমন কি সন্তান উৎসর্গ) এবং একই সাথে তাদের সামাজিক অন্যায়, অত্যাচার ও মন্দতা (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৪)। এই জাতিদের ধ্বংস করার কারণ এই নয় যে ঈশ্বরের প্রিয় জাতি ইস্রায়েলের জন্য জমি প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর আগেও মন্দ জাতিদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জমি নতুন জাতিদের বসবাস করার জন্য দান করতেন (দ্বিতীয় বিবরণ ২:১০,২:২১-২৩)। ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে কঠোর একটি সাবধানবাণী দেন যে সাতটি জাতি ধ্বংস না করলে তবে ইস্রায়েল জাতি পরবর্তীতে তাদের সাথে বাস করবে, তাদের সাথে বিয়ে করে মিশে যাবে এবং ফলে তাদের সেই জঘন্য কাজগুলোতে লিপ্ত হবে (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২-৪)। ঈশ্বর তাদের আরো চ্যালেঞ্জ করেন: যদি ইস্রায়েল জাতি এই জাতিদের মত মন্দ কাজ করতে শুরু করে তবে ঈশ্বর নিজেই ইস্রায়েলকেও কনান দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবেন (লেবীয় ১৮:২৪-৩১)।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করুন: যতজন কনানীয় লোক কনানীয় দেবতার উপর ভরসা না রেখে বরং ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝে, অথবা যতজন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে বরং ইস্রায়েলের কাছ থেকে দয়া চায়, ততজনই এই ধ্বংস থেকে রক্ষা পায় (যিহোশূয় ২ অধ্যায়ে যিরীহোর রাহব এবং যিহোশূয় ৯ অধ্যায়ে গিবিয়োনীয়েরা)। এছাড়া চিন্তা করা যায় যে অনেক কনানীয়রা নিজের দেবতাদের সুরক্ষা করার ক্ষমতা নিয়ে বিশ্বাস হারিয়ে যুদ্ধের আগে অন্য এলাকায় চলে যায় এবং এভাবে বেঁচে থাকে।
পাপের কারণে ইস্রায়েলের পরাজয় যিহোশূয় ৭ অধ্যায়
যিরীহো দখলের পরে ইস্রায়েল অয় নামে একটি ছোট শহর আক্রমণ করে কিন্তু পরাজিত হয়ে ৩৬জন ইস্রায়েলীয় সেনা মারা যায় (যিহোশীয় ৭:২-৫)। যিহোশূয় সাথে সাথে বুঝতে পারেন যে পরাজয়ের একটি নির্দিষ্ট কারণ আছে। তিনি মোশির আদর্শ পালন করে মাটির উপরে উবুড় হয়ে পড়েন এবং ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেন (যিহোশূয় ৭:৬-৯)। ঈশ্বর বিশ্বস্তভাবে তার কাছে পরাজয়ের কারণ প্রকাশ করেন: একজন ইস্রায়েলীয় যিরীহোর দখলের সময় ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে কিছু জিনিস লুট করেছে। গুলিবাঁটে আখন নামে সেই দোষী ইস্রায়েলীয়কে খুঁজে পাওয়া যায় এবং পাপ স্বীকারের পরে পরিবার সহ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওযা হয়। আখন ধ্বংসে সমর্পিত একটি জিনিস ধরে রেখে নিজেই ধ্বংসে সমর্পিত ব্যক্তি হয়ে যায়। তার বিপরীতে পতিতা রাহব যিনি ধ্বংসে সমর্পিত একজন কনানীয়, তার আচরণ দ্বারা তিনি নিজেকে ও তার পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। আখনের কবর ইস্রায়েলের জন্য আর একটি স্মৃতি সৌধ হয়ে যায়। অন্য জাতিদের বিচার করার জন্য ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে ব্যবহার করেন বলে তাদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর একটি উঁচু মানদণ্ড রাখেন।
কনানের মধ্য অঞ্চলে ইস্রায়েলের অভিযান যিহোশীয় ৮ অধ্যায়
আখনকে বিচার করার পরে ইস্রায়েল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় অয় শহর সহজে দখল করে। তারা উত্তর ও পশ্চিমের দিকে এগিয়ে যায় এবং শিখিম শহরে যে অনুষ্ঠান মোশি তার আইন-কানুনে পালন করতে বলেছেন তারা বাধ্য হয়ে সেই অনুষ্ঠান উৎযাপন করে (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭)। শিখিম শহরে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে ইস্রায়েল কনানের মধ্য ভাগে প্রবেশ করে। এভাবে অজেয় শত্রুদের এলাকার মধ্যে প্রবেশ করা হুমকিস্বরূপ: উত্তর ও দক্ষিণ থেকে কনানীয়রা তাদের সহজেই আক্রমণ করতে পারত। তারা মোশির কথা অনুসারে এবল পাহাড়ে একটি বেদী তৈরি করে, সেখানে উৎসর্গ দেয় এবং পাথরগুলোতে ঈশ্বরের আইন-কানুন খোদাই করে লেখে (যিহোশূয় ৮:৩০-৩৫)। লেবীয়রা মাঝখানে, অর্থাৎ পাহাড়ের মাঝে শিখিমে দাঁড়িয়ে ইস্রায়েল জাতিকে সম্পূর্ণ আইন-কানুন পড়ে শোনায়। ৬টি বংশ এবল পাহাড়ে এবং বাকি ৬টি বংশ ওপারে গরিষীম পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তারা লোবীয়দের ঘোষিত কথায় “আমেন” বলে রাজি হয়। এই অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা দিয়ে প্রকাশিত হয় যে জমি দখলের উদ্দেশ্য হল সম্পূর্ণ দেশ ঈশ্বরের আইন-কানুনের অধীনে নিয়ে আসা। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সাহসী এবং তাতে ঈশ্বরের উপর ইস্রায়েল জাতির নির্ভরতা প্রকাশ পায়।
গিবিয়োনীয়দের সঙ্গে যিহোশূয়ের শান্তি চুক্তি যিহোশূয় ৯ অধ্যায়
যখন ইস্রায়েল যিরীহো ও অয় শহর দখল করে, কনানীয় যে রাজারা পাহাড়ী এলাকায় এবং যারা সমুদ্রের কাছে সমতল এলাকায় বাস করেন একটি সামরিক জোট স্থাপন করেন যেন তারা একসাথে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন (যিহোশূয় ৯:১-২)। শুধুমাত্র গিবিয়োন শহরের হিব্বীয়রা তার চেয়ে ভিন্ন একটি কৌশল করে: তারা যিহোশূয়ের কাছে নিজেদের দূর দেশ থেকে আসা লোক হিসাবে উপস্থাপন করে এবং তাকে এভাবে ভুলিয়ে তাদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি করতে বাধ্য করে (যিহোশূয় ৯:৩-১৫,১৯)। তিন দিনের মাথায় প্রতারণাটি প্রকাশিত হয় (যিহোশূয় ৯:১৬)। যদিও গিবিয়েন শহরের বাসিন্দা হিব্বীয়রা, অর্থাৎ মেরে ফেলার সাতটি জাতিদের মধ্যে একটি এবং যদিও গিবিয়োনীয়রা মিথ্যা ও প্রতারণা মাধ্যমে এই শান্তি চুক্তি স্থাপন করেছে তবুও যিহোশূয় এই শান্তি চুক্তি মেনে চলেন। আমাদের আধুনিক চিন্তা অনুসারে যিহোশূয়ের এই চুক্তি ভেঙ্গে ফেলার অধিকার আছে কারণ তা প্রতারণার মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু যিহোশূয়ের সিদ্ধান্ত ভিন্ন: তিনি গিবিয়োন শহর (এবং সাথে কফীরা, বেরোৎ ও কিরিয়ৎ-যিয়ারীম) আক্রমণ করেন না (যিহোশূয় ৯:১৭-১৮) বরং যখন কনানীয় রাজাদের জোট গিবিয়োনিয়দের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের শহর আক্রমণ করে যিহোশূয় তাদের সুরক্ষা করার জন্য সৈন্যদল নিয়ে এগিয়ে যান (যিহোশূয় ১০:৬-৭)।
আসলে ঈশ্বর আমাদের চিন্তা নয় বরং যিহোশূয়ের চিন্তাকে সমর্থন করে: অনেক বছর পরে যখন রাজা শৌল ঠিক সেই গিবিয়োনীয়দের আক্রমণ করে অনেকে মেরে ফেলেন এবং এভাবে ৩৫০ বছরে আগের শান্তি চুক্তি ভাঙ্গেন তখন ঈশ্বর দায়ূদের রাজত্বের সময়ে ইস্রায়েলের উপর ৩ বছরের একটি দুর্ভিক্ষ পাঠান। দায়ূদ দুর্ভিক্ষের বিষয়ে ঈশ্বরকে অন্বেষণ করেন এবং ঈশ্বর তাকে দেখান যে দুর্ভিক্ষের কারণ হল গিবিয়োনীয়দের বিরুদ্ধে শৌলের অন্যায়। পরবর্তীতে দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের কাছে ক্ষমা চান এবং যে ক্ষতিপূরণ তারা দাবি করে তিনি তা পূর্ণ করেন (২ শমূয়েল ২১:২-৩)। ৩৫০ বছর পরে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে এই প্রতারণার মাধ্যমে স্থাপন করা শান্তি চুক্তিতে দায়বদ্ধ রাখেন!
কনানের দক্ষিণ অঞ্চল দখলের অভিযান যিহোশূয় ১০ অধ্যায়
১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে, অর্থাৎ আমাদের যুগে মিসর দেশে “আমার্না ট্যাব্লেট” (Amarna tablets) নামে বেশ কয়েকটি মৃত্তিকা ট্যাবলেট আবিষ্কার হয়েছে। সেগুলো হল কনান দখলের সময় থেকে কনানীয় রাজাদের জরুরী চিঠি যেখানে তারা মিসরের ফরৌণকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করেন। এভাবে আমরা কনান দখলের বিষয়ে প্রত্নতথ্য থেকে প্রমাণ পাই।
যখন কনানে বাস করা ৫জন ইম্মোরীয় রাজা, অর্থাৎ যিরূশালেম, যর্মূত, হিব্রোণ, ইগ্লোন ও লাখীশ শহরের রাজারা শোনেন যে গিবিয়োনীয়রা যিহোশূয়ের সাথে হাত মিলিয়েছে তারা গিবিয়োনীয়দের তাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে শহরটি আক্রমণ করেন (যিহোশূয় ১০:১-৫)। গিবিয়োনীয়েরা তা যিহোশূয়কে জানিয়ে সাহায্যের আবেদন করে। ঈশ্বরের কাছ থেকে জয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে যিহোশূয় রাতে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদল নিয়ে ইম্মোরীয় রাজাদের জোট আক্রমণ ও পরাজিত করেন (যিহোশূয় ১০:৬-৯)।
তিনি তাদের তাড়িয়ে অত্যন্ত অল্প সময়ে কনানের সম্পূর্ণ দক্ষিণ অঞ্চল দখল করেন (যিহোশূয় ১০:১০-৩৯)। ঈশ্বর তার সামরিক অভিযানে বিভিন্নভাবে সমর্থন করেন: তিনি শত্রুদের মধ্যে ভয় দিয়ে তাদের বিশৃঙ্খল অবস্থা ফেলেন (যিহোশূয় ১০:১০), আশ্চর্যভাবে শত্রুদের উপরে বড় বড় শিলা ফেলেন (যিহোশূয় ১০:১১), যিহোশূয়ের সুবিধার্তে দিনকে দীর্ঘ করেন (যিহোশুয় ১০:১৩) এবং সবখানে ইস্রায়েলকে জয় দান করেন।
কনানের উত্তর অঞ্চল দখলের অভিযান যিহোশূয় ১১ অধ্যায়
যেমন কনানের দক্ষিণ অঞ্চলের রাজারা জোট স্থাপন করেছিলেন, ঠিক তেমনি কনানের উত্তর অঞ্চলের রাজারা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি সামরিক জোট স্থাপন করেন। তারা মেরোম নামে একটি ফোয়ারার কাছে অনেক ঘোড়া ও রথ সহ “বালুকণার মত অনেক সৈন্যর একটি মস্ত বড় দল” একত্রিত করেন (যিহোশূয় ১১:১-১)। আবারও ঈশ্বর যিহোশূয়কে জয়ের নিশ্চয়তা দেন। যিহোশূয় আকস্মিক হামলা চালিয়ে তাদের বিভিন্ন দিকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন (যিহোশূয় ১১:৬-৯)। ইস্রায়েলের সৈন্যদল আবার একত্রিত হয়ে উত্তরের সবচেয়ে শক্তিশালী শহর হাৎসোর আক্রমণ, দখল এবং ঈশ্বরের আদেশে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। হাৎসোরের ধ্বংসাবশেষ আধুনিক যুগে খনন করা হয়েছে এবং সেখানে ১৪০০ খ্রীষ্টপূর্বের ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষভাবে বিভিন্ন দেবতার মূর্তি পাওয়া গেছে যার মাথা, হাত ও পা কেটে বিছিন্ন করা হয়েছে। উত্তর এলাকা সম্পূর্ণ দখল করার জন্য যিহোশূয় প্রায় সাত বছরের মত যুদ্ধ করেন (যিহোশূয় ১১:১৯)।
ইস্রায়েলের বংশের মধ্যে কনান দেশ ভাগ
মহাপুরোহিত ইলিয়াসরের সাহায্যে এবং সব বংশের নেতাদের উপস্থিতিতে যিহোশূয় ইস্রায়েল বংশের লোকসংখ্যা অনুসারে গুলিবাঁটের মাধ্যমে কনানের জমি ভাগ করে দেন। সকলের সামনে তিনি একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর প্রক্রিয়ায় যত্নসহাকারে সব কিছুর লিখিত নথি রেখে জমিটি ভাগ করেন। তিনি এভাবে একটি শান্তিপূর্ণ ও শতাব্দীর শতাব্দীর ধরে স্থায়ী ব্যব্স্থা স্থাপন করেন।
প্রতিজ্ঞাত দেশের সীমানা (গণনা ৩৪:১-১২, যিহোশূয় ১:৪), প্রত্যেক বংশের জমির সীমানা (যিহোশূয় ১৩-২০), ৪৮টি লেবীয় শহর (যিহোশূয় ২১) এবং তার মধ্যে ৬টি আশ্রয় শহর (যিহোশূয় ২০) এসব যিহোশূয় আনুষ্ঠানিকভাবে এবং গুরত্বের সঙ্গে লিখিত রাখেন:
পদ | বংশের নাম | পূর্ব / পশ্চিম | কার মাধ্যমে | কোথায় |
যিহোশূয় ১৩ | রূবেন, গাদ, পূর্ব মনঃশি | পূর্ব | মোশি | পূর্বে কোথাও |
যিহোশূয় ১৪–১৫ | যিহূদা (সাথে কালেবের অংশ) | পশ্চিম | যিহোশূয় | গিলগল |
যিহোশূয় ১৬ | ইফ্রয়িম | যিহোশূয় | গিলগল | |
যিহোশূয় ১৭ | পশ্চিম মনঃশি (সাথে সলফাদের অংশ) | পশ্চিম | যিহোশূয় | গিলগল |
যিহোশূয় ১৮ | বিন্যামীন | পশ্চিম | যিহোশূয় | শীলো |
যিহোশূয় ১৯ | শিমিয়োন, সবূলূন, ইষাখর, আশের, নপ্তালী, দান | পশ্চিম | যিহোশূয় | শীলো |
অধিকারে না নেওয়া জমি
প্রতিজ্ঞাত দেশ দান করার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সব পূর্ণ হয়েছে: যিহোশূয় দক্ষিণের নেগেভ্ মরু-এলাকা থেকে, সমুদ্রের পাড় এবং হর্মোণ পাহাড় পর্যন্ত সব জমি দখল করেছেন। তিনি সব রাজাদের এবং সৈন্যদের পরাজিত করে ধ্বংস করেছেন (যিহোশূয় ১১:১৬-২৩)। শহরগুলো দখল হয়েছে এবং গিবিয়োন বাদে সব শহরের বাসিন্দাদের মেরে ফেলা অথবা তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে যিহোশূয় জয় এবং জমি দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিন্তু যুদ্ধে জয় করা, একজন স্থানীয় রাজা মেরে ফেলা, একটি সৈন্যদল পরাজিত করা বা একটি শহর দখল করা হল এক বিষয়, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে অধিকার করা, সেখানো বসবাস করা, জমি নিজের অধিকারে নেওয়া, নিজের উপস্থিতি ও প্রাধান্য বিস্তার করা হল অন্য বিষয়। যিহোশূয়ের কাজ ছিল যুদ্ধে জয় করা, কনানীয়দের তাড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের সৈন্যদল ও রাজাদের ধ্বংস করা – এবং তা তিনি বিশ্বস্তভাবে করেছেন (যিহোশূয় ১১:৯,১৫,২৩)। কিন্তু দেশে বাস করা, জমি অধিকার করা এবং নিজের উপস্থিতি ও প্রাধান্য বিস্তার করা, তা বংশদেরই করতে হবে। কিন্তু তা করতে তারা দেরি এবং এমন কি অবহেলা করে (যিহোশূয় ১৮:৩)। ইস্রায়েলীয় বংশগুলো স্বক্রিয়ভাবে তাদের অধিকার নেয় না বলে ধীরে ধীরে পলাতক কনানীয়রা তাদের শহর ও গ্রামে ফিরে আসতে এবং দখল করা এলাকাতে পুনরায় বসবাস করতে শুরু করে (যিহোশূয় ১৩:২-৭,১৩, বিচার ১)।
যিহোশূয় পুস্তকে দেখা যায় যে যতজন স্বক্রিয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে জমি দাবি করে বা দখল করে, ততজনই তার দাবি করা অংশ লাভ করে। যেমন কালেব, যিনি হিব্রোণ শহর দাবি করে দখল করেন (যিহোশূয় ১৪:৬-৫), অৎনীয়েল, যিনি দবীর শহর দাবি করে দখল করেন (যিহোশূয় ১৫:১৩-১৭), অকষা, যিনি ফোয়ারা দাবি করে পেয়ে যায় (যিহোশূয় ১৫:১৮-১৯), সলফাদের মেয়েরা (যারা ছেলে-সন্তানের মত জমি পায়, যিহোশূয় ১৭:৩-৬) অথবা লেবীয়রা, যারা লেবীয় শহরগুলো পায় (যিহোশূয় ২১:১-৩)।
যর্দন পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বংশদের মধ্যে ভুল যোগাযোগ যিহোশূয় ২২ অধ্যায়
কনান দখলের সামরিক অভিযান সমাপ্ত করার পরে যিহোশূয় যর্দনের পূর্ব পাড়ের রূবেণ, গাদ ও পূর্ব মনঃশি বংশের সৈন্যদের শান্তিতে বিদায় দেন। তাদের প্রতিজ্ঞা অনুসারে তারা বিশ্বস্তভাবে অন্য বংশদের জমি দখলের বিষয়ে সাহায্য করেছে বলে যিহোশূয় তাদের সুপারিশ করেন (যিহোশূয় ২২:১-৩), তাদের ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেন (যিহোশূয় ২২:৫), তাদের আশীর্বাদ করেন (যিহোশূয় ২২:৬) এবং লুট করা সম্পদের অংশ দেন (যিহোশূয় ২২:৮)।
তারা পূর্ব দিকে রওনা দেয়। যর্দন নদীর পাড়ে পৌঁছিয়ে তারা পশ্চিম পাড়ে একটি বড় বেদী তৈরি করে নদী পার হয়ে তাদের এলাকায় চলে যায় (যিহোশূয় ২২:১০-১১)। পশ্চিমা বংশগুলো যখন বেদীটি দেখে তারা মনে করে যে পূর্বের বংশগুলো ইতিমধ্যে ঈশ্বরের বাধ্যতা ছেড়ে আইন-কানুন ভাঙ্গতে শুরু করেছে, কারণ আইন-কানুন অনুসাের যেখানে সেখানে উৎসর্গ দেওয়া নিষোধ, শুধুমাত্র আবাস-তাম্বুর সামনে ব্রোঞ্জের বেদীতে তা অনুমোদিত (লেবীয় ১৭:১-৭, দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৫,১১)। পশ্চিম বংশগুলো শীলোতে একত্রিত হয়ে পূর্বের বংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর পরিকল্পনা নেয় (যিহোশূয় ২২:১২)।
যুদ্ধ শুরু করার আগে তারা প্রজ্ঞার সঙ্গে বংশ নেতাদের একটি দল পাঠায়, সাথে মহাপুরোহিত পীনহসকেও পাঠায় (যিহোশূয় ২২:১৩-১৪)। সেই প্রতিনিধি দল পূর্বে গিয়ে পূর্বের বংশদের দোষ ধরেন, কিন্তু তারা সঙ্গে একটি বড় মনের প্রস্তাবও দেন। ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে তারা পূর্বের বংশদের পশ্চিম বংশদের জমির মধ্যে চলে এসে সেখানে ঈশ্বরের সঙ্গে বসবাস করার প্রস্তাব দেন (যিহোশূয় ২২:১৫-২০)। পূর্ব বংশের নেতারা উত্তরে রাজি হন যে ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতা গ্রহণযোগ্য নয় কিন্তু তারা ব্যাখ্যা করেন যে তাদের হাতে তৈরি বেদী উৎসর্গের জন্য করা হয় নি, বরং ঈশ্বরকে স্মরণ করার একটি স্মৃতি সৌধ হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। তারা বেদীটি একটি চিহ্ন হিসাবে স্থাপন করেছেন যেন পশ্চিমা বংশগুলো পূর্বের বংশদেরকে কখনও ঈশ্বরের কাছে আসতে বাধা সৃষ্টি না করে (যিহোশূয় ২২:২১-২৯)। এই কথা শুনে পশ্চিমা বংশের প্রতিনিধি দল খুশি হন এবং যুদ্ধ করার পরিকল্পনা বাদ দেন।
গল্পটি হল ভুল যোগাযোগের সমাধানের একটি চমৎকার উদাহরণ। এই গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায় যে ইস্রায়েলের আত্মিক অবস্থা এই সময় অনেক ভাল ছিল: তারা চিন্তাশীল, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য, ন্যায্য ও ত্যাগ-স্বীকার করতে রাজি।
যিহোশূয়ের শেষ বক্তৃতা যিহোশূয় ২২-২৩ অধ্যায়
মোশি যেমন তার জীবনের শেষে করেছিলেন, ঠিক তেমনি যিহোশূয় তার জীবনের শেষের দিকে ইস্রায়েলের সব নেতাদের (যিহোশূয় ২৩) এবং সঙ্গে নতুন প্রজন্মের লোকদেরও ডেকে একত্রিত করেন, অর্থাৎ এমন লোক যারা কনান দখলের সময় ছোট ছিল বা পরে জন্ম নিয়েছে (যিহোশূয় ২৪)। পূর্বপুরুষদের কাছে করা প্রত্যেকটি প্রতিজ্ঞা ঈশ্বর বিশ্বস্তভাবে পূর্ণ করেছেন, যিহোশূয় তা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন।
যিহোশূয় উপস্থিত ইস্রায়েলীয়দের আইন-কানুন এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে যেন। তিনি তাদের সাবধান করেন যে যদি তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে, তাঁর সেবা করে ও আইন-কানুন পালন করে তবে ইস্রায়েল জাতির মঙ্গল, আশীর্বাদ ও স্থিরতা টিকে থাকবে। কিন্তু যদি তারা ঈশ্বরকে ছেড়ে দেবতাপূজা শুরু করে এবং ঈশ্বরের আইন-কানুন অমান্য করে তবে তারা নিজের উপর অভিশাপ, অভাব ও মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসবে। যিহোশূয় শেষ বারের মত ইস্রায়েলের নতুন প্রজন্মকে চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা ঈশ্বরকেই পছন্দ করে বেঁচে থাকে, যেমন যিহোশূয় ও তার পরিবারও ঈশ্বরকে পছন্দ করেছেন (যিহোশূয় ২৪:১৪-১৫)।
ইস্রায়েলের নতুন প্রন্মের লোকেরা ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং নিজেদেরকে ঈশ্বরের সেবায় সমর্পিত করে। যিহোশূয় তার শেষ স্মৃতি সৌধ হিসাবে একটি বিশাল পাথর রাখেন যাকে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েলের চুক্তিটির সাক্ষী হিসাবে দাঁড় করান। যিহোশূয়ের শেষ কাজ হল নিশ্চিত করা যে ইস্রায়েলের পরবর্তী প্রজন্ম ঈশ্বর সম্বন্ধীয় এই প্রয়োজনীয় শিক্ষা পায়।
যিহোশূয় ১১০ বছর বয়সে মারা যান এবং তার নিজের জমিতে, অর্থাৎ ইফ্রয়িম বংশের তিম্নৎ-সেরহ গ্রামে তাকে কবর দেওয়া হয়। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যে শান্তি দিয়েছেন, এটা তারই একটা ছবি (যিহোশূয় ২৪:২৯-৩০)।
বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য www.englishbiblestudy.com দেখুন।